#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব -২৪
দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর থেকে সব আয়োজন শুরু হয়েছে পিকনিকের জন্য। উঠোনে মাটির চুলা কেটে দেয় রিফাত। বড় বোন শীলার আদেশে কাজটা করতে হয় তাকে। মন থেকে রাজি না থাকলেও আপুর কথা ফেলতে পারে না। ইনায়া,আনায়া, সানজিদা,শীলা, সম্পূর্ণা সকলে রান্নার উপকরণ প্রস্তুত করে। তারপর সব বোন একসাথে তৈরি হতে চলে যায় ঘরে। পুরোন বিল্ডিং এর দোতলার ডান দিকের ঘরটা শীলার। সকলে সেখানেই সাজগোজের সিদ্ধান্ত নেয়। সানজিদার বুদ্ধি তে অবশ্য এ সিদ্ধান্ত। সে বলেছিল,
-শীলা আপু মেকআপ করাতে পারে অনেক সুন্দর,আর ওর কাছে সব আছে। তাই আমরা ওখানেই রেডি হবো।
তাতে বাকিরা কেউ দ্বিমত করে না। চলে যায় শীলার রুমে। দরজা বন্ধ করে বিছানায় চোখ পড়তে দেখে পাঁচটা জামদানি শাড়ি রাখা। সানজিদা সেদিকে দেখে দরজার খিল খুলে বারান্দায় দাঁড়ায়। উপর থেকে জোড়ে চেঁচিয়ে বলে,
-ওমা! শাড়ি কে রেখেছে?
নিচ থেকে ইনায়ার বড় মামি উত্তর দেয়,
-তোর দাদু। মোস্তফা কে দিয়ে শাড়ি আনিয়েছে আজ দুপুরে।
ইনায়া সর্বপ্রথম নীল শাড়ি টা তুলে নিল। বুকের সাথে জড়িয়ে বলে,
-আগেই বলে দিচ্ছি কিন্তু,নীল আমার!
সানজিদা আড় চোখে ইনায়াকে দেখে। তারপর কালো শাড়িটা তুলে বলে,
-আচ্ছা,এটা আমি নিচ্ছি।
আনায়া নেয় বেগুনী রঙের শাড়ি টা। আর সম্পূর্ণা নেয় কমলা-গোলাপী শাড়ি। সর্বশেষে শীলা নেয় মেরুন রঙের জামদানি টা। ছোট বোনদের আবদারে শীলা সবাইকে সাজিয়ে দিবে।এরই মাঝে শীলার হাসবেন্ড বর্ষন কল দিলে সবার সামনেই শীলা কল ধরে। সঙ্গে সঙ্গে বর্ষন বলে,
-তুমি খেয়োছো সোনা? কল দেওয়ার কথা ছিল। গিয়েই ভুলে গেলা। এই জন্যই আমি যেতে দিতে চাই না । বুঝেছো এখন?
বর্ষনের কথা শুনে শীলা এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। ছোটদের সামনে এসব কথা শুনতে হলো। ওরা কী ভাবছে এখন! শীলা ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে সকলের দিকে তাকায়। সানজিদা হাত ভাঁজ করে শীলাকে দেখছে। ইনায়া আনায়ার পেছনে কাঁধ ধরে হা করে শীলাকে দেখছে। আনায়া অবুঝের মতো তাকিয়ে আর সম্পূর্ণা হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শীলা চোখ ফিরিয়ে বর্ষন কে বলল,
-আপনার সব শালিকারা আমার সাথে। পরে কথা বলব।
-আচ্ছা মনে থাকবে।
শীলা মুচকি হাসে। বর্ষন আবার বলে,
-ভালোবাসি।
শীলা লজ্জায় লাল। দ্রুত কল কেটে সবাইকে সাজানোর জন্য প্রস্তুত হয়। এদিকে ইনায়া আনায়াকে আস্তে আস্তে বলছে,
-অনু…
-হু..
-নীল ভাইও কি ওনার বউকে এতো ভালোবাসবে?
-বড় ভাইয়া?
-হুঁ হুঁ ।
-না না ইনুপু! বড় ভাইয়া জীবনেও এসব রং ঢং করবে না।মিলিয়ে নিও।
ইনায়া হতাশ হয়। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
-তাহলে আমার কী হবে?
-আমার দুলাভাই আবার তোমাকে অনেক ভালোবাসবে।
ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকায় আনায়ার দিকে। বলে,
-তাহলে নীল ভাইও ওনার বউকে অনেক ভালোবাসবে।তুই কিছু বুঝিস না!
-ঠিক আছে আমি বড় ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করব।
-থাক! এতো উপকার করতে হবে না।
ইনায়ার থেকে ধমক খেয়ে আনায়া চুপসে যায়।
.
.
.
.
শাড়ি পরে সবাই সুন্দর করে তৈরি হয়েছে। তবে ইনায়া ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়নি। শীলার অনেক জোড়াজুড়িতে লাভ হয় না। আবার খুব যে ভারী মেকআপ ,তাও না। খুব ন্যাচারাল ভাবে তৈরি হয় ইনায়া।তাতেই চোখ আটকে যাচ্ছে। আনায়া ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-ইনুপু চোখ সরানো যাচ্ছে নাতো!
-কেন বলতো?
-কেন?
-নীল আছে সাথে,তাই।
-দুলাভাই দেখলে তো তোমাকে তুলে নিয়ে যেত।
ইনায়া উপরের দিকে তাকায়। বিড়বিড় করে বলে,
-সেই কপাল কি আমার নাকি!
নিচ থেকে রিফাত জোড়ে জোড়ে ডাক দেয় সকলকে। চেঁচিয়ে বলে,
-এই কু*ত্তা মারা গরমে আমাকে দিয়ে কু*ত্তার মতো খাটাচ্ছিস। কাঁদা হওয়া মাটির উপর বহু কষ্টে আগুন জ্বালালাম। লোকজন পর্যন্ত নিয়ে আসলাম কামলা দেওয়ানোর জন্য। আর তোরা আরামে ঘরের মধ্যে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছিস!
রিফাতের চিল্লা পাল্লা তে সবাই নিচে চলে আসে। ইনায়াকে দেখে রিফাতের একজন ফ্রেন্ড এক দফায় হোঁচট খায়। বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে উঠলো,
-হায়!
রিফাত সেদিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে। আস্তে আস্তে বলে,
-আমার বোন মানে তোরও বোন। খুব সাবধান।
ছেলেটা মাথা নামিয়ে ফেলে। আরেকজন আনায়াকে দেখিয়ে বলে,
-আর পাশেরটাও কি বোন?
-না
-তাহলে ঐটা আমার।
রিফাত প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো,
-তোর চোখ দুটো তাহলে আমার।
ইনায়া শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে কাজ করতে লাগে। তার কাজ হলো রান্না পুড়ে যাচ্ছে নাকি তা দেখা। রিফাত দেয় এই দায়িত্ব। সানজিদা হেঁসে বলে,
-বাহ্ বিরাট বড় দায়িত্ব!
আনায়াও ইনায়ার সাথে সাথে কাজ করতে গেলে রিফাত ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখে। বলে,
-এই মেয়ে ! বসো। ছোট মানুষের বসে থাকতে হবে,দুধভাত তুমি।
আনায়া মুখ ভেংচি কাটলো।তবে তা রিফাতের চোখের আড়ালে। ইনায়া পেঁয়াজ নাড়তে নাড়তে পাশে কারো উপস্থিতি টের পেলে মাটির দিকে তাকায়। সাদা রঙের ক্যাজুয়াল সুজ পায়ে। অফ হোয়াইট কালারের ফরমাল প্যান্ট আর পোলো টি শার্টে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং দেওয়ান নীল। ইনায়া চোখ বড় করে তাকায় সেদিকে। শুকনো ঢোক গিলে । কাঁপা হাতে কোমড়ে গুঁজে রাখা আঁচল সরিয়ে দেয়। নীল ডান দিকে ঘাড় টা হালকা কাত করে ইনায়াকে দেখছে। পেছন থেকে আনান উকি দিয়ে বলল,
-সারপ্রাইজজজজজজজজ….
ইনায়া আনানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে গালি দিল কয়েকটা,
-অ*মানুষ একটা! এই সারপ্রাইজ আগে বলতে পারলি না। শা*লার ভাই নাকি অন্য কিছু! এই চুলার ভেতর ঢুকিয়ে যদি রান্না করা যেত শান্তি পেতাম।
উপরে উপরে জোড় করে একটা হাসি দিয়ে ঢোক গেলে ।
সানজিদা দৌঁড়ে ভেতর থেকে একটি চেয়ার এনে নীলের সামনে রাখে। নরম কন্ঠে বলে,
-বসুন।
তবে নীলের বরাবরের মতো ভারী কন্ঠে ভারী জবাব,
-no thanks
এরপর ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-অনেক জার্নি করে এসেছি ,রেস্ট করতে হবে।
বলে নীল এক ঝলক রিফাতের বন্ধুদের দেখে।
আনান এগিয়ে এসে বলে,
-হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া,চলো ভেতরে যাই।
ইনায়ার বড় মামি আর ছোট মামি এসে নীল আর আনানকে ভেতরে নিয়ে যায়। পুরোন বিল্ডিং টার নিচের বাঁ দিকের রুমে। নীল ভেতরে ঢুকতে পেছন ফিরে ইনায়ার দিকে তাকায়। আদেশ করে বলল,
-ইনু,পানি নিয়ে আয় এক গ্লাস,ফাস্ট
ইনায়া রোবটের মতো দাঁড়িয়ে ।শুধু মাথা টা নাড়ালো। তবে জবাব দেয় সানজিদা,
-আমি নিয়ে আসছি….
নীল এবার গলা ছেড়ে ডাক দেয়,
-ইনায়া!
নীলের এমন ডাকে ইনায়া চমকে ওঠে। কোনো রকমে শাড়ির কুঁচি গুলো ধরে ভেতরে দৌঁড় দেয়।
সানজিদা কপাল ভাজ করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
.
.
.
.
ইনায়া পানি নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ানো। নীল আধাশোয়া অবস্থায় কপালে হাত দিয়ে রেখেছে। আনান বসে ফোন দেখছে। ইনায়াকে দেখে আনান বলে,
-ইনু,ভেতরে আয়। ওভাবে দাঁড়িয়ে কেন?
ইনায়া জবাব দেয় না। টিপটিপ করে পা ফেলে ভেতরে যায়। কাঁপা হাতে পানি এগিয়ে দেয় নীলের দিকে।নীল গ্লাস টা ধরে আনানকে বলে,
-অনুকে ডেকে আন তো আনান। আর ইনুর হয়ে কোনো কাজ করতে হলে করে দে।
আনানের ও বিষয়টা মনে হয়েছিল একবার। ইনায়া কাজ করছে যা তারও ভালো লাগছে না। তবে কীভাবে কী বলবে তাই বুঝতে পারছিলো না। মনে মনে নীলকে ধন্যবাদ দিয়ে আনান বেড়িয়ে যায়।
পানি এক ঢোক খেয়ে ইনায়াকে বসতে বলে নীল। তবে ইনায়ার কানে যেন কথা যায় না। নীল যে এখন তার চোখের সামনে ,বিষয়টা প্রায় অসম্ভব। এখনো মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। তাই নীলের আদেশের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না ইনায়া। নীল পুনরায় বলল,
-কী হলো? কথা কানে যায়নি?
ইনায়া বসে । নীল ইনায়াকে কিছুক্ষণ দেখে হালকা কন্ঠে বলল,
-সুন্দর লাগছে।
ইনায়া আরেক দফায় চমকে যায়। ইশারায় বোঝায়,
-হ্যাঁ?
নীলের আরেক ঢোক পানি খেয়ে বলে,
-বললাম সুন্দর লাগছে। তবে শাড়িটা খুলে ফেল।
ইনায়া চোখ বড় করে তাকায়। নীল বলে,
-জামা কাপড় এনেছিস?
ইনায়া মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে।
-বোবা তুই?
ইনায়া মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে। নীল এবার বিরক্ত হয়ে দাঁড়ায়। হাতে উল্টো হয়ে থাকা ঘড়ি সোজা করে বলে,
-ঠিক পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। এর মধ্যে শাড়ি খুলে একটা ঢিলাঢালা জামা পরে, সুন্দর করে ওরনা নিয়ে আসবি। কোথা থেকে কীভাবে করবি আমি কিছু জানি না। And your time starts now.
ইনায়া ঝটপট করে বেড়িয়ে পরে। দ্রুত শাড়ি খুলে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তৈরি হয়ে আবার নীলের সামনে হাজির হয়। নীল ঘড়ির দিকে তাকিয়েই বসে ছিল। ইনায়া আসতে আবার বলল,
-তোর ফোনটা দে
ইনায়া এবার চমকে ওঠে। ফোন চায় কেন? ঐ সামিন কে দেখলে যদি ভুল বোঝে! কোনো রকমে জবাব দেয়,
-চার্জ নেই,বন্ধ হয়ে গেছে….
-ওহ্ । তাই এইচএসসি পরীক্ষা কেমন হলো?
ইনায়া ভ্রু ভাজ করে তাকায় নীলের দিকে। বলে,
-পরীক্ষা? হয়নি তো।
-কী বলিস! হয়নি?
ইনায়া মাথা নিচু করে রাখে।
নীল নিজের ফোন বের করতে করতে ইনায়াকে বলল,
-পড়তে বলেছিলাম ঠিক করে। আর তুই ঘুরতে চলে এসেছিস। শাস্তি হিসেবে লোকাল বাসে তোকে এখন ঢাকায় নিয়ে যাব। যা ব্যাগ গুছিয়ে ফেল।
ইনায়া অসহায় হয়ে নীলের দিকে তাকায়। চোখে পানি ছলছল করছে। আবদার করে বলে,
-প্লিজ নীল ভাই..বাসায় গিয়ে সারাদিন পড়ব। ভালো রেজাল্ট হবে বলছি তো…প্রমিস….
নীল ইনায়াকে আড় চোখে একবার দেখে। তারপর উঠে চলে যায় ইনায়ার সামনে থেকে।
এতোক্ষণ পরে ইনায়া যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আনায়ার কাছে গিয়ে বলল,
-এই অনু!
-কী?
-তোর নীল ভাই এখানে কীভাবে এলো?
-ইনুপু! এটা ভাবতে ভাবতে আমি পা*গল হয়ে যাচ্ছি।পড়াশোনাও এতো কঠিন না,এই বিষয়টা যতোটা জটিল মনে হচ্ছে। তুমি আর কিছু বলো না এখন।
-শোন,তোর বড় ভাইয়া না তোকে এত্তো ভালোবাসে। জিজ্ঞেস কর গিয়ে।
-আচ্ছা,খেয়ে দেয়ে। দেখা গেল ভাইয়া না খেয়ে আছে । এই জন্যে অনেক বেশি রেগে আছে।
ইনায়া মাথা নাড়ে।
.
.
আনান রিফাতের সাথে হাতে হাতে কাজ করছে। নীল তাদের মাঝে আসতে রিফাত বলে,
-আরে ভাইয়া,তুমি বসো গিয়ে।
-রিফাত শোন! তুই ভালো করেই জানিস আমি থার্ড পারসন আমার পার্সোনাল লাইফের সাথে অ্যালাউ করি না। এরপরেও কেন বাইরের মানুষ এর সম্মুখীন হতে হলো? অনেক বছর আগের কথা কি ভুলে গেছিস?
-না ভাই… আসলে…
নীল আনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-তুই ওদিকে যা একটু।
আনান যেতেই নীল রিফাতকে বলল,
-আসল নকল আমি কিছু শুনতে চাই না। তুই জানিস! ও বরিশালে,এই কথাটা শোনা মাত্রই আমি কীভাবে দেশে ফিরেছি? আমি ঝামেলা চাই না কোনো। আর বাইরের ছেলে,সে যেই হোক! তার সামনে আমার ইনু আসবে,এটা আমার সহ্যের বাইরে। সব ক্লিয়ার করে আমাকে ডাকিস। ইনু কে নিয়ে তখনি বের হবো আমি।
নীল একনাগাড়ে কথাগুলো বলে চলে গেল।
(চলবে……)
#Running
#episode:24
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE