প্রণয়েরব্যাকুলতা সাদিয়া পর্ব৩
রুমে দম মেরে বসে আছে তাজ। বৃষ্টি এখনও পুরোপুরি থামেনি। একটু আগের ঘটনা স্মৃতিচারণ করছে আর ঢোক গিলছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ ওকে কেউ ছুঁয়েছে বলে একটুও রাগ লাগছে না। ভাঙচুরও করছে না। উল্টো মনের মধ্যে প্রশান্তি লাগছে।
🌸 ( একটু আগে ) 🌸
নিস্তব্ধ, নির্জন জায়গায়ই তাজের বাড়ি। এই ব্যস্ত শহরের কোলাহল এখানে পৌছায় না। চারদিকে একটু বেশিই গাছগাছালির কারনে রাস্তা থেকে ওর বাড়িটা ভালোভাবে দেখা যায় না। প্রতিদিন সকাল হয় তার প্রাকৃতির সাথে। শহরের যানযট, কোলাহল, ব্যস্তটা, ভীরের থেকে তার প্রশান্তি মিলে এই প্রাকৃতির কাছে। তাই এই স্থানেই তার বাড়িটা নির্মাণ করা।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি হাতে অসময়ের এই ঝুম বৃষ্টি উপভোগ করছিল তাজ। চারপাশ দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ পড়লো রাস্তার দিকে। একটা মেয়ে এই বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েটার মুখটা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। এক পলক দেখাতেই মেয়েটার প্রতি মায়া হচ্ছে খুব। একবার ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ছাতাটা দিয়ে আসতে আরেকবার ইচ্ছে করছে না। বেশ কিছুক্ষণ দেনামনায় ভুগে শেষমেশ ছাতাটা নিয়েই গেল মেয়েটার কাছে।
কথায়ই বলে অসময়ের বৃষ্টি অসুস্থতা নিয়ে আসে। আর সেখানে কাক ভেজা ভিজেছিল মৌমিতা। সারাদিন রাত এখন তার হাঁচি কাশিতেই পাড় হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করছে নাকটাই কেটে ফেলে দিতে। উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের মুখমন্ডলে যেন নাকটা ফুলে ফেঁপে টমেটোর মতো রূপ ধারণ করেছে। সকাল থেকে মৌমিতা একের পর এক হাঁচি দিচ্ছে আর মৌমিতা সেই হাঁচি গুলো গুনছে। এই নিয়ে ৯৭ টা হাঁচি দিয়েছে। আর তিনটা হলেই সেঞ্চুরি। মাথাটাও ভার হয়ে আছে জ্বর আসবে হয়তো।
অসুস্থতা নিয়েও কলেজে এসেছে মৌমিতা উদ্দেশ্য তাজের শার্টটা ফেরত দেওয়া। একটা অপরিচিত ছেলের শার্ট তাও আবার তার থাপ্পরদাতা তার শার্টের কোনো জায়গা নেই মৌমিতার বাসায়।
কলেজে এসে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাজের দেখা পায়নি মৌমিতা। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে লাইব্রেরীতে ঢুকলো সে। সরা কলেজ খুঁজে এলো তার দেখা নেই সে লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ছে। তবুও শেষমেশ কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে পেয়েছে বলে সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো মৌমিতা। এগিয়ে গেল তাজের কাছে। টেবিলের উপর একটা শপিং ব্যাগ রাখলো। তাজ ফিরেও তাকালো না। সে এখনও বই পড়ছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে মৌমিতার। কিন্তু তাজ তো পাত্তাই দিচ্ছে না। এবার অধৈর্য্য হয়ে বলল – এই যে আপনার শার্ট।
তাজ বইয়ের দিকে তাকিয়েই ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিল – কারো ব্যবহার করা জিনিস আমি ব্যবহার করি না।
এবার বেশ মেজাজ গরম হচ্ছে মৌমিতার। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এত কষ্ট করে শার্টটা ফেরত দিতে এসেছে সে আর এই লোক কিনা এখন শার্ট নিবে না, ভাব নিচ্ছে? তুই শার্ট নিবি না ভালো কথা যখন শার্টটা দিয়েছিলি তখন বলে দিতি। মৌমিতা রেগে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – আমার ব্যবহার করা শার্ট পড়বেন না তার মানে আপনি শার্ট নিবেন না?
মুখের সামনের বইটা বন্ধ করলো তাজ, শান্ত কন্ঠে বলল – সন্দেহ আছে কোনো?
- তাহলে আমি এত কষ্ট করে শার্টটা ধুয়ে শুকিয়েছি কেন?
- আমি কি ধুতে বলেছি নাকি?
- আগুন চোখা শয়তান কোথাকার
তাজ উঠে দাঁড়ালো, দাঁতে দাঁত চেপে বলল – কি বললে? আমার নাম তাজ, আবরার তাজ।
- তাজ হোক না ফাজ হোক তাতে আমি কি করবো? নাচবো নাকি? মে নাগিন নাগিন….
- হোয়াট দ্যা হেল, কোন ইয়ার?
- ফার্স্ট ইয়ার।
- আমি থার্ড ইয়ার। সিনিয়রদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?
- কচুর সিনিয়র। বড়জোর ২ বছরের বড় , দুই এক বছরের বড়রা আজকাল সিনিয়র হয় না।
- আমার বয়স কত জানো তুমি? ক্লাস গ্যাপ গেছে তাই থার্ড ইয়ার না হয় এখন মাস্টার্সে থাকতাম।
- ওহ আপনি তাহলে আদু ভাই।
- ইউ….
- ইউ কি বলুন বলুন
হঠাৎ ঝাপসা হয়ে এলো মৌমিতার চোখের সামনে। মাথাটা কেমন ঘুরছে। বলে পড়লো তাজের বুকে। হকচকিয়ে উঠলো তাজ। জ্ঞান হারিয়েছে মেয়েটা। বাহু ধরে কয়েকবার জাঁকালো হুঁশ ফিরছে না। জ্বরে মেয়েটার শরীর পুড়ে যাচ্ছে। রাগ উঠছে তাজের। এই মেয়েটাকে এই শরীরে কলেজে কে আসতে বলেছে। মৌমিতাকে কোলে তুলে নিল তাজ। রাদীফকে একটা কল লাগিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
প্রায় এক ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরেছে মৌমিতার। চোখ পিটপিট করে খুলে আবার বন্ধ করে নিল চোখ দুটো। ধীরে ধীরে চোখ খুলতেই চমকে উঠে বসলো। হাতে টান পড়লো। পাশে তাকিয়ে দেখে হাতে সেলাইন লাগানো। আশে পাশে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলো ও হাসপাতালে। ওর বেডের পাশে দুটো টুলে বসে আছে তাজ আর রাদীফ। মৌমিতার জ্ঞান ফিরতেই রাদীফ ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল – এখন কেমন লাগছে মৌমিতা?
- জ্বি স্যার এখন একটু ভালো লাগছে।
রাদীফের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তাজ। এই মৌমিতাটা কে বোঝার চেষ্টা করছে। অবশেষে বুঝতে পারলো এই মেয়েটার নামই মৌমিতা। গত কয়েকদিন এই মেয়েটার সাথে এত ইনসিডেন্ট হলেও মেয়েটার নামটা অজানা ছিল তার।
- আমার কি হয়েছিল স্যার , আমি এখানে কেন?
তাজ ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো – আপনি নাগিন নাগিন ড্যান্স দিতে দিতে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর আপনার ঐ ময়দার বস্তার মতো শরীরটা কোলে নিয়ে আমি হাসপাতালে এসেছি, অসহ্য।
- একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি মোটেও ভারী নই।
- নাহ আপনি তো ভারী না , আপনি রীতিমত একটা ছোট খাট জলহস্তী।
- এই কি বললেন আমি জলহস্তী? তাহলে আপনি তো হাতি।
এই দুই জনের ঝগড়া দেখে শিহরিত রাদীফ। তাজকে সে কখনও এভাবে কারো সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে দেখেনি সে। দুই জনের ঝগড়ার মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকলো নীরা । ছুটে গেল মৌমিতার কাছে। অস্থির কন্ঠে শুধালো – এখন কি অবস্থা?
মলিন হাসলো মৌমিতা, বলল – এই তো ভালো আছি। তুই এত অস্থির হস না।
- অস্থির হচ্ছি কি সাধে এই অবস্থায় তোকে বারবার বলেছি কলেজে যাওয়ার দরকার নেই দরকার নেই তবুও লাফাতে লাফাতে চলে গেলি। তোর কিছু হয়ে গেলে আন্টিকে আমি কি জবাব দেব ?
- এত অস্থির হবে না ও এখন ভালো আছে।
পুরুষালী কন্ঠ শুনে পাশে তাকালো নীরা। দুজন সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। রাদীফকে দেখেই হৃদয়ে ঘন্টি বাজা শুরু করে দিয়েছে তার। মৌমিতার সাথে কথা বলায় এত মগ্ন ছিল যে পাশে খেয়ালই করেনি সে। কিন্তু এখন বেশ লজ্জা লাগছে। কেবিনে মৌমিতা ছাড়াও আরও দুইজন জল জ্যান্ত মানুষ যে দাঁড়িয়ে আছে সেই খেয়াল না করে কিভাবে পারলো নীরা। মাথা নিচু করে বলল – স্যরি আমি আপনাদের দেখিনি।
রাদীফ হাসিমুখে উত্তর দিল – ইটস ওকে।
বিরক্ত লাগছে তাজের। হাসপাতালের ফিনাইলের গন্ধ সে একদম সহ্য করতে পারে না তবুও এতক্ষন নাক মুখ আটকে বসে ছিল এখানে। রাদীফ বারবার চলে যেতে বললেও সে যায়নি। কেন যেন মেয়েটিকে একা রেখে যেতে মন সায় দেয়নি তার। এখন তো নীরা চলে এসেছে, এখন যাওয়াই যায়। রাদীফের দিকে তাকিয়ে বলল – এখন তো উনার পরিচিত মানুষ চলেই এসেছে, আমারা এখন তাহলে চলে যাই কাকাই।
মৌমিতা অবাক হয়ে বলল – কাকাই?
রাদীফ ঠোঁট প্রশস্ত করে একটা হাসি দিয়ে বলল – হ্যা আমরা চাচা ভাইপো।
- আপনার যে এমন একজন ড্যামনা বুড়ো ভাইপো আছে বোঝাই যায় না। আপনাকে খুবই ইয়ং লাগে।
ভ্রু কুঁচকে এলো তাজের। রাগ তরতর করে মাথায় চড়ে বসলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – কি বললেন আমি ড্যামনা বুড়ো?
ভেংচি কাটলো মৌমিতা, ভাবলেশহীন ভাবে বলল – তা নয়তো কি? শুধু কি ড্যামনা বুড়ো সাথে আদুভাইও।
- দেখলে কাকাই কি বললো এই বজ্জাত মেয়েটা আমি নাকি ড্যামনা বুড়ো আবার আদু ভাই।
- এহহহ না পেরে এখন কাকার কাছে বিচার দিচ্ছে। বাচ্চা পোলাপাইন।
- মুখ সামলে কথা বলবেন না হয় মুখ কিন্তু ভেঙ্গে দেব।
- আসছে আমার মুখ ভাঙতে আসুন দেখি কার গায়ে কত জোর। বলে হাতা গোটাতে লাগলো মৌমিতা।
- দেখা যাক তাহলে বলে তাজও শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে গেল মৌমিতার দিকে। অবস্থা বেকায়দা, এই মুহূর্তে তাজকে এখান থেকে সরাতে হবে না হয় ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। রাদীফ টেনে নিয়ে গেল তাজকে। এখানে তাজ থাকা মানেই বিপদ। তাজ তো কিছুতেই যাবে না কিন্তু রাদীফও নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাকে যেতেই হলো রাদীফের সাথে। তবে যাওয়ার আগে মৌমিতাকে ওয়ার্নিং দিয়ে গেল – দেখে নেব।
মৌমিতাও বলল – আমি জানি আমি সুন্দরী তাই বলে আপনি এভাবে বারবার দেখবেন?
নীরা মুখ চেপে ধরলো মৌমিতার। এই মেয়েটা কখন কি বলে কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। শুধু বয়সই বেড়েছে, বুদ্ধিতে এখনও বাচ্চাই রয়ে গেল।
চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৩