Golpo romantic golpo বি মাই লাভার

বি মাই লাভার পর্ব ৭+৮


#বি_মাই_লাভার

#পর্ব-৭

#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

দিলশাদের হাতে কয়েক রকমের লিপস্টিকের দাগ৷ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওর হাতে কালারগুলো দিয়ে দেখা হয়েছে কোনটা ভালো।সেগুলো তুলে ফেলার প্রয়োজন বোধ অবধি করেনি সে। শার্টের এক পাশে লাগানো ছোট্ট একটা পাঞ্চ ক্লিপ। এটাও নির্জনা বেশ ভালো করেই চিনে। এসব নৈঋতার। এমন ঘটনা নতুন নয়। নৈঋতার ক্যাম্পাসে বসন্ত বরণ উৎসবে গিয়েছিল নির্জনা। সে উক্ত কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী। নৈঋতার উচ্চমাধ্যমিকের আগে শেষ বসন্ত বরন ছিল। সেই উৎসবে ক্যাম্পাসের সেরা সুন্দরীর খেতাব পেয়েছিল নৈঋতা। সেদিন ও খেয়াল করেছিল দিলশাদের কবজিতে থাকা ঘড়ির পাশে নৈঋতার চুলের ক্রাঞ্চি। তখন বেশ ভালো লাগা কাজ করলেও এখন এই বিষয়ে সে বিরক্ত।এমন অনেক হয়েছে নির্জনা চেয়েছে তার জিনিসপত্র নিয়েও দিলশাদ এমন ফ্রি মাইন্ডের হোক।তার সাথেও এমন ব্যবহার করুক,তার চুলের কাটা, লিপস্টিক কিংবা ব্যাগটা নিজের হাতে নিক।কিন্তু দিলশাদ নিজ থেকে নেয় না।সে এগিয়ে দিলেই ধরবে। যেন এক দায়সারা ভাব। অথচ নৈঋতার বেলায় ভিন্ন একজন মানুষ হয়ে উঠে সে। এই মুহুর্তে তারা যে টেবিলে বসে আছে তার থেকে খানিকটা দূরে টেবিলে বসে নানান পদের খাবার দেখে ভ্রু-কুঁচকে আছে মেয়েটা। সামনে তার পছন্দের সব খাবার অথচ দিলশাদ কি জানে? নির্জনার প্রিয় খাবার কি?

“একটা হোয়াইট সস পাস্তা এবং ব্ল্যাক কফি।”

নির্জনা দিলশাদের দিকে তাকালো।পাস্তাটা তার প্রিয় তবে হোয়াইট সসটা বেশি প্রিয়।যাক এটুক অন্তত মনে রেখেছে সে।

“নৈঋতা আমাদের সাথে এই টেবিলেই বসতে পারতো।”

দিলশাদ দৃঢ় দৃষ্টিতে নির্জনার দিকে তাকালো। টেবিল এলিভেন শাযলীনদের তথা নৈঋতার। ইলহামের পর এসব কিছুর উত্তরাধিকার হয়েছে নৈঋ।এখানের প্রতিটা জিনিসপত্র তার পছন্দের। এই মুহুর্তে তারা যেখানে বসে আছে তার ঠিক সামনেই নৈঋতার পাশে বসে আছে হেড শেফ। তার সাথে কোনো একটা টপিক নিয়ে কথা বলছে। এই রেস্তোরাঁর হেড শেফ একজন নারী। যে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে তাকে এটা ওটা খেতে দিচ্ছে।

নির্জনার কথাতে তার দিকে মনোযোগ এনে দিলশাদ বলল,

“তুমি ইলহাম শাযলীন নামের কাউকে চিনো? অথবা নীলাশা শাযলীন?”

“অনেক আগে এদের নাম শুনেছি।উনাদের পুরো পরিবারকে তো শ্যুট করা হয়েছিল তাই না?যতদূর জানি এই রেস্তোরাঁ উনাদের ছিল।”

“নৈঋতা শাযলীন। নীলাশা শাযলীনের একমাত্র মেয়ে অমৃতা শাযলীনের মেয়ে এবং ইলহাম শাযলীনের ভাগ্নি।”

নির্জনা খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে তাকালো দিলশাদের দিকে। ওয়েটার কফি দিয়ে যেতেই এক চুমুক খেল সে। নির্জনা তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“দ্যা বাইকার’স গ্রুপ?”

” হুম, আমাদের গ্রুপ। ইলহাম, দিলশাদ, প্রত্যয়, হৃদ,কৌশিক ওসামা কিংবা রক্তিম । আমার ফ্রেন্ড’স গ্রুপের ইলহামের ভাগ্নি নৈঋতা।আমার কিড্ডো।ওর ছোটো বেলার ট্রমাটা ও কাটাতে পারেনি নির্জনা।তুমি জানো?ও রঙ দেখতে পারে না। সেদিনের ট্রমার পর বলতে গেলে এক প্রকার কালার ব্লাইন্ড হয়ে গিয়েছিল।ওকে অনেক ট্রিটমেন্ট করানোর পর সুস্থ হয়েছে। তুমি ভাবো আমি ওকে নিয়ে কেন এতো চিন্তা করি। অথচ তুমি জানো না বিগত আট বছর আমি রাতে পুরোপুরি ঘুমাতে পারি না। ঘুমালেও ঘুমের মাঝে উঠে ও ঠিক আছে কি না সেটা এক বার দেখে আসাটা আমার অভ্যেস। ওর প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে আমার প্লেটে খাবার তুলে নেওয়াটাও তাই। ও যখন স্কুলে যেতো ব্যাগটা ভারী থাকতো আমার মনে হতো এতো ভার কি ইলহাম থাকলে ওকে নিতে দিতো? সেই যে অভ্যেস হলো আমার এই অভ্যেস যায়নি বলেই এখনো ওর পার্স, চুলের পাঞ্চ কিল্প সব সময় আমার সাথেই থাকে।আমি ওকে নয় যেন আমার স্বত্ত্বাকে আগলে ধরেছি।”

“কিন্তু এটা তো সমাধান নয় দিলশাদ। তোমাকে যে কোনো একজনকে বেছে নিতে হবে।”

“কেন নিতে হবে নির্জনা? তুমি কেন নিজের সাথে ওর তুলনা করছো? তুমি আমার হবু স্ত্রী।কিড্ডোকে আমি নিজে বড় করেছি।শী ইজ মাইন।”

“এটাই সমস্যা দিলশাদ।তুমি বুঝতে চাইছো না।তুমি বুঝতে পারছো না তোমাদের সম্পর্ক অন্যদিকে ঘুরে যাচ্ছে।তুমি ওকে একা ছাড়ছো না, ওর মায়ের সাথে ছাড়ছো না।ও ছিল না বলে বিয়েতে আসোনি।তুমি বুঝতে পারছো? এটাতো কেবল দায়িত্ব হতে পারে না।”

“তোমার ধারণা ভুল।আমি কখনোই কিড্ডোর দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকাইনি।”

“কিন্তু সব সময় বলো ” শী ইজ মাইন। ধরো আমাদের বিয়ে হলো।ও আমাদের সাথেই রইল।তুমি আমি কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছি।এমন সময় নৈঋতার রুম থেকে কিছুর শব্দ হলো।তুমি কি করবে?”

“অবশ্যই ও ঠিক আছে কি না সেটা দেখবো।”

নির্জনা হাসলো।সে ভেবেছিল নৈঋতার রূপের কাছে সে জিতে যাবে।চুপচাপ স্বভাবের মেয়েটা কখনোই দিলশাদের মন জয় করতে পারবে না।কিন্তু পরাজিত সম্রাট আগেই তার মন দিয়ে বসেছে এই কিশোরীকে। নির্জনা পাস্তায় চামচ নাড়াচাড়া করে বলল,

“এভাবে হয় না দিলশাদ।আমি চাই তুমি নৈঋতার থেকে সরে আসো।ওকে হোস্টেলে দিয়ে এসো।যা ইচ্ছে করো।আমাদের থেকে দূরে দাও ওকে।আমি ওকে সহ্য করতে পারছি না।”

নৈঋতা কখন এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি দিলশাদ।তবে সে স্পষ্ট কথাগুলো শুনেছে এটা বুঝতে পারলো।

“আমি চলে যাবো আন্টি। আমার এডমিশনটা হলেই আমি চলে যাবো।”

“এডমিশন অনেক দেরী নৈঋতা।যে মানুষ তোমাকে আট বছর আশ্রয় দিলো তার প্রতি কৃতজ্ঞতা রেখে এই মুহুর্তেই নিজের পথ দেখা উচিৎ। তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে আমাদের বিয়ের আগেই আমাদের জীবন থেকে সরে যাবে।”

“আমি গিয়েছিলাম।”

“যাওনি।অভিনয় ছিল সব।”

দিলশাদ নৈঋতার হাত ধরে নিজের পাশে বসালো। কোমর ব্যথায় কিছু সময় আগেও মেয়েটা ছটফট করেছে।নেহাৎ যুবতী নারী বলে কিছু বলতে পারে না।কিন্তু দিলশাদ যে তার শরীরের সব খবর রাখে। বডিগার্ডকে ইশারা করতেই ছোটো একটা হট ওয়াটার ব্যাগ দিলো।সেটা নৈঋতার হাতে দিয়ে সে স্থির গলায় বলল,

“তো এই কারণে কিড্ডো চলে গিয়েছিল?”

নির্জনা খানিকটা আমতা আমতা করে বলল,

“তেমন কিছুই না।আসলে……

” শুনো নির্জনা, তুমি তোমার জায়গায়। স্ত্রী হিসেবে আমি তোমায় স্থান আমার জীবনে সবকিছুর উর্ধ্বে দিবো।কিন্তু কিড্ডোর জায়গাটা ভিন্ন।ওর সাথে এমন ব্যবহার আমি মেনে নিবো না।”

“প্রয়োজন নেই মেনে নেওয়ার। আমি হোস্টেলে চলে যাবো।আজ এখান থেকেই।আর হ্যাঁ আপনি আমার কাছে আসবেন না আজ থেকে।”

নৈঋতা বেরিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু দিলশাদ স্মিত হেসে তার পিছনে পিছনে হাটলো।পার্কিং থেকে গাড়ি বেরিয়ে আসতেই নৈঋতা চাইলো হেটে যেতে কিন্তু দিলশাদ তার হাত চেপে ধরে বলল,

” কিড্ডো তোমার জেদ,তোমার লজিক সব কিছুই অমূল্য।আমি ওসব স্পর্শ করেও দেখতে চাচ্ছি না।”

” মি.দিলশাদ মেহেবুব, আপনি আমার কাছে কি চাইছেন?”

দিলশাদ এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে নিজের হাত দিয়ে নৈঋতার গলা প্যাঁচিয়ে ধরলো, সামান্য বল অবধি দিলো না।কিন্তু তাকে নিজের দিকে খানিকটা টেনে এনে ফিসফিস করে বলল,

“নট এগেইন কিড্ডো। তোমার মুখে আমি আমার নাম শুনতে চাই না। আর একটা বার যদি কখনো আমাকে নাম ধরে ডেকেছো তাহলে এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিষিদ্ধ কাজটা আমি করে ফেলবো। আর তুমি চাইলেও ফেরাতে পারবে না।”

চলবে………………।

#বি_মাই_লাভার

#পর্ব-৮

#সাদিয়া_খান( সুবাসিনী)

পরদিন ভোরবেলা দরজায় টকটক শব্দে কড়া নাড়লো দিলশাদ। নৈঋতা গত রাতে বেশ অভিমান করেই ঘুমিয়েছে। তার অভিমানের কারণে আজ আসমানের মন খারাপ। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে এই বসুন্ধরায়।

ঘুমুঘুমু চোখে নৈঋ দরজা খুলতেই একটা মিষ্টি হাসি ফিরিয়ে দিলো দিলশাদ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার এক নারী কর্মচারী বেশ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাধারণ দিলশাদকে হাসতে দেখা যায় না।

“কিড্ড ইন টেন মিনিটস, নিচে এসো।”

“নো হানি বিয়ার। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

“আচ্ছা, তবে এসো ব্রেকফাস্ট শেষ করলে আমি বের হবো।”

“আমি নিজে নিজে করে নিতে পারবো।আমি বাচ্চা নই।”

“তুমি কি চাইছো এখন আমি নিজে তোমাকে ব্রাশ করিয়ে আনি?কিড্ডো আর ইউ শিওর?”

পরিচারিকাকে ইশারা করতেই নৈঋ হাল ছাড়লো।সে আর একটু ঘুমাতে চেয়েছিল এই বৃষ্টিতে । নৈঋতা ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলল,

“আমার কফিতে দুধ কম দিবে।আমি কফি খেতে চাই। দুধ না।”

দিলশাদ নিচে ফিরে এলো।নৈঋতার জন্য রাখা এক গ্লাস গরম দুধে নাম মাত্র কফি মিশিয়ে তৈরী করছিল এমন সময় একজন এসে তার কানে কানে বলল,

” চিফ রাফিয়াদ রশিদ আজ সকালে মারা গেছেন।”

কফির মগে এক পলকের জন্য হাত থেমে গেল দিলশাদের। এক সেকেন্ডের কম সময় নিয়ে সে কিছু একটা চিন্তা করে পুনরায় চামচ নাড়াতে লাগলো। নৈঋতা ধীরে ধীরে নিচে নামছে।দিলশাদের বাম পাশটায় বসতেই দিলশাদ বলল,

“প্রিন্সেস একটু বের হতে হবে আজ।যাবে তুমি?”

নৈঋতা ধীরে ধীরে দিলশাদের দিকে তাকালো। দিলশাদ সচরাচর তাকে প্রিন্সেস বলে ডাকে না।এই নামে ইলহাম ডাকতো তাকে।প্রিন্সেস বলে ডাকা মানে নিশ্চয়ই ইলহাম সংক্রান্ত কিছু একটা কাজ আছে। সে চকিতে সম্মতি জানালো। সামনে থাকা খাবার শেষ না করা অবধি তার উঠা হবে না।তাই ধীরে ধীরে খাবার শেষ করলো সে। আজ তার রুটিন চেকাপ আছে। অসুস্থ না হলেও তাকে নিয়মিত রক্তের বিষয়টা খেয়াল রাখতে হয়।অদ্ভুত এই রক্তের গ্রুপ নিয়ে জন্মানো নৈঋতার যন্ত্রণা কেবল সে বুঝে।

খাবার শেষ হতেই পরিচারিকা নৈঋতার দিকে এলো।তৈরি হয়ে নৈঋতা নিচে নামতেই দেখলো সাদা শুভ্র পোশাকে তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে দিলশাদ।গলার দিকটার বোতামটা খোলা।হাতে থাকা অডেমারস পিগুয়ের কালো ডায়ালের ঘড়িটার কারণে যেন আভিজাত্য উপচে পড়ছে। ব্ল্যাক অরলভ বসানো কালো আংটিটার দিকে বরাবর নজর নৈঋতার। চাইলেই দিলশাদ দিবে কিন্তু কখনো চাইতেও ইচ্ছে করেনি তার। এতো এতো পছন্দ অথচ হানিবিয়ার কেন বুঝে না?এমনি তো না চাইতেই সব তার সামনে হাজির থাকে। লিমিটেড এডিশনের পীচ ব্ল্যাক রঙের গাড়িটা পার্কিং লট থেকে ভিলার প্রবেশদ্বারে এলো।সামনে পিছনে গোটা দশেক সিকিউরিটি গাড়ি নিয়ে শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তায় উঠে গেল নৈঋতা এবং দিলশাদ।আজকের এই যাওয়াটা ভিন্ন।কারণ দিলশাদ কখনোই তাকে নিয়ে এভাবে বের হয়নি।কোথাও যাওয়ার সময় সামান্য সিকিউরিটি অবধি নেয়নি। বাইরের পৃথিবীতে নৈঋতার যাতায়াত কেবল স্কুল, কলেজ অবধি ছিল।একজন সাধারণ ছাত্রীর মতো। কিন্তু আজ ভিন্ন কিছু আছে এই যাত্রায়।

“আমরা কোথায় যাচ্ছি হানি বিয়ার?”

বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরছে, সেই বৃষ্টি এসে জমেছে জানালার কাঁচে। দিলশাদ ফোনে কিছু করছিল, এমন প্রশ্নে সে চোখ তুলে তাকানো নৈঋতার দিকে। সী গ্রীণ না কি কালো রঙের পোশাক নৈঋতার বুঝতে পারছে না দিলশাদ। মুখে সামান্যতম প্রসাধনী নেই। দিলশাদ পাশ সেন্টার আর্মরেস্ট কনসোলের ভেতর থেকে পেন্সিল কাজল বের করছিল কিন্তু তার এক মুহুর্তের অবচেতন মন আর ছোঁ মেরে নৈঋতা চকলেটটা নিয়ে গেল।দিলশাদ তাকে এগিয়ে আসতে দেখেছিল কিন্তু সচেতন হওয়ার আগেই বিজয়ী হলো তার কিড্ডো।খিলখিল করে হেসে বলল,

“এবং আমি ঘোষণা দিচ্ছি আমি পুরোটা খাবো।”

দিলশাদ কেড়ে নিতে নিতে বলল,

“মোটেই না। পুরোটা খাওয়া যাবে না।”

“আমি এখন খাবো।আর হানি বিয়ার তুমি চুপচাপ দেখবে।এতো পানসে কেন তুমি?”

“বড় হয়েছো কে বলেছে? বড় হলে বিয়ে দিয়ে দিতে হয়।দিবো বিয়ে?”

“অবশ্যই অবশ্যই।আমি বিয়ে করতে এক পায়ে দাঁড়ানো।বিয়ে করবো আমার বেবিরা তোমাকে না….

দিলশাদ চকলেট ভেঙ্গে তার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,

” আমার এতোটাও বয়স হয়নি।”

নৈঋতা কোনো জবাব দিচ্ছে না।সে হেসে কুটিকুটি যাচ্ছে, কেবল তাই নয়, চকলেটে হাত মাখো-মাখো হয়ে গেছে। দিলশাদ টিস্যু দিয়ে হাতখানা মুছে দিতে চাইলো কিন্তু সে বলল,

“পুরোটা শেষ করি?আগামী তিন মাস খাবো না।”

“এই প্রমিস তিন ঘন্টা টিকলে হয় কিড্ডো।এদিকে এসো আমি কাজল দিয়ে দিচ্ছি।”

দিলশাদ নিজ হাতে নৈঋতাকে কাজল পড়ানোতে ঘোর আপত্তি নৈঋতার।কিন্তু দিলশাদ নাছোড়বান্দা বলেই পরতে হলো। চকলেট খাওয়া শেষ হলে হাত মুছিয়ে দিতেও দেরী করলো না সে। গাড়ি থামতেই একজন এসে বলল,

“চিফ আমরা পৌঁছে গেছি।”

দিলশাদের মুখে এক কঠিন রেখা ফুটে উঠেছে।হাত থেকে ব্ল্যাক অরলভের আংটিটা খুলে এবার সে নৈঋতার আংগুলে পরিয়ে দিলো।গাড়ি থেকে নিজে আগে নেমে অপেক্ষা করলো তার বেরিয়ে আসার।

বাড়ির ভিতরে বেশ মানুষ জন।একজন মানুষ ইন্তেকাল করেছে তাকে দেখতে মানুষ এসেছে।দিলশাদের উপস্থিতিতে অনেকেই সজাগ হলো যেন। তার পাশে থাকা মেয়েটার বিষয়েও বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।নির্জনা আজ এসেছে পুরো পরিবারের সাথে।

দিলশাদকে দেখে এগিয়ে যেতে চাইলেও সিকিউরিটি দলের জন্য পাশেই দাঁড়িয়ে রইল। রশিদ পরিবারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো দিলশাদ।তারা এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে এগিয়ে এলো। কিন্তু পাশে থাকা নৈঋতার দিকে তাকিয়ে রশিদ পরিবারের অনেকেই খানিকটা থমকে গেছে।

দিলশাদের ঠোঁটে ক্রুর হাসি।সে নৈঋতার দিকে তাকিয়ে বলল,

“কিড্ডো, উনি তোমার বড় চাচা। আজ তোমার দাদা মারা গেছেন।তাই তোমাকে নিয়ে এসেছি।তুমি কি তাকে দেখবে?”

ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে রইল নৈঋতা। এই শহরে তার আপন র’ক্তের কেউ ছিল বা আছে ভাবতেই মন খারাপ হলো কিন্তু দিলশাদের পরবর্তী বাক্যে সব দুঃখ ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।

“নৈঋতা শাযলীনকে আমি বাঁচিয়ে রেখেছি।আজ সে আঠারোতে। এনাম রশিদ সাহেব আপনার কি মনে হয় না এবার নৈঋতা শাযলীনকে তার বাবার সাথে দেখা করতে দেওয়া উচিৎ?”

এনাম রশিদ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন তার দিকে।কিন্তু এই মুহুর্তে তার হাতে কিছুই নেই।বরঙ এই শহরের কারোর হাতেই কিছুই নেই।নৈঋতার হাতে থাকা এই আংটিটা ওর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ করছে।ভাবতেই অবাক লাগছে দশ বছর আগে সেদিন এই ছোট্ট মেয়েটাকে তারা শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছিল,আর তাদের নাকের ডগার নিচে এই মেয়েকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই দিলশাদ। নৈঋতার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,তার বাবা তো মায়ের সাথে বিদেশে তবে আজ কার কথা বলছে? তার হাত বন্দী এখনো দিলশাদের হাতে। নরম করে ধরা সেই হাত, যেন তাকে ভরসা দিচ্ছে। নির্জনা দূর থেকে দেখে এগিয়ে যেতে চাইলে তার বড় ভাই বাধা দিয়ে বলল,

“কখনো তো বলোনি দিলশাদের আশ্রিতার নাম নৈঋতা শাযলীন?”

“হলেও বা কি?ওকে এতো ইম্পর্টেন্স দেওয়ার কি আছে?একটা গায়ে পড়া মেয়ে। জানে সে দিলশাদের বিয়ে আমার সাথে তবুও যাচ্ছে না। আর দেখো কেমন গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বেয়াদব একটা।”

নির্জনার ভাই কড়া দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি শাযলীনদের সম্পর্কে জানো? ওরা পৃথিবীর সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম পরিবারের মধ্যে অন্যতম। তোমার এই কথাগুলো যদি শুনে তবে এই মুহুর্তে জীব কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।”

নির্জনা মাছি তাড়ানোর মতো করে হাসলো। সে এই মেয়েটাকে দেখেছে। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় টাইপের মেয়ে। এই মেয়েটার পক্ষে দিলশাদ ছাড়া সার্ভাইব করা কঠিন নয় সম্পূর্ণ অসম্ভব। আর এই মেয়ের এতো ক্ষমতা? কুকুরের নাম রয়েল বেঙ্গল টাইগার রাখলেই কি সেটা টাইগার হয়? নির্জনা মনে মনে হাসলো।এদের সামনেই সে এই নৈঋতাকে চূড়ান্ত অপমান করবে এবং সবার ভয় ভেঙ্গে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।

**************************

ফিরে আসার পথে নৈঋতার মনে হাজার হাজার প্রশ্ন তবে সে দিলশাদের দিকে তাকালেই দিলশাদ বলল,

“সময় হলে সব জানবে। কিন্তু হ্যাঁ তোমার বাবা তোমার মায়ের সাথে গিয়েছিল ঠিকই তবে তাকে সেখান থেকে ফিরতে বাধ্য করেছিল তোমার দাদা।এরপর থেকে এক প্রকার গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে তাকে।কিড্ডো এই পৃথিবীটা ক্ষমতার দাশ।যার হাতে ক্ষমতার ইক্কা সেই তখন বাদশা। আমি কথা দিচ্ছি তোমার নিরাপত্তা আমার দায়িত্ব।”

নৈঋতা আংটিটা খুলে দিলো দিলশাদের হাতে। তার চোখের সামনে একটা বিন্দু হুট করে নাচানাচি করছে। দুই তিন বার মাথা দুলিয়ে জ্ঞান হারালো সে। দিলশাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকে নিজের দিকে টেনে আনলো। আজকের ঘটনাটা তার কিড্ডোর কাছে এক স্বপ্নের মতোই থাকুক।এখনো সময় আসেনি সবটা জানার।

পরদিন ভোরবেলা,

দরজায় ঠিক আগের দিনের মতো টকটক শব্দ হলো।চোখ খুলে নৈঋতা নিজেকে বেডরুমে আবিষ্কার করলো। পরনে তার রাতের পোশাক,কিন্তু সে তো গাড়িতে ছিল।ঠিক আগের দিনের মতোই দরজার ওপাশ থেকে দিলশাদের কণ্ঠস্বর,

” কিড্ড ইন টেন মিনিটস, নিচে এসো।”

নৈঋতা এক দ্বিধাবোধ নিয়ে বসে রইল।তার মস্তিষ্কে খেলা করা স্মৃতিগুলো কি কেবল স্বপ্ন?

চলবে ( রেসপন্স করবেন)

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply