সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
neela_rahman
পর্ব_৮৯
নওরিন আফরোজ এবং সামিহা বেগম ছেলেমেয়েদের খাইয়ে রান্নাঘরে দুজন কাজ করছে ।নওরিন আফরোজ এর মনটা ভীষণ খারাপ সামিহা বেগম দেখলেন খেয়াল করলেন কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন ,”ভাবি মন খারাপ করো না।
দেখো আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে ।ছেলেমেয়েগুলোকে আল্লাহ এক করে দিয়েছে ভুলে করুক আর সঠিক করুক আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম ।এটলিস্ট তুমি আর আর আমি তো চেয়েছিলাম ।কিভাবে ছেলে মেয়ের সংসারটাকে ভালো করা যায় এখন সেটা ভাবতে হবে মন খারাপ করে বসে থাকার সময় না ভাবি।”
নওরিন আফরোজ বললেন ,”নারে ছেলেটার জন্য আসলে খারাপ লাগছে সে ছয়টা বছর তো বাহিরে থেকে এল আর কয়টা দিনই বা হয়েছিল এসেছে বল ?এখন আবার বাহিরে চলে গেল তবে ফজলুরকে আমি দোষ দেই না ছেলেটা না বলে বিয়ে করে ভুল করেছে। নীলা রহমান
ফজলুরের কথায়ও যুক্তি আছে ।নুরের ১৮ বছর হয়নি আর তাছাড়া একই বাড়িতে থাকে একা একা বিয়ে করা মানে বাপ চাচা কাউকে সম্মান না দিয়ে নিশ্চয়ই কোন ঘটনা ঘটিয়েছে ।যার জন্য একা একা বিয়ে হয়ে গেছে । মানুষ আত্মীয় স্বজন রাত কানাঘুষা করবে।অথচ আমরা যদি অনুষ্ঠান করে বিয়ে করাতাম তাহলে কেউ ১০ কথা বলতে পারতো না ।মেয়ের বাবা তো বুঝতে পারি মেয়ের সম্মানের কথা চিন্তা করেই উনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমিতো ভাবছি তোর ভাইয়ের কথা গতকাল রাতে তো প্রায় অনেক জ্বর এসেছিল সারা রাত একটু সেবা যত্ন করার পর ঘুমানোর পর ঠিক হয়েছে ।তুই তো জানিস সারা বাড়ির মধ্যে ছেলেটা সবচাইতে বেশি সখ্যতা উনার সাথে ।এমন কোন কথা নাই যে বাবার সাথে শেয়ার করে না ।সেই ছেলের গায়ে হাত তুলেছে উনি সহ্য করতে পারছেন না ।যে ছেলের সাথে রাগ করে কথা বলতে পারে না সেই ছেলের গায়ে হাত তুলেছে তা মানতে পারছে না।
নওরিন আফরোজ একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল আচ্ছা নুরের কি অবস্থা? ওকি একটু নরমাল হয়েছে ?স্কুল থেকে তো শুনলাম সাদাফ বাইরে নিয়ে যাবে ।এ কথা যেন আবার কেউ না জানে।
টেনশন থেকে বের হয়ে ছেলেমেয়ে দুইটা একটু ঘুরাঘুরি করুক জীবনটা ইনজয় করুক ।টেনশন করার জন্য আমরা আছি কি বলিস?”
সামিহা বেগম বললেন ,”তা আর বলতে টেনশন দেওয়ার জন্যই তো মেয়েটা তবে আমার এখন টেনশন শেষ ভাবি কি বলবো আমি যে কি খুশি মেয়েটা আমার এখন চোখের সামনে থাকবে আর দশটা ভুল করলেও আমি দশটা কথা বললেও তোমরা একটা কথা বলবে না সেটা আমি জানি ।যে যাই বলুক আমি কিন্তু ভীষণ খুশি সাদাফকে মেয়ের জামাই হিসেবে পেয়ে ।আমি তো ওকে আগে থেকে জামাই হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম।
উনিও কয়দিন পর মেনে যাবে উনি সাদাফকে অনেক ভালোবাসে ।শুধু একটু রাগ করেছে রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি ।দেখবে সুর সুর করে নিজে সবার আগে গিয়ে সাদাফ কে নিয়ে আসবে।”
এদিকে ছাদে বসে কথা বলছে রিমা ও সাইমন ।হঠাৎ রিমা বলল ,”আচ্ছা সাদাফ ভাইয়া এখন কি করছে ?কেমন আছে নুর আছে সাথে তাই না ?কি ভীষণ মজা বিয়ের পর প্রথম দিন বাইরে ঘুরতে গিয়েছে।”
সায়মন বলল ,” নুর তো এই প্রথম বিয়ের পর সাদাফ ভাইয়ের সাথে একা কোথাও গেল তোর তো আমাকে শুকরিয়া আদায় করা দরকার । উঠতে বসতে ধন্যবাদ দেওয়া দরকার ।তোকে আমি কতগুলো টাকা খরচ করে ঘুরিয়ে আনলাম।”
রিমা বলল ,”কতগুলো টাকা মানে ?মাত্র চার পাঁচ হাজার ।আর তার মধ্যে আমার আর আমার ভাইয়ের টাকা সব।”
সাইমন বললো,” এইতো শুরু হয়ে গেলো খোটা। টাকাটা ভাইয়া আমাকে দিয়েছে তার মানে এটা আমার ছিল ।তোর পিছনে খরচ করার জন্য দেয়নি ।এজন্যই বলে মেয়েদের পিছনে দুই হাত ভরে খরচ করলেও লাভ নেই এরা নিমক হারাম জাতি।আর মাত্র চার পাঁচ হাজার টাকা ?তোর কিপটা বাপেরা তো আমাকে চার পাঁচ হাজার টাকা মাসে দেয় না ।হাত পাততে হয় তোর ভাইয়ের কাছে।
আর এখন লজ্জার কথা কি বলবো ?তোর ভাইয়ের তো সমন্দি হয়ে গেলাম ।আমি এখন কিভাবে হাত পাতবো ?বলা যাবে ভাইয়া আমাকে তিন হাজার চার হাজার টাকা দেন ?ছোট বোনের জামাই বলে কথা!”
রিমা সায়মনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।না এই ব*লদের কিছু হবে না ।অনেকক্ষণ রিমা কে চুপচাপ থাকতে দেখে সাইমন বললো ,”কি হয়েছে কি নিয়ে টেনশন করছিস?”
রিমা বলল ,”আচ্ছা আমাদের কি ব্রেকআপ করে ফেলা উচিত? দেখনা ভাইয়াকে তোমার আব্বু বের করে দিল তোমাকেও তাহলে আমার আব্বু বের করে দিবে ।দুজনই যদি বাড়ির বাহিরে থাকো তাহলে আমরা কি করব ?”
সাইমন রিমার দিকে তাকিয়ে বলল ,”কি আর করবি ডিসকো ডান্স করবি। আসলে মুরুব্বীরা যা বলে তা ঠিক বলে ছেলেদের অধঃপতনের পিছনে মেয়েদের হাত থাকে।
আর আমাদের দুই ভাইয়ের তো শুধু হাত না হাত পা মাথা পুরা শরীরই আছে।”
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে ।তারপর নীরবতা ভেঙে বললো,”আই এম সরি নূর ।কথাটা বুঝার চেষ্টা কর ।আমি এত কিছু বুঝিনি ভেবেছিলাম তোকে সারপ্রাইজ দিব ।”নূরের চোখ ছলছল যেকোনো মুহূর্তে পানি ঝরে পড়বে ।হঠাৎ এমন সময় দরজা নক করলো সাবা।
নূর তাকাল দরজার দিকে ।তাকিয়ে দেখল সাবা আপু।সাথে সাথে নূর চোখে পানি আড়াল করার চেষ্টা করল ।মাথা নিচু করে ফেলল ।সাদাফের দিকে তাকিয়ে সাবা বললো,” সাদাফ তুই বাইরে যা আমি একটু নুরের সাথে কথা বলব ।”
সাদাফ বলল ,”কিন্তু সাবা……..
সাবা বলল ,”জা না সাদাফ যা করার তুই করেছিস এখন বাকিটা আমাকে দেখতে দে।”
নুর অবাক হয়ে গেল ।ভাবলো কি কথা বলবে সাবা আপু নূরের সাথে ?সাবা আপু কি সব কথা শুনে ফেলেছে ?লজ্জায় তাকাতে পারছে না নূর উপরে।
সাদাফ বাইরে চলে গেল ।যাওয়ার আগে একবার নূরের দিকে তাকালো ।খুব খারাপ লাগছে সাদাফের ।সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল খুশি করতে চেয়েছিল উল্টো মেয়েটাকে দুঃখী করে ফেলল ।
যাওয়ার সময় দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে সোহানদের সাথে সোফায় গিয়ে বসে পড়লো সাদাফ।
সাবা নুরের দিকে তাকিয়ে নূরের থুতনি ধরে মুখটা উপরে তুলে বললো,”তুমি জানো তুমি আমার থেকে কত বছরের ছোট?”নীলা রহমান লেখিকা
নুর অবাক হয়ে তাকালো সাবার দিকে ।সাবা নূরের চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,”তুমি আমার থেকে গুনে গুনে দশ বছরের ছোট।”
নুর বুঝতে পারছে না সাবা আপু কি বলবে তাই জানার জন্য তাকিয়ে রইল সাবা আপুর দিকে ।সাবা বললো,” তুমি জানো সাদাফ তোমাকে কখন থেকে ভালবাসে ?”
নুর অবাক হয়ে গেল ।সাবা আপু জানে সাদাফ ভাই নুরকে ভালোবাসে ?নুর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চুপচাপ চেয়ে রইল কিন্তু চোখ যেন বলছে নূর জানতে চায় ।
সাবা বলতে শুরু করলো।,”যেদিন থেকে তোমার জন্ম হয়েছে তোমাকে প্রথম কোলে নিয়েছে বিশ্বাস করবে না সাদাফ তোমাকে সেদিন থেকে ভালোবাসে ।আর এ কথা আমরা প্রত্যেকটা মানুষ জানি প্রত্যেকটা বন্ধু জানি।
সাদাফ তোমাকে কোলে নিয়ে যখন স্কুলে আসতো তখন থেকে জানি।সাদাফ তোমার ধরে যখন কলেজে আসত তখন থেকে জানি ।যখন সাদাফ বিদেশ চলে যায় আমরা তখন থেকে জানি।
সাদাফের ভালোবাসার সাদাফের তোমার জন্য কষ্ট পাওয়ার সাদাফের বিরহের সবকিছু প্রত্যেকটা বিরহের সাক্ষী আমরা।সাদাফের সারাজীবনের অপেক্ষা তুমি।
সাদাফের বয়স ২৭ প্রায় শেষের দিকে আর তোমার ১৭ রানিং ।বুঝতে পারছ সাদাফ তোমাকে ১৭ বছর ধরে ভালবাসে আর আমরা ১৭ বছর ধরেই জানি ও তোমাকে ভালোবাসে।
আর বোকা মেয়ে সাদাফ বললো আমরা একটু দুষ্টুমি করলাম আর তুমি মেনে নিলে ?আমার বয়স কত তাহলে ?আমার বয়স ২৭ বছর তোমার কি মনে হয় এখন আমার বিয়ে হয়নি ?আমি সাদাফের জন্য অপেক্ষা করেছি ?আর সাদাফ আর আমার যদি সম্পর্ক থাকতো তাহলে কি সাদাফ ছয় বছর বিদেশে থাকতো আমাকে ফেলে?”
নুর হঠাৎ বললো,” তাহলে আপনি যে বললেন সাদাফ ভাই আপনাকে ভালোবাসে আপনাকে প্রপোজ করেছিল?”
সাবা মুচকি হাসলো নূরের বাচ্চামো দেখে ।১০ বছরে ছোট একটা মেয়েকে ভালোবাসা বুঝাচ্ছে ।সাবা নিজের উপরে হাসলো ।তারপর বললো,” ওগুলো সাদাফ তোমাকে ভালোবাসা বুঝানোর জন্য করেছে ।সাদাফের উপর তোমার যে অধিকার সেটা বুঝে নেওয়ার জন্য করেছে ।তুমি যে সাদাফ কে ভালোবাসো সেটা তোমাকে অনুধাবন করানোর জন্য বলেছে। সহজ ভাষায় ও তোমাকে জেলাস ফিল করাতে চেয়েছে ।আর দেখো না কাজ হয়েছে ।সেদিন থেকে তুমি জ্ব*লে পু*ড়ে ম*রছো সাদাফের জন্য ।তার আগে হয়তো তুমি এতো বুঝতেও পারোনি সাদাফ যে তোমাকে এত ভালোবাসে। তুমি যে সাদাফকে এত ভালোবাসো সেটাই কি তুমি বুঝতে পেরেছিলে ?যেদিন তুমি জানলে আমার সাথে সাদাফের সম্পর্ক সেদিন থেকে তোমার ভিতরে সাদাফের জন্য ভালোবাসা অনুভূতি তুমি বুঝতে পেরেছ।
আর সেই অনুভূতি বোঝানোর জন্যই সাদাফ মিথ্যে নাটকটুকু করেছিল ।এরপর ঘটনা ক্রমে সত্য কথাটা তোমাকে আর বলা হয়নি ।আর For your kind information madam আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাই আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
এবার আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না নুর।এবার যেন খুশির কান্না ছুটলো।দুখের কান্না আটকে রাখতে পারলেও খুশির কান্না আটকে রাখতে পারল না নুর।ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল নুর ।বাইরে থেকে হঠাৎ সাদাফের কানে আসলো নূরের কান্নার শব্দ ।সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল সাদাফ।
চলবে_________
Neela Rahman
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮২
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৫
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৯৭
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯+১০
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ৪৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৫
-
সুখময় যন্ত্রনা তুমি পর্ব ১০০