#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
#neela_rahman
#পর্ব_২৩
নুর রুমে গিয়ে শুধু পাইচারি করছে আর রাগে ফুসফুস করছে ।এমন সময় নিচ থেকে ডাক দিল নওরিন আফরোজ ।বলল ,”নূর দেরি হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি স্কুলের জন্য রেডি হয়ে যা ।সাদাফ কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করবে না।”
নূর বলে বসলো ,”চলে যেতে বল তোমার ছেলেকে ।আমি আজকে স্কুলে যাব না ।আমার ভালো লাগছে না ।”
নওরিন আফরোজ অবাক হয়ে গেলেন ।নুর তো কখনো এইভাবে কথা বলে না ।”তোমার ছেলে তোমার ছেলে ” বলেনা।সবসময় সাদাফ ভাইয়া বলে ।
সাদাফ অবশ্য নওরিন আফরোজ এর পাশে ছিল ।শুনলো কথাগুলো ।তারপর বলল ,”ঠিক আছে মা তুমি যাও আমি দেখছি ওর কি হয়েছে।”
নওরিন আফরোজ সাদাফের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ ।তারপর বলল ,”ঠিক আছে দেখ কি হয়েছে ।মেয়েটা তো কখনো এরকম করে না।
আমি ওর টিফিন রেডি করছি ।যাতে দেরি না হয় গাড়িতে খেয়ে নিবে।”
নওরিন আফরোজ চলে যেতেই সাদাফ নূরের দরজার নক করল ।
নূর ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে ।নূর বলল ,”বড় মা আমি আজকে স্কুল যাব না বলে দাও তোমার ছেলেকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।”
সাদাফ বলল ,”সাহস থাকে দরজা খুলে বড় মার ছেলেকে নিজে বল ।দেখি তোর সাহস কতটুকু ?থা*পরে দাঁত ফেলে দিব বেয়াদব ।স্কুলে যাবে না ! এক্ষুনি বের হ রেডি হয়ে।”
নুর রাগে গজ গজ করতে করতে দরজা খুলে দিল ।যেন দেখিয়ে দিতে চাইলো সাহস কতটুকু আছে ।সাদাফ দেখলো রাগে নূর এর গাল দুটো লাল টমেটোর মত হয়ে গেছে ভিতরে ভিতরে খুব হাসি পাচ্ছে সাদাফের ।কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করল না ।কাঠিন্যতা বজায় রেখে বলল ৫ মিনিট সময় দিলাম তাড়াতাড়ি রেডি হ আমি এখানে বসলাম।”
নুর বলল ,”আপনি এখানে থাকলে আমি রেডি হবো কিভাবে ?”
সাদাফ বললো,” সেটা তো আমার হেডেক না তোর মাথা ব্যথা ।সময় দিয়েছিলাম আগে তুই রেডি হোসনি এখন আমি এখানে বসলাম তুই ওয়াশরুমে যা গিয়ে রেডি হয়ে আয়।
আর এমন কিছু নাই তোর যা আমি ছোটবেলা থেকে দেখিনি জন্ম থেকে দেখতেছি।”
সাদাফের গা ছাড়া নি*র্লজ্জ ছিঃ মার্কা কথা শুনে নূরের চোখ দুটো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল ।ভিতরে ভিতরে বলল ,”ঠিক কেন যে দরজা খুলতে গেল একবার রেডি হয়ে দরজা খুলে দিলেই ভালো হতো ।জিদ করে বড় বড় পা ফেলে আলমারি থেকে স্কুলের ইউনিফর্ম বের করে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল নুর।
ওয়াশরুমের দরজা এমন জোরে লাগালো যেন সাদাফের কানে খিল লেগে গেল।
সাথে সাথে সাদাফ আঙুল দিয়ে কান আটকালো এমন জোরে লাগিয়েছে বুঝতে পারছে নূরের মনের অবস্থা ।সাদাফকে যেন না পারছে কাঁচা চি*বিয়ে গি*লে ফেলতে চাচ্ছে মেয়েটা।
সামিহা বেগম সবজি টিফিন বক্সে ঢুকাচ্ছে ও রুটি ঢুকাচ্ছে ।নওরিন আফরোজ এসে কফি মগে ঢালতে ঢালতে বলল ,”নুর আজকে এমন করল কেন রে ?ওকে তো কখনো এরকম করতে দেখি না ।সব সময় চুপচাপ শান্তশিষ্ট থাকে মেয়েটি যে যাই বলুক কোন কথার উত্তর দেয় না আজ কেমন করে উঠেছে দেখেছিস।”
সামিহা বেগম বলল ,”হ্যাঁ ভাবি দেখেছি বড় হচ্ছে হয়তো কোনো কারণে মেজাজ গরম তাই এমন করতে পারে ।আমাকে তো আর কিছু বলে না ।বাবাদের আদরের মেয়ে বাবারাই জানে কি অবস্থা।”
নওরিন আফরোজ এর মাথায় চলছে অন্য কিছু ।নূরের একটি কথা ভীষণ ভাবাচ্ছে নওরিন আফরোজকে ।তোমার ছেলে তোমার ছেলে যেভাবে রাগের বশে হলেও অধিকার নিয়ে বলেছে নুর কেমন যেন কানে ঠেকলো ওনার কাছে ।
নরমালি মেয়েরা তার উপরে এভাবে অভিমান করে যার উপরে কোন অধিকার থাকে।
কিন্তু ও যে সাদাফের অনেক ছোট সাদাফ ওকে কোলে নিয়ে ঘুরেছে ।মানুষ করেছে তাই এই বিষয়টা ভাবতেই পারেনা নওরিন আফরোজ ।কিন্তু নূর যে নওরিন আফরোজ এর অনেক প্রিয় অনেক আদরের যদি কখনো এরকম হতো সাদাফের সঙ্গে …….তারপর আবার দাঁত দিয়ে জিভ কে*টে মনে মনে ভাবল ছিঃ ছেলের স্বার্থের জন্য কি ভাবছে !
যেখানে সাদাফ এখন বিয়ে করতে চাইছে সেখানে নূরের তো এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।
তাই এই চিন্তা ভাবনা করাও যে একদম অবান্তর। তাই সামিহা বেগমকে বললেন ,”তাড়াতাড়ি টিফিন বক্স তৈরি কর ওরা নামলো বলে ।আজকে এমনি দেরি হয়ে গিয়েছে।”
নূর ওয়াশ রুম থেকে স্কুলে ইউনিফর্ম পড়ে বের হলো। এখনো হিজাব বাধিনি ।হিজাব বাধতে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে তাই হনহনিয়ে হেঁটে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো নূর।
সাদাফ দেখতে লাগল নূরের পা*গলামি ।নুরের বেল্ট পিছনে এখনো খোলা হুক লাগানো হয়নি।
সাদাফ হেটে এসে নূরের পেছনে দাঁড়িয়ে সামনে হাত নিয়ে বেলটি সুন্দর করে লাগিয়ে দিল ।নুর কেপে উঠল।তারপর ধীরে ধীরে ক্রস বেল ঠিক করে দিবে ঠিক এমন সময় নূর সরে গেল ।বলল ,”কি করছেন?”
সাদাফ অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল ,”কি করছি ?”
নুর আমতা আমতা করে বুকে হিজাবটা রেখে বলল ,”কি করছিলেন কোথায় হাত দিচ্ছেন আপনি ?”
সাদাফ বললো,” কোথায় হাত দিচ্ছি ?”
নুর রাগের বসে বলে ফেললো,”কাল ও আপনি আমাকে এভাবে স্পর্শ……..আর কিছু বলে শেষ করতে পারলো না নুর।সাদাফ আর একটু কাছে এসে কানের কাছে ঝুঁকে বললো ,”কাল কি আমি? কোথায় স্পর্শ করেছি? আর তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস তুই ভুল সময় আমার রুমে ঢুকে ছিলি ।তাই সম্পূর্ণ দোষ আমার একার না দোষটা তোর তুই আগে আমাকে স্পর্শ করছিলি।
এভাবে রাতে নির্জনে কি কোন পুরুষকে ছুঁয়ে দিতে আছে নুর?”
নুর কাঁপতে লাগল সাদাফ হঠাৎ করে আবার এত কাছে চলে আসায় ।যখনই সাদাফ নুরের এইভাবে কাছে আসে নূর কেন যেন মোমের মত গ‘‘লে যায় ।মনে হয় শরীরের প্রত্যেকটি অ*ঙ্গ-প্র*ত্যঙ্গ গ*লে গ*লে এভাবে মাটির সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে ।নূর মাথানু নুইয়ে ফেলল।
সাদাফ কানে কানে ফিসফিস করে বলল ,”এমন কিছু করে নি আমি যা আমার অধিকার নেই এমন কোথাও স্পর্শ করিনি আমি যা আমার জন্য নির্ধারিত না।”
নূরের এবার রাগ হলো ভীষণ রাগ হল ।চোখ তুলে বলল ,”আপনি না সামনে বিয়ে করছেন তাহলে কেন এসেছেন এখানে?”
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”তোকেও তো বলেছি তুই কেন চাচ্ছিস না আমার বিয়ে হোক ?একটা কারণ দেখা আমি বিয়ে করবো না।”
নুর রাগে ফুঁসতে লাগলো ।মনে মনে খুব ঝাড়তে লাগলো সাদাফ কে। বারবার মনে মনে বলতে লাগলো ,”কেন আপনি আমার মনে কথা বুঝে নিচ্ছেন না ,কেন সবকিছু আমাকে মুখ ফুটে বলতে হবে ?আপনিও তো কখনো মুখ ফুটে আমাকে কিছু বলেন না কিন্তু ঠিকই আমার কাছে আসেন আমাকে স্পর্শ করেন ।আমাকে এইভাবে পা*গল পা*গল করে দেন ।কিন্তু নিজে মুখ ফুটে কিছু বলেন না।”
নুরের ভাবনার মাঝেই সাদাফ নুরকে আবার নিজের কাছে এনে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বুকের দিকে ক্রস বেল্ট ঠিক করে দিল ।তারপর ধীরে ধীরে বলল ,”যা আমার তা শুধু দেখার অধিকার আমার ।নিজেকে সাবধানে রাখবি যত্নে রাখবি ঢেকে রাখবি ।অন্য কারো চোখ যেন তোর উপরে না পড়ে।”
বলেই একটু দূরে সরে বলল ,”আমি নিচে গাড়ি বের করছি তাড়াতাড়ি নিচে আয় ।আমার যেনো আর উপরে আসতে না হয়।”
সাদাফ বেরিয়ে যেতেই নূর বড় একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।”এইমাত্র কি বলে গেল লোকটা ?উনার জিনিস মানে ?আর ঢেকে রাখবো মানে ?আমি কি বাজে ভাবে চলাফেরা করি ?উনি এসব কথা বলতে কি বুঝাতে চাইলেন ?আর শুধু উনি দেখবেন মানে ?”হাজারো প্রশ্ন নূরের মাথার ভিতরে ঘুরপাক খেতে থাকল।
এদিকে সায়মন প্রেজেন্টেশনের জন্য রেডি হয়ে নিচে নামছে ।নিচে নেমে কোথাও রিমাকে দেখতে পেল না ।নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বলল ,”বড় আম্মু রিমা কোথায়?”
নওরিন আফরোজ বলল ,”তুই যখন উপরে গেলি তখনই তো বের হয়ে গেল ।বলল নাকি খুব তাড়া আছে ।তাই চলে গেল আজকে তোর সাথে যেতে পারবেনা ।”
সাইমনের মেজাজ গর*ম হলো কিন্তু বড় আম্মুর সামনে তার প্রকাশ করতে পারল না ।চুপচাপ বলল ,”ঠিক আছে আমি আসছি প্রেজেন্টেশন আছে আজকে আসতে একটু লেট হবে আমার।”
রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে সায়মন বললো ,”মা আমি আসছি ।প্রেজেন্টেশন আছে দেরি হবে আমার ।বারবার ফোন দিও না ক্লাসে থাকা অবস্থায়।”
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বের হয়ে গেল সাইমন ।মনে মনে ভাবল ,”আজকে খালি বাসায় আসুক বেশি উড়ছে পাখা দুটো কা*টতে হবে দেখাবো মজা আজকে।”
চলবে………
Neela Rahman
কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ
এই পর্বে ৬ হাজার রিঅ্যাক্ট না হলে আগামীকাল গল্প দিবোনা।কথা ফাইনাল।
আগেই বলে রাখি আগামী পর্ব একটু রোমান্টিক লিখতে চেয়েছিলাম এখন পড়তে চাইলে অবশ্যই রিয়েক্ট দিবেন কমেন্ট করবেন।![]()
![]()
![]()
![]()
#সুখময়_যন্ত্রনা_তুমি
#neela_rahman
#পর্ব_২৪
নূর যাওয়ার সময় নওরিন আফরোজের হাত থেকে টিফিন বক্সটা নিলো ।নওরিন আফরোজ দেখলো রা*গে নূরের মুখ চোখ কেমন লাল হয়ে আছে ।স্কুলে যাওয়ার সময় দেরি করাতে চাইলো না তাই কিছু জিজ্ঞেস করল না ।বলল ,”যা গাড়িতে অপেক্ষা করছে সাদাফ।”
নুর টিফিন বক্সটা বড় আম্মুর হাত থেকে নিয়ে হনহনিয়ে দরজা দিয়ে হেঁটে বাইরে চলে গেল ।নওরিন আফরোজ নূরের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল। লীলা রহমান
বড় হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা ।একদিন বিয়ে দিয়ে পরে বাড়িতে পাঠাতে হবে কিন্তু কেন যেন মেয়েগুলোকে আর বিয়ে দিয়ে পরে বাড়িতে পাঠাতে ইচ্ছা করে না ।
নিজেরাও তো এসেছিল অন্যের বাড়ি থেকে এসে তো এই এইবাড়ীর হয়ে গেছে ।একসময় তার মেয়েরাও চলে যাবে কিন্তু মন যে মানতে চায় না ।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার রান্না ঘরের দিকে গেল নওরিন আফরোজ।
গিয়েই চোখ পড়লো সামিহা বেগমের দিকে ।সামিহা বেগম সবজি কা*টছিলেন ।নওরিন আফরোজ পাশে গিয়ে বললেন ,”রিমা আর নুর দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে একদিন বিয়ে দিবে ওরা শ্বশুর বাড়িতে চলে যাবে ।ভাবতে কেমন লাগে তাই নারে ?মেয়ে দুটোকে তো আমার বাইরে দিতে ইচ্ছা করে না।”
“হ্যাঁ ভাবি তুমি ভাবছো বাইরে যেতে ইচ্ছা করে না আমি তো ভাবছি নুর দিনকে দিন যেমন হচ্ছে বেয়ারা শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে না জানি কি হয় কথা শুনতে হবে ।মেয়েকে কিছুই শিখায়নি বলবে। অথচ বাপ চাচার জন্য কিছুই শিখাতে পারি না কিছু বলতে গেলেই দোষ হয়ে যায়।
সব শ্বশুরবাড়ি তো আর আমাদের মত হবে না তাই না বল ?হাতে ধরে শিখিয়ে দিবে ভুল হলে মাফ করে দিবে ।সব সময় তো আর এমন হয় না ।খুব চিন্তা হয় জানো ?
ও যেরকম কথায় কথায় রাগ করে ছ্যান ছ্যান করে খেতে চায় না শ্বশুর বাড়িতে গিয়েও তো না খেয়ে বসে থাকবে ।কেউ কি আমাদের মত জোর করে খাওয়াবে ওকে?
রিমাটা তাও অনেক ম্যাচিউর নিজের কা*জগুলো নিজে করতে পারে সাইমনের কা*জগুলো দেখনা সব সুন্দর করে গুছিয়ে করে দেয় আমার তো কোন টেনশনই করতে হয় না।
এই যে সাইমনের কাপড়চোপড় এইটা সেটা সবকিছু তো গুছিয়ে রাখে রিমা। মেয়েটা খুব সংসারী মেয়ে ।খুব ভালো লাগে আমার এই রিমা কে দেখলে ওকে নিয়ে এট লিস্ট আর যাই হোক শ্বশুরবাড়ি থেকে কথা শুনতে হবে না ।
টেনশন তো হচ্ছে আমারে বু*দ্ধু মেয়েটাকে নিয়ে ।কথায় কথায় শুধু গাল ফুলিয়ে বসে থাকে না খেয়ে বসে থাকে।”
নওরিন আফরোজ সামিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আচ্ছা এমনও তো হতে পারে ওকে বাসায় রেখে দেওয়া যায়।”
সামিহা বেগম অবাক হয়ে গেলেন ।বললেন ,”কি করে বাসায় রাখবো ?মেয়ে হয়ে জন্মেছে বিয়ে তো দিতেই হবে। এমন একটা জামাই যদি পেতাম হয় আমার মেয়ের জন্য মেয়ের মত হয়ে যেত আর না হলে আমার মেয়ে জামাইয়ের ভয়ে জামাইয়ের মত হয়ে যেত।”
হলেই হেসে ফেললেন সামিহা বেগম।
নওরিন আফরোজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।মনের কথা মনে রাখল মুখ ফুটে আর কিছু বলল না ।আগে নিজে ভাববে।তারপর কথা বলবে।সাদাফ তো বললো কাকে যেনো বিয়ে করতে চায়।ছেলের পছন্দ তো দেখতে হবে।
নওরিন আফরোজ নিজেদের কা*জে মনোযোগী হল ।এদিকে সাদাফ গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে নূরের জন্য ।নূর এসে হনহনিয়ে গাড়ির পিছনের সিটের দরজা খুলে বসে পড়ল।
সাদাফ অবাক হয়ে গেল নূরের কান্ড দেখে ।সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে বলল ,”কি হলো এটা ?তুই পিছনে বসলি কেন ?আমাকে কি তোর ড্রাইভার মনে হয় ?চুপচাপ সামনে আয় বলছি।”
নুর বলল ,”না আমি সামনে বসবো না ।আপনি তো কয়দিন পর বিয়ে করবেন সামনে আপনার বউকে বসান ।অন্যের জায়গা নেওয়ার আমার কোন ইচ্ছা নেই।”
সাদাফ সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ।আঙ্গুল দিয়ে কপাল একটু চুল*কাতে চুল*কাতে বলল ,”সেটা না হয় যখন হবে তখন দেখা যাবে এখন তুই সামনে আয়।কোম্পানি দে ।তাড়াতাড়ি আয় বলছি আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে অফিসে যেতে হবে।”
নুর বলল ,”আমি যাব না সামনে ।আমি পিছনে বসবো ।”
সাদাফ বললো,”তুই ভালোমতো সামনে আসবি নাকি আমার পিছনে আসতে হবে?”
নুর বলল ,”বলেছে তো একবার আমি সামনে যাবো না ।আমি পেছনেই বসব ।”
সাদাফ চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে সাথে সাথে পিছনে দরজা খুলে যেই মাথা ঢুকিয়ে দিল নুর ভয়ে সিটের মধ্যেই আধশোয়া হয়ে পড়ে গেল।
সাদাফ নুরের উপরে ভর না দিয়েই দুহাত দুপাশে দিয়ে নূরের উপরে ঝুঁকে বলল ,”তুই কি এখন উঠে চুপচাপ সামনে যাবি নাকি আমার আরো কিছু করতে হবে?”
“আর কিছু মানে?”ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলো নুর।
“বুঝতে পারছিস না কি?” ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো সাদাফ।
বলেই নুরের গালে হাত রাখলো।আঙুল দিয়ে গালে স্লাইড করত করতে বললো,” তোকে দেখলেই আমার এমন লাগে কেনো নুর?”
নুর বললো,” ক..কেমন লা.. লাগে?”
“এইযে তোকে বুকে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ঠোঁট দুটো ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।তোকে এলোমেলো করে দিতে ইচ্ছে করছে। তোকে একটু গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে নূর।”বলেই নুরের ঠোটের দিকে হালকা ঝুঁকতেই নুর চোখ বন্ধ করে ফেললো।
সাদাফ মুচকি মুচকি হাসছে নুরের ভয় পাওয়া দেখে।
নূর ভয় পেয়ে গেল নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসলো ।নিজের চোখের সামনে এত সামনে সাদাব কে দেখে বারবার নিজের উপরে খেই হারিয়ে ফেলে নুর ।তারপর আমতা আমতা করে বলল ,”কিছু করতে হবে না আমি সামনে যাচ্ছি।আমার উপর থেকে সরুন।আমার কেমন যেনো লাগছে।”
“কেমন লাগছে?”জানতে চাইলো সাদাফ।
নুর চুপচাপ শুয়ে রইলো।সাদাফ ধীরে ধীরে নুরের উপর থেকে উঠে দরজা ঠিকমতো খুলে দিল বলল সামনে আয়।
নুর চুপচাপ উঠে বসলো।
অফিসে বসে আছেন হুমায়ূন রহমান কিছু একটা ভাবছেন ফজলুর রহমান একটি ফাইল দেখছিল। হঠাৎ হুমায়ূন রহমান বলল ,”শুনলি তো সাদাফ বিয়ে করতে চাইছে ।”ফজলুর রহমান মাথা তুলে তাকালেন ।তারপর বলেন ,”হ্যাঁ ছেলে বড় হয়েছে বিয়ে তো করতে চাইবেই।
আমাদেরই ভাবা উচিত ছিল তা না করে নিজেরা বসে রইলাম ছেলের মুখ ফুটে বলতে হল। নীলা রহমান
ভাইয়া একটা জিনিস খেয়াল করেছো ও বলল পাত্রী কে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি ।তখন কথাটা ধরিনি ।কে হতে পারে যাকে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি?”
হুমায়ূন রহমান ফজলুর রহমানের দিকে তাকালেন ।তারপর একটু আমতা আমতা করে বললেন ,”আচ্ছা পাত্রী যদি তোর খুব চেনা হয় তাহলে কেমন হবে?”
ফজলুর রহমান বললেন ,”ভালই হবে চেনাজানা মধ্যে হলে তো ভালো আর নতুন করে চেনা জানা করতে হবে না ।সবকিছু আগে থেকেই বোঝ পোরা হয়ে থাকবে।
আমি তো আমার আশেপাশে বিয়ের উপযুক্ত এরকম কোন মেয়েকে দেখি না ভাইয়া যাকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি।”
হুমায়ূন রহমান চুপ করে রইলেন আর আর কিছু বললেন না ।বললেন সেটা হয়তো সাদাফ জানে হয়তো আমাদের মাথায় এখন আসছে না মেয়েটা হয়তো আমাদের খুবই পরিচিত।
তারপর কি মনে করে যেন বলল ,”আচ্ছা আমাদের মেয়ে দুটো তো বড় হচ্ছে ওদের ওতো বিয়ে দিতে হবে ।নুরকে নিয়ে তোর কি চিন্তা ভাবনা ?”
ফজলুর রহমান চট করে তাকালেন ভাইয়ের দিকে তারপর বললেন ,”এখনো তো ও ছোট ভাইয়া ওকে নিয়ে আর কি চিন্তা করব ।তার আগে তো রিমা ।রিমা পড়াটা শেষ হলে বিয়ে দিব তারপর নুরকে নিয়ে চিন্তা।”
“রিমা তো লেখাপড়ার জন্য অনেক সিরিয়াস এজন্য ওর লেখাপড়া আরেকটু এগুনোর পর ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ার বা সেকেন্ড ইয়ারে উঠলে বিয়ের কথা চিন্তা করব ।কিন্তু নূর তো আবার লেখাপড়া বেশি একটা করতে চায় না ।তাই জিজ্ঞেস করলাম নূরকে নিয়ে তোর কোন প্লান আছে কিনা।
আমি তো বড় বাবা হিসেবেই নূরকে বাহিরে দিতে রাজি না তুই তো ওর নিজের বাবা তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
ফজলুর রহমান হুমায়ুন রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”নিজের বাবা বলে কি ভাইয়া ?আমার চেয়ে বেশি অধিকার নূরের উপরে তোমার কারন নূর তোমাকে সবার আগে বাবা বলে ডেকেছিল মনে নেই তোমার?”
হুমায়ূন রহমান হাসলো ।বলল ,”হ্যাঁ সর্বপ্রথম ও আমাকে বাবা বলে ডেকেছিল ।”
তারপর ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আচ্ছা সাদাফ যে ছোটবেলা তোর কাছ থেকে নুর কে চেয়ে নিয়ে গিয়েছিল মনে আছে তোর?এখন বিয়ে দিতে গেলে যদি বলে না বিয়ে দিবে না ওর কাছে রেখে দিবে তখন?”
ফজলুর রহমান খুব হাসলেন মনে পড়ে গেল সেই ছোট্টবেলার কথা ।যেদিন সাদাফের কোলে দিয়ে বলেছিলেন প্রমিস করে হ্যাঁ এখন থেকে নূর তোর ।তাই বললে ,”হ্যাঁ ভাইয়া ছোটবেলা তো দিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এখন তো বড় হয়ে গেছে এখন কি আর এসব মনে আছে আর তাছাড়া বিয়ে তো একদিন দিতেই হবে কি করবো বলো?”
হুমায়ূন রহমান আমতা আমতা করছে ।ফজলুর রহমান খেয়াল করল ।তারপর জিজ্ঞেস করল ,”ভাইয়া তুমি কি আসলে কিছু বলতে চাচ্ছ ?”
হুমায়ূন রহমান সাহস করে বলল ,”যদি সাদাফ এখনো তোর কাছে নূরকে চেয়ে বসে ?আজও কি নূরকে ওর হাতে দিয়ে প্রমিস করে বলবি এখন থেকে নূর সাদাফের?
ছোটবেলা যে পুতুলটাকে তোর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিল তোর কাছে প্রমিস করিয়েছিল বড় হওয়ার পর যদি তোকে বলে সে প্রমিস রক্ষা করতে এই পুতুলটাকে ওকে দিয়ে দিতে তখন কি করবি তুই?”
ফজলুর রহমান নির্বাক হয়ে গেলেন ।অবাক হতেও যেন ভুলে গেলেন ।চোখের পলক না ফেলেই তাকিয়ে রইলো হুমায়ূন রহমানের দিকে।
৬ কে + রিয়েকসন হলে রাতে রোমান্টিক পর্ব হবে।
না হলে দিবো না।
চলবে…………
Neela Rahman
কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ
Share On:
TAGS: নীলা রহমান, সুখময় যন্ত্রণা তুমি
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৩+৩৪
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৭+৩৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৫+১৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৭+১৮+১৯
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৭+২৮
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৯+৩০
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৫+২৬
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩
-
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭+৮