#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -৪২
কিছুক্ষণ আগের হওয়া গুড়িগুড়ি বৃষ্টি এখন ঝুম বৃষ্টিতে রূপ নিয়েছে। আকাশি রঙের জামাটা গায়ের সাথে মিশে রয়েছে ইনায়ার। কোমর ছাড়িয়ে চুল ভিজে চুপ চুপ অবস্থা। হাঁটতে হাঁটতে মাথার উপরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কিছু একটার বাঁধা পেয়ে আটকে যায়। ইনায়া ঘাড় ঘুরিয়ে বামে তাকাতেই দেখে নীল ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে। বিরক্তিসূচক শব্দ করে দ্রুত হাঁটা শুরু করে ইনায়া। তবে নীলের সাথে পেরে ওঠা দায়। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে নীল বলল,
-ইনু, কি হলো হঠাৎ?
-কিছু না।
-জ্বর আসবে, ছাতাটা ধর।
-লাগবে না নীল ভাই। আর আপনাকেও ধরে রাখতে বলিনি।
নীল ছাতা সরিয়ে ইনায়ার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়।
ছাতা ফেলে ডান হাতের বাহু শক্ত করে চেপে বলল,
-সমস্যাটা কি তোর ইনু?
-হাতটা ছাড়েন।ব্যথা পাচ্ছি আমি।
-ব্যথা কি তুই বুঝিস?
-না, বুঝি নাতো। বুঝিনা বলেই…….
-বলেই?
-কিছু না নীল ভাই।ছাড়ুন।বাসায় যাব।
-ঠিক আছে চল। একসাথেই যাচ্ছি।
ইনায়া বহু কষ্টে নীলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আশেপাশের কয়েকজন মানুষের তাকিয়ে থাকার কারণে নীলও হাত হালকা করে দেয়।
নীলের থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে ইনায়া বলল,
-কেন? আপনি বাসায় যাবেন কেন? ভার্সিটিতে যান। সূচনা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। কলও আসতে পারে যখন তখন।
-তোর হিংসা হচ্ছে?
ইনায়া কোন জবাব দেয় না।
নীল পুনরায় কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল,
-কি হলো? বলছিস না কেন? হিংসা হচ্ছে?
-না।
-ঠিক আছে। ভালো এটা।
ইনায়া ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে নীলের দিকে। তার চোখ ছলছল করছে। পানি জমছে চোখে। সে পানি আবার বৃষ্টির পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে।
ইনায়া সমস্ত মুখ হাত দিয়ে মুছে বলল,
-নীল ভাই। আপনাকে দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমার একজনের জন্য খারাপ লাগছে। আমার অচেনা আপনার সেই ভালোবাসার মানুষটার জন্য খারাপ লাগছে।
-খারাপ লাগার মত কিছু হয়েছে?
-আসলেই সব ছেলেরা এক রকম। যাকে আলাদা মনে করি সেও ভুল প্রমাণ করে দেয়।
নীল ইশারায় একটা রিকশা ডাকে। ইনায়ার হাত ধরে রিকশায় উঠিয়ে নিজেও বসে পাশে। সামনে পলিথিন ধরে ইনায়ার দিকে সামান্য ঝুঁকে বলে,
-কজন ছেলেকে চিনিস তুই?
হঠাৎ করে এক রিকশায় এমন পরিস্থিতিতে ইনায়া অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বাম দিকে চেপে নীলের থেকে হালকা সরে বসে মাথা নিচু করে আলতো স্বরে বলল,
-হুটহাট এমন কাছাকাছি আসবেন না……
-কেন কেন? কিছু হয়?
ইনায়া আচমকা চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকালো।
কেঁপে কেঁপে বলল,
-কি হবে?
নীল কোনো জবাব দেয় না । মুচকি হেসে সোজা তাকিয়ে থাকে।
.
.
.
দেওয়ান বাড়ির দুই ছেলে মেয়ে কাঁকভেজা হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বাড়ির সকলে যে যার ঘরে। ড্রয়িং ডাইনিং রুম পুরো ফাঁকা পড়ে আছে। নীল আশেপাশে দেখে ইনায়াকে সূক্ষ্ম কণ্ঠে ধমক দেয়,
-টিপ টিপ করে হাঁটছিস কেন? মনে হচ্ছে বাড়িতে চোর এসেছে। দ্রুত গিয়ে এই ভেজা জামাকাপড় পরিবর্তন করবি।
-My life,my rules.
-একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব। Fast Inu.
-এত জোর দেখাবেন না নীল ভাই।
-ওকে।
নীল সোজা নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ করে নীলের প্রস্থান ইনায়ার কাছে ভালো লাগে না। তবে সে সূচনার কথা ভেবে মনমরা হয়ে নিজের ঘরে চলে আসে। ধীরে ধীরে জামা কাপড় পরিবর্তন করে ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে নেট অন করে আগে নীলের আইডিতে যায়। নীল নতুন প্রোফাইল পিকচার দিয়েছে ,একদম প্রফেসর প্রফেসর লুক। সাদা শার্ট, কালো টাই, কালো কোর্ট, কালো ফরমাল প্যান্ট।
ইনায়া আনমনে বিড়বিড় করে বলে,
-Nazar na laag jaye.
নীলের ছবিটাতে যত্ন সহকারে কেয়ার রিয়্যাক্ট দিল ইনায়া।
বিড়বিড় করে বলে,
-পরীক্ষা তো শেষ। রিকোয়েস্ট দেব এখন?
দিবে দিবে করেও শেষ মেষ তীব্র অভিমান নিয়ে নীলের আইডি থেকে বেরিয়ে আসে। যত চাচ্ছে নিজের মনকে শান্ত করতে তা কিছুতেই আর হয়ে উঠছে না । নীলের প্রোফাইল আবার আনলক করা । অসংখ্য পুরুষের রিয়েক্ট এর মাঝে সূচনার দেয়া কেয়ার রিয়্যাক্ট দেখে ইনার মাথা ঝিমঝিম করছে । কিছুক্ষন মাথা চেপে বসে রইল সে। অতঃপর আবার ফোন নিয়ে “সামিন আইয়াজ” নামক আইডি থেকে পাঠানো মেসেজগুলো পড়ল। তবে নিচে ছোট করে লেখা ,
This person is unavailable….
নীল যে আইডিটা ডিলিট করে দিয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়না ইনায়ার।
.
.
.
সামিরা আর শর্মীর মাঝে যোগাযোগ হলেও ইনায়ার সাথে
কারো কোন যোগাযোগ নেই ।সেদিন ভার্সিটিতে শেষ কথা হয়েছে সামিরা আর ইনায়ার। এরপর শর্মী কয়েকবার ইনায়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোন লাভ হয়নি। বন্ধুত্বের মাঝে তীব্র অভিমান চলছে। এদিকে সামিরা পড়েছে অনুশোচনায়। কাঁপা হাতে রিসান কে কল করে। রিসান কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করার পড়ে সামিরা কাঁপা গলায় বলল,
-আপনারা কি আমার উপর রেগে আছেন?
-কে আপনি?
-আমি.. আমি সামিরা…
-কোন সামিরা?
-ইনুর ফ্রেন্ড..ঐ যে..
-ওহ্ আচ্ছা তুমি। হ্যাঁ বলো।
-আপনারা কি রেগে আছেন? ইনু কথা বলছে না আমার সাথে। ওর আর ওর নীল ভাই এর কী অবস্থা?
-এগুলো ভেবে সময় নষ্ট না করে পড়াশোনা করো। আইন নিয়ে পড়া কিন্তু খুব একটা সহজ না। খুব পড়তে হবে। আর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যেহেতু মানবিকে যাচ্ছো,প্রথম সারির বিষয় পেতে পরিশ্রম করতে হবে অনেক।
সামিরা বেশ অবাক হয়। বলল,
-আপনাকে এসব কে বলল?
-আনান বলেছে?
সামিরার চোখ চকচক করে উঠলো। তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে বলল,
-আনান ভাই! সত্যিই আমার কথা বলেছে?
-হ্যাঁ,অবাক হওয়ার কী আছে?
-বুঝবেন না আপনি। কী কী বলেছে? আমার নাম নিয়েছিল?
-এই মেয়ে! ভর সন্ধ্যায় কী শুরু করলে? মাথায় সমস্যা না কি? যা দরকারে ফোন করেছো তাই বলো,না হয় আমি কল কাটব।
-না না, দাঁড়ান…
-কষ্ট করে বসে আছি, আরাম করে দাঁড়াতে পারব না। বললে বলো এভাবেই।
-নীল ভাইয়া ইনুকে বলছে না কেন সে ইনুকে কত ভালোবাসে?
-নীল নিজ থেকে বলবে না কখনোই।
-কেন?
-পরে কোনোদিন জানবে। কিন্তু ও নিজে থেকে জানাবে না কিছুই। নীল অপেক্ষা করবে।
-কীসের অপেক্ষা?
-কবে তার নীলা নিজে থেকে তাকে ভালোবাসার কথা বলবে সেই অপেক্ষা।
-এসব না করে বলে দিলেই তো হয়।
-সামিরা,রাইট?
-হু..
-তুমি তীব্র অনুশোচনা, অনুতপ্ততায় ভুগেছে কখনো?
-উমমম, হ্যাঁ। ইনায়া আমাকে ভুল বুঝেছে,তাই অনুশোচনা হচ্ছে। কারণ আমি ভুল করেছিলাম।
-দেখো কত সাধারণ একটা বিষয়। অথচ নীল ইনায়ার জীবনের ঘটনা অনেক গভীর। তুমি পরে বুঝতে পারবে। যাই হোক,নীল নিজে থেকে কিছু বলবে না। ইনায়াকেই উপলব্ধি করতে হবে আগে।
সামিরা কোনো কথা খুঁজে পায় না। কানে ফোন নিয়ে নির্বাক হয়ে বসে থাকে। হ্যালো হ্যালো করে রিসান কল কেটে দেয়।
সামিরা বিড়বিড় করে বলল,
-ভালোবাসায় এতো ইগো? ভালোবাসি বলবে না কেন? দাম কমে যাবে। এ কি ভাব! আনান ভাইও কী এমন?
সামিরা একটু খুশি খুশি হয়। আর কিছু না ভেবেই শর্মীকে কল করে বলল,
-দোস্ত…
-বল
-যদি এমন হয় যে আনান ভাই আমাকে ভালোবাসে
-তারপর তোর ঘুম ভেঙে যাবে। আর আমি বলব, স্বপ্ন লিমিটের মধ্যে থেকে দেখবি।
-ধুর না! আমি সিরিয়াস। হয়তো আনান ভাই আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু বলতে লজ্জা পাচ্ছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ই তাকে বলব।
শর্মী দ্রুত বাধা দিয়ে বলল,
-এই না! পরীক্ষার আগে এসব করিস না। আর চান্স পেয়ে নে আগে। দেখবি নিজে এসেই তোকে প্রোপোজ করে দিবে।
শর্মীর কথা বেশ ভালো লাগে সামিরার। যেই শোনা সেই কাজ। তাই বই নিয়ে আদা জল খেয়ে পুনরায় লেগে যায়।
.
.
.
চিন্তায় চিন্তায় ইনায়ার খাওয়া দাওয়া ঘুম সব বন্ধ। এই সূচনা মেয়েটাকে নিয়ে মনের মধ্যে অশান্তি লাগছে। চোখের পানি নাকের পানি এক করে বিছানায় পড়ে আছে ইনায়া। রাত দশটায় নীল দরজায় নক করে। ইনায়া চোখ নাক মুছে দরজা খুলেই বলল,
-খাবো না
-তাতে আমার কিছু যায় আসে না ইনায়া। যে মেয়েটা নাম্বার নিয়ে গেল,সে তো কল করলো না..
ইনায়া হাত মুঠো করে চোখ বুজে নেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-এটা বলতে এসেছেন?
নীল চুলে আঙুল ঢুকিয়ে বলল,
-হ্যাঁ ঐ আর কি..
-নীল ভাই,চলে যান!
-খেয়ে আয়,শরীর খারাপ করবে…
ইনায়া নীলের মুখের উপর সশব্দে দরজা বন্ধ করে দেয়।
(চলবে……)
#Running
#episode:42
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৫২
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৬
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৫
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৭
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৮