#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -৩৩
ইনায়ার শরীর ভিজে গেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। আর সামনে নীলের অস্পষ্ট চেহারা। দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে যায় ইনায়ার। মুখ খুলে বড় এক শ্বাস নেয় সে। শরীর মুচড়িয়ে চোখ খুলে দেখে সামনে নীল দাঁড়ানো। দুহাত ভাঁজ করে কপাল কুঁচকে ইনায়াকে দেখছে। পড়নে ফরমাল সাদা শার্ট ইন করা কালো ফরমাল প্যান্টের সাথে। ইনায়ার চোখের কোণা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
নীল গলার স্বর উঁচু করে বলল,
-আর কতক্ষন ধরে ঘুমাবি? পড়তে হবে না? উঠে পড় ইনু!
ইনায়া চোখের পলকে উঠে নীলের গলা জড়িয়ে ধরে। হাউমাউ করে কাঁদছে সে। কান্না মাখা কন্ঠে বলল,
-আমায় ছেড়ে দিয়েন না নীল ভাই। আমি ম*রে যাব। ধরে রাখেন আমায়।
নীলের কপালে আপনাআপনি ভাঁজ পড়ে। ইনায়ার মাথায় হাত রেখে বলে,
-এই! কী হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?
-জানি না আমি। আপনি ছাড়বেন না আমায় প্লিজ… নীল ভাই..
-রিল্যাক্স ইনু! আমি আছি তো।
দোতালায় থাকা সবাই ইনায়ার কান্না শুনতে পায়। এতো
জোড়ে কান্নার শব্দে শিমু জাহান দৌঁড়ে চলে আসেন । সেই সাথে আসে আনায়া আর আনানও। ইনায়া হাঁপাচ্ছে, জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। শিমু জাহান দ্রুত বুকের সাথে মিশিয়ে নেনে মেয়েকে।
বলেন,
-কী হয়েছে মা? খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলে?
শিমু জাহান ইনায়ার কপালে হাত বুলিয়ে দেন। দোয়া দুরুদ পড়ে ফুঁ দেন মাথায়। পরম আদরে বলেন,
-সব ঠিক হয়ে যাবে। ভয় পায় না।
ইনায়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। নীলের দিকে হাত বাড়িয়ে একটু থেমে থেমে বলল,
-বড়মা.. নীল.. নীল ভাই..
নীলকে পা*গলের মতো লাগছে। চেঁচিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-মা এমন করে কেন ও,আমি হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। আমার কষ্ট হচ্ছে,তোমরা কিছু বুঝতে পারছো না?
-তুই বস তো শান্ত হয়ে। কিচ্ছু হয়নি। স্বপ্ন দেখেছে খারাপ কিছু। আমি সকালেও এসে ঘরের দরজা খুলে রেখে গিয়েছি। আরো ওকে দেখে গেলাম। সব ঠিক ছিল।
নীল ইনায়ার গালে হাত রাখে।
নরম কন্ঠে বলে,
-খারাপ স্বপ্ন দেখেছিল ইনু?
ইনায়া জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে মাথা উপর নিচ ঝাঁকালো। আনান এগিয়ে আসে ইনায়ার কাছে।
হাত ধরে বলল,
-ভয় পায় না। ওটা স্বপ্ন ছিল ইনু। দেখ আসলে কিচ্ছু হয়নি।
ইনায়া ভয়ে ভয়ে আসে পাশে তাকায়। তবে নীলের দৃষ্টি
ইনায়ার হাতের দিকে। আনানের শক্ত করে ধরে রাখা হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে আনানকে বলল,
-আচ্ছা ছাড়,আমি দেখছি। তুই ব্রেকফাস্ট করে ভার্সিটিতে যা।
আনান হাত ছেড়ে দেয়। একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলে,
-একদম চিন্তা নেই ইনু। আমি আছি তো।
নীলও হাত মুঠো করে আনানের দিকে তাকায়। রেগে বলল,
-যেতে বলেছি না? এতো মানুষ থাকলে তো ও এমন করবেই। ঘর ফাঁকা কর।
আনান আনায়াকে নিয়ে চলে যায়। শিমু জাহান এখনো ইনায়াকে জড়িয়ে রেখেছে। আর ইনায়া নীলের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। যেন একটু ছাড়লেই সে নীলের থেকে আলাদা হয়ে যাবে। নীল ইনায়ার হাত ছাড়ে না।
শিমু জাহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-মা ওকে একটু পানি এনে দিবে?
শিমু জাহান নীলের দিকে তাকিয়ে থাকেন কয়েক সেকেন্ড। তারপর ইনায়াকে ছেড়ে পানি আনতে যায়। ইনায়ার ছোট্ট শরীর আলগা হওয়ার সাথে সাথেই সে নীলকে জড়িয়ে ধরে। কান্না জড়ানো গলায় বলল,
-আপনি ব্যাথা পেয়েছেন নীল ভাই?
ইনায়ার মাথা নীলের বুক বরাবর ঠেকেছে। নীলের বুকের ধুকধুকানি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই ছোট্ট মেয়েটা নীলকে এলোমেলো করে দেওয়ার জন্য একাই যথেষ্ট। নিজেকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
-আমার কিচ্ছু হয়নি ইনু। কী স্বপ্ন দেখেছিস বল তো?
শিমু জাহান পানি নিয়ে আসেন। নীল বেশ অপ্রস্তুত হয়ে ইনায়াকে ছেড়ে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। ইনায়া ঢক ঢক করে পানি খেয়ে বলল,
-মা তো খারাপ স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে মানা করেছে। আপনাকেও বলব না আমি।
শিমু জাহান ইনায়ার মাথায় হাত বুলায়। মুচকি হেঁসে বলে,
-বলতে হবে না মা। দোয়া পড়ে দিয়েছি তো,সব ঠিক হয়ে যাবে এখন। খেতে চল।
ইনায়াকে কথা টা বলে নীলের দিকে মুখ ভার করে তাকান তিনি। ভারী গলায় বললেন,
-আপনাকে আলাদা করে দাওয়াত দিতে হবে? নাকি ঘর ফাঁকা রাখতে হবে আরো কিছুক্ষন?
নীলের মায়ের কথা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না।এতো বড় সংসার সামলানো বড় গিন্নি সে, সন্দেহ যাই করুক,তা ঠিক দিকেই নির্দেশ করবে।
তবুও নীল বিষয়টা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। নানা কলা কৌশল করে মাকে বোঝায়,
-আসলে নিরবতা আমাদের মস্তিষ্ক দ্রুত শীতল করে।
শিমু জাহান আড় চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ইনায়াকে নিয়ে চলে যান।
.
.
.
.
ঘুম থেকে উঠে সামিরা আনানকে ম্যাসেজ দেয়,
“গুড মর্নিং…”
আনানের শুরুতে বিরক্ত লাগলেও পরবর্তী তে বেশ খুশি হয় সে। ম্যাসেজে বলল,
“মর্নিং। বলো এখন।”
“কী?”
“তোমার ভাইকে নিয়ে”
“আমার ভাই আপনার থেকে পাঁচ অথবা ছয় বছরের বড়।”
“তারপর?”
“আজ এতোটুকুই”
সামিরার ম্যাসেজটা দেখে আনানের ইচ্ছে করছে ফোনটা আছড়িয়ে ফেলতে। সামিরা আবার ম্যাসেজ দেয়,
“ইনু কেমন আছে?”
“ওকেই জিজ্ঞেস করো”
“আপনি তো ওর ভাই। আপনিই বলুন না…”
“আমি ওর ভাই নই”
“তাহলে কি আমি ভুল কাউকে ম্যাসেজ দিচ্ছি? দাঁড়ান তো চেক করে নেই আপনি আনান দেওয়ান নাকি।”
আনান নেট অফ করে ফোন রেখে দেয়। বিড়বিড় করতে করতে বলল,
-মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে আমি নিশ্চিত। উফ্!
এদিকে আনানকে কয়েকটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে রেখে দেয় সামিরা। বই খুলে টেবিলে বসে। বাম হাত বাম গালে রেখে ডান হাতের কলম মুখে দিয়ে ভাবতে থাকে,
-উফফ্ আনান ভাই! আপনার সাথে কথা বললেই মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। আপনি হলেন আমার ভালো থাকার মেডিসিন!
.
আনান বেশ অনেকদিন পরে আজ আবার চিঠি লিখতে বসেছে। কবি কবি ভাব ধরে লিখতে শুরু করল,
প্রিয় ইনু,
তোকে কেউ ভালোবাসবে আমি ছাড়া,তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। আমি চাই তুই শুধু আমার হবি,শুধুই আমার। তুই অসুন্দর হলেও আমি তোকে ভালোবাসতাম। তাই ভাবিস না তোর সৌন্দর্য আমায় আকৃষ্ট করে। বরং এতো সুন্দর না হলেও পারতি বল? কিন্তু
সৃষ্টিকর্তা এতো যত্ন করে তোকে সৃষ্টি করেছেন যে আজ ঐ সামিন আইয়াজ নামক পথের কাঁটা কে নিয়ে আমি বিচলিত। এসব ছেলেরা তোর রূপে মুগ্ধ। তুই কারো প্ররোচনায় পরবি না ইনু। আমার হবি তো বল? শুধুই আমার?
আনান কলম ছাড়ে। ইনায়াকে হারানোর ভয় হচ্ছে কয়েকদিল ধরে। নীলের মতো মানুষ যাকে বড় মাপের মানুষ বলে সম্বোধন করেছে সে আসলে কেমন তা ভেবে আনান চিন্তিত।
.
.
.
.
আজ বেশ অনেক দিন পর রিফাত কল করেছে নীলকে। কিছুদিন পরেই ইনায়ার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। বড় ভাই হিসেবে খোঁজ নেওয়া দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। নীলকে কল করে সাথে সাথে।
-হ্যালো ভাইয়া…
-বল রিফাত। কী অবস্থা? কী মনে করে হঠাৎ?
-ইনায়ার পরীক্ষার সময় হয়ে এলো যে, প্রিপারেশন কেমন? তা জানতেই কল করলাম।
-বোনকে কল না করে আমাকে করলেন যে?
-বোনকে কল করে দুলাভাই এর চোখের বিষ হতে চাই না।
-ভালো হবি নারে তুই?
-তুমি আর হতে দিচ্ছো কই? যাই হোক ইনায়ার কী অবস্থা? প্রিপারেশন ভালো?
-আমার মতো একজন শিক্ষক থাকতে ভালো না হয়ে পারে?
-উহু উহু! আনানের কী অবস্থা? ব্যাথা আছে নাকি?
-নাহ্
রিফাত একটু থামে । হালকা কাশি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-অনু? ও কেমন আছে?
-কেন ওর আবার কী হবে!
-না মানে কী অবস্থা তাই আরকি।
-মোজো মা কে কল করে জিজ্ঞেস কর। নাম্বার দিব?
-থাক ভাই,দরকার নেই। আসসালামু আলাইকুম।
-কী জন্য যে কল করিস তাই ই বুঝতে পারি না। আমার ইনুর পরীক্ষার কথা শুনতে গিয়ে কত কথা!
-রাখছি বস্, আন্দোলনে যেতে হবে এখন।
-কীসের?
-উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে।আমার বোনের হয়ে যাব আমি।
নীল উচ্চস্বরে হেঁসে দেয়। বলে,
-এসব বাঁ*দরামি বাদ দে রিফাত। ভালো থাক। রাখছি।
-ওকে ভাই।
.
.
.
ইনায়ার পরীক্ষার আর কয়েকদিন বাকি। বর্তমানে পড়তে পড়তে তার মুখে ফেনা উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। পরীক্ষার আগে সিরিয়াস হওয়া মেয়েটা একেবারে টাইম মতো সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে। ঘরের চারদিকে বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। একেকটা বিষয়ের কথা মনে পড়ে আর তখন সে বিষয়ে চোখ বোলায়। পড়ার টেবিলে কিছু বই রাখা,বিছানায় কিছু বই খাতা ছড়ানো। ঘর থেকে এখন একেবারে বের হয় না বললেই চলে। মা চাচি রা ঘরে এসে মুখে খাবার তুলে দিয়ে যায় তিন বেলা করে। আর সন্ধ্যা থেকে নীলের পড়ানো তো থাকছেই।
আরানও যতটুকু সময় ফ্রি থাকে শর্মীকে পড়ায়। বন্ধুর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া। এদিকে সামিরা রোজ ঘুম থেকে উঠে আনান কে একটা করে ম্যাসেজ দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে পড়তে বসে।বিগত দিনগুলোতে সামিন কে নিয়ে দেওয়া তথ্য হলো হলো,
“সামিন ভাইয়ার ফেসবুক আইডির নাম সামিন আইয়াজ”
“সামিন ভাইয়া একজন ছেলে”
“সামিন ভাইয়া অনেক লম্বা”
“সামিন ভাইয়ার চুল সুন্দর”
“সামিন ভাইয়ার মুখে দাড়ি আছে”
“সামিন ভাইয়ার কন্ঠ অনেক ভারী”
ইত্যাদি ইত্যাদি। আনান ও বিরক্ত হয়ে সামিন আইয়াজ কে নিয়ে প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে দিয়েছে এখন
(চলবে……)
#Running
#episode:33
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
TAGS: আড়ালে তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩০
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৭
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৩৪
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৩
-
আড়ালে তুমি পর্ব -৪৪