Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫০


#আড়ালে_তুমি |৫০|

#_সাইদা_মুন

কিছুক্ষণ পরেই মেঘ এসে হাজির, পিছে পিছে পিহু, সাদ, সামিয়া, তাহমিদও ঢোকে। এদের দেখে রুদ্র বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে মেঘকে বলে,

-“ওরা এখানে কেনো..?”

মেঘ নির্দ্বিধায় উত্তর দেয়,

-“কেনো, ওরাও খেলবে।”

রুদ্র চোখ বড় করে বলে,

-“হোয়াটটটট…”

রুদ্রের চিৎকারে মেঘ কানে হাত দিয়ে বলে,

-“আরে চিল্লাচ্ছেন কেনো…”

এদিকে পিহুরাও কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কাহিনি দেখছে। রুদ্র একবার তাদের দিকে তাকায়, তারপর মেঘের এক বাহু টেনে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে বলে,

-“ছোয়াছোয়ি বলতে কি বুঝেছো ইডিয়েট?”

মেঘ অবাক স্বরে বলে,

-“আরে ওই যে আমরা ছোটবেলায় খেলতাম, ওইটাই তো…”

রুদ্র কটমট করে তাকায়। মুডটাই নষ্ট করে দিয়েছে, রেগে হনহনিয়ে রুমে ঢোকে। পেছন পেছন মেঘও আসে, কিন্তু বুঝতে পারছে না রুদ্র এত রেগে গেল কেনো।

তাদের দেখে পিহু বলে,

-“কই, খেলবে কখন?”

পিহুর কথা যেন আগুনে ঘি ঢালে। সাথে সাথেই রুদ্র রাগে ধমক দিয়ে বলে উঠে,

-“এক্ষুনি সব কটা বেড়োবি, ১ সেকেন্ড সময় দিচ্ছি।”

রুদ্র বলতেই ভয়ে ওরা সবাই দ্রুত উধাও হয়ে যায়। এদিকে মেঘ এক কোনায় কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভাবছে সে কী এমন করলো যে রুদ্র এত রেগে আছে। রুদ্র গিয়ে এক হাত মাথার নিচে আরেক হাত চোখের উপর দিয়ে শুয়ে পড়ে। কয়েক সেকেন্ড যেতেই কর্কশ গলায় বলে,

-“লাইট নিভিয়ে বিছানায় আসার জন্য কি নতুন করে ইনভাইট করতে হবে?”

রুদ্রের কথা শুনে মেঘ লাফিয়ে উঠে দ্রুত দরজা লাগিয়ে লাইট নিভিয়ে পাশে শুয়ে পড়ে।

———

সকালটা হালকা সোনালি রঙে ভরে উঠেছে। সূর্য উঠতে উঠতে আকাশের কোণে লালচে আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। দূরে নদীর পানি ধীরে ধীরে রোদের ঝিলিক তুলছে, আর পাখিরা কিচিরমিচির করে নিজেদের শুভ সকাল জানাচ্ছে। বাতাসে মিশে আছে শিশিরের স্নিগ্ধ গন্ধ। রাস্তায় এখনও ভিড় জমেনি, সবকিছু যেন ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। এই শান্ত মুহূর্তে মনে হচ্ছে, সময় একটু থেমে আছে।

হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই সামিয়া বিরক্ত হয়ে ঘুম জড়ানো চোখে না দেখেই রিসিভ করে,

-“উমমম, হ্যালো…”

ঘুম ভাঙা এই কণ্ঠই যেন কারো বুক নাড়িয়ে দিলো। সেই ব্যাক্তির আশপাশের সব থমকে গেল। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। সাড়া না পেয়ে সামিয়া আবারও বলে,

-“হ্যালো, কে…?”

তখনই অপরপ্রান্তের লোকটির ভাবনা কাটে। নিজেকে সামলে রাফান বলে,

-“আরে, ৮টা বাজে, এখনো ঘুমাচ্ছো?”

রাফানের কণ্ঠ শুনে সামিয়ার ঘুম উড়ে যায়। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে, একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার কানে ধরে বলে,

-“আরে, কাল রাতে একটু দেরিতে ঘুমিয়েছি তাই…”

রাফান মজা করে বলে,

-“রাতে কি চুরি করতে গিয়েছিলে?”

-“এ্যাহ, আপনার সাথেই তো কথা বলতে বলতে লেট হলো।”

-“হো, এখন সব দোষ রাফান ঘোষ, তাই না?”

সামিয়া হেসে ওঠে। রাফান আবার বলে,

-“উঠো, ভার্সিটিতে যাবে না?”

-“হ্যাঁ যাবো যাবো…”

-“আচ্ছা, তাহলে ফ্রেশ হও। আর শোনো, কাল কিন্তু তোমাদের বাড়িতে আসছি আমার পরিবারসহ।”

সামিয়া অবাক হয়ে বলে,

-“দাওয়াত নাকি? কই, আমি তো শুনিনি!”

-“শুনবে একটু পরেই। আচ্ছা, রাখি, অফিসে যেতে হবে। কালকে যেনো সেবাযত্নের কোনো কমতি না হয়…”

———

-“এই মন্ত্রি মশাই, এইইই মশা সাহেব, মশায়ায়ায়ায়া…”

রুদ্রের কানের কাছে সেই কখন থেকে মেঘ ডাকাডাকি করেই যাচ্ছে, তবুও সে উঠছে না। বিরক্ত হয়ে মেঘ বলে,

-“৮টা বাজে, উঠুন”

রুদ্র ঘুম জড়ানো কণ্ঠে এদিক-ওদিক হয়ে বলে,

-“উফফ মেঘ, মাছির মতো ভ্যানভ্যান কোরো না তো। আসো, তুমিও ঘুমাও।”

বলেই মেঘকে টেনে নিজের বাহুতে জড়িয়ে নেয়। মেঘ পড়ে ফেঁসাদে, ভাবছিল নিচে গিয়ে মাকে সাহায্য করবে। তবে এই লোক তাকে চেপে ধরেছে। উপায় না দেখে চুপচাপ রুদ্রের বুকে হেলান দিয়ে পড়ে থাকে অনেকক্ষণ।

হঠাৎ মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি আসে। ধীরে রুদ্রের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

-“জান, উঠো না… জানননন…”

মেঘের ডাক কর্নপাত হতেই হকচকিয়ে উঠে বসে রুদ্র। চোখ-মুখ ফোলা ফোলা, চেহারায় অবাক ভাব। মেঘের দিকে তাকিয়ে সন্দিহান স্বরে বলে,

-“তুমি মাত্র কী বললে?”

মেঘ মুচকি হেসে বলে,

-“জান…”

রুদ্র চোখ বড় করে বলে,

-“কিইইই?”

-“জানননন…”

সাথে সাথে রুদ্র চোখ বন্ধ করে বুকে হাত রাখে, তারপর আবার চোখ মেলে বলে,

-“আবার বলো, বউ…”

মেঘ আরও আস্তে বলে,

-“জানননন…”

-“উফফ কি শুনাইলা বউ…”

রুদ্র বুকে হাত রেখে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে। বুকের ভেতর কেমন ঝর বইছে। মেঘ রুদ্রের অবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। তার হাসির শব্দে রুদ্র চোখ মেলে তাকায়। মেঘ হাসছে ফলে গালগুলো ফুলে উঠেছে, বাম গালে হালকা টোল পড়েছে। চিকন দাঁতগুলো যেন ঝলমলে তারার মতো চকচক করছে। ভীষণ টানছে তার মনকে সেই হাসি। রুদ্র মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই এমন দৃশ্য দেখে তার ভেতরটা কেমন সুখ-ভালোলাগা-প্রশান্তির সব মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতিতে ভরে যায়।

রুদ্রকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘের হাসি থেমে যায়। রুদ্রের এলোমেলো চুলগুলো আরও এলোমেলো করে দিয়ে বলে,

-“উঠেন, ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি কাপড় বের করছি…”

মেঘ উঠতে গেলে রুদ্র তার বাম হাত চেপে ধরে। মেঘ ভ্রু কুঁচকে তাকায়,

-“কি ব্যাপার..?”

রুদ্র নেশামাখা কণ্ঠে বলে,

-“হাসো না আরও, হাসি থামালে কেনো…”

মেঘ হাত ছাড়িয়ে নেয়,

-“এখন হাসি পাচ্ছে না তাই থামালাম।”

-“তখন কিভাবে হাসলে?”

-“তখন তো হাসি পেয়েছিলো…”

-“তো এখনোও হাসো, তুমি সারাক্ষণ হাসবে।”

মেঘ চোখ ছোট করে বলে,

-“সারাক্ষণ কেউ হাসতে পারে নাকি? আর সবসময় হাসির কারণও থাকে নাকি।”

রুদ্র দুই হাত গুঁজে নরম স্বরে বলে,

-“না না, তুমি শুধু হাসতে থাকো বউ, তোমার হাসির কারণ আমি বানাবো।”

রুদ্রের কথায় মেঘ হালকা হেসে বলে,

-“ওহে প্রেম-পুরুষ, আপনার সময় যে অতিবাহিত হইয়া যাইতেছে সে খবর কি আছে..?”

রুদ্র উঠতে উঠতে বলে,

-“কবি বলেছেন, বউকে আগে সময় দাও, বাকিটা পরে দেখা যাবে।”

-“তা কবি কে?”

ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে এক চোখ টিপে মেঘকে বলে,

-“অবশ্যই আমি…”

-“ওহ হো, রুদ্রন্দনাথ সাহেবববব!”

দু’জনেই হেসে ওঠে। তারপর মেঘ নিচে চলে যায়।

———

ডাইনিং টেবিলে সবাই নাস্তা করছে। রুদ্র দ্রুত নাস্তা শেষ করে উঠতে গেলে এরশাদুল চৌধুরী আটকে দেন,

-“দাঁড়াও রুদ্র, কথা আছে…”

রুদ্র বলে,

-“কি বলবে আমি জানি আব্বু। রাফানের সাথে কথা হয়েছে। আমার এখন বের হতে হবে, বাকিদের সাথে কথা বলে নেও।”

বলেই রুদ্র বেড়িয়ে যায়। সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে এরশাদুল চৌধুরী কি বলেন শুনতে।

-“কাল রাতে ফারুখের সাথে কথা হয়েছিলো। আমাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কে জড়াতে চায়।”

উনার কথায় সিদ্দিকা বেগম জিজ্ঞেস করেন,

-“কার সাথে?”

-“রাফান, রুদ্রের সাথে যে পড়ে। তার বিষয়েই আমাদের বাড়ির মেয়ের সাথে কথা এগোতে চায়। বলেছি কাল আসতে, সামিয়াকে প্রস্তুত রেখো।”

পিহু,তাহমিদ খুশিতে চিৎকার করে ওঠে,

-“ইয়েএএ! আমাদের বাড়িতে বিয়ে, অনেক মজা হবে…”

ওরা ইতোমধ্যেই কি কি করবে তা ভেবে নিচ্ছে। এদিকে সামিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। মনে মনে ভাবছে, “তাহলে রাফান আমায় পছন্দ করে।”

এরশাদুল চৌধুরী সামিয়াকে জিজ্ঞেস করেন,

-“আম্মু, তোমার কোনো সমস্যা আছে?”

সামিয়া মাথা দুলিয়ে না করে রুমে চলে যায়। সেও তো এই দু’মাসে রাফানের মায়ায় পড়ে গেছে। এদিকে বাকিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে আগামী দিনের প্রস্তুতিতে।

সামিয়া রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। বুক ধুকপুক করছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে, সে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। মুহুর্তেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে,

-“রুদ্র ভাই, আপনাকে হারিয়ে ভেবেছিলাম সব শেষ। ভাগ্য খারাপ। কিন্তু উনি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে, আমার খারাপ সময়ে যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন… এরকম একজনকে জীবনসঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমি নিশ্চিত উনি আমার অতীত ভুলিয়ে আমায় অনেক ভালো রাখবেন। হয়তো আমার খারাপ দিনের ইতি টানবেন উনিই”

———

ক্লাসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। তবে সুমনা চুপচাপ। এমনকি ভার্সিটিতে আসার পর থেকে এখনো কিছু খায়নি। যেই মেয়ে প্রত্যেক ক্লাস শেষে নিজে বা রিককে পাঠিয়ে কিছু না কিছু আনতো, সে আজ নিরব খাওয়া বন্ধ। পিহু-মেঘ বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।

-“আরে, কি হয়েছে বলবি তো মেরি মা…”

-“হ্যা, বল না রে সুমু পাখি। তোকে এভাবে দেখে আমাদের একদম ভালো লাগছে না।”

মেঘ-পিহুর কথায় সুমনা হালকা হেসে বলে,

-“কিছু হয়নি, আমি ঠিক আছি।”

কিন্তু তার স্বর চাপা, নরম। স্বাভাবিক সে একেবারেই না। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মাঠে সবুজ ঘাসের উপর বসে আসে সবাই। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মেঘ জিজ্ঞেস করে,

-“সাদ ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে?”

এবার সুমনার যেনো বাঁধ ভেঙে যায়। ঝরঝরিয়ে কেঁদে ওঠে। মাথা ঝাঁকায় বারবার, যার মানে হ্যা।

-“এই সুমনা, এভাবে কাঁদে কেউ? কি হয়েছে বল না?”

সুমনা হিচকি তুলতে তুলতে কালকের সব ঘটনা বলে,

-“এখন ও আমার সাথে কথাই বলছে না। সব জায়গা থেকে ব্লক করেছে। তোর ভাইকে বুঝা না, আমার ভালো লাগছে না আর।”

মেঘ-পিহু অবাক। যেই মেয়ে দুইদিন পর পর ব্রেকআপ করতো। বফ নিয়ে একদিনও মন খারাপ করতে দেখেনি। সে আজ এক ছেলের জন্য কাঁদছে। ভীষণ নজরকাড়া বিষয়। সত্যিই, ভালোবাসা মানুষকে নিখুঁতভাবে বদলে দেয়।

সুমনাকে শান্ত করে পিহু বলে,

-“এভাবে কাঁদলে হবে না। ভাইয়া রাগ করেছে, এখন তোর কাজ কী?”

সুমনা প্রশ্ন করে,

-“কি?”

-“রাগ ভাঙানো।”

সুমনা অসহায় কণ্ঠে বলে,

-“কিন্তু কিভাবে? কথা বলার পথই রাখেনি।”

রিক হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়,

-“চল, সাদ ভাইয়ার ভার্সিটিতে যাবো।”

সুমনা অবাক হয়ে তাকায়,

-“না না, সেখানে গেলে সিনক্রিয়েট হবে। ও রাগ করবে।”

পিহু-মেঘও উঠে সুমনাকে টেনে উঠায়। সবাই মিলে পিহুদের গাড়িতে করে সাদের ভার্সিটিতে যায়। সুমনা ইতস্তত করে এগোয়। কিছুদূর যেতেই দেখে, একপাশে সাদসহ কয়েকজন ছেলে-মেয়ে আড্ডা দিচ্ছে। তবে সাদ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। তাকে দেখে সুমনার কান্না আবার আসতে থাকে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে সামনে এগোয়।

পিহু সাদকে দেখেই ডাকে,

-“ভাইয়াআআ!”

হঠাৎ পিহুর গলায় সাদ মাথা তোলে। সামনে তাদের দেখে দাঁড়িয়ে যায়। খেয়াল করে সুমনাকে, পিছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে বলে,

-“তোরা এখানে কি করছিস?”

রিক এগিয়ে এসে বলে,

-“দুলুব্রো, এই পেত্নি কাঁদতে কাঁদতে আমাদের কান ফাটিয়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে আমি ইন্ডিয়া হাসু আপার শশুরবাড়ি পর্যন্ত পালিয়েও তার ফাটা বাঁশ থেকে রেহাই পাইনি। তাই তোমাকে দিয়েই চুপ করাতে এনেছি। না হলে আবার ২২-এর বন্যা চলে আসবে সাথে শব্দ দূষন ফ্রি..”

পিহু-মেঘ হেসে ফেলে। সুমনা মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকে। সাদ সামনে এসে গম্ভীর স্বরে বলে,

-“কি সমস্যা?”

সুমনা মাথা তুলে তাকায়। সাদের ভেতরটা কেমন কেঁপে ওঠে। সুমনার চোখ ভরা পানি, কান্নার ফলে ফোলা মুখ, ভীষণ ভাঙাচোরা লাগছে। সাদ কিছু বলার আগেই সুমনা ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। সাদ হকচকিয়ে যায়, চিন্তিত হয়ে দ্রুত তার দুই বাহু ধরে বলে,

-“এই, একদম কাঁদবে না। কান্না অফ করো।”

সুমনা কোনো রকমে বলে ওঠে,

-“আ…আমার খুব খারাপ লাগছে।”

কান্নার চাপে কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে আসছে। সাদের বুকটা মুচড়ে ওঠে। সাথে সাথেই সুমনাকে নিজের বাহুডোরে টেনে নেয়। সুমনা যেনো আশকারা পেয়ে বাচ্চাদের মতো জোরে কাঁদতে শুরু করে।

আশেপাশে যারা আছে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কয়েকজন মেয়ের চোখে স্পষ্ট রাগ। সাদ প্লেবয় এটা সবাই জানে। তা সত্ত্বেও মেয়েরা নিজের ইচ্ছেতে ওর কাছে আসতো। কারণ দুইটা, সাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আর তার গুড লুকস। পিহুরা এসব তাদের প্রাইভেসি দিয়ে চুপচাপ চলে যায়।

কান্নার ভেতরেই সুমনা বলে,

-“ছ…ছাড়ো, সবাই দেখছে…”

সাদ ভাবলেশহীন গলায় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

-“দেখুক।”

সুমনা চুপ করে সাদের বুকে মাথা গুঁজে কান্না চালিয়ে যায়। সাদ নরম স্বরে বলে,

-“এই জান, আর কেঁদো না। সরি, আর চিল্লাবো না…”

সুমনা ভাঙা গলায় বলে,

-“আমাকে তুমি ছেড়ে দিবে।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাদ দুই হাতে ওর চোখের পানি মুছে দেয়,

-“চলো…”

সুমনা কান্না থামিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“কোথায়?”

সাদ হাত ধরে গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলে,

-“তোমার সন্দেহ দূর করতে।”

———

পিহু আর মেঘ দাঁড়িয়ে আছে সচিবালয়ের সামনে। মেঘ চিন্তিত গলায় বলে,

-“পিহু, আমাদের যদি এখানে দেখে তোর ভাই রেগে যায়? আর তার থেকেও বড় কথা, আমরা ঢুকতে পারবো নাকি?”

পিহু ভাব নিয়ে বলে,

-“আব্বে শালি, মে হুঁ না, সব ম্যানেজ হয়ে যাবে।”

দুই মেয়ে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করছে দেখে গার্ডরা সন্দেহ করে। একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,

-“কি চান এখানে?”

পিহু সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল,

-“ভেতরে যাবো, ফারহান ভূঁইয়ার সাথে দেখা করতে।”

গার্ড কড়া গলায় বললো,

-“সাধারণ মানুষের হুট করে প্রবেশ নিষেধ। কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আছে? কাগজ দেখান।”

পিহু-মেঘ একে অপরের দিকে তাকালো। পিহু অনুনয় করে বললো,

-“না… সেটা নেই।”

-“তাহলে সরি ম্যাম, ঢুকতে পারবেন না।”

গার্ড ঘুরে চলে যেতে উদ্যত হলে পিহু তাড়াতাড়ি আটকে দিল,

-“আরে দাঁড়ান, আমি ফারহান ভূঁইয়ার ওয়াইফ।”

গার্ড সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল। কিছুক্ষণ পিহুকে খুঁটিয়ে দেখলো, সত্যি বলছে কিনা বুঝার চেষ্টা করছে। তা দেখে পিহু দ্রুত নাটক জুড়ে দিল,

-“দেখুন, আমি প্রেগন্যান্ট। বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না।”

বলেই হঠাৎ মেঘের গায়ে হেলে পড়লো। মেঘ তো হতবাক, এই কি বলে মেয়েটা! পিহুর গুতো খেয়ে দ্রুত সাড়া দিল,

-“হ্যা হ্যা, তাড়াতাড়ি ভেতরে যেতে দিন। যদি ওর কিছু হয়ে যায়, ফারহান ভাই কিন্তু আপনার চাকরি খেয়ে নেবেন।”

গার্ড হকচকিয়ে গিয়ে ভেতরের এক লোককে ডাকলো। লোকটা এসে হেসে সালাম দিল,

–আসসালামু আলাইকুম ভাবি। এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখেছিস কেনো। ভাবি আপনি আসেন আসেন…”

বয়সে বাবার সমান লোকের মুখে “ভাবি” ডাক শুনে পিহুর কাশি উঠে গেলো। দ্রুত পানি খেয়ে নিজেকে সামলে নিলো। তারপর লোকটা ফারহানের কেবিন পর্যন্ত নিয়ে গেল।

এদিকে মেঘ বারবার উঁকি দিচ্ছে রুদ্রকে দেখার আশায়। পিহু ফিসফিস করে বললো,

-“রুদ্র ভাইয়া মেবি আব্বু যেই কেবিনে থাকতো, ওইটাতেই আছে। আমি একবার এসেছিলাম। সোজা গিয়ে বাঁয়ে ৩ নাম্বার কেবিন। তুই যা, আমি এদিকে একটু জ্বালিয়ে আসি।”

বলেই পিহু কোনো অনুমতি ছাড়াই ফারহানের কেবিনে ঢুকে গেল। মেঘ সামনে গিয়ে পিহুর বলা সেই রুমের দরজায় নক করলো। ভেতর থেকে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে এলো,

-“কাম ইন…”

মেঘ ভেবেছিল হয়তো ভুল কেবিনে এসেছে। সরি বেরিয়ে যাবে ভাবছিল। ভেতরে ঢুকে সামনের দৃশ্য দেখে তার হাসি-খুশি মুখ মিয়িয়ে যায়। 

রুদ্র বসে আছে,আর তার সামনে এক মেয়ে। মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

-“কি চাই?”

মেঘ কিছুই বললো না। শুধু হতবাক হয়ে রুদ্র আর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো। রুদ্র ল্যাপটপে কিছু করছে। পাশের মেয়েটির কথায় দরজার দিকে ফিরে তাকায়। সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ায়,

-“বউ তুমি এখানে..?”

বলেই এগিয়ে যায়। তবে মেঘ নিজের জায়গায় স্থির। রুদ্র এসে মেঘের হাত ধরে চিন্তিত স্বরে বলে,

-“এখানে কি করছো, কার সাথে এসেছো?”

মেঘ সেসবের জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“উনি কে?”

রুদ্র মেঘের মুখের দিকে তাকায়। বিষণ্ন মুখ দেখে কিছু আন্দাজ করে দ্রুত বলে,

-“ও হলো মুন, মুন শেখ। আমার কলিগ। আসো, তুমি ভেতরে।”

বলেই মেঘের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে সাইডের সোফায় বসায়। মেঘ সেই মেয়েটির দিকেই তাকিয়ে, মেয়েটিরও মেঘের দিকেই নজর…….

চলবে………

[ নতুন টুইস্ট অলরেডি চলে এসেছে 🌚 ]

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply