Golpo romantic golpo সুখময় যন্ত্রণা তুমি

সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১৩৫+১৩৬


সুখময় যন্ত্রনা তুমি

neela_rahman

পর্ব_১৩৫

সাইমন রিমার থুতনি ধরে মুখ টা উপরে তুলে বললো,”তাকা আমার দিকে ।”

রিমা তাকালো ।চোখ দুটো জলে টই টুম্বুর যেকোনো মুহূর্ত গঙ্গা-যমুনা ভাসিয়ে ফেলবে ।সায়মন বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে রিমার চোখে পানি গুলো মুছতে মুছতে বললো,” একেবাড়ি তেই তো আছি ।কোথাও কি গিয়েছি ?তোর চোখের সামনে আছি ।তাহলে এত রাগ করছিস কেন শুনি ?নিশ্চয় আমি ফোনের সামনে ছিলাম না থাকলে তোর ফোন অবশ্যই ধরতে পারতাম।

বিকেলবেলায় তোর ফোন দেখেছি তখনই আমি সাথে সাথে নাস্তা খাওয়ার বাহানায় নেমেছি যাতে তোকে একটু দেখতে পারি। Nurun Nahar Nila

সরাসরি তাকাইনি কথা বলিনি কিন্তু আমার দৃষ্টি জোড়া তোর দিকে নিবদ্ধ ছিল ।হ্যাঁ হয়তো সরাসরি দেখিনি আড় চোখে দেখেছি ।তুই কি আমায় একটুও বুঝতে পারিস নি ?আমার নজর আমার মন কি চায় কিছুই বুঝতে পারিস নি?

তোর কি মনে হয় যে ছেলে দিনভর তোর পিছনে ঘুরঘুর করত সেই ছেলে হঠাৎ আজকে থেকে বাইরে যাচ্ছে না বাসায় আছে অথচ তোকে একবারও ডাকেনি ,নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে ?কারণটা কি বোঝার চেষ্টা করেছিস?

কারন আমার কাছে আর এক বছর সময় আছে ।এক বছর পর ফাইনাল পরীক্ষা ।ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হবে ।প্রতিষ্ঠিত হতে হবে তারপর তোর বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো ।যদিও আমার চাচা বড় আব্বু হয় কিন্তু তারপরও তোর বাবা তো ।মেয়ের জামাই হিসাবে আমাকে পছন্দ করে কিনা আমাকে উপযুক্ত মনে করে কিনা ,আমাকে তার যোগ্য হতে হবে না?”
রিমা এবার মুখ খুলল ।বললো,”তোমাকে কি এসব কথা আম্মু বলেছে ?”

সায়মন হাসলো ।হেসে বললো,” যে বলুক কথাগুলো তো সত্যি ।এবাড়ির ছেলে হিসেবে আমি ঠিক আছি টাকা পয়সার অভাব নেই কিন্তু একটি মেয়ের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ির সামনে দাঁড়ানোর জন্য সারা জীবন তোকে মাথায় করে রাখার জন্য আমার কি নিজস্ব কোন যোগ্যতা আছে?

এই মুহূর্তে বিয়ে করে বাবাদের ঘাড়ে ফেলা ছাড়া আমার আর কি যোগ্যতা আছে বল ?সাদাফ ভাইকে দেখ না বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে নিজের গাড়ি নিজে ফ্ল্যাট সবকিছু উনার কোন টেনশন নেই ।কোন ঝামেলা নেই ।কিন্তু আমি যদি আজ সাদাফ ভাইয়ের জায়গায় থাকতাম আমি কি করতাম ?আমার তো সাদাফ ভাইয়ের কাছে বা বাবাদের কাছে হাত পাতা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”

এদিকে রাত বাজে দশটা ।বেলকনিতে নূরকে কোলে নিয়ে দোলনায় সাদাফ বসে আছে ।নূর বারবার নামতে চাচ্ছে কিন্তু সাদাফ ছাড়ছে না ।বলছে যতখন আমি দোলনায় বসে থাকবো এভাবে আমার কোলে বসে থাকবি। সাদাফ নুর কে নিজের কোলে পাথালো করে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে নূরের কানে ফিসফিস করে বলছে ,”নুর একটি কথা বলবি ?”
নুর বললো,” হুম।”

সাদাফ বললো ,”আমি তো তোকে ভালবাসি বললাম আজকে না হয় তুইও বলে দে ।প্লিজ বল নুর একবার আমাকে বল ভালবাসি।”

নুর লজ্জা পাচ্ছে ।আরেকটু জোরে সাদাফ কে জড়িয়ে ধরলো। যেন সাদাফ নুরের চেহারা দেখতে না পারে ।নুর চোখ বন্ধ করে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,” হুম বাসি তো।”

সাদাফ নুরের কানে কানে ধীরে ধীরে ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো ,”বাসিত মানে কি? কি বাসিস?”

নুর লজ্জানত অবস্থায় বললো,”ভালো ।”

সাদাফ বললো,”ভালো কি ?পুরোপুরি বল ।”

নুর বলে উঠলো,”উফ ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি বলেছি হয়েছে এবার?”

সাদাফ জোর করে নূরের হাত ছাড়িয়ে গলাটা সরিয়ে নূরের চোখে চোখ রেখে বললো,” হয়নি এভাবে না ।আমার চোখে চোখ রেখে বল “সাদাফ তোমাকে ভালোবাসি।”

নূরের চোখ দুটো যেন বড় বড় হয়ে গেল ।সাদাফের কথা শুনে ।কি বলছে এই লোক !নুর নাকি বলবে সাদাফ তোমাকে ভালোবাসি ?ইহজনমে ও কি সম্ভব ?একথা বলার আগেই নূর ম*রে যাবে না
লজ্জায় ?উনি কি বুঝে না লজ্জা পায় নুর?নুর কোনমতে আমতা আমতা করে বললো,” প্লিজ আমাকে ক্ষমা করুন ।আমি এভাবে আপনাকে বলতে পারব না ।আমার মুখ দিয়ে আসবে না।”

সাদাফ বললো,” প্লিজ একবার বল ।চোখ বন্ধ করে একবার বলে ফেল ।তারপর আর জিজ্ঞেস করবো না ।তারপর তো যেভাবে ইচ্ছা হয় সেভাবে ডাকবি ।প্লিজ একবার বল সাদাফ তোমাকে ভালোবাসি।”

নুর চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল ।আমতা আমতা করছে ।কোন ভাবে মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না ।অনেক চেষ্টা করছে নূর ।বলার চেষ্টা করলো সাদাফ ভাইয়া ……..
সাদাফ বললো,”আবার ভাই?”

নুর বললো,” না না সরি ।আরেকবার বলছি সা.. সা …তো..তোমা….কে সাদাফ ভা..ভা… লো বাসি।”

বলেই চুপ হয়ে গেল দুই নুর। লজ্জায় দুই হাত দিয়ে চোখ জোড়া ঢেকে ফেললো ।নুরের ঠোঁট দুটো তীর তির করে কাপছে। সাদাফ তাকিয়ে রইলো সদ্য ভালবাসি বলা তির তির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁট দুটোর দিকে। কাল বিলম্ব না করে সাথে সাথে সাদাফ আঁকড়ে ধরল নূরের ঠোঁট জোড়া।

কিছুক্ষণ পর নূরকে ছেড়ে দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,” আমিও তোমাকে ভালবাসি নুর ভীষণ ভালোবাসি।শুনছো আমার নুরজাহান বেগম? তোমার সেলিম তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে ।”
বলেই নূরকে জড়িয়ে ধরল ।নূর ও সাথে সাথে আঁকড়ে ধরল সাদাফের গলা।

সুখময়যন্ত্রনাতুমি

neela_rahman

পর্ব ১৩৬

পরদিন ঘুম থেকে উঠতে উঠতে নূরের অনেক দেরি হয়ে গেল ।প্রায় এগারোটা ।অনেক রাত পর্যন্ত ওরা জেগেছিল গল্প করেছে ।গল্প করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছে ভোরবেলার দিকে বলতে পারবে না নুর ।এখনো ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা যেন চোখ মেলে তাকাতেই পারছে না ।

সাদাফ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা তৈরি করে রুমে এসে দেখল নুর এখনো চোখ খোলার চেষ্টা করছে।

নুর কোনরকমে চোখ হালকা একটু খুলে বিছানা থেকে উঠে বসলো ।শাড়ির অবস্থা যা তার ।কোনমতে কুচি লেগে আছে আঁচল পড়েছিল আরেক জায়গায় ।নূর সাথে সাথে সাদাফ কে দেখে আঁচল টি টেনে বুকে নিয়ে সুন্দর করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।Nurun Nahar Nila

সাদাফ তাকিয়ে ছিল নূরের দিকে ।নুরের এলোমেলো চুলের দিকে ।এলোমেলো শাড়ির কুচি সব কিছু দিকে ।শাড়ির প্রত্যেকটা ভাঁজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেগুলোর দিকে ।তাকিয়ে সাদাফ নিজেকে যেন ভাগ্যবান মনে করল ।এরকম সকাল কখনো সাদাফ দেখতে পাবে যেন আগে ভাবতেই পারত না ।

খালি মনে হতো যদি না হয় ! তখন কি হবে? মনে হতো কখনো নুরকে ঘুম থেকে উঠে সকালবেলা নিজের বুকে দেখবে এই ভাগ্য কি সাদাফের হবে ?যদি অবুঝ নুর বড় হয়ে অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলে এই ভয়ে ছোটবেলা বিয়েও করে ফেলল ।যদিও নূর এখনো জানেনা ছোটবেলার বিয়ের কথা কিন্তু যদি নূর বড় হয়ে রাজি না হতো তাহলে কি করতে সাদাফ ?ভাবতেই বুকের ভিতরে যেন আ*গুন জ্বলে উঠল সাদাফের।

না না আর যাই হোক এই ভাবনাটা সাদাফ ভাবতে চায় না ।নূরের জন্মই হয়েছে শুধু ওর জন্য ।এই জীবনে শুধু নূর ওর ।আর একমাত্র ওরই হবে ।কখনো অন্য কোন কিছু ওদের মধ্যে আসতে পারবে না। নূর সাদাফের জীবনে থাকবে না এই কথা যেন সাদাফ কল্পনাও করতে পারে না ।

সাদাফ চা এবং নাস্তা রেখে সাথে সাথে নূরের কাছে দাঁড়িয়ে এসে নূরের সামনে হাঁটু ভে*ঙ্গে বসলো ।বসে ধীরে ধীরে কুচিগুলো সুন্দর করে দিতে লাগলো ।গুছিয়ে কোমর থেকে কুচির গোছাটা ছাড়িয়ে আবার সুন্দর করে গুছিয়ে সুন্দর করে কোমরে গুঁজে দিল কুচিগুলো।

আঁচল টায় হাত দিতেই নূর ধরে ফেলল হাত।বললো ,”কি করছেন সকাল সকাল ?”

সাদাফ বলেলো,”চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক । দিনভর শুধু বাজে চিন্তা।আর যা পারিস না তা করতে যাস কেন ?”

শাড়ি আসলটা নিয়ে সুন্দর করে ভাঁজ করে আবার নূরের বুকে দিয়ে দিল।

তারপর বললো,”এবার ঠিক আছে ।তোর এই শাড়ি পড়ার জন্য হলেও জীবনে আমাকে দরকার কারণ আমি না থাকলে ঠিকঠাক মতো শাড়ি গুছিয়ে রাখতে পারবি না ।কে ঘুরবে তোর পেছনে পেছনে শাড়ির কুচি ঠিক করে দাও বুকের আঁচল ঠিক করে দাও।”

“ঠিক করে দেওয়ার জন্য ?এগুলো এলোমেলো আপনি করেছেন ভুলে যাবেন না । আর সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন দেখেছেন আমার শাড়ি বুকের আঁচলের এরকম বেহাল অবস্থা তখন কেন ঠিক করে দিয়ে যান নি? ” ফট করে নূর কথাটি বলে ফেলল ।

“হ্যাঁ এলোমেলো করার জন্য আমাকে দরকার এগুলো গুছিয়ে দিতেও আমাকে দরকার। আর হ্যাঁ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই যখন তোকে আমি এইভাবে দেখেছি শাড়ি কুচিগুলো খুলে আছে এখানে পড়ে আছে বুকের আচলটা আরেক সাইডে পড়ে আছে আমার দেখে খুব ভালো লাগতেছিল ।সেজন্য তোকে আমি ঠিক করে দিয়ে যাইনি ।আমি বারবার এসেছি তোকে এইভাবে দেখেছি দেখে আমার ভিতরে কাজ করার জন্য উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে ।সেই উদ্দীপনা নিয়ে আমি আবার রান্না ঘরে কাজ করতে গিয়েছি।হয়েছে? খুশি এবার?”হাসতে হাসতে কথাগুলো বলল সাদাফ।

নুর বললো,” ছিঃ আপনার মাথায় শুধু বাজে চিন্তা ।”বলে ওয়াশরুমের দিকে গেল নুর ।

সাদা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।দেখতে দেখতে নূর কেমন যেন একটু বড় হয়ে গেছে ।এখন উল্টো অনেক কথা বলে ।আগে তো শুধু ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে থাকতো ।এটাই হয়তো বিয়ের প্রভাব ।এখন মুখে মুখে তর্ক করে নূর।

দশ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বের হল নুর।দুজন মিলে নাস্তা করতে বসল। সাদাফ বললো ,”আজকে বিকালে চলে যাবি ।”

শুনেই নুর তাকালো সাদাফের দিকে ।সাদাফের মন খারাপ ।নুরেরও মনটা খারাপ হয়ে গেল ।হ্যাঁ বিকালে চলে যাবে ।এইভাবে আর হয়তো দুষ্টু মিষ্টি সংসার করা হবে না ।বাবা না থাকলে হয়তো দেখা হবে বাহিরে গিয়ে চুপে চুপে কিন্তু দুজনের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি মিট না হওয়া পর্যন্ত একসাথে থাকতে পারবেনা।

নূরের মন খারাপ দেখে সাদাফ বললো,” মন খারাপ করতে হবে না আমি আমার বেগম নুরজাহান কে ঠিকই কোন না কোন বাহানায় নিয়ে আসবো আমার কাছে ।”

নূর চোখ তুলে তাকালো সাদাফের দিকে ।নুর জানে নিয়ে আসবে কিন্তু এভাবে তো আর একসাথে থাকা হবে না ।খুনসুটির সুন্দর একটি সংসার হবে না ।যদি সবকিছু ঠিক হয়ে যায় বাবাদের সাথে সাদাফ ভাইয়ার সাথে তাহলে সাদাফ ভাইয়া ওই বাড়িতে চলে আসবে কিন্তু এই বাড়ির এই স্মৃতিগুলো অনেক মিস করবে নূর।

কারণ ওই বাড়িতে কখনোই আর দুজন এইভাবে এই বাড়িতে যেমন এলোমেলোভাবে থেকেছে সেরকম করে থাকা হবে না।

কখনোই সাদাব ভাইয়া ওই বাড়িতে এই বাড়ির মত রান্না করে সকাল বিকাল খাওয়াবে না ।শুধুমাত্র নুরের থাকবে না ।সেখানে আরো অনেক মানুষ থাকবে। সাদাফ ভাই সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা অফিস থাকবে ।নুরের সারাদিন সাদাফের জন্য অপেক্ষায় থাকবে ।সন্ধ্যায় যখন সাদাফ ভাই অফিস থেকে ফিরবে নুর সাদা ভাইকে কফি দিবে ।সাদাফ ভাই সারাদিন ক্লান্ত থাকবে একটু দুষ্টু মিষ্টি কথা বলে হয়তো সাদাফ ভাই ঘুমিয়ে যাবে ।কিন্তু এখনকার মতো সারাদিন নুরকে মাথায় করে রাখবে না ।নূরে মনে মনে আসলো এই চিন্তা।

সাদাফ অবাক হয়ে জানতে চাইল কি ভাবছেন বেগম নুর?নূর বলল ,”না কিছু না ।”

সাদা বললো,” ঠিক আছে তাহলে খা ।একটু পরে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবি ।বিকালের দিকে দিয়ে আসতে হবে ।বিকাল পাঁচটার মধ্যে হয়তো বাবারা চলে আসবে। ১১ টায় বগুড়া থেকে রওনা করেছে তাই বেশি সময় লাগবে না আসতে ।তারা আসার আগেই তোকে দিয়ে আসতে হবে।”

সকালের নাস্তা কমপ্লিট করে নূর বায়না ধরল আজকে নুর রান্না করবে ।সাদাফ কোনভাবেই রাজি না নুরকে রান্না করতে দিতে ।না জানি এই মেয়ে রান্না করতে গিয়ে কি কি করে ফেলবে সেই সাদাফ কে পেছনে পেছনে ঘুরতে হবে ।তাই সাদাফ বললো ,”কোন প্রয়োজন নেই নুরজাহান বেগম আমি রান্না করবো ।”
নুর যথেষ্ট বায়না ধরে রাজি করিয়ে ফেলল রান্না করবে।

নুরকে সব শিখিয়ে দিচ্ছে সাদাফ ।পিছন থেকে নূরকে জড়িয়ে ধরে কি করে সবজি কাটতে হয় কি করে তরকারি কাটতে হয় সবকিছু শিখাচ্ছে ।নূর লজ্জা পাচ্ছে ।হঠাৎ করে সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল,” আচ্ছা ওই বাড়িতে তো কখনো আপনি রান্নাঘরে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবেন না।”

সাদাফ নুরের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল । বললো,” কেন তুই কি চাস তুই যখন রান্না করবি আমি ওই বাড়িতেও তোকে পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরি তোকে রান্না শিখাই?”

নূর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল ।সাদাফ জানে নূর বাচ্চা মেয়ে ওর ভিতরে সে বাচ্চামো টা থাকবে ।সাদাফ বললো ,”অবশ্যই আমার বেগম নুরজাহান যখন বলেছে নুরজাহান বেগমের কথা তো ফেলা যাবে না ।যখন সবাই ঘুমিয়ে যাবে রাত্রে বেলা তুই যখন আমার জন্য নুডুলস রান্না করে নিয়ে যাবি ।আমাদের রোমান্স শেষ করার পর যখন আমার অনেক ক্ষুধা লাগবে তখন তুই যখন রান্না করবি তখন আমি পিছন থেকে এসে তোকে জড়িয়ে ধরবো ।চুমু খাব এখানে-ওখানে কামড়ে দিব খুশি এবার?”

নুর মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বুঝালো ।সাদাফ নুরের কাঁধে চু*মু খেয়ে নুরকে আরেকটু জোরে জড়িয়ে ধরে বললো,” প্রত্যেকটা মেয়েরই হয়তো এরকম চাহিদা থাকে বউ যখন রান্না করবে স্বামী পেছন থেকে এসে রোমান্স করবে ।বউয়ের পেছনে পেছনে ঘুরবে ।কিন্তু আসলে বাঙালি সংসার গুলো এরকম হয়না তাইনা ?যৌথ সংসার যেমন ওই বাড়িতে যখন তুই রান্না করবি আমি টেবিলে বসে থাকব ।আমার মনটা তোর কাছে পড়ে থাকলেও মনে হবে মা আছে ছোট আম্মু আছে বাবা আছে তোর ভাই আছে আমার বোন আছে সবার সামনে এসব করা যাবে না ।তাই হয়তো চুপচাপ বসে থাকব কিন্তু মনটা পড়ে থাকবে তোর কাছে।”
নুর খুশি হল ।চুপচাপ সব কাজ গুছিয়ে করতে লাগলো।
সাদাফ একই ভাবে নূরকে জড়িয়ে ধরে রাখল ।কারণ কখন আবার নুরকে কাছে পাবে তার ঠিক নেই।

দেখতে দেখতে এভাবে বিকেল গড়িয়ে এলো ।নুরের যাওয়ার সময় হয়েছে ।গাড়িতে বসে আছে নূর ।সাদাস নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,” মন খারাপ?”

নূরের চোখ টলোমলো ।আসলে মন খারাপ ।কেন যেন নূরের একটুও যেতে মন চাইছে না এ বাড়ি থেকে ।মন চাচ্ছে সাদাফের সাথেই থাকবে।

সাদাফ বললো,” মন খারাপ করিস না ।আমি তোকে আবার নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব।”

রহমান ভিলায় গাড়ি থামাতেই দেখল হুমায়ন রহমান ও ফজলুর রহমান মাত্রই বাসায় পৌঁছেছে ।এখনো বাড়ির ভিতর ঢুকেনি ।দুজনই দেখে ফেলল নূর সাদাফের সাথে ছিল ।হুমায়ন রহমান তাকালেন ফজলুর রহমানের দিকে।

ফজলুর রহমান জানে যেহেতু সাদাফের সাথে ছিল বাড়ির সবাই মিথ্যা বলেছে তাহলে হুমায়ণ রহমান জানত যেহেতু সাদাফ হুমায়র রহমানের কাছে কোন কিছুই গোপন করে না।

নূর গাড়ি থেকে নামতেই বড়বাবা ছোট বাবাকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল ।মাথা নিচু করে রইল ।ফজলুর রহমান বললেন,” যাও ভিতরে যাও ।”নূহ চুপচাপ ভিতরে চলে গেল ।একবার শুধু তাকালো সাদাফের দিকে ।সাদাফ চোখ দিয়ে ইশারা করল ভিতরে যেতে।

নূর ভিতরে চলে গেল। সাথে সাথে গেল ফজলুর রহমানের রুমের দিকে ।বাবা এক তো দেখে ফেলেছে সাদাফের সাথে ছিল দ্বিতীয় যদি জানতে পারে ঠিকঠাক মতো ওষুধ খাইনি রেগুলার ওষুধগুলো তাহলে রাগ করবে ।সত্যি কথা বলতে নূর প্রেসক্রিপশন এর কথা ভুলে গিয়েছিল ।তাই টাইম মতো খেতে পারিনি।

ফজলুর রহমান হুমায়ন রহমানের সামনেই সাদাব কে বললেন ,”তোর সাথে আমার কথা আছে ।”

সাদাফ হুমায়ূন রহমানের দিকে তাকালো।তারপর বললো,” হুম বাবা বলো ।”

ফজলুর রহমান বললেন ,”কথাগুলো নূরকে নিয়ে ।যদি তোর শুনে মনে হয় সবকিছু ঠিক আছে তাহলে আমার তোদের সম্পর্ক মেনে নিতে কোন সমস্যা নেই।

কিন্তু যদি মনে হয় না নূরের কথাগুলো শুনে তোর একটু অন্যরকম লাগছে মনের কোথাও খটকা লাগছে তাহলে আজকে এই মুহূর্তে থেকে তুই নূরকে ভুলে যাবি।”

সাদাফ অবাক হলো। বললো,” দ্বিতীয় অপশনে কথা চিন্তা করে লাভ নেই ।ভুলে যাব সেটা দুনিয়া উল্টে গেলেও সম্ভব নয় ।তবে কি বলতে চাও সেটা বলতে পারো ।যদি বিষয়টা নূরের সম্পর্কে হয় জানার অধিকার সবার আগে আমার।”

এগুলো মুখ ফুটে বললেও সাদাফের বুকের ভিতর কেমন যেন আনচান করছে ।এমন কি কথা যে নূরকে ভুলে যাওয়ার পর্যন্ত কথা বলেছে ছোট আব্বু ! নিশ্চয়ই বড় ধরনের কোন কথা হতে পারে!

এদিকে নূর ফজলুর রহমানের রুমে এসে ব্যাগ থেকে একটি ফাইল বের করল ।যেখানে প্রেসক্রিপশন আছে ।প্রেসক্রিপশন টি হাতে নিয়েই হঠাৎ মনে পড়ল ফাইলটা একটু দেখতে। নূর কিছুই জানেনা আসলে কি হয়েছিল ওর।তাই রিপোর্টে কি আছে দেখতে ফাইল খুললো।

ফাইলটি খুলে যা যা লেখা আছে নুর কিছুই বুঝতে পারছে না তাই রিপোর্টগুলোর গুগল লেন্স দিয়ে ছবি তুলল ।ছবি তুলে গুগলে যখন দিল তখন রোগের বিশদ বিবরণ যখন লেখা উঠল নুরের হাত থেকে ফাইলটি পড়ে গেল।

নুর সাথে সাথে মোবাইলটি হাতে ধরে বিছানায় বসে পড়ল ।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরতে লাগলো ।যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে নূর ।নূরের মুখে কোন কথা নেই না কোন চিৎকার না কান্নার শব্দ।

বানান কিছু ভুল থাকতে পারে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

চলবে_

পেইজে রিভিউ না দিলে রাতের পর্ব দিমু না।😛

পর্ব টি ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক শেয়ার কমেন্ট করবেন ।আপনারা কেউ শেয়ার করেন না কেন?

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply