প্রণয়েরব্যাকুলতা সাদিয়া পর্ব৪
বসন্তের কোকিলের কুহু ডাকে মুখরিত চারদিক। গাছে গাছে নেচে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখি। নবীনদের বরনে সজ্জিত হয়েছে পুরো কলেজ। মৌমিতা আর নীরা কেবলই কলেজে প্রবেশ করছে । দুজনেই লাল শাড়ি জড়িয়েছে শরীরে। অনুষ্ঠানে সব মেয়েরাই লাল শাড়ি আর ছেলেরা সবুজ পাঞ্জাবি পড়েছে। এ যেন বাংলাদেশের পতাকার রং ধারণ করেছে। যেখানে যেখানে ছেলে মেয়ে জোড়ায় জোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে সেখানে তো দেখেই মনে হচ্ছে চলতি ফিরতি কিছু পতাকা দাঁড়িয়ে আছে। মৌমিতা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিক দেখছে আর মনে হচ্ছে না এটা কোনো নবীন বরনের উৎসব মনে হচ্ছে এটা ২৬ শে মার্চ অথবা ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান। চারদিকে চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ নজর গেল এক সুদর্শন যুবকের দিকে। এত মানুষের ভীড়ে খুব সহজেই তাকে আলাদা করা যাচ্ছে। কলেজের সব নারী পুরুষ লাল আর সবুজ রঙে সাজলেও এই ভদ্রলোক নীল রঙের একটা শার্ট পড়েছে। ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার। বিরক্তি নিয়ে যুবকের মুখের দিকে তাকাতেই বিরক্তি উবে গেল। কারন এই বিরক্তির কোনো মানে নেই এই লোকের দ্বারা সবই সম্ভব। দ্যা গ্রেট আবরার তাজ আগুন চোখা শয়তান এই একটাই পিস আছে এই পৃথিবীতে যে সবসময় পৃথিবীর উল্টো পথে চলে, শুধু চলে না দৌড়ায়।
কৃষ্ণচূড়া গাছটায় আজ লাল রঙা ফুলে ফুলে ভরে গেছে। সেও যেন আজ নতুন এক রূপ ধারন করেছে। মৌমিতার শখ জেগেছে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে এই লাল শাড়ি আর খোলা চুলে কতগুলো ছবি তুলবে। নীরাকে টেনে নিয়ে গেল কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে। কিন্তু সেখানে গিয়েই মেজাজটা চড়ে গেল। এই ড্যামনা বুড়োটা এখানে বইয়ে মুখ গুজে বসে আছে। বই পড়ার জন্য লাইব্রেরী আছে সেখানে না গিয়ে পড়তে আসে এই কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে। ধপ ধপ করে হেঁটে দাঁড়ালো তাজের সামনে। তাজ একবারও তাকালো না মৌমিতার দিকে সে এখনও বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মেজাজ আরও বিগড়ে যাচ্ছে মৌমিতার। রেগে বলল – এই মিষ্টার আগুন চোখা শয়তান এখান থেকে উঠুন, আমি ছবি তুলবো।
তাজ বই থেকে মুখ তুলে এক পলক মৌমিতার দিকে তাকালো কিছু না বলে আবার বইয়ে মুখ গুজলো। শাড়ি পরিহিত কোনো নারীর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকাটা উঠিৎ নয় বলে মনে করে তাজ। শাড়ি পরিহিত নারীরা পুরুষদের প্রেমে ফেলতে যেন এক্সপার্ট। আর এই মুহূর্তে মৌমিতার দিকে এক নজর তাকিয়েই যেন চোখ জ্বলসে যাচ্ছিল তার।
মৌমিতা আবার বলল – কি হলো কথা শুনছেন না আপনি। উঠুন আমি ছবি তুলবো।
তাজ বইয়ে মুখ গুজেই বলল – উঠবো না আমি। এখানে আমি আগে বসেছি। ছবি তোলার হলে অন্য কোথাও গিয়ে তুলুন এখানে নয়।
মৌমিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল – আমি তো এখানেই ছবি তুলবো দেখি কে আটকায় আমাকে।
ধপ করে বসে পড়লো তাজের পাশে। নীরাকে বলল – এই নীরা ছবি তোল তো আমার। আর অবশ্যই এই আধু ভাইকে নিয়ে তুলবি। ফেসবুকে ছবিটা পোস্ট করে ক্যাপশন দেব ” একবিংশ শতাব্দীর আধু ভাই “
তাজ কটমট করে মৌমিতার দিকে তাকালো। যখনই দেখা হয় তখনই এই মেয়েটা ওকে উল্টা পাল্টা নামে ডাকবে, মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করে। রাগ যেন ধরছে না তাজের। ইচ্ছে তো করছে মেয়েটাকে তুলে আছাড় মারতে। হঠাৎ এক হাতে মৌমিতার মাথার চুল টেনে ধরলো তাজ। আকর্ষিক ঘটনায় হকচকিয়ে গেল মৌমিতা যখনই বুঝলো ব্যাপারটা কি হচ্ছে সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে তাদের চুল টেনে ধরলো মৌমিতা। তাজও বা পিছিয়ে থাকবে কেন সেও অন্য হাতটা দিয়েও মৌমিতার চুল টেনে ধরলো।
মৌমিতা ব্যথায় আহ আর্তনাদ করে উঠলো, আরও জোরে টেনে ধরলো তাজের চুল।
- এই বজ্জাত মেয়ে চুল ছাড়ুন, লাগছে আমার।
- আপনি আগে ছাড়ুন। আপনি কেন ধরেছেন আমার চুল? ব্যাটা আগুন চোখা শয়তান একটা।
- ধরেছি বেশ করেছি আরও ধরবো।
- তাহলে আমিও ধরেছি বেশ করেছি বলেই জোরে টান মারলো তাদের চুল ধরে।
- আহহহহ তবে রে বলে বলে তাজও মৌমিতার চুল আরও জোরে টেনে ধরলো।
মৌমিতা এবার একটা শয়তানি হাসি দিয়ে তাজের মুখের দিকে তাকালো। ফর্সা গালে তাজের চাপ দাড়ি। মোটামোটি একটু বড়ই আঙ্গুল দিয়ে ধরা যাবে। মৌমিতা একহাতে তাজের চুল আরেক হাতে তাদের দাড়ি টেনে ধরলো।
- দাঁড়ি ছাড়ুন লাগছে আমার।
- লাগার জন্যই তো ধরেছি।
- এটা কিন্তু চিটিং আপনি আমার দাঁড়ি ধরতে পারেন না।
- যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে হারাতে সব জায়েজ আছে আধু ভাই।
- একদম আমাকে আজে বাজে নামে ডাকবেন না বলে দিলাম।
- ডাকবো একশ বার ডাকবো কি করবেন কি?
ইতমধ্যে আশে পাশে ছোট খাটো একটা জটলা পেকে গেছে। উৎসুক জনতা বেশ উৎসাহ নিয়ে চুলোচুলি দেখছে। পুরো কলেজেও এর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে থার্ড ইয়ারের বদমেজাজি আবরার তাজ ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়ের সাথে চুলোচুলি করছে। তাজ আবার পুরো কলেজ তার বদমেজাজি স্বভাবের জন্য বেশ বিখ্যাত। কলেজের অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীরা তার মেজাজকে একটু ভয় পায়। সবাই তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে, সে নিজেও কারো সাথে মিশে না। উৎসুক জনতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কে জিতবে। ইতমধ্যে মেয়েরা সব জোট গঠন করেছে মৌমিতা জিতবে তারা রীতিমত মৌমিতা মৌমিতা বলে স্লোগান শুরু করেছে। ছেলেরাও কম যায় কিসে তারাও তাজ তাজ বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে।
চুলোচুলির ঘটনা রাদীফের কানে পৌঁছতেই ছুটে এলো সে। পুরো পরিস্থিতি দেখে বিস্ময়ে থ হয়ে গেছে। যে ছেলেকে কেউ একটু ছুঁয়ে দিলে পুরো বাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে সব ফার্নিচার গুলোকে শহীদ বানিয়ে দেয় সে আজ একটা মেয়ের সাথে এভাবে চুলোচুলি করছে, অবিশ্বাস্য। রাদীফকে দেখেই তার কাছে ছুটে এলো নীরা। অস্থির হয়ে বলল – স্যার ওদের থামান।
হুঁশ ফিরল রাদীফের। দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরলো তাজকে।
- কাকাই ছাড়ো আমাকে আজ আমি এই বজ্জাত মেয়েটার সব চুল ছিঁড়ে ফেলবো।
নীরাও মৌমিতাকে টেনে ধরলো।
- ছাড় নীরা আজ আমি এই আগুন চোখা শয়তানটার সব দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলবো।
- এসো ছিঁড়ে দেখো। আমার বা* ছিড়বে তুমি।
- ছিঃ কি অশ্লীল আপনি আধু ভাই। যাই হোক আপনি কেন আমায় তুমি করে বললেন?
থতমত খেয়ে গেল তাজ। সত্যিই তো ও মৌমিতাকে তুমি করে বলেছে। ঝগড়ায় ঝগড়ায় কখন যে আপনি থেকে তুমি হয়ে গেছে খেয়ালই করেনি। কিন্তু এখন ঝগড়ার সময়। কিছুতেই ঝগড়ায় হারা যাবে না। যে করে হোক জিততে হবে।
- বলেছি একশো বার বলবো। তুমি আমার ছোট তুমি করে বলতেই পারি।
- হ্যা হ্যা আপনি তো আধু ভাই।
অনেক কষ্টে নীরা আর রাদীফ মিলে মৌমিতা আর তাজের চুলোচুলি ছাড়ালো। দুজনের অবস্থাই পাগল প্রায়, চুলের উপর দিয়ে মনে হচ্ছে কোনো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে।
হঠাৎই সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাজ দৌড়ে এসে মৌমিতাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল। পারলে যেন বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। পুরুষালী বলিষ্ঠ দুই হাত দিয়ে চেপে সবার চোখের আড়াল করে রেখেছে মৌমিতার কোমড়। আকর্ষিক ঘটনায় হকচকিয়ে উঠলো মৌমিতা। আশেপাশের সবাই হতবাক। এই কলেজে ভর্তি হয়েছে পর থেকে এই বদমেজাজি তাজের আশেপাশে কোনো মেয়েকে দেখেনি কেউ। কোনো মেয়ে না জেনে যদি কখনও তাজের সৌন্দর্য দেখে তাদের কাছে ঘেঁষতে চেয়েছে তাহলে চড় থাপ্পর খেয়ে ফিরতে হয়েছে। আর সেই ছেলে কিনা পুরো কলেজর সামনে একটা মেয়েকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে। বিষ্ময়ে থ হয়ে গেছে রাদীফ আর নীরা। মৌমিতাও এতক্ষন চুপ ছিল। আকর্ষিক ঘটনায় সে কোনো এক ঘোরে চলে গিয়েছিল। ঘোর কাটতেই হাত পা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছে তাজের কাছ থেকে ছোটার জন্য। সবাইকে আরেক দফা অবাক করে দিয়ে এবার তাজ নিজের কাঁধে তুলে নিল মৌমিতাকে। কেউ কিছু বলার আগেই হনহন করে হাঁটা ধরলো।
মৌমিতা তাজের পিঠে কিল ঘুষি মারছে আর বলছে – নিচে নামান আমাকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? অসভ্য লোক একটা। এভাবে একটা মেয়েকে কাঁধে তুলে নিয়েছেন লজ্জা করে না?
তাজ মৌমিতাকে কাঁধে নিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে হেঁটে চলেছে। সে যেন মৌমিতার কথা শুনতেই পায়নি।
কিছু সময় পর একটা ফাঁকা রুমে এসে নামিয়ে দিল মৌমিতাকে। মৌমিতা কিছু বলার আগেই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল তাজ, শান্ত কন্ঠে বলল – তোমার কোমড় থেকে শাড়ি সরে গেছে পেট দেখা যাচ্ছে, বুক থেকেও আঁচল সরে গেছে শাড়িটা ঠিক করে নেও।
তাজের কন্ঠস্বর শান্ত কিন্তু কথাগুলো যেন ভয়ংকর। এই ভয়ংকর লজ্জাজনক কথাগুলো কর্নকুহরে পৌঁছাতেই গাল দুটো লাল হয়ে গেল মৌমিতার। লজ্জায় কান দুটো ঝা ঝা করছে।
- আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি তোমার হলে বেরিয়ে এসো বলে দরজাটা টেনে দিয়ে বাইরে দাঁড়ালো তাজ।
মৌমিতা শাড়িটা ঠিক করার সেই কখন থেকে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেই না। বাসায় যখন শাড়িটা পড়েছিল তখন কুঁচিটা নীরা ধরেছিল। তখন চুলোচুলিতে কুঁচিটাও এলোমেলো হয়ে গেছে। কুঁচিটা কেউ না ধরলে ঠিকও করতে পারছে না। এই জন্যই মৌমিতার মাঝে মাঝে মনে হয় ” শাড়ির কুচি ধরার জন্য হলেও একজন তুমি চাই । ” কিন্তু সে সিঙ্গেল , পিওর সিঙ্গেল।
দরজাটা খুলে শুধু মাথা টুকু বের করে তাকালো মৌমিতা।
- শুনছেন……
- হয়েছে তোমার?
- একটু নীরাকে ডেকে দিবেন?
- কল করো ওকে।
- আমার মোবাইলটা ওর কাছেই।
- কি কাজে লাগবে নীরাকে?
মৌমিতা আমতা আমতা করে বলল – না মানে শাড়ির কুঁচিটা একটু ধরতে হতো।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকালো তাজ। বসে পড়লো মৌমিতার পায়ের কাছে। হাত দুটো উঁচু করে মৌমিতার শাড়ির কুঁচিটা ধরতেই সরে গেল মৌমিতা।
- কি করছেন কি?
তাজ ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো – শাড়ির কুচি ঠিক করছি।
চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৭