#বি_মাই_লাভার
#পর্ব-২
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
“আশ্রিতা আর বাগদত্তার মাঝে পার্থক্য কি জানো? আশ্রিতাকে চাইলেই ছুড়ে ফেলা যায়,বাগদত্তাকে না।”
দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে নৈঋতার যখন এই কথাটা সে উপলব্ধি করতে পারে। এই পৃথিবীতে আপন বলতে তার কেবল দিলশাদ ছিল। আজ রাতের পর সেও থাকবে না। এত সুন্দর এই পৃথিবীটা তার কাছে নিষ্ঠুর হয়ে গেল। তাকে এখান থেকে কেউ চলে যেতে বলেনি কিন্তু থাকবে কোন মুখে?কার দিকে তাকিয়ে?
তাকালো আরো একটা বার দিলশাদের দিকে।এই মুহুর্তে বন্ধুদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সে। সফেদ রঙা পাঞ্জাবী দেখে স্মিত হাসলো সে। ইলহাম বেঁচে থাকলে এখন ইলহামও বিয়ের পিড়িতে বসতো। দিলশাদের পুরো ফ্রেন্ডসার্কেল নৈঋতাকে ইলহামের ভাগ্নি বলেই জানে।ইলহামের ভাগ্নি মানে তাদেরও ভাগ্নি।তাকে অন্যমনস্ক দেখে ইলহামের আরেক বন্ধু প্রত্যয় এসে পাশে বসলো।
“মামনির মন খারাপ?”
“মামার কথা মনে পড়ছে।মামা যদি থাকতো আজ হয়তো আমার এমন হতো না।তাই না?”
“মামা নেই তো কি আমরা তো আছি।তুমি আমাদের সবার বিয়েতে থাকবে।দিলশাদ দিয়ে তো কেবল শুরু।”
নৈঋতা প্রত্যয়ের দিকে তাকালো। দৃষ্টি নামিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“বেঁচে থাকাটা অনেক যন্ত্রণার তাই না?না হলে আমাকে রেখে একে একে সবাই কেন পালালো?”
পুরো অনুষ্ঠানে আর কোথাও নৈঋতাকে দেখা গেল না।কিন্তু খাবার সময় ঠিক দিলশাদ তাকে তার পাশে বসিয়েছে।বিগত দশ বছরে এই একটা কাজ কখনো পরিবর্তন হয়নি।কিন্তু আজ শেষ বারের মতো তারা পাশাপাশি বসলো। প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করে উঠে গেল মেয়েটা। বসতে জায়গা দিলো দিলশাদের নতুন বউকে।সে উঠে যাওয়ার আগে একবার চোখ রাঙানি দিয়েছিল দিলশাদ অথচ লাভ হয়নি। তার দিকে তাকায়নি নৈঋতা। দুই হাতে মেহেদী নিয়ে যখন নতুন বউ ইভা খেতে পারছিল না তখন খুব যত্নে তাকে খাইয়ে দিলো বর।শত শত ক্যামেরা ক্লিক হলো। দূরে দাঁড়িয়ে নৈঋতা তাকিয়ে দেখলো একবার।
রাতে সব শেষ হলে দিলশাদ ফিরছিল নিজের বেডরুমে। তার বেডরুমে যাওয়ার পূর্বে নৈঋতার বেডরুম পড়ে।স্বভাব বশত কারণে আজকেও দুই বার টোকা দিলো ওই রুমের দরজায়। আজ দুই বছর যাবত এই নিয়ম হয়েছে, কারণ মেয়েটা বড় হচ্ছে,প্রাইভেসি দরকার।দুই টোকাতে বরাবর দরজা খুলে যায়। হোক সেটা গভীর রাত। কিন্তু আজ দরজা খুলল না। একটু ধাক্কা দিতেই বুঝতে পারলো লাগানো হয়নি।বেডরুমের সামনে নৈঋতার স্টাডিরুম। সেখানে আলো নেই।ভাবলো ঘুমিয়ে আছে কিন্তু বিছানাটাও ফাঁকা।অপর দিকে ব্যালকনির স্লাইড ডোর লাগানো।চোয়াল শক্ত হলো তার। ওয়াকিং ক্লোজেটের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো ইলহামের ঘড়ি এবং কিছু জিনিসপত্র নেই।সন্দেহ সত্যি হলো।মেয়েটা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
রাগে জিদে সে দরজায় লাথি মারলো।গেটের সিকিউরিটি টিমকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কখন সে বেরিয়েছে? অথচ গেটের সিকিউরিটিরা তো নৈঋতাকে চিনেই না।কারণ কখনো তাকে দেখেনি।মাথার চুল এক হাতে টেনে দুই চোখ বন্ধ করে দিলশাদ।সিগারেট ধরিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
তার মনে ঠোঁটে এবং চোখে একটাই জেদ,
“একটা বার পাই তোমাকে নৈঋতা, ট্রাস্ট মি,তুমি এই ভুল দ্বিতীয়বার করার সাহস করবে না।”
কিন্তু ভোর হলেও তার দেখা নেই।দিন ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে, বরযাত্রী তৈরি হচ্ছে। অথচ বর? সে জানালো বিয়ে আজ হচ্ছে না। গলা কাটা কবুতরের মতো ছটফটে আওয়াজ তার। মনে মনে একটাই প্রার্থনা
“মাই কিড্ডো, আই উইল ফাইন্ড ইউ।”
**************
দুদিন পার হয়ে গেছে নৈঋতা ফিরেছে ওর নানা বাসায়।এই বাসাটায় এখন কেউ নেই।ভাগ্যক্রমে কেবল বিদ্যুৎ এবং পানির ব্যবস্থা পেয়েছে।বাহির থেকে বুঝার অবস্থা নেই এখানে কেউ আছে।সে দেয়াল টপকে এসেছে।সবচেয়ে উপর তলার ঘরটা মোটামুটি বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে।বাহির থেকে নুডুলস এবং টুকটাক খাবার কিনে এনে খাচ্ছে।আপাতত এখানে যে কয়েক দিন থাকা যায় থাকবে এরপর সে জানে না কোথায় যাবে।
হুট করে তার মনে হলো, “আচ্ছা?এই পৃথিবীতে তো আমার আরো একজন মানুষ আছে।আমার মা,আমি তো তার কাছে যেতে পারি।কিন্তু যোগাযোগ করবো কি করে?”
নিজের মোবাইল ফোন চালু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে খোঁজার চেষ্টা করলো।না পেয়ে ফোন বন্ধ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। অপর দিকে দুদিন উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ানো দিলশাদের ঠোঁটে হাসি ফুটলো সিগারেটটা ফেলে দেওয়ার আগে ঠোঁটের সাথে চেপে ধরলো আরেকটা বার। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে সে ফিসফিস করে বলল,
“দু’দিন? দু’টা রাত? তুমি ভেবেছো এটাই সব?
তুমি পালাও নৈঋতা, যতদূর ইচ্ছে পালাও—
পায়ের নিচ থেকে পৃথিবী সরিয়ে দেব,আকাশ থেকে নামিয়ে আনবো চাঁদ,শুধু একবার, তোমার চোখে তাকিয়ে বলতে চাই, মাই কিড্ডো তুমি ভুল মানুষকে ঠকিয়েছো।”
চলবে?( রেসপন্স করিয়েন তো।)
Share On:
TAGS: বি মাই লাভার, সাদিয়া খান
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
বি মাই লাভার পর্ব ৩
-
বি মাই লাভার পর্ব ১১+১২
-
বি মাই লাভার পর্ব ৫+৬
-
বি মাই লাভার পর্ব ৭+৮
-
বি মাই লাভার গল্পের লিংক
-
বি মাই লাভার পর্ব ৪
-
বি মাই লাভার পর্ব ৯+১০
-
বি মাই লাভার পর্ব ১৩+১৪
-
বি মাই লাভার পর্ব ১