Golpo romantic golpo আড়ালে তুমি সব পর্বের লিংক সাইদা মুন

আড়ালে তুমি সাইদা মুন পর্ব ৫


#আড়ালে_তুমি |০৫|

#_সাইদা_মুন 

আজ মেঘের রান্না নেই বললেই চলে। কারণ বাড়ির বড় ও ছোট বউ গিয়েছে তাদের বাপের বাড়ি, বাড়িতে আছে তার মা আর ছোট বোন। তাই অল্প রান্নায় হয়ে যাবে। হাতের কাজ শেষ করতেই পিহুর কল আসে।

-” হ্যালো পিহু, বলো।”

পিহু হালকা বিরক্তিকর কণ্ঠে বলে, 

-“ধুর, একটু আগে সুমনার সাথে ঝামেলা করলাম, এখন তর সঙ্গে করতে হবে নাকি?”

মেঘ অবাক হয়ে বলে, 

-” ও মা! আমার সাথে ঝামেলা কেন? আর সুমনার সাথেই বা কী হয়েছে?”

-” এই তরা দুইটা আমাকে তুমি তুমি করে বলিস কেন? ফ্রেন্ডশিপে কি তুমি-আপনি শব্দ আছে?”

মেঘ হেসে ফেলে, সে বুঝেছে এই মেয়ে কী চাচ্ছে, 

-” ও আচ্ছা, এই ব্যাপারটা আগে বললেই হয়, যে তুই আমার কাছ থেকে ‘তুই তুই’ শুনতে চাস।”

-” বইন, তুই তো ইজিলি বলে দিয়েছিস, সুমনাকে তো আধা ঘণ্টা ধরে প্র্যাকটিস করিয়েছি। যাই হোক, তাড়াতাড়ি আসিস। আজকে ভার্সিটির পাশের নিউ একটা ফুচকার দোকান আছে না, ওইটার ফুচকা নাকি বেস্ট। আমার ভাইয়া বলেছে, আজকে ট্রাই করবো।”

বলেই ফট করে কল রেখে দিয়েছে। মেঘকে কিছু বলার সুযোগও দেয়নি।

রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হবে, এমন সময় রিমিও বের হচ্ছিল। মেঘকে দেখে মুখ বেঁকিয়ে বলে, 

-“পড়তে যাচ্ছিস, নাগর নিয়ে ঘুরতে লাগিস না। আমাদের পরিবারের একটা মান-সম্মান আছে।”

মেঘ চমকে যায়। তার ছোট বোন এসব কী বলছে? 

-“রিমিইই… মুখ সামলে কথা বল, আমি তোর বড় বোন।”

রিমি তাচ্ছিল্য করে বলে, 

-“হাহ, তুই আমার আপন বোন না, সৎ… সৎ বোন। আমাদের সিকদার পরিবারের কেউ না তুই, শুধু মাত্র আশ্রিতা, মাথায় রাখিস।”

রিমি চলে যায়। মেঘ স্তব্ধ হয়ে রিমির যাওয়া দেখছে। চোখ বেয়ে দু-ফোঁটা নোনাজল পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তা আবার মুছে ফেলে। তার দুঃখ, কষ্ট, এমনকি তার সব অনুভূতি সবার থেকে আড়ালে রাখতে চায়, কারণ এসব দেখার মতো আপন কেউ নেই তার। একজন আছে, যে থেকেও নেই।

ভাঙা মনেই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই কোথা থেকে একটা ছেলে এসে রাস্তা আটকায়, 

-” @আসসালামু আলাইকুম ভাবি, এটা ধরেন। ভাই দিয়েছে।”

বলেই হাতে একটা গোলাপ ফুল ধরিয়ে চলে যায়।

মেঘ অবাক হয়ে যায় “ভাবি” মানে! পরপর আরও কিছু ছেলে এসে একের পর এক দিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলে বলে, “ভাই দিয়েছে।” আর কিছু বলার আগেই চলে যায়। মেঘ চরম লেভেলের অবাক।

তখনই পিহু-সুমনারাও হাজির হয়। মেঘের হাতে ১০-১২ টার মতো গোলাপ ফুল দেখে ওরা ভ্রু কুঁচকে পিহু জিগায়, 

-” কিরে, কাউকে প্রপোজাল দিবি নাকি?”

-” ধুর না…”

মেঘ বলার মাঝেই আরেকটা ছেলে এসে আরেকটা গোলাপ দিয়ে সালাম দিয়ে চলে যায়। সুমনারা অবাক হয়ে দেখছে। 

-” কাহিনী কী রে মেঘ? তোকে ‘ভাবি’ ডেকে গেল কেন আবার ফুল?”

মেঘ নখ কামড়ে চিন্তিত হয়ে বলে, 

-” আমিও বুঝছি না। আসার পর থেকে একের পর এক ছেলে এসে একটা একটা করে ফুল দিচ্ছে আর ভাবি ডেকে চলে যাচ্ছে। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, বলে ভাই দিয়েছে, কোন ভাই বলেনা।”

সুমনা ভেবে বলে, 

-” তাহলে হয়তো অন্য মেয়েকে দিতে গিয়ে ভুল করে তোকে দিয়েছে…”

সুমনার মাথায় গাঁট্টা মেরে পিহু বলে, 

-” বলদ! ভুল করলে এক-দুইজন করতে পারে, সবাই করবে না!”

মেঘের ভয় হতে লাগে। সে তো এসব কিছুতেই জড়াতে চায় না। 

-” আমি তো কোনো ছেলের সাথে কথাই বলি না, চিনিও না। তাহলে কে এমন করছে? ভয় লাগছে… ফ্যামিলিতে জানলে অনেক ঝামেলা হবে।”

তিনজনই চিন্তায় পড়ে যায়। কে দিচ্ছে এসব চিন্তা করতে করতেই ফুচকার দোকানে চলে আসে। সেখানেও একটা ছেলে মেঘকে দেখে সালাম দিয়ে “ভাবি” সম্বোধন করে চলে যায়।

-” আমি বুঝে গেছি কে দিচ্ছে..”

সুমনার কথা শুনে পিহু-মেঘ দুজনেই সিরিয়াস হয়ে আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে-“কে?”

-” আমার কি মনে হচ্ছে জানিস, আমাদের ক্যাম্পাসেরই কেউ।”

এ কথা শুনে মেঘ-পিহু দুজনেই ঠাস ঠাস করে ওর পিঠে কিল বসায়, 

-“বলদ শা*লি! ক্যাম্পাসের কেউ এটা তো আমরাও জানি, যারা যারা ফুল দিচ্ছে তারা তো এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট। এটা তো একটা বাচ্চাও বলতে পারবে।”

সুমনা এসব কথায় পাত্তা না দিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে, 

-” তাহলে কি রুদ্র ভাই দিচ্ছে?”

এই কথা শুনতেই পিহু চেঁচিয়ে উঠে, 

-” ইম্পসিবল! নো, নেভার, ভাইয়া জীবনেও এসব করার লোক না।”

পিহুর কথা শুনে মেঘ-সুমনা দুজনেরই ভ্রু কুঁচকে সন্দেহজনক চোখে তাকায় “রুদ্র” চৌধুরীকে নিয়ে সে এত সিউর কিভাবে?

পিহু এদের তাকানো দেখে কথা ঘুরিয়ে বলে, 

-” মানে কালকে রুদ্র ভাই বললো না, মেঘের প্রতি ইন্টারেস্ট নেই? সেই কথা থেকেই বললাম আরকি।”

মেঘও বলে, 

-” হুম, এই লোক না। এই লোকের কথাই যেই করলা, এসব তো সম্ভবই না। কিন্তু কে হবে?”

এর মধ্যে ফুচকা খাওয়া শেষ। এবার বিল দেওয়ার পালা। পিহু জোর করে যায় নিজে একাই বিল দেবে বলে। তবে দিতে গিয়ে শুনে, বিল দেওয়া হয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করলে বলে, একটা ছেলে এসে দিয়ে গেছে। অনেক জোরাজুরি করেও লাভ হয়নি, লোকটা টাকা রাখেনি।

মেঘ ভীষণ অবাক,কি হচ্ছে আজকে। এসব কিছুই বুঝতে পারছে না।

—————-

সেকেন্ড ক্লাসে একজন এসে বলে, মেঘ আহমেদকে প্রিন্সিপাল ডাকছেন। মেঘ ক্লাস টিচারের পারমিশন নিয়ে প্রিন্সিপালের কক্ষে যায়,

-” আসতে পারি স্যার?”

-” কাম।”

মেঘ ভেতরে প্রবেশ করে,

-” তুমিই মেঘ আহমেদ?”

-” জি স্যার।”

-” ১ম বর্ষের নিউ স্টুডেন্ট?”

মেঘ চিন্তিত হয়ে বলে,

-” জি স্যার, কোনো সমস্যা?”

প্রিন্সিপাল হালকা রাগি গলায় বলে,

-” এই প্রশ্ন তো আমার করা উচিত। কী সমস্যা তোমার? ভার্সিটিতে এসেই সিনিয়রের উপর হাত তুলেছো, বেয়াদবি করেছো। এসব করার জন্য এসেছো এখানে?”

মেঘ ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। তা দেখে স্যার আবার বলে,

-“কাল অভিভাবক নিয়ে আসবে। এবার যেতে পারো।”

মেঘ সালাম দিয়ে বের হয়ে আসে।

“উনি তো বলেছিলেন স্যারকে বলবেন না, তাহলে…. উনি মিথ্যে বলেছেন।”

মেঘের কান্না পাচ্ছে খুব। তার ফিউচারে কিছু করার ইচ্ছা ছিল। নিজের ইনকাম করার,  স্বাধীন হতে চায় সে। এখন মা চাচিরা জানলে আর পড়তে দেবে না। তার স্বপ্ন এখানেই শেষ। তবে….

রুদ্রর উপর অনেক রাগ হচ্ছে। নাম্বারে কল দেয়। ২ বার রিং হতেই রিসিভ করে,

-” হ্যালো?”

-” আপনি এখন কোথায়?”

-” ক্লাসে, কেনো?”

-” লাইব্রেরিতে আসবেন ২ মিনিটের মধ্যে।”

বলেই কল কেটে দেয়। এদিকে রুদ্র অবাক হয়ে যায়, এই মেয়ে এভাবে কথা বলছে তার সাথে, আবার অর্ডার দিচ্ছে। তবে ভয়েস শুনে মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে। তাই হাঁটা দেয় লাইব্রেরির দিকে।

লাইব্রেরিতে এখন কেউ নেই। এখন ক্লাস টাইম তাই। রুদ্র ভেতরে ঢুকে দেখে, মেঘ টেবিলে মাথা রেখে বসে আছে। এগিয়ে যায়,

-“তোমার সাহস কীভাবে হয় আমাকে এভাবে অর্ডার দেওয়ার?”

সবার আগে গল্প পড়তে ফলো করুন আমার পেইজ-Moon-চাঁধ।

মেঘ রুদ্রর কর্কশ কণ্ঠ শুনে মাথা তুলে তাকায়। মেঘের মুখটা দেখতেই রুদ্রর বুক ধক করে ওঠে। মেয়েটি কাঁদছে, কিন্তু কেন?

-” কী হয়েছে? কাঁদ…..”

কিছু বলার আগেই মেঘ ঝরের বেগে এসে রুদ্রর সামনে দাঁড়ায়,

-” আপনি একটা মিথ্যাবাদী, প্রতারক, আমাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে নিজের চাওয়া হাসিল করেছেন।”

রুদ্র ভ্রু কুঁচকায়, সে আবার এমন কী করেছে?

-” হেই ইডিয়েট! কীসব বলছো ভেবে বলছো? মাথা গেছে? “

-” এখন সাধু সাজছেন, প্রিন্সিপালকে আমার নাম বলে এখন এমন ভাব করছেন যেন কিছুই জানেন না!”

বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে,

-” আমি তো বলেছিলাম না, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে মারিনি, ক্ষমাও চেয়েছি। আপনার কথামতো কাজও করেছি। তবুও কেন এমন করলেন? এখন আমার পরিবারের কেউ এসব জানলে আমার পড়ালেখা বন্ধ করে দেবে। আমি আমার ড্রিম পূরণ করতে পারবো না। আমি অনেক দূরে একা কোথাও থাকতে চাই, একটু শান্তিতে মরতে চাই… তবে সেই শান্তিও মরার আগে আর পাবো না, আপনার জন্য…”

মেয়েটি কাদঁতে কাদঁতে নিচে বসে পড়েছে। 

রুদ্র মেঘের কথাগুলো শুনে-কি বলবে বুঝতে পারছে না। শেষের কথাগুলো তাকে ভীষণ ভাবিয়ে তুলছে। তার জন্য, কিভাবে?

আর সে তো কাউকেই কিছু বলেনি!

সেও হাটু গেড়ে বসে বলে,

-” লিসেন মেঘ, তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি কেন স্যারকে বলতে যাবো? আমি এমন কিছুই বলিনি।”

-” তো স্যার জানলেন কীভাবে? আর কালকে আমার অভিভাবক ডাকিয়েছেন, এসব কী?”

-” বিলিভ মি মেঘ, আমি কিছু বলিনি।”

মেঘ চিৎকার করে বলে,

-” আপনি কিছু বলেননি, তবে জানলো কীভাবে? ভূত বলেছে নাকি এসে?”

রুদ্রর মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। তবুও এই মেয়েটিকে সহ্য করছে। অন্য কেউ হলে  এতক্ষনে থাপ্পড় খেয়ে যেতো এমন কথা বললে। তবে এখন পারছে না কেন? তার ওপর এই মেয়ের কান্না সহ্য হচ্ছে না। নিজেকে শান্ত করে বলে,

-” আচ্ছা, আমি দেখছি কে বলেছে। আর তুমি কান্না বন্ধ করো। তোমার অভিভাবক আনা লাগবে না। আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলছি।”

মেঘ একটু থেমে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-” আপনি সত্যি বলেননি?”

রুদ্র থমকে যায়। কান্নার ফলে মেঘের নাক লাল হয়ে গেছে, গালেও হালকা লাল আভা। আধর ফুলিয়ে রেখেছে, ভেজা চোখে বড় বড় করে তাকিয়ে উত্তরের আশায়।

রুদ্র যেন নতুন কিছু অনুভব করছে….. বুকে চিনচিনে ব্যথা।

মেঘ আবার প্রশ্ন করে, রুদ্রের ধ্যান ভাঙে,

-” হ্যাঁ…হ্যাঁ, আমি বলিনি। জানিও না। তবে টেনশন করোনা। কে বলেছে জানতে সময় লাগবে না।”

বলেই উঠে দাঁড়ায়, মেঘের দিকে হাত বাড়িয়ে,

-” উঠো…. উঠে ক্লাসে যাও।”

মেঘ কিছু না ভেবেই রুদ্রর হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়, জামা ঝেড়ে চলে যায়।

রুদ্র নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করছে,

-” কী হচ্ছে এসব… রুদ্র! কীসব ভাবছিস এই মেয়েটাকে নিয়ে? আমি কি…. নো রুদ্র ইউ আর নট ইন্টারেস্টেড, নো নো… “

নিজেকে নিজে বুঝাতে বুঝাতে চলে যায়।  

চলবে……

Share On:

TAGS: , ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply