#আড়ালে_তুমি |৩১|
#সাইদা_মুন
বাড়ির সবাই কিছুটা বিরক্ত, এই মেয়ের এসব আচরণ সবাই অপছন্দ করলেও কিছু বলে না সিদ্দিকা বেগমের বড় ভাইয়ের মেয়ে বলে। রুদ্র নিজেও বিরক্তি নিয়ে মেয়েটিকে নিজের থেকে ছাড়ায়। কিছু বলেনি কারণ একে বলেও কাজ হয় না। তবে রুদ্র মেঘের দিকে তাকাতেই ঢোঁক গিলে। মেয়েটি তার দিকেই রাগী চোখে তাকিয়ে, যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দেবে। হঠাৎ মেঘ হনহনিয়ে উপরে উঠতে লাগে। রুদ্রও মেঘের পিছু ছুটে, বউটা যে রাগ করছে বেশ বুঝতে পারছে সে।
রুদ্রের মামা আমির খান আর উনার স্ত্রী শান্তা উনারাও এসেছেন, সবাই খুশি মনে আপ্যায়ন করছে তাই সেদিকে খেয়াল নেই কারো।
রুদ্র রুমে এসে দেখে মেঘ নেই। বারান্দায় যেতেই দেখা পায়। সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,
-“চলে আসলে যে, মামা-মামিরা….”
বাকি কথা শেষ করতে পারেনি, তার আগেই মেঘ গর্জে ওঠে,
-“তো নিচে থেকে কি ঘষাঘষি দেখবো?”
রুদ্র চুপসে যায়, বিবি রেগে আছেন। রুদ্র আমতা-আমতা করে বলে,
-“ও মিনহা আমার বড় মামার মেয়ে…”
মেঘ হঠাৎ রুদ্রের উপর আক্রমণ করে বসে। শার্টের কলার ধরে পা উঁচু করে রুদ্রের মুখোমুখি হয়। এমন হঠাৎ আক্রমণে রুদ্র ভড়কে যায়। মেঘের সামনে কেমন বিড়াল-বিড়াল লাগছে নিজেকে, কথাও বের হচ্ছে না। তবে কি দ্য গ্রেট রুদ্র চৌধুরী নিজের বউকে ভয় পায়? মেঘ ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে,
-“মামাতো বোন হয়েছে বলে কি কোলে উঠে যাবে?”
রুদ্র নিচু সুরে বলে,
-“নাউযুবিল্লাহ, কোলে কই উঠলো বউ, জড়িয়ে ধরেছে শুধু..”
-“বাহ, কী সুন্দরভাবে বলছেন, অনেক মজা লেগেছে বুঝি?”
-“ছি ছি বউ, কী বলো! একদমই ভালো লাগেনি। মনে হচ্ছিল শরীরে গোবর লেপ্টে আছে।”
মেঘ আরও গলা বাড়িয়ে বলে,
-“এই আপনি কি বিবাহিত..?”
রুদ্র মিনমিনিয়ে বলে,
-“হ্যাঁ হ্যাঁ..”
মেঘের যেন কাটা গায়ে নুনের ছিটা পড়লো,
-“বিবাহিত সেটা মুখ দিয়েও এখন বের করতে কষ্ট হচ্ছে খুব…”
রুদ্র তড়িঘড়ি করে বলে,
-“না না বউ, আমি বিবাহিত, আমার একটা সুন্দরী বউ আছে…”
-“তো বউ থাকতে অন্য মেয়ে জড়িয়ে ধরবে কেন? কোন সাহসে?”
-“আমি জানি নাকি, ওই মেয়ে হঠাৎ ধরলে..”
-“এই, আমারে বলদ পাইছেন? আপনি চান্স দিছেন বিধায় ধরতে পারছে। একটা থাপ্পড় দিয়ে না করলে সাহসই পাইতো না।”
-“সত্যি বউ, আমার কোনো দোষ নেই…”
মেঘ রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয়। বেচারা দুই পা পিছিয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে বলে,
-“বউ, রাগ করেছো…”
সাথে সাথে মেঘ আরও ফুসে উঠে, পাশ থেকে গাছের ছোট ঢাল একটা নিয়ে রুদ্রের দিকে এগোয়। রুদ্র হালকা অবাক হয়ে যায়। আরও পিছিয়ে গিয়ে বারান্দার গ্রিলের সাথে একদম লেগে আছে। নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছে “এই বডি-সডি করে কি লাভ? সেই তো বউয়ের সামনে শক্তি অকার্যকর।”
লাঠিটা উঁচিয়ে রুদ্রের বরাবর করে বলে,
-“ওরা কেন আপনার পিছে পড়বে? একবার তানিয়া না ফানিয়া, আবার ভার্সিটির মেয়েরা, আবার হসপিটালের নার্স পর্যন্ত… আবার চাচাতো…”
মুখ ফসকে সামিয়ার কথা বলতে যেয়েও নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। রুদ্র এমন বাঘিনী মেঘকে এই প্রথম দেখছে, অবশ্য সে চেয়েছিল বটে মেঘ স্ট্রং হোক। তাই বলে এখন এমন হবে যে আমাকেই বিড়াল বানিয়ে দেবে? নিজেরে বাঁচাতে নিজের সুপারিশে বলে,
-“আরে ভাই, আমার কী দোষ..? আমি মাসুম, কিছু জানি না বউ..”
মেঘ আরও তেড়ে গিয়ে বলে,
-“আপনার মাসুম গিরি বের করছি..”
ঠিক তখনই সাদ এসে হাজির হয় দরজায় ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে,
-“ভাইয়া, আছো? সবাই ডাকছে তোমাদের..”
রুদ্র যেনো জেনো প্রাণ ফিরে পেলো। মেঘ নিজের হাতের ছোট লাঠিটা নিচে ফেলে দেয়। রুদ্র ভয়ে ভয়ে বলে,
-“ইয়ে মানে সাদ ডাকছে, দরজা খুলতে যাবো?”
মেঘ রাগী চোখে তাকায় রুদ্রের দিকে। তারপর নিজেই হনহনিয়ে গিয়ে দরজা খুলে ধুপধাপ পা ফেলে নিচে চলে আসে। সাদ অবাক হয়ে মেঘের যাওয়া দেখতে দেখতে ভেতরে প্রবেশ করে। রুদ্রকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
-“ভাইয়া, ভাবি এমন রেগেমেগে গেলো কেন, কী হয়েছে?”
রুদ্র হতাশার নিশ্বাস ফেলে দরজার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আর বলিস নারে, আমার বিলাইয়ের মতো মেও মেও করা বউটা, এখন সিংহের মতো গর্জন করছে, আবার সুযোগ পেলে সাপের মতো ছোবল মারছে…”
সাদের চোখ বড় বড় হয়ে যায়,
-“কি সাংঘাতিক ব্যাপার-সেপার ভাইয়া, বউরা বুঝি এত ডেঞ্জারাস হয়?”
সাদের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“হুঁ, রাগলে ভীষণ ডেঞ্জারাস,..”
তারপর নিচের উদ্দেশ্যে যেতে যেতে গান গায়,
“সখা তোরা বিয়ে করিস না
বউ ভালা না,
সখা তোরা বিয়ে করিস না,
বিয়ে করছে যে জন জানে সে জন
বউ যে কি বেদনাআআআ……
ও সখা তোরা বিয়ে করিস না..”
সাদ এদিকে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে আর ঢোক গিলছে,
-“রুদ্র ভাইয়ের মতো এত রাগী স্ট্রং পার্সনালিটির ছেলে যদি বউকে ভয় পায়, আমি কোন ক্ষেতের মুলা। মাই গট! প্রেমই করমু, সারাজীবন বিয়ে করবো না…”
————————
নিচে মেঘ বসে আছে সোফায়, তার আশেপাশে সবাই। এখানের মধ্যমণি মেঘ, রুদ্রের মা সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে যে মেঘ রুদ্রের বউ। ব্যাপারটা শুনে রুদ্রের মামা-মামিরা খুশি হয়নি কেন জানি। তবে ভদ্রতার খাতিরে তাকে সালামি দিয়েছে।
এদিকে মাহিরা তো রাগে ফুঁসছে। তার রুদ্রের বিয়ে হয়ে গেছে সে মানতে পারছে না। মেঘের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। রুদ্র নিচে নামতেই সে দৌড়ে যায় রুদ্রের কাছে,
-“এসব কি রুদ্র? তুমি বিয়ে করে ফেলেছো, আমাকে না জানিয়ে মানে কী?”
রুদ্র শক্ত কণ্ঠে বলে,
-“আমি বয়সে তোর বড়, ভাই বলে ডাকবি। আর বিয়ে করেছি আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই, তোর থেকে পারমিশন নিয়ে করতে হবে নাকি?”
রুদ্রের কথায় মাহিরার মুখটা চুপসে যায়। কিছু বলে না আর। রুদ্র আসতেই সবাই খেতে বসে। রুদ্রের পাশে মেঘকে বসিয়েছে।
মেঘের রাগ ভাঙাতে রুদ্র বেশ প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এটা-ওটা মেঘের পাতে দিচ্ছে, কখন কী লাগবে দেখছে। রুদ্রের কেয়ারগুলো সবার চোখেই লাগছে। রুদ্রের নানি তো মাঝে বলে উঠে,
-“বউ পাগল!”
এর ব্যাখ্যায় রুদ্র বলে,
-“সুন্দরী বউ থাকলে সবাই পাগল হবেই..”
এই কথায় এদিকে দুজন জ্বলে-পুড়ে ওঠে। খাওয়া শেষে মেঘ তার শাশুড়ির সাথে কাজ করছে, রুদ্রের দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি এতক্ষণ। বেচারা লক্ষণ দেখে বেশ বুঝছে, রাতের আগে আর রুমে আসবে না।
মেঘ, পিহু, সামিয়া, মিনহা সবাই বসে আছে সোফায়। পিহু তাদের সাথে গল্প করছে, মেঘ চুপচাপ শুনছে, মিনহা কথায় কথায় রুদ্রের কথা বলছে, তা দেখে মেঘের ভীষণ রাগও হচ্ছে।
“দুনিয়ায় কি ছেলের অভাব? আমার জামাইর সাথেই এতো কী আজব!”
হঠাৎ রুদ্র উপর থেকে চেঁচিয়ে মেঘকে ডাকে,
-“মেঘ, এক কাপ কফি দিয়ে যাও..”
মেঘ জায়গায় বসে থাকে। সে আজকে রুদ্রের কোনো কথাই শুনবে না বলে শপথ নিয়েছে,
“হুহ! নিজের কাজ নিজে করে খাবে, আমি কেন করবো? নয়তো এই ফালতু মেয়েগুলোকে বলেনা কেন?”
মেঘের ভাবনার মধ্যে সামিয়া-মিনহা দুজনকেই উঠতে দেখে মেঘ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। পিহু জিজ্ঞেস করে,
-“আরে আপু, তোমরা কোথায় যাচ্ছো?”
দুজনেই একসাথে বলে,
-“রুদ্র ভাই কফি চাচ্ছেন, কফি বানাতেই..”
মুহূর্তেই দুজনে দুজনের দিকে ফিরে তাকায়। সামিয়া বলে,
-“তুমি বসো, আমি বানাচ্ছি..”
মিনহা হালকা বিরক্ত হয়ে বলে,
-“না, তুমি বসো, আমিই বানাই..”
মেঘ এদিকে কটমট করে উঠে দাঁড়ায়,
“নাহ, আর সহ্য করা সম্ভব না। জামাই আমার, টানাটানি এদের!”
মেঘ কর্কশ গলায় বলে ওঠে,
-“আপনারা বসেন, জামাইটা আমার হাতের কফি ছাড়া যার-তার কফি মুখে নেয় না। আপনাদের কষ্ট করতে হবে না..”
বলেই রান্নাঘরের দিকে এগোয় বিরবির করতে করতে। এদিকে পিহু কোনোভাবে হাসি চেপে রেখেছে, বেশ বুঝতে পারছে মেঘ যে জেলাস। হাসি আটকাতে না পেরে চুপচাপ উঠে নিজের রুমে চলে আসে। মিনহা-সামিয়া মুখ ভোতা করে সোফায় বসে, মেঘের অপমান বেশ বুঝতে পেরেছে। রান্নাঘরের দিকেই তাকিয়ে।
মেঘ কফি বানাচ্ছে,
-“নিজে যেমন বেয়াদব, তেমন কাজিনগুলোও পাইছে ছ্যাছড়া! কফি খাবে? এবার ভালো করে খাবি, এমন চিনি দিবো না..”
কফি বানিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসে। সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে একটু মুখে নিয়ে দেখে নেয় চিনি হয়েছে কিনা। হঠাৎ মিনহা চিৎকার দিয়ে ওঠে,
-“এই মেয়ে, দাঁড়াও!”
মেঘ বিরক্ত নিয়ে পেছন ফিরে,
-“জি আপু, কোনো দরকার?”
-“তুমি এই কফি রুদ্রকে দেবে?”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“যেহেতু এইটা উনার জন্যই বানিয়েছি, সেহেতু উনাকেই দেবো। সিম্পল…”
মেঘের ত্যাড়া কথায় মিনহার রাগ হয়। ফের বলে,
-“তুমি এই কফিতে মুখ লাগিয়েছো, নিজের মুখের এঁটোটা দেবে? এইটা রুদ্র খাবে? ছিইইই?”
মেঘ ভাবলেশহীনভাবে বলে,
-“যার প্রতিদিনের রুটিনে আমার থুথুযুক্ত চুমু থাকে, তার আর এইটা তেমন কী!”
বলেই হাটা দেয়। আহা, মেঘের কেন জানি এখন শান্তি লাগছে। এই কথা বলার পর এদের মুখের রিয়্যাকশন দেখার মতো ছিল। মনে হচ্ছে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে সে।
ঘরে এসে দেখে রুদ্র নেই, ওয়াশরুম থেকে সাউন্ড আসছে শোনে। দ্রুত কফি সাইড টেবিলে রেখে চিৎকার করে “আপনার কফি,” বলে নিচে নেমে আসে। এই লোককে দেখলেই রাগ উঠবে এখন। এদিকে রুদ্র তাড়াহুড়ো করে বের হয়, তবে মেঘ ততক্ষণে ফুস হয়ে গেছে। রুদ্র হতাশা নিয়ে কফিতে চুমুক বসায়। সাথে সাথে মেঘ বলে ডেকে ওঠে।
মেঘ নিচে নেমেছে মাত্রই রুদ্রের ডাক শোনে। বেশ বুঝেছে চিনি মিশিয়েছে বলেই। সামিয়ারা মেঘের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে, তা দেখে মেঘ একটু ঢং করে লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে,
-“উনি ডাকছে, আসি একটি আপু। আসলে উনি এক মুহূর্তও আমায় ছাড়া থাকতে পারেন না..”
লজ্জায় লাল-নীল হওয়ার নাটক করতে করতে উপরে আসে। তবে রুদ্রের রুমে আর যায়নি, সোজা পিহুর রুমে গিয়ে বসে থাকে।
————————
-“আমি জানতাম নাকি যে রুদ্র বিয়ে করবে? তাহলে যে করেই হোক আটকাতাম..”
-“না না, আমি জানি না ড্যাড! তুমি রুদ্রকে আমার করে দেবে, যেভাবেই হোক…”
-“আচ্ছা মা, চিন্তা করিস না। এত সহজে এত সম্পত্তি হাতছাড়া করবো নাকি? যে করেই হোক তোকে এই বাড়ির রানি বানাবো… একমাত্র তুই রাজ করবি এই বাড়িতে।”
চৌধুরী বাড়ির গেস্ট রুমের চার দেয়ালের আড়ালে কারো কথোপকথন চলছে। কিছু পাওয়ার প্লান, না ছিনিয়ে নেওয়ার প্ল্যান…
চলবে…….
[ আপনাদের এতক্ষণ অপেক্ষা করানোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বাসায় মেহমান থাকায় সারাদিন লেখালেখির কোনো সুযোগই হয়ে ওঠেনি। এখব একটু সময় পেয়ে দ্রুত লিখে ফেলেছি। কোনো ভুল-ত্রুটি হলে দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন। ]
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি, আড়ালে তুমি সাইদা মুন, সাইদা মুন
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৪২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৩৩
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ১২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫৯
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ২
-
আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৬১
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩০
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৫
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৩