Golpo romantic golpo সুখময় যন্ত্রণা তুমি

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৯+৩০


#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি

#neela_rahman

#পর্ব_২৯

পরদিন সকাল নুর পিটপিট করে চোখ খুলল ।খুলে দেখল পাশে বসে আছে নওরিন আফরোজ আর নূরের জন্য খাবার রেডি করছে সামিহা বেগম ।

খাটের ও পাশে দাঁড়িয়ে আছে ফজলুর রহমান ও হুমায়ুন রহমান ।রিমা দাঁড়িয়ে আছে পায়ের কাছে।

সাইমন রুমে নেই সাদাফ ও রুমে নেই।

সাইমনের জরুরী একটা ক্লাস আছে তাই যেতে হয়েছে আর সাদাফের ভীষণ জরুরি মিটিং আছে তাই আজ ফজলুর রহমান আর হুমায়ূন রহমান যাইনি সাদাফকে পাঠিয়েছে।

সাদাফ যেতে চাচ্ছিল না আমতা আমতা করছিল কিন্তু সাদাফ না গেলে হবে না যেহেতু সিইও হয়েছে কোম্পানির তাই সাদাফ কেই যেতে হবে ।

নূরের শরীর ভীষণ ব্যথা এবং দুর্বল লাগছে ।নওরিন আফরোজ সাহায্য করলো নুর কে একটু উঠে বসার জন্য ওষুধ খেতে হবে তাই। নীলা রহমান লেখিকা

নরিন আফরোজ সামিহার দিকে তাকিয়ে বললেন ,”তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় আর ওষুধগুলোর সাথে করে নিয়ে আয় ।একদিনে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার পুরো কাহিল হয়ে গিয়েছে ।এমন কিভাবে জ্বর বাধালি বলতো ?”

হুমায়ূন রহমান সাথে সাথে একটু কেঁশে দিলেন।

মনে মনে ভাবলেন ,”কি করে যে জ্বর বাধালো এটা যদি জানত সবাই তাহলে সাদাফ এর কি অবস্থা হবে সবার সামনে !তাই তিনি চুপ করে থাকায় শ্রেয় মনে করলেন উনি যে রাতে জানতেন নূরের এই অবস্থা কাউকে বললেন না।”

হুমায়ূন রহমানের ফোনে হঠাৎ টুংটাং শব্দ হতেই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো সাদাফ ফোন করেছে ।এই নিয়ে অফিসে যাওয়ার পর থেকে দশ বার ফোন করে ফেলেছে ।

ফোন দিয়ে একই কথা নূরের অবস্থা কেমন ! বলতে বলতে টায়ার্ড হয়ে গেছে হুমায়ুর রহমান।

ফোনটি নিয়ে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে একটু দূরে গিয়ে ফোন ধরে বলল ,”কি হয়েছে বারবার ফোন করছিস কেন?”

নীলা রহমান লেখিকা।

এপাশ থেকে সাদাফ বলে উঠলো ,”ফোন করছি কেন মানে ?জানো না কেন ফোন করেছি ?নূরের অবস্থা কি এখন ?”

হুমায়ুন রহমান বিরক্ত হয়ে বলল ,” নয় বার ফোন দিয়েছিস এই নিয়ে ১০ বার একই কথা বারবার বলছি অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো তবে দুর্বল এইমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।”

“নতুন খবর জানতে পেলাম ফোন না করলে কি জানতে পারতাম ও এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে ?ওকে ওষুধ খাইয়েছ খাবার খাইয়েছো?”জানতে চাইলো সাদাফ।

“শোন সাদাফ আমি কিন্ত ওর বাবা ঠিক আছে ?আমি ওর খেয়াল রাখব বাড়ির সবাই ওর খেয়াল রাখবে তুই একা পাগল হয়ে যাস না।”বললো হুমায়ূন রহমান।

“সাদা বলল হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি তুমি ওর বাবা সবাই আত্মীয় স্বজন কিন্তু কেউ তো আর আমি না।

যাইহোক জরুরী মিটিংয়ে আছি ভালো করে খোঁজখবর রেখো না হলে কিন্তু আমি মিটিং ছেড়ে চলে আসব বলছি।”

“বাবা মাফ কর তুই মিটিংটা একটু শান্তিতে কর আমি এই যে রুমের ভিতরে ঢুকবো আর সারাদিন রুম থেকে বের হব না ।সারাদিন নিজে ওর খেয়াল রাখবো এবার খুশি ?কি খেয়ে যে তোকে পয়দা করেছিলাম আল্লাই জানে এরকম নি*র্লজ্জ ছেলে আমি কোথাও দেখিনি ।

আমরা আমাদের বাবাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারিনি আর তুই কিনা নির্ল*জ্জের মত আমাকে বলছিস নূরের খেয়াল রাখতে না হলে তুই চলে আসব

বাবার সাথে নাকি মানুষ এই ভাবে কথা বলে।”

সাদাফ বললো ,”হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাদের সময় তো তোমরা অনেক সভ্য শান্ত ভদ্র ছিলে আমি আর রিমা তো আকাশ থেকে টুপ করে পড়েছিলাম।”

কথাটি বলেই সাথে সাথে ফোন কে*টে দিল সাদাফ ।বাবার রিয়েকশন আর দেখার প্রয়োজন মনে করলো না।

এদিকে হুমায়ূন রহমান ফোন হাতে নিয়ে টা*স্কি খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ।ছেলে এইমাত্র কি বলল ?দিন দিন ওর মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ।অবশ্য দিন দিন কেন ছোটবেলা থেকেই এরকম ঠোঁট কা*টা স্বভাবের।ছোটবেলাও এরকমই করত শুধু সবার চোখের আড়ালে ।একমাত্র হুমায়ুন রহমান জানে ছেলের আসল রূপ।

দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় একদিন শুধু মাথায় হাত রেখে বলেছিল আমি তোর বাবা না আমি তোর বন্ধু ।

মনে যে কোন কথা আছে দুনিয়ার কাউকে বলার প্রয়োজন নেই তোর ।সমস্ত কিছু তুই আমাকে বলবি তোর আসল রূপ তুই আমাকে দেখাবি ।কিন্তু অন্য কারো সাথে কখনো খারাপ কিছু করবি না।

দিনটি যেন কাল হয়ে গেছে হুমায়ূন রহমানের জীবনে ।এরপর থেকে ছেলে এহেন কোনো কথা নেই যা বাবাকে এসে শেয়ার না করে ।মাঝেমধ্যে তো ছি মার্কা নি*র্লজ্জ কথাবার্তা হয়েছে শেয়ার করত।শুনে কাশতে কাশতে ম*রার উপক্রম হতো হুমায়ূন রহমান এর।

অথচ পরিবার সমাজ সবার সামনে কতই সভ্য ভদ্র ছেলে সাদাফ ।একমাত্র হুমায়ুন রহমান জানে কি কি কথা বলতে পারে এই ছেলে।

ওর মা যদি কোনদিনও জানতে পেতো নিজের জন্ম নিয়ে কি ধরনের কথা এই মাত্র বললো তার আদরের ছেলে সাদাফ ল*জ্জায় শেষ হয়ে যেতো।

দুপুরে লাঞ্চ টাইম পার হয়ে গেছে এখনো বাসায় ফিরতে পারেনি সাদাফ।

তবে এর মধ্যে আরো তিনবার ফোন করেছিল হুমায়ূন রহমানকে জানিয়েছে নুর সেই যে খেয়েছে খেয়ে ঘুম দিয়েছে আর ওঠেনি।

এদিকে সায়মন নিজের রুমে ওয়াশরুমে গোসল করছে আর চিন্তা করছে আজকে দুইবার ফোন দিয়েছে বে*য়াদব টাকে বে*য়াদবটা ফোন একবারও রিসিভ করেনি ।করেনি তো করেনি ঘরে একটা কা*জ করে যায়নি বিছানাটা এখনও অগোছালো হয়ে আছে।

এদিকে রিমা এতক্ষণ নূরের সাথে ছিল ।নুর ঘুম থেকে উঠছে না তাই গেল নিজের রুমে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ।গিয়ে দেখল দুইবার মোবাইলে ফোন এসেছে ।শ*য়তান টার ফোন এসেছে ।ভাবল ভালোই হয়েছে ফোনের কাছে ছিলো না থাকলেও ধরতো না ।ফোনটা রেখে রিমা গেল গোসল করতে।

ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেই হঠাৎ গতকালের কথা মনে পড়ে গেল ঠোঁটে একটি আঙ্গুল দিয়ে বুলাতে বুলাতে ভাবতে লাগলো গতকালকে দৃশ্য সারা শরীর শি*হরিত হলো রিমার।

সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলল রিমা মনে মনে রাগ করলো ভীষণ সাইমনের উপরে কেন এরকম করল কখনো ভালোবাসিতো বলেনি শুনেছি গার্লফ্রেন্ডও আছে এখন অস্বীকার করলে কি নুর তো বলেই দিয়েছে গার্লফ্রেন্ড আছে বিয়ে করবে।

রা*গে শা*ওয়ার অন করে গোসল শেষ করল রিমা। করবে না আর কিছু এই অ*সভ্য লোকটার জন্য ।কোন কা*জও করে দিবে না ।কথাও বলবে না ।মনে মনে ঠিক করে ফেলল রিমা।

সাইমন রুম থেকে বের হয়ে তাড়াহুড়া করে নিচে নামবে ঠিক এমন সময় সিঁড়িতে ধা*ক্কা খেলো রিমার সাথে ।রিমা পড়ে যাবে তার আগে সায়মন হাত ধরে ফেলল। রিমা সায়মনের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো গরম করে ফেললো।

রিমা: চোখ দুটো কি টিউব লাইট হয়ে গেছে দিনের বেলাও কি চোখে দেখিস না?

সাইমন অবাক হয়ে গেল রিমার কথা শুনে।”দিন দিন এই মেয়ের অবনতি হচ্ছে কত বড় সাহস কাল তো রুমের ভিতর তুই করে বলেছে মেনে নিলাম আজকে জনসম্মুখে অর্থাৎ রুমের বাইরে তুই করে বলছে ?”

সায়মন: তুই কি দিন দিন বেয়া*দ্দব হচ্ছিস বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তুই কি জানিস না?

রিমা: তুই কিসের বা*লের বড় ভাইরে ?রুমে এসে যখন চু*ম্মাচা*টি করিস তখন তুই বড় ভাই থাকিস না ?

কথাটি বলেই রিমা সায়মনের দিকে না তাকিয়ে নিচে চলে গেল ।

সাইমন অবাক হয়ে গেল ।মনে মনে ভাবলো,”একটা চুম*মার জন্য আজকে আমি আমার সম্মান হারিয়ে ফেললাম ?তুমি থেকে তুই ডাইরেক্ট? ও সরি একটা না আসলে দুইটা খেয়েছিলাম।”

সাইমন নিজের হাত দিয়ে নিজে ঠোঁটে দুটো চা*পড় মে*রে বলল ,”আর লোক খুঁজে পাসনি এই ডা*কিনীকে তুই চু*মু খেতে গিয়েছিলি ।এই মেয়ে তোর এখন যেখানে পাবে সেখানে মান-সম্মানের টায়ার পাংচার করে দিবে।”

এদিকে সাদাফ কোনমতে মিটিংটা শেষ করে সাথে সাথে মোবাইল ফোন পকেটে ঢুকিয়ে অফিস থেকে বের হবে ।সাথে সাথে একবার মনে হল অনেকক্ষন হলো নুর কে দেখে না। নুরের ছবিটা একটু দেখার জন্য সাথে সাথে ড্রয়ার থেকে নূরের ছবিটা বের করে একটু দেখলো ।দেখে বুকের সাথে চে*পে ধরে রাতের কথা মনে করতে লাগলো ।

কিভাবে নূর ওকে জড়িয়ে ধরে ভালবাসার কথা বলছিল ওকে চু*মুতে চু*মুতে ভরিয়ে দিচ্ছিল ।ভালবাসার পরশ দিচ্ছিল নূর যদি সজ্ঞানে থাকত তাহলে কি কখনো এরকম করত বোকা মেয়েটা?

মনে মনে ঠিক করল সাদাফ এখন আর নূরের মুখ থেকে জোর করে শোনার জন্য চেষ্টা করবে না যা জানার ছিল তা জেনে গিয়েছে ।

এখন শুধু বিয়ে করার জন্য অপেক্ষা তবে এই বিয়ে প্রস্তাব নুর নিজে দিবে তার প্রিয় বাপ ও চাচাকে মনে মনে ঠিক করল সাদাফ ।এবং মুচকি মুচকি হাসলো বলল ,”তুই নিজে যেয়ে বিয়ের কথা বলবি যে সাদাফ ভাইকে তুই চাস।

আমার বোকা নুর তোকে আমি ভীষণ ভালোবাসি, একবার শুধু তুই বল তুই আমাকে ভালোবাসিস সবার সামনে তোর জন্য আমি পৃথিবীর সব কিছু করতে পারবো।

আমি যদি গিয়ে বলি তোর বাবা চাচাকে আমি তোকে ভালবাসি বিয়ে করতে চাই বলবে আমার মেয়ে ছোট্ট আমার মেয়ে কিছুই বুঝে না ।আমি তোর মাথা খেয়েছি।অথচ মাথা খেয়েছিস তুই আমার।তাই ছোট্ট মেয়ের মুখ ফুটে বলতে হবে সে সাদাফকে স্বামী হিসেবে চায়।

বাকি সব কিছু দেখার দায়িত্ব আমার।

চলবে…………..

Neela Rahman

কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ

বেশি বেশি করে লাইক শেয়ার কমেন্ট করবেন ।কমেন্ট ব্লক হওয়ার কারণে আমি অনেক সময় রিপ্লাই কমেন্ট দিতে পারছি না কয়েকটা কমেন্ট করলেই সেটা ব্লক হয়ে যায় ।

তাই আপনারা কিন্তু থেমে থাকবেন না আপনারা অবশ্যই বেশি বেশি করে লাইক শেয়ার কমেন্ট করবেন।

#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি

#neela_rahman

#পর্ব_৩০

সাদা ফের বাসায় পৌছাতে পৌঁছাতে তিনটা পার হয়ে গেল এদিকে নূর অভিমান করে বসে আছে ।বাড়ি শুদ্ধ লোক এসে বারবার ওকে দেখে যাচ্ছো ওর কথা জিজ্ঞেস করছে অথচ পাষাণ লোকটা একবার ওর কথা জিজ্ঞেস করল না ।ফোনও করল না ।নুর আর কথা বলবে না আর সামনে যাবে না সাদাফের ।মনে মনে ঠিক করে ফেলল নুর।

উনার জন্যই তো এই জ্বরটা এলো অথচ একবারও ফোন করে খোঁজখবর নিল না ।নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের সাথে শতবার ফোন করে কথা বলে ফেলেছে কিন্তু নূরের কি ?

নূরের কোন চিন্তা নেই।নূরকে তো জিজ্ঞাসা করবে না নুর কেমন আছে নুরকে তো আর ভালোবাসে না।

ঠোঁট ফুলিয়ে কথা গুলো ভাবছে নুর।

রিমা বলল ,”কিরে কি এত চিন্তা ভাবনা করছিস? কোন দিকে তাকিয়ে আছিস ?”

নুর সাথে সাথে তাকালো রিমার দিকে ।বলল ,”কই না তো কিছু ভাবছি না।”

“খাবি কিছু?ক্ষুধা লেগেছে ?”জানতে চাইলো রিমা।

নুর কিছু বলবে ঠিক এমন সময় হম্বিতম্বি করে রুমে ঢুকলো সাদাফ। দেখে বোঝা যাচ্ছে বড্ড ক্লান্ত শার্ট ঘামে ভিজে আছে ইন খুলে ঢিলা ঢালা হয়ে আছে শার্টের উপরের দিকে দুইটা বোতাম খোলা টাইটা ঢিলে ঢালা হয়ে গলায় ঝুলে আছে। নীলা রহমান লেখিকা

রিমা সাথে সাথে তাকিয়ে বলল ,”কিরে ভাইয়া যুদ্ধ করে এসেছিস নাকি এই অবস্থা কেন তোর ?

গাড়িতে এসি অফিসে এসি বাসায় এসি তারপরে কি অবস্থা?”

রিমাকে দেখেই পায়ের গতি স্লো করল সাদাফ।তারপর শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বলল ,”বাইরে যা। যেয়ে আমার জন্য লেবু দিয়ে সুন্দর করে একটা ড্রি*ঙ্কস বানিয়ে নিয়ে আয়।

সময় নিয়ে যত্ন করে বানাবি ঠিক আছে যা ?”

রিমা তাকালো সাদাফের দিকে ।বুঝল সময় নিয়ে যত্ন করে বানাবো তার মানে কি ভাইয়া এখানে কিছুক্ষণ বসতে চাইছে ?এমনি ও দুদিন ধরে খুব সন্দেহ হচ্ছিল রিমার যেদিন নূরকে ওই রুম থেকে বের হতে দেখেছিল।

আচ্ছা ভাইয়া কি নুর কে পছন্দ করে? নুরের সাথে কি ভাইয়ার কিছু চলছে?? কিন্তু নুর যে হেবলি ভাইয়া সামলাবে কি করে নুর কে?ভাবতে লাগলো রিমা।

রিমা উঠে সাদাফের পাশ দিয়ে যাবে ঠিক তখনই একটু আস্তে আস্তে বলল ,”ভাইয়া কত সময় লাগিয়ে বানাবো ড্রিংসটা?”

“যত সময় নিয়ে বানালে অনেক বেশি মজা হবে ঠিক তত সময় নিয়ে বানাবি যা।”রিমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি মুখে বলল সাদাফ।

রিমা মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।যাওয়ার সময় দরজা বাইরে থেকে চাপিয়ে দিয়ে যেতে ভুললো না ।ভিতরে ভাই আছে শত হলেও বড় ভাই ।হঠাৎ করে যে কেউ ঢুকে যেতে পারে তাই দরজাটা সুন্দর করে চাপিয়ে দিয়ে গেল।

যেতে যেতে মনে মনে ভাবল ,”ছোট্ট নূরের দিকে কিভাবে দৃষ্টি পড়ল ভাইয়ের ?এত ছোট্ট একটা মেয়ে তবে দেখতে বেশ পুতুল পুতুল ।ছোটবেলা থেকেই তো ভাই সারাদিন নিজের কোলে করে রাখত ছোটবেলা থেকে কি বুকিং দিয়ে রেখেছিল ভাইয়া ?

তবে জম্পেশ হবে নুরের সাথে বিয়ে হলে ভাইয়ার।বা*সর রাতে সারা বাড়ি দৌড়ে দৌড়ে খুজবে বউ বউ কই।বউ দেখবে ২ বাবার কাছে।”মনে মনে হাসলো কথাটি চিন্তা করে।

সাদাফ কে দেখে প্রথমে অভিমান গলে গেলেও এখন অভিমান আরো ভারী হয়ে গেল নূরের ।তাকিয়ে রইল অন্য দিকে ।তাকাবে না সাদাফের দিকে কিন্তু সাদাফ ঠিকই খেয়াল করছে নুর কে।অলরেডি নূরের ঠোঁট ফুলে গিয়েছে যেন আরেকটু হলেই ভারী বর্ষণ হবে।

সাদাফ নুরের বিছানার কাছে এসে একটু বসলো ।নুর সাথে সাথে চেপে আর একটু দূরে সরে গেল ।সাদাফ বলল ,”কিরে শরীরের কি অবস্থা এখন?তাকা আমার দিকে।তাকা বলছি।

একটু ভিজিয়েছি বলে জ্বর এসে একাকার ।আমাকে খুব ভোগাবি বুঝতে পারছি ।এতোটুকু ভিজে এই অবস্থা আর যখন বারবার ভিজাবো তখন?

অভিমানী নুর বুঝতে পারল না কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ ।সাথে সাথে বলল ,”বারবার কেন ভেজাবেন? একবার ভিজিয়ে স্বাদ মেটেনি?”

সাদাফ মোটা মাথার বুদ্ধি ওয়ালা নুরের কথা শুনে মনে মনে হাসলো ।সাদাফের একটি কথাও ঠিকঠাক অর্থ বুঝতে পারে না নুর ।

মনে মনে ভাবল বারবার কেন ভেজাবো সেটা যদি বুঝতে পারতি তাহলে এখন ব*লদির মতো প্রশ্নটা করতি না ল*জ্জায় লাল নীল হয়ে যেতি।

ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরেকটু কাছে এসে নূরের কাছে বলল ,”কারণ আমার বারবার চাই ।একবারে সাধ মিটবে না আমার।”

নুর জিজ্ঞেস করল ,”কি চাই ?”

সাদাফ হাসলো ।হেসে বলল ,”তোর জ্বর।”

“তবে চিন্তা নেই।এক বস্তা ঔষধ এনে রাখবো।তুই জ্বর বাধাবি আমি ঔষধ খাওয়াবো। তবুও এই জ্বর থেকে রেহাই নেই তোর।”বললো সাদাফ।

সাদাফ একটু কাছে এসে নূরের কপালে হাত রাখল ।নূর সরে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সাদাফ বা হাত দিয়ে নূরের মাথার পিছনে জোরে ধরে আরেক হাত দিয়ে কপাল চেক করল। তারপর নিজের কপালে হাত রাখল বুঝতে পারছে না সাদাফ।তারপর করে ফেললো এক অদ্ভুত কা*জ ।নূরের কপালের সাথে সাদাফ নিজের কপাল মিশিয়ে দিল।”

তারপর টের পেল ন নূরের কপালের তাপমাত্রা এখন স্বাভাবিক লাগছে কারণ নিজের তাপমাত্রার সাথে নূরে তাপমাত্রা এক রকমই মনে হচ্ছে।

এদিকে নুর ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে ।হঠাৎ সাদাফের এতো কাছে চলে আসায় যা হয় নূরের সব সময় এখনো ঠিক তার বিপরীত নয় ।এখনো নূর এর হৃদয় স্পন্দন যেন থেমে যাচ্ছে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা ।সাদাফ বুঝতে পেরে একটু সরে আসলো।

তারপর বলল ,”দুপুরে লাঞ্চ করেছিস ?ঠিকঠাক মতো খেয়েছিস?আর আমি একটু কাছে গেলেই কাঁপাকাঁপি করিস কেনো?নিজে যে কতো কিছু করলি?”

নুর বললো,” কি করেছি?আর এতো কাছে আসলে ভ*য় লাগবে না?”

“অভ্যাস করে নে। হুটহাট কাছে এলে কাপাকাপি যেনো না হয়।আমার যখন ইচ্ছা হবে কাছে আসবো।আর আমি এখনো লাঞ্চ করে নি।খাবো।আমার সাথে এখন একসাথে বসে খাবি।” বললো সাদাফ।

নূর যেনো একটু লজ্জাই পেলো।বলল ,”আমি খেয়েছি তো ।”

সাদাফ ভালো করে জানে নুর খেয়েছে সেই খবর নেওয়া হয়ে গেছে তারপরও সাদাফ বলল কি খেয়েছিস না খেয়েছিস সেটা তো আমি চোখে দেখিনি ।এখন আমার চোখের সামনে বসে থেকে খাবি আমি যা যা খাবো তুই তাই তাই খাবি ।এই রুমেই বসে খাব আমি খাবার আনতে বলছি।

নুর বলল ,”আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না পেটভরা আর মুখে একটুও রুচি নেই।”

“আমার সাথে খেলে রুচি বাড়বে তারপরও যদি না বারে চা*পরে মুখে রুচি বাড়িয়ে দেব।

অথবা তুই চাইলে অন্য কোন উপায়ে রুচি বাড়ানোর ব্যবস্থা করব।”বললো সাদাফ।

নূর ভয়ে আর কিছু বলতে পারল না এমন সময় শরবত নিয়ে হাজির রিমা রুমে ঢুকতে ঢুকতে হালকা একটু এসে তারপরে রুমে দরজা খুলে ঢুকলো। নীলা রহমান

কার সাথে সাথেই শরবত রাখল রেখে যেই না কিছু বলবে তার আগেই সাদাফ আবার অর্ডার করলো যা উপরে খাবার নিয়ে আমি আর নূর খাব রিমা মনে মনে ভাবল আবার খাবার আনতে যাব এবার ওকে সময় নিয়ে খাবার নিয়ে আসবো আনতে আমতা করে জিজ্ঞেস করল ভাইয়া কত সময় লাগে খাবার আনব।

সাদাব বলল পেটের ভিতরে ক্ষুধায় ইঁ*দুরগুলো কিলবিল করছে ঠিক দৌড়ে যাবি আর দৌড়ে আসবি ৫ মিনিটের মধ্যে খাবার নিয়ে আসবি।

ওকে বলে রিমা আবার রুম থেকে বের হয়ে গেল বের হয়ে যেতে যেতে মনে মনে ভাবলো বাহ প্রেম করবে বড় ভাই আর ছোট বোন খাবার শরবত নিয়ে বারবার রুমে হানা দিবে।

আর ছোট বলে কোন মূল্য পেলাম না।

রান্নাঘরে টুকটাক কাজের আওয়াজ পেতেই সামিহা বেগম রান্নাঘরে আসলেন বললেন কিরে এই অসময় তুই খাবার বাড়ছিস কার জন্য?

রিমা আমতা আমতা করে বলল ,”ওই না আসলে ভাইয়া এসেছে তো ভাইয়ার জন্য ।”

সামিহা বেগম বললো,”ও তাহলে দুই প্লেট কেন ?”

রিমা মাথা চুলকে বললো ,”আসলে ভাইয়া নুরের রুমে বসে খাবে নুরকেও খাওয়াবে তাই ।”

সামিহা বেগম শুনে খুব খুশি হয়ে গেলেন ।নুর দুপুরে শুধু একটু স্যুপ খেয়ে ছিলোআর কিছু খাইনি ।খাওয়াতেও পারেনি।

সামিহা বেগম বলল ,”তাহলে তুই সর পারবি না ।আমি দিয়ে আসছি।”

রিমার সাথে সাথে বলে উঠল না না ছোট আম্মু আমি নিয়ে যেতে পারবো ।ভাইয়া যদি দেখে তোমাকে আমি এই সময় কা*জ করিয়েছি ভাববে আমি তোমাকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে কা*জ করিয়েছি ।প্লিজ আমি নিয়ে যাই।

তুমি এক কা*জ করো বলে দাও আমি নিয়ে যাই সামিহা বেগম বললো,”আচ্ছা ঠিক আছে ।”

বলেই খাবার বাড়তে লাগলো।

রিমা মনে মনে ভাবলো যাক বাবা এবার বেঁচেছি না জানি ছোট আম্মু গিয়ে রুমে কিনা কি অবস্থায় পেতো মান-সম্মান একেবারে শেষ হয়ে যেত ভাইয়ার।

এদিকে হুমায়ূন রহমান বারবার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখছে এখনো পর্যন্ত সাদাফ ফোন দিল না কেন ?কি সমস্যা ?

উনি এখনো জানেনা সাদাফ এখন রুমে মানে নুরের রুমে অবস্থান করছে ।তাই নিজে রুম থেকে বের হয়ে একটু এদিক ওদিক দেখার চেষ্টা করল হঠাৎ দেখল রিমা খাবার নিয়ে নুরের রুমের দিকে যাচ্ছে।

এগিয়ে এসে বলল ,”কিরে মা খাবার নিয়ে নুরে রুমে যাচ্ছিস যে ?নূর তো খেয়ে ছিল ।”

“ওই না বাবা ভাইয়া নুরের রুমে তো ভাইয়া খাবার খাবে সাথে নুর কেউ খাওয়াবে।তাই আমাকে বলছে দুজনের খাবার নিয়ে আসতে।” বললো রিমা।

সাথে সাথে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে গেল হুমায়ূনর রহমানের ।ছেলেটা পেয়েছে কি? দিনে দুপুরে দরজা লাগিয়ে বসে আছে নূরের রুমের।এই ছেলে নিশ্চিত আজকে সারাদিন রাত নুরের রুম থেকে বেরোবে না।

তারপর মনে মনে এই ভেবে আবার খুশি হল ছেলেটা নূরকে অনেক ভালবাসে ।কতটুকু ভালবাসলে এভাবে বাবার কাছে নি*র্লজ্জের মত নূরের হাত চেয়েছিল সাদাফ।

তারপর রিমার মাথায় হাত রেখে বলল ,”ঠিক আছে যা খাবার নিয়ে ভিতরে যা ।সারাদিন মনে হয় খাইনি কিছু ছেলেটা ।সাথে নুরু একটু খেতে পারবে আমাদের কথা তো শুনে না সাদাফের কথা শুনবে।”

চলবে……..

Neela Rahman

কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply