#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_৩৪
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
ছোটখাটো রুম মৌমিতার। মধ্যবিত্তদের ভাড়া বাসায় সচরাচর এমনই রুম হয়। একটা খাট, একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা পড়ার টেবিল, একটা আলমারি রেখে আর জায়গা নেই রুমে। তাজকে বিছানায় ঘুমাতে দিয়ে যে সে মেঝেতে ঘুমাবে সে জায়গা নেই। আর বাইরে যাওয়ার উপায়ও নেই। বাইরে গেলেই জাহানারা বেগম আবার ঠেলেঠুলে রুমে পাঠিয়ে দিবেন। শেষে আর কোনো উপায় না পেয়ে এক বিছানায়ই শুয়ে পড়েছে মৌমিতা আর তাজ। তবে তাদের দুজনের মধ্যে ভারত বাংলাদেশের বর্ডার করে রাখা হয়েছে একটা বড় সাইজের কোল বালিশ দিয়ে। মৌমিতা মুখ ঘুরিয়ে তাজের দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে। তাজ শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। ঘুম আসছে না কিছুতেই। এতদিন পর বউকে এত কাছে পেয়েও বউ আর তার মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই কোলবালিশটা। মাঝে মাঝে তাজ অসহায় চোখে কোলবালিশটার দিকে তাকাচ্ছে। ভাগ্যিস কোলবালিশটার প্রান নেই, নেই বুঝ ক্ষমতা। যদি তার বুঝ ক্ষমতা থাকতো তবে এতক্ষন তাজের এই অসহায় দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে নিজেই উঠে যেত। তবে তাজের এই অসহায় দৃষ্টি গলাতে সক্ষম হচ্ছে না মৌমিতার পাষান হৃদয়ের। মিনিট পনেরো এপাশ ওপাশ করে বিছানায় উঠে বসলো তাজ। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দিল মৌমিতার পিঠে। মৌমিতা কোনো সাড়া দিল না সে এখানও অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। তাজ আবার তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দিল মৌমিতার পিঠে, সাথে বলল – বউ ও বউ….
মৌমিতা ফিরে তাকালো। বিরক্তি কন্ঠে বলল – কি হয়েছে?
তাজ মাঝখানের কোল বালিশটা দেখিয়ে বলল – এই ভারত বাংলাদেশের বর্ডারটা সরিয়ে দেওয়া যায় না?
মৌমিতা বিরক্তি নিয়েই বলল – না।
মৌমিতা আবার মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো। তাজ আবার তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা মারলো মৌমিতাকে, বলল – বউ ও বউ?
মৌমিতা আবার ফিরে তাকালো। কটমট করে বলল – আবার কি হয়েছে?
– শোনো বউ
– কি?
– নাটক সিনেমার মতো আমাদের একটা বাচ্চা হতে পারতো না। তুমি আমার থেকে আলাদা হওয়ার পর তোমার একটা বাচ্চা হবে তারপর আমি তোমাকে খুঁজে পাবো। নিজেদের বাচ্চার দরুন আমরা আবার এক হয়ে যাব। বিষয়টা এমন হলে কিন্তু বেশ হতো।
মৌমিতা বিরক্ত হচ্ছে বেশ। এই রাতে বারবার খুচে খুচে কিসব অদ্ভুত কথা বলছে। লোকটা ইদানিং কথা বলছে বড্ড। মৌমিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলল – একা একা বাচ্চা কি আমি বানিয়ে আনবো নাকি?
তাজ বুঝতে পারলো মৌমিতার কথার মানে। মুখে একটু লজ্জালু ভাব এনে বলল – কেন দেড় বছর আগে সেই রাতের কথা মনে নেই তোমার? সেদিনের জন্য অন্তত আমাদের একটা বাচ্চা হলেও হতে পারতো তাই না।
মৌমিতার এবার রাগ উঠছে রীতিমত। মৌমিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল – প্র’টে’ক** নিলে বাচ্চা কি আকাশ থেকে পড়বে।
– ওহ তাই তো। ঠিক আছে আজ তাহলে কাছে এসো প্রমিস আজ কোনো প্রটেক** নেব না।
মৌমিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল – তাজের বাচ্চা।
– আমি তাজ শুরু তাজ। আমার কোনো বাচ্চা নেই তুমিই হতে দিচ্ছো না।
উঠে বসলো মৌমিতা। লোকটা বড্ড ঠোঁটকাটা হয়ে গেছে। এইসব অসভ্য মার্কা কথা বলতে একটুও কি আটকাচ্ছে না তার মুখে। অবশ্যই আটকাচ্ছে না তাহলে কি আর এভাবে বলতে পারতো? মৌমিতা তাজের গলা টিপে দেওয়ার ভঙ্গিতে হাত উঁচিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল – ঐ মুখ থেকে আর একটা শব্দ বের করলে একদম গলা টিপে দেব।
মৌমিতার উঁচিয়ে রাখা হাত দুটো ধরে মৌমিতাকে নিজের বুকের উপর নিয়ে শুয়ে পড়লো তাজ। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মৌমিতাকে। সে বাজেভাবে আটকা পড়ে গেছে তাজের বাহুডোরে। তাজের ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি। মৌমিতা প্রানপন চেষ্টা করছে তাজের বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর কিন্তু পারছে না কিছুতেই। হাজার হলেও ও মেয়ে মানুষ এমন এক শক্ত পোক্ত পুরুষের শক্তির সাথে পেরে ওঠে নাকি? মৌমিতা কপট রাগ দেখিয়ে বলল – ছাড়ুন , ছাড়ুন আমাকে।
– ছাড়ার জন্য তো ধরিনি। আর কেঁচোর মতো এত মোড়ামোড়ি করছো কেন শান্ত হয়ে থাকো না। কতদিন পর তোমাকে একটু কাছে পেয়েছি বলো তো।
– ছাড়ুন আমাকে।
– না ছাড়বো না। তুমি জানো না তোমার মধ্যেই আমার প্রশান্তি। দেড়টা বছর তোমাকে একটাবার এই বুকে নেওয়ার জন্য কতটা ছটফট করেছি তুমি বোঝো না?
মৌমিতার ছটফট থেমে গেল। আলতোভাবে মাথা ছোয়ালো তাজের বুকে। তাজ পরম যত্মে মৌমিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া শুরু করলো। মৌমিতা ধীর কন্ঠে বলল – দেখুন আপনি চলে যান এখান থেকে। না আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করতে পারবো আর না আর কখনও ভালোবাসতে পারবো।
মৌমিতার কথার মাঝেই থামিয়ে দিল তাজ, বলল – সুসসসস চুপ। খুব রোমান্টিক মুডে আছি। এসব উল্টো পাল্টা কথা বলে মুডটা নষ্ট করে দিও না তো।
__________________________________
সকালের স্নিগ্ধ রোদ গাছপালার ফাঁকা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। মৃদু বাতাস বইছে গাছে গাছে। পাখিরা খাবারের খোঁজে বেড়িয়েছে। ব্যস্ত নগরী ব্যস্ত হওয়া শুরু করেছে। যানবাহন, চায়ের দোকান, হোটেলের টুং টুং আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ঘুম ভেঙেই তাজ আবিষ্কার করলো তার বুকের উপর গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে মৌমিতা। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠল এক চিলতে হাসি। ঠোঁট ছোঁয়ালো মৌমিতার চুলের ভিতরে। মৃদু স্বরে ডাকলো – মৌ মৌ
মৌমিতা উঠলো না। একবার নড়ে উঠে আবার তাজের গলা জড়িয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিল। তাজ হাত বুলিয়ে দিল মৌমিতা নরম চুলের মধ্যে, আবার মৃদু স্বরে ডাকলো – মৌ ওঠো, সকাল হয়ে গেছে।
মৌমিতা ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল – আর একটু ঘুমাতে দেও না মা।
মৌমিতার ঘুমু ঘুমু কন্ঠই যেন তাজের ঘোর লাগাতে যথেষ্ট। সে বারবার আসক্ত হয়েছে মৌমিতার ঘুমু ঘুমু কন্ঠের নেশায়। বারবার প্রেমে পড়েছে মৌমিতার ঘুমন্ত মায়াভরা মুখশ্রীর উপর। তাজ ঘোর লাগা কন্ঠে বলল – এভাবে আমার নেশা ধরিয়ে দিও না বউ ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেললে তবে কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবে না।
ঘুমের মধ্যে মায়ের কন্ঠ না পেয়ে তার জায়গায় পুরুষালী কন্ঠস্বর পেয়ে তাজের বুক থেকে মাথা তুলে তাকালো মৌমিতা। ঘুমু ঘুমু চোখে তাজের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। মনে পড়লো কাল রাতের কথা। চট করে উঠে বসে পড়লো সে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল – কয়টা বেজেছে?
– সাড়ে সাতটা।
কিছু বলল না মৌমিতা। নেমে পড়লো বিছানা থেকে । লম্বা লম্বা পা ফেলে ঢুকে গেল ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে ।
____________________________________
সোডিয়ামের কৃত্রিম হলুদ, সবুজ, লাল আলোয় ঝিকিমিকি ঝিকিমিকি করছে পুরো বাড়ি। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বলে কথা। বেশ জাঁকজমক করেই পালন করা হচ্ছে সাফওয়ানের গায়ে হলুদ। আর হবেই বা না কেন? সাফওয়ান তার বাবা মায়ের একটা মাত্র সন্তান। একমাত্র সন্তানের বিয়েতে কোনো রকম কমতি রাখতে চান না তার বাবা মা। মধ্যবিত্তদের তুলনায় বেশ জমকালো আয়োজন করা হয়েছে সাফওয়ানের বিয়েতে। মৌমিতা একটা হলুদ শাড়ি পড়েছে। শাড়িটা অবশ্য তাজের সেদিনের শপিং – এ কিনে দেওয়া। যদিও মৌমিতা মোটেই এই শাড়ি পড়তে চায়নি তবে মায়ের জোরাজুরির কাছে হার মেনে শাড়িটা গায়ে জড়িয়েছে। শাড়ির সাথে মিলিয়ে হালকা সেজেছে। তেমন কোনো গহনা জড়ায়নি শরীরে শুধুমাত্র কান দুটোতে ফুলের দুটো কানের দুল চড়িয়েছে, চুলগুলো খোঁপা করে রেখেছে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়েছে। এতেই যেন মৌমিতার রূপ উপচে পড়ছে। মৌমিতা সেজেগুজে রুম থেকে বেড়িয়ে আসতেই তাজ আবার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল রুমের ভিতর। হাতের ছোট্ট প্যাকেটটি খুলে দু মুঠো হলুদ কাঁচের চুড়ি বেড় করে সযত্মে পড়িয়ে দিল মৌমিতার হাতে। মৌমিতার চোখ চেখে আঙুলে করে একটা কাজল এনে লাগিয়ে দিল মৌমিতার কানের গোড়ায়, বলল – আমার সুন্দরী বউটার কারো নজর যেন না লাগে।
ভেংচি কাটলো মৌমিতা। চোখ মেলে ভালো করে তাকালো তাজের দিকে। তাজও হলুদ একটা পাঞ্জাবি জড়িয়েছে নিজের বলিষ্ঠ শক্তপোক্ত শরীরে। ফর্সা শরীরে হলুদের ছোঁয়া নতুন করে নজর কারলো মৌমিতার। সে যেন চোখ ফেরাতে পারছে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাজের দিকে। দুষ্ট হাসি হাসলো তাজ। ফিসফিস করে বলল – এত কি দেখছো? গভীর রাতে দেখো এখন হলো ওদিকে দেরী হয়ে যাচ্ছে।
নজর ফিরিয়ে নিল মৌমিতা । লজ্জায় গাল দুটো তার লাল হয়ে গেছে। লোকটা সবসময় ওকে লজ্জায় ফেলে। মুখের কথা বার্তার তো নেই কোনো শ্রী। যখন যা মুখে আসে বলে দেয়। নিজেকে শক্ত করলো মৌমিতা। চোখ গরম করে তাকালো তাজের দিকে, বলল – এখানে এসেছেন ভালো কথা। আমার বাড়িতে আমার রুমে থাকেন তাও ভালো কথা ওখানে গিয়ে একদম আমার আশে পাশে ঘুরঘুর করবেন না। আমার থেকে দশ হাত দূরে থাকবেন।
তাজ উপহাসের সুরে বলল – কাল রাতের আঁধারে সারারাত বউ আমার বুকটাকে বালিশ বানিয়ে ঘুমিয়ে এখন দিনের আলোয় পাল্টি খাচ্ছে।
কটমট করে তাকালো মৌমিতা, চিবিয়ে চিবিয়ে বলল – আমি কি আপনার বুকে শু’তে চেয়েছি না নাকি আপনিই তো জোর করে নিয়েছেন।
– আমার বউ আমি জোর করে নিতেই পারি তুমিও আবার জোর করে সরে যাবে আমার বুককে বালিশ বানিয়ে ঘুমাবে কেন? শক্তি নেই তোমার শরীরে । কথা বলার সময় তো মনে হয় এক একটা কথায় দুই মন করে শক্তি।
মৌমিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তাজের দিকে। কথায় আবার শক্তি কিভাবে আসে। এই তার ছেড়া লোকের সাথে কথা বলে কোনো কাজ নেই। শুধু শুধু কথায় কথা বাড়বে আর কিছুই নয়। মৌমিতা হনহন করে বেড়িয়ে গেল। তাজ পিছন থেকে কিছুটা গলা চড়িয়ে বলল – বউ আমার ভীষণ সুন্দরী তার উপর আবার আমাকে পাত্তা দেয় না। অবশ্যই সবসময় বউয়ের সাথে চিপকে থাকতে হবে । বলা তো যায় না কখন আবার কে আমার বউ চুরি করে নেয়। তাছাড়া বউয়ের মনও তো জয় করতে আমাকে। বউয়ের পাত্তা পেতে হবে।
লজ্জায় কান ঝা ঝা করছে মৌমিতার। বাড়িতে মা আছে ছোট ভাই আছে। তাদের সামনে এসব কি কথা? লোকটা কি বিদেশে চিকিৎসা করতে গিয়ে লজ্জা শরমের বলি চড়িয়ে এসেছে নাকি? ছিঃ ছিঃ মা ভাইয়ের সামনে মুখ দেখাবে কি করে মৌমিতা।
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৪