#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_২৬
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
বেলা বেশ গড়িয়েছে। মেঘে ঢেকে আছে আকাশটা। সূর্যটা যেন লুকিয়ে পড়েছে মেঘের আড়ালে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। তাজ শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছে আর মৌমিতা তার সেবায়।
বিছানায় অলস শিশুর মতো গড়াগড়ি করছে তাজ। মৌমিতা কেবলই ঢুকলো রুমে। রুমে ঢুকেই কটমট করে তাজের দিকে তাকালো। তাজ আবার বিছানা অগোছালো করেছে। মৌমিতা বিছানা গুছিয়ে যায় বেশি হলে ৫ মিনিট তার মধ্যেই তাজ গড়াগড়ি করে বিছানা এলোমেলো করে দেয়। বিছানার চাদর কুঁচকে এক জায়গায় রেখে দেয়। প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর মৌমিতাকে একবার একবার বিছানা গুছাতে হয়। মৌমিতার দৃষ্টি খেয়াল করেই উঠে বসলো তাজ। ভদ্র বাচ্চাদের মতো শান্তভাবে বসে আছে সে। মৌমিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল – আপনি কি এক্সিডেন্ট করেছেন আমাকে ২৪ ঘন্টা জ্বালানোর জন্য?
মুখ ভার করলো তাজ। গাল ফুলিয়ে বলল – এই কথা তুমি বলতে পারলে মৌ? আমি তোমাকে জ্বালানোর জন্য এক্সিডেন্ট করেছি?
অপরাধবোধ জাগলো মৌমিতার মনে। সত্যিই তো, তাজ তো আর ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করেনি। ওর জন্য আইসক্রিম আনতে গিয়েই তো এক্সিডেন্ট করেছে। মৌমিতা অপরাধীর কন্ঠে বলল – স্যরি আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি।
তাজ মুখ ঘুরিয়ে নিল। কথা বলবে না মৌমিতার সাথে। মৌমিতা কানে ধরলো, বলল – এই দেখুন কানে ধরেছি আর বলবো না এভাবে এদিকে তাকান এবার।
তাজ তাকালো না মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকেই তাকিয়ে আছে। মৌমিতা তাজের গালে হাত রাখলো। কেঁপে উঠলো তাজ কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সে দেখতে চায় মৌমিতা আর কি কি করে তার রাগ ভাঙানোর জন্য। মৌমিতা তাজের গাল ধরে টেনেটুনে নিজের দিকে ফিরালো। অপরাধীর মতো মুখ করে বলল – স্যরি বললাম তো। ভুল হয়ে গেছে আমার। মাফ করে দিন।
তাজের রাগ পড়লো না। পড়বে কিভাবে সে তো এখন আর রাগ করে নেই শুধু রাগের অভিনয় করে যাচ্ছে। মৌমিতা টুপ করে তাজের গালে একটা চু’মু খেল। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল – চু’মু খেয়ে নিয়েছি এবারও কি রাগ করে থাকবেন?
তাজ ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো। এক হাতে টেনে নিজের কোলে বসালো। ঘোর লাগা কন্ঠে বলল – ভালোই তো ট্রিকস শিখেছো আমার রাগ ভাঙানোর। তবে এভাবে যদি তুমি রাগ ভাঙাও তবে আমি হাজারবার রাগ করে থাকতে চাই তোমার সাথে।
লজ্জা পেল মৌমিতা। লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে গেছে তার। তাজ পর্যবেক্ষণ করলো মৌমিতার গালে অতঃপর বলল – বাহ লজ্জায় তোমার গাল দুটো যে টমেটোর মতো হয়ে গেছে। তবে আমি যে তোমার লজ্জা আর একটু বাড়িয়ে দিতে চাই বউ।
মৌমিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাজের মুখ পানে তাকালো। তাজ সময় নষ্ট করলো না। নিজের এক হাত মৌমিতার চুলের মধ্যে চালিয়ে মৌমিতার ঠোঁ’টে নিজের দুই ঠোঁ’ট মিলিয়ে দিল। শুষে নিতে শুরু করলো মৌমিতার দুই ঠোঁ’টের অমৃত সুধা।
প্রায় মিনিট দশেক পর মৌমিতার ঠোঁ’ট ছাড়লো তাজ। ঘাড়ে মুখ গুজে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। মৌমিতা যেন লজ্জায় গুটিসুটি মেরে গেছে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। হঠাৎ তাজের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। তাজের দিকে তাকিয়ে বলল – ওয়াশ রুমে চলুন গোসল করবেন।
গোসলের কথা শুনেই তাজের মাথায় যেন বিনা মেঘে এক বজ্রপাত আঘাত হানলো। তাজ নাক মুখ কুঁচকে জানালো – আমি গোসল করবো না। বাইরে বৃষ্টি আমার শীত শীত লাগছে। এই শীতে কেউ গোসল করে?
মৌমিতা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল – আজ চারদিন ধরে আপনি গোসল করেন না। কোনো ভনিতা না করে দ্রুত ওয়াশ রুমে চলুন।
– মাত্র চারদিন। আমার একসাথে ৭ দিন গোসল না করারও রেকর্ড আছে।
অবাক হলো মৌমিতা। নাক ছিটকে বলল – ইয়াক, বাইরে বের হয়েছেন কিভাবে? মানুষ গন্ধ পায়নি?
– পারফিউম মেরে কাজ চালিয়েছি।
– আমার সাথে থাকতে হলে আপনাকে রোজ গোসল করতে হবে। গোসল করবেন চলুন।
– আজ গোসল না করলে হয় না। এমনি আমার একটা হাত ভাঙা। পানি লাগলে সমস্যা হবে।
– সে আমি বুঝবো। আপনি গোসল করবেন চলুন।
– না আজ গোসল করব না। শীত লাগছে আমার।
– আজ যদি আপনি গোসল না করেছেন তাহলে আজ কিন্তু আপনার আশেপাশেও আসবো না আর রাতে আপনার পাশে ঘুমাবো না।
করুন দৃষ্টিতে মৌমিতার মুখ পানে তাকালো তাজ, বলল – আজ না করলে হয় না? কাল শিওর গোসল করবো।
– তাহলে আমি যা বললাম তাই।
– আচ্ছা করবো গোসল তবে আমার শর্ত আছে।
– কি শর্ত?
– আমার নাম ধরে বলতে হবে আর তুমি তুমি করে বলতে হবে। সুন্দর করে বলো ” তাজ চলো গোসল করবে।” তাহলেই আমি রাজী হয়ে যাব।
– পারবো না।
– তাহলে আমি গোসলও করবো না।
– আচ্ছা বলছি ..
– বলো
– তাজ চলো গোসল করবে।
তাজ এক হাতে মৌমিতার বাহু জড়িয়ে ধরলো। শান্ত কন্ঠে বলল – চলো, গোসল করব আমি।
__________________________________
তাজের ভাঙা হাতের পলিথিন পেঁচিয়ে একটা মোড়ার উপর বসিয়ে দিল তাকে । তাজও বাধ্য ছেলের মতো বসে পড়লো।
– মাথাটা নুইয়ে দিন।
– আবার আপনি করে বলেছো? আমি নোয়াবো না মাথা।
– আচ্ছা মাথাটা নুইয়ে দেও শ্যাম্পু করাবো।
তাজ মাথায় শ্যাম্পু করিয়ে চুলগুলো ধুয়ে দিল। আস্তে ধীরে তাজের টি শার্টটা খুলে দিল। তাজ উদম গায়ে বসে আছে মৌমিতার সামনে। মৌমিতার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। তাকাতে পারছে না তাজের দিকে। মৌমিতা বালতিতে পানি ভরে মগটা এগিয়ে দিল তাজের দিকে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল – নিন এক হাতে শরীরে পানি ঢালো।
তাজ বাঁকা হাসলো, বলল – আমি তো বলেছিলাম গোসল করব না। তুমি আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছো। এখন পানিও আমার শরীরে তোমাকেই ঢালতে হবে না হয় আমি গোসল করব না।
মৌমিতা পড়েছে মহা বিপাকে। তাদের উন্মুক্ত বক্ষের দিকে তাকালেই মাথায় সব ছিঃ মার্কা চিন্তা ভাবনা উদয় হচ্ছে। আর তাজও সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে। মৌমিতা ঠিক বুঝতে পারছে তাজ এটা ইচ্ছে করেই করছে। কিন্তু মৌমিতাও হারবে না। তাজকে আজ গোসল করিয়েই ছাড়বে। চোখ বন্ধ করে নিল মৌমিতা। কাঁপা কাঁপা হাতে তাজের মাথায় পানি ঢাললো। তাজ একটু ঝুঁকে মৌমিতার মুখের সামনে মাথা ঝাড়া দিল। তাজের চুলের পানি সব মৌমিতার নাকে মুখে। দ্রুত চোখ খুলল সে। নাক মুখ কুঁচকে ফেলল। চেঁচিয়ে বলল – তাজের বাচ্চা।
– আমি তাজ আমার কোনো বাচ্চা হয়নি । সেই সুযোগ তুমি দেওনি এখন পর্যন্ত।
মৌমিতা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল – এইসব বাচ্চামো ছাড়বে কবে?
– যেদিন আমার বাচ্চা হবে।
অতঃপর মৌমিতা কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল – যেদিন তুমি আমার কাছে আসবে। সম্পূর্ণ ভাবে আমার হবে। তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে খুঁজে পাবে আমার অস্তিত্বকে। আমি মিশে যেতে পারবো তোমার মাঝে।
মৌমিতা থমকে গেল। ঘোরের মধ্যে চলে গেল। লজ্জা লাগছে তার। কি সব বলছে তাজ। মানুষটা বড্ড ঠোঁট কাটা। কি বলবে ও ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না সে। এই সব কথার কি উত্তর দেওয়া যায় । ইসস কি ছিঃ মার্কা কথা বার্তা। মৌমিতার ঘোরের মধ্যেই ঝর্নাটা অন করে দিল তাজ। মাথার উপর ঠান্ডার অস্তিত্ত্ব অনুভব করতেই চমকে উঠলো মৌমিতা। মাথার উপর তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টির ন্যায় পানি ঝড়ছে। ঝর্নাটা বন্ধ করার আগেই তাজ এক হাতে নিজের দিকে টেনে নিল মৌমিতাকে। দুইজনেই ভিজে চুপচুপে। মৌমিতার শরীরের প্রতিটি ভাজ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে পানিতে ভিজে। তাজের ভিতরকার পুরুষালী আচরন যেন জাগ্রত হচ্ছে ধীরে ধীরে। তাজ কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মৌমিতার দিকে। চমকে উঠলো মৌমিতা। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে সে। তাজের চোখ আজ নি’ষি’দ্ধ কিছুর বায়না করছে। ঐ চোখে চোখ মিলাতে পারছে না মৌমিতা। নিজেরও কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে। না না নিজেকে সংযত করতে হবে নয়তো আজ সাংঘাতিক কিছু ঘটে যাবে। মৌমিতা কিছুতেই এই মুহূর্তে এমন কিছু চাইছে না। মৃদু ধাক্কা দিল তাজকে। আকর্ষিক ধাক্কায় দুই পা সরে গেল সে। মৌমিতা দৌড়ে বেরিয়ে গেল ওয়াশ রুম থেকে। তাজ এখনও ওয়াশ রুমে দাড়িয়ে আছে। তার ঘোর হয়তো এখনও কাটেনি। সামনের দিকে স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।
_________________________________
রুমে গলার মধ্যে টি শার্ট ভরে দাঁড়িয়ে আছে তাজ। একহাত ভাঙা থাকায় অন্য এক হাতে টিশার্টটা পড়তে পারছে না। ট্রাউজারটা কোনো রকম টেনেটুনে পড়ে নিয়েছে। কিন্তু সমস্যা করছে এই বজ্জাত টি শার্ট। আর মৌমিতাও, সে সেই যে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল আর এলো না এই রুমে। তাজ টি শার্টটা গায়ে জড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে আর বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে । অপেক্ষা করছে তার প্রেয়শীর আসার।
( এই যে গোসল করার ব্যাপারটা মোটেই কিন্তু বানানো না। অনেক ছেলেরাই আছে ঠিকভাবে গোসল করে না। আমার এক ফ্রেন্ডের শীতকালে একটানা এক মাস গোসল না করার রেকর্ড আছে। এখানে তো মাত্র সাতদিনের কথা বলেছি আমি।
বি:দ্র : আমি কিন্তু সব ছেলেদের কথা বলিনি )
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা গল্পের লিংক
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২২