সুখময়যন্ত্রনাতুমি সিজন ২
neela_rahman
পর্ব ১
একটার পর একটা কলিং বেল বেজে যাচ্ছে। রান্নাঘরে কাজ করছে নওরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম ।নওরিন আফরোজ বারবার রিমার নাম ধরে ডাকলেন ।উপর থেকে রিমা বললো,” আমি কাজ করছি আমি এখন পারবো না। আমার হাতে মেহেদি এমনিও দরজা খুলতে পারবো না মা নুরকে বলো ।”
সামিহা বেগম নুরের নাম ধরে ডাকলেন ।”এই নূর দেখ তো মা কে এসেছে দরজায়?”
নুর ভিতর থেকে বললো,” আসছি মা।”
হুমায়ূন রহমান বাড়িতে নেই ।অফিসে আছে ।ফজলুর রহমান সরকারি চাকরি করেন উচ্চপদে আছেন ।বদলি সুবাদে এখানে ঢাকায় এসেছেন।আগে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। হুমায়ূন রহমান জোর করে নিজের বাড়িতে রেখেছেন এত বড় বাড়ি আর ভাই থাকবে আলাদা বাড়িতে এটা উনি মেনে নিবে না তাই জোর করে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছেন।
ফজলুর রহমান অফিসে ।সায়মন উপরে এখনো ঘুমাচ্ছে ।এখনো নবাবজাদার ওঠার কোন নাম গন্ধ নেই ।বেলা বেজে গিয়েছে দশটা ।আজকে যেহেতু ক্লাস নেই তাই চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে।
নুর দৌড়ে দৌড়ে শিরি বেয়ে নামছে আর গান গাইছে দুর দ্বীপ ও বাসিনী চিনি তোমারে চিনি দারুচিনি রো দেশে তুমি বিদেশী নি গো….. লা লা লা।নেমে হাঁপাতে হাঁপাতে দরজার কাছে এসে আগে একটু দাঁড়িয়ে যেন দুটি মুহূর্ত দম নিয়ে নিল ।তারপরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখল সুন্দর মত একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।পোশাক-আশাক বেশভূষা দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব অভিজাত ফ্যামিলির মেয়ে কিন্তু আশেপাশে আর কাউকে দেখছে না ।বড় একটি লাগেজ সহ মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে।
তানিয়া তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।হঠাৎ দর্শনে নুরকে দেখে যেন অবাক হয়ে গেল তানিয়া ।ছোট্ট একটি পরীর মত মেয়ে তবে তানিয়া সহ্য করতে পারে না নিজের থেকে কোন সুন্দর মেয়ে ওর সামনে দেখলে ।সেটা ছোট হোক আর বড় হোক তাই চোখ দুটো সরু করে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো।
নূর জানতে চাইলো,”কে আপনি ?কাকে চাচ্ছেন?”
তানিয়া বললো,”তুমি কে ?আমি তানিয়া বলছি ।আমি সাদাফের সাথে……
সাদাফের নাম শুনতেই নূর হেসে দিল ।হাসিটা যে এত সুন্দর চকচকে হাসি তানিয়া তাকিয়ে রইল ।মেয়ে হয়েও যেন চোখ সরছে না কিন্তু ভালো লাগছে না তানিয়ার। এই বাড়িতে ও ছাড়া এমন সুন্দরী কোন মেয়ে থাকবে এটা মানতে পারছে না তানিয়া। রিমার ছবি দেখেছে এটা যে রিমা নয় তা ভালো করেই জানে তবে কে এই মেয়েটা ?”
তানিয়া জিজ্ঞেস করবে তুমি কে তার আগে পিছন থেকে সাদাফ বলে উঠলো ,”কার সাথে কথা বলছ তানিয়া?”
নূর তানিয়া থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ঘাড়টা একটু বাঁকা করে তাকালো পেছনের দিকে ।দেখল একটি লাগেজ নিয়ে আসছে একটি লোক। লম্বা প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি সৌন্দর্য যেন ছাপিয়ে পড়ছে লোকটার।চুলগুলো সিল্কি কপালের দিকে একটু ঝুঁকে এসেছে ।চোখে একটা কালো সানগ্লাস পরা ।কালো ওভারকোট পড়া কালো গেঞ্জি কালো প্যান্ট । ট্রলি ব্যাগ টেনে নিয়ে এসে দরজার কাছে দাঁড়াতেই সাদাফের চোখ পড়লো নুরের দিকে।সাদাফ তাকিয়ে রইল নূরের দিকে।
নুর এখনো হাসি হাসি মুখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে ।নূরের উচ্চতা খুব বেশি নয় তাই একটু ঘাড় উঁচু করে সাদাফের দিকে তাকিয়েছে ।খুব ছোট্ট মত একটি মেয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে বয়স ১৬ কি ১৭ ।সাদা বুঝতে পারছে না এই মেয়েটিকে তবে চেহারার আদল যে খুবই পরিচিত।
হাসলে নূরের গালে টোল পরে ।সাদাফ সব কিছুই অবলোকন করছে বিশেষ করে দাঁত ।দাঁতগুলো যে মানুষের এতো সুন্দর হয় আর হাসলে এত সুন্দর লাগতে পারে যেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে না দেখলে বুঝা যেত না ।সাদাফ একটু মুচকি হাসলো। হেসে জিজ্ঞেস করল ,”তুমি কে তোমাকে তো চিনতে পারলাম না?”
নূর এবার মুখ খুলেই খিলখিলিয়ে হেসে দিল বললো,” আমাকে চিনতে পারেননি ?আমি নুর আপনাদের নুর ।গ্রাম থেকে এসেছি আমি আপনার চাচাতো বোন।
আপনার ছোট আব্বু মানে ফজলুর রহমান উনার সাথে এসেছি ।বাবা চাকরির সুবাদে এখানে আসতে হয়েছে বদলি হয়ে গিয়েছে তাই আমরা এখন থেকে এখানেই থাকি ।আমি এখানে একটি স্কুলে লেখাপড়া করি।”
পুরো আদ্যপান্ত বলে দিলো নুর একটি প্রশ্নের উত্তরে।
সাদাফের যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল ।নুর !
যেমনটা মনে হয়েছিল চেহারার আদলটা খুবই পরিচিত সেই ৬ বছর আগে দেখেছিল সাদাফ।সাদাফ এক হাত দেয়ালে রেখে যেন নিজেকে একটু ধাতস্ত করলো ।তারপর মনে মনে ভাবল ছোট আব্বুর মেয়ে নূর।এখানে? সাদাফ মুখে কিছু বলবে কিন্তু ভাষা হারিয়ে গিয়েছে ।এক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে আছে নূরের দিকে ।এই সেই ছোট্ট নূর যার জন্য এত কিছু যার জন্য বাংলাদেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে হয়েছে ।সাদাফ আর কিছু ভাবতে পারল না ।সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলল ।চোখ সরিয়ে তানিয়ার দিকে তাকালো।
সাদাফ নিজেকে ঠিক করে নিল ।না এসব ভাববে না এসব আর ভাবতে চায় না সাদাফ তাই নূরের দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললো,”রাস্তা ছাড়ো ভিতরে আসতে দাও দেখছো না মেহমান এসেছে ?”নূরের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল ।কেমন আছো কি করছো কিছু জিজ্ঞেস করল না সোজা নূরকে ধমক দিয়ে দিল ?তাই নুর রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ালো।
সাদাফ তানিয়াকে বললো ভিতরে যেতে ।তানিয়া টলি ব্যাগটি নিয়ে ভিতরে যেতে যেতে আর একবার নূরের দিকে তাকালো ।সাদাফ চলে যাচ্ছে নুর ঐভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল ।কি মনে করে যেন সাদাফ আরেকবার পিছনে ঘুরে তাকালো।
মনে মনে ভাবল ওরা এখন থেকে এখানেই থাকবে মানে কি ?বাবার সাথে তো এই ধরনের কোন বিষয়ে কোন কথাবার্তা হয়নি ।এমন কোন কথা তো ছিল না বাবার সাথে ?তবে সাদাফ কাউকে কিছু বলে আসেনি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল ।সারপ্রাইজ দিতে এসে যেন নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেল।
সাদাফ একটু ভিতরে আসতেই নওরিন আফরোজ বললো,” কেরে নূর ?কে এসেছে ?”
নুর আর কিছুই বললো না ।সাদাফ একটু উচ্চস্বরে বললো,” মা আমি তোমার ছেলে।”
নরিন আফরোজ এর যেন হাত থেমে গেল ।হৃদপিণ্ডটাও যেন স্পন্দন করতে থেমে গেল ।এতদিন পর সাদাফের কন্ঠ শুনতে পেল ।ফোনে কথা বলেছে কিন্তু সামনাসামনি ছেলে আসবে এটা বলেনি ।দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখলেন সত্যি সত্যি সাদাফ সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
নওরিন আফরোজ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে ।কান্না করতে করতে বললেন ,”তুই আসবি বললি না কেন ?তাহলে সব তোর পছন্দের রান্না করে রাখতাম ।তুই কেন না বলে আসলি আমাদের। কত শুকিয়ে গেছে আমার ছেলেটা মায়ের হাতে খেতে না পেয়ে।”
সাদাফ চশমাটা খুলে জড়িয়ে ধরলো মাকে । বললো,” তুমি ও না মা কোথায় শুখিয়েছি? বাংলাদেশ থেকে যখন গিয়েছি তার থেকেও ৪ কেজি ওজন বেড়েছে আমার। তোমার ২০ বছরের ছেলে গিয়েছিল ২৭ বছরে হয়ে ফিরে এসেছে ।কি করে শুকিয়ে থাকি বলতো?”
বলতে বলতেই আড় চোখে তাকিয়ে দেখল নূর ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে ।নুরের মন খারাপ হয়েছে।তাকাবে না সাদাফ ভাইয়ের দিকে।সাদাফ আবারো তাকালো নুরের দিকে। তাকাতেই সাদাফের হাসিটি মিলিয়ে গেল ।এদিকে নওরিন আফরোজ তানিয়া দিকে তাকিয়ে বলল ওকে ?ওকে তো চিনলাম না।
সাদাফ নওরিন আফরোজ কে ছেড়ে দিয়ে নূরের কাছ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললো,” ও তানিয়া ।আমার সাথে লেখাপড়া করেছে আমেরিকায়।ওর বাড়ি ও বাংলাদেশে ।দুজন একসাথে এসেছি তবে ওর বাড়িতে লোক নেই ।এক সপ্তাহ এখানে থাকবে। আর তাছাড়া বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে সবকিছু বিস্তারিত পরে বলব ।বলে আবারো তাকালো নুরের দিকে ।দেখলো নূর ধীরে ধীরে উপরে সিঁড়ি বেয়ে উঠে রুমের দিকে চলে যাচ্ছে।
এমন সময় রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন সামিহা বেগম ।সামিহা বেগম বের হয়েই সাদাফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,” কেমন আছিস বাবা ভালো আছিস ?৬ বছর হয়ে গেল কখনো তো ছোট আম্মু ছোট আব্বুর সাথে যোগাযোগ করলি না।”
সাদাফের ভিতরে অপরাধবোধ কাজ করলো কিন্তু সাদাফ জানে কেন যোগাযোগ করেনি ।সামিহা বেগম ও জানে তাই আর কথা বাড়ালেন না ।বললেন ,”ভাবি সাদাবকে ভিতরে যেতে দিন রেস্ট নিক ।আমরা না হয় দুপুরের খাবার দাবারের আয়োজন করি ।”
সামিহা বেহবে কোন কথা বাড়াতে চান না ।যা হয়ে গিয়েছে হয়েছে এগুলো নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই।
সামিহা বেগম নুর কে নিয়ে এখানে আসতে চাননি ।কিন্তু হুমায়ূন রহমান জোর করে বাধ্য করেছেন যার জন্য আসতে হলো।
সাদাফ মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো ,”মা তানিয়াকে গেস্ট রুম দেখিয়ে দাও ।আমি আমার রুমে যাচ্ছি ।”
বলে তানিয়াকে বললো,” মায়ের সাথে যাও আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
হুমায়ূন রহমান অফিসে বসে ছিল ।এমন সময় ফোন আসলো । ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন নওরিন আফরোজ ।ফোন ধরে হ্যালো বলবে তার আগে নওরিন আফরোজ খুশিতে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে ফেললেন ,”সাদাফ এসেছে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসুন ।”
হুমায়ূন রহমান খুশি হলেন সাথে সাথেই আবার হাসিটা মিলিয়েও গেল ।আতঙ্ক কাজ করছে হুমায়ূন রহমানের মনে। জানে সাথে তানিয়া নামে একটি মেয়ে আসবে সাদাফ আগে বলে রেখেছিল।
হুমায়ূন রহমান বললেন,” ঠিক আছে আসছি ।”
বলেই ফোন রেখে দিলেন।চিন্তার মগ্ন হয়ে গেলেন হুমায়ূন রহমান ।বাড়িতে ফজলুর রহমান সামিহা নূর সায়মন আছে এমন সময় সাদাফ না বলে তানিয়াকে নিয়ে চলে এসেছে ।কি জবাব দিবে সবাই কে যদিও সবাই সবকিছু মেনে নিয়েছে তারপরও একটি দায়বদ্ধতা থেকে যায় ।চোখের সামনে এরকম দেখে কেইবা সহ্য করতে পারবে।
হুমায়ূন রহমান ভাবনা-চিন্তা একপাশে রেখে ফোন দিল ফজলুর রহমানকে ।ফজলুর রহমান অফিসে ছিল ।বড় ভাইয়ের ফোন দেখে ফোন ধরতেই হুমায়ুন বললেন ,”বাড়িতে আয় সাদাফ এসেছে।”
ফজলুর রহমান খুশি হলেন ।অভিনন্দন জানালেন হুমায়র রহমানকে ।তারপরে একটু পর আমতা আমতা করে বললেন,” ভাইজান আমাদের কি এখানে থাকাটা ঠিক হবে ?আমি আসলে নূরকে নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে চাইছি ।”
হুমায়ূন রহমান বললেন ,”খবরদার এ কথা ভুলেও ভাববি না ।এত বছর পর আমরা দুই ভাই এক হয়েছি ।চাকরির সুবাদে তোর আলাদা থাকতে হয়েছে কিন্তু এখন তো ঢাকায় পোস্টিং আর এখানে থেকে তুই অন্য কোন বাড়িতে থাকবি এটা আমি কোনদিনও মেনে নিব না।”
ফজলুর রহমান বললেন ,”কিন্তু ভাইয়া নূর …..
হুমায়র রহমান বললেন ,”নূর কিছু জানেনা তাই এগুলো নিয়ে তোর ভাবতে হবে না ।আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আয় ।ছেলেটা এসেছে বহু বছর পর।
আমরা সাথে সাথে না গেলে হয়তো অভিমান আরো বাড়বে বই কমবে না ।”
ফজলুর রহমান বললেন ,”ঠিক আছে ভাইজান আপনি যান আমি অফিস থেকে বের হচ্ছি ।”
বলেই ফোন রেখে চিন্তায় মগ্ন হলেন ফজলুর রহমান।
এদিকে রিমা সাদাফের রুমে এসে ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরলো। যদিও যখন সাদাফ গিয়েছিল রিমার বয়স খুব বেশি ছিল না ১২ কি ১৩ হবে ।রিমা সাদাফ কে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো,” কত বছর পরে এসেছ ভাইয়া।”
সাদাফ বললো,” আমি তো লেখা পড়া করতে গিয়েছিলাম ।পাগলি দেরি করে তো আসতেই হবে লেখা পড়া শেষ না হলে কি করে আসবো।তুই কেমন আছিস ?আমার বোনটা পাগলি বোনটা কত বড় হয়ে গিয়েছে ।”
বলেই রিমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিল সাদাফ।রিমা জড়িয়ে ধরে বললো,” ঠিক আছে ভাইয়া তুমি ফ্রেশ হও রেস্ট নাও আমি হাতে মেহেদিগুলো ধুয়ে আসছি কেমন ?সবাই একসাথে খাবো দুপুরে।”
বলেই রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে যাবে ঠিক তার আগেই সাইমনের রুম পরলো সামনে।সাইমনের রুম দিয়ে যাওয়ার সময় রিমা মাথায় একটু দুষ্টুমি চাপলো ।ও এখনো ঘুমাচ্ছে জানেনা সাদাফ ভাইয়া এসেছে তাই ওকে একবারে সারপ্রাইজ দিবে বলে বাহিরে থেকে দরজাটি লাগিয়ে দিল রিমা ।লাগিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল।
সাদাফ ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসল ।বিছানায় বসেই ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিল ।চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো ছয় বছর আগের কাহিনী।
ডিসেম্বর মাস ছিল খুব শীতের সময় ।দাদু অসুস্থ থাকায় হুমায়ুন রহমান হঠাৎ একদিন বললেন ,”তোর দাদু অসুস্থ চল শীতের কয়েকটা দিন বেরিয়ে আসবো তোর দাদু কেউ দেখে আসবো ।”
সাদাফের তখন ২০ কি ২১ বছর ।সাদাফ যেতে চাইছিল না কিন্তু হুমায়ূন রহমান জোর করে বললেন ,”যেতে হবে কিছু করার নেই।”
সাদাফ বাবার কথা ফেলতে পারে না তাই বাবার কথা অনুযায়ী চাচার বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেল। তবে শর্ত করে নিল এক সপ্তাহ থাকবে গ্রামের বাড়িতে এমনিও খুব একটা ভালো লাগে না সাদাফের। দু দিন ঠিক আছে কিন্তু ১০ দিন ১৫ দিন সাদাফের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।
হুমায়ূন রহমান সাদাফের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেন ।বললেন ,”ঠিক আছে এক সপ্তাহ মাত্র।তোর দাদিকে দেখে আসব অসুস্থ কখন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না ।এমনিও সামনে তুই বিদেশ চলে যাচ্ছিস একবার তো দেখে যেতেই হবে ।”
সাদাফ বললো ,”হ্যাঁ ঠিক আছে পাপা ।”
বলেই সাদাফ যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেল।
গ্রামের মাটির রাস্তা এলোমেলো পথ ধরে এগিয়ে এসে থামলো সাদাফ দের গাড়ী ফজলুর রহমানের বাড়ির দরজায় ।গাড়ি থেকে নামল সাদাফ ।বাড়িটা একতলা। বাহিরে বড় একটি গেট তবে সাদাফদের বাড়ির মত এরকম অভিজাতপূর্ণ নয় ।বোঝাই যাচ্ছে গ্রামের একতলা বাড়ি। দাদা জীবিত থাকতে করে দিয়ে গিয়েছিলেন তবে এখন শুধু দাদী আছে চাচা চাচি এবং ছোট্ট চাচাতো বোন চাচাতো ভাই আছে এছাড়া আর কেউ নেই।
হুমায়ূন রহমান নওরিন আফরোজ ছোট্ট রিমা এবং সাদাফ দরজায় দাঁড়িয়ে কলিং বেল টিপছে ।হঠাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই সাদাফ তাকিয়ে দেখলো কোমর সমান ছোট্ট একটি মেয়ে এসে উপরে তাকিয়ে আছে।সাদাফ তাকালো নুরের দিকে। দেখতেই দাঁতগুলো বের করে হেসে দিল নুর।হাসলে গালে টোল পরে ছোট্ট মেয়েটির।ছোট্ট মেয়েটি আর কেউ না নূর ওর ছোট চাচাতো বোন।
সাথে সাথে সাদাফের চোখে ভেসে উঠল আজকেও নূর দরজা খুলেছে ।হেসেছিল নুর দরজা খোলার সময়।হাসলে গালে টোল পরে এখনো ছোট্ট নূরের ।ঝকঝকে দাঁতগুলো হাসলে কি যে সুন্দর লাগে তা যেন বলে বুঝাতে পারবে না সাদাফ।কিন্তু এখানে কেন নূর ?ভাবতেই সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলল সাদাফ। মনে করতে চায় না সেই অতীত যে অতীত ছয় বছর আগে পিছনে ফেলে রেখে এসেছে।
রাতের পর্বে খোলাসা হবে সব।
Share On:
TAGS: এক শ্রাবণ মেঘের দিনে, নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি সিজন ২
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬৩
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৩+১৩৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৯
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৫৬+১৫৭
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪১
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১১৬+১১৭
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১২৫+১২৬+১২৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৩