প্রণয়েরব্যাকুলতা সাদিয়া পর্ব৫
তাজ খুব সাবধানে শাড়ির কুঁচিটা ঠিক করে দিয়ে বেড়িয়ে গেল। মৌমিতা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলো ততটা খারাপ নয়। ছেলেটার প্রতি দিন দিন যেন তার কৌতুহল বেড়েই যাচ্ছে।
লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ছে তাজ। আর তার পাশে ঘুরে ঘুরে তাকে দেখছে মৌমিতা। এভাবে কেউ কাউকে দেখলে পড়া যায়? এই মেয়ের জ্বালায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচ থেকে লাইব্রেরীতে এসেছে এই মেয়ে এখানে এসেও হাজির। শান্তি নেই কোথাও। ধাপ করে হাতের খোলা বইটা বন্ধ করে অগ্নী দৃষ্টিতে মৌমিতার দিকে তাকালো তাজ। মৌমিতা ভরকে গেল। তাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল – কি চাই তখন আমার চুল দাঁড়ি টেনেও শান্তি হয়নি এখনও আরও টানাটানির বাকি আছে?
মৌমিতা আমতা আমতা করে বলল – আসলে আমি আপনাকে ধন্যবাদ দিতে এসেছিলাম, তখন হেল্প করার জন্য।
তাজ তাচ্ছিল্য করে বলল – যাক তাহলে তোমার কৃতজ্ঞতা বোধ আছে।
- কি বলতে চাইছেন আপনি?
তাজ মৌমিতার চোখে চোখ রেখে বলল – অকৃতজ্ঞ, বজ্জাত মেয়ে।
মৌমিতা কটমট করে বলল – আগুন চোখা ড্যামনা বুড়ো আধু ভাই।
- দেখো তোমার সাথে এই মুহূর্তে আমার ঝগড়া করার মোটেই ইচ্ছে নেই।
- আপনি কি বলতে চাইছেন আমি ঝগড়া করি?
দীর্ঘশ্বাস ফেলল তাজ। এই মেয়ের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। যাই বলুক ঝগড়া লাগবেই । এতক্ষনের চুল টানাটানিতে মাথাটা বেশ ধরেছে তাজের । তাজ আর কথা না বাড়িয়ে লাইব্রেরী থেকে চলে গেল।
সন্তানের জন্য বাবা মায়ের ভালোবাসা যেন অপরিমেয়। সন্তানকে একটু চোখের আড়াল করলে যেন পাগল হয়ে যায় তারা। এই তো কয়দিন হলো মৌমিতা সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছে। একমাসও বোধহয় হয়নি। এর মধ্যে রোজ ক
সকাল বিকাল দুবেলা কথা হয়। এর মধ্যেই মৌমিতার বাবা মা এসে হাজির ঢাকায়। তার মা মেয়ের জন্য কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিচ্ছে। তাই আতিকুর রহমান ( মৌমিতার বাবা ) আর উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঢাকায় নিয়ে এসেছে।
কলেজে যায়নি আজ মৌমিতা। বাবা মায়ের সাথে সময় কাটাচ্ছে। এদিকে তাজের আজ আর কলেজে মন টিকছে না। কোথাও মৌমিতার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি সে আজ কলেজে আসেনি? এই কয়দিন মেয়েটার সাথে ঝগড়া করতে করতেও যেন মেয়েটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দুই চোখ শুধু মৌমিতাকেই খুঁজছে। রাদীফ এসে তাজের পাশে দাঁড়ালো। শান্ত কন্ঠেই বলল – সে আজ আসেনি।
হকচকিয়ে গেল তাজ। আমতা আমতা করে বলল – কককি বলছো? কে আসেনি?
- তুই যার জন্য অস্থির হচ্ছিস।
- আমি কারো জন্য অস্থির হচ্ছি না।
- সবার চোখকে ফাঁকি দিতে পারলেও আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবি না। আমি তোকে ভালোভাবেই চিনি।
- ভুল চেনো তুমি।
- সময়ই বলে দিবে কে ভুল কে সঠিক।
চলে যাচ্ছিল রাদীফ হঠাৎ তাদের প্রশ্নে থমকে দাঁড়ালো।
- সে আজ আসেনি কেন?
মুচকি হাসলো রাদীফ, বলল – তার বাবা মা এসেছে।
- তার সাথে কলেজে না আসার সম্পর্ক কি? বাবা মা এসেছে বলেই কলেজ ফাঁকি দিতে হবে?
শেষের কথাটা একটু জোরেই বলল তাজ। শরীর দুলিয়ে হাসলো রাদীফ । কৌতুকের সুরে বলল – কেমন রহস্যজনক একটা গন্ধ পাচ্ছি।
তাজ আমতা আমতা করে বলল – এভাবে কলেজ ফাঁকি দিলে রেজাল্ট খারাপ হবে তাই বলছিলাম আর কিছু না।
- হ্যা তাই তো রেজাল্ট খারাপ হবে। তোর তো দেখছি মৌমিতাকে নিয়ে অনেক চিন্তা।
- বাজে কথা বন্ধ করো তো বলে গটগট করে চলে গেল তাজ।
রাদীফ আবার শরীর দুলিয়ে হেসে ফেললো।
বসন্ত প্রায় শেষের দিকে। ভাবসা গরমে তেজী হয়ে উঠেছে চারপাশ। গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা দিচ্ছে। মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। রাস্তার পাশের ডোবাগুলো চৈত্রে শুকিয়ে গেছে। অবলা প্রানীদের যেন পানির হাহাকার লেগেছে। মৌমিতা আজ কলেজে এসেছে। এ কয়দিন বাবা মা আসায় কলেজে আসেনি। কয়েকটা দিন পর কলেজে এসে বেশ ভালো লাগছে তার। চারদিকে ছাত্র ছাত্রীদের সমাগম। চার দেয়াল থেকে যেন মুক্তি মিলে এই কলেজে এসেই। ঢাকার রাস্তাঘাট তেমন একটা চিনে না মৌমিতা তাই তেমন বাসার বাইরে বের হওয়া হয় না তার। এই কলেজ বাসা করেই কেটে যায় তার দিন। এ কয়দিন বাবা মা আসায় একটু ভালোই সময় কেটেছে তার। আনমনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হাঁটছিল মৌমিতা। হঠাৎ হাতে টান পড়লো তার, হকচকিয়ে উঠলো মৌমিতা। চকিত হয়ে তাকাতেই নজরে এলো তাজ তার হাত টেনে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার। হাত ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিল তাজের কাছ থেকে। এক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল –
- কি সমস্যা এভাবে হাত ধরেছিলেন কেন?
এখন কি বলবে তাজ। সে তো দূর থেকে মৌমিতাকে দেখেই ছুটে এসেছে। এই কয়দিন ওকে না দেখতে পেয়ে বড্ড অস্থির হয়ে ছিল সে। হঠাৎ মৌমিতাকে আজ দেখতে পেয়েই যেন ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল তাজের। কোনো কিছু বিবেচনা না করেই সামনে এসে দাড়িয়েছিল মৌমিতার। কিন্তু তার ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিল যে সে তাজকে না দেখেই চলে যাচ্ছিলো। তখনই তাজ মৌমিতার হাতটা টেনে ধরেছিল।
তাজ আমতা আমতা করে বলল – আমার শার্ট, শার্টটা দেও আমার।
মেজাজ বিগড়ে গেল মৌমিতার। শার্ট নিবে না নিবে না করে সেদিন কত ভাব দেখালো আর আজ শার্ট শার্ট করছে। বিরক্তি নিয়ে বলল – আপনার শার্ট নেই আমার কাছে।
- নেই মানে কি? এতটা দায়িত্বহীন কিভাবে হলে তুমি? একজন তোমাকে তোমার বিপদের সময় শার্টটা দিয়ে সাহায্য করলো আর তুমি তার শার্টটা ফেরত দিলে না।
- পাগল আপনি? সেদিন এই শার্ট শার্ট করে এতকিছু হয়ে গেল আমাকে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হলো আর আজ এসে বলছেন আপনার শার্ট চাই। ওয়াহ কেয়া সিন হে।
- এত কথা না বলে বললেই হয় আমার শার্টটা তুমি ফেরত দিতে চাও না।
- শার্টটা আমার আছে নেই। সেদিন আপনার সামনে রেখেই তো বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলাম তারপর আপনি হাসপাতালে নিয়ে গেলেন । তারপর আপনার শার্ট কোথায় গেছে আমি জানি না।
- আমিও কতকিছু জানি না। যেভাবেই হোক ঐ শার্ট আমার লাগবেই যেখান থেকে পারো এনে দিবে বলে মৌমিতাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই কেটে পড়লো। মৌমিতা ভ্যাবলার মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এখন ঐ শার্ট মৌমিতা কোথা থেকে আনবে। কি একটা ঝামেলা। এই লোকটাই একটা ঝামেলার কারখানা। যখনই দেখা হয় তখনই একটা না একটা ঝামেলায় পড়তেই হয়।
পুরো কলেজ, লাইব্রেরী সব জায়গায় তাজের শার্ট খুঁজেছে মৌমিতা কিন্তু কোথাও পায়নি। পাবে কিভাবে শার্ট তো তাজের কাছে। সেদিন হাসপাতাল থেকে ফিরে লাইব্রেরী থেকে শার্টটা বাসায় নিয়ে গিয়েছিল সে। কেন যেন শার্টটা ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়নি ওর।
শার্ট খুঁজতে খুঁজতে মৌমিতার অবস্থা নাজেহাল। শেষে আর উপায় না পেয়ে বুদ্ধি করে মার্কেটে গিয়ে অবিকল তাজের শার্টের মতো একটা শার্ট কিনে নিয়ে এলো। নতুন কেনা সেটা যেন ধরা না পড়ে তাই এগে ঘুচিমুচি করে কতক্ষন বালিশের নিচে রাখলো। তারপর শার্টের উপর উঠে কতক্ষন লাফালো, শার্টে ইচ্ছে করে কাঁদা লাগিয়ে সাবান দিয়ে ঘষে মেজে ধুয়ে বিশ্ব জয়ের একটা হাসি দিল মৌমিতা।
পরের দিন সকাল সকাল উঠে গতকালকের কেনা শার্টটা একটা শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে কলেজে চলে এলো মৌমিতা। এসেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে চলে গেল। কারন তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি যে সব সময় বইয়ে মুখ গুজে ঐ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই বসে থাকে। মৌমিতা হাতের ব্যাগটা তাজের সামনে ধরলো। ভ্রু কুঁচকে তাকলো তাজ।
মুখে হাসির রেখা টেনে মৌমিতা বলল – এই নিন আপনার শার্ট।
কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আরও কুঁচকে এলো তাজের। শার্ট তো ওর নিজের কাছে। সেই শার্ট আবার মৌমিতা কোথায় পেল। ব্যাগটা হাতে নিল তাজ, খুলে দেখলো নাহ এক শার্টই তো। দেখে তো নতুন কেনাও মনে হচ্ছে না। হাতে শার্টটা নিয়ে আনমনেই তাজ বলল – আমার শার্ট তো আমার কাছে তাহলে এই শার্ট তুমি পেলে কোথায়?
কথাটা বলেই থতমত খেয়ে গেল তাজ। মৌমিতার কানে যেন কথাটা বজ্রপাতের ন্যায় আঘাত করলো। এই মুহূর্তে কানে শুধু একটা কথাই বাজছে ” আমার শার্ট তো আমার কাছে । ” রাগে কটমটিয়ে তাজের দিকে তাকালো মৌমিতা। ঢোক গিলল তাজ। সে যে মস্ত বড় একটা ভুল করে ফেলেছে বুঝতে আর বাকি নেই। একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল – এ এ এটাই আমার শার্ট, আমার পছন্দের শার্ট। আমি যাচ্ছি তাহলে বলেই পা বাড়ালো।
পিছন থেকে তাজের শার্টের কলার টেনে ধরলো মৌমিতা। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – শার্ট যদি আপনার কাছেই থাকে তাহলে আমাকে এত দৌড় কেন করালেন?
তাজ আমতা আমতা করে বলল – আমার একটু তাড়া আছে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।
- আমি যেটা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন আগে। আমাকে কেন এত দৌড় করালেন আপনি?
- দৌড় কোথায় করালাম। তুমি তো হেঁটে হেঁটেই আমার শার্ট খুঁজছিলে , আমি তো একবারও তোমাকে দৌড়াতে দেখিনি।
রাগে শরীর রি রি করে উঠলো মৌমিতার। নিজের রাগ কমাতে সজোরে কামড়ে ধরলো তাজের হাত। চিৎকার করে উঠল তাজ। মৌমিতার মুখ থেকে হাত ছাড়ানোর জন্য রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। মিনিট খানেক পর মৌমিতা নিজেই তাজের হাতটা ছেড়ে দিল। তেড়ে গেল তাজ। রাগী কন্ঠে বলল – সমস্যা কি এভাবে কামড়ালে কেন?
- কামড়িয়েছি বেশ করেছি আরও কামড়াবো।
চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩