#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_২০
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
তেতে উঠল হীরা , বলল – এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে। গাইয়া , আনকালচার মেয়ে একটা। তাজ যে কি দেখে তোমাকে পছন্দ করেছে কে জানে?
তাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল – ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এই বাড়িটা আপনার নয় আমার। আপনার স্বামী মানে আমার জন্মদাতা পিতা তার সকল সম্পত্তির ৭০% আমাকে লিখে দিয়েছি। তার মধ্যে এই বাড়িটাও একটা। বাকি ৩০% তাও আপনার নামে নয় আপনার মেয়ের নামে লিখে দিয়েছে। আমার জন্মদাতা পিতার সম্পত্তির এক কানা কড়িও আপনার নয়। আর সব থেকে বড় কথা আমর এই সম্পত্তি হাতানোর জন্যই যে আপনার ঐ অর্ধ নগ্ন ভাইজিকে আমার ঘাড়ে ঝুলাতে চাইছেন তাও আমার অজানা নয়।
ভরকে গেলেন হীরা, তাজ তাহলে সবটা জানে। পাশের নয়না নামক মেয়েটাও চুপসে গেল। সেও তার খালার কথায় এই সম্পত্তির লোভে এই বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিল। নাহলে এমন মানসিক ভাবে অসুস্থ একজন মানুষকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিল না তার। এত কথার পরও থামলেন না হীরা। আবার সে বলে উঠলো – এই মেয়েটার কি যোগ্যতা আছে আমাদের নয়নার সামনে। তবুও তুমি এই মেয়েটার জন্য নয়নাকে রিজেক্ট করলে। তুমি কি ভেবেছো এই মেয়েটা ভালোবাসে তোমাকে? না এই মেয়েটাও তোমার কাছে শুধু মাত্র তোমার সম্পত্তির জন্য পড়ে আছে। কোনো ভালোবাসা টাসা নেই। তোমার মতো একজন মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ভালোবাসা যায় না। এই মেয়েটা দেখো শেষ পর্যন্ত তোমাকে বিয়ে করবে না। তাও আমি তো তোমাকে নয়নার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।
অসম্ভব রেগে গেছে তাজ। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়েই বিকট স্বরে একটা হুংকার দিয়ে উঠলো। পাশে রাখা ফুলদানিটা সজোরে আছাড় মারলো মেঝেতে। কেঁপে উঠলো মৌমিতা, হীরা নয়না তিন জনই। হীরার দিকে তেড়ে গেল তাজ। রক্তলাল চক্ষু নিয়ে শুধালো – কি বললি তুই? আর একবার বল।
মৌমিতা দৌড়ে গিয়ে দুই হাতে হীরাকে আড়াল করে দাঁড়ালো। তাজকে থামাতে হবে। না হয় এই দুই নারীকে আজ মেরেও ফেলতে পারে সে। মৌমিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল – আপনারা এখান থেকে দ্রুত চলে যান।
আর দাঁড়ালো না হীরা। সে তাজের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানে। তবুও সম্পত্তির লোভ তাকে এই পর্যন্ত টেনে এনেছিল। ভেবেছিল তাজকে বুঝাতে সক্ষম হবে কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। এই মুহূর্তে তাজের হাতে প্রান দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তার। দ্রুত নয়নাকে নিয়ে কেটে পড়লো সে।
পড়ে রইলো মৌমিতা। চোখে মুখে তার ভয়। এখন কি তার সৎমা হীরার রাগ মৌমিতার উপরে ঝাড়বে? মৌমিতাকে কি আবার চড় থাপ্পড় মারবে বা গলা টিপে ধরবে? হয়তো তাই করবে। তাজের চোখ মুখ বেশ শক্ত। মৌমিতা ভয় পেলেও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। সে তাজকে ভালোবেসে তাজের সব অত্যাচার সহ্য করে নিতে পারবে তবুও তাজকে আর কষ্ট পেতে দিবে না আর কারো কটাক্ষের স্বীকার হতে দিবে না।
তাজ মৌমিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কিন্তু মৌমিতাকে অবাক করে দিয়ে কিছুই বললো না। উল্টো ঘুরে দাঁড়ালো সে, গম্ভীর কন্ঠে বলল – আমি তোমাকে বিয়ে করবো, আজ এবং এক্ষুনি।
চমকে উঠলো মৌমিতা। থমকে গেল মুহুর্তেই। বিয়ে? এত বড় একটা সিন্ধান্ত ও কিভাবে নিবে। বাবা মাকে না জানিয়ে ও কিছুতেই এত বড় একটা কাজ করতে পারে না। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে এই মুহূর্তে। তবুও নিজেকে সামলে নিল। শান্ত কন্ঠে বলল – এটা কি করে সম্ভব?
– কেন সম্ভব নয়?
– না মানে আমি বলছিলাম বাবা মাকে না জানিয়ে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার ঠিক হবে না।
– প্রেম কি বাবা মাকে জানিয়ে করেছিলে?
– না কিন্তু প্রেম আর বিয়ে দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
তেতে উঠল তাজ, বলল – তাহলে কি আমি ধরে নেব মিসেস সাদিক চৌধুরীর কথাটাই ঠিক তুমি আমাকে ভালোবাসো না? আমার টাকাকে ভালোবাসো। শেষ পর্যন্ত বিয়ে করবে না আমাকে?
চোখ ভরে উঠলো মৌমিতার। এই টুকু বিশ্বাস তাজ ওকে করতে পারলো না।ওর ভালোবাসা এতটা ঠুনকো। অভিমান হলো ভীষণ। কিন্তু ওর এই অভিমানটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। সে কিছুক্ষণের জন্য হয়তো ভুলতে বসেছিল তাজের পরিস্থিতিটা। তাজ স্বাভাবিক নয়, আর এই মুহূর্তে তো একদমই স্বাভাবিক নয়। ওর এটা ভুলে গেলে কিভাবে চলবে? ও যদি অন্যদের মতো তাজকে না বোঝে তাহলে কে বুঝবে? আর কি কেউ আছে তার? মা নেই , বাবা থাকতেও নেই। মৌমিতার অভিমান কমলো। আবার শান্ত কন্ঠে শুধালো – এই টুকু বিশ্বাস আপনি আমাকে করতে পারেন। আমি বিয়ে করলে একমাত্র আপনাকেই করবো।
– যেটা পরে করবে সেটা আগে করতে ক্ষতি কি।
– সেটা সম্ভব নয়। প্রতিটি সন্তানের বিয়ে নিয়েই তার বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন থাকে তাদের না জানিয়ে আমি কিভাবে বিয়ে করি।
– জানাবো না তা তো একবারও বলিনি আস্তে আস্তে জানাবো।
– আপনি বুঝতে পারছেন না….
– আমি বুঝতে চাইছি না।
– প্লিজ আমার পরিস্থিতিটা একবার বোঝার চেষ্টা করুন।
– আমি কিচ্ছু জানি না, আমি শুধু জানি তুমি আজই আমাকে বিয়ে করবে।
মৌমিতা কিছুতেই বুঝতে পারছে না তাজকে। সে বিয়ে করবে মানে বিয়ে করবেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলল মৌমিতা। এই মুহূর্তে রাদীফও নেই। হয়তো এখন পথে আসছে। রাদীফ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। উনি হয়তো কিছু একটা করতে পারবে। একটু সময় নিতে হবে তাজের কাছ থেকে। মৌমিতা একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বলল – রাদীফ স্যার তো এখনও আসেননি। উনি হয়তো রাস্তায় আসছে। উনি আসুক তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেই।
– এখনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। আমি যখন বলেছি আজ তোমাকে বিয়ে করবো তার মানে আজই করবো।
– সেটা পরে দেখা যাবে। আগে রাদীফ স্যার আসুক। উনাকে ছাড়া এমনিও তো আমরা বিয়ে করতে পারবো না।
তাজ বোধহয় একটু শান্ত হলো, ধীর কন্ঠে বলল – আচ্ছা ঠিকাছে। কাকাই আসলেই আমরা বিয়েটা করে ফেলবো।
হাফ ছেড়ে বাঁচলো মৌমিতা। একটু সময় তো নেওয়া গেল। এখন বাসায় ফিরতে হবে। ও তাজকে ভালোবাসে না বা বিয়ে করতে চায় না এমন না। ও তাজকে ভীষণ ভালোবাসে আর বিয়ে করলেও তাজকেই করবে কিন্তু এভাবে নয়। প্রথমে তাজকে সুস্থ করবে তারপর ওর বাবা মায়ের সামনে দাঁড় করাবে, বাবা মায়ের মতামত নিয়েই বিয়ে করবে তাজকে। এভাবে একা একা বিয়ে করে মৌমিতা কিছুতেই বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবে না। ওর জীবনে তাজের ততটুকু মূল্য ওর বাবা মায়ের মূল্য তার থেকে কোনো অংশে কম নয়। তাদের জন্যই ও এই পৃথিবীতে এসেছে, পৃথিবীর মুখ দেখেছে। ছোট বেলা থেকে তারাই ওকে এত বড় করেছে। তাদের মনে কষ্ট দিয়ে একা একা বিয়ে করে ওরা কোনো দিনই সুখী হতে পারবে না, ভালো থাকতে পারবে না। ও চায় ও তাজের সাথে ভালো থাকবে, সুখী হবে। মৌমিতা হ্যান্ডব্যাগটা হাতে ঝুলিয়ে তাজের উদ্দেশ্য বলল – এখন আমি আসি, কলেজ আছে তো।
মৌমিতার হাত চেপে ধরলো তাজ। অস্থির কন্ঠে বলল – না তুমি কোথাও যাবে না। তুমি বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমার সাথে আমার বাসায়ই থাকবে।
– একটু পর কলেজে যেতে হবে তো। আর তাছাড়া আমি আবার আসবো তো।
– আজ কলেজে যেতে হবে না। না তুমি গেলে আর যদি না আসো। আমি তোমাকে যেতে দেবো না, কিছুতেই না।
– এই টুকুও বিশ্বাসও কি আপনি আমাকে করেন না?
– বিশ্বাস করি আমি তোমাকে। কিন্তু তবুও ভয় হয়, সবার মতো তুমিও যদি আমাকে ফেলে চলে যাও, হারিয়ে যাও যদি। আমার কপালটা যে বড্ড পোড়া।
মৌমিতার কলিজাটার মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। তাজের চোখের দিকে তাকিয়ে কষ্ট হলো। এই চোখে কতশত কষ্ট জমে আছে। মায়া হলো মৌমিতার। তাজের আকুতি উপেক্ষা করে আর যেতে পারলো না মৌমিতা। হ্যান্ডব্যাগটা সোফার উপরে রেখে রান্নাঘরের দিকে হাঁটা ধরলো। হাঁটতে হাঁটতে বলল – কি খাবেন আজ? বিরিয়ানি রান্না করবো নাকি খিচুড়ি?
হাসি ফুটে উঠল তাজের ঠোঁটে। কন্ঠে রসিকতা টেনে বলল – তুমি যদি আমাকে বিষ বানিয়ে দেও সেটাও আমি ভীষন তৃপ্তি করে খেয়ে নির্দিধায় মরে যেতে পারবো।
– হুহ ডং।
_______________________________
শরৎ – এর সাদা মেঘ তুলোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে। সূর্য জ্বলে যাচ্ছে তার নিজের গতিতে। দিকে দিকে কাশফুল ফুটে জানান দিচ্ছে শরৎ – এর। ড্রইং রুমে বসে পীনপতন নীরবতা। মুখোমুখি বসে আছে তাজ, রাদীফ। পাশেই বসে আছে মৌমিতা আর নীরা। সবাই যেন মৌন ব্রত পালন করছে। অবশেষে মৌনতা ভেঙে রাদীফ বলল – দেখ তাজ তুই যেটা বলছিস এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব নয়।
– কেন সম্ভব নয়?
– বিয়ে অতটাও সহজ জিনিস নয় যতটা তুই ভাবছিস। তাছাড়া তোর না হয় কাউকে জানানোর নেই কিন্তু মৌমিতা তো একা নয়। ওর মা বাবা ভাই আছে। তারা অবশ্যই ওর বিয়ের জন্য অনেক কিছু ভেবে রেখেছেন। এভাবে হুট করে হয় না সবকিছু। ওর দিকটাও দেখতে হবে।
উঠে দাঁড়ালো তাজ , গম্ভীর কন্ঠে বলল – আমি কিচ্ছু জানি না কিছু বুঝতে চাই না আমি আজ ওকে বিয়ে করব এটাই শেষ কথা।
– এভাবে বললে হয় না তাজ….
রেগে গেল তাজ, হাতের মুঠো শক্ত করে বলল – কি চাইছো তুমি ও আমাকে ছেড়ে যাক? ও শুধু মাত্র আমার সাথে প্রেম করছে ও আমার কাছ থেকে চলে গেলেও আমার কিছু করার থাকবে না। আমি অধিকার চাই, যেই অধিকারে ও আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে যেতে পারবে না। আর কেউ ও আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে বলে ভয়ও দেখাতে পারবে না।
– তাজ এভাবে হয় না সবটা। আর তুই এখনও স্বাভাবিক নয়। তোকে সুস্থ হতে হবে। আমি ডাক্তার এরিকের সাথে কথা বলেছি। উনি বলেছেন তোর চিকিৎসা করবেন। তুই সুস্থ হয়ে উঠবি। তারপর না হয় বিয়েটা কর।
– আমার ভয়টা তো সেখানেই আমি মানসিকভাবে অসুস্থ। কখনও যদি ওর মনে হয় আমার সাথে থাকা যায় না, আমি সুস্থ নই। আমি ওর উপর অত্যাচার করি। করিও তো আমি, মাঝে মাঝেই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওকে মারধর করি আমি। তখন যদি ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমি কি নিয়ে বাঁচব, আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ভালোবাসি ভীষণ ওকে ভীষণ।
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৪