Golpo প্রণয়ের ব্যাকুলতা

প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৫


#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা

#সাদিয়া

#পর্ব_২৫

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

দুই দিন পরই তাজকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে এটাও অবশ্য তাজের জেদের কারনেই হয়েছে। সে কিছুতেই হাসপাতালে থাকবে না তার মতে সে এখন পুরোপুরি সুস্থ। মৌমিতা অনেক চেষ্টা করেও তাজের মত পরিবর্তন করতে পারেনি অগত্যা তাজকে বাড়িতে নিয়ে আসতে হয়েছে। বাড়িতে নিয়ে আসার পর তাজের সুবিধা অসুবিধা, খাওয়া দাওয়া, ঔষধ সব কিছুই মৌমিতা খেয়াল রাখছে। ডান হাতটা ভাঙায় তাজ নিজের কোনো কাজ কর্মই সঠিকভাবে করতে পারছে না।

নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারপাশ। রাত প্রায় ১০ টা ছুঁই ছুঁই। চারদিকে নিস্তব্ধ নীরবতা বিরাজমান। মৌমিতা মাত্রই তাজকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে। খাওয়ার পর এঁটো বাসনগুলো পাশের টেবিলে রেখে বিছানাটা ঠিক করে দিল। শাসনের সুরে তাজকে বলল – এখন ঘুমিয়ে পড়ুন, আর জেগে থাকবেন না । ১০ টা বেজে গেছে।

মৌমিতা এঁটো বাসনগুলো নিয়ে এক পা সামনে বাড়াতেই তাজ পিছন থেকে খপ করে ধরে নিল মৌমিতার হাতটা। মৌমিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাজের দিকে তাকাতেই তাজ বলে উঠলো – থেকে যাও না আজ রাতটা, আমার রুমে আমার সাথে।

চমকে উঠলো মৌমিতা। চকিত দৃষ্টি অব্যাহত রেখেই তাজকে শুধালো – মানে?

তাজ আমতা আমতা করে উত্তর দিল – না মানে আমি তো অসুস্থ। রাতে যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়। এই যেমন ধরো ওয়াশরুমেই যেতে হবে পায়ের ব্যথাটা তো এখনও সম্পূর্ন ভাবে ঠিক হয়নি তাই বলছিলাম কি থেকে যাও না আজ রাতটা।

– পাশের রুমেই তো আছি। কিছু প্রয়োজন হলে কল করবেন মোবাইল আছে তো।

– আমার ওয়াশ রুমের বেগ পেয়েছে এখন ,তোমাকে কল করবো তুমি আসবে তারপর ওয়াশ রুমে নিয়ে যাবে ততক্ষণে আমার ওয়াশ রুমের কাজ যদি বিছানায়ই হয়ে যায় তখন কি হবে? আমি লজ্জায় এই মুখ আর কাউকে দেখাতে পারবো বলো?

মৌমিতা ভেবে দেখলো না তাজ ঠিকই বলছে কিন্তু এক রুমে এক বিছানায় তাজের সাথে শুতে কেমন যেন ইতস্তত লাগছে তার। কিন্তু মানুষটা অসুস্থ। এই সময় তার সেবা করা ওর কর্তব্য।‌ আর হাজার হলেও মানুষটা ওর স্বামী, তার সাথে এক বিছানায় শুতে তো কোনো অন্যায় নেই, নেই কোনো পাপ।

মনের মধ্যের সব চিন্তা ভাবনা মাটিচাপা দিয়ে তাজের পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো মৌমিতা। চোখ বন্ধ করার আগে বলল – প্রয়োজন হলে ডাকবেন।

ওপাশ ফিরে চোখ বন্ধ করলো মৌমিতা। হয়তো ঘুমাবে। তাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মৌমিতার পানে। কাত হয়ে শোয়ার দরুন মৌমিতার ঘাড়ের চুলগুলো সরে গিয়ে ঘাড়টা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। তাজের মনে নি’ষি’দ্ধ কিছু চাওয়া উঁকি মারছে। তাজ নিজেকে ধাতস্থ করে অন্য দিকে ফিরে তাকালো। ঐ দিকে আর তাকাবে না বলে মনে মনে পন করলো কিন্তু পারলো না। না চাইতেও বেহায়া চোখ দুটো ওদিকেই চলে যাচ্ছে। মৌমিতার স্বামী তো তাজ। ইসলামী মতে বিয়ে করেছে তাকে। স্বামী হিসেবে এই টুকু অধিকার তো তার রয়েছে। তাজ ধীরে ধীরে ঝুকে পড়লো মৌমিতার ঘাড়ের উপর। আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো মৌমিতার ঘাড়ে। হঠাৎ মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলতেই একটা কামড় বসলো মৌমিতার ঘাড়ে।

ঘাড়ে হঠাৎ ব্যথায় হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো মৌমিতা। কেবলই চোখ দুটো লেগে এসেছিল তার। ঘাড়ে হাত দিয়ে থম মেরে বসে রইলো কিছুক্ষণ। চোখের ঘুমটা কাটতেই পাশ ফিরে তাকালো সে, তাজ ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে। মৌমিতা সন্দেহের সুরে প্রশ্ন করলো – আপনি আমাকে কামড় দিয়েছেন?

– কামড় আমি তোমাকে আবার কখন কামড় দিলাম। নিশ্চই স্বপ্ন দেখেছো তুমি।

মৌমিতা ভ্রু কুঁচকে তাজের দিকে তাকালো একবার। সন্দেহ হচ্ছে ওর স্বপ্নে দেখলে বাস্তবেও কেন ওর ঘাড়ে ব্যথা করবে। উঠে দাঁড়ালো সে, ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ঘাড়টা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। এখানে স্পষ্ট কোনো মানুষ কামড় দিয়েছে। মৌমিতা কটমট করে তাজের দিকে তাকালো, তাজ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমের ভান ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। মৌমিতা এসে কাথাটা টেনে ফেলে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – আমি স্বপ্ন দেখেছি তাই না তাহলে এই কামড়ের দাগ কিসের? আজ আপনার দাঁতই আমি ভেঙে দেব।

– এমন করছো কেন একটা কামড়ই তো দিয়েছি আমি।

– তো মিথ্যা কেন বললেন?

– তোমার ভয়ে?

মৌমিতা অবাক হলো, বলল – আপনি আমাকে ভয় পান?

– পাই তো, বিয়ের পর সব স্বামীরাই বউকে ভয় পায়।

মৌমিতা আর কথা বাড়ালো না। এই বান্দার সাথে কথা বারিয়ে লাভ নেই। আবার শুয়ে পড়লো নিজের জায়গায়। তাজকে শাষিয়ে বলল – এই বার যদি কামড় দেন তো উঠে একদম নিজের রুমে চলে যাবো। এখানে এক সেকেন্ডও থাকবো না।

– আচ্ছা কামড় দেব না চু’মু দেব ঠিক আছে।

মৌমিতা কটমট করে তাজের দিকে তাকালো। তাজ মৌমিতার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। মৌমিতা উঠে যেতে নিলেই তাজ এক হাতে মৌমিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিল নিজের সাথে। মৌমিতা ছটফট করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। তাজ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল – এক হাত ভেঙেছে তো কি হয়েছে। আমার এক হাতে যে শক্তি তোমার মতো দুইটা মৌয়ের মধ্যেও সেই শক্তি নেই। পারলে ছাড়া পেয়ে দেখাও আমার এ বন্ধন থেকে।

মৌমিতা নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে তাজকে ধাক্কা দিল না এক চুলও নড়লো না তাজ। তাজের ঠোঁটে লেগে আছে বাঁকা হাসি। মৌমিতা সজোরে তাজের হাতে একটা কামড় বসালো। তাজ চোখ মুখ খিচে ” আহ ” আর্তনাদ করলো। ছেড়ে দিল মৌমিতাকে। ছাড়া পেতেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। বুকে দুহাত গুজে বাঁকা হেসে বলল – কে যেন বলেছিল তার এক হাতের শক্তি আমার মতো দুটো মৌয়ের গায়ে নেই। পারলে যেন ছাড়া পেয়ে দেখাই।

– এটা চিটিং। তুমি আমাকে কামড়ে ছাড়া পেয়েছো।

– যেভাবে পাই ছাড়া তো পেয়েছি।

মৌমিতা পা বাড়ালো দরজার দিকে। তাজ দ্রুত জিজ্ঞেস করল – কোথায় যাচ্ছো?

– আমার রুমে।

– রাতে আমার প্রয়োজন হলে?

– নিজের প্রয়োজন নিজে মিটিয়ে নিবেন।

– স্যরি আমি আর কোনো দুষ্টমী করবো না। থেকে যাও না।

– সত্যি আর কোনো দুষ্টমী করবেন না তো।

– হুম একদম সত্যি।

মৌমিতা থেকে গেল। আবার তাজের পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। তাজও আর কোনো দুষ্টমী করলো না এবার। মৌমিতার গা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো সে। ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো দুজনেই।

__________________________________

রাতের আঁধার কেটে গেছে। সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে প্রাকৃতি। সাথে মৃদু শীতল হাওয়া বইছে। সকাল সকাল নিজের মুখের উপর কারো উত্তপ্ত নিঃশ্বাস অনুভব হতেই চোখের ঘুম কেটে গেল তাজের। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো সে। চোখের সামনে ভেসে উঠল তার প্রয়শীর ঘুমন্ত মায়াবী মুখশ্রী। মুহুর্তেই ভরকে গেল সে। সে কি স্বপ্ন দেখছে? এত সকালে মৌমিতা এলো কোথা থেকে। মস্তিষ্কে চাপ পড়তেই মনে পড়লো কাল রাতের কথা। মুখে হাসি ফুটে উঠল তার। ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিল মৌমিতার কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো। একটু এগিয়ে গেল মৌমিতার দিকে। দূরত্ব ঘুচিয়ে মৌমিতার কপালে আলতোভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো। আবার নিজের জায়গায় ফিরে এলো সে। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো মৌমিতা। চোখের সামনে তাজকে দেখেই হাসি মুখে বলল – গুড মর্নিং।

– গুড মর্নিং বউ।

ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো মৌমিতা। হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। একবার চোখ ডলে আবার তাকালো। চকিত কন্ঠে বলল – আপনি সত্যিই আছেন?

তাজ ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো, বলল – এত ভুলো মনের তুমি বউ? আর আমি সত্যি থাকবো না তো মিথ্যা থাকবো?

মৌমিতা আমতা আমতা করে বলল – না তা নয় হঠাৎ দেখে একটু চমকে গিয়েছিলাম। চলুন আপানাকে ওয়াশ রুমে দিয়ে আসি ফ্রেশ হবেন।

তাজ বালিশ হাতরে মোবাইলটা আনলো। মোবাইলের স্ক্রীনে তাকিয়ে বলল – কেবল সাতটা। আমি আরেকটু শুয়ে থাকবো।

মৌমিতা খোলা চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে বলল – তাহলে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি আপনি শুয়ে থাকুন।

তাজ এক হাতে টেনে মৌমিতাকে নিজের বুকের উপর শুইয়ে দিল। আদুরে কন্ঠে বলল – তুমিও আমার সাথে শুয়ে থাকবে। এত সকালে উঠে তোমার কোনো কাজ নেই।

– ব্রেকফাস্ট বানাবো, ছাড়ুন আমাকে।

– উহু আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। আর ব্রেকফাস্ট বানানোর জন্য সার্ভেন্ট আছে‌‌। তুমি আমার বুকের উপর শুয়ে থাকো একটু।

মৌমিতাও আর কথা বাড়ালো না। নিশ্চুপভাবে তাজের বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে রইলো। ধক ধক ধক আওয়াজ হচ্ছে তাজের বুকে। ঝড় উঠছে মৌমিতার হৃদয়ে। কান পেতে শুনছে তাজের হৃদস্পন্দন। মৌমিতার সম্পূর্ণ শরীরে বয়ে যাচ্ছে শীতল রক্তস্রোত।

চলবে….

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply