Golpo romantic golpo সোনাডিঙি নৌকো 

সোনাডিঙি নৌকো পর্ব ৩


সোনাডিঙি_নৌকো (৩)

মৃধা_মৌনি


রাত অনেক। চারদিক নিস্তব্ধ। ঠান্ডা হাওয়া ছাদের রেলিং ছুঁয়ে মুখে এসে লাগে দীক্ষার। আকাশে আধো মেঘ, আধো তারা। চাঁদ যেন দূরের কুয়াশায় হারিয়ে গেছে। বাতাসে শীতের আগমনী বার্তা। হালকা কুয়াশার সঙ্গে মিশে আছে শুকনো পাতার গন্ধ, নিঃশব্দে কাঁদছে যেন সময়।

দীক্ষা দাঁড়িয়ে আছে ছাদের এক কোণে, রেলিং ঘেঁষে। গায়ের ওপর ওড়নাটা কেঁপে উঠছে বাতাসে, আর তার চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রু ঝিলমিল করে উঠছে চাঁদের ক্ষীণ আলোয়। বুকের ভেতরটা যেন কেউ ছিঁড়ে ফেলছে প্রতি মুহূর্তে। শিশিরের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে

—“আমি একজন স্ত্রী চেয়েছি আম্মু, বন্ধু নয়।”

এই একটা বাক্য যেন হাজারটা ছু রি র মতো বিদ্ধ করছে তার মনকে। সে একটা হাত রাখল নিজের পেটে। এই তো, এর ভেতর শিশিরেরই অস্তিত্ব, তারই রক্তমাংসের প্রতিচ্ছবি! অথচ সেই শিশিরের কাছে আজ দীক্ষা কে? একজন অতীত, এক টুকরো ভুল, না কি শুধুই বোঝা?

চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল কত শত টুকরো স্মৃতি। ছোট্ট ঘরটার জানালায় দাঁড়িয়ে শিশিরের হাসি, সকালে চা বানিয়ে দীক্ষার হাত ধরে বলত, “ম্যাডামের জন্য চা বানালাম। ভালো হলে দশ টাকা দিবি কিন্তু।”
অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত গলায় ডাকত, “দীক্ষা, কোথায় রে? তোকে ছাড়া ঘরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বলেছি না দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকবি আমার অপেক্ষায়।”
একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা বিকেল, ছাদের টবে লাগানো টগর গাছে শিশিরের নাম লেখা ছোট্ট একটা কাঠের ফলক- সবকিছুই এখন কেবল অতীতের গন্ধে মোড়া।

দীক্ষা হঠাৎ হাঁপিয়ে উঠল। কান্না আর চেপে রাখতে পারল না। মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠল- অসংযত, অসহায়, ভেঙে পড়া এক মেয়ে হয়ে।

ঠিক তখনই হালকা এক ছোঁয়া টের পেল কাঁধে। চমকে পিছনে ফিরে তাকাল দীক্ষা। দাঁড়িয়ে আছে শর্মিলা। তার চোখেও জল, ঠোঁটে অজস্র না-বলা কথা।

দীক্ষার চোখে চোখ রেখে শর্মিলা ধীরে এগিয়ে এল, তারপর নিঃশব্দে তাকে বুকে টেনে নিল। দু’জনেই কাঁদছে। একজন নিজের ভাঙা স্বপ্নের জন্য, আরেকজন সেই স্বপ্নের পতনের সাক্ষী হয়ে।

ছাদের ওপরে ঝুলে আছে ঠান্ডা চাঁদ, নিচে নিস্তব্ধ শহর,
আর সেই নিস্তব্ধতার ভেতর শীতের হাওয়ায় কেঁপে উঠছে এক ভাঙা ভালোবাসার নাম- দীক্ষা।

শর্মিলা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠল,

—“আর কত কাঁদবা এভাবে? শরীর খারাপ করবে তো। তুমি কি একা এখন? ওর কথা ভাবো।”

দীক্ষা নিজেকে সামলাতে পারছে না কিছুতেই।
আর পারবেই বা কী করে। এটা কি সামলে ওঠার মতো বিষয়? কোথায় দু’জন মিলে অনাগত অতিথিকে নিয়ে হরেক রকমের স্বপ্ন সাজাবে, তা না- তাদের জগতটাই ভেঙে গুড়িয়ে একাকার হয়ে গেছে।

দীক্ষার চোখ দুটো মুছিয়ে দিলো শর্মিলা। মাথাটা আবারও বুকের ভেতর চেপে ধরে বলল,

—“আর কাঁদে না। আর না। যার জন্য কাঁদছ, সে তো একবার ভাবছেও না তোমার কথা। বরং মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে চলেছে সমানে। নিজের সাফাই গাইতে হাজারটা বাহানা তুলে ধরেছে। অথচ সেই মানুষটির জন্য কাঁদছ তুমি!”

দীক্ষা ভাঙা ভাঙা গলায় জবাব দিলো,

—“কোনোদিন ভাবিনি ভাবি, শিশির এতোটা বদলে যেতে পারবে।”

—“মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। শক্ত হও। আজ থেকে তুমি শুধু নিজের কথা ভাববে দীক্ষা। আর কাউকে নিয়ে ভাববে না।”

—“আমি কি করব ভাবি? কি করব এখন বলো তো! আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। শিশির এভাবে… এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারল। তৃণাকে নিয়ে ও সংসার করবে আর আমি তাই দেখব চোখের সামনে?”

দীক্ষা আবারও হু হু করে কেঁদে উঠল।
শর্মিলা ওর কাঁধজোড়া শক্ত করে চেপে ধরে বলল,

—“আর একটুও কাঁদলে তোমার গালে একটা চ ড় মা র ব আমি। শক্ত হও বলছি। যে তোমাকে এভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিলো তার জন্য একটুও কাঁদবে না। একটুও না।”

—“ওর জন্য কাঁদি না তো ভাবি। কাঁদি নিজের কপালের জন্য। নিজের বোকামির জন্য। নিজেকে ভুলে কেন কাউকে বেশি ভালোবাসতে গেলাম!”

—“কপালের জন্য কাঁদছ কেন? ভাগ্য তো সেই লিখেছেন, যে দুঃখের বিপরীতে সুখ ও দিয়েছেন। আর তুমি কোনো বোকামি করোনি। কাউকে ভালোবাসা বোকামি না। কাউকে বিশ্বাস করাও বোকামি না। বরং সেই শুদ্ধ ভালোবাসা এবং বিশ্বাস যে ভাঙলো, বোকা সে! এই উপলব্ধি সময় তাকে টের পাইয়ে দেবে। জানো তো, আল্লাহ ছাড় দেন তবে ছেড়ে দেন না। চুপ হও! একদম চুপ। নিজের মনকে শান্ত করো। এই লড়াইটা তোমার একলার। এতদিন তোমার পাশে তুমি সবাইকে পেলেও এখন আর কাউকে পাবে না। কাউকে না। বিশ্বাস করো। তাই নিজেই নিজের শক্তি হও। তার জন্য লড়াই করো, যে আছে তোমার গর্ভের ভেতর।”

দীক্ষা কোনো জবাব দিলো না। উত্তর দিক থেকে একটা ঠান্ডা হাওয়া এলো হঠাৎ করেই। শিগগিরই শীত শুরু হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক না। তাই শর্মিলা দীক্ষার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল তাকে।

—“আসো, ঘরে আসো, তুমি তোমার ঘর ছাড়বা কেন? তুমি শক্ত থাকবা, আমি তোমার পাশে আছি। তোমার বড় ভাই ও আছে। আম্মাও আছে। আসুক তোমার ভাই আজ- শিশিরের খবর আছে।”

দীক্ষা বাধ্য মেয়ের মতো শর্মিলার সঙ্গে নিচে নেমে এলো। শিশির তার মায়ের সঙ্গে পাশাপাশি বসে কথা বলছে। শর্মিলার সঙ্গে দীক্ষা ঢুকতেই শিশির চুপ হয়ে গেল। শিশিরের মা সায়মা বেগম দীক্ষার দিকে তাকালেন।

—“বসো ছোট বউ মা। এখানে বসো।”

বসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও দীক্ষা বসল। শর্মিলাও বসল তার পাশে। একটা হাত তখনো শক্ত করে ধরে রেখেছে- যেন ভরসা দিচ্ছে, সে আছে দীক্ষার এই কঠিন সময়ে তার পাশে।

সায়মা বেগম ক্লান্ত গলায় বললেন,

—“তুমি কি চাও মা? বলো। আমি শিশিরের কথা শুনেছি, এবার তোমার কথা শুনতে চাই।”

দীক্ষা ভ্রু কুঁচকে বলল,

—“কি চাইবো? আমার চাওয়ার কি আছে?”

—“তোমার মতামত নেই কোনো? শিশির তো ওর তরফ থেকে যা বলার বলেছে। এবার তুমি বলবে। জীবনটা তোমাদের দু’জনের।”

—“আমাদের দু’জনের আর রইল কই! জীবনটা ওর আর তৃণার।”

—“আমি তৃণাকে এই পরিবারের মেহমান হিসেবে মানি, একজন সদস্য হিসেবে না। সদস্য হিসেবে তোমাকেই মেনে নিয়েছিলাম মা। তাই না?”

দীক্ষা কিছু বলল না। শিশিরের রাগ সে তার শ্বাশুড়ির উপর ঝাড়ছে। অথচ এই ভদ্রমহিলার কোনো দোষ নেই এখানে।

তিনি আবারও বললেন,

—“আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝতেছি। কিন্তু যা বলার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা এখনই আলোচনা করা উচিত। তোমার শ্বশুর যদি আজ জীবিত থাকতেন, হয়তো এরকম পরিস্থিতিই হতো না। আমার ব্যর্থতা আমি আমার ছেলেকে মানুষের মতোন মানুষ বানাতে পারিনি। কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব আশা করি। আমার জ্ঞানবুদ্ধি এখনো বুড়িয়ে যায়নি। তবে তার আগে আমি তোমার কথা শুনতে চাই। তুমি কি চাও?”

দীক্ষা শিশিরের দিকে এক নজর তাকাল। শিশির তাকিয়ে রয়েছে অন্যদিকে। চোখ-মুখে দারুণ অন্ধকার। কপালের চামড়ায় ভাঁজ সৃষ্টি হয়েছে। বিরক্তিভাব স্পষ্ট। দীক্ষা চোখ ফিরিয়ে নিলো। ওই মুখ দেখলে বুকের ভেতরটা নতুন করে ভাঙতে শুরু করে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এই মানুষটার প্রতি তার অধিকারবোধ নড়ে উঠেছে। হয়তো একটা সময় আসবে, যখন এই মানুষটার প্রতি তার আর কোনো অধিকারই থাকবে না। কিন্তু ভালোবাসা – মায়া? সেটা কি ইরেজার দিয়ে ঘঁষে তুলে ফেলা যায়?

ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল দীক্ষা। শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

—“ও কি চায়?”

—“শিশির?”

সায়মা বেগম ছেলের দিকে বিতৃষ্ণা নিয়ে তাকালেন।

—“কি আর চাইবে! পাপ করেও তো মন ভরেনি, ষোলো কণা এবার পূর্ণ করতে চাইছে। তোমার ওই অসভ্য বোনকে আমার বাড়ির সদস্য বানাতে চাইছে।”

—“এই কি ওর ফাইনাল সিদ্ধান্ত আম্মা?”

—“এটা ফাইনাল হোক বা না হোক, তোর সঙ্গে আমি আর থাকতে চাচ্ছি না। অবশ্য থাকতে পারছি না। এবং আই হোপ, তুই জোর করে আমার ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মতো জুড়ে না থেকে নিজের বন্দোবস্ত করার কথা ভাববি।”

কথা গুলো বলল শিশির। দীক্ষা মোটেই অবাক হলো না। এতক্ষণে যা যা হয়েছে কিংবা হচ্ছে- এরপর আর জীবনের কোনো কিছুতেই সে অবাক হবে বলে মনে হয় না। কেবল ঠান্ডা স্বরে বলে উঠল,

—“আমি তোর ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মতো চেপে বসব? এই ভাবলি?”

—“তা নয়তো কি! পেটের বাচ্চাটাকে দিয়ে হয়তো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল ও করবি। কিন্তু এসব কোনোটাতেই লাভ হবে না।”

হঠাৎ করেই শিশির গলার স্বর স্বাভাবিকের চেয়েও শান্ত করে বলল,

—“টাকাপয়সা নিয়ে ভাবিস না। তোর দেনমোহরের বাদ বাকি এক লক্ষ টাকা আমি দিয়ে দেবো। আর বেবির খরচ বাবদ প্রতিমাসে…”

শেষ করার আগেই দীক্ষা একটা অদ্ভুত কান্ড করে বসল। পায়ে স্লিপার পড়ে ছিল, সেটা খুলেই সজোরে শিশিরের দিকে ছুঁড়ে মা র ল। শিশির হকচকিয়ে উঠল। স্লিপার গিয়ে তার গালে পড়েছে। তারপর কোলের উপর পড়ল। প্রথম কয়েক সেকেন্ড ব্যাপারটা কি ঘটল বুঝতে সময় লাগল তার। তারপর পরই রাগে ফেটে পড়ল শিশির। কোল থেকে স্লিপার জুতাটি আছাড় দিয়ে ফেলল ফ্লোরে। উঠে দাঁড়িয়ে বিক্ষুব্ধ স্বরে বলল,

—“তুই আমার গায়ে জুতা মা র লি?”

দীক্ষাও উঠে দাঁড়াল। সমান তালে রাগ দেখিয়ে বলল,

—“এরচেয়ে নিকৃষ্ট কিছু আমার কাছে থাকলে সেটা দিয়ে তোকে মা র তা ম। তোর লজ্জা করছে না শিশির? এতবড় একটা অন্যায় করলি তারপরও বিন্দুমাত্র অনুশোচনা বোধ ও হচ্ছে না? উলটো তুই আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছিস…”

—“এই জন্যেই তোর মতো মেয়ের সঙ্গে আর এক ছাদের তলায় থাকতে পারছি না। আমি মোটেই টাকার গরম দেখাইনি বরং আশ্বাস দিয়েছি, টাকাপয়সা দিক দিয়ে আমি যতটা পারব সাপোর্ট করে যাব।”

—“লাগবে না তোর সাপোর্ট আর তোর আশ্বাস। দুটোকে কাগজে মুড়িয়ে জায়গা মতো ভ রে রাখ। বেঁচে থাকার আশ্বাসটুকুই কে ড়ে নিয়েছিস। আর এখন জুতা মে রে গরু দান করতে আসছিস!”

শিশির থ বনে গেল। দীক্ষার কাছ থেকে এরকম আচরণ সে আশা করেনি মোটেই। দীক্ষার সঙ্গে তার সেরকম রাগারাগি কখনো হয়নি। রাগারাগি থেকে গালাগালি কিংবা মা রা মা রি – এসব থেকে তাদের সম্পর্ক বরাবরই সেফ ছিল। কিন্তু আজ…আজ যেন দীক্ষা তার চেনা দীক্ষা নয়। তার মুখের ভাষাও এত অশালীন ছিল না কখনোই। এত রূঢ় আচরণে তাকে দেখা যায়নি কোনোদিন।

বোকা শিশির! কিচ্ছু বুঝছে না!
তার কাছে অবাক লাগছে দীক্ষাকে।
অথচ পুরোনো দীক্ষাকে ভেঙেচুরে গুড়িয়ে নতুন করে তৈরি করতে তার হাতটাই যে প্রধান – সে কথা কে বোঝাবে?


ঘরটা থমথমে। উপস্থিত সকলের নিঃশ্বাস পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। বাতাস যেন আটকে গেছে দেয়ালের ভেতর। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দীক্ষার দিকে। শিশির চুপ। কিন্তু সেই চুপটা ঝড়ের আগে নিস্তব্ধতার মতো। তার চোখের মণি জ্বলে উঠছে, কপালের রগ ফুলে উঠেছে।

দীক্ষার বুক উঠানামা করছে দ্রুত। চোখ লাল, ঠোঁট কাঁপছে। মুখে জমে থাকা কান্না আর রাগ একসঙ্গে মিশে গেছে একমুহূর্তে।

শিশির ঠান্ডা গলায় বলল,

—“তাই বুঝি আমাকে অপমান করবি? আমার গায়ে জুতা মা র বি?”

দীক্ষা হেসে উঠল। একটা কর্কশ, ব্যথাভরা হাসি।

—“অপমান? অপমান তুই কি জানিস, শিশির? অপমান তো তুই আমাকে করলি। আমার অনুভূতি গুলোকে করলি। এমনকি আমার পেটের সন্তানটাকেও তুই ছাড়লি না।”

শিশির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—“চুপ করবি তুই! আমার আর তোর মধ্যে যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন এসব বলে লাভ নেই। তুই আমার জীবনে জায়গা হারিয়ে ফেলেছিস।”

দীক্ষা তীব্র গলায় উত্তর দিল,

—“জায়গা হারিয়েছি? আমি হারিয়েছি নাকি তুই বিক্রি করে দিয়েছিস? তুই নিজের শরীরের মতো মনকেও ভাড়ায় তুলে দিয়েছিস তৃণার কাছে।”

শিশির এক পা এগিয়ে এল, গলা ভারী হয়ে উঠল।

—“মুখ সামলাস দীক্ষা! যা খুশি বলিস না!”

—“কেন? তুই যখন যা খুশি করিস, তখন আমি মুখ বন্ধ রাখব? আমার গর্ভে তোর সন্তান, আর তুই অন্য কারও চোখে চোখ রেখে সংসারের স্বপ্ন দেখিস- এই লজ্জা তোর হয় না?”

শিশির চেঁচিয়ে উঠল,

—“তুই থামবি নাকি!?”

—“না, থামব না। আজ সব বলব। তুই জানিস, তোর মতো স্বামী মানে নোংরার থলে! আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ!”

শিশির টেবিলের উপর রাখা গ্লাসটা ছুঁড়ে মারল দেয়ালে। গ্লাস ভেঙে গুঁড়ো হয়ে পড়ল মেঝেতে।

—“চুপ করে যা! না হলে খারাপ হবে!”

দীক্ষাও এবার ভয় পেল না। চোখে চোখ রেখে বলল,

—“খারাপ তো তুই হয়েই গেছিস। এখন আর কিছুতেই নতুন খারাপ করা সম্ভব না!”

—“তুই আমার সহ্যশক্তির পরীক্ষা নিচ্ছিস দীক্ষা!”

—“তোর সহ্যশক্তি? তুই নিজের বিবেকের পরীক্ষা দিয়েছিস প্রথমে! এখন নিজের মুখের থুতু নিজেই চাটছিস!”

শিশির এক ঝটকায় এগিয়ে এসে দীক্ষার হাত ধরে টানল।

—“তুই মেয়ে হয়ে আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলবি!?”

দীক্ষা ছটফট করে হাত ছাড়াতে লাগল।

—“হাত ছাড়! বলছি হাত ছাড়! নোংরা মানুষ!”

—“চুপ কর!”

শিশির এবার প্রায় ঘুষি তুলল দীক্ষার মুখের দিকে— চোখ জ্বলছে রাগে, মুখ বিকৃত হয়ে গেছে।

ঠিক তখনই একটা তীব্র চিৎকারে ঘর কেঁপে উঠল।

—“শিশির!! থাম!!”

সায়মা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে ছেলের হাত চেপে ধরলেন।
তার চোখ লাল, গলায় কম্পন,

—“আর এক ইঞ্চি নড়বি না! তোর এই হাতটা আমি কেটে ফেলব, যদি তুই আমার ছেলের নামে কলঙ্ক আনিস!”

শিশির হতভম্ব হয়ে তাকাল মায়ের দিকে।
শর্মিলা এগিয়ে এসে দীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে গেল,

—“ওর গায়ে হাত দেওয়া মানে আমার গায়ে দেওয়া। নে, দে। আগে আমাকে চ ড় দিবি, তারপর ওকে…”

শিশির নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল, বুক উঠছে পড়ছে।
দীক্ষা কাঁপছে থরথর করে। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে।

দীক্ষা এক মুহূর্ত তাকাল শিশিরের চোখে।
গলায় কাঁপা স্বরে বলল,

—“তুই একটা মানুষ না শিশির, তুই একটা অভিশাপ। আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভুল। কিন্তু মনে রাখিস, তোর সেই তৃণার চোখে যে সুখ দেখতে চাস, সেটা একদিন তোর চোখে কাঁটা হয়ে ফুটবে। আল্লাহর বিচার তোকে কোনোদিন হাসতে দেবে না। কোনোদিন না।”

ঘরটা নিঃশব্দ।
শুধু কাঁচের টুকরো গড়াগড়ি খাচ্ছে মেঝেতে।
বাতাসে জমে থাকা ভালোবাসা, ঘৃণা, রাগ কিংবা চিৎকার- সব মিলেমিশে এক অদ্ভুত ভারী নীরবতা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে।

সায়মা বেগম ধীরস্বরে বললেন,

—“দীক্ষা, ঘরে যাও মা। এই নোংরা ছেলেটার সঙ্গে এক মিনিটও মুখ লাগিয়ো না। আমি ওর বিচার করব।”

দীক্ষা কিছু বলল না।
শুধু শর্মিলার হাত ধরে ধীরে ধীরে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। বাইরে তখন রাত গভীর। আকাশে হালকা কুয়াশা, চাঁদ ম্লান। হাওয়ায় বয়ে আসছে টগর ফুলের গন্ধ,
আর সেই গন্ধে মিশে আছে এক অসহায় মেয়ের নীরব প্রতিজ্ঞা- এবার সে হারবে না। ভালোবাসায় ভাঙবে না। যতটুকু গুড়িয়ে গেলে একটা মানুষের আর ভয় থাকে না, দীক্ষার ততটুকু খুঁইয়ে গেছে। এবার পুনরায় জোড়া দিয়ে সিড়ি ডিঙিয়ে উপরে উঠবার সময় এসে গেছে।

দীক্ষা চলে যেতেই শিশির ধপ করে সোফার উপর বসে পড়ল। কাঁপতে থাকা শরীর নিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,

—“ওর ব্যবহার দেখলে আম্মু? কি বেয়াদবের মতো কথা বলে গেল। এভাবে কেউ তার স্বামীর সাথে কথা বলে আম্মু? তুমি বাবার সাথে এভাবে কথা বলছ কোনোদিন? তুই তোকারি- ছিঃ”

সায়মা বেগম ক্লান্ত কণ্ঠে বললেন,

—“তোমার বাবা কোনোদিন এমন কিছু করেওনি যার জন্যে আমার এই রূপে আসতে বাধ্য হতে হয়। তাঁর মতো চরিত্রবান এবং সৎ পুরুষ মানুষ আমি আমার জীবনে কমই দেখেছি। তোমার বড় ভাই রুমেল একদম তাঁর মতো হয়েছে। তুমি যে কীভাবে অন্যরকম…”

শিশির বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলল,

—“আম্মু!! তুমিও!! মানে পেয়েছো টা কি সবাই হ্যাঁ? আমার ভাল্লাগছে না ওকে আর। বাট তোমরা জোর করে ওর সঙ্গেই…”

সায়মা বেগম কথার মাঝখানেই উঠে দাঁড়ালেন,

—“আমরা কেউ জোর করছি না তোমাকে। তুমি আমার পুত্র, তোমাকে তো ত্যাগ করতে পারব না। কিন্তু তোমার অন্যায় আবদার ও মেনে নিতে পারব না। যদি সংসার, বিয়ে এসব একটা ছেলেখেলা হয় তোমার কাছে তবে তুমি তোমার জিনিসপত্র নিয়ে আলাদা হয়ে যাও। যেভাবে খুশি যার সঙ্গে খুশি থাকো। এটাই আমার শেষ কথা।”

—“আম্মু!”

সায়মা বেগম শুনলেন না আর। গমগমে স্বরে কথাগুলো বলে চলে গেলেন নিজের ঘরের দিকে। বয়স হয়েছে তার। ক্লান্ত লাগে আজকাল ভীষণ। অল্পতেই হাঁপ ধরে যায়। এরকম একটা সময়ে এসে… এ কি ঝড় শুরু হলো তার সংসারে! আজ যদি মানুষটা তার পাশে থাকতেন! নিশ্চয়ই সব ঠিক করে দিতেন। মানুষটা নরম সরম হলেও ছিল দারুণ বুদ্ধিমান। অথচ তাঁরই ঔরসজাত সন্তান কি-না এমন নিকৃষ্ট পশুর মতো? সায়মা বেগমের বুক চিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো নীরবে।


মাথাটা বিছানার হেডবোর্ডে ঠেকিয়ে পাগলের মতো কেঁদে চলেছে দীক্ষা। চোখজোড়া সিলিংয়ের দিকে। ঝুলে থাকা ফ্যানটা যতবার দৃষ্টি সীমানার ভেতর চলে আসছে ততবারই একটা কথা মনে হচ্ছে দীক্ষার, মৃ ত্যু র কষ্ট কি এরচেয়েও বেশি কষ্টকর?
কিছুতেই মানতে পারছে না জীবনের এই মোড়।
একদিকে তার ভালোবাসা, অপরদিকে তার বোন!
কী করে হয়? এমন পরিণতির জন্য তার জীবনটাই বিধাতা বেছে নিলো শেষমেশ? শিশিরকে ছাড়া বাঁচতে কতটা কষ্ট হবে- তিনি তো জানেন!

শর্মিলা হাত গুটিয়ে অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছে শুধু। সেই বা কি করবে? কোন ভাষায় স্বান্তনা দেবে? যা হয়েছে বা হচ্ছে তা কি কোনো নারীর পক্ষে আদৌও সহ্যকর? তাও কিনা এরকম অবস্থায়! এই মুহূর্তে মানসিক ভাবে এত ধকল নেওয়াটাও ঠিক হচ্ছে না। শরীর এবং সন্তান- দু’জনের উপরেই এর প্রভাব পড়বে। সেটা শর্মিলা বুঝতে পারলেও কোন মুখে দীক্ষাকে কাঁদতে বারণ করবে? রুমেল টা যে কবে আসবে! পাশে পেলে একটু ভরসা পেতো শর্মিলাও!

তৃণা ভীত পায়ে ঘরের ভেতর ঢোকে।
সে চলে যেতে চায়। এই ফ্ল্যাটে আপাতত তার থাকাটা উচিত হবে না। সবাই তার বিপরীতে।

শর্মিলা তৃণাকে দেখামাত্র কটমট করে বলে উঠল,

—“তুমি এখানে কি চাও?”

দীক্ষা চোখ মেলে তাকাল।
তৃণা মিঁইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল,

—“আমি চলে যাবো, আপার কাছে…”

—“এখানে তোমার কোনো আপা টাপা নেই। যাও ঘর থেকে, বের হও।”

শর্মিলা নিজের রাগ সংবরণ করতে পারছে না। তৃণা ঘুরে দাঁড়াল চলে যাওয়ার জন্য, দীক্ষা ঠিক তখনই তাকে ডেকে উঠল।

—“আয় ভেতরে।”

ভাঙা, দিশেহারা কণ্ঠস্বর। তৃণা চমকালো। চমকে গেল শর্মিলাও।

—“দীক্ষা, কি দরকার…”

—“ওর সাথে আমার কয়টা কথা আছে ভাবি। না বলতে পারলে শান্তি পাব না। তুই ভেতরে আয়।”

আর কিছু বলল না শর্মিলা। থম ধরে বসে রইল অন্য দিকে চেয়ে। তৃণা পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো। থুতনির সঙ্গে বুক মিশিয়ে রেখেছে। হাবভাবে ভদ্রতার চূড়ান্ত। শর্মিলার এত রাগ হলো দেখে। সে উঠে দাঁড়াল এবং গটগটে পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল। এইসব আদিখ্যেতা তার একদমই সহ্য হচ্ছে না। বোনের ঘর সংসার ভাসিয়ে দিয়ে এখন আলগা দরদ দেখাতে এসেছে! মনে মনে ভয়াবহ দুটি গালিও কষলো শর্মিলা।

দীক্ষা ইশারায় ওকে বসতে বলল। তৃণা বসল না। দাঁড়িয়েই কাঠকাঠ গলায় বলল,

—“আমি চলে যাচ্ছি আপা।”

তৃণা যেন দারুণ বিস্মিত হয়েছে, এমন ভাব করে বলল,

—“কোথায় যাবি?”

—“জানি না। তবে এখানে আর এক মুহূর্ত থাকতে ইচ্ছে করছে না।”

—“ওমা! শ্বশুর বাড়ি খারাপ হোক ভালো হোক, সেখানেই তো থাকতে হয়। যাওয়ার হলে আমি যাব। তুই কেন যাবি? এটা তো তোর হবু শ্বশুর বাড়ি।”

তৃণা জবাবে কিছু বলতে পারল না। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বোনের দিকে। দীক্ষা হঠাৎ শক্ত কণ্ঠে বলল,

—“বস।”

তৃণা বসল।

—“তোর মনে আছে, ছোট থেকে মা আমার জন্য যাই আনতো, সেটা দু পিস করে আনতো। কারণ তুই তোর নিজের জামা কাপড়ের চেয়েও বেশি আমার জিনিস পরতে ভালোবাসতি। আমার কাজল লুকিয়ে চোখে লাগাতি। তোর জন্য একটা লিপস্টিক ও আমি শান্তিতে ইউজ করতে পারতাম না। জামা জুতো থেকে শুরু করে ব্যাগ কিংবা লেখার খাতা- সব নিয়েই তোর কাড়াকাড়ি করাটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কি মনে আছে তো এসব, নাকি?”

তৃণা আলগোছে মাথা কাত করে হ্যাঁ জানাল।

দীক্ষা বলল,

—“এই নিয়ে মায়ের কাছেও কম মা র খেতি না। বড় মামাও তোকে সবসময় অনেক বোঝাতো। কারো জিনিস নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে নেই। তাতে সে কষ্ট পায়। মনে আছে না?”

এবারেও ঘাড় কাত করে হ্যাঁ জানাল তৃণা।

—“কিন্তু আমি কোনোদিন তোকে কিছু বলতাম?”

তৃণা কিছুই বলল না।

দীক্ষা বলে চলল,

—“আমি আরও মা কে, বড় মামাকে সবসময় বুঝাতাম, তুই ছোট মানুষ। এত কি বুঝিস। আমায় পছন্দ করিস তাই আমার সব কিছুকেই পছন্দ করিস। থাক না, সামান্য জামা কাপড় জুতোই তো… কিন্তু সেসময়ে যদি কল্পনাতেও বুঝতে পারতাম তোর এই অভ্যাস একসময় এতোটাই বদঅভ্যাসে পরিণত হবে যে, আমার সব নিতে নিতে সংসারটাকেও নিয়ে নিবি, তাহলে বিশ্বাস কর, মা কে বলতাম আরও মা রো। মামা কে বলতাম আরও বোঝাও। ওর জানা দরকার, কেউ যখন কারো পছন্দের বা অভ্যস্ত জিনিসে ভাগ বসাতে চায়, তখন বুকের ভেতর কতটা র ক্ত ক্ষরণ হয়।”

দীক্ষা এগিয়ে এসে তৃণার দু কাঁধ চেপে ধরে। ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলতে লাগল,

—“জানিস কেমন লাগে, জানিস? তোর হাত যদি ছু ড়ি দিয়ে কে টে দেই, র ক্ত ক্ষরণ হবে না? ব্যথা পাবি না? এর চেয়েও বেশি র ক্ত ক্ষরণ হয় বুকের ভেতর। এর চেয়েও বেশি ব্যথা লাগে হৃদয়ে। তুই তো কা টা জায়গায় মলমের প্রলেপ লাগাতে পারবি। আমি আমার হৃদয়ের করবটা কি? বল, কি করব? উত্তর দে…”

তৃণা হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছে। দীক্ষা ধীরে ধীরে ফুঁসে উঠছে। আবারও একটা চ ড় টর দিয়ে বসতে পারে ভেবে তৃণা সরে যাওয়ার চেষ্টা করল।

—“আপা, তুই ছাড় আমাকে। আমার কথা শোন আগে। শান্ত হ আপা…”

—“শান্ত হবো? তুই আমার ঘর কেড়ে নিলি, বর কেড়ে নিলি, এখন আমাকে বলছিস শান্ত হতে?”

—“আপা…”

—“খবরদার আমাকে আপা ডাকবি না। তোর মতো বোন যেন আল্লাহ কারো ঘরে দ্বিতীয়টা না দেন। তুই বোন জাতটাকেই কলঙ্কে ডুবালি। ছিঃ ঘৃণা হচ্ছে আমার তোর উপরে… ছিঃ।”

দীক্ষা থুতু ছুঁড়ে মা র ল। তৃণার গোটা মুখটার উপর গিয়ে পড়ল।

—“আপা!!!”

দীক্ষাকে ঠেলে নিজের কাছ থেকে দূরে সরালো সে। এমন ভাবে ধাক্কা দিয়ে সরালো, আরেকটু হলেই বেখেয়ালি পড়ত দীক্ষা। বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না তৃণা। বরঙ নিজের কণ্ঠস্বর শক্ত করে বলল,

—“অনেক হয়েছে, আর ভালো লাগছে না। তুমি আসলেই একটা ফালতু মেয়ে। সাধে সাধে তোমার জামাই তোমাকে ফেলে আমাকে বেছে নেয়নি। নিজের আচরণ আগে ঠিক করো। বস্তির মতো টানাটানি করছ। আর আমাকে ছিঃ বলছ, আমাকে? তুমি নিজে একটা ছিঃ। জামাইর সাথে আদব লেহাজ দিয়ে কখনো কথা তো বলতে পারো নাই, আবার জামাইর মনটাও বোঝো নাই। সে না চাওয়ার পরেও বেবি একটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিতেছ। অথচ তোমার হাজবেন্ড এই বেবিটা চাইছে নাকি চায় নাই সেগুলা কখনো জানছ? জানো নাই। সে কারো কাছে না বলতে পেরে আমার কাছে বলছে। সে আরও সময় নিতে চেয়েছিল। রেডি ছিল না মানসিক ভাবে এতবড় দায়িত্বের জন্যে। সে চেয়েছিল তুমিও অফিস টফিস করে তার পাশে দাঁড়াও। কিন্তু না, তুমি তো দুনিয়ার সব তার ঘাড়ে দিয়ে নিজে একটা কুমড়া হয়েছো ঘরে বসে বসে…”

আর সহ্য হলো না দীক্ষার। ঠাস করে চ ড় দিয়ে বসল তৃণার গালে। তৃণাও পালটা জবাবে দীক্ষাকে ধাক্কা দিয়ে বসল। দীক্ষা তৃণার চুলের গোছে হাত ঢুকিয়ে হ্যাঁচকা টানে ওকে বিছানা থেকে ফেলে দিতেই ঘরে ঢুকল শিশির, সায়েমা বেগম এবং শর্মিলা। শিশির ছুটে গেল প্রায়,

—“তুই এসব কি করতেছিস দীক্ষা! তুই পাগল হয়ে গেছিস…”

নিচ থেকে তোলার জন্য হাত বাড়াতেই সেই হাত ধরে মুচড়ে দিলো দীক্ষা। চিৎকার করে বলল,

—“হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি। তুই আমাকে পাগল বানাইছিস জা নো য়া র। তোর কারণে আজ আমার এই দশা। আমি নিজে যদি ম রি, তোকে নিয়ে ম র ব।”

—“দীক্ষা…”

হাত ঝাড়া দিয়ে উঠল শিশির। রাগে উন্মাদ অন্ধ হয়ে পা তুলে লাথি দিয়ে বসল আচানক।

ব্যাপারটা কি হলো, বুঝতে দুটো সেকেন্ড লাগল সবার। তারপর পরই আর্ত চিৎকার বেরিয়ে এলো সায়েমা বেগম এবং শর্মিলার ঠোঁট চিঁড়ে।

—“দীক্ষা…”

—“শিশির!!!”

দীক্ষা মাটিতে বসে পড়েছে। দু হাত চাপা দেওয়া তল পেটের উপর। চোখেমুখে কি যে আছে, বোঝা বড় দায়। হয়তো অবাক বিস্ময় নিয়ে দেখছে, যার অস্তিত্বকে সে নিজেই শেষ করে ফেলল?

র ক্তে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর। দীক্ষার বেবি পিংক মেক্সি ভিজে খয়েরি বর্ণ ধারণ করেছে। শিশির আহাম্মক বনে গেছে তাই দেখে। এক মুহূর্তের একটুখানি ক্রোধই পারে, দুনিয়াটাকে ধ্বংস করে দিতে…

(চলবে)

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply