#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_২২
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
লাইব্রেরীতে ঘুরে ঘুরে বই সংগ্রহ করছে মৌমিতা আর তার পিছু পিছু ঘুরছে তাজ। কিন্তু মৌমিতা বিন্দু পরিমাণ পাত্তা দিচ্ছে না তাজকে, একটা কথাও বলছে না। তাজ এত এত কথা বলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা হু হা শব্দ পর্যন্ত করছে না। ভালো লাগছে না তাজের। তবে কি সে ভুল করে ফেলেছে। বিয়ে করে মৌমিতাকে পেয়েও কি হারিয়ে ফেলবে সে। মৌমিতার পিছু পিছু মৌমিতার পাশে গিয়েই বসলো। শান্ত কন্ঠে বলল – আমার সাথে কথা বলছো না কেন মৌ?
মৌমিতা তবুও কথা বলছে না। চুপচাপ বইয়ে মুখ গুজে বসে আছে।
– আমার সাথে কথা বলবে না মৌ? তুমি তো জানো আমার ব্যাপারটা সবই। তবুও কেন এমন করছো?
এবার মুখ খুললো মৌমিতা। অনেকটা বিরক্ত হয়েই মুখ খুলতে হয়েছে তাকে। তাজের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল – হ্যা আমি সবই বুঝি বা জানি শুধুমাত্র এটাই আমার অজানা ছিল যে আপনি আমার ভালোবাসাকে অবিশ্বাস করেন ।
– অবিশ্বাস নয় আমি তোমাকে হারানোর ভয় পাচ্ছি ভীষণ। যদি হারিয়ে যাও কখনও আমি তোমাকে হারাতে পারবো না কখনও।
– ভালোবাসলে এই ভয়টা থাকতো না যে আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো। আমার উপর বিশ্বাস থাকতো আপনার। ভরসা থাকতো আমার উপর।
– আমার ভয়টা ঠিক কোথায় বুঝবে না তুমি। আমি তোমাদের মতো সুস্থ নই, স্বাভাবিক নয়। তোমার যদি কখনও মনে হয় আমার মতো মানুষের সাথে থাকা যায় না। তোমার বাবা মা আমার বাস্তবতা জেনে যদি তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নেয়। কোনো বাবা মাই চায় না তার সন্তান এমন একটা মানুষের সাথে থাকুক যার সাথে তার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
হয়তো মৌমিতা বুঝলো তাজের ব্যাকুলতা। কিন্তু মুখে কোনো উত্তর দিল না সে। চোখ ঘুড়িয়ে বইয়ের দিকে তাকালো সে। এই মুহূর্তে তার মনে কোনো শান্তি পাচ্ছে না। বিয়েটা হয়ে গেলেও বাবা মায়ের কথা চিন্তা করে মন যে বড্ড বড্ড ব্যাকুল হয়ে আছে।
তাজ আবার শান্ত কন্ঠে শুধালো – মৌ
– হুম
– কথা বলবে না আমার সাথে?
মৌমিতা চোখ দুটো বইয়ের ভাজেই নিবদ্ধ রেখে উত্তর দিল – বলছি তো।
তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো তাজ, মৌমিতার দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল – আমার বাড়িতে থাকবে না? কথা দিচ্ছি তোমার অমতে আমি কখনও স্বামীর অধিকার আদায় করতে চাইবো না। আমরা আলাদা রুমেই থাকবো। তুমি শুধু চলে এসো, আমার কাছাকাছি থাকো। আমার সন্ধ্যা নামুক তোমার মুখ দেখে আর ভোর হোক তোমার হাসিমাখা মুখে। তোমার ঘ্রান ছড়িয়ে থাকুক আমার বাতাসে।
মৌমিতা শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তাজের দিকে, বলল – ভেবে দেখবো।
তাজ অস্থির হয়ে শুধালো – ভাবতে কতদিন সময় লাগবে?
ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার, কঠোর কন্ঠে বলল – আজীবন।
– মজা করছো আমার সাথে?
– না একদমই না।
– আমার বাড়িতে কবে আসবে।
– কাল সকালে।
– আজ বিকেলেই আসা যায় না?
মৌমিতা অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তাজের দিকে। তাজ চুপসে গেল। মৌমিতা বিরবিরিয়ে বলল – বাঙালিকে খেতে দিলে শুতে চায়। এটাই বাঙালির অভ্যাস।
___________________________________
সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আকাশে চাঁদকে বিদায় দিয়ে সূর্যি মামা উঁকি দিয়েছে মাত্রই। গাছে গাছে পাখিরা নেমে পড়েছে খাবারের সন্ধানে। তাজ ড্রইং রুমে অস্থির হয়ে পায়চারি করছে। মৌমিতা বলেছে আজ সকালে আসবে সে। তার আসার অপেক্ষাতেই আছে তাজ। রাদীফ এখনও ঘুমাচ্ছে। তার তো আর বউ নেই যে বউয়ের আসার অপেক্ষা করবে।
সকাল ৯ টা বেজে গেছে। রাদীফ উঠে গেছে। ড্রইং রুমের সোফায় বসে চা খাচ্ছে আর আড় চোখে তাজকে পর্যবেক্ষণ করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর বিরস কন্ঠে বলে উঠলো – এত অস্থির হয়ে লাভ কি তোর বউ এসেই তোর কাছে ছুটে আসছে না, সে থাকবে অন্য রুমে।
তাজ বিরক্তিভরা চোখে রাদীফের দিকে তাকালো, ভ্রু কুঁচকে বলল – আমার তো তাও বউ আছে, বউয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। তোমার তো তাও নেই। বুড়ো হয়েছো আর এখনও আইবুড়ো নাম ঘোছাতে পারোনি।
তাজ্জব বনে গেল রাদীফ। কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেল তাজ। চোখ পিটপিট করে রাদীফ বলল – তুই কি ইনডাইরেক্টলি আমাকে অপমান করলি?
– ইনডাইরিক্টলি না বরং আমি ডাইরিক্টলি তোমাকে অপমান করছি। তোমার তো লজ্জা থাকা উচিৎ তোমার ভাইপো বিয়ে করে ফেললো আর তুমি এখনও সিঙ্গেল একটা প্রেম পর্যন্ত করতে পারলে না।
তাজ আর রাদীফের কথপোকথনের মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল তাজ রাদীফের দিকে ইশারা করে বলল – ঐ যে আমার বউ এসে গেছে।
তাজ হাসিমুখে দরজাটা খুলে দিতেই মৌমিতা দুইটা ব্যাগ নিয়ে তাজের পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। একবার তাজের দিকে তাকিয়েও দেখলো না। রাদীফের দিকে এগিয়ে গিয়েই বলল – স্যার আমার রুমটা দেখিয়ে দিন।
রাদীফ ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো। তাজের পাশে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল – তোর বউ তোকে পাত্তা দিচ্ছে না।
তাজ কটমটিয়ে রাদীফের দিকে তাকালো। রাদীফ তাজের দৃষ্টি অগ্রাজ্য করেই মৌমিতার কাছে গেল। মৌমিতার হাত থেকে ব্যাগ দুটো নিয়ে বলল – চলো তোমার রুম দেখিয়ে দেই।
নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রুমটায় ঢুকে অনেকটা অবাক হয়েছে মৌমিতা। রুমটা সম্পূর্ণ ওর পছন্দ অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। এত নিখুঁত ভাবে ওর পছন্দ অনুযায়ী বোধহয় ও নিজেও কখনও সাজাতে পারতো না। তাজ কিভাবে করেছে? আর ও এত নিখুঁত ভাবে ওর পছন্দ অপছন্দই বা কিভাবে জেনেছে? ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল মৌমিতা। ফ্রেশ হয়ে সবার জন্য রান্না করবে। ছুটির দিন আজ। টুকিটাকি রান্না বান্না ভালোই পারে ও।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত প্রায় ১২ টা ছুঁই ছুঁই। নিকষ কালো আঁধারে নিমজ্জিত চারপাশ। দূর থেকে শিয়ালের হাঁক শোনা যাচ্ছে। বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে মৌমিতা। আজ কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। শিয়ালের ডাকগুলো কেমন ভয়ংকর ধ্বনি তুলছে নিস্তব্ধ প্রাকৃতিতে। এর আগে মৌমিতা এই বাড়িতে চারদিন থেকেছিল, তার মধ্যে দুই দিন নীরার সাথে শুয়েছিল , একদিন তাদের অসুস্থতার জন্য ছিল সে রাত সে তাজের শিয়রে বসেই কাটিয়ে দিয়েছিল। আর একদিন কেমন যেন বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছিল, ভয় ডর ততটা কাবু করতে পারেনি ঐ দিন। হঠাৎ দরজায় কারো ঠকঠক আওয়াজে চমকে উঠলো মৌমিতা। বুকে থু থু দিয়ে দরজার দিকে তাকালো। আবার কেউ দরজায় কড়া নাড়ছে। কে এসেছে এত রাতে? ভয়ে কাঁপা কাঁপা পা নিয়ে দরজা খুলতেই ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার। দরজার ওপাশে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাজ। পুরো বাড়িতেই লাইট জ্বলছে রোজ রাতেই জ্বলে তাই তাজকে চিনতে ততটা কষ্ট পোহাতে হয়নি মৌমিতাকে। সে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো – এত রাতে কি চাই?
– ধন্যবাদ।
– কেন?
– আমার বাড়িতে আসার জন্য।
– এই কথা বলতে আপনি এত রাতে আমার রুমে এসেছেন?
– না
– তবে কি বলতে এসেছেন? তাড়াতাড়ি বলে বিদায় হন।
– একটু জড়িয়ে ধরবে?
কেঁপে উঠলো মৌমিতা। তাজের নিসংকোচ আবদার মৌমিতা ইতস্তত করছে। এমন না যে আগে কখনও তাজকে সে জড়িয়ে ধরেনি। ধরেছে অনেক বারই ধরেছে তাহলে আজ কেন ইতস্তত লাগছে। বিয়ে হয়েছে বলে? জানা নেই মৌমিতার। মৌমিতা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। জড়িয়ে ধরলো না তাজকে। তাজ ঠোঁট উল্টে দিল। বাচ্চাদের মতো দুই হাত বাড়িয়ে দিল, ব্যাকুল কন্ঠে বলল – একটু জড়িয়ে ধরো না প্লিজ। আমার খুব অশান্তি অশান্তি লাগছে।
এবার আর ফিরিয়ে দিতে পারলো না মৌমিতা। আলতো হাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল তাজকে। তাজ পরম আবেশে মৌমিতার পিঠে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নিল। মিনিট খানেক পর শান্ত কন্ঠে বলল – তুমি জানো মৌ আমার এক কঠিন রোগ হয়েছে।
তাজের বুক থেকে মাথা তুলে তাজের মুখের দিকে তাকালো মৌমিতা। তাজ মৃদু হাসলো , মৌমিতার মাথাটা আলতো হাতে নিজের বুকের সাথে আবার মিশিয়ে নিল। চোখ বন্ধ করে বলল – তুমি আমার আশে পাশে না থাকলে বড্ড অস্থির অস্থির লাগে আমার, কিছুই ভালো লাগে না, কোথাও শান্তি পাই না। আমার হৃদয় তোমার কাছে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আচ্ছা আমার এই কঠিন রোগের নাম কি দেওয়া যায় বলো তো মৌ।
মৌমিতা কিছু বলল না শুধু তাজের বুকে মাথা রেখে চুপটি করে তাজের কথা শুনছে। তাজ আবার হাসলো, বলল – ভালোবাসা মানে প্রণয়। আর আমি তোমার প্রণয়ে ব্যাকুল। আমার এই কঠিন রোগের নামটা #প্রণয়ের_ব্যাকুলতা রাখলে কিন্তু বেশ হয়।
মৌমিতা মুখ খুললো এবার। শান্ত কন্ঠে বলল – আমিও আপনার মতোই এই কঠিন রোগে ভীষণভাবে আক্রান্ত মিস্টার আগুন চোখা।
তাজ আলতো হাসলো। ঠোঁট ছোঁয়ালো মৌমিতার চুলের মধ্যে। ছেড়ে দিল মৌমিতাকে অতঃপর বলল – এখন ঘুমাও, অনেক রাত হয়েছে আর জেগে থেকো না। আর ভয় পেও না আমি তোমার পাশের রুমেই আছি। প্রয়োজনে ডেকো।
মৌমিতা মুচকি হাসলো , বলল – শুভ রাত্রি। আপনিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
তাজ গেলো না, ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল – তোমার ভয় লাগলে আমি তোমার সাথে তোমার রুমে থেকে যেতে পারি, আমার কোনো সমস্যা নেই।
মৌমিতা সশব্দে রুমের দরজাটা আটকে দিল। বিরবিরিয়ে বলল – একটু লাই দিলেই অসভ্যতামো শুরু হয়ে যায়।
তাজ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে হো হো করে হেসে উঠলো।
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা গল্পের লিংক
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৫