Golpo romantic golpo প্রেমতৃষ্ণা

প্রেমতৃষা পর্ব ৪৫


প্রেমতৃষা

ইশরাতজাহানজেরিন

পর্ব_৪৫ ( রহস্য উন্মোচন পর্ব)

থানার অফিস রুমের চেয়ারে বসে আছে প্রেম। হাতে একটা মার্বেল পাথরের এ্যান্টিক জিনিস। দেয়ালের মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে আছে সে এক ধ্যানে। হাতের সেই গোল পাথরটিকে বলের মতো করে ঘুরিয়ে চলছে। হঠাৎ তার ধ্যান ভাঙতেই সে সামনে বসে থাকা লোকটিকে বলল,’সব কেমন রহস্যময় তাই না? এই মনে হচ্ছে সব শেষ, আবার মনে হচ্ছে সব শুরু।’ সামনে বসে থাকা লোকটি গুরুগম্ভীর ভঙ্গিতে তার পানে চাইলো। তারপর বলল, “প্রেম নেওয়াজ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি সাহায্য না করলে আমরা এত বড় একজন সাইকো কিলারকে কখনোই ধরতে পারতাম না। আমি আসলেই কৃতজ্ঞ। কারণ আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এত বড় রিস্ক নিয়ে এই কাজ ভুলেও করত না।” প্রেম উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ালো। দূরে মেঘে ঢাকা পাহাড় দেখা যাচ্ছে। সে ওই পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবল। হঠাৎ চিৎকার চেঁচাচেঁচির শব্দ কানে আসতেই দরজার দিকে তাকালো। সেদিকে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে একটা ডাক এলো, “আপনাকে দেখলে সাইকো আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে।” প্রেম পেছনে তাকিয়ে বলল, “আমার কিচ্ছু হবে না আদিত্য শাখাওয়াত।” প্রেম সেল নাম্বার ১০৬ এর সামনে যেতেই কেমন যেন বুকের ভেতরে মোচড় দিলো। ফুফু হেতিজা কেঁদেই চলেছেন। প্রেমকে দেখে দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বললেন, “বাবা আমার ছেলেকে বাঁচাও। তার বদলে আমায় ফাঁসি দাও, আমায় জেলে বন্দী করো। মা হিসেবে আমি এতসব সহ্য করতে পারব না।” প্রেম পেছন দিকে তাকাতেই আদিত্য চোখের ইশারা দিলো দু’জন মহিলা পুলিশকে। তারা হেতিজাকে ধরে উঠিয়ে বলল,” জলদি রুমে চলুন। আপনার এখনো জবানবন্দি দেওয়া বাকি।” হেতিজার ধস্তাধস্তির সঙ্গে পারা মুশকিল। তবুও মহিলা দু’জন তাকে টানাটানি করে অন্য রুমে নিয়ে যায়। প্রেম সেলের কাছে যেতেই দেখল সেখানে প্রত্যুষ আহাজারি করছে। বারবার বলছে তাকে যেন বের করা হয়। মুক্তি দেওয়া হয়। ওদিকে যে তিথি তার অপেক্ষায়। তাকে বিরিয়ানি রান্না না করে খাওয়ালে সে রাগ করবে। চলে যাবে অনেক দূরে, আর কখনোই ফিরে আসবে না। প্রেম কিছুক্ষণ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অতীতের এক ঝলক দেখতে পেলো। আজও তার সেইদিনের কথা মনে পড়ে। হয়তো আজকে প্রত্যুষের এই করুন পরিস্থিতির জন্য সেও কম দায়ী নয়। প্রেম নিঃশ্বাস ছেড়ে সেলে হাত রাখল। ওপাশে প্রত্যুষ চিৎকার চেঁচাচেচি করছে। ধাক্কা ধাক্কি করছে। তবে প্রেমের মস্তিষ্ক এখন অন্য কিছু ভাবছে। ভাবছে আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা। প্রত্যুষ আর প্রেমের তখন একেবারে কম বয়স। গলায় গলায় কত খাতির তাদের। তবে হঠাৎ করে প্রেম যখন বাবার পরকীয়ার কথা জানতে পারল ঠিক তখনো ততটা ভেঙে যায়নি যতটা না ভেঙে গিয়েছিল প্রত্যুষ বাবার সেই বিষয় সর্ম্পকে জানত, কিন্তু তাকে বলেনি, আড়াল করেছে। সে আমায় বলতে পারত একবার, বাবা আর রাফাকে নাকি সে আরো অনেকবার বাড়িতে ঘনিষ্ঠ অবস্থা দেখেছিল। একবার বললে কি হতো? সেই ঘটনা নিয়ে ওই যে প্রেম আর প্রত্যুষের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয় সেই সম্পর্ক আজও ঠিক হলো কই? ঝামেলা ঠিক হয়না। চলতেই থাকে। সেই ঘটনার ২ বছরের মাথায়, সব ঝামেলা দ্বন্দ্ব ভুলে একরাতে প্রত্যুষ এসেছিল প্রেমের কাছে নিজের বিপদ নিয়ে। সেদিন প্রেমের ইচ্ছে হয়নি প্রত্যুষের কথা শোনার। সেদিন রাতেই অস্ট্রেলিয়ায় ফ্লাইট ছিল প্রেমের। সে চলে যায়। একবারও জানতে আগ্রহী হয়নি প্রত্যুষ অভাগার মতো কেন তার কাছে ছুটে এসেছিল। সেদিন একবার যদি শুনতে চাইতো। ছয়মাস পর দেশে ফিরে প্রেমার মুখ থেকে টুকটাক কিছু কথা অবশ্যই শুনতে পায় প্রেম। প্রেম অনেক আগ থেকেই জানত তিথি নামক মেয়েটিকে প্রত্যুষ ভালোবাসে। এমনকি প্রেম নয় বরং নেওয়াজ বাড়ির সবাই জানত দু’জনের সম্পর্কের কথা। কতবার এই বাড়িতে এসেছে ওই মেয়ে। প্রেমকে জানায়, তিথির অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মাঝে নাকি প্রত্যুষ একবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল। এখন সে স্বাভাবিক আছে৷ অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার রাতে ওই বিষয়ে সাহায্য চাইতেই প্রত্যুষ ছুটে এসেছিল৷ তখন অবশ্য এসব শুনে প্রেমের অনেক খারাপ লেগেছিল। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পরও প্রত্যুষ প্রেমকে অনেকবার কল করেছিল। তবে জিদে, অভিমানে কল ধরেনি সে। অনেকবার ধরতে গিয়েও ধরা হয়নি। কেন যে ধরল না। বাংলাদেশ আসতে আসতে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। প্রত্যুষকে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিলো। তবে পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ততায় থাকত। তাই কখনো প্রেমের পুরোনো বিষয় গুলো নিয়ে কথা তোলাই হয়নি, অনেকবার চেয়েছিল। তবে ততক্ষণে দেখা গেল প্রত্যুষ তার থেকে দূরত্বে চলে গেছে। এখন যে আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে, তার সঙ্গে তো আগলা খাতির জমে না, আর করাও ঠিক না।

আদি হঠাৎ প্রেমের পাশে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে বলে, “একটু আগে প্রত্যুষের আস্তানার খোঁজ পাওয়া গেছে। তল্লাশি চলছে। আমিও বের হবো। যাবে তুমি?”

“কিসের আস্তানা?”

“এই যে তোমার ভাই কক্সবাজার আসার পর কোন রুমে থেকেছে, কোথায় বসে এতোসব বুদ্ধি এঁটেছে।”

“ওহ আচ্ছা। তবে আমি এখন যাব না। আমার আগে তৃষার সঙ্গে দেখা করতে হবে। হাসপাতাল থেকে শিমলার কল এসেছিল। জ্ঞান ফিরেছে তৃষার।”

“আচ্ছা তাহলে আমিও তোমার সঙ্গে যাই। জিজ্ঞেসাবাদ কত কি বাকি।”

থানার বাইরে সিদ্দিক নেওয়াজ দাঁড়িয়ে। সে প্রেমকে দেখে কিছু বলল না। তবে প্রেম জানে দাদু এসব সহ্য করতে পারছে না । কষ্ট পাচ্ছে তবে মুখে কখনো বলবে না। সে প্রেমাকে দাদুর সঙ্গে থাকতে বলে হাসপাতালে চলে গেল। ইন্টেলিজেন্স অফিসার আদিত্য শাখাওয়াতও তার বাইকের পেছনে উঠে বসল। তারা অনেক কিছু জানে, আবার অনেক কিছু আজানা। রহস্যের বেড়া জাল এখনো ধরে আছে তাদেরকে। এক এক করে সবটা এখনো উন্মোচন করতে হবে। সাইকোকে তো খুঁজে পাওয়া গেছে, তবে তার প্রাক্তন যার জন্য তার এতদূর আসা, এতসব করা সেই তিথি কে, কোথায় আছে তাকে তো এখনো জানা বাকি!
_

হাসপাতালের সাদা চাদর আর জীবাণুনাশকের গন্ধ মেশানো পরিবেশে তৃষা শুয়ে আছে। তার মুখটা ফ্যাকাশে, শরীরটায় দুর্বলতার ছাপ স্পষ্ট। ডান হাতের শিরায় সেলাইনের সূক্ষ্ম নল। বেডের পাশের চেয়ারটায় বিষণ্ণ মুখে বসে আছে তৃষার বান্ধবী শিমলা, তার চোখমুখে উদ্বেগ। একটু দূরে, জানালার ধারে, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে অংকুর। ঠিক তখনই দরজায় মৃদু শব্দ হলো। শিমলা তাকাল, “আরে, প্রেম ভাই! আসুন।”

প্রেম এগিয়ে এলো। প্রেমের সঙ্গে আদিত্যও আছে। প্রেম এসেই তৃষার বেডের কিনারায় সাবধানে বসল, আদিত্য তার হাতের ফলের ঝুড়িটা রাখল টেবিলের ওপর। প্রেম হাসিমুখে কাছে ঘেঁষতেই পিটপিট করে চাইতে থাকা তৃষার ক্লান্ত চোখ দুটি তার দিকে স্থির হলো। “কেমন লাগছে এখন” প্রেম স্নিগ্ধ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল। কথা বলতে গিয়েও যেন পারল না তৃষা। সে শুধু প্রেমকে দেখে মৃদু হাসার চেষ্টা করল। প্রেম তার ডান হাতটা, যেটায় সেলাইন চলছে না, নিজের উষ্ণ হাতের মুঠোয় আলতো করে ধরল। “চিন্তা করো না, একদম ঠিক হয়ে যাবে। আর বিপদ নেই। তুমি নিরাপদ। “

তৃষা চোখ বন্ধ করে সম্মতি জানাল। চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গেই তার দৃষ্টি সরাসরি চলে গেল প্রেমের সাথে দরজার কাছে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে। তৃষার শরীর মুহূর্তেই যেন হিম হয়ে গেল। তার পিটপিটে চোখে এক লহমায় আতঙ্কের কালো ছায়া নেমে এল। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ল, যেন সে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। এ তো সেই মুখ! সেই পরিচিত চিবুক, তীক্ষ্ণ চোখ তাকেও তো তৃষা দেখেছে। সে ফ্যাসফ্যাসে গলায় ফিসফিস করে উঠল, “উনি আমায় মারতে এসেছে?” প্রেম হতভম্ব। তৃষার হাতটা তার মুঠোয় কাঁপুনি শুরু করেছে। রক্তে যেন শীতল স্রোত বইছে তার। “কী হলো তৃষা? উনি তোমাকে বাঁচিয়েছে। একটু শান্ত হও সব বলছি।” প্রেম দ্রুত তার দিকে ঝুঁকে পড়ল। “জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন। এখন কয়টা বাজে জানো? টানা কতগুলো ঘন্টা তুমি বেহুঁশ ছিলে তা জানো?”

“কিছু জানি না আমি। কেবল জানতে চাই আপনিও কি এসবের সঙ্গে জড়িত? রাত হলে কোথায় বের হন আপনি? কার সঙ্গে দেখা করেন? কি লুকাচ্ছেন? আপনি এই লোক, প্রত্যুষ সবাই একত্রে জড়িত নন তো?”

“কুল তৃষা। আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। বিচলিত হবে না প্লিজ। শরীরের কি অবস্থা দেখেছো? “

প্রেম একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তৃষার দিকে তাকায়। তারপর নিজেকে শান্ত করে বলতে শুরু করে, “কক্সবাজারে যেদিন প্রথম আসি সেদিন থেকেই তোমার সঙ্গে এতোসব ঘটনা ঘটা শুরু হয়। মনে আছে রুম নাম্বার ১০২ এ ঘটা সেই ঘটনা? আমি বারবার বুঝিয়েছিলাম সেইসব তোমার ভ্রম। তবে বস্তুত সেইসব আসলেই সত্য ছিল। ওইদিন তুমি যখন করিডোরে বাঁচার জন্য হাতড়ে বেড়াচ্ছিলে ঠিক তখন শেষ বারের মতো যেই ছায়ামূর্তি দেখেছিলে তা ছিল ইন্টেলিজেন্স অফিসার আদিত্য শাখাওয়াতের ছায়া। সে তোমাকে মারতে নয় বরং বাঁচাতে এসেছিল। কিন্তু সে তোমার কাছে পৌঁছানোর আগেই তুমি ফারাজ এলাহীর রুমে চলে যাও৷ তাই সে আর তোমার কাছে আসেনি। তবে ১০২ নাম্বার রুমে তুমি যাকে দেখেছিলে সে ছিল প্রত্যুষ দেওয়ান। আসল কালপ্রিট। ওইদিন সে তোমায় মারতে চাইলে অবশ্যই মারতে পারত তবে ইচ্ছে করেই ছেড়ে দিয়েছিল কেন জানো? কারন সে ভয় দেখিয়ে মারতে বেশি পছন্দ করে। সেদিন তোমার কাছে আমি পৌঁছানোর আগে আমার কাছে অফিসার আদিত্য শাখাওয়াত পৌঁছায়। তার থেকে যা জানতে পারি তা জেনে আসলেই আমি অবাক হই। এই সাইকোর এই পর্যন্ত করা সবকটা খুনের বায়োডাটা আমার সামনে সে উপস্থাপন করেন। একই ধরনের খুন, আর খুনের আগে সে শিকারের ছবি তুলে দেয়ালে লাগিয়ে যায় অগ্রীম। সেদিন ওই রুমের দেয়ালে তোমার ছবি টাঙানো ছিল। আর এমন কিছু ছবি যা একেবারে কাছ থেকে তোলা ব্যক্তি ছাড়া আর কারো হওয়া সম্ভব ছিল না। দেয়ালে ছবির পাশে পরবর্তী শব্দটা বড় করে লিখে রাখা ছিল। আমি হোটেল ম্যানেজমেন্টকে বিষয়টি জানাতে বললে, আদিত্য শাখাওয়াত আমায় নিষেধ করেন। বলেন বিষয়টা গোপনে সামলে নিলেই অন্য বুদ্ধিতে সাইকোকে ধরা যাবে। কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে মানুষের মনে তৈরি না হয় তাই ওই ১০২ নাম্বার কক্ষে ঘটা কাহিনিকে কাল্পনিক বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। তোমার কাছেও এমন ভাবে উপস্থাপন করতে বলা হয় যাতে করে তুমি ভাবতে পারো এসব তোমার ভ্রম। কারণ বিষয়টা জানাজানি হলে কাজের কাজ তখন কিছুই হতো না। বরঞ্চ সব উলোটপালোট হয়ে যেত।”

“আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু আপনি রাত করে কোথায় যেতেন? ওইদিন ওই জঙ্গলে আপনি এমনি এমনি তো আর আমার পেছনে আসেননি? আপনি আগ থেকে সব জানতেন তাই না?”

“কিছুটা জানা, কিছুটা আবার অজানা বলতে পারো। মনে আছে যেদিন আমরা সমুদ্রের তীরে সবাই মিলে সময় কাটিয়েছিলাম সেদিন শেষ বেলায় তোমায় একটা চিঠি দিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে হুমকি দেওয়া কথা লেখা ছিল? ওই চিঠি কিন্তু তোমায় ইচ্ছে করেই প্রত্যুষ ওই সময় পাঠায় যখন তোমার কাছে আমি ছিলাম না। তবে আমি তখন পাশে না থাকলেও তোমার নিরাপত্তার দায়িত্বে আইনের লোকেরা ছিল। প্রতিনিয়ত তারা তোমায় নজর রাখছিল। ওই সময়ও তুমি কক্সবাজারের ভিড়ে যেই হুডি পড়া লোকটিকে দেখেছো তা হচ্ছে এই আদিত্য শাখাওয়াত। উনি তোমার যাতে বিপদ না হয় তাই নজরে রাখছিলেন। তবে একসময় সে, আমি দু’জনেই বুঝতে পারি তুমি মূলত তাকেই অপরাধী হিসেবে ধরে নিয়েছিলে। এটা নিয়েও কম সমস্যা ছিল না আমার। তবুও আদিত্যের কথায় তখনো আমি চুপ হয়ে যাই। সে কেবল একটা কথাই বলেছিল, যা হচ্ছে হতে দাও। এভাবেই আসল খুনীর কাছে জলদি পৌছাতে পারব। ওইদিন সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। তারপর ভোরে বিরাট এক ধাঁধার সমাধান করতে সকাল সকাল আদিত্যের কাছে ছুটে যাই। তবে কথা শেষ করে উঠতেই আদিত্যের কাছে খবর আসে তুমি নাকি ঝাউবনের দিকে যাচ্ছো। আমি কিছুতেই তোমাকে একা ছাড়তে পারি না। আমার সঙ্গে সেখানে আরো দু’জন অফিসার ছিল। সেইদিনও তুমি খুনীর হাত থেকে বেঁচে যাও। দেয়ালে সেদিন তোমার ছবি দেখে আমি আরো নিশ্চিত হয়ে যাই কি হতে চলেছে। এবার বলি রাতে কি কারণে ঘুমাতে পারিনি। ওইদিন বেশ কিছুক্ষণ আদিত্যের সঙ্গে কথা হয়। কথায় কথায় বলি, প্রত্যুষও এই পজিশনে জব করে। তারা একে অপরকে চেনে নাকি। কারণ আমি যতটুকু জানি প্রত্যুষ মিশনে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে সবচেয়ে বড় সত্য সামনে আসে। জানতে পারি, প্রত্যুষকে কিছুদিন আগেই নাকি চাকরি থেকে বিতারিত করে। আর তার জায়গায় আসে আদিত্য। সেদিন রাতে হেতিজা ফুফুকে জিজ্ঞেস করি পুনরায়, প্রত্যুষের বিষয়ে। সে জানায় প্রত্যুষ নাকি মিশনে আছে। বিষয়টা শুনে খটকা লাগে। আদিত্য আরো জানায়, প্রত্যুষকে অনেকদিন ধরে ওয়ার্নিং দেওয়া হচ্ছিল। সে নাকি ডিউটি ঠিক করে করত না। বিশেষ করে রাতের। তবুও মাথায় একবারও আসেনি প্রত্যুষই যে খুনী। তবে খুনীর প্রমাণ রাখার ধরন দেখে আন্দাজ তো করেছিলাম সে খুব কাছের। কারণ বেশিরভাগ জিনিসই আমার নকল করা। এই ধরো আমার পারফিউম, আমার মতো হুডি এমনকি আমার পছন্দের গানও। আমার রুমের দেয়ালে আমি ট্রাভেল করা বিভিন্ন ছবি লাগিয়ে রাখি। খুনীও একই ভাবে তাই করল। এত খটকা লাগল! তোমার কাছে বিকেলে একটা পার্সেল এসেছিল তাই না? চুল, পুতুল রাখা ছিল? ওই পার্সেল যখন লোক এসে তোমার রুমে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল তখন আমিও রুমে ঢুকতে নিয়েছিলাম। লোকটাকে আমার রুমের সামনে দাঁড়াতেই জিজ্ঞেস করলাম, হাতে কি? সে বলল, পার্সেল আছে ম্যামেম জন্য। পার্সেলটা আমি আগে হাতে নেই। বাক্সের ওপরে একটা কাগজে লেখা ছিল, “করিডোরে মাঝ রাতে দেখা হচ্ছে সুইটহার্ট, প্রেম বলছি।” ওই চিরকুট পড়ে বুঝতে বাকি রইল না খুনী আমার নাম ব্যবহার করে, আমায় খারাপ বানিয়ে তোমার কাছে পৌঁছাতে চাইছে। তাই পার্সেলের ওপর থেকে চিঠি সরিয়ে নিজের কাছে রেখে সরাসরি নিচে চলে যাই। আদিত্যেকে বিষয়টা জানাতেই সে বলল, ‘তৃষা তোমাকে যত বেশি সন্দেহ করবে ততই কাজ সহজ হয়ে যাবে। তাই আমিও ঠিক তেমন ভাবেই নিজেকে তোমার সামনে উপস্থাপন করি যাতে তুমি আমাকেই সন্দেহ করো। সব কিছুর হিসাব তোমার কাছে গড়মিল পাকিয়ে যায়। আমি যদিও তোমাকে নিয়ে রিক্স নিতে চাইনি, কিন্তু কতগুলো মেয়ের বিষয় শেষ হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতাম। আমি ভালো করেই জানতাম তুমি আমায় সন্দেহ করছো। আমি হুট করে কই যাই, কি করি জানার খুব আগ্রহ তোমার। তাই মাঝ রাতে আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাই যাতে করে তুমি আমায় অনুসরণ করো, সন্দেহের বশে আমায় ফলো করো। যা চেয়েছিলাম। ওদিকে তুমি আমার পেছনে আসো, খুনী ভেবে বসে তার ফাঁদে তুমি পা দিয়েছো। আমি মোড় ঘুরে একটা রুমে ঢুকে পড়তেই খুনী তোমায় জিম্মি করে। ভাগ্যিস তোমার ওপরে নজর রাখা হয়েছিল। তবুও সময় মতো তোমার কাছে পৌঁছাতে পারিনি তার খেসারত আমায় আজীবন ভুগিয়ে যাবে। কি অবস্থা করেছে ওই জানোয়ার তোমার।” প্রেমের চোখের কোণে তখন জল। তৃষা নিজেকেও সামলাতে পারেনি। সে উঠে বসার চেষ্টা করে। শরীরে এত ব্যথা। এত যন্ত্রণা হচ্ছে। তবুও চেষ্টা করে প্রেমকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট দেওয়ার। সে প্রেমকে বুকে জড়িয়ে ধরতেই প্রেম তৃষাকে বলল, ” কখনো কল্পনা করতে পারিনি প্রত্যুষ এই কাজ করবে। আজ পর্যন্ত কত গুলো মেয়ের প্রাণ নিয়েছে সে? কি নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। তাই তো বলি ইন্টেলিজেন্স হয়ে এখনো খুনীকে ধরতে পারছে না কেন? ধরবে কি করে যদি খুনী সে নিজেই হয়? নিজের পরিবার কেউ ধোঁকায় রেখেছে। চাকরি চলে গেছে যেখানে সেখানে সে বাসায় বলছে মিশনে গেছে? অথচ সে মিশনে না গিয়ে তৃষাকে খুন করার ষড়যন্ত্র করেছে। তৃষার অপরাধ কি?যুবরাজকে বিয়ে না করে পালিয়ে আসা? নাকি তাকে বিয়ে করার কথা দিয়ে অন্য কারো হয়ে যাওয়া?” হঠাৎ আদিত্যে এগিয়ে এলো আরো কাছে। সে তৃষাকে প্রশ্ন করল, ” প্রত্যুষ জেলে বার বার বলছিলো তিথির কথা। ওইখানে নাকি তিথিও ছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে তো আমরা কোনো মেয়েকে দেখতে পাইনি। তিথি কি আমাদের আসার আগে পালিয়েছে? সম্ভবত এই তিথি নামক মেয়েই তো তার প্রাক্তন ছিল। তার জন্যই তো প্রত্যুষ সবাইকে খুন করছে তাহলে সে যেহেতু চলে এসেছেই তবুও এসব কেন করছে প্রত্যুষ?”

তিথি নামটা শোনা মাত্রই তৃষার হঠাৎ করে আগের মতো শ্বাসকষ্ট উঠে যায়। প্যানিক অ্যার্টাক শুরু হয়। প্রেম বুঝতে পারছে না কি হয়েছে। অংকুরকে ধমকের স্বরে বিচলিত হয়ে নার্সকে ডাক দিতে বলে। তৃষাকে পানি খাইয়ে, বুকে জড়িয়ে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে আদিত্যকে বলে, “ওর অবস্থা এখন ঠিক নেই। আপনি বাকি প্রশ্ন পরে করুন। এখন একটু ওর একা থাকা দরকার।”

আদিত্য মাথা নাড়িয়ে স্বায় দিয়ে বাইরে এসে বসল। মুহূর্তেই তার ফোনে কল এলো। প্রত্যুষ এতদিন যেই বাসায় থেকেছে তা খুঁজে পাওয়া গেছে। আদিত্য সেখানে টিম পাঠিয়েছিল তদন্তের জন্য। সেখান থেকেই তদন্ত দলের সিনিয়র আহাদ কল কয়েছে। কল রিসিভ করতেই আহাদের অশান্ত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। আদিত্য জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে? কিছু পেয়েছো?”

” লাশ! বিবৃত কংকাল হয়ে যাওয়া লাশ!”

চলবে?

(আজকে অন্তত সবাই কমেন্ট করবেন। আর অবশ্যই রেসপন্স করবেন। আর দয়াকরে স্পয়লার দিবেন না।)

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply