Golpo

আড়ালে তুমি পর্ব-১৪


#আড়ালে_তুমি

#সামিয়া_সারা

#কাজিন_রিলেটেড_গল্প

পর্ব – ১৪

ইনায়ার হাতে হ্যাঁচকা টান পড়তে হুস ফেরে তার। সামিরা ইনায়াকে শক্ত করে ধরে বলল,

-প্লিজ ইনু,রাজি হয়ে যা। 

 নীল এখনো একই ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অনু নীলের কাছে দৌঁড়ে যায়। হাসতে হাসতে বলল,

-বড় ভাইয়া,তোমার কি ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে?

নীল ভ্রু কুঁচকে বলে,

-কেন?

-ইনুপুর দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আপুর তো পেট খারাপ হয়ে যাবে।

নীল সন্দেহজনক ভাবে অনুকে দেখে। অনু পুনরায় বলে,

-তোমার খেতে ইচ্ছে করছে ,বড় ভাইয়া?

নীল অকপটে উত্তর দেয়,

-হ্যাঁ।

তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই পাল্টা প্রশ্ন করে বলে,

-কী?

নীলের প্রশ্ন শুনে অনু হেসে কুটি কুটি হয়ে যায়। হাসতে হাসতে বলল,

-ইনুপু কে অবশ্যই খেতে বলিনি আমি। যা বুঝেছো তাই ই  বলেছি। খাবে নাকি বলেছিলাম, ফুচকা।

নীল বেশ বিব্রত হয়ে যায়। ছোট বোনের কত সাধারণ কথাকে সে কত জটিল করে ভেবে নিল। 

.

ইনায়ার মাথায় সামিরার কোনো কথাই ঢুকছে না। তখন থেকে প্লিজ প্লিজ করেই চলেছে। ইনায়ার এবার বেশ রাগ হয়। চেঁচিয়ে বলে,

-আরেহ্ ! কী অদ্ভুত! কী হয়েছে বলবি তো? 

-আগে বল রাজি হবি…

-আমি তো সব কিছু তেই রাজি হই!

-চল তাহলে নাচ করি। 

ইনায়ার বুকের মধ্যে কেঁপে উঠল। সাথে সাথে তাকালো নীলের দিকে। নীল আর অনু এদিকেই আসছে। ইনায়ার এমন চাহনি দেখে নীল দূর থেকে ইশারায় বলে,

-কী হয়েছে?

কিন্তু ইনায়ার ভাবভঙ্গি বদলায় না। অনু এসে ইনায়ার থেকে ফুচকা নিয়ে নীলকে দেয়। হেঁসে ইনায়াকে বলে,

-বড় ভাইয়া তোমার থেকে ফুচকা না খেলে নিশ্চিত তোমার পেট খারাপ হবে। 

ইনায়া শান্ত চোখে নীলের দিকে তাকায়। নীল এবার সরাসরি প্রশ্ন করে,

-কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?

নীলের প্রশ্নের উত্তরের জবাব আসে,তবে তার ইনায়ার থেকে না। সামিরা বলল,

-বেচারি চিন্তায় আছে আমার আবদার শুনে। 

অনু অবাক হয়ে সামিরাকে বলে,

-কী আবদার করেছো আপু??

-ভয় দেখাতে তোমার ইনুপু কে নাচতে বলেছিলাম। কিন্তু সে যে এতো চিন্তায় পরে যাবে তা কে জানতো!

ইনায়া আড় চোখে নীলের দিকে তাকায়। নীল এখনো একই দৃষ্টিতে ইনায়াকে দেখছে।

সামিরা ইনায়াকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ডেকে বলল,

-শোন ইনু,আমাদের অনেক দিনের প্লান ছিল ঐ গান টা একসাথে গাব। আশা করি এটাতে মানা করবি না!

ইনায়া নীলের দিকে তাকায়,তার চোখ যেন অনুমতি চাচ্ছে।এই দৃষ্টি বুঝতে পেরে নীল মুচকি হেসে সম্মতি জানায়।

ইনায়া আর সামিরা সাজানো স্টেজে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। শর্মীকে উদ্দেশ্য করে গাইতে শুরু করে,

আজকে বুবুর মুখের হাসি

কালকে বুবুর বিয়ে

বর আসবে পালকি চড়ে

বকুল তলা দিয়ে।

বর আসতে দেব না

বুবুর কাছে নেব না

ও বুবু তোর বলিস

আনতে আমার খাজনা।।ঐ

আজকে বুবুর গায়ে হলুদ

কালকে বুবুর বিয়ে,

বর আসবে পালকি চড়ে

বকুল তলা দিয়ে।

রিদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে স্টেজের দিকে। আর ইনায়া তাকিয়ে রয়েছে নীলের দিকে। সামিরা দেখছে আনানকে আর আরান শর্মীকে। 

গান শেষ হতেই শাড়ির কুঁচি ধরে তাড়াহুড়ো করে ইনায়া নামতে যায়। তবে স্টেজ থেকে নামার সময় সিঁড়িতে ঠিকভাবে পা না পড়ার ফলে ইনায়া তাল সামলাতে ব্যর্থ হয়। পা মচকে নিচে পড়ে যেতে গেলেই ইনায়া চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল। তবে কোনোকিছুর সাথে আঘাত লাগেনি তার।এক বলিষ্ঠ হাত শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরেছে তাকে।মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে ইনায়া চোখ খুলে। কোমরে কারো হাত পেঁচিয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি যায় হাত থেকে সেই মানুষটির উপর।রিদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ইনায়ার দিকে। রিদকে দেখতেই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দেয় ইনায়া। সাথে সাথে তাকায় নীলের দিকে। নীল হাত মুঠো করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। চোখ দিয়েই যেন ভ*স্ম করে দিচ্ছে। আরান আর রিসান নীলকে শক্ত করে চেপে শান্ত করছে। আরান কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল,

-ছোট মানুষ ভাই! ভুল হতেই পারে। 

রিসান ও বলল,

-আরেহ মামা,ও না ধরলে তোর পরী টা পড়ে যেত। কত ব্যাথা পেতো ভাব একটু।

নীল কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না । আরানকে দেখে হুঙ্কার দিয়ে বলল,

-তোর ভাইকে সাবধান করে দে আরান! আমি যে কি করব নাহলে নিজেই জানি না। 

-আচ্ছা আমি বলব,তুই এসব নিয়ে ভাবিস না।

আজ ইনায়া ,সামিরা আর অনু শর্মীদের বাড়িতেই থাকবে। তবে নীল ইনায়াকে একা রেখে যেতে নারাজ। নীলের আজ আরানের সাথে যাওয়ার কথা থাকলেও সে আরানকে মানা করে দেয়। বলল,

-আজ আমি এখানে থাকব,ওকে রেখে যাওয়া সম্ভব না।

আরান কথা বাড়ায় না,একবারে রাজি হয়ে যায়। অনু ,আনান ,ইনায়া আর নীল ছাড়া দেওয়ান বাড়ির সকলে বাড়িতে ফিরে গিয়েছে। নীল আনানকে আরানের সাথে যেতে বললেও আনান জানিয়ে দেয় সে এখানেই থাকবে। নীল উঠে ইনায়ার কাছে যায়। রিদ সেখানে থাকায় নীলের মাথা দ্বিগুণ গরম হয়ে যায়। তাকায় আরানের দিকে! আরান সব সামলে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় নীল কোনো রকমে নিজেকে কনট্রোল করল। তবে ইনায়ার সামনে যেতেই ঘটিয়ে ফেলে এক আকস্মিক ঘটনা। হুট করে ইনায়াকে কোলে তুলে নিল নীল। আরানের দিকে তাকিয়ে বলল,

-তোর বউকে জিজ্ঞেস কর তো ইনু কোথায় ঘুমাবে।

আরান শর্মীর দিকে তাকায়। ঘটনায় আকস্মিকতায় সকলে এখনো হতভম্ব। শর্মী বলল,

-নিচের একেবারে কর্ণারের রুমটাতে।

নীল অপেক্ষা না করে ইনায়াকে নিয়ে চলে যায়। ইনায়া ভয়ে নীলের গলা শক্ত করে ধরে মুচড়াতে মুচড়াতে বলল,

-নীল ভাই! ছাড়েন! আমি যাব না নিচে। নামিয়ে দেন প্লিজ! আরে ছাড়েন না! নীল ভাই!

তবে কে শোনে কার কথা। নীল সোজা কর্ণারের রুমে গিয়ে ইনায়াকে নামিয়ে দেয়।পাঞ্জাবীর হাতা গোটাতে গোটাতে বলল,

-অন্য ছেলে ধরলে এমন মোচড়াতে পারিস না? না কি সবার ছোঁয়া ভালো লাগে? 

-কে ধরেছে?

-ওহ্! ঐ অনুভূতি ও নেই? 

-না নেই।

-আমি তোকে ধরলে কি তোর অ্যালার্জি হয়? 

-হ্যাঁ…

নীল ইনায়ার গাল চেপে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-তাই ই মনে হয় মাঝে মধ্যে। আবার মনে হয় তুই মৃগী রোগী।

-আপনার ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া যে অন্য মেয়েকে 

ধরেন তাতে আপনার সমস্যা না থাকলেও আমার আছে। 

-বাহ্! ঐ ছেলে কোমড়ে হাত দিয়ে কানে কানে এসব কথা শিখিয়ে দিয়েছে? 

-কোনো ছেলেকে কেন বলতে হবে? আমি ছোট নেই। আমাকে তো বোন হিসেবেও মানেন না! তাহলে ধরবেন কেন?

-আঠারো বছর হয়েছে?

-না…

-নিজেকে বড় বলে দাবি করিস না আর।

বলেই নীল ইনায়ার হাতে স্যানিটাইজার এর বোতল ধরিয়ে দেয়। আদেশের স্বরে বলল,

-শাড়ি খুলে আমার হাতে দিবি এক্ষুনি,তারপর এই স্যানিটাইজার দিয়ে যেখানে ধরেছে সেখানে লাগিয়ে নিবি।

-শাড়ির উপরে লেগেছে হাত,তাহলে শাড়ি খুলে এটা লাগাবো কেন?

-আমি বলেছি তাই । শাড়িটা দে এখন। 

ইনায়া চোখ বড় করে নীলের দিকে তাকায়। নীল আসলে চায় টা কি! 

-কী হলো কথা কানে যায়নি?

-বাইরে যান,খুলে দিয়ে দিচ্ছি।

নীল বাইরে চলে আসে। অনু আর সামিরাও নিচে চলে এসেছে। নীলের ইনায়ার ঘরের বাইরে দেখতেই আনায়া বলে,

-কী করছো এখানে দাঁড়িয়ে বড় ভাইয়া?

-তোর ইনুপু শাড়ি বদলাচ্ছে। 

এই বলে নীল ইনায়ার ফোন বের করে আনায়ার হাতে দেয়। বলল,

-তোর ইনুপু কে ফোনটা দিয়ে দিবি,কোনো সমস্যা হলে যেন আমায় কল দেয়। এখানেই থাকব।

আনায়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। 

.

.

.

ইনায়া আর সামিরা সাদা রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে আর অনু পড়েছে নীল রঙের লেহেঙ্গা।নীল পড়েছে ক্রিম কালারের পাঞ্জাবি।

শর্মীকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক আসে। সে আজ পড়েছে লালা বেনারসি। সামিরাও সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে নেয়। তবে বিপত্তি ঘটে ইনায়াকে নিয়ে। সে কিছুতেই সাজতে চায় না। ইনায়া সাজতে না চাওয়ায় সামিরা ইনায়াকে বলল,

-আজকে অন্তত সুন্দর করে সাজ।

-না না না! 

– আমি তোকে সাজিয়ে দিচ্ছি। কোনো না না শুনবো না।

-প্লিজ জোড় করিস না সামিরা।

-আর কোনো কথা শুনবো না। এখানে এসে বস তো।আমি তোকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছি।

সামিরা খুব হালকা করে ইনায়াকে সাজায়। তবে লিপস্টিক দিতে গেলেই ইনায়া সামিরা হাত আটকে বলে,

-লিপস্টিক দেওয়া যাবে না।

-ওমা! কেন?

-নীল ভাই বলেছে লিপস্টিক নিলে আমাকে পেত্নীর মতো লাগে। তাই নিতে মানা করেছে।

সামিরা সন্দেহের চোখে ইনায়াকে দেখে। কৌতুহলী হয়ে বলে,

-এই সত্যি করে বল তো,তোর নীল ভাই কি তোকে পছন্দ করে?

-তা কোনোদিনই সম্ভব না সামিরা। এমনকি আমি ওনায় ভালোবেসে ম*রে গেলেও উনি আমায় পছন্দ করবেন না।

সামিরা ইনায়ার কাধে হাত রাখে। অবাক হয়ে বলে,

-ইনায়া! তারমানে তুই?

ইনায়ার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। কাদতে কাদতে বলে,

-আমি কিচ্ছু জানি না। আমার কী হয়েছে জানি না। কেমন অস্থির অস্থির লাগে ওনাকে দেখলে। হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায়। 

সামিরা ইনায়ারে শান্ত করে বলল,

-কবে থেকে?

-গত তিন চারদিন হবে…

-আচ্ছা শান্ত হ! 

-কীভাবে হব.. বল তুই.. । ওনার ভালোবাসার মানুষ আছে। সে সাধারণ মানুষ না,একদম অপ্সরা। অনেক মেধাবী। ওরা একসাথে আমাদের ভার্সিটিতে জয়েন করবে। দিন রাত সে মেয়েকে নিয়ে আমায় কথা শোনায় নীল ভাই।

সামিরা বাকরুদ্ধ। ইনায়াকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিয়ে সে চলে যায়।

.

.

.

ইনায়া,আনায়া ,সামিরা সবাই-ই আজ অনেক সুন্দর করে সেজেছে। গেট ধরার জন্যেও সবাই খুব এক্সাইটেড । ইনায়া আর সামিরা মিলে দুষ্টুমি করে বিভিন্ন রকমের জুস বানিয়েছে।ইটের গুড়া আর লাল মরিচ মিশিয়ে বানিয়েছে তরমুজের জুস।হলুদ আর লবণ দিয়ে বানিয়েছে ম্যাংগো জুস।করোলা আর কাঁচামরিচ মিশিয়ে  বানিয়েছে কাঁচা আমের জুস।আর নরমাল পানির জায়গায় দিয়েছে অনেক লবণ দেওয়া পানি। সন্দেশের ভেতরে দিয়েছে গোল মরিচের গুড়া,কালো জাম এর মধ্যে দিয়ে কাঁচা মরিচ। এগুলো সহ আরো অনেক উল্টাপাল্টা রেসিপি তৈরি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে গেট ধরে। বরের গাড়ি এখনি চলে আসবে। ইনায়াকে দেখে নীল গিয়ে ইনায়ার সাথে মিশে পেছনে দাঁড়ায়। দুই হাত ইনায়ার দুদিকে দিয়ে। যেন কারো ছোঁয়া না লাগে ইনায়াক গায়ে। নীল সব আইটেম এর নাম ভালো করে শুনে নেয়। এরই মাঝে বরের গাড়ি ঢুকে পরে। আরান নেমেই সামনে নীলকে দেখে মুখ ফ্যাকাশে করে দাঁড়িয়ে পড়ে। খাল রিদ কে কিছু বলার কথা তো মনেই ছিল না তার। এই চিন্তায় চিন্তায় সামনে এগিয়ে যায়। সামিরা করোলার জুস নিয়ে আরানকে দিতেই আরবান ঢক ঢক করে খেতে থাকে। নীলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আরানের উপর। এরপর হাত বাড়িয়ে ইটের গুঁড়ো আর শুকনো মরিচ মিশ্রিত ধুস নিয়ে রইদএর হাতে দেয় নীল। 

হেঁসে বলে,

-সম্পূর্ণ না খেলে এক লাখ টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে।

সামিরা আর ইনায়া অবাক হয়ে নীলের দিকে তাকায় ।সামিরা ইনায়ার কানে ফিসফিস করে বলল,

-আরেহ্ ভাইয়া তো পুরনো খেলোয়াড়!

আরানের জুস খাওয়া দেখে রিদ স্বস্তি বোধ করে । তার ভাই যখন খেতে পেরেছে,সেও খেতে পারবে। গ্লাস টা হাতে নিয়ে চুমুক দিতেই বমি করে দেওয়ার মতো অবস্থা হয় রিদের। অসহায় চোখে তাকায় নীলের দিকে। নীল ঠোঁট নাড়িয়ে ইশারা করে,

-এক লাখ মাত্র।

(চলবে……)

#Running 

#episode:14

Written by #Samia_Sara

Story name: #আড়ালে_তুমি

আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকারা, গল্পটি নিয়ে আপনাদের মন্তব্য শুনতে চাই। একদম সব্বাই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন,কেমন লেগেছে আপনাদের কাছে। আর আগের পর্বে এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা নিবেন 🥺🫶🏻ami onek onek oshustho,sobai ektu beshi beshi kore doa korben 🥺jeno taratri sustho hoye jai

Share On:



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 


0 Responses

Leave a Reply