মেঘেরওপারেআলো
পর্ব_৩৯
Tahmina_Akhter
— আপনার সঙ্গে আমার আর সংসার করা হয়ে উঠবে না। যেই সম্পর্ক মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেই সম্পর্ক বয়ে বেড়ানোর মত শক্তি আমার নেই।
আলোর কথা শুনে মাহরীনের বুকটা কেঁপে ওঠল। মেঘালয়ের অস্থির লাগছে। পুরো শরীর ঘেমে জবজবে । পরনের সাদা শার্টটা ভিজে শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। সিতারা বেগম অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আলোর দিকে।
— মিথ্যার ওপরে দাঁড়িয়ে নেই। তোমার আর আমার বন্ধনের একটা পবিত্র নাম আছে। তুমি এখন রেগে আছো ওপর। তুমি ঘরে এসো আমার সঙ্গে। ফ্যানের নীচে বসো। একগ্লাস পানি খাও। তুমি শান্ত হলে আমি তোমাকে সব খুলে বলব। প্লিজ, আলো পাগলামি করো না!
মেঘালয় আলোর হাতদুটো ধরে মিনতির সুরে বলল। আলো প্রচন্ড অভিমানী হয়ে মেঘালয়ের চোখের দিকে তাকালো। আলোর চোখদুটো লালচে ধারণ করেছে। মেঘালয়ের বুকটা ব্যাথা করছে। আলোকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে কাবু করে ফেলছে যেন। বিয়ের দিন সকালে যখন তাদের আকদ হলো তখন মাশফির ফোনে ভিডিও কলে আলোকে কাঁদতে দেখে সে বলেছিল,
“শাদি মোবারক, মিসেস মিথ্যাবতী। অবশেষে আপনি আমার হলেন। আজ যত কান্না করতে পারেন করুন। বাঁধা দেব না। কারণ, আজ আপনার দিন। আমার বাড়িতে, আমার জীবন, আমার ছোট ঘরটায় যেদিন আপনার আগমন হবে সেদিন আপনার কান্নারা ছুটি নেবে। আই প্রমিস।”
কোথায় সেই প্রতিশ্রুতি? মেঘালয় আজ হেরে গেছে বাজেভাবে। আলোকে সে আগলে রাখতে পারেনি। আজ আলোর চোখের পানির কারণ সে হয়েছে। কতখানি কষ্ট পেয়েছে আলো! যার কারণে বহুদিন আগে বলা কথাগুলো আজ তার মনে পরেছে অসময়ে।
দুই পা এগিয়ে আলোর গালে দু-হাত রেখে মেঘালয় আদুরে সুরে বলল,
— আমার ওপর অভিমান করো, রাগ করো, চেঁচামেচি করো আমি রাগ করব না, বিশ্বাস করো। তবুও তুমি আমার সঙ্গে কথা বলো। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা মাথায় এসে থাকলে ঝেড়ে ফেলে দাও। তুমি শুনতে পাচ্ছো আমি কি বলছি?
মেঘালয় একাই কথাগুলো বলে গেল। আলো চুপ করে শুনে গেল। আলোর নিরবতা আজ মেঘালয়কে ভেঙেচুরে দিচ্ছে। শেষমেশ মেঘালয় অসহায়ের মতো পেছনে ফিরে মাহরীনের দিকে তাকালো। মাহরীন মেঘালয়ের দৃষ্টির মানে বুঝতে পারল কিনা! মাহরীন তার দৃষ্টি নত করে ফেলল।
আলো মেঘালয়ের হাতদুটো সরিয়ে দিলো। তারপর, দ্রুত পা চালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলার দিকে রওনা হলো। মেঘালয় দেরি করল না। আলোর পেছনে দৌঁড়ে চলে গেল। আলো ঘরে ঢুকল। ওর পেছনে মেঘালয়। রুমের দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে আলো পেছনে ঘুরতেই দেখতে পেলো মেঘালয়কে।
আলো দৃষ্টি ঘুরিয়ে আলমারির কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মেঘালয় এসে খপ করে আলোর হাত ধরে টান দিলো। আলো হুমড়ি খেয়ে পরল মেঘালয়ের প্রশ্বস্ত বুকে। তারপর, খুব শক্ত করে আলোকে বুকের মাঝে চেপে রাখল। আলো ছটফট করে মুক্ত হবার জন্য। একসময় মেঘালয়ের সঙ্গে শক্তিতে না পেরে মেঘালয়ের বুকে জোরে ধাক্কা দেয়। মেঘালয় খানিকটা সরে গেল তার অবস্থান থেকে। ভীষণ অবাক হলো সে। আলোর আচরণে ভীষণ কষ্ট পেলো। যেই আলো সবসময় মেঘালয়ের স্পর্শ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকত, তার বুকের সঙ্গে লেপ্টে থাকত, সেই আলো আজ তাকে নিজ হাতে সরিয়ে দিলো! মেঘালয়ের মেইল ইগোতে হার্ট করল ব্যাপারটা।
—আমার স্পর্শ সহ্য করতে পারছো না তুমি?
প্রশ্নটি শুনে মেঘালয়ের মুখের দিকে তাকালো আলো। দু’জনের চোখে আজ সমান সমান অভিমানের জন্ম হয়েছে। আলোর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসার আগে দৃষ্টি নত করে ফেলল। মেঘালয় পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে আলোর পানে।
আলো মেঘালয়ের চোখের দিকে তাকালো না কথাগুলো বলার সময়। মাথা নীচু করে মেঝেতে অনাদরে ওরে থাকা কার্পেটের দিকে তাকিয়ে বলল,
— আপনি তো কেবল পারেন নানান বাহানায় আমার শরীর ছুঁয়ে দেখতে। আমি আপনার শরীরের খুদা মেটানোর বস্তু হয়তো। বিয়ের এতগুলো মাসে আমার শরীর ছোঁয়ার মধ্যে আপনার আধিপত্য বিস্তার ছিলো। আমাদের সম্পর্কের আর কোথাও আপনার কন্ট্রিবিউট দেখলাম না আমি। শুধু আমি বোধহয় নীরবে নিভৃতে কন্ট্রিবিউট করছি। একজন স্ত্রীর যা করার দরকার, আমি সবোর্চ্চ চেষ্টা করেছি নিজের দায়িত্ব পালন করার জন্য।
— আলো!! কি বলছো তুমি এসব?
মেঘালয় চরম বিস্ময় নিয়ে কথাটি বলল। আলো চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে ফেলল। তারপর, শুকনো গলায় বলল,
—যা বলছি সত্যি বলছি। বিয়ের দিন থেকে আজ পর্যন্ত আপনি আমাকে যেভাবে দেখতে চেয়েছেন, আমি নিজেকে ঠিক সেভাবে আপনার সামনে প্রেজেন্ট করেছি।
— একজন স্ত্রীর দায়িত্বের মাঝে কি এই অংশটা পরে না!
মেঘালয় ঘোরের মাঝে জবাব চাইল আলোর কাছে। আলোর ভারী কথা মেঘালয়ের মাথায় ঢুকছে না। আলো চুপ করে আছে। । হয়তো সামনে আরও কিছু বলার আছে তার। সময় নিচ্ছে কথাগুলো সাজিয়ে উপস্থাপন করার জন্য।
— অবশ্যই। কিন্তু, আপনি কখনোই আমার দিকটা ভেবে দেখেননি, ডাক্তার সাহেব। আপনি কেবল স্বার্থপরের মতো নিজের কথা ভেবেছেন।
আলো দম ছাড়ল। যেন সে হাঁপিয়ে ওঠেছে। মেঘালয়ের কথা বলার শক্তি ফুরিয়ে আসছে আলোর কথাগুলো শোনার পর থেকে। তবুও, আজ সাহস সঞ্চার করে আলোর কথাগুলো মন দিয়ে শুনবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো সে।
— আপনার সঙ্গে বিয়ে হবার পর থেকে আপনার পছন্দের রঙের শাড়ি কাপড় আমাকে পরিধান করতে হয়েছে। আমাকে এই রঙে নয়, অন্য রঙে মানাবে। এভাবে চুল বাঁধলে বেটার লাগবে, অন্যভাবে নয়। আপনার কিছু কিছু কথায় অপ্রকাশিতভাবে আমার গায়ের রঙ নিয়ে আপনার হতাশা আমাকে বারবার ভেঙেচুরে দিয়েছে। যেই আমি লাল গোলাপের প্রতি আসক্ত, সেই আপনার জন্য আমি কাঠ গোলাপের প্রতি অভ্যস্ত হলাম। আপনি বাচ্চা নিতে চাননি। পিল এনে দিয়েছেন। কিন্তু, আমি গাধা অন্যের কথা শুনে প্রেগন্যান্ট হলাম। আমার দিকের আত্মীয়রা হয়তো আমার ভবিষ্যতের প্রেডিকশন করেছিল৷ তারা বারবার বলতো একটা বাচ্চা এলে সব ঠিক হয়ে যাবে। একটা বাচ্চা তোর কোল জুড়ে এলে তোর হাজার দোষ মাফ হয়ে যাবে। আমিও তাদের কথায় বাচ্চা নিলাম। কিন্তু, উপরওয়ালার পরিকল্পনা বুঝি ভিন্ন ছিল। আমার বাচ্চাটা চলে গেল আমাকে ছেড়ে।
এতটুকু বলে থেমে গেল আলো। গলা শুকিয়ে আসছে তার। এতকথা কখনো একসঙ্গে বলেছে বলে তার মনে পরছে না। তার জীবনে কখনো এত এত অভিযোগ জমা হয়নি৷ এই যে এত অভিযোগ কার নামে? তার ডাক্তার সাহেবের প্রতি এত অভিযোগ একদিনে জমা হয়নি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালি কণা জমে যেমন সুউচ্চ পাহাড়ে পরিণত হয়। মেঘালয়ের প্রতি তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিযোগ আজ পাহাড় সমান পরিণত হয়েছে।
মেঘালয় শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এত এত অভিযোগ তার নামে কবে জমা হলো! সেই সময় নিয়ে ভাবতে বসেছে। কথা বলার ফাঁকে আলো সময় নিয়েছে। সেই সময়ে সে নিজেও ভাবতে বসেছে তার ওপর আরোপ করা অভিযোগগুলো নিয়ে।
—তানিয়া ভাবি যেদিন মরে গেল। সেদিন আমি মরে যেতাম যদি না আমার আম্মা আমাকে হসপিটালে নিতেন। সেদিন আপনাকে কল দিলেন আম্মা। আমার শারীরিক অবস্থার কথা আপনাকে জানালেন। আপনি ফিরে আসার কথা বলেও ফিরে এলেন না। হয়তো আমার থেকেও সেদিন মাশফি ভাইয়ার সন্তান আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেদিন আমার অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করল। আমার বৃদ্ধা আম্মা এবং জেসমিন আপা আমাকে কোনোমতে বুকে জড়িয়ে একটা সিএনজি ডেকে তাতে করে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেল। আরে সিএনজিতে যখন আমি পা তুলে উঠতে গিয়েছিলাম না তখন মনে হয়েছিল আমার শরীরের নিম্নভাগে কি যেন ছিঁড়ে আসছিল! আমার স্বামীর দামি গাড়ি সেদিন আমার এবং আমার অনাগত সন্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল না। সেদিন আমার খিঁচুনি আমাকে ততটা কাবু করতে পারেনি যতটা আমার সন্তানের নড়াচড়া আমাকে কাবু করেছে। সেদিন আমার ছটফটানি কি আমার পুঁচকে সোনাটা টের পেয়েছিল? হয়তো মায়ের কষ্ট সে টের পেয়েছিল। মায়ের সকল কষ্টের অবসান ঘটিয়ে সে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। সে চলে গেল তার মা’কে শান্তি দিয়ে। আমার সেই ভয়ংকর খিঁচুনি এখন কোথায় আছে? আমার ভয়ংকর ব্লাড প্রেশার এখন কোথায় আছে? আমার বাচ্চাটাকে গিলে খাওয়ার পর সব পালিয়ে গেছে আমার শরীর থেকে। আমাকে গিলে ফেলল না কেন? আমাকে রেখে গেছে কেন? হাহাকার করার জন্য? জন্মের পর থেকে জন্মদাত্রীর জন্য হাহাকার করে বড় হয়েছি। এরপর, বাবাকে হারিয়ে তার জন্য আমার হাহাকার শুরু হলো। বাবার জন্য হাহাকার মিটে যাওয়ার আগে সন্তানটা বেঈমানের মতো চলে গেল! আরে যাবি যখন, তখন আমার গর্ভে এসে জায়গা নিয়েছিলি কেন? আমি তো অপূর্ণতায় ঘেরা মানুষ। আমাকে পূর্ণতা দেয়ার লোভ দেখিয়ে শূন্য করে চলে গেলি কেন?
আলোর চোখ দিয়ে জল বের হলো না। কিন্তু, মেঘালয়ের চোখ জোড়া আজ অশ্রুসিক্ত। তবে কি সেদিন একজন স্বামী হিসাবে, একজন পিতা হিসেবে তার দায়িত্বে ভাটা পরেছিল? সে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি?
আলো খাটের ওপরে গিয়ে বসল। সি-সেকশনের ধকল এখনো সে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। একজন মা হতে যতটা কষ্ট অনুভব করতে হয় সে তো ঠিক ততটুকু কষ্ট অনুভব করেছে। অথচ, মা হতে গিয়েও হতে পারল না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে,
—আজ যদি আমার বাচ্চাটা থাকত! তাহলে তো আমাকে দুটো কথা বলতে সবাই হেজিটেট করত। হয়তো বাচ্চার খাতিরে আমার দোষগুণ নিয়ে বিচারসভা বসলেও বিচারকার্য সম্পন্ন হতো না। সৃষ্টিকর্তা আসলেই বোধহয় চায়নি আমি কারো করুণার পাত্রী হয়ে এই বাড়িতে থাকি। আপনার সংসারে আপনার নামের বউ হয়ে থাকি! বিয়ে নামক একটা পবিত্র বন্ধনের নাম আমাদের দু’জনকে একই সুতোয় বাঁধতে পারলেও, মন এবং মানসিক ভাবে বাঁধতে পারেনি।
মেঘালয়ের শ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম! কি শুনছে এসব! কার জন্য মেঘালয় এত এত সেক্রিফাইস করল! আলোর কমফোর্টের ভেতরে সে কখনো অনুপ্রবেশ করেনি। আলো যা চেয়েছে তাই দিয়েছে। আলোকে সময় দিয়েছে যাতে সে তাকে বুঝতে পারে! স্বামী হিসেবে এতটুকু চাওয়া কি তার অপরাধ! নিজের স্ত্রীকে পছন্দের রঙে দেখতে চাওয়া অপরাধ! নাকি লাল গোলাপের বদলে কাঠগোলাপ খোঁপায় গুঁজে দেয়া অপরাধের! অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সেজন্য যদি পিল এনে দেয়া অপরাধের হয়, তাহলে তো সে মস্ত বড়ো অপরাধী। আলো এত স্বার্থপর! সে ভুল সবকিছু দেখতে পেয়েছে। দেখতে পায়নি মেঘালয়ের যত্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাকে।
—তোমার ভাষ্যমতে তোমার আর আমার মাঝে অলিখিত এক শারীরিক সম্পর্কের চুক্তি হয়েছিল?
গত নয়মাস দশদিনের সংসারে তাহলে তোমার আর আমার মাঝে কিছুই গড়ে ওঠেনি? তোমার প্রতি আমার নেয়া যত্ন, আদর, তোমার হাজারটা দোষ-ভুলকে অগ্রাহ করে তোমার পক্ষে থাকা, রাত-বিরেতে তোমার সন্তানের জন্য হাহাকার করার সময় আমার বুকে এসে তোমার ঠাঁই নেয়া সবই কি তবে সাময়িক আবেগের বশে করা ভুল ছিল?
মেঘালয়ের প্রশ্নের জবাব নেই আলোর কাছে। একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে মুখ ফুটে একবারও “ভালোবাসি” শব্দটা না বলে ,তাহলে কি স্ত্রী আগ বাড়িয়ে বলবে “আপনাকে ভালোবাসি!” অন্য স্ত্রীরা হয়তো তাদের স্বামীকে বলতে পারে। কিন্তু আলো যে বলতে পারবে না। যেই স্বামীকে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতে হয়, যেই স্বামীর সঙ্গে কোথাও ঘুরতে বের হলে মানুষের বাঁকা চাহনির সম্মুখীন হতে হয়, যেই স্বামীর পাশে দাঁড়ালে হীনমন্যতায় ভুগতে হয়, যেই স্বামী নিজের স্ত্রীকে শুধুই সয্যাসঙ্গিনী ভাবে। অন্তত সেই স্বামীকে সে নিজ থেকে “ভালোবাসি” বলার মত ভুল করবে না।
মেঘালয় আর তার সম্পর্কটা আট-দশটা সম্পর্কের মতো নয়। তাদের সম্পর্কটা জটিল সমীকরন। মেঘালয় এবং আলো কখনোই একই পথের পথিক হবার কথা ছিল না। কিন্তু, পৃথিবীর করা কোনো এক ভুলের কারণেই তাদের দুজনের প্রণয় হলো অকারণে।
— চুপ করে আছো কেন? জবাব দাও। একজন আদর্শ স্বামী তার স্ত্রীর জন্য যা কিছু করে আমি মেঘালয় ইমতিয়াজ আহমেদ আমার স্ত্রী তামান্না ইসলাম আলোর জন্য আমি তাই করেছি। আমার ধর্মে আমার স্ত্রীকে সম্মান দিতে বলে, আমি দিয়েছি। আমার ধর্মে স্ত্রীর দোষত্রুটিকে উপেক্ষা করতে বলে, আমি উপেক্ষা করেছি। আমার স্ত্রী সকল ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি।
— ভালোবাসতে পেরেছেন? অথচ, ধর্মে স্ত্রীকে আগে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।
আলো বিছানা ছেড়ে মেঘালয়ের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে প্রশ্নটি করল। মেঘালয় আলোর চোখের দিকে তাকালো। নিবিড় নজরে আলোর চোখের তাঁরায় নিজেকে খুঁজে ফেরার বৃথা চেষ্টা করল। আজ একটা জিনিস জানতে ইচ্ছে করছে। আলো কি তাকে ভালোবেসেছে? নিজের মনের কথা বলার আগে শুধু একবার আলোর মনের খবর নেয়া জরুরি। সে শতভাগ নিশ্চিত আলো তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। আজ কেন যেন বড্ড লোভ জাগল মনে। আলোর মুখ “ভালোবাসি” শব্দটা শোনার জন্য।
— আমার কথা বাদ দাও তো মিথ্যাবতী। তুমি নিজের অনুভূতি সম্পর্কে বলো। ডাক্তার সাহেবকে ভালোবাসতে পেরেছো?
তার মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে নিতে পেরেছো? সেদিন না বললে আমার মাঝে তোমার অস্তিত্বকে খুঁজে বেড়াও?
আলো মেঘালয়ের কাছ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে খোলা বারান্দার দিকে তাকালো। বাইরে আজ প্রচন্ড ঝড় হবে। তীব্র ঝড়ে আজ বিশাল কোনো গাছের ডালপালা ভেঙে আছড়ে পরবে ভূমিতে। সেই ডালাপালায় অতি যত্নে বাসা বাঁধা কোনো এক পাখিতা আশ্রয়স্থল হারাবে।
আজ বহুদিন পর আলোর বুকের হাহাকার মিটে গেল। মেঘালয়ের মিছে ভালোবাসার মিথ্যা ভাবনা থেকে আজ সে স্বেচ্ছায় মুক্ত নিলো। মেঘালয় তাকে কোনোদিনও ভালোবাসেনি। যদি ভালোবাসত তাহলে নির্দ্বিধায় বলে ফেলত তার মনের কথা। এত এত অভিযোগ সে “তোমাকে ভালোবাসি” বাক্যটি বলে মিটিয়ে ফেলত৷
আলো মেঘালয়ের মুখের দিকে তাকালো। অতি সূদর্শন পুরুষটার সঙ্গে তার বিগত নয়মাস দশদিনের সংসারে কখনো এভাবে তাকিয়ে তাকে দেখা হয়নি৷ বড্ড ভয় হতো। অসম্মান হবার ভয় হতো। অপাত্রে ভালোবাসা দান করার কথা ভাবতে বসলে বুক কেঁপে ওঠত। আজ আর সেই ভয় নেই। মেঘালয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,
চলমান….
Share On:
TAGS: তাহমিনা আক্তার, মেঘের ওপারে আলো
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব (১৫,১৬)
-
মেঘের ওপারে আলো গল্পের সবগুলো পর্বের লিংক
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ২৮
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ১৮
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ১১
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ১৭
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ৩২
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ৩৭
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ১৪
-
মেঘের ওপারে আলো পর্ব ৩৩