#আড়ালে_তুমি
#সামিয়া_সারা
#কাজিন_রিলেটেড_গল্প
পর্ব – ১৬
নীল ড্রাইভিং সিটে,পাশে ইনায়া। কান্না করে ফুলিয়ে ফেলা চোখটায় একটু পরপর টিস্যু দিয়ে ছোঁয়া লাগাচ্ছে। পেছনে বসেছে আনান,আনায়া আর রুবিনা ইয়াসমিন।
একটু পরপর ইনায়ার নাক টানার আওয়াজ পেয়ে রুবিনা ইয়াসমিন স্বান্তনা দিয়ে বললেন,
-কান্না করে না মা। বিয়ে হয়েছে তাতে মন খারাপ করতে নেই। দেখা তো হবেই কাল আবার।
ইনায়া মেজো মার কথা শুনে নাক মুছে নীলের দিকে তাকালো। নীলের চোখে সানগ্লাস ,ইনায়াকে দেখলো নাকি তার ইনায়ার কাছে বোধগম্য হয় না।
রুবিনা ইয়াসমিন পুনরায় বললেন,
-মেয়ে হয়ে জন্মালে বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়িই নিজের বাড়ি হয়ে যায়।সব মেয়েকেই মেনে নিতে হবে। দেখিস না আমি তোর মেজো বাবার সাথেই থাকি,তার বাড়ি ই এখন আমার বাড়ি। শক্ত হতে হবে তো,তোকে বিয়ে দেব কীভাবে নাহলে?
ইনায়া নাক টানতে টানতে নীলের দিকে তাকায়।
বলে,
-আমি আমার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না।
আনান ও ইনায়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
-হ্যাঁ মা,ইনু বাড়িতেই থাকবে। কোথাও যেতে হবে না ওর।
ইনায়ার কথা শুনে হাসলেও রুবিনা ইয়াসমিন আনানের কথা শুনে চকিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়।
নীল কষে ব্রেক করলে ইনায়া টিস্যু ফেলে বলে,
-কী হলো?
-এসব নাটক সিনেমা দেখানোর জন্যে কান্না করছিস? বিয়ের কথা ডিরেক্ট বলতে পারছিস না বলে কষ্ট পাওয়ার নাটক করে সবাইকে কী বুঝাচ্ছিস?
-যোগ্যতা নিয়ে কথা শুনলে কান্না পায়না নীল ভাই? কিচ্ছু বোঝেন না আপনি!
-বুঝতে চাইনা,যোগ্যতা অর্জন করলে কেউ কিছু বলবে না। আর পড়াশোনা বাদ দিয়ে উনুনে খড়ি ঠেলে কোলে বাচ্চা নিয়ে রান্না করার শখ হলে তাও জানিয়ে দে।
ইনায়া চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকায়। নাক টেনে বলে,
-বিয়ের পরে আপনার বউকে এভাবে রাখবেন?
নীল গাড়ি স্টার্ট দেয়। গিয়ারে হাত রেখে বলে,
-আমি কী করব না করব তা শুনতে চাবি না,আগেও না করেছি! তোর বিয়ে করার শখ হলে বল! করবি?
-না …না…
নীল রিয়ার ভিউ মিররে রুবিনা ইয়াসমিন এর দিকে তাকিয়ে বলল,
-বাড়িতে কখনো ইনাযার বিয়ে নিয়ে কথা তুলে না মেজোআম্মু। এ কথা এখানেই শেষ।
.
.
.
গাড়ি থেকে নেমেই ইনায়া রুমে গিয়ে বিছানায় ঠাস্ করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। মাথা ঝিমঝিম করছে তার। যদিও নীল খুব হালকা ব্রেক করে গাড়ি চালিয়েছিল। জামা কাপড় কিছুই পরিবর্তন না করে ঐ অবস্থাতেই ঘুমিয়ে যায় ইনায়া। সন্ধ্যার পরপর তার ঘুম ভাঙ্গলো নীলের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে।
ইনায়াকে বেশ কয়েকটা ডাক দিয়ে বলল,
-দরজা হা করে খুলে রেখে এভাবেই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস! কেউ যদি রুমে আসতো?
ইনায়া হালকা হায় তুলে বলল,
-কিছু নেইতো চুরি করার মতো।
-এই রুমে আমার অনেক মূল্যবান একটা জিনিস রেখেছিলাম,তাই খুব সাবধান।
-কোথায়?
-তা আমার ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া আর কাউকে বলা যাবে না।
ইনায়ার মুখটা আবার ফ্যাকাশে হয়ে যায়। নীল ইনায়ার কাছে এসে বলল,
-পরীক্ষা কবে?
-আগামী সপ্তাহে…
-প্রস্তুতি কেমন?
-ভালো।
-ঠিক আছে,মন দিয়ে পড়।
ইনায়া উঠে ফ্রেশ হয়। মুখে একের পর এক পানির ঝাপটা দিয়ে নিচে চলে আসে। চা না হলে মাথা ব্যাথা কমছে না।
শিমু জাহানের গলা জড়িয়ে বলল,
-বড় মা…. চা খাবে?
-তুই খাবি?
-হু, বানাচ্ছি। তোমার জন্য বানাই?
-এই মেয়ের সাহস কত!!! কাজ করতে এসেছে আমার সোনা পাখি।
-করতে দাও আজকে,শিখতে হবে। সরো তো !
-খবরদার না। নীল এসব দেখলে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিবে।
বলবে তোর পড়াশোনা বাদ দিয়ে তোকে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।
-ওনার কি!
-ও ছোট থেকেই তোকে কাজ করতে দেয় না,আদরের বোন।
-বোন না ছাই!
-তুমি কি জানো,যখন এটা ওটা এনে দিতে রান্নার সময়,নীল তখন আমাকে বলতো যে , মা,নীলা কে বিয়ে দিতে চাচ্ছো?
-নীল ভাই এটা বলতো সত্যি?
-হ্যাঁ,ওর বয়স ধর চৌদ্দ কি পনেরো ছিল তখন। আর ও তোকে নীলা ছাড়া ডাকতো না কখনো।
ইনায়া আগ্রহ দেখায় গল্প শুনতে আর শিমু জাহান চা বানাতে বলতে থাকে,
-তুই তখন সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছিস, টিপ টিপ করে হেঁটে হেঁটে এটা ওটা আমাকে এনে দিতি। আর নীল সে কী কান্না। তোকে না কি আমরা বিয়ে দিতে চাই। হা হা হা!
শিমু জাহান হাসতে থাকে। ইনায়া অতি আগ্রহ নিয়ে বলে,
-তারপর তুমি কী বলতে?
-বলতাম,ওমা! বিয়ে কেন দিবো? তোমার নীলা বোনু তো একটা বাবু…
-এখন আর নীলা বলে না কেন?
-আমি কী করে বলবো! তোদের ভাই বোনের ব্যাপার। নীলও কিন্তু ওর ইনান নাম কাউকেই বলে না।
-হু বড়মা! একদম ঠিক। নীল ভাই সবাইকে বলে ওনার নাম দেওয়ান নীল। ইনান দেওয়ান নীল তো বলে না। কেন বড়মা? আমার নামের সাথে মিলে যায় তাই?
-ধুর্ পা*গলি! তোর নাম মিলিয়েই রেখেছে ও। ইনায়া দেওয়ান নীলা। এ নাম রাখতেই হবে,নাহলে ও ভাত খাবে না,পড়বে না,খেলবে না। পরে সবাই রাজি হয়ে যায়।
শিমু জাহান চা কাপে ঢেলে ইনায়ার হাতে দেয়।ইনায়া কাপ হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে বলে,
-তারপর তারপর?
-তারপর আর কী! যা এখন পড়তে ,তোর ভাই যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে যেন তোর উপর নজর রাখি।
আয়েশা আক্তার বড় ভাবির সাথে তাল দিয়ে বলল,
-আমাকেও গিয়ে বলে এসেছে নীল। পরীক্ষা সামনের সপ্তাহেই।
ইনায়া মায়ের কথায় ভেংচি কাটলো,বললো,
-একজেনর কথা ই সবাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। আর আমি তো ঢেউ টিন।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিজের রুমে ফেরত যায়। কাপ টেবিলে রেখে বই হাতে নিয়ে বড় করে শ্বাস নিয়ে বলল,
-মিশন পড়াশোনা…
.
.
.
.
শর্মী বিছানার মাঝে ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে। আরান আসতেই ইতস্তত করে বলল,
-সরি…
শর্মীর হাত পা মোচড়াতে দেখে আরান বলে উঠলো,
-কতো তারিখ যেন আজ?
-আ..আট..
-একটা থাপ্পড় মারবো ! কত বড় হয়ে গেলা বিয়ে করেই। আমাকে জানাতেও সমস্যা ছিল?
-এতো স্পেশাল একটা দিন। তুমি তো রাগ করতে…
-এই চিনলে? আমার তো নিজের উপরই রাগ হচ্ছে এখন।
শর্মী কিছুক্ষণ পর আরানকে আবার ডেকে বলল,
-এই! রেগে আছে?
-হ্যাঁ
-আমি জানতাম না এমন হবে…
-মাফ করতে পারি,তবে একটা শর্ত আছে।
-বলো…
-থা*প্পর মেরে একটা দাঁত ফেলতে দিতে হবে।
শর্মী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় আরানের দিকে।
-পরীক্ষা কবে?
-সামনের সপ্তাহে…
-ওরে! না পড়াশোনার ধান্দা নিয়ে বিয়ে করলে! পরশু দিন থেকেই পড়তে বসবে । মন দিয়ে পরীক্ষা দাও আগে,তারপর সব হবে।
শর্মী ছলছল চোখে আরানের দিকে তাকায়। এমন সব পরিস্থিতি তে পাশে থাকার মতোন একটা মানুষ জীবনে থাকলে আর কী দরকার!
.
.
.
বৌ ভাতে শর্মী মিল্ড কালারের জামদানি শাড়ি পড়েছে। ইনায়া আর সামিরা গিয়েই জড়িয়ে ধরে এক সঙ্গে প্রশ্ন করল,
-কী কী হলো দোস্ত?
শর্মী অতি কষ্টে একটা হাঁসি দিয়ে বলল,
-অনেক কিছু।
ইনায়া আগ্রহ নিয়ে বলল,
-জলদি বল,শুনে খেয়ে দেয়ে বাড়ি গিয়ে পড়তে হবে…
সামিরা ইনায়ার কথা শুনে শর্মীকে বলল,
-হ্যাঁ ইনুর তো অনেক পড়া। থাক দোস্ত,আমরা আর পড়াশোনা করি না
-আরে পড়তে হবে নীল ভাই এর জন্য । ওনার ভালোবাসার মানুষের থেকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে,তা নাহলে আমায় কেউ বই ধরতে দেখতো না। যাই হোক শর্মী বল এখন।
শর্মী ঢোক গিলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-কাল ও রুমে আসলো…
ইনায়া আর সামিরা একসাথে বলে উঠল,
-ওওওও,ও রুমে আসলো..
-ধুর ছাতা! আমাকে বলতে দে। কথা আটকালে বলবো না।
সামিরার জবাব,
-আচ্ছা বল।
-রুমে আসার পর অনেক রাগারাগি করলো। তারপর বলল পরীক্ষা কবে। তারপর বললো কাল থেকেই যেন পড়তে বসি। তারপর বলল,এখন ঘুমাও।
সামিরা আর ইনায়া সন্দেহের চোখে শর্মীকে দেখলো। শর্মী মাথায় হাত দিয়ে বলল,
-বিশ্বাস কর দোস্ত। আর কিছুই হয়নি। আমি অসুস্থ…
ইনায়া কপালে হাত ঠেকালো। সামিরা আফসোস কর বললো,
-আর সময় পেলো না! বাসর রাতেই তাই বলে!
ইনায়া সামিরার কাঁধে হাত রেখে বলল,
-চল খেতে যাই,কাল দুটো রোস্ট খেয়েছিলি,আজ তিনটে খাবি।
-হ্যাঁ চল,ওকে দিয়ে এখন কাজ নেই। পরীক্ষার পরে আবার শুনবো। কিন্তু তিনটে রোস্ট কীভাবে।
-আমার টা আর আমার ভাই এর টা তোমায় দেবো ভাবি।চলো এখন..
সামিরা লজ্জায় মুখে হাত দেয়।
তখনই আনান পেছন থেকে ইনায়া কে ডাকতে দুজনেই পেছন ফিরে তাকায়। ইনায়ার কাছে এসে বলে,
-কোথায় ছিলি?
-শর্মীর কাছে,কেন ভাইয়া?
আনান ইনায়া চুল ধরে টেনে বলে,
-তোকে একদিন বেশি করে মারতে হবে। রিসান ভাইয়া খেতে যেতে বলেছে। তুই যা,আমি বড় ভাইয়াকে ডেকে আনি।
ইনায়া আর সামিরা টেবিলের কাছে গেলে রিসান উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-সালাম নিবেন ভাবি।
সামিরা আর ইনায়া একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। অতপর একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করে,
-কীরে,তোকে ভাবি বলল কেন?
ইনায়া সামিরা কে থামিয়ে বলে,
-তোকে বলেছে। আর আনান ভাইয়া এতোক্ষণ রিসান ভাইয়ার সাথেই ছিল। তোকে নিয়ে কথা বলেছে,এই জন্যই ভাবি বলল।তারমানে আনান ভাইয়ার মনে সামথিং সামথিং!
(চলবে……)
#Running
#episode:16
Written by #Samia_Sara
Story name: #আড়ালে_তুমি
আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE