#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_২৯
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
সকালের নাস্তা খেয়েই সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে তাজ আর রাদীফ। নাস্তা বলতে রাদীফ একা একাই খেয়েছে তাজ কিচ্ছুটি মুখে দেয়নি। সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়েছে। কিন্তু মৌমিতা? সে কোথায়? সুনামগঞ্জ একটা জেলা শহর। এত বড় শহরে কোথায় খুঁজবে মৌমিতাকে? তবুও যেখানে যেখানে সম্ভব হয় খুজেছে তাকে কোথাও পায়নি।
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে তাজ আর রাদীফ উদ্দেশ্য দুপুরের খাবার খাওয়া যদিও এখন সময়টা বিকাল। তাজ খাচ্ছে না শুধু খাবার নেড়েচেড়ে দেখছে।
হঠাৎ খাবার রেখে রাদীফের দিকে তাকালো তাজ। শান্ত কন্ঠে বলল – তুমি বলেছিলে না ডাক্তার এরিক আমাকে সুস্থ্য করে দিতে পারবে? আমি সুস্থ্য হতে চাই কাকাই।
– তা বললেই তো হবে না। তার জন্য আমাদের লন্ডনে মেতে হবে। ডাক্তার এরিক তো লন্ডনে রয়েছে।
– তুমি তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের লন্ডনে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। আমাকে সুস্থ্য হতে হবে তারপর আমার বউকে খুঁজে বের করতে হবে।
সবকিছু গুছিয়ে লন্ডনে যেতে যেতে প্রায় ১ মাস সময় লেগেছে। এই একমাস হন্যে হয়ে পাগলের মতো মৌমিতাকে খুঁজেছে তাজ কিন্তু কোথাও খোঁজ পায়নি। গতকাল তাজ আর রাদীফ। আজ থেকেই তাজের চিকিৎসা শুরু হবে। ডাক্তার এরিকের তত্ত্বাবধায়নেই চলবে তাজের চিকিৎসা।
রৌদ্রজ্জ্বল দিন। মাথার উপর খা খা করে জ্বলছে সূর্যটা। লন্ডনের সূর্যটা যেন লন্ডনে স্বাগত জানাচ্ছে তাজকে।
ডাক্তার এরিকের চেম্বারে বসে আছে তাজ আর রাদীফ। কিছু টেস্ট করানো হয়েছিল তাজকে। সেই রিপোর্টগুই বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ডাক্তার এরিক। বয়স বোধহয় চল্লিশের কোঠায় পড়েছে এই শেতাঙ্গ ডাক্তারের। অতিরিক্ত ধবধবে ফর্সা ডাক্তার এরিক। চেহারায় ছাপ নেই বয়সের। মুখ দেখে মনে হয় ২৫ বছরের তাগড়া যুবক সে। শারিরীক কাঠামো তেমন। চোখে চিকন প্রেমের চশমা ঝুলছে। ক্ষনে ক্ষনে অস্থির হয়ে উঠছে তাজ। অস্থির কন্ঠেই তাজ শুধালো – কি এত দেখছেন ডাক্তার? আমার তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে দেশে ফিরতে হবে। দেশে ফিরে আমার বউকে খুঁজে বের করতে হবে। তাড়াতাড়ি আমাকে সুস্থ্য করে দিন না ডাক্তার।
ডাক্তার এরিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তাজের দিকে। তাকাবেই না কেন? সে জাত গতভাবেই এজন্য ইংরেজ। এই বাংলা শব্দগুলো তো উচ্চারনেই দাঁত ভেঙে যাবে আর তো অর্থ বোঝা। তাজ বোধহয় বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। সে নিজের বলা বাংলা কথাগুলো ইংরেজিতে বলার উদ্যেগ নিতেই তাজ থামিয়ে দিল। ডাক্তার এরিকের দিকে ইশারা করে বলল – আপনি আপনার কাজ করুন।
ডাক্তর এরিক আর মাথা না ঘামিয়ে আবার রিপোর্ট দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
হাসপাতালের চার দেওয়ালের মাঝেই দিন কাটছে তাজের। মৌমিতার কথা খুব মনে পড়ে। কেমন আছে সে? আচ্ছা তার কি মনে পড়ে তাজকে? হয়তো মনে পড়ে না। মনে পড়লে তো অবশ্যই ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতো। আচ্ছা মৌমিতা কি জানে তাজ দেশে নেই লন্ডনে চলে এসেছে।
_________________________________
লন্ডনে এখন বসন্তকাল। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে চারদিক। লন্ডনের বসন্তকালটা বাংলাদেশের থেকে আলাদা। কিছুটা নয় বরং ব্যাপক আলাদা। পথের ধারের গাছগুলোতে ফুটেছে চেরি ফুল। ক্ষনে ক্ষনে ঝড়ে পড়ছে ফুলগুলো। প্রাকৃতিতে যেন প্রেম লেগেছে। নতুন রূপে সেজেছে তারা। চারদিকে সুখ সুখ অনুভুতির মধ্যেও সুখ নেই শুধু একজন মানবের মনে। হাসপাতালের জানালা থেকে বিষন্ন মনে বাহিরে তাকিয়ে আছে তাজ। চোখে মুখে তার বিষাদের ছায়া, বুকে তার বিচ্ছেদের যন্ত্রনা। কাউকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকুলতা। আচ্ছা প্রাকৃতি কি বোঝে না তাজের মনের আকুলতা। যদি বুঝেই থাকতো তবে এত সুন্দর সাজে সেজেছে কেন তারা? এত সুন্দর বর্নীল বসন্তকেও তাজের যেন তিক্ত লাগছে, ভীষণ বিরক্ত লাগছে। প্রাকৃতির এত সৌন্দর্য দেখার মন মানসিকতা যে তাজের নেই। তাজ প্রতি ক্ষনে প্রহর গুনছে কবে সে সুস্থ্য হবে কবে দেশে ফিরতে পারবে। কবে সে আমার ফিরে পাবে তার প্রেয়শীকে? এক সাথে ঘর বাঁধবে ভালোবাসার ঘর। একে অপরের পাশে থাকবে চিরটা কাল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল তাজ। জানালার পাশ থেকে সরে গেল নিঃশব্দে। বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা বের করলো। মোবাইল ঘেঁটে মৌমিতার কতগুলো হাস্যজ্জ্বল ছবি বের করলো। করুন কন্ঠে বলল – আমি না হয় একটা ভুল করেছিলাম তুমি আমাকে বোঝাতে, সামনে থেকে শাস্তি দিতে তবুও কেন চলে গেলে আমাকে ছেড়ে? কেন দিলে এমন বিচ্ছেদের করুন যন্ত্রনা?
একটু থামলো তাজ, আবার বলল – জানো তো লন্ডনে বসন্ত চলছে। কি সুন্দর করে সেজেছে প্রাকৃতি। উঁহু আমি কিছু দেখছি না একটুও দেখছি না। আমি সুস্থ্য হয়ে দেশে ফিরে তোমাকে খুঁজে বের করবো। তারপর কোনো এক বসন্তে আমরা লন্ডনে আসবো। তোমার হাতে হাত রেখে লন্ডনের বসন্ত দেখবো। তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে এই সৌন্দর্য উপভোগ করি বলো তো?
আবার থামলো তাজ। করুন কন্ঠে বলল – আচ্ছা তোমার কি আমায় মনে পড়ে না? একটা বারও জানতে ইচ্ছে করে না আমি কেমন আছি? তোমার তো সব ছিল। আমার তো তুমি ছাড়া কেউ ছিল না তাই তোমায় হারিয়ে ফেলার বড্ড ভয় পেতাম আমি। তুমি তো জানতে সবটা। তুমি তো বলেছিলে আমাকে কখনও ছেড়ে যাবে না তবে কেন গেলে ছেড়ে? কেন আমাকে একা করে দিলে। খুব মিস করি তোমাকে খুব মৌ। কতদিন তোমাকে দেখি না, একটু ছুঁতে পারি। তোমার ঘ্রান পাই না আমার বাতাসে। একটু জড়িয়ে নিতে পারি না আমার সাথে।
মোবালটা জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকে। নিজের মনটাকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা তার।
_____________________________________
– তাজ…
রাদীফের ডাকে তাজ ফিরে এলো অতীতের ঘোর থেকে। বিমানের সিটের সাথে মাথা এলিয়ে এতক্ষন অতীতের স্মৃতি চারন করছিল তাজ। আজ প্রায় দেড় বছর পর দেশে ফিরছে তাজ। এই দেড় বছর ধরে লন্ডনে চিকিৎসাধীন ছিল তাজ সে এখন পুরোপুরি সুস্থ্য। এখন আর আগের মতো হুট হাট রেগে যায় না, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সে। তবে মৌমিতা, এই দেড় বছরে নিজে স্বশরীরে না পারলেও অনেক খুঁজেছে তাকে কিন্তু কোনো খোঁজ পায়নি তার।
– হুম কিছু বলবে কাকাই?
– কি ভাবছিস এত?
– আমার বউয়ের কথা।
তাজের সোজাসাপ্টা জবাব। ভরকে গেল রাদীফ। তবে বলল না কিছু। এখন কিছু বললেই একটা কথায় একশোটা শুনিয়ে দিবে ঠিক। আগের তাজ আর এখনকার তাজ আকাশ পাতাল পার্থক্য। বড্ড বেশিই ঠোঁটকাটা হয়ে গেছে সে মুখে একদম কিছুই যেন আটকায় না তার। আর রাদীফকে তো সব সময়ই ফাঁসিয়ে দেয়। ইনিয়ে বিনিয়ে সব সময় তিরস্কার করে। তাই ভয়েও রাদীফ তাজের সামনে মুখ খোলে না। রাদীফ কিছু না বলেও যেন ফেসে গেল এবার। তাজ হাই তুলতে তুলতে বলল – বউয়ের দুঃখ তুমি বুঝবে কি তুমি তো এখনও বিয়েই করোনি।
হতাশ হলো রাদীফ। এই বিয়ে বিয়ে নিয়ে ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে হাজারবার তাকে খোটা দেয় তাজ। নিজে বিয়ে করে যেন কোন মহাভারত জয় করে নিয়েছে সে। মাঝে মাঝে রাদীফের ইচ্ছে করে হঠাৎ করে কাউকে ধরে এনে বিয়ে করে তাজকে বলতে ” দেখ বিয়ে করেছি আমি, এখন বউ নিয়ে আমাকে আর খোটা দিয়ে দেখ। ” কিন্তু পারে না। মত আবার পরিবর্তিত হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। রাদীফকে চুপ থাকতে দেখে তাজ আবার বলে উঠলো – বিয়ে করবে কিভাবে তুমি? তোমাকে তো কোনো মেয়ে পাত্তাই দেয় না।
নতুন দিন নতুন সব কিছু। ভোরের সূর্যটাও যেন নতুন লাগছে আজ। এয়ার্পোর্টে নেমে একে একে নিজেদের ব্যাগগুলো বুঝে নিল রাদীফ আর তাজ। হাত রাখলো তাজের কাঁধে। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল – কোথায় যাবি এখন?
– আপাতত নিজের বাড়িতে যাবো ওখান থেকে কাল ভোরে যশোর যাব একটা মিটিং আছে।
ভ্রু কুঁচকে এলো রাদীফের , বলল – কিসের মিটিং?
– বারে মিস্টার সাদিক চৌধুরীর ব্যাবসার আমার ভাগেরটার আমার হাল ধরতে হবে না । এখনই যদি হাল না ধরি তাহলে তোমাদের ঐ রাক্ষসী হীরা বেগম যে সব সাবার করে ফেলবে। তারপর আমার বউ বাচ্চার কি হবে।
– বউ না হয় বুঝলাম কিন্তু বাচ্চা এলো কোথা থেকে?
– ভেবেছি বউকে খুঁজে পেলেই টপাস টপাস করে কয়েকটা বাচ্চা পয়দা করে ফেলবো। দরকার হলে বউকে যমজ কলা , যমজ ফল, যমজ ডিম কিনে খাওয়াবো তারপর বছর বছর যমজ বাচ্চা পয়দা করবো। তখন তো আমার অনেক টাকার প্রয়োজন হবে তাই না।
রাদীফ হতবম্ব। বউ খুঁজে পাওয়ার আগেই এই ছেলে বাচ্চাও পয়দা করে ফেলেছে। অবাকের রেশ টেনেই রাদীফ বলল – মৌমিতাকে খোঁজা শুরু করবি কবে থেকে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলল তাজ, মলিন মুখে বলল – তাকে খোঁজা কি গত দেড় বছরে একদিনের জন্যও বাদ রেখেছি আমি? তাকে তো আমি দিন রাত ২৪ ঘন্টাই খুঁজে চলেছি।
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা গল্পের লিংক