প্রেমতৃষা
ইশরাতজাহানজেরিন
পর্ব_৪৭
( রহস্য উন্মোচন পর্ব ৩)
প্রেম হাসপাতালের মর্গে যায়। আপাতত ভয়ানক এই লাশটাকে রাখা হয়েছে মর্গেই। লাশ বললেও তো ভুল হবে। পুরোটা জুড়ে মানুষের আলগা চামড়া কেবল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে জোর করে। কি বিশ্রী, বিদঘুটে গন্ধ যে বের হচ্ছে। দম ফেলা মুশকিল। প্রেম লাশের দিকে একবার তাকিয়ে , হাতের লকেটের দিকে তাকালো। এত বছর ধরে এভাবে এই হাড়গোড় পড়ে ছিল, এসব দেখে কি মানুষ চেনা যায়? লাশের গায়ে যখন এই লকেট দেখেছিল তখন পরিচিত মনে হয়েছিল, তবে খেয়াল করতে পারছিল না এই লকেট সে দেখেছিল এর আগে? এত চিন্তা-ভাবনা করার পর শেষে এখন মনে পড়েছে, তিথির জন্মদিনে প্রত্যুষ তাকে এটি গিফট করেছিল। কেনার সময় অনেক গুলো অপশন দেখিয়েছিল প্রেমকে। প্রেম নিজেই এই লকেটটা পছন্দ করে দিয়েছিল। হেতিজা খুনী, তারও শাস্তি হবে। তবে তার চেয়ে আগে মা-ছেলের মানসিক চিকিৎসার দরকার। কারণ কোনো সুস্থ মানুষ তো তিন-চার বছর যাবৎ একটা মৃত দেহের সঙ্গে থাকতে পারে না। মানসিক ভারসাম্যে সমস্যা দেখা দেওয়ার ফলেই তো এই হাল। তৃষাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রুমের ভেতর নাকি তিথি ছিল, তাকে দেখেছে কিনা? তখন সে কেন এমন প্যানিক এ্যাটাক করেছে এইবার বুঝতে পারছে প্রেম। আসলে ওই রুমে তিথি নামক কেউ ছিলোই না। তিথি কে প্রত্যুষ অনেক আগেই হত্যা করেছিল। তিন-চার বছর যাবৎ সে এই লাশকে জীবিত ভেবে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে গিয়েছে। যেই সকল মেয়েরা অন্য ছেলেদের বিয়ে করত তাদের একটা লিস্ট তৈরি করত প্রত্যুষ। আইনের চাকরিটা এই ক্ষেত্রে তার জন্য বেনিফিট হিসেবে কাজ করেছে। সে ওই ধরনের মেয়ে মানুষকে খুঁজে খুঁজে টার্গেট করে মারত। মেরে তাঁদের চুল সংগ্রহ করত, একেক সময় একেক পার্টের মাংস চামড়া কেটে কেটে সংগ্রহ করত। আবার শরীরের কোমল অংশ থেকে মাংস কেটে সেগুলো দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে খেত। কত ভয়ানক মানসিক সমস্যা! প্রত্যুষ যখন তিথিকে হত্যা করে তখন তার মানসিক অবস্থা ঠিক ছিল না। তবে হত্যা করার পর সেই মানসিক অবস্থা হঠাৎ করে এমন ভয়ানক ভাবে অন্য রূপ একা একাই নিয়েছিল নাকি এর পেছনেও কারো হাত ছিল? এই গল্পের কিছুটা সমাধান হয়েছে, আরো অনেকটা রহস্য হয়ে মস্তিষ্কে জটলা পাকাচ্ছে। এবার এই কেইসের শেষ ব্যক্তির কাছেই যাওয়া যাক। রহস্য উন্মোচনে প্রেম যাকে সর্বশেষে রেখেছে আশা করা যায় সে অনেক কিছুই জানে। কারণ ঘটনা গুলো এতদিন যাবৎ নেওয়াজ বাড়িতেই হয়েছে। আর নেওয়াজ বাড়ির একটা পাতা নড়ার শব্দও যেই মহান ব্যক্তি সবার আগে টের পান অন্তত বাড়ির মধ্যে লুকিয়ে থাকা এত সব গল্প সে জানবে না, তার অজান্তে হয়েছে ভাবলেই হাসি পায়। হঠাৎ মর্গে কেউ একজন প্রবেশ করল। প্রেম পেছনে না ফিরেই সেই প্রবেশকারীর পায়ের শব্দ শুনে আন্দাজ করতে পারল, কে তার পেছনে দাড়িয়ে আছে। প্রেম পকেটে হাত গুঁজেই পেছন না ফিরে প্রশ্ন করল, ” এবার তোমার পালা। সত্য বলবে নাকি মিথ্যে তা তোমার বিষয়। তবে জীবনগুলোকে অন্ধকারে আর ঠেলে দিও না। পাপ কারা ঢাকে জানো? যারা সবচেয়ে বড় পাপী হয়, যাদের বিরাট কোনো পাপ লুকায়িত আছে। তোমার কোন পাপ লুকায়িত জানতে পারি?” প্রেম এইবার পেছন ফিরে তার তাকায়। সিদ্দিক নেওয়াজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসে। সিদ্দিক নেওয়াজের মুখটা কেমন গম্ভীর আর শুঁকনো ঠেকছে। সে প্রেমকে বলল, “চলো একটু বাইরে হাটাহাটি করি।” প্রেম কথা না বলে এগিয়ে এলো। হয়তো সে বাইরে খোলা হাওয়ায় যেতে ইচ্ছুক।
দুজনে অন্ধকার রাস্তায় পাশাপাশি হাটছে। মোখলেস আসতে চেয়েছিল সঙ্গে। তবে সিদ্দিক নেওয়াজ নিষেধ করে দিয়েছেন। সিদ্দিক নেওয়াজ অন্ধকার আকাশের দিকে চেয়ে বললেন, “কিছু গল্প আমাদের না জানাই ভালো। তবে সেই গল্পের রহস্যের নিকট যখন কেউ পৌঁছে যায় তখন তার রহস্য উদ্ধার না করে ফেরার উপায় থাকে না। আমি মিথ্যের চাদর দিয়ে যেই রহস্য ঢেকে রেখেছিলাম, তুমি তা সত্যিটা দিয়ে তুলে ফেলেছো। এখন পুরোটা না জানা অবধি তুমি নিজেও কভু শান্ত হবে না, শান্তি পাবে না। তাহলে শুনো, তোমার ফুফু হেতিজা ছোট থেকেই পাগলাটে ছিল। প্রথমে আমি আর তোমার দাদি রোখসানা ভেবেছিলাম ছেলেমানুষী হয়তো। বাচ্চা মানুষ সব আস্তে ধীরে ঠিক হবে। তারপর সমস্যা বাড়তে থাকল। তোমার বাবা পরাগ নেওয়াজ শান্ত স্বভাবের হলেও হেতিজা বিবৃত মস্তিষ্কের হতে শুরু করল। হেতিজার বয়স তখন পাঁচ। স্কুলে ভর্তি করা হয় তাকে। প্রথম দিনই পেন্সিল ঢুকিয়ে সহপাঠীর চোখ অন্ধ যখন করে দিয়েছিল তখনও যদি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারতাম। যার ছেলের চোখ নষ্ট হয়েছে বেচারা গরীব ছিল বলে কোনো একটা ভাবে ঝামেলা এড়াতে পেরেছিলাম। হেতিজা ছোট থেকেই দেখতাম একা একা কথা বলত। কার সঙ্গে কথা বলছো জিজ্ঞেস করতেই, কত মানুষের নাম বলত। এভাবে হেতিজা বড় হয়, তার পাপ বাড়তে থাকে আর আমরা অসহায় বাবা-মা মেয়ের ভালোর জন্য তার করা পাপ ধামাচাপা দেওয়া শুরু করি। একটা সময় পরে পাপনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করলাম। দেখলাম বিয়ের পর পরিবর্তন হয়েছে। তবে পাপন কিন্তু হেতিজার অতীতে করা কাজ গুলো সম্পর্কে জানত না। এসব খবর কেউ জানলে হেতিজাকে বিয়ে করত? সংসার ভালোই চলছিল দেখে আমরাও নিশ্চিত হই।”
“এক মিনিট, ফুফুর নাকি একজন প্রেমিক ছিল? তার সঙ্গে বিয়ে না দিয়ে অন্য আরেকজনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কারণ?”
“হেতিজার কখনোই কোনো প্রেমিক ছিলোই না। আগেই বলেছিলাম সে কল্পনা করত সারাক্ষণ। সারাদিন একা একা কথা বলত। হেতিজার ছোট থেকে লেখালেখিতে পটু ছিল। সেই দেখে তার জন্য অনেক উপন্যাসের বই কেনা হতো। ওইসব পড়তো সারাক্ষণ। যখন যেই গল্প পড়ত তাতেই ঢুকে যেত। উপন্যাসের নায়ককে কল্পনা করত, সংসার করত কিসব বলত। শেষে দেখলাম এসবে আরো পরিস্থিতি বিগড়ে যাচ্ছে তাই উপন্যাস পড়াও তার বন্ধ করি। তবে ওই যে উপন্যাসের চরিত্রের রেশ তার হয়তো কাটেনি। সেখান থেকেই কাউকে সে সারাক্ষণ কল্পনা করত প্রেমিক রূপে। তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সে ভাবতে শুরু করে উপন্যাসের সেই প্রেমিক চরিত্র তার প্রাক্তন হয়ে গেছে। তাই সংসারী মেয়ে যেমন প্রাক্তনকে ভোলার চেষ্টা করে সেও তাই করা শুরু করল। আমি বিয়ে দিয়েও মেয়েকে নিজে চিন্তায় থাকতাম, তাই হেতিজাকে ২৪ ঘন্টা নজরে রাখার ব্যবস্থা করি। তারপর একদিন জানতে পারলাম, প্রত্যুষকে নিয়ে স্কুল যাওয়ার সময় পার্কে সে একা একাই কার সঙ্গে কথা বলে। দিনকে দিন এই সমস্যা বৃদ্ধি পায়। আফসোস লেগেছিল কারণ হেতিজার অনেক চিকিৎসা করা হয়, ওকে বিদেশ থেকেও চিকিৎসা করে এনে বিয়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সমস্যা বুঝি শেষ, তারপর বুঝলাম এই সমস্যা শেষ নয় বরং নতুন করে শুরু। যা ভয় পেয়েছিলাম তার চেয়ে দ্বিগুন সমস্যা হয়। হেতিজা মনে করতে শুরু করে স্বামী পাপন তার এবং তার প্রাক্তনের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাই স্বামীকেই সে হত্যা করে।”
“কিন্তু ফুফু বলল, তার স্বামী নাকি তাকে এবং তার প্রাক্তনকে একসঙ্গে দেখেছে আর সন্দেহ করেছে? আর বুঝলাম ফুফুর সব কল্পনা কিন্তু পাপন সে তো আর ফুফুর প্রাক্তনকে দেখেনি তাহলে সে ঝগড়াবিবাদ কেন করেছে? আর প্রত্যুষকে তো ফুফু সব জায়গায় নিজের সঙ্গে করে নিয়ে যেত, যখন সে দেখেছে তার মা পার্কে কোনো মানুষের সঙ্গে নয় বরং একা একাই কথা বলছে তাহলে সে চুপ ছিল কেন? কিছু বলেনি কেন?”
“পাপন কোনো প্রাক্তনকে নিয়ে ঝগড়া করেনি। হেতিজা নিজেই সারাদিন তার কাছে প্রাক্তনকে নিয়ে আলোচনা করত। একসময় সে বিরক্ত হয়ে যায়। কোনো পুরুষই তার স্ত্রীর মুখে অন্য পুরুষের কথা সহ্য করতে পারবে না স্বাভাবিক। তাই হেতিজার ওপর সে নজর রাখতে গিয়ে আবিষ্কার করে তার সেই জটিল রোগের বিষয়। একা একা কথার বিষয়টি কারো সঙ্গে, যেই সন্ধ্যায় হেতিজা পাপনকে মেরেছিল সেই সন্ধ্যায় পাপন হেতিজাকে জিজ্ঞেস করেছিল,” তোমার কোনো সমস্যা আছে? একা একা কথা বলো কেন?” তবে হেতিজা তো কানে কেবল একটাই কথা শুনতে পায়, “তোমার প্রাক্তনকে আমি হত্যা করব।” হেতিজা ভাবছিল পাপন তাকে তার প্রাক্তনের কাছে যেতে দিবে না। তাই খুন করে ফেলে স্বামীকে। আর বাকি রইল প্রত্যুষ? তাকে যখন নেওয়াজ বাড়িতে আনি, তখন আমারও মনে একই প্রশ্ন জাগে তাই তারও পরীক্ষা করি, আফসোস আমার শেষ হয়না। কারণ হেতিজার যেই সমস্যা, বিরল রোগ ধরা পড়েছিল তাও একই রোগ ধরা পরে। হেতিজাকে নিজের কাছে আনার পর তার আবারও চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।৷ এইবার চিকিৎসা হয় দীর্ঘ সময় ধরে। এবং বাড়ি ফেরার পর সে একেবারে সুস্থ ছিল। প্রত্যুষেরও একই চিকিৎসা করতে চাই, তবে ডাক্তার জানায় এখনো প্রত্যুষের রোগটা সঠিকভাবে ধরতে পারছে না তারা, মায়ের রোগের সঙ্গে কিছু তো একটা পরিবর্তন আছে তার। তারপর তোমরা দুই-ভাই তো একসঙ্গে বড় হও চোখের সামনে। প্রত্যুষের মধ্যেও কোনো কিছু দেখতে পায়নি। ধীরে ধীরে সে বড় হয়, তুমি হলে। প্রত্যুষ প্রেম করাও শুরু করে দিলো। মাঝে তোমার বাবার মৃত্যুর তুমি এক রোখা হয়ে যাও, তোমাদের মাঝে ঝামেলা হওয়ার পর দুই ভাই আলাদা হয়ে যাও। সেই রাতের কথা রোকসানা এর আগের দিন রাতে মারা গিয়েছিল। আমার মানসিক অবস্থা তখন ভালো ছিল না। রোকসানা অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিল। তার সেবা যত্নের দায়িত্ব হেতিজার তদারকিতে ছিল। হঠাৎ ভয়ানক ভাবে তার খুন হয়।”
“খুন! দাদুর খুন হয়েছে মানে? সে না সিঁড়ি থেকে পড়ে মারা যান? আমি তো তখন বাড়িতেই ছিলাম, নিজের হাতে দাদুকে মাটি দিয়ে আসি।”
“হ্যাঁ খুনই হয়। তবে বিষয়টি আমি, মোখলেস আর খুনী ছাড়া কেউ জানত না। তুমি ট্যুরে ছিলে। বাড়ি আসতে আসতে লাশের শেষ গোসল শেষ হয়ে যায়। তাই সাদা কাফনের নিচে লাশের সঙ্গে হওয়া বহু জিনিস তোমার অজানাই থেকে যায়। তোমার দাদুর মৃত্যুর পর আমি সবচেয়ে বড় শকড হই। আজও ভাবলে কেমন শিরশির করে ওঠে গা। আমার রোকসানাকে খুন করেছে। আমি যতক্ষণে বাসায় পৌঁছাই ততক্ষণে সে মৃত ছিল। বৃদ্ধ অসুস্থ শরীর থেকে মাংস কেটে নেওয়া হয়েছিল।” সিদ্দিকের চোখে জল। কথা বলতে পারছে না ঠিক মতো করে। শরীর কেমন কাঁপছে। প্রেম তার দিকে তাকাতেই সে পুনরায় বলতে শুরু করল, “প্রত্যুষের ভয়ানক সত্তা সেদিন চোখে ধরা পড়ল।, জানতে পারলাম সে কত ভয়ানক। আসলে তার মা হেতিজাকে সবসময় রোখসানার সেবাযত্নের বিষয়ে খেয়াল রাখতে হতো। নিজের মায়ের এমন ব্যস্ততা সে মানতে না পেরে নানিকেই মেরে ফেলে। তাও আবার যেন-তেন মৃত্যু নয়।”
প্রেম একটার পর একটা ধাক্কা খাচ্ছে। প্রশ্ন করলেই এত এত বিষয় বের হয়ে আসছে যে, এখন প্রশ্ন করতেও কেমন যেন ভয় লাগছে। ” কিন্তু তুমি কি করে জানলে ওইসব প্রত্যুষের কাজ?”
“সে যখন মাংস কাটছিল তখন গিয়ে পৌঁছায় আমি। হয়তো সেদিন চুপ করে না গেলে আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ তোমাকেও প্রত্যুষ শেষ করে ফেলতো। আজকে এতোসব বলার মতো অবস্থায় আমি থাকতে পারতাম না। প্রত্যুষের হুমকির কারনের আমি রোকসানার খুনকে আড়াল করি। প্রত্যুষের আলাদা একটা গুন আছে। সে মানুষের স্বভাব বৈশিষ্ট্যের নকল করতে পারে, তার চেয়ে বড় কথা সে বাইরে থেকে নিজেকে এক ভাবে আর ভেতরে অন্যভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তারপর থেকে শুরু তার একের পর এক পাপ। তিথিকে যেদিন হত্যা করেছিল সেদিন হেতিজাও তার সঙ্গে ছিল। তাকে সাহায্য করেছে। ভেবেছিলাম হেতিজা তো সুস্থ হয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হলো না। এই বাসাতেই সবার অগোচরে প্রথমে তিথিকে নির্যাতন করা হয়। এমন না যে প্রত্যুষ কেবল তাদের মেরেছে যারা একজনকে ভালোবাসে অন্য জনকে বিয়ে করেছে। বরং কারন ছাড়াই একটা সময় ধরে সে মানুষ মারত। কেবল মাত্র মানুষের মাংসের বিরিয়ানির লোভে। সে মানুষ কম নরখাদক বেশি ছিল। সৃষ্টিকর্তার এত সুন্দর রূপের পেছনে কি ভয়ানক গল্প, চরিত্র লুকিয়ে তা প্রত্যুষকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। তিথিকে মারার পরও তাকে সে কল্পনা করেছে, প্রত্যুষ যখন যেই জায়গায় যেত তিথির শরীরের কোনো অংশ সাথে রাখত। মৃত শরীরকে সে কখনো সাজাতো, কখনো জোড়া লাগানোর চেষ্টা করত আবার কখনো মৃত দেহের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে যেত। এসব নিজের চোখে দেখা। কখনো তো দেখলাম রুমে কেউ নেই, তবে সে একা একা কথা বলছে তিথির সঙ্গে। সে কল্পনায় তিথির সঙ্গে ঘুরতে যেত, সময় কাটাতো, এমনকি শারীরিক সম্পর্কেও গিয়েছে অথচ সব তার ভ্রুম ছিল। তিথি তাকে ধোঁকা দিয়েছে এটা কেবল প্রত্যুষের কল্পনা ছিল। বাস্তবে তো তিথির বিয়েই হয়নি।”
“কি?”
“হ্যাঁ। হেতিজার ওপরে মোখলেস নজর রাখত। সেখান থেকেই সব জানা। আসলে প্রত্যুষ তিথির প্রেমে পড়ার সময় কিন্তু স্বাভাবিকই ছিল। ছেলের এই পরিবর্তন হেতিজা মেনে নিতে পারছিল না।”
“মানে?”
“মানে হচ্ছে, হেতিজা ছোট থেকেই চেয়েছিল প্রত্যুষ তার মতো হোক। প্রেমাকে নিয়ে তার কোনো আগ্রহ ছিল না। প্রেমা আজও হয়তো এত ভয়ানক সব গল্প জানে না, কিংবা জানে, আরো অনেক কিছুই জানে যা আমাদের অজানা। হেতিজাকে আমি কেবল পাপনকে খুন করার দায় থেকে বাঁচানোর জন্য ঢাকায় আনি না।”
“তাহলে?”
“সে মানুষ খুন করা শুরু করে। ছেলেকে মাংসের বিরিয়ানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলে। খুন করা, এসব পাগলের মতো আচরণ অনেকটাই বলতে পারো মায়ের থেকে শেখা প্রত্যুষের। এখানে আসার প্রথম দিকেও আমাদের বাড়ির অনেক কাজের মানুষ মারা যেত। তখন বুঝতে পারিনি এসব কার কাজ। পরে বুঝতে পারি। আস্তে আস্তে প্রত্যুষ বড় হয়, নিজেই এসবে গভীর ভাবে লিপ্ত হয়। কিন্তু তিথি তার জীবনে আসার পর আস্তে আস্তে ভালোবাসার টানে পরিবর্তন আসতে শুরু করলে হেতিজা তা মেনে নিতে পারেনা। তিথির নামে ভুল বুঝিয়ে তাকে নিজ হাতে ধরে বেঁধে সেই জবাই দেয়। যেদিন হেতিজার মাংসের বিরিয়ানি রান্না হয় সেদিন হেতিজা নিজ হাতে মসলা বেঁটে দেয়। এসব কি করে ভুলব। আমি সব জেনেও বোবার মতো পরে থাকতাম।”
“তাহলে প্রত্যুষের সঙ্গে আমার ঝামেলা হওয়ার পরও সে আমায় কেন খুন করেনি?”
“কারন সে তোমায় টোপ হিসেবে ব্যবহার করছিল। তোমার পছন্দের গান, পছন্দের কাজকর্ম, স্বভাব বৈশিষ্ট্য সব ধারণ করেছিল সে। যাতে কখনো বিপদে পড়লে তুমি ফেঁসে যেতে পারো। তোমার তৃষাকে একবার চেয়েছিলাম চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিতে। কারন যেদিন দেখলাম প্রত্যুষের নজর গেছে তৃষার ওপর সেদিন থেকেই ভয় কাজ করা শুরু করে আমার মধ্যে। আর তৃষার সঙ্গে ঘটনা যে তোমার সঙ্গে জড়িয়ে যাবে সেই ভয়েই ছিলাম। প্রত্যুষ কখনোই তৃষাকে ভালোবাসেনি, কেবল মারাই ছিল তার উদ্দেশ্য। আর হেতিজা তৃষাকে ছেলের বউ বানাতে চেয়েছিলই মূলত তৃষাকে প্রত্যুষের হালাল শিকার বানানোর জন্য। তাই আমি চেয়েছিলাম তুমি আর তৃষা যাতে দূরেই থাকো। কিন্তু ওই নরপিশাচ তো পিছু ছাড়ার তো নয়। সে ক্ষতি করার জন্য সেখানে চলেই গেছে। আমি দাদা হিসেবে ব্যর্থ প্রেম।” সিদ্দিকের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে। প্রেমের মাথাটা কেমন যেন শিরশির করছে। অচল লাগছে নিজেকে। এত কিছু তার চোখের সামনেই হলো অথচ সে কিছু জানে না। জানবে কেমন করে? জানার কোনো চেষ্টা করেছ? দিন-রাত ২৪ ঘন্টা বাইরে আড্ডা দিয়েছে, বাড়ি মানুষের খোঁজ নেয়নি। তিথির বাবা-মা হয়তো আজও মেয়ের অপেক্ষায় বসে আছে। প্রেম তার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ো গেছে। তাও শেষবার প্রত্যুষের কাছে যাবে। তার জবানবন্দিও শুনবে। দেখা যাক আর কত কাহিনি বানাতে পারে। তারপর যাবে হাসপাতালে তৃষার কাছে। প্রত্যুষ আর হেতিজার জন্য কালকের ভোর হবে অন্ধকার ছেয়ে আর নতুন সূর্য উঠবে প্রেম তৃষার জন্য। নেওয়াজ বাড়ির জন্য। আচ্ছা ওদের শাস্তি কি হবে? ফাঁসি? চাইলেই তো ওদের বাঁচানো যায় কিন্তু বাঁচানো কি উচিত হবে? প্রেম তার দাদার দিকে তাকায়। এই লোকটা কত ভুল বুঝেছে সারাটা জীবন অথচ সেও কেবল তাকে আগলে রাখার জন্য এত কষ্ট বুকে চেপে রাখল। তবে পাপের গল্প কিন্তু পাপীরাই আড়াল রাখে। প্রেম স্মিথ হেসে হঠাৎ দাদুর চোখের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “এবার তোমার নিজ সত্যের কথা বলো। তুমি সিদ্দিক নেওয়াজ এত সহজে দমে যাওয়ার মানুষ কি? কোন সত্য তোমার গল্পে রহস্য হয়ে মাটি চাপা আছে?”
সিদ্দিক নেওয়াজ একটা ঢোক গিললেন। কপাল বেয়ে ঘামের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা পড়ছে। সে থতমত খেতেই প্রেম বলল,” মজা করেছি। আর কোনো রহস্য নয়। এবার সুখের গল্প শুরু হতে চলেছে দাদু। এখনও অনেক কাজ বাকি। তোমার বংশবৃদ্ধির কাজটাও তো হাতে পরে আছে?” বলেই হাসল প্রেম।
চলবে?
( তো মাথা ঠিক আছে তো? রহস্য উন্মোচনের একাংশ কিন্তু এখনো বাকি আছে। আপাতত একটু রেস্ট করি, বিরিয়ানি রান্না করতে করতে আমি অনেক ক্লান্ত। এই সবাই বর বড় কমেন্ট না করলে সব কয়টার বিরিয়ানি রান্না করব কিন্তু 🧛♀️😾)
Share On:
TAGS: ইশরাত জাহান জেরিন, প্রেমতৃষা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৪১
-
প্রেমতৃষা সারপ্রাইজ পর্ব
-
প্রেমতৃষা পর্ব ২৮
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১১+১২
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৪৮
-
প্রেমতৃষা পর্ব ২৩+২৪
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৪৬(১ম অর্ধেক)
-
প্রেমতৃষা পর্ব ৪৩
-
প্রেমতৃষা পর্ব ১৩+১৪
-
প্রেমতৃষা পর্ব ২৭