#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_২৭
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
তাজের ব্যান্ডেজ কেটেছে আজ দুই দিন। এখন তাজ পুরোপুরি সুস্থ্য। তবে সে সুস্থ্য হওয়ার পরও মৌমিতাকে নিজের রুমে ফিরতে দেয়নি সে। তার এক কথা ” একবার যখন আমার রুমে চলেই এসেছো এখান থেকে তো আর যাওয়া যাবে না। ” তাজের জেদের কাছে হার মেনে মৌমিতাকে এখন থাকতে হচ্ছে তাজের রুমেই। তার সকল জিনিসপত্র নিয়ে পার্মেনান্টভাবে শিফট হয়েছে তাজের রুমে। তাজেরও ইদানিং রাগটা একটু কমেছে। সবসময় একটা ফুরফুরে মেজাজে থাকে।
____________________________________
ধরনীর বুকে সন্ধ্যা নেমেছে মাত্রই। সূর্যকে বিদায় জানিয়ে অন্ধকার গ্রাস করে নিচ্ছে প্রাকৃতিকে। লাল নীল কৃত্রিম আলোয় ভরে উঠছে শহর। মৌমিতা বসে আছে নিজের রুমেই। হঠাৎ প্রবল ঝংকার তুলে তার হাতের ফোনটা বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রীনে ভেসে উঠছে “মা” নামটা। হাসিমুখেই কলটা রিসিভ করলো মৌমিতা। কানের কাছে ধরেই বলল – আসসালামুয়ালাইকুম মা। কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ভাই বাবা তারা কেমন আছে?
– সবাই ভালো আছে। বাড়িতে কবে আসবি? কতদিন দেখিনা তোকে। মনটা বড় পোড়ায় তোর জন্য।
– এই তো মা কলেজ বন্ধ হলেই চলে আসবো।
– এই কথা তো সেই কবে থেকেই শুনছি।
– না এবার সত্যিই আসবো।
– মনে রাখিস কিন্তু। শোন….
– হুম বলো
– তোকে একটা কথা বলার ছিল রাগ করিস না।
– আচ্ছা বলো।
– তোর বাবা তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছে। ছেলেটা যথেষ্ঠ ভালো। তোর বাবার খুব পছন্দ হয়েছে। উনারা তোকে দেখতে চাইছে তুই যদি একটু আসতি।
আঁতকে উঠলো মৌমিতা। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কিভাবে মাকে বলবে এতবড় একটা সত্য। সে যে এখানে কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছে। সংসারও করছে। সত্যিটা জানলে বাবা মা ঠিক কতটা কষ্ট পাবে ভাবতে পারছে না মৌমিতা। আমতা আমতা করে বলল – মা তোমাদের কতবার বলবো আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না। কেবল তো অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি।
– দেখলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। তোর পছন্দ না হলে সেখানে আমি বা তোর বাবা কেউই তোকে জোর করে বিয়ে দেব না। তুই আগে আয় ছেলে দেখ তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিবি।
– আচ্ছা দেখছি কি করা যায়।
– দেখছি না তুই দ্রুত চলে আয়।
– হুম
– আচ্ছা রাখছি।
– আচ্ছা মা।
ফোন কেটেই মৌমিতার মনে ছেয়ে গেল বিষদের ছায়া। কি করবে ও এখন । বাবা মাকেই বা কিভাবে ও সত্যিটা বলবে। তারাই বা কেমন রিয়েক্ট করবে ভাবতে ভাবতে পিছু ফিরতেই চমকে উঠলো। তাজ দাঁড়িয়ে আছে ওর পিছনে। চোখে মুখে হিংস্রতা। সেই আগের তাজ আবার যেন জেগে উঠেছে। চোখ দুটো লাল টকটকে বর্ন ধারন করেছে। তবে কি তাজ সব কথা শুনে নিয়েছে। মৌমিতা কিছু বলার জন্য দুই ঠোঁট ফাঁক করতেই সজোরে এক থাপ্পর পড়লো তার গালে। ছিটকে গেল মৌমিতা। ঠোঁটের কোনা কেটে রক্ত বেড়িয়েছে। কিন্তু রাগ কমেনি তাজের। মৌমিতাকে টেনে তুলে এক হাতে গলা চেপে ধরলো তাজ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – কেন বললি না তুই বিবাহিত? বিয়ে করেছিস আমাকে। নাকি অন্য কাউকে বিয়ে করার শখ জেগেছে? ছেড়ে যাবি আমাকে? আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করলেও মেরে পুতে ফেলবো তোকে।
মৌমিতার দম আটকে আসছে। কথা বলতে পারছে না। গলায় আটকে যাচ্ছে। তবুও অনেক কষ্টে বলল – এএএভাবে ফোনে হুট করেই বববলা যায় আআমি বিয়ে করেছি? এএএত বড় একটা কাজ করে ফফফেলেছি তাদের রেখেই। তাহলে হয় হয়তো তাদের প্রতিক্রিয়াটা আআরও খখারাপ হতো তাই ভেবেছি সসিলেট গিয়ে তাদের সসামনা সামনি কথা বলব এই বিষয়ে।
হয়তো মৌমিতার কথা বুঝলো তাজ। একটু ঠান্ডা হলো। মৌমিতার গলা ছেড়ে দিল সে। ছাড়া পেয়ে কেশে যাচ্ছে মৌমিতা। কিন্তু তার বলল না কিছু। একবার মৌমিতার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।
_____________________________________
নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারপাশ। চারদিকে নিস্তব্ধ শুধু মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে রাতের নিশাচর কিছু প্রানীর ডাক। তাজ এখনও রুমে ফেরেনি। সেই যে তখন বেড়িয়েছে তারপর তার দেখা নেই। মৌমিতা ঠিক জানে এখন অপরাধবোধে ভুগছে সে। মৌমিতা খুব ভালো করে চেনে মানুষটাকে। পুরো বাড়ি খুঁজেছে তাজকে কোথাও নেই সে। ছাদটা খোঁজা এখনও বাঁকি। এই রাতে একা একা ছাদে যেতেও ভয় লাগছে মৌমিতার। কিন্তু মনে মনে অনেকটা নিশ্চিত সে যে তাজ এই মুহূর্তে ছাদেই আছে। তাই ভয় যতই করুক না কেন ছাদে না গেলেই নয়। মনের মধ্যে একরাশ ভয় নিয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে পা বাড়ালো ছাদের দিকে। ছাদের দরজা খুলতেই অন্ধকারে দেখা মিলল এক অবয়বের। মৌমিতা আস্তে ধীরে পা চালিয়ে অবয়বটির পাশে দাঁড়ালো। আলতো হাতে হাত ধরলো তাজের। শান্ত কন্ঠে বলল – কি করছো এখানে?
তাজ ফিরে তাকালো না মৌমিতার দিকে। একটু চমকালো না। সে যেন আগে থেকেই জানতো মৌমিতা আসবে এখানে আর তারই অপেক্ষায় ছিল সে। অন্ধকারের দিকে তাকিয়েই তাজ জবাব দিলো – অন্ধকারে দেখছি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল মৌমিতা। সে ঢের বুঝতে পারছে তাজ আবার মনের দিক থেকে ভেঙে পড়ছে। শান্ত কন্ঠে বলল – চলো নিচে চলো।
তাজও কোনো কথা বাড়ালো না। বাধ্য ছেলের মতো চলতে লাগলো মৌমিতার হাতে ধরে। রুমে এসেই মৌমিতার হাত টেনে বসিয়ে দিল নিজের কোলে। মুখ গুজলো মৌমিতার ঘাড়ে। কেঁপে উঠলো মৌমিতা। তবে সরিয়ে দিল না তাজকে। এই কয়দিনে তার তাজের এমন একটু আধটু ছোঁয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাজ ঘোর লাগা কন্ঠে বলল – আজ যদি আমি তোমাকে নিজের করে চাই দেবে তুমি?
মৌমিতা চমকালো, ভরকালো, থমকে গেল। সে কখনওই চিন্তাও করেনি তাজ হঠাৎ করে এমনভাবে তাকে চেয়ে বসবে। সে মোটেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত না এর জন্য। মৌমিতা নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল তাজকে। উঠে দাঁড়ালো সে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল – তা হয় না তাজ।
তাজ উঠে দাঁড়ালো, মৌমিতাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। অনুরোধের সুরে বলল – কেন হয় না মৌ? আমি তোমার স্বামী। আমার কি তোমাকে নিজের করে পেতে ইচ্ছে করে না? ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না তোমাকে? তোমাকে একটু গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে না? আমি কি মানুষ না ?
– তেমন নয় তাজ। তুমি তো জানো আমাদের বিয়েটা কিভাবে কি হয়েছে। এখনও আমার পরিবার আমার বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জানে না। এর মধ্যেই আমি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু চাচ্ছি না।
আর কিছু বলতে পারলো না মৌমিতা। তাজ মৌমিতার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের ভাঁজে নিয়ে নিয়েছে। চাইলেও কথা বলতে পারছে না মৌমিতা। ধীরে ধীরে তাজের স্পর্শগুলো বেশামাল হচ্ছে। মৌমিতা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে তাজকে কিন্তু তাজ শুনছে না কোনো বারন। তাজ কেমন উম্মাদ হয়ে গেছে আজ। মৌমিতাও এক পর্যায়ে হার মানলো তাজের কাছে। এখন আর তাজকে বাধা দেওয়ার মতো কোনো শক্তি তার মধ্যে নেই। মস্তিষ্ক বলছে যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না, বাধা দে তুই। মন বলছে হোক না কিছু বেঠিক। স্বামী তো, তার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে তোর উপর। মন এবং মস্তিষ্কের লড়াইয়ে জিতে গেল মন। মৌমিতা সঁপে দিল নিজেকে তাজের কাছে। পূর্নতা পেল দুজনের ভালোবাসা, দুজনের সম্পর্ক। দুজনেই পাড়ি দিল অজানা এক সুখের স্রোতে। তবে দুজনেই অজ্ঞাত আগামী কালকের সম্পর্কে। কি অপেক্ষা করছে আগামী কাল তাদের জন্য?
__________________________________
রাতের আঁধার কেটে আলোকিত হয়ে উঠেছে ধরনী। আকাশের বুক চিরে সূর্য উঁকি দিয়েছে। পাখির কিচিরমিচির কলধ্বনিতে ভরে গেছে চারদিকে। তাজের উদম বুকে লেপ্টে আছে মৌমিতা। ঘুমিয়ে আছে এখনও। ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে তার। রুমের জানলার ফাঁকা গলিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করতেই পিটপিট করে চোখ খুলে তাজ। চোখ খুলেই বুকের উপর মৌমিতাকে আবিষ্কার করতেই ঠোঁটে হাসি ফুটলো তাজের। হাত দিয়ে রুমে আসা সূর্য রশ্মি আড়াল করলো সে যাতে মৌমিতার ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে। মৌমিতার চুলের মধ্যে আলতোভাবে একটা চুমু খেল। কি ভেবে খুব সাবধানে নিজের উপর থেকে মৌমিতাকে সরিয়ে উঠে পড়লো সে। জানালার পর্দাটা ভালোভাবে টেনে দিয়ে সূর্য রশ্মি থেকে আড়াল করে দিল মৌমিতাকে। ওয়াশ রুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে।
ওয়াশ রুমের আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে তাজ। বুকে পিঠে খামচির দাগ। কালকে রাতের কথা মনে উঠতে প্রশান্তির হাসি হাসলো সে। মনের মধ্যের ভয়টা একটু হলেও কেটেছে। আজকের পরে হয়তো মৌমিতা কখনও ওকে ছেড়ে যাবে না। ফ্রেশ হয়ে রান্নঘরে ঢুকলো তাজ। আজ নিজের হাতে মৌমিতার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাবে তাজ।
বেলা বেশ গড়িয়েছে। এখনও বিছানায় ঘুমাচ্ছিল মৌমিতা। হঠাৎ কর্কশ কন্ঠে বেজে উঠল মোবাইলটা। ঘুমের মধ্যেই চোখ মুখ কুঁচকে নিল মৌমিতা। ফোনটা বেজেই যাচ্ছে থামাথামির কোনো নাম নেই। বালিশ হাতরে কলটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ঘুম উবে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে। চোখে মুখে ভয় এবং বিষাদের ছায়া নেমেছে। ওপাশ থেকে কলটা কেটে দিয়েছে। অশান্ত হয়ে পড়ছে মৌমিতা।কোনো রকম গায়ের জামাটা জড়িয়ে হাতব্যাগ আর মোবাইলটা নিয়ে দৌড়ে নিচে চলে এলো সে। দৌড়ে সদর দরজার দিকে যাওয়ার আগেই পথ আগলে দাঁড়ালো তাজ। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল – কোথায় যাচ্ছো তুমি?
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা গল্পের লিংক
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৩