Golpo romantic golpo সুখময় যন্ত্রণা তুমি

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬১


সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি

neela_rahman

পর্ব_৬১

সাদাফ: তুমি অন্তত বলো বাবা নুর কোথায়? হসপিটালে জেনে ও নুর আসবে না এটা তো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না বাবা।

হুমায়ূন রহমান: শান্ত হও আর নিজেকে স্টেবল কর ।একদিন দুইদিন এই তোমার এই অবস্থা হয়েছে দিনের পর দিন যদি নূরকে ছাড়া থাকতে হয় তাহলে কিভাবে থাকবে ?নিজেকে শক্ত করো।

সাদাফ: পুরো বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিব যদি আমি নূরকে দেখতে না পাই বাড়িতে।

হুমায়ূন রহমান: এই রাগ এই অবশেশন যে তোমার শত্রু হয়ে গেছে সাদাফ।

ইনজেকশন দেওয়ার আগে বাবার সাথে এই কথাগুলো হয়েছিল সাদাফের ।হুমায়ূণ রহমান ভাবতে লাগলো সাদাফের বলা কথাগুলো।

ইঞ্জেকশনের প্রভাবে লম্বা সময় ধরে ঘুমাচ্ছে সাদাফ।বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে হুমায়ুন রহমান ও ফজলুর রহমান। করিডোরে বারবার হাঁটাচলা করছে সায়মন আর রিমা।অপেক্ষা করছে কখন সাদাফ ভাই আবার উঠে যায় ।

কখন আবার এরকম করবে নুরের জন্য।

রুমের ভিতরেই আরেকটি বেডে চুপচাপ গুটিসুটি মেরে বসে আছে নওরিন আফরোজ ।ছেলেরে অবস্থা উনি দেখতে পারছেন না ।সামিহা বেগম পাশে দাঁড়ানো ছিল ।নওরিন আফরোজ এর কাঁধে হাত দিয়ে বললেন ,”ভাবি আল্লাহ আল্লাহ কর ।মন খারাপ করো না ।সাদাফ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।”

নওরিন আফরোজ ফুপিয়ে কান্না করে দিলেন। কাঁধে হাত রাখা সামিহা বেগমের হাতে হাত রেখে সামিহার দিকে তাকিয়ে বললেন ,”আমার সাদাফের অসুখ তো নূর আর তো কোন অসুখ নেই। নীলা রহমান লেখিকা

ফজলুর এমন করছে কেন ?সবকিছু দেখেও বুঝেও না দেখার না বুঝার ভান কেন করছে ?ওরও তো ছেলে হয় সাদাফ।ওর কি মায়া লাগছে না ?বুকটা কাঁপছে না সাদাফের জন্য?

হঠাৎ করে শুধু নূরের বাবা হয়ে গেল ?ও তো আগে সাদাফের বাবা হয়েছে সাদাফ ওকে আগে বাবা বলে ডাক দিয়েছে।

সাদাস কি শুধু আমার আর উনার সন্তান ?তোদের নয় ?বুকে হাত দিয়ে বলতো তোকে যখন মা বলে ডেকেছে তোর কি কলিজা ঠান্ডা হয়নি ?তাহলে এখন আমার ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে কিভাবে দাঁড়িয়ে আছিস?”

কেন বোঝাচ্ছিস না ফজলুর কে ?আমার সাদাফের অবস্থা কি হয়েছে দুই দিনে ?দেখ কি অবস্থা হয়েছে ?কিভাবে থাকবে ও নুর কে ছাড়া?”

সামিহা বেগম এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে নওরিন আফরোজ এর পাশে বসে বললেন ,”আমার কি বুকটা ফাটছে না ভাবি? উনি তো আমার সাথে কিছুই শেয়ার করছেন না ।হঠাৎ করে এরকম করছে করা নির্দেশ দিয়েছে আমরা যেন উনাদের দুই ভাইয়ের সামনে কিছু না বলি।

আমি সত্যি করে বলছি ভাবি আমি কিছুই জানিনা ।কি থেকে কি হয়ে গেল ?সাদাব কে কি আমরা কম ভালোবাসি ?নিঃসন্দেহে বলতে পারব সাদাফ যতটুকু তোমাদের ঠিক ততটুকু আমাদের সন্তান।”

এদিকে বোকা নুর মোবাইল নিয়ে বসে আছে ।মোবাইলে যে নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছে ফজলুর রহমান তা ভুলেও বুঝতে পারেনি নুর । বোঝার কথা ও নয়।মনে মনে ভাবছে মোবাইল থেকে ফোন যাচ্ছে না হয়তো নেটওয়ার্ক খারাপ কিন্তু সাদাফ ভাই কেন ফোন দিচ্ছে না ?ফোন হাতে নিয়ে শুধু ফোনের অপেক্ষায় করে যাচ্ছে। নীলা রহমান

সাদাফের শরীর অসুস্থ হসপিটালে ভর্তি এসব কিছুই জানেনা নুর ।নুরকে মামার বাড়িতে রেখে গিয়েছে নানীর অসুস্থতার কথা বলে দুই দিনের জন্য।

বাসায় মামা মামিকে খবর দিয়ে রেখে গিয়েছে বলেছে পারিবারিক একটি প্রয়োজনে সবাইকে যেতে হচ্ছে ।নুর যেহেতু অনেকদিন মামা বাড়িতে বেড়ায় না তাই দুই দিনের জন্য নুর তাদের সাথেই থাকবে ।তাই মামা-মামী ও আর সন্দেহ করেনি।

এদিকে নুর না আসার জন্য কোন বাহানা ও খুঁজে পায়নি ।আর যেহেতু সাদা ভাই বাড়িতে নেই আরো তিন থেকে চার দিন পরে আসবে তাই নূর ভেবেছে মোবাইলটা তো দিয়েছে কথা তো এখান থেকেও বলা যাবে ।তাই চুপচাপ মামা বাড়িতে চলে এসেছে।

তবে আজ থেকে থেকে মন খারাপ হচ্ছে নুরের। বারবার সাদাফের কথা মনে পড়ছে খুব।সাদাফ ভাই কেন ফোন দিচ্ছে না ?বারবার মোবাইলে দিকে তাকাচ্ছে ।মামাতো ছোট বোনকে নিয়ে বসে আছে ওর দিকেও খেয়াল দিতে পারছে না ।বারবার শুধু মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখছে ফোন কেন আসছে না এমন তো হবার কথা নয়? তাহলে কি যেই ভয় পেয়েছিল সেটাই হয়েছে ?ওইখানে গিয়ে কি কাউকে পেয়েছে সাদাফ ভাই ?নাকি সাবা আপু ওখানে গিয়েছে যার জন্য নূরকে মনে করার বা ফোন দেওয়ার সময় পাচ্ছে না ?খুব অভিমান হচ্ছে নূরের।

হসপিটালে বাহিরে চেয়ারে পাশাপাশি বসে বসে আছে হুমায়ুন রহমান ও ফজলুর রহমান । হুমায়ূন রহমান যেনো পাথর হয়ে গেছে।চোখ তুলে তাকালেন ফজলুর রহমানের দিকে ।ফজলুর রহমান জানে ভাই কি বলতে চায় ।তাই নিজে থেকে শুরু করলেন ।বললেন,”ভাই আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে সাদাফের সম্পর্কে।”

হুমায়ূন রহমান মুখে কিছু বললেন না শুধু তাকিয়ে রইলেন ফজলুর রহমানের দিকে।

ফজলুর রহমান বলল ,”ভাইজান আপনার কি অবাক লাগে না নুর যখন জন্ম হয়েছে ঠিক সেইদিন থেকেই নুরকে নিজের বলে দাবি করা নূরের প্রতি এতটা অবসেশন যে কারো গায়ে হাত তুলতে দ্বিধাবোধ করে না ।এমনকি নিজের র*ক্ত ঝরাতে দ্বিধাবোধ করে না।

সেটা সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে ভাইজান কমেনি ।নিঃসন্দেহে সাদাফ নুরকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু ওর ভালোবাসা ওর অবসেশন এতটাই বেড়ে গিয়েছে ও নিঃসন্দেহে নূরের জন্য মানুষ খু*ন করতে পারবে এমনকি ভাইজান নিজেকেও মে*রে ফেলতে পারবে।

আমি সাদাফের শত্রু না ভাইজান বিশ্বাস করেন ।আপনার যতটুকু ছেলে সাদাফ আমার ততটুকুই ছেলে ।আমি ওর ভালো চাই আমি চাই ও নিজের রা*গ কন্ট্রোল করুক ।অ*বশেশন কন্ট্রোল করুক ।নুরের প্রতি ওর যে একটা অবসেশান সেটা থেকে ও বের হয়ে আসুক।

আজ যদি সাদাফ কোন ড্রা*গসের এডিক্টেড হতো আপনি কি করতেন ?ওকে কোন রিহ্যাবিলিটেশনে দিয়ে দিতেন যাতে ও অ্যাডিকশন থেকে বের হয়ে আসতে পারে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে ।নুরু একটা অবসেশন হয়ে গিয়েছে ভাইয়া ওর অ্যাডিকশন হয়ে গেছে ।ওর একটা সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে হবে।

কাউকে ভালবাসলে দূর থেকেও ভালোবাসা যায় উ*গ্রতা না দেখিয়ে ভয় না দেখিয়ে এমনিও ভালোবাসা যায় এটা সাদাফকে শিখতে হবে ।সময়ের প্রয়োজন ।আমরা সবাই মিলে সময় দিব আমার উপরে বিশ্বাস রাখেন ভাইজান আমি ওর শত্রু নই।

হুমায়ূন রহমান জানে সাদাফের রাগ সাদাফের অবসেশান সম্পর্কে ।তারপরও ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”তারপর কি হবে ?ধর ও সব কিছুই শিখে নিল সবকিছুই হলো তারপর ?নুর কিন্তু সাদাফের ই থাকবে। এটা তুই কোনোভাবে অস্বীকার করতে পারবি না।”

ফজলুর রহমান তাকিয়ে রইলেন ভাইয়ের দিকে ।অসহায় নেত্রে কিভাবে হুমায়ূন রহমান তার দিকে তাকিয়ে আছে ! ফজলুর রহমান ভাইয়ের দুই হাত ধরে বললেন ,”আমার উপরে বিশ্বাস রাখেন ভাইজান সাদাফ সুস্থ হয়ে যাবে ।ওর একটু সময় প্রয়োজন।”

চলবে………..

Neela Rahman

খালি চোখে দেখে বা গল্প পড়ে আমরা যেটাকে স্বাভাবিক মনে করি সেটা স্বাভাবিক নয় ।সাদাফের ভালোবাসাটা গল্প পড়তে অনেক সুন্দর লাগছে ভালো লাগছে কিন্তু বাস্তবে এটা স্বাভাবিক নয় ।সেটাই বুঝানোর চেষ্টা করছি।

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply