হেইসুইটহার্ট!___[০১]
শীতকাল!
ডিসেম্বরের সুইডেন শহর। আনুমানিক রাত দশটা বেজে কুড়ি মিনিট। আর সুইডেনের রাত মানেই বরফে ঢাকা, ফাঁকা রাস্তাঘাট। এইটুকু সময়ে গোটা শহর ঘুমন্তপুরির মতো নিস্তব্ধতা মেখেছে। শিশিরের আর্দ্রতায় নৈসর্গিক ছন্দ ততোধিক ভারি। হাড়হিম করা
ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে হাঁটছে কুহু। পরনে একটা জ্যাকেট,থার্মাল,হাতে গ্লাভস পায়ে বুট অথচ এক ফোঁটা শীত যদি মানতো!
কুহুর দুহাত ভরতি প্যাকেট। স্যালারি পেয়েই গোটা এক মাসের গ্রোসারি নিয়ে ফিরছে। এখানকার একটা ডর্মে থাকে ও। সাথে একটা হাফ বেলার ছোটোখাটো চাকরি। সারাদিন ডিউটি শেষে এখন গিয়ে রান্না করবে,এরপর খাবার জুটবে কপালে। কিন্তু মেয়েটার মুখায়বে ক্লান্তির চিহ্নমাত্র নেই। হাঁটতে কুহুর ভালো লাগে। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে যখন ফাঁকা রাস্তা পার হয়,মন ফুরফুরে থাকে খুব! এটা উপসালার রাস্তা। সুইডেনের সবথেকে বড়ো ছাত্রশহর। কুহু যখন বিভোর হয়ে হাঁটছিল,পেছন থেকে সাই সাই বেগ নিয়ে একটা ডার্ক চকলেট ব্রাউন রঙের মার্সেডিজ ছুটে এলো অমনি।
এমন সাপের মতো এঁকেবেঁকে পাশ কাটাল, ভয়ে আত্মা উড়ে গেল ওর। এক লাফ দিয়ে সরে গেল পাশে। তার হকচকানো দৃষ্টির মাঝেই মার্সেডিজটা তেড়ে গিয়ে কংক্রিটের বোলার্ডে সজোরে ধাক্কা খেল। ঝনঝন শব্দে কাচ ভাঙার আওয়াজ বিকট মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে। ছ্যাৎ করে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল কুহুর। প্যাকেটগুলো হাত থেকে খসে পড়ল নিচে। ওই প্রবল ধাক্কায় ওর চোখের সামনেই গাড়িটা ঝাঁকুনি দিয়ে কাত হয়ে পড়ে গেল মাটিতে। চাকার তল হতে টুপ টুপ করে ঝরতে থাকা কালচে কোনো তরলের উৎক গন্ধে ভরে গেল চারিপাশ। গাড়ির একপাশের জানলা ভেঙে একটা রক্তমাখা হাত যখনই পিচের বুকে পড়ল,কুহুর সারামুখ কাগজের মতো সাদা হয়ে যায়। নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে মেয়েটা।
অমনি ঝোড়ো বাতাসের মতো ছুটে এলো সে।
টুকরো টুকরো কাচ, আর জালানীর গন্ধে কুহুর পেট গুলিয়ে এলো। গাড়ির এক পাশ থেকে টপটপ করে পড়ছে কিছু একটা। ফুয়েল বোধ হয়। কুহু হাঁটুমুড়ে বসে ভয়ে ভয়ে মাথা নামিয়ে উঁকি দিলো ভেতরে। অমনি ছলাৎ করে উঠল বুকের ধার। একজন পুরুষ! সারামুখ রক্তে মাখা। এত রক্ত,এমন দূর্ঘটনা মেয়েটা এত কাছ থেকে ইহজন্মে দেখেনি। মুখ দেখে যতটুকু বুঝল একজন অল্পবয়সী যুবক। পরনে জ্যাকেট, বুকে সিটবেল্ট শক্ত করে বাঁধা। মাথাটা হেলে পড়ে আছে সীটে। কুহু ঢোক গিলতে গিলতে লোকটার ঠান্ডা হাতটা ধরল। নার্ভ পরীক্ষা করল কব্জি ছুঁয়ে। না,চলছে। খুব ধীর,কিন্তু বেঁচে আছে এখনো। তার নিভন্ত ফরসা মুখখানা জ্বলজ্বল করে উঠল অমনি। দিশেহারা হয়ে পড়ল আরো। কোত্থেকে কী করবে বুঝতে পারছে না। লোকটাকে সবার আগে বের করতে হবে। হাতে সময় নেই।
সারা গাড়িতে জ্বালানির গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ইঞ্জিনে কেমন ঘো ঘো শব্দ। ইমার্জেন্সিতে জানালেও এম্বুলেন্স আসতে আসতে যদি ব্লাস্ট করে যায়? এখন কী করবে? কীভাবে বার করবে লোকটাকে!
এর মাঝেই আরো দু তিনজন সুইডিশ লোক জড়ো হলেন। গাড়ির লিক ফুয়েল দেখেই আর্তনাদ করে বললেন,
“ মাই গুডনেস। এই গাড়ি বিপজ্জনক। যে কোনো সময় ব্লাস্ট করবে। এই মেয়ে,সরে এসো।”
ভদ্রলোকের কথামতো যারা কাছাকাছি আসছিল,দুহাত সরে দাঁড়াল তারা। অন্যজন বললেন,
“ আমি ইমার্জেন্সিতে জানাচ্ছি। যা করার পুলিশ এসে করুক। ”
কুহু কারোর কথায় কান দিলো না। তার উদ্বীগ্ন নজর গাড়ির ভেতরে। জানলার ভেতর দিয়ে অল্প আলো এসে লোকটার চেহারায় পড়ছে।
স্টিয়ারিং-এ আটকে আছে হাতটা। কুহু জানলা ধরে টান দিলো।
ধারালো উন্মুখ কাচগুলো নরম ত্বক গিলে নিলো সহসা। দুটো আঙুল কেটে যেতেই ছিটকে হাত সরাল আবার। রক্ত বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু কুহু, আজ তোর থামলে চলবে না। মা বলতেন,ভালো কাজের সুযোগ মানুষ সব সময় পায় না। কুহু মন শক্ত মরে ফের কাটা হাতটাই রাখল জানলায়। গায়ের জোর দিয়ে টানতে গিয়ে বুঝল,ভেঙে আটকে গেছে ভেতরে। কিন্তু এটা না খুলতে পারলে লোকটাকে ও বার করবে কী করে? হাতে বেশি সময়ও তো নেই। গাড়ির ওপাশটা ফুয়েলে ভেসে যাচ্ছে। অন্যদিকে লোকগুলো চ্যাঁচাচ্ছে ওকে সরে আসার জন্যে।
কুহু হন্যে চোখে এদিক-ওদিক তাকায় । রাস্তার পাশে একটা আইস
স্ক্র্যাপার দেখেই ছুটে গিয়ে তুলে আনে হাতে। বুকে সাহস নিয়ে দুটো বাড়ি দিতেই ঝরঝর করে কাচ ভেঙে পড়ল। কিছু এসে ছিটকে মুখে লাগল ওর। এক পাশের গাল কেটে গেল অমনি। কুহু থামে না। স্ক্যাপার ফেলেই গাড়িতে হাত ভরে দেয়। কানে আসে চিকণ গোঙানির শব্দ। হাতের সাথে বুকটাও কেঁপে ওঠে এবার।
ঠাণ্ডা আর ভয় দুটোই মিলেমিশে গলা শুকিয়ে যায়।
যে কোনো সময় আগুন লেগে যাবে সেই শঙ্কায় বুক ধড়ফড় করছে কুহুর।
মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে লোকটার সীটবেল্ট খুলল। সাথে সাথে পুরুষালি দেহ ঢলে পড়ল এক পাশে। ধড়ফড় করে কুহু আগলে ধরল দুহাতে। লোকটার ভ্রু চুইয়ে রক্ত পড়ছে । কাঁধের জ্যাকেট ভিজে একাকার।। ধাক্কায় গাড়ি নড়বড় নড়বড় করছে এখনো। তারওপর লোকটা স্বাস্থ্যবান। কুহুর একার পক্ষে যাকে এক চুল নাড়ানোও দুঃসাধ্যের,সেখানে গাড়ি থেকে বাইরে আনা! কিন্তু কোন শক্তি ওর ওপর আজ ভর করল কে জানে। মাথাটা বুকে নিয়ে আস্তেধীরে টেনে বের করল সে।
পেছন থেকে লোকজন চ্যাঁচাল,
“ গাড়ি ফেটে যাবে। তাড়াতাড়ি করো।”
কুহু লোকটাকে বাইরে আনা মাত্রই দুজন এগিয়ে এলেন এবার। তাড়াহুড়ো করে ওকে ধরে ধরে সচেতন দুরুত্বে সরিয়ে আনলেন। কুহু ক্লান্তের ন্যায় ধপ করে বসে পড়ল। বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলো জোরে জোরে।
পরপর টের পেলো ওর সারা মুখ,হাত জ্বলছে। কত জায়গায় কেটেছে কে জানে! এর মাঝে এক ভদ্রলোক এসে পানি এগিয়ে ধরলেন। কুহু পাশ ফিরে চাইলে মুচকি হাসলেন তিনি। মাথায় হাত বুলিয়ে ঝরঝরে ইংরেজিতে বললেন,
“ নিজের জীবনের পরোয়া না করে এভাবে একজন অচেনা লোককে বাঁচালে! কত বড়ো মন তোমার। কে তুমি,কী নাম?”
“ প্রিয়তমা জাফরিন কুহু।”
“ কোথায় থাকো? পড়াশোনা করো?”
কুহু কথা বলতে গিয়েও থামল,চোখ বড়ো করে ফেলল। ত্রস্ত গতিতে কব্জিতে বাধা ঘড়ি দেখেই ঝট করে উঠে দাঁড়াল অমনি।
ভদ্রলোক আরো কিছু বলতেন,এর মাঝেই এ্যাম্বুলেন্স এর সাইরেন শোনা গেল। সেই উৎকট শব্দে হুস ফিরল কুহুর। মনে পড়ল,ওর এক্ষুনি ডর্মে ফিরতে হবে। কাল পরীক্ষা,পড়তে হবে সারারাত। নাহলে আর কূলোতে পারবে না।
কুহু ছুটে গিয়েই গ্রোসারির প্যাকেট গুলো তুলল । তড়িঘড়ি পায়ে যেতে নিয়েও একবার চাইল ফিরে। আহত লোকটাকে
স্ট্রেচার শুইয়ে এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে।
পরনে ব্লাক লেদার জ্যাকেট ভিজে গেছে রক্তে। মাথাটা হেলে পড়েছে একদিক। হঠাৎই কুহু ভ্রু কুঁচকে ফেলল। মনে হলো মুখটা ভীষণ চেনা।
পরপরই মাথা ঝাঁকিয়ে সব চিন্তা ঝেড়ে ডর্মের রাস্তায় ছুট লাগাল সে।
সুইডেনের সবচেয়ে বড়ো এবং আধুনিক হাসপাতালের অন্যতম একটি হলো কারো-লিনস্কা ইউনিভার্সিটি হসপিটাল। সাদা দেয়াল,পরিষ্কার আলো আর চকচকে ফ্লোর। অথচ রাতের এই তীব্র ঠান্ডার মাঝেও দরদর করে ঘামছে তুহিন।
চোখ দুটো বারবার হাসপাতালের ভেতরের দিকে যাচ্ছে। মৃদু আলো, সবুজ-নীল রঙের ইমার্জেন্সি চিহ্নের সাথে বরফে ভিজে থাকা রাস্তা ছাপা ধোঁয়ার এক অদ্ভুত সংযোগ এখানে।
তার আশেপাশে আরো চারজন লোক দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের পরনে কালো হাফ-হাতা শার্ট, ওপরে জ্যাকেট, চোখে কালো চশমা। অথচ তুহিন যতটা চিন্তায় মরছে, ততোধিক শান্ত তারা।
আর এতেই চটে গেল ছেলেটা। রেগে রেগে বলল,
“ সবাই আমার মুখের দিকে হাঁ করে কী দেখছো? তোমাদের মতো এমন গাট্টাগোট্টা বডিগার্ড পুষেও বসের এই অবস্থা। এখন খবরটা জানলে ওনার বাবা আমাকে কী করবেন জানো?”
সবাই মাথা নিচু করল।
একজন ছোটো করে বলল,
“ উই আর সরি স্যার। বাট বসের অর্ডার ছিল, উনি একা যাবেন। সেজন্যেই আমরা ওনার সাথে যাইনি।”
“ এটাতো আর ওনার বাবা বুঝবেন না। তিনি ঠিকই আমার গলা চেপে ধরবেন।”
এই অল্প চ্যাঁচামেচিতেই একজন নার্স এসে দাঁড়ালেন। বিরক্ত চিত্তে বললেন,
“ কী ব্যাপার, এখানে এত লোক কেন?”
তুহিন পিছু ফিরে তাকাল। কপালে ভাঁজ, মুখখানা কঠিন। নার্স ওকে দেখেই বললেন,
“ সরি স্যার,আমি ভেবেছি অন্য কেউ।”
সঙ্গে সঙ্গে প্রস্থান করলেন তিনি। কয়েক মুহূর্ত পর ওটির আলো নিভল।
সেকেন্ড কয়েকেই চিকিৎসক বের হলেন, হালকা লাল ছাপার গ্লাভসে রক্তের দাগ।
তুহিন হড়বড়িয়ে বলল,
“ডক্টর,বস ঠিক আছে?”
“ হ্যাঁ। বিপদ সীমার বাইরে এখন।
আমি যদি খুব ভুল না হই,উনি রকস্টার শৌর্য সম্রাট তাই না?”
চিকিৎসকের মুখে জ্বলজ্বলে হাসি। তুহিন মাথা নাড়ল।
“ জি।”
“ আমি আসলে ওনার অনেক বড়ো ফ্যান। এভাবে দেখা হবে বুঝিনি।”
তুহিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“ এক্সিডেন্টের খবরটা যেন পাঁচ কান নাহয়, ডক্টর প্লিজ দেখবেন। আর
আমি কি এখন দেখা করতে পারব?”
“ এক্ষুনি না। ঘন্টা দেড়েক পর ডাকবে আপনাকে। ”
তুহিন মাথা নাড়ল। টিকটিক করা ঘড়িটা কব্জি উলটে দেখল এক পল। এর মাঝেই টের পেলো পকেটে ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। বাইরে আনতেই স্ক্রিনের নম্বর দেখে চোয়াল ঝুলে পড়ল তার। গোটাগোটা অক্ষরে লেখা – নাভেদ শেখ।
তুহিন ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস নিলো। ফোনটা কানে গুজল আস্তেধীরে । ওপাশ থেকে ভেসে এলো দরাজ গলার স্বর,
“ স্যাম কোথায়? ওর ফোন বন্ধ কেন?”
তুহিন মুখ ছোটো করে বলল,
“ স্যার,বসের এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি হসপিটালে।”
মূহুর্তে এক গর্জন ছুটে এলো। ঝট করে ফোন এক হাত দূরে সরিয়ে কানে আঙুল চেপে ধরল তুহিন। উফ,এত বয়স হলো লোকটার,অথচ গলার জোর এক ফোঁটা কমেনি?
লাক্সারিয়াস কেবিন। এসি চললেও ঝিমঝিম শব্দ নেই। ঠিক মাঝবরাবর বড়ো সফেদ চাদরে মোড়ানো বেডে শুয়ে আছে সম্রাট। গালের ছোটো ছোটো জায়গায় দু একটা ক্ষতও ব্যাণ্ডেজে ঢাকা। একটু পরেই কেবিনের দরজা ঠেলে ঢুকল তুহিন। জিভে ঠোঁট চুবিয়ে চাইল সোজাসুজি শুয়ে থাকা ওই বলিষ্ঠ যুবকের পানে। মাথায় ব্যাণ্ডেজ,গালে ব্যাণ্ডেজ়, এক হাত ঝুলছে গলায়। কী মারাত্মক এক্সিডেন্টটাই না করল। এরপরেও বেঁচে আছে,একেবারে কই মাছের জান। ও রয়েসয়ে
বলল,
“ গুড এভিনিং, বস। কেমন আছেন এখন?”
সম্রাট মুখ ঘুরিয়ে চাইল না। জিজ্ঞেস করল প্রথমেই,
“ গাড়ি থেকে কেউ একজন বার করেছে আমাকে? সে কে,জানা গেল?”
তুহিন মাথা নুইয়ে হাসল। ও জানতো সম্রাটের প্রথম প্রশ্ন এটাই হবে।
“ জি। সিসি ফুটেজ কালেক্ট করেছি। আপনি দেখবেন?”
“ নিয়ে এসো।”
তুহিনের হাতে ল্যাপটপ ছিল। এগিয়ে এসে রাখল ওর সামনে। কয়েকটা বাটন টিপতেই স্ক্রিনে ভিডিও চালু হলো একটা । ভাঙা গাড়ির পেছন থেকে হুড়হুড় করে কালো ধোঁয়া উড়ছে।
এরপরপরই দুমড়েমুচড়ে পরে থাকা সেই মেরুন গাড়ির কাছে ছুটে এলো এক তরুণী!
অমনি আধশোয়া থেকে তটস্থ হয়ে বসতে চাইল সম্রাট। ব্যাণ্ডেজ মোড়া হাতটায় টান লাগল ,ধরতে গেল তুহিন। অন্য হাত তুলে মানা করল সম্রাট। তার তীক্ষ্ণ নজর মনিটরে সাগ্রহে চেয়ে আছে । মেয়েটা ছোটো। শারিরীক গঠনে টিনেজার লাগছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরা অনেক উঁচু আবার রাতে হওয়ায় মুখটা ফোকাস হয়নি। গাড়ির দরজা ভেঙে ওকে বের করার পুরোটা দৃশ্যে সুস্থির চোখে চেয়ে রইল সম্রাট।
আর ওই পুরোটা সময় ওকে মনোযোগ দিয়ে দেখল তুহিন। শৌর্য সম্রাটের ব্যক্তিগত সহকারী সে। প্রায় ৫ বছর ধরে ওর সাথে সাথে আছে। শৌর্য, যে কিনা রগে রগে একজন সুদর্শন পুরুষের চিহ্ন বহন করে। ধূসর চুলের রং, দৈহিক গঠনে চমৎকার, লম্বাটে মুখের ওপর সরু নাক, রোদের আলোর মতো মিশ্র গায়ের ত্বক,আর সব থেকে বিশেষ হলো ওর চোখের হালকা সবুজ দুটো মনি। তুহিন শুনেছে এই অবিকল চোখ নাকি সম্রাটের মায়েরও ছিল। তবে এই রঙের মনি সুইডিশদের মাঝে খুব বিরল। ঐ হাতে গোণা একশজনের মাঝে একজনের দেখা যায়। আর এই চোখই সম্রাটের বিশেষত্ব। তার ওপর হাজার হাজার মেয়ের ক্রাশ খেয়ে লুটিয়ে পড়ার কারণ। সম্রাট
খুব ভালো গান গায়। রকস্টার হিসেবে গোটা সুইডেনেই প্রচুর খ্যাতি তার। তবে অল্প মানুষ জানে ওর ভেতরের কথা। সম্রাটের বাবা নাভেদ শেখ একজন পাকিস্তানি হলেও, মা ছিলেন আগাগোড়া সুইডিশ নারী। প্রেমের বিয়ে,তারপর সংসার।
তুহিনের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ বাটন টিপে ভিডিও পজ করল সম্রাট। চোখের সবুজ মনি ঘুরিয়ে ফিরে চাইল ওর দিকে । তর্জন দিলো শীতল স্বরে,
“ ফাইন্ড হার এনি ওয়ে।”
“ আমি খোঁজ লাগিয়েছি বস। বিকেলের মধ্যেই পেয়ে যাব।”
সম্রাট প্রসন্ন হলো। ঘাড় নাড়ল অল্প।
পরপরই শুধাল,
“ এক্সিডেন্টের কারণ জানা গেছে? আমার হঠাৎ মনে হয়েছিল ব্রেক কাজ করছে না।”
“ বস, আমি সে ব্যাপারেই বলতাম। কেসটা
পুলিশের আন্ডারে চলে গেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে। পাঠাব কী?”
সম্রাট কপাল কুঁচকে বলল,
“ না, মুড নেই৷ আগে মেয়েটাকে নিয়ে এসো। আই ওয়ান্ট দ্যাট গার্ল।”
তুহিন চোখ বড়ো করে ফেলল।
সম্রাট দাঁত চিবিয়ে বলল,
“ স্ক্রাউন্ড্রেল,বিছানায় নিতে চাইনি। দেখতে চাইছি।”
তুহিন ঠোঁট দুটো টিপল। সে তো আর এমনি এমনি এসব ভাবেনি। সম্রাটের মুখে মেয়ে মানেই তো ওসব। জানে না তার স্বভাব? ওর থেকে ভালো কে জানে?
নিচু স্বরে বলল,
“ ওহ, ওকে বস।
আপনি রেস্ট নিন৷ আমি আসছি।”
ল্যাপটপ তুলতে গেলেই সে বলল,
“ রেখে যাও। আর হ্যা,ওয়ান হুইস্কি ফর মি। এক্ষুনি দিতে বলবে।”
তুহিন জিভ কেটে বলল,
“ বস হস্পিটাল রুলস। এলাউ করবে না।”
সম্রাট তপ্ত কণ্ঠে বলল,
“ তুহিন,নো মোর এক্সকিউজ৷ আমি চেয়েছি,মানে আমি চেয়েছি। কোনো ওয়াটার বটলে করে নিয়ে এসো।”
তুহিন অসহায় শ্বাসটা বুকে চেপে রাখল। আর পারা যায় না! হুকুম যখন,তামিল করতে হবেই। চুপচাপ বেরিয়ে গেল তাই৷ সম্রাট সবুজ চোখজোড়া স্থির করে তখনও চেয়ে রইল স্ক্রিনে। এতটুকু মেয়ের মাঝে এত সাহস! এত উদারতা! একটা গাড়ি ব্লাস্ট হওয়ার পথে, বাকিরা ভয়ে এগোচ্ছে না সেখানে এ! থুতনিতে আঙুল ঘষতে ঘষতে সরু চোখে ঠোঁট টিপল সে। কে এই মেয়ে? কেমন দেখতে? শৌর্য সম্রাটের ছোঁয়ার মতো উপযুক্ত কী?
চলবে….
প্লটটা মাথায় ঘুরছে,ভুলে যাব তাই দেয়া শুরু করলাম। আগেই বলে রাখি যারা পড়বেন নায়ক ইজ আ জেন্টলবয়,চরিত্রবান,লুতুপুতু এই-সেই এসব ভুলতে পারলে তবেই এই গল্প পড়া শুরু করবেন।
ধন্যবাদ! ❤️
Share On:
TAGS: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি, হেই সুইটহার্ট
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৬
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ১৮
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ১০
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ২০
-
হেই সুইটহার্ট পর্ব ৩
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ১৬
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৯
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ১১
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ১৫
-
কাছে আসার মৌসুম পর্ব ৫