#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_৩৯ (শেষ পর্ব )
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
তাজ অশান্ত হয়ে বলল – আমি।
ডাক্তার শিরিন হাসিমুখে বললেন – Congratulations মিস্টার তাজ। আপনি বাবা হতে চলেছেন। আপনার স্ত্রী প্রেগন্যান্ট।
তাজ যেন থমকে গেল। সে তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে বাবা হতে চলেছে। কেউ তাকে বাবা বাবা বলে ডাকবে। ছোট ছোট পায়ে তার সাথে হেঁটে বেড়াবে। ছোট ছোট হাতে আর আঙুল ধরে হেঁটে বেড়াবে। মনের মধ্যে শীতলতা ছেয়ে যাচ্ছে তার। ডাক্তার শিরিন একটু সাবধানী কন্ঠে বললেন – তবে আপনার স্ত্রীর প্রেগন্যান্সিতে একটু সমস্যা আছে। শরীর দূর্বল উনার তার মধ্যে আজকের ঘটনায় মানসিক এবং শারীরিক চাপ পড়েছে বেশ। খাওয়া দাওয়া বোধহয় ঠিকভাবে করে না রক্তশূন্যতা রয়েছে কিছুটা। খেয়াল রাখবেন উনার দিকে, পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন। উনার যথেষ্ঠ যত্ম নিতে হবে না হয় ডেলিভারির সময় সমস্যা হতে পারে।
তাজ মন দিয়ে ডাক্তার শিড়িনের কথা শুনলো। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রস্থান করলো তাজ। মৌমিতার হুশ ফিরেছে কিছুক্ষণ হলো। তাজ ধীর পায়ে মৌমিতার পাশে বসলো ইশারায় নার্সদের একটু বেড়িয়ে যেতে বলল রুম থেকে। শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো মৌমিতার দিকে মেয়েটার মুখটা কেমন চুপসে গেছে। নাহ এবার ঐ হীরা বেগম নামক ডায়নীর একটা গতি করতে হবে। আলতোভাবে হাত রাখলো মৌমিতার পেটে। একটু ঝুঁকে ঠোঁট ছোঁয়ালো সেখানে। মৌমিতা উঠে বসলো এতক্ষন শুয়েই ছিল সে। তাজের চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে, ভরকে গেল মৌমিতা।
মৌমিতা অস্থির হয়ে শুধালো – কি হয়েছে কাঁদছো কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার?
তাজ আলতোভাবে নিজের দুই হাতের মধ্যে মৌমিতার দুই গাল নিল। নরম কন্ঠে বলল – কোথাও কষ্ট হচ্ছে না আমার উল্টো ভীষণ আনন্দ হচ্ছে আমার।
মৌমিতা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো তাজের দিকে। তাজ মৌমিতার পেটে হাত দিয়ে বলল – জানো ডাক্তার বলেছে আমি নাকি বাবা হতে চলেছি। তোমার এখানে ছোট্ট একটা জীবন বেড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। সে আমার আর তোমার অংশ।
মৌমিতা চমকে গেল। চকিত দৃষ্টিতে একবার নিজের পেটের দিকে তাকালো। নিজের অজান্তেই পেটে হাত চলে গেল তার। চোখ দুটো ভরে এলো খুশিতে। আবেগী কন্ঠে বলল – সত্যি বলছো আমি মা হতে চলেছি? তুমি সত্যি বলছো?
তাজ মাথা ঝাঁকালো। মৌমিতা ঝাঁপিয়ে পড়লো পড়লো তাজের বুকে। দুই হাতে তাজকে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে।
_______________________________
মৌমিতাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। সাদিক চৌধুরীকেও তাজ এই বাড়িতেই নিয়ে এসেছে। একসময় তাজ আর রাদীফ শুধু দুইজন থাকতো এই বাড়িতে। যখন রাদীফ থাকতো না তখন একদম একা হয়ে যেত তাজ। কত রাত কেটেছে তার অন্ধকারে নির্ঘুমভাবে। আর এখন ভরপুর এই বাড়ি । মৌমিতা, তাজ, জাহানারা বেগম, মাহিম, সাদিক চৌধুরী, রাদীফ, আফিয়াকেও তাজ এই বাড়িতে এনে রেখেছে তার উপর কিছু দিন পর রাদীফ আবার বিয়ে করে মৌমিতাকে নিয়ে আসবে এই বাড়িতে, তাজ আর মৌমিতার কোল জুড়েও নতুন সদস্য আসছে ভরপুর সংসার। বাড়ির আনাচে কানাচে হইহই রইরই।
হীরা বেগমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। হীরা বেগমের বিরুদ্ধে ছোট বেলা থেকে তাজের উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার, মৌমিতাকে মেরে ফেলার চেষ্টা , সাদিক চৌধুরীকে সম্পত্তির জন্য মানসিক অত্যাচার করা সহ কয়েকটি মামলা করেছে তাজ। নয়না গা ঢাকা দিয়েছে। সে হীরা বেগমের সব কুকর্মের সঙ্গী না হলেও কিছু কিছু কুকর্মের সঙ্গী ছিল। তাই সে কেটে পড়েছে আগেই।
___________________________________
কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে প্রাকৃতি।বিন্দু বিন্দু শিশির জমেছে ঘাসের বুকে। মাঘ মাসের শীতল আবহাওয়া চারদিকে। মৌমিতার ৫ মাস চলছে। পেটটা উঁচু হয়ে উঠেছে। আগের থেকে বেশ মোটা হয়েছে মৌমিতা। হাঁটতে চলতে কষ্ট হয় । তার বেশ যত্ম নিচ্ছে জাহানারা বেগম এবং নীরা। মাত্র দুই মাস আগুই রাদীফকে বিয়ে করে এ বাড়িতে এসেছে নীরা। বিয়েটা অনেকটা ঘরোয়া পদ্ধতিতেই হয়েছে। আত্মীয় স্বজন ছাড়া তেমন কেউ ছিল না। যদিও শুধু নীরার আত্মীয় স্বজনরাই উপস্থিত ছিল বিয়েতে রাদীফের আত্মীয় ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। রাদীফ চায়নি যারা তার খারাপ সময় তার পাশে ছিল না তারা তার খুশির সময় থাকুক।
তাজের তো কথাই নেই সে মৌমিতাকে চোখে হারায়। কলা বাগানে গিয়ে খুঁজে খুঁজে জমজ কলা এনে মৌমিতাকে খাওয়াচ্ছে সে। মোট কথা হলো তার জমজ বাচ্চা চাই। বছর বছর তার জমজ বাচ্চা লাগবে। মৌমিতাও কিছু বলছে না। মুখ বুঝে মেনে নিচ্ছে তাজের সব অত্যাচার। এইগুলো করে তাজ যদি খুশি থাকে তাহলে সেও খুশি। তাজ এখন প্রান খুলে হাসে। মাঝে মাঝে মৌমিতার উঁচু পেটের কাছে মুখ নিয়ে কথা বলে। কতশত কথা তার, কত প্ল্যানিং। মৌমিতা ঠোঁট টিপে হাসে শুধু। সন্তান হওয়ার খুশিতে তাও যেন বাচ্চা বনে গেছে।
______________________________________
দেখতে দেখতে কেটে গেল ৬ টি মাস। মৌমিতা আর তাজের ঘর আলো করে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের আগমন ঘটেছে দুই মাস আগেই। মেয়ের নাম রেখেছে আয়রা । মেয়েকে পেয়ে পৃথিবীর সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গেছে সে। তাজ যতক্ষন বাসায় থাকে ততক্ষণ মেয়ের কিছুই করতে হয় না মৌমিতাকে। মেয়ের ডায়াপার চেঞ্জ করা থেকে শুরু করে সবটাই তাজ করে। রাতে কেঁদে উঠলে মৌমিতাকে ঘুমাতে বলে মেয়েকে নিয়ে বসে থাকে সে। সারারাত ধরে গল্প করে বাপ মেয়ে। মেয়েটাও হয়েছে একদম বাবার নেওটা। বাবার কোলে গেলেই শান্ত সে। অফিস থেকে বাসায় ফিরেই তাজ সবার প্রথমে কোলে নেয় মেয়েকে। ২ মাসের মেয়ে বাবার কাছে বুরবুর করে কতশত নালিশ করে। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় মৌমিতা। বাবা অফিস থেকে ফিরলে এই মেয়ে আর মাকে চিনেই না।
তবে একটা বিষয়ে ভীষণ হতাশ তাজ। এত এত যমজ কলা খাইয়েও সে জমজ বাচ্চার বাবা হতে পারলো না। এবার তাজ হাত ধুইয়ে নেমেছে যমজ বাচ্চা নিয়েই ছাড়বে। আগের বার মৌমিতা প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর তাকে যমজ কলা খাইয়েছে তাই হয়তো মৌমিতার যমজ বাচ্চা হয়নি এবার তাই আগে ভাগেই মৌমিতাকে যমজ কলা খাওয়াচ্ছে রোজ। যমজ বাচ্চার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। মাঝে মাঝে মৌমিতা কটমট করে তাকায় তাজের দিকে কিন্তু তাজের ওসবে পাত্তা দেওয়ার সময় নেই তার যমজ বাচ্চা চাই। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আবারও প্রেগন্যান্ট মৌমিতা। শুধু মৌমিতা নয় এবার মৌমিতার সাথে নীরাও প্রেগন্যান্ট। দুই বান্ধবীর একসাথে বাচ্চা হবে। দু’জনেই খুশি তারা। বাড়িতে একটা খুশির আমেজ। সবচেয়ে খুশি তাজ। সে নিয়মিত চেকাপে নিয়ে যাচ্ছে মৌমিতাকে সাথে রোজ তো যমজ কলা আছেই। প্রথমবারে কিছু না বললেও এবারে অতিষ্ঠ মৌমিতা। মাঝে মাঝে রাগে বেশ কিছুক্ষণ ঝেড়ে দেয় তবে তাজ তার সিদ্ধান্তে অটুট।
____________________________________
দেখতে দেখতে কেটে গেল নয়টা মাস। নীরার গত ১৫ দিন আগে ফুটফুটে একটা ছেলে সন্তান হয়েছে। আয়রার সাথে নাম মিলিয়ে নাম রেখেছে আয়াশ। আয়রা এখন গুটি গুটি হাঁটতে পারে। বাবার পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে সবসময়। আধো আধো বুলি ফুটেছে মুখে। মৌমিতার ডেলিভারির ডেট ছিল আজ। তাজকে আবারও হতাশ করে আবারও এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে মৌমিতা। তাজ এবার মনে প্রানে মেনেছে এসব যমজ কলায় কিছু হয় না যার যমজ বাচ্চা হওয়ার এমনিতেই হয়। এক কন্যা হওয়ায় তাজ যে অখুশি তা কিন্তু নয় সে বেশ খুশি। দুই কন্যাকে নিয়েই সারাদিন খুনসুটিতে মেতে থাকে সে তার মৌমিতা মুগ্ধ নয়নে বাবা মেয়েদের খুনসুটি দেখে।
আমার হৃদয়ের সকল ব্যাকুলতা শুধু তোমায় নিয়ে
শুনতে কি পাও তুমি প্রণয়নী?
বুঝতে কি পারো আমার ব্যাকুলতা?
তোমার প্রণয়ের ব্যাকুলতা যে গ্রাস করেছে আমায়
বাজেভাবে আক্রান্ত হয়েছি তোমার রোগে।
আসক্ত হয়েছি তোমার নেশায়।
যে নেশা কাটবে না, কখনও কাটবে না।
বেড়ে যাবে আজীবন
– কলমে : সাদিয়া
( সমাপ্ত )
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৭