Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব -৪৫


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -৪৫

দরজা বন্ধ করে মনে মনে নীলকে নিজের ভালোবাসার কথা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইনায়া। বারবার হাত কচলাচ্ছে আর দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছে, অপেক্ষা করছে বাড়ির সকলের ঘুমানোর। সাধারণত রাত এগারোটার মধ্যেই সকলে যে যার ঘর বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। তবুও ইনায়া অপেক্ষা করল রাত বারোটা বাজার। বারোটার পরেই আগস্ট মাসের একত্রিশ তারিখ হবে। 

ইনায়া বসে বসে হিসেব করল,

-মাসের শেষ তারিখ তো মনে রাখার মতোই। সেপ্টেম্বরের শুরুতে আমার বার্থডে,আর আগস্টের শেষে নীল ভাইকে আমার মনের কথা জানানোর দিন। একদিন আগে পরে। একদম পারফেক্ট! 

ক্যালেন্ডার ধরে গোল করে দুটো দাগ দিলো। একটা ৩১শে আগস্ট,আরেকটা ১লা সেপ্টেম্বর।

বারোটা বাজতে ইনায়া ঘরের দরজা খুলে চুপি চুপি বের হয়। ডানে বামে তাকিয়ে এক নজরে দেখলো সবার দরজা বন্ধ। তবে গত রাতের মতো আজও নীলের ঘরের দরজা খোলা,ইনায়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। 

মনে মনে বলল,

-যাক! দরজা ধাক্কিয়ে ধরা খাওয়ার ভয়টা আর নেই। তবে নীল ভাই আমাকে দেখে চিৎকার করলে?

ইনায়া শাড়ির কুচিগুলো বাম হাত দিয়ে একসাথে একটু উচু করে ধরলো।পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল নীলের ঘরে দিকে। উঁকি মেরে ঘরে তাকাতে দেখে ,টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে গভীর মনোযোগে কিছু করছে নীল।ইনায়া পেছন থেকে নিঃশব্দে এগিয়ে গিয়ে নীলের মুখ আলতো করে চেপে ধরে। 

কপাল কিঞ্চিৎ ভাজ করে পেছনে ফিরে তাকালো নীল। অতি পরিচিত হাতের ছোঁয়া পেয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়ে না তাকে। আলতো করে চেপে ধরা হাত সরিয়ে মুগ্ধ চোখে ইনায়াকে দেখলো কিছুক্ষণ পলকহীন ভাবে।

ইনায়া তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁটে হাত রেখে নীল কে ফিসফিস করে বলল,

-নীল ভাই, চিল্লাবেন না প্লিজ….

নীল ভ্রু কুঁচকে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে ইনায়ার দিকে। ইনায়া দরজা হালকা করে আটকিয়ে দিয়ে নীলের সামনে এসে দাঁড়ায়। নীল চোখ বড় করে ইনায়াকে দেখে বলল,

-এই মেয়ে! দরজা লাগালি কেন?

-নীল ভাই… আপনাকে কিছু বলতে চাই…

নীল ঘাড় হালকা কাত করে দুহাত ভাঁজ করে ইনায়ার দিকে তাকায়। জিম করা শক্ত পোক্ত বাহু নজর কাড়ছে ইনায়ার। সেদিকে দেখে শুকনো ঢোক গিলে পায়ের দিকে তাকালো ইনায়া। 

বলল,

-আসলে… নীল ভাই… আমি না..

-এই আমিনা টা কে?

-মানে আমি না…

-কে সে? 

-ধুর্! এমন করলে বলব কেমনে!

-তুই যে এতো রাতে আমার রুমে এলি,এটা কেউ জানলে কী হবে জানিস?

-কী হবে?

-দিন বাদে বয়স আঠারো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর এতোটুকু বুঝে না। 

নীল অন্যদিকে ফিরে পুনরায় বলল,

-আচ্ছা কী বলবি বল।

-আমার দিকে তাকান….নীল ভাই…

নীল আড় চোখে ইনায়াকে দেখলো।পুরো পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে দেখলো। তবে সাথে সাথে উল্টো হয়ে বলল,

-গিয়ে ঘুমিয়ে পড় ইনু…আমার রুমের থেকে বেরিয়ে যা।

ইনায়া ঠোঁট উল্টালো। মুখ ভার করে বলল,

-লাল রং আপনাকে আকর্ষণ করে না নীল ভাই? বলেছিলেন তো…

-এতো রাতে আমাকে আকর্ষণ করতে আসতে বলেছিলাম তোকে?

ইনায়া অবাক হয়ে তাকায় নীলের দিকে। 

বিড়বিড় করে বলে,

-এমনি ব্যাবহার করছেন কেন আপনি? মানুষ তো তার শত্রুর সাথেও এমন করে না…

নীল তাকালো ইনায়ার চোখের দিকে। বিড়বিড় করে জবাব দিল,

-কেন করছি বুঝলে এ রুমের দিকে পা বাড়াতে সাহস করতি না, এমন হুরপরীর বেশ ধরে…

বেশ কিছুক্ষণ ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে ইনায়া নিজেকে হালকা করে নীলের চোখে চোখ রেখে বলল,

-আপনাকে আমি ভালোবাসি নীল ভাই,আর আপনাকে আমি শেষ পর্যন্ত ভালোবাসতে চাই।

নীল বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায় ইনায়ার মুখে “ভালোবাসি” শব্দ টা শুনে। বহুবছরের বহুকাঙ্খিত একটি কথা! ইনায়া এতো সহজে বলে দিবে নীলের কাছে তা কল্পনাতীত বিষয়। 

নীলের নীরবতা দেখে ইনায়া কাঁপা কন্ঠে পুনরায় বলল,

-কিছু বলুন দয়া করে…

-নিজের ঘরে যা ইনু।

-নীল ভাই..

-তোকে তোর রুমে যেতে বলেছি। এক্ষুনি।

ইনায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে। ঠিক যেভাবে এসেছিল তার বিপরীত ভঙ্গিতে ফিরে যায় নিজের ঘরে।চাপা শব্দে দরজা লাগিয়ে উপর হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। ফুঁপিয়ে কান্না করে ওঠে মনের অজান্তেই। চোখের পানি কিছুর বাঁধ মানে না। 

মনে মনে বলে,

-সে মেয়ে এখনো আপনার জীবনে আছে নীল ভাই,যার জন্যে আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করলেন!

দু হাত দিয়ে চোখ মোছে ইনায়া। নিজেকে শান্ত করে বলে,

-নাহ্,দোস আমারই। উনি তো আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো,তবুও আমি পিছু ছাড়লাম না। এখন কেনো কান্না করছি আমি?

.

.

.

রাত প্রায় একটা বাজতে চললো। নীল জ্যাকেট পরে বাইকের চাবি নিয়ে একেবারে সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দেওয়ান বাড়ির দারোয়ান সালাম মিয়া সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। নীল দরজা খুলে তাকে দেখে বলল,

-কাকা,বাইক বের করেছেন?

-জ্বী বাবা,তুমি কল করার সাথে সাথেই।

-ঠিক আছে।

-এতো রাইতে কই যাইবা? কিছু দরকার হইলে আমারে কও?

-কোনো সমস্যা নেই। মেইন গেইট টা একটু আস্তে খুলে দেন কাকা,শব্দ যেন না হয়। আমি বাইক ঠেলে বাইরে নিয়ে যাচ্ছি।

-জ্বী আচ্ছা।

নীল বাইক ঠেলে মেইন গেইটের বাইরে নিয়ে স্টার্ট দেয়। যেতে হবে বনানীর আবাসিক এরিয়া পেরিয়ে। মিনিট দশেক বাইকের দূরত্ব পার করে রিসান কে কল করল নীল,

-এই মামা!  জলদি নিচে নাম,আমি তোর বাসার নিচে।

রিসান ফোন কানে ধরেই ওয়ালেট পকেটে ঢুকিয়ে নিচে নেমে আসে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

-তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

-ওঠ,দ্রুত।

রিসান বাইকের পেছনে বসলো। 

বলল,

-তা, যাচ্ছি কোথায়?

-শাঁখারী বাজার

রিসান অনেক কষ্ট করে একটু হাসার চেষ্টা করে। তবে লাভ হয় না। হতাশার ভেতরে আটকে যায়। 

নীল রিসানের ভাব গতি বুঝে স্বান্তনা দিয়ে বলল,

-এক ঘন্টায় হয়ে যাবে।

-কেমনে হবে ভাই? তুই এতো রাতে কী করবি? সব বন্ধ।

নীল কোনো উত্তর না দিয়ে বাইক জোড়ে টান দেয়। বেশ সরু লম্বা একটা দোকানের সামনে বাইক দাঁড় করায়। ছয় সাত জন বিশ থেকে পঁচিশ বয়সী ছেলে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীল কে দেখে সকলে হাত পেছনে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। একজন একটু এগিয়ে এক হাত বাড়িয়ে নীলের হাতে একটা কাপড়ের ব্যাগ দেয়। 

রিসান চোখ বড় করে সেদিকে দেখে বলল,

-এতো রাতে কেমনে কী করলি তোরা ভাই?

-আমাদের বড় ভাই একটা কাজ দিয়েছে,নিজের এলাকার এতোটুকু করা কোনো ব্যাপার নাকি! তবে আমরা নিজেরাই যেতে চেয়েছিলাম…

নীল ছেলেগুলোকে হাজার টাকার কয়েকটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল,

-রেখে দে ভাই,আর ধন্যবাদ। তোদের বললে নিয়ে যেতি জানি,তবে এতো রাতে আর কষ্ট দিতে চাইনি।

-এসব কি বলো ভাই!

ছেলেটা টাকাগুলো নিতে না চাইলেও নীল জোড় করে ধরিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়। ইনায়া ঘুমিয়ে গেলে আবার মহাবিপদ।

.

.

.

লজ্জা,রাগ,কষ্ট,অভিমান নিয়ে দু  চোখের পাতা এক করতে পারছে না ইনায়া। পড়নের শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে। ঠিক যেভাবে নীলের ঘর থেকে এসে উপর হয়ে শুয়েছিল, সেভাবেই বিছানায় পড়ে রয়েছে ইনায়া। শাড়ির আঁচল মেঝেতে। ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিল এভাবে। ভোরের আলো ফুটবে আরো কিছু ঘন্টা পরেই। ঠিক সে মুহুর্তে দরজায় খুব হালকা সূক্ষ্ম শব্দে দরজায় টোকা পড়ল। মনের ভুল ভেবে ইনায়া চিন্তায় মগ্ন হয়। সে সময়ে স্ক্রিনে ভেসে ওঠে নীলের নাম। ম্যাসেজ এসেছে ইনায়ার ফোনে,

“দরজা খোল,আমি বাইরে দাঁড়িয়ে।”

অসময়ে এমন ম্যাসেজ পেয়ে ভড়কে যায় ইনায়া। টাইপ করে,

“লাগবে না স্বান্তনা,চলে যান।”

তবে এক চাপেই তা ডিলেট করে দেয়। দরজা খুলবে না খুলবে না করেও চোখ মুছে দরজা খুলে দেয়। নীল দ্রুত ভেতরে ঢুকে বলল,

-চল ইনু।

ইনায়া অপর দিকে তাকিয়ে বলল,

-কোথায়?

-ছাদে

-নিজের ঘর থেকে অপমান করে শান্তি হয়নি? এখন ছাদে নিয়ে গিয়ে কথা শোনাবেন?

-এতো বেশি বুঝিস কেন বলতো? চল আমার সাথে। এতো রাতে সবাইকে ডেকে তুলতে চাচ্ছি না।

ইনায়া চুপচাপ নীলের পিছু নেয়। শাড়ির কুঁচি ধরে এগিয়ে যায় টিপ টিপ পায়ে। এই গভীর রাতে জীবনে প্রথম বারের মতো ছাদে এসেছে ইনায়া। তবে নীলের কাছে খুব সাধারণ বিষয়। মাঝে মধ্যেই আসা হয়। ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ইনায়াকে তার মুখোমুখি দাঁড় করায় নীল। 

হাত দুটো ভাঁজ করে বলল,

-রুমে গিয়ে আমাকে যা বলেছিলি তা আবার বল।

-কী?

-আম্মা নামাজ পড়তে উঠবেন,লেট হয়ে যাচ্ছে…

ইনায়া একটু সময় নেয়। মাথা নিচু করে বলে,

-ভালোবাসি আপনাকে নীল ভাই….

নীল গম্ভীর গলায় বলল,

-আমার কি রাজি হওয়া উচিত?

ইনায়া দ্রুত উপর নিচ মাথা নাড়ায়। 

-খুব ভালোবাসিস?

ইনায়া পুনরায় উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো।নীল ইনায়ার চিবুক ধরে মুখটা উঁচু করে। 

গম্ভীর গলায় বলল,

-কবুল!

ইনায়া চকিত চাহনি তে তাকায় নীলের দিকে। ইশারায় বলল,

-হুম?

-এই আকাশ, বাতাস,চাঁদ ,তারা,সব কিছুকে সাক্ষী রেখে বললাম,ভালোবাসি। কবুল করলাম আপনাকে আবার। আমার মায়াবতীর সব কিছুকে কবুল করলাম।

ইনায়ার চোখ ছলছল করছে। কাঁপা গলায় বলল,

-আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি নীল ভাই?

নীল শক্ত হাতে ইনায়াকে নিজের বুকে টেনে নেয়। নীলের হৃৎস্পন্দন শুনতে পারছে ইনায়া। চওড়া প্রশস্ত বুক,ইনায়ার ঠায় হয়েছে সে বুকে। রাতের অন্ধকারেও নির্ভয়ে লুকিয়ে বাঁচার মতো স্থান। হৃৎস্পন্দন শুনতে শুনতে বুকের উপর তর্জনী আঙ্গুল ঠেকায় ইনায়া। 

ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,

-তবে আমায় এতো কষ্ট দিতেন কেন?

-আমার মায়াবতী কম কষ্ট দিয়েছে আমায়? আর তুই জানিস না প্রেম মানে যাতনা?

-না,জানি না। 

ইনায়া একটু দুরে গিয়ে দাঁড়ালো। নীল তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ব্যাগ থেকে আলতা বের করে। এক পায়ের উপর ইনায়া পা উঠিয়ে বলল,

-আমাকে ধরে দাঁড়িয়ে থাকুন আমার মায়াবতী। লাল শাড়ি,আলতা ছাড়া অপূর্ণ।

পরম যত্নে ইনায়ার দু পায়ে আলতা পড়িয়ে দেয় নীল। অতঃপর সুন্দর এক জোড়া নুপুর বের করে পায়ে পড়াতে পড়াতে বলল,

-আর আলতা রাঙা পা নুপুর ছাড়া অপূর্ণ।

ইনায়া মুগ্ধ হয়ে নীলকে দেখছে।এ যেন স্বপ্নের রাত। আহ্লাদী কন্ঠে বলল,

-আর?

-আর? আর অপূর্ণ নীল,তার নীলাকে ছাড়া। 

ইনায়া লজ্জায় লাল। মুখ লুকানোর জায়গা হিসেবে এই অন্ধকারকেই বেঁচে নিলো। তবে পূর্নিমার আলোতে সে মুখ হয়ে উঠেছে আরো মায়াবতী।

নীল ইনায়ার অপ্রস্তুত ভাব কাটাতে বলল,

-ঘুমানো দরকার আপনার,কাল ক্লাস আছে।

-হুম.. যাচ্ছি…শুনুন…

-বলুন ম্যাম?

-এতো রাতে এগুলো কোথায় পেলেন?

-কেন ? অসম্ভব নাকি পাওয়া?

-প্রায়…

-ইনায়া দেওয়ান নীলার জন্য দেওয়ান নীল সব করতে পারে। আর এসব তো অতি নগণ্য। আমার মায়াবতীর মুখে কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার কথা টা শুনেছি আমি,কত বছরের অপেক্ষার ফল।এতোটুকু তো করা যায় তার জন্যে।

-এতো বছরের মানে?

-ঘুম পাচ্ছে। সকালে লম্বা লেকচার দিতে হবে।

-ওহ্ হুম,সরি সরি নীল ভাই। চলুন।

তাড়াহুড়োর মাঝে আবার ইনায়াকে পেছন থেকে ডাকে নীল। আদেশের সুরেই বলে,

-ইনু শোন!

-হু..

-এতো দিন আমার সাথে যেভাবে থাকতে,সেভাবেই থাকিস।প্রেমিকা লাগবে না আমার। একবারে বউ চাই।

(চলবে……)

#Running 

#episode:45

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:

TAGS:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply