Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব -৩৬


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব -৩৬

মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের নতুন প্রফেসর হিসেবে যুক্ত হয়েছেন একজন সুঠামদেহী সুদর্শন পুরুষ। 

ডিপার্টমেন্টের সবার মুখে মুখে এখন একটি কথা,

“আমাদের নতুন প্রফেসর আগুন ভাই! আগুন!”

ইমিডিয়েট সিনিয়র মেয়েরা জুনিয়রদের নিয়ে ভীষণ রকম হিংসার মধ্যে পড়েছে। কয়েকজন মুখ ভার করে বলেছে,

“কপাল কি ওদের! আসতে আসতে এতো সুন্দর স্যার পেলো!”

আশে পাশে সবার উচ্ছাসিত অবস্থা ইনায়া হা হয়ে দেখছে আর গুটি গুটি পায়ে আগাচ্ছে। ইনায়া ভর্তি হয়েছে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে। তবে ভর্তি কার্যক্রম তার বাবা বড়বাবা ই করে দিয়েছেন। ইনায়া সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল এতোদিন পড়াশোনা কিংবা ভার্সিটি সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকান্ড থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক এর রেজাল্ট পেয়েই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে যায়। আর মাঝের সময় গুলো ভীষণ একাকী পার করেছে। সামিরা,শর্মী ব্যস্ত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে। আজ এমন উৎসব মুখর পরিবেশ দেখে ইনায়া বেশ অবাক হয়। ছুটে যায় কামরুল দেওয়ান এর কাছে। ফাউন্ডার রুমে আকবর দেওয়ান, কামরুল দেওয়ান সহ কয়েকজন প্রফেসর আলোচনায় বসেছেন। ইনায়াকে দেখে কামরুল দেওয়ান ইশারায় তাকে ভেতরে ডাকে। ইনায়া সবাইকে সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। 

নিম্ন কণ্ঠে বলল,

-আজ ভার্সিটিতে কোনো প্রোগ্রাম? আমি যে এভাবে এলাম?

কামরুল দেওয়ান আর আকবর দেওয়ান উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো মেয়ের কথা শুনে। পাশ থেকে একজন প্রফেসর কিছু বলতে গেলেও আকবর দেওয়ান হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দেন । 

এরপর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

-সময় মতো বুঝতে পারবে মামনি।

ইনায়া বড়বাবার কাছে যায়। টেনে টেনে বলে,

-বড়বাবা…আমার জন্য কোনো আয়োজন? আমি চাই বাকিদের মতোই আমাকে ভাবা হোক। বাড়তি কোনো সুবিধা চাই না। 

-বাহ্,খুবই ভালো কথা।

-আমার পরিচয় আমি একজন শিক্ষার্থী। আপনারা কাউকে আলাদা আয়োজন করে কিছু জানাবেন না।

আকবর দেওয়ান এবং কামরুল দেওয়ান উভয়ই বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ায় মেয়ের কাছে। 

.

.

.

ইনায়া লিফটে ভিড় দেখে সিঁড়ির কাছে যায়। বড় করে হাঁফ ছেড়ে সিঁড়ি দিয়েই নিজের ক্লাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। চারতলায় অর্থ্যাৎ থার্ড ফ্লোরে আসতে সিঁড়ির ডান দিকে মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের ল্যাবের সামনে ভিড় দেখলে সেদিকে আগ্রহ নিয়ে তাকালো ইনায়া। কোনো একটা লোককে কয়েকজন ছেলে মেয়ে ঘিরে রেখেছে। সংখ্যায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি। পেছন থেকে সাদা ফরমাল ইন করা শার্ট,ফরমাল ব্লু প্যান্ট দেখা যাচ্ছে। তাও একটু পরপর ঢেকে যাচ্ছে। মেয়েদের গায়ে পড়া ভাব দেখে ইনায়া বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে। এতোগুলো মানুষের ভিড়েও মাথা উঁচু হয়ে আছে লোকটার। তবে শুধু পেছনের ঘাড় অবধি চুল দেখা যাচ্ছে। 

ইনায়ার বিড়বিড় করে বলল,

-অদ্ভুত!

পরপরক্ষনেই ভাবল,

-তাতে আমার কি!

 মাথার  চুল ঝাঁকি দিয়ে দ্রুত গতিতে নিচে নেমে আসে। সেকেন্ড ফ্লোরে তার ক্লাসরুম। 

.

ক্লাসের সবার মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। কেউ কেউ চুল ঠিক করছে, কেউ কেউ মেকআপ দিয়ে টাচআপ করছে। ইনায়ার রাগে শরীর জ্বলছে এসব কর্মকাণ্ড দেখে। 

হাত মুঠো করে টেবিলে রেখে পাশের মেয়েকে ডেকে বলল,

-আজ কি এই ক্লাসের কারো বিয়ে?

মেয়েটা গোমরামুখ করে বলল,

-ওমাহ্! কেন?

-সবাই এতো রঙ্গ তামাশা করছে কেন?

-এই মেয়ে! এ কেমন ভাষা? 

-মুখে এতো ব্লাশঅন লাগিয়েছো কেন?

-আমার মুখ ন্যাচারালি রেডিশ। ফালতু কথা বলবে না তাই।

-যাই হোক,মুখ এতো লাল হয়েছে কেন? উদ্দেশ্য কী?

-তুমি জানো না আজকে ভার্সিটিতে সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ইয়ং প্রোফেসর জয়েন করছেন?

ইনায়া অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,

-নাহ্,আমার কোনো ছেলেকে নিয়ে ইন্টারেস্ট নেই। 

মেয়েটা একটু উপহাস করে বলল,

-সবাই এমন বলে রে বোন! কিন্তু স্যার কে দেখলে তুমি পাগল হয়ে যাবে,আ‘ম শিওর! চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি।

ইনায়া মুচকি হাসে। নীল ভাই ছাড়া ওকে কাবু করার ক্ষমতা দুনিয়ার দ্বিতীয় কোনো পুরুষ রাখে না। 

তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল,

-ওকে চ্যালেঞ্জ,কোনো আলতু ফালতু লোকের এতো ক্ষমতা এখনো হয়নি ।

ইনায়ার সামনে বসা একটা ছেলে ,কালো শার্ট পরিহিত। তাদের এসব কথা শুনছিল। ইনায়ার কথা শুনে পেছনে তাকায়। 

ইনায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,

-হ্যালো! আমি ঈশান।

ইনায়া দ্রুত টেবিলের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয় নিজের। ঈশানকে কোনো জবাব না দিয়ে বই খুলে দেখতে থাকে। 

ঈশান পুনরায় বলল,

-এই প্রথম একটা মেয়ের থেকে ঐ প্রফেসর কে নিয়ে নেগেটিভ কিছু শুনলাম । গুড গুড,ভেরি গুড। আ‘ম ইমপ্রেসড!

ইনায়া বই বন্ধ করে ঈশান এর দিকে তাকায়। শক্ত গলায় বলে,

-আপনাকে ইমপ্রেস করতে আমি কিছু বলিনি। 

-কিন্তু তুমি আমায় ইমপ্রেস করেছো। চাইলে কিন্ত আমিও তোমায় ইমপ্রেস করতে পারি।

-এখানের কোনো ছেলের প্রতি আমার আগ্রহ নেই। Not even you.

ঈশান গালে হাত দিয়ে ভাবুক হয়ে বলল,

-কেন কেন? হরমোনাল ইমব্যালেন্সড?

ইনায়া চোখ সরু করে তাকায় ঈশানের দিকে। রাগে হাত কাঁপছে তার। টেবিলে শক্ত করে হাত রেখে উঠে দাঁড়ালো। ঈশানকে অনেক কিছু বলার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে সে। তবে সেই মুহূর্তে ইনায়ার সাথে সাথে বাকি সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে। ঈশানও সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ইনায়া বেশ অপ্রস্তুত হয়ে আসে পাশে দেখে। নতুন প্রফেসর ক্লাসে ঢুকেছেন। সকলে একসাথে সালাম দেয়। তবে ইনায়ার মুখ থেকে কোনো আওয়াজ আসে না। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হয়েছে যাকে নিয়ে তার প্রতি ইনায়া এখন বিরক্ত। নীরবে সে বসে পরে নিজের জায়গায়। 

বই এর দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে ভাবে,

-নীল ভাই ছাড়া কাউকে দেখতেও ইচ্ছে করে না। আচ্ছা উনিও কি এমন? নাহ্ ! এমন না । তার তো বউ আছে, পাত্রী তো ঠিক করেই রেখেছেন। আমাকে তো আর ভালোবাসে না । না বাসুক! অবিবাহিত হয়েই থাকব আমি। তবুও অন্য পুরুষের সামনে নিজেকে রাখা?অসম্ভব।

ইনায়ার ভাবনায় ছেদ পড়ল পাশের মেয়ের ধাক্কায়। মেয়েটা ইনায়াকে একভাবে বলেই যাচ্ছে

-হ্যালো! স্যার ডাকছেন তোমায়। এক্সকিউজ মিঃ! হ্যালো??? ক্যান ইউ হেয়ার মি? 

ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকায় মেয়েটার দিকে। বলল,

-কী হয়েছে?

-স্যার দাঁড়াতে বলেছেন তোমায়। 

ইনায়া বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। তবে মাথা নিচু করেই রেখেছে। কারো মুখে কোনো কথাও নেই। 

বেশ কিছুক্ষণ নিরবতার পর গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন ভেসে আসে,

-আপনার নাম? মিসেস অর মিস?

ইনায়া একেবারে তার সোজাসুজি তীক্ষ্ণ নজরে তাকায়। লম্বা উজ্জ্বল শ্যামলা সুঠামদেহী নিখুঁত এক সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। 

ইনায়া একটু শব্দ করে অস্ফুট স্বরে বলল,

-নীল ভাই….

নীল এগিয়ে আসে ইনায়ার দিকে। দু’হাত পেছনে রাখা তার । বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি ধরে রেখেছে। ইনায়ার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা কাশি দিয়ে বলল,

-নাম?

-ই..ইনায়া…

-গুড। মিস অর মিসেস?

-হু?

-ম্যারিড অর আনম্যারিড?

-ম্যারিড…না না সরি। আনম্যারিড।

-ওকে মিস ইনায়া। আপনার মনোযোগ কোথায়? আমি আসার পর থেকে খেয়াল করছি আপনি খুব বাজে রকমের অন্যমনস্ক। Why?

ইনায়া পরিস্থিতি সামলিয়ে কথা বলতে হিমশিম খাচ্ছে। তবুও কোনো রকমে বলল,

-সরি সরি নীল ভাই..

-উহ্! ইউ শ্যুড রেসপেক্ট ইউর টিচার। রাইট? 

-ইয়েস স্যার..

নীল একটু এগিয়ে একেবারে সামনের সারির প্রথম বেঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে একজন মেয়েকে জিজ্ঞেস করল,

-আপনার নাম?

মেয়েটা আমতা আমতা করে জবাব দেয়,

-সূচনা।

-রেজাল্ট?

-৫.০০

ইনায়া এখনো এক দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে। তবে মেয়েটার সাথে কথা বলা দেখে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রাগ মাথায় চেপে বসল। মেয়েটা যদিও যথেষ্ট ভদ্র। মার্জিত পোশাক,তেল দিয়ে পরিপাটি করে চুল বাঁধা। 

নীল ইনায়ার ভাবুক চাহনির দিকে তাকায়। হাতের ইশারায় বলল,

-কাম হেয়ার।

ইনায়ার নড়াচড়া না দেখে নীল পুনরায় বলল,

-আমি সেইড কাম হেয়ার! উইথ ইউর ব্যাগ অফ কোর্স।

ইনায়া এগিয়ে যায় ব্যাগ নিয়ে। নীলের কাছাকাছি দাঁড়াতে নীল হাত দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে বলে,

-সিট হেয়ার।

ইনায়া সেখানে বসতে নীল বই হাতে তুলে নেয়। প্রোক্যারিওটিক সেলস নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে বলল, 

-এই প্রথম বেঞ্চে আমি যে দুজনকে বসিয়েছি তারা ব্যতিত আর কেউ বসবে না। আন্ডারস্ট্যান্ড?

সকলে একসাথে জবাব দেয়,

-ইয়েস্ স্যার।

-এই বেঞ্চের পেছনের বেঞ্চ এবং দুপাশের দুটো বেঞ্চে কোনো ছেলে বসবেন না। ওকে?

ইনায়া থতমত খেয়ে নীলের দিকে তাকায়। এ কেমন অদ্ভুত রুলস্! তবে সকলে তাতে রাজী হয়ে যায়। 

নীল ইনায়াকে আড় চোখে একবার দেখে বলল,

-মেয়েদের প্রথম বেঞ্চে বসায় সুবিধা বেশি দেওয়া উচিত। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া। আশা করছি আপনাদের আপত্তি নেই। এই নিয়ম অনুযায়ী আপনারা প্রত্যেকটি ক্লাস করবেন।

ইনায়া ছাড়া সকল মেয়েই হাত তালি দেয় নীলের কথা শুনে। একে অপরের কানাকানি করছে,

-স্যার যেমন সুদর্শন,তেমন সুপুরুষ! 

ইনায়ার গায়ে এদিকে আগুন জ্বলছে। মনে মনে ভাবল,

-এতো মেয়ের মন পেতে নীল ভাই এসব নাটক করছে?

তবে মুখে কিছু প্রকাশ করে না। নীল সবার দিকে একবার করে তাকায়। শক্ত কণ্ঠে বলে,

-keep silent!

এরপর ঈশানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

-নাম?

-ঈশান চৌধুরী

-টেল মি অ্যাবাউট ভাইরোলজি ইন ডিটেইলস।

-কিন্তু স্যার,আপার কোর্সের পড়া এটা। আর আমরা তো ফ্রেশারস..

-আপনার থেকে এখন এগুলো জানতে হবে? আমাকে ইমপ্রেস করুন মিঃ ঈশান চৌধুরী,কাম অন। 

কী ভাবছেন? কোনো মেয়ের সাথে কথা বলার আগেও কি এতো ভাবেন?  আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন করি। 

-ইয়েস স্যার..

-হরমোনাল ইস্যু ভাইরাস জনিত রোগের উপর কেমন প্রভাব ফেলে?

ঈশান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। 

-বলুল ঈশান চৌধুরী। হরমোনাল ইমব্যালেন্সড নিয়ে আপনার আগ্রহ ভালো। আই অ্যাপ্রিশিয়েট! ক্লাসে ঢুকতে ঢুকতে শুনলাম অনেক কথাই। Microbiology থেকে শিফট হয়ে Endocrinology তে চলে যান ।It will be better for you.

ঈশাল এখনো নিশ্চুপ। 

নীল শান্ত চোখে তাকে একবার পরখ করে নিল। তারপর শীতল কণ্ঠে বলল,

-গেট আউট। ক্লাসের বাইরে যান,কুইক।

(চলবে……)

#Running 

#episode:36

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻

Share On:

TAGS:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply