Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব -৪৭


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -৪৭

গোল্ড লিফ সি*গারেটের প্যাকেট খুলে তার ভেতর থেকে একটা সি*গারেট বের করলো আনান। ঠোঁটে চেপে ধরে প্যাকেটটা বন্ধুদের কাছে এগিয়ে বলল,

-নে ধর,বি*ড়ি খা।

সবার চক্ষু চড়কগাছ হলেও মনে মনে বেশ খুশি সকলে।ভালো মানুষ খারাপ হলে সবার মধ্যে এক ধরনের পৈশাচিক সুখ কাজ করে। একেকজন একেকটা করে সি*গারেট টেনে বের করলো। আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে বলল,

-কবে থেকে রে এসব?

আনান লম্বা এক টান দেয় সি*গারেটে। নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,

-তা দিয়ে তোদের কাজ কী?

-নাহ্! এমনিই।

সি*গারেট টা শেষ করে আগুন ছাদের মেঝেতে নিভিয়ে বলল,

-ম*দের ব্যবস্থা করে দিতে পারবি নাকি রে? 

-শ্যিওর। কোনটা? মোস্ট এক্সপেনসিভ? 

-নাহ্,বাংলা টা।

ছেলেগুলো সয়তানির চোখে তাকায় একে অপরের দিকে। 

বলে,

-আসলেই! বিদেশি টা তো সবাই ই খায়। বাংলা টা না খেলে সত্যিকারের পুরুষ হওয়া যায় না। টাকা দে দোস্ত,তোর জন্য বাংলা ম*দ আনবো আর আমাদের জন্য বিদেশি টা। 

-কোথায় আনবি?

-উমমমম্ কারো বাসায় হলে ভালো হয়। রিস্কের ব্যাপার তো। 

আরেকটা সি*গারেট মুখে গোঁজে আনান। বলে,

-ডান। আমার বাড়ির ছাদে। 

শরীর ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো আনান। ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে চোখ বুজে শ্বাস নিলো। আনমনে বলল,

-তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম,কী দোষ দিবি তাতে?

বন্ধু তোরে খুঁজে বেড়াই,সকাল দুপুর রাতে

                   ……………

কেমন করে সইবো আমি প্রেম-আগুনের তাপ?

তোর-আমার প্রেমে ছিল রে, বন্ধু, ছিল পুরোটাই পাপ!

আনান চোখ মেলে তাকায়। শান্ত চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে পকেটে হাত দেয়। সি*গারেট শেষ! একাকিত্বের একমাত্র সঙ্গী,না পেলে মন তো অস্থির অস্থির করবেই। ছাদের রেলিং এ হাত মুঠো করে রাখতে গিয়ে চোখ পড়ে কলেজের মেইন গেটে। ব্লাক বিএমডাব্লিউ,দেওয়ান বাড়ির গাড়ির মতোই,তবুও পার্থক্য ধরতে পারলো আনান। চোখ ছোট করে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। দাড়োয়ান গাড়ি আটকে রেখেছে। 

মনে হচ্ছে তর্ক চলছে ,”গাড়ি নিয়ে ভেতরে যাওয়া যাবে না।” আনান অপেক্ষায় থাকে ভেতরের মানুষটি কে তার দেখার জন্য। দারোয়ানের সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সাদা শাড়ি পরিহিত এক নারীর পা দেখা যায়। অতি আগ্রহে আনান তাকায় ভালো করে। 

বিড়বিড় করে বলল,

-এতো আপ্যায়ন করে বডি গার্ড দরজা খুলে দিচ্ছে,কে রে এ!

দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করতে করতে নজরে আসে নারীর মুখ।আনান শব্দ করে বলল,

-ফারিন চৌধুরী?

সাথে থাকা বন্ধুদের কিছু না বলেই দৌঁড় লিফট ধরে। তবে লিফট আটকে রয়েছে চতুর্থ তলায়। আনান অধৈর্য হয়ে সিঁড়ি পথ বেছে নেয়। দু এক করে সিঁড়ি পার করে দৌঁড়ে। উদ্দেশ্য এখন সোজা অফিস রুমে যাওয়া। কারন ফারিন আসলে সেখানেই আসবে।

.

.

.

নিজের সানগ্লাস নামিয়ে  দারোয়ান দের বাইরে থাকার নির্দেশ দেয় ঢাকা ১৭ আসনের এমপি পদ প্রার্থী ফারিন চৌধুরী। লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে আশেপাশে শিক্ষার্থীদের ডেকে বলল,

-প্রফেসর ইনান কোন রুমে ক্লাস নিচ্ছেন?

দুজন শিক্ষার্থী এগিয়ে এসে বলল,

-এই নামে কোন প্রফেসর?

-ওকেই ওয়েট.. প্রফেসর নীল…

-ও আচ্ছা নতুন স্যার। উনি মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের, চতুর্থ তলায় আছেন।

ফারিন সানগ্লাস পড়ে লিফটে ওঠে। চতুর্থ তলায় গিয়ে সে কক্ষের সামনে দাঁড়ায়,যেখানে নীল ক্লাস নিচ্ছে। 

উচ্চস্বরে বলল,

-may I come in Sir?

লেকচারের মাঝে কারো বাঁধা পেয়ে বিরক্ত হয় নীল। তবে দরজার দিকে তাকাতেই চোখ থমকে যায়। এক ঝলক ফারিনকে দেখেই তাকায় ইনায়ার দিকে। ইনায়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে দরজার দিকে। নীল সমস্ত কিছু উরেক্ষা করে ইনায়াকে বুঝতে চেষ্টা করলো। 

বলল,

-ইনু!

ইনায়া তড়িঘড়ি করে জবাব দেয়,

-হু?

-ওদিকে কী দেখছিস?

-না,কে উনি? চেনা চেনা লাগলো…তাই দেখছিলাম।

-পড়া দিয়েছি না? বই দেখুন মিস ইনায়া।

এরপর সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-আপনারা এই লেকচার টা বই থেকে রিভিশন দিন। আমি একটু আসছি। excuse me…

নীল ফারিনকে ক্রস করে একটু দূরে এসে দাঁড়ায়। ফলস্বরূপ ফারিনও দরজা থেকে সরে গিয়ে নীলের কাছে আসে। বাড়তি ঢং দেখিয়ে বলল,

-আরে ইনান! কত্ত কত্ত বছর পর দেখছি তোমায়। বারিধারা তো আসোই না। কেন বলোতো? 

-কী দরকারে এসেছো?

-চা খেতে খেতে বলি?

-এটা তো ভার্সিটি মিস চৌধুরী,চায়ের দোকান না।

-আহ্! মিসেস দেওয়ান বললে বেশি খুশি হবো।

-কিন্তু তুমি আমাদের খুশি নষ্ট করছো ফারিন! 

-সেসব রাখো। তোমার সামনে বসে থাকা মেয়েটা! ইনায়া না? তোমার নীলা আরকি।

নীল রাগান্বিত হয়ে তাকায় ফারিনের দিকে। বলে,

-সমস্যা কোথায়?

-তোমার বাবার সাথে দেখা করতে এলাম।

-কেউ বলেছে?

-কেমন তোমরা বলো তো? তোমার ভাই এর মতো তোমার যে টান নেই তা তো সে দশ বছর আগে থেকেই জানি। তাই বলে ভাইয়ের ভালোবাসার নারীর উপর কোনো মায়া দেখাবে না?

নীল বিরক্ত হয়। বলে,

-অফিসে যাও,বাবা আছেন। ভোট চেয়ে আসো।

-বাহ্! সব খবর ই রাখো দেখি ইনান! 

-নীল বললে বেশি ভালো হতো। নাহয় কিছু বলার দরকার নেই।

-আসলে কী বলো তো ইনান? ইনান নাম টা আমার খুব পছন্দের,আমার ইহানের সাথে মিল করে রাখা নাম….

নীল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফারিনের দিকে। তবে কোনো জবাব দেয় না। ফারিন পুনরায় বলল,

-থাকো! যাই, শ্রদ্ধেয় শশুরের সাথে দেখা করে আসি।

নীল ফারিনের সাথে সাথে আগায়। বলল,

-দাঁড়াও! আমিও যাব।

-আহা! ভয় নেই।

নীল লিফটে উঠে দাঁড়ালো। রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,

-দেওয়ান নীল ভয় পাওয়ার মানুষ না। তোমার জানার কথা খুব ভালো করেই! 

.

.

.

.

আনান অফিস রুমে বসে একটু পর পর ঘড়ি দেখছে। আকবর দেওয়ান দু একবার জিজ্ঞেস করেছিলো কিছু হয়েছে কিনা । তবে আনান কোনো জবাব দেয় না। কিছুক্ষণ পরেই দরজা ঠেলে প্রবেশ করে নীল। পেছনে ফারিন। আকবর দেওয়ানের কাছে এগিয়ে পায়ে হাত দিতে গেলে তিনি সরে যান। 

মুখ ঘুরিয়ে বললেন,

-পায়ে হাত দিতে হবে না।

-উপ নির্বাচন সামনে। আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি ১৭ আসন থেকেই। আমাকে ভোট দিবেন….

ফারিন দাঁড়িয়ে আকবর দেওয়ানের ভাব ভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করে কিছুক্ষণ। তারপর হাত বাড়িয়ে মিষ্টির প্যাকেট এগিয়ে টেবিলে রেখে বলল,

-আসছি তাহলে। দোয়া করবেন আমার জন্য…

.

.

.

ক্ষুধার্ত শরীর নিয়ে হেলে দুলে বাড়ি ফিরেছে ইনায়া। কাউকে তোয়াক্কা না করে নিজেই টেবিলে বসে পড়ে। ভাত বেড়ে খেয়ে সোজা নিজের রুমে। হাত মুখ ধুয়েই বিছানায় গিয়ে গা ছেড়ে দেয়। গত রাতে ঘুম হয়নি ঠিক মতো,আজ একটানা ক্লাস করেছে। বেশ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয় সে। এদিকে আনান বাড়ি ফিরেছে অনেকক্ষণ আগেই।ক্লাসও করেনি আজ। আলমারি খুলে ১০০টা চিঠির খাম বের করলো। হাতের মুঠোতে সবগুলো খাম রেখে চোখে হতাশা নিয়ে হাঁসলো।

-তোকে আজ ১২টার পরে এই সব দিয়ে নিজের মনের কথা জানাতে চেয়েছিলাম ইনু। কিন্তু তোর মনে অন্য কারো বাস। তুই কখনো জানতেই পারবি না কেউ একজন তোকে নিঃস্বার্থ ভালবাসা দিয়েছে। যে তার নিজের সব উজার করে তোকে চেয়েছিলো। 

খাম থেকে প্রত্যেকটা চিঠি বের করে আনান। সে কাগজে হাত বুলিয়ে বলল,

-চিঠিগুলো আমি যত্নে রাখবো। কারন তোর হাতে গেলে তুই ছিঁড়ে, পুড়িয়ে দিবি। তোর চোখ এগুলো দেখবে সামান্য কিছু কাগজ হিসেবে। কিন্তু অন্তর পুড়ে ছাই হবে আমার। কারন আমার চোখ এগুলোকে আমার আবেগ ভালোবাসা,আমার সব হিসেবে দেখেছে।

ভালোবাসা সুন্দর, সুন্দর অনেকসময়,তবে তা শুধু গোপনেই। তোকে ভুলে থাকার জন্য আমি সব করব। তবু তোকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হবে না, অনুতপ্ত হতে হবে না। আজ প্রথমবারের মতো আনান ম*দ খাবে ইনু। জীবনের প্রথম বার আনান দেওয়ান ম*দ খাবে।

আনান শরীর ভেঙে হাসে। হাঁসিতে মানুষের মুক্ত ঝরে,অথচ আনানের হাসিতে কান্না ঝড়ছে।

.

.

.

রাত দশটায় নীলের ডাকে ইনায়ার ঘুম ভাঙে। খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে নীল। ইনায়া দেখে হকচকিয়ে উঠে বসে। বলল,

-একি নীল ভাই!

-আমি বাড়িতে আসিনি বলে এই হাল করে রেখেছিস? নিজের যত্ন নিবি না?

-যত্ন নিলে এখন থালা সাজিয়ে আপনি আসতেন?

-ভালো কথা শিখেছেন তো ম্যাম। এখন তাহলে খেয়ে নেন?

ইনায়া আহ্লাদী কন্ঠে বলল,

-খেতে হলে উঠতে হবে,হাত ধুতে হবে। হাত নাড়াতে হবে। তার চেয়ে বরং আপনিই খায়িয়ে দিন?

-মুখ নাড়াতে কষ্ট হবে না? আমি চিবিয়ে দেই?

-ইশশশ ছিঃ! 

-এমন ভাব করলি যেন আমি ব্রাশ করি না ইনু!

-তবুও! লালা লেগে থাকবে! কেমন কেমন যেন লাগে…

-হ্যাঁ??? এসব বলিস না। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হতে হয়। ছোট মানুষ না হলে বুঝিয়ে বলতাম,এনজাইম কতো ভালো।

ইনায়া একেবারে চুপসে যায়। ছোট হলেও খুব ছোট তো না। মাথা নিচু করে বলল,

-থাক,প্লেট রেখে দিন। খেয়ে নিচ্ছি।

ইনায়ার লাজুক মুখ দেখে নীল প্লেট নামিয়ে রাখে। বলে,

-দ্রুত। আর তোর ফোনটা দে তো।

-কেন?

-আমার কাছে রেখে দেবো। রাত বারোটার পরে কল যেন না আসে। আমি চাই না আমি ছাড়া কেউ তোকে উইশ করুক।

ইনায়া চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকায়। 

-কীহ! বাসার সবাই?

-যে যার মতো বলবে,তুই চুপ করে শুনবি। ফোন বন্ধ করে রাখছি,আইডি ডিএকটিভ করে রাখছি এখন। খেয়ে দরজা বন্ধ করে  রাখবি।

ইনায়া মুখ ভার করে তাকায় নীলের দিকে। মন খারাপ করে বলে,

-কেউ উইস করবে না আমায় নীল ভাই?

নীল আড় চোখে তাকায় ইনায়ার দিকে। নাকে হালকা ঘষে বলে,

-আমি তোকে কিছু বলবো না ইনু্। তবে কেউ যদি তোকে উইশ করে,আর তাকে কোনো উত্তর দিস,তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে। 

আর বিষয়টা বাইরের মানুষের ক্ষেত্রে, স্যোশাল মিডিয়া হলে,যেই তোকে উইস করবে,তার আইডি আর খুঁজে পাবে না।

ইনায়া চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। নীল একটু ঝুঁকে ইনায়ার বরাবর এসে বলল,

-understand আমার মায়াবতী?

(চলবে……)

#Running 

#episode:47

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:

TAGS:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply