#প্রণয়ের_ব্যাকুলতা
#সাদিয়া
#পর্ব_১৯
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
কিছু বলার আগেই মৌমিতা তাজের শার্টটা খামচে ধরলো। তাজের চোখের দিকে তাকিয়ে অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল – ছেড়ে যাওয়ার জন্য আমি ভালোবাসিনি। ফের যদি কখনও আপনার মুখে এমন কথা শুনি, তাহলে একদম মেরে দেব।
তাজ হতবাক হয়ে মৌমিতার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা তাকে এত ভালোবাসে। তার সব সত্যিটা জানার পরও এত ভালোবাসা। মেয়েটাকে যত দেখছে তাজ ততটাই অবাক হচ্ছে। হুট করেই এক ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে ফেলল সে। মৌমিতার মাথার পিছন দিকটায় হাত দিয়ে নিজের কাছে এনে মৌমিতার দুই ঠোঁটে নিজের দুই ঠোঁট মিলিয়ে দিল । থমকে গেল মৌমিতা গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে তাজের দিকে। তাজ ভাবলেশহীন সে নীরবে মৌমিতার ঠোঁটের মধু শুষে নিচ্ছে। পরম আবেশে মৌমিতা খামচে ধরলো তাজের পিঠ।
_____________________________________
রৌদ্রজ্জ্বল দিন। ভাদ্রের ভাপসা গরমে দিশেহারা প্রাকৃতি। ছোট ছোট টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে নীল আকাশে। রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসে আছে তাজ আর মৌমিতা। ওয়েটার খাবার আনতে দেরি করছে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এসেছে তাজের। এতক্ষন লাগে খাবার আনতে। মৌমিতা রেস্টুরেন্টাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। চারপাশ দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ পড়লো একটা ছেলের দিকে। ছেলেটা চুমু দেওয়ার মতো মুখ উঁচিয়ে মৌমিতার দিকেই ইশারা করলো। আজকালকার ছেলে মেয়েদের এই দোষ। এরা যেখানে সেখানে ফাজলামো করে, ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলে। আঁতকে উঠলো মৌমিতা। ভয়ে ভয়ে পাশ ফিরে তাকালো তাজ দেখেনি তো। তাজ দেখলে আজ ঐ ছেলেটা শেষ। ছেলেটার বয়সটাও বেশি মনে হচ্ছে না। বয়সে বোধহয় মৌমিতার ছোটই হবে।
তাজ ভয়ংকর দৃষ্টিতে ঐ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। তাজ রেগে গেছে ভীষণ । উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলে সজোরে একটা আঘাত করলো সে। কাঁচের টেবিল ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তাজের হাত কেটে গড়িয়ে রক্ত ঝড়ছে। তাজ ঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে ছেলেটাকে একটা লাথি দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দিল। ছেলেটার শার্টের কলার ধরে টেনে তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল – হাউ ডেয়ার ইউ। তোর সাহস কি করে হলো আমার মৌ এর সাথে অসভ্যতামো করিস। তোর এই মুখ উঠিয়ে আমার মৌয়ের দিকে চু’মু’র ইঙ্গিত করেছিস না এই মুখই আজ ভেঙে দেব।
তাজ সজোরে ছেলেটার মুখের উপর একটা ঘুষি মারলো। ছেলেটার ঠোঁট কেটে রক্ত ঝড়ছে । রেস্টুরেন্ট কতৃপক্ষ ছুটে এসেছে। তারা তাজের হাত থেকে ঐ ছেলেটাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কেউ পারছে না। তাজের শরীরে যেন কোনো জন্তুর শক্তি ভর করেছে। ১০ জন মিলেও তাজের সাথে পারছে না। রেস্টুরেন্টের মালিক দৌড়ে গেল পুলিশকে খবর দিতে। পুলিশের কথা শুনেই ভরকে গেল মৌমিতা। সে কিছুতেই তাজকে পুলিশের হাতে পড়তে দিবে না । এখন কি করা যায়? কিভাবে শান্ত করা যায় তাজকে ভেবে পাচ্ছে না।
মিনিট খানেক ভেবে ভাঙা কাঁচ নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চেপে ধরলো মৌমিতা। হাত কেটে রক্তাক্ত হয়ে গেছে, ব্যথায় “আহ” করে আর্তনাদ করে উঠলো মৌমিতা। মৌমিতার ব্যথাতুর কন্ঠ কর্নগোচর হতেই চমকে উঠলো তাজ। পাশ ফিরে তাকিয়ে মৌমিতার হাতে রক্ত দেখে অস্থির হয়ে পড়লো সে। ছেলেটাকে ছেড়ে দৌড়ে গেল মৌমিতার কাছে। অস্থির হয়ে মৌমিতার হাত ধরলো। ব্যথাতুর কন্ঠে বলল – লেগেছে তোমার? কিভাবে কাটলো, দেখি দেখি।
তাজের মুখ দেখে মনে হচ্ছে ব্যথা মৌমিতা নয় তাজ পেয়েছে। দ্রুত নিজেই মৌমিতাকে নিয়ে বেরিয়ে পরলো সে।
হাসপাতালে বসে আছে মৌমিতা আর তাজ। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়েই মৌমিতাকে নিয়ে তাজ হাসপাতালে এসেছে। মৌমিতা জেদ ধরে বসে আছে তাজ হাতে ব্যান্ডেজ না করলে সেও করবে না। তাজও বসে আছে সে হাত ব্যান্ডেজ করবে না। মৌমিতাও নাছোড়বান্দা। ডাক্তার একবার মৌমিতার মুখের দিকে তাকাচ্ছে একবার তাজের। সেও খুব বিরক্ত হচ্ছে। শেষমেশ ডাক্তার বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো, বলল – আগে আপনারা ঠিক করুন হাতে ব্যান্ডেজ করবেন কিনা তারপর আসুন।
উঠে দাঁড়ালো তাজ। মৌমিতার দিকে একবার তাকিয়ে হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলল – আগে আমার হাতটা ব্যান্ডেজ করুন তারপর ওরটা।
মৌমিতার ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো যেন সে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।
___________________________________
সকাল ৭ টা ভোরের আলো ফুটেছে। রাতের নীরব শহরটা ব্যস্ত হতে শুরু করেছে। গাড়ির প্যা পো ধ্বনি ভেসে আসছে। মৌমিতা এখনও ঘুমিয়ে আছে। ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পরে আবার ঘুমিয়েছে সে। হঠাৎ বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা কর্কশ কন্ঠে বেজে উঠল। ঘুমের মধ্যে চোখ মুখ কুঁচকে এলো মৌমিতার। বালিশের পাশ হাতরে মোবাইলটা হাতে নিল। মোবাইলের স্ক্রিনে কল দাতার নাম দেখে উঠে বসলো সে। রাদীফ স্যার কল করেছে তাও এত সকালে। তাছাড়া উনি তো দেশে ছিলেন না। নাম্বারটা তো বাংলাদেশের, উনি দেশে ফিরলেন কবে। আর কিছু না ভেবে কলটা রিসিভ করলো মৌমিতা।
– আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।
রাদীফ অস্থির কন্ঠে বলল – ওয়ালাইকুমুস সালাম। মৌমিতা তুমি একটু দ্রুত তাজের কাছে যাও।
– কেন কি হয়েছে উনার।
– এত কথা বলার সময় নেই পরে তোমাকে সব বলবো এখন তুমি একটু দ্রুত তাজের কাছে যাও।
কলটা কেটে দিল রাদীফ। মৌমিতার ভয় লাগছে। কি এমন হয়েছে যাতে এত সকালে রাদীফ মৌমিতাকে তাজের কাছে যেতে বলছে। তাজের আবার কিছু হয়নি তো। ভাবতেই ভয়ে কলিজা শুকিয়ে এলো মৌমিতার। দ্রুত উঠে রেডি হয়ে হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে।
_______________________________
তাজের বাসার সামনে এসেই ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার। দরজাটা খোলা। এত সকালে দরজা খোলা কেন। কিছু না ভেবেই বাসার ভিতরে ঢুকে গেল সে।
ড্রইং রুমে সোফায় বসা তাজ। তারই মুখোমুখি সোফায় বসা এক মধ্যবয়সী মহিলা। মহিলার বয়সটা বেশি হলেও এখনও তার সর্বাঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া। মহিলা একটা জিন্স আর টপস পড়ে আছে। মহিলার পোশাক দেখেই নাক মুখ কুঁচকে এলো মৌমিতার। মধ্যবয়সী মহিলার পাশেই বসে আছে অতিসয় সুন্দরী এক যুবতী। মেয়েটির চেহারায় বিদেশি বিদেশি একটা ভাব। মেয়েটির অবস্থাও একই , অতিরিক্ত আধুনিক। ছোট একটা জামা পড়ে বসে আছে। পেট পিঠের অধিকাংশ অংশই খোলা।
সকাল সকাল মেজাজটাই চটে গেল মৌমিতার। এই রকম আর্ধ নগ্ন একটা মেয়ে কিনা তাজের সামনে বসে আছে। ইচ্ছে তো করছে এখনই মেয়েটার চুলের মুঠি ধরে টেনে বাড়ির বাহিরে বের করে দিতে। নিজেকে সংযত করে তাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মৌমিতা। সামনে কারো উপস্থিতি অনুভব করে চোখ তুলে তাকালো তাজ। এতক্ষন নিজের রাগ সংবরণ করতে নিচের দিকেই তাকিয়ে ছিল সে। এই সময় মৌমিতাকে দেখে খানিকটা অবাক হলো সে । অবাকের কন্ঠেই বলল – এই সময় তুমি এখানে?
মৌমিতা দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিল – কেন এসে আপনার কোনো ক্ষতি করে দিলাম নাকি?
তাজ আমতা আমতা করে বলল – না তা নয়। এভাবে বলছো কেন?
– কিভাবে বলছি?
– না কিছু না।
মৌমিতা আর তাজের কথপোকথনের মধ্যে বাঁধা হলো ঐ মধ্যবয়সী মহিলা। ভ্রু কুঁচকে শুধালো – এই মেয়ে তুমি কে? তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।
তাজ মহিলাটির দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল – আমার বর্তমান গার্লফ্রেন্ড আর ভবিষ্যত বউ।
উত্তরটা বোধহয় পছন্দ হলো না ঐ মধ্যবয়সী মহিলার বা পাশের অর্ধ উ’ল’ঙ্গ মেয়েটির। তেতে উঠল মধ্য বয়সী মহিলাটি, কঠিন গলায় বলল – এসব কেমন কথা তাজ, আমরা নয়নার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছি আর তুমি বলছো এই মেয়েটি তোমার ভবিষ্যৎ বউ?
এতক্ষনে মৌমিতা বুঝলো এই দুই আধুনিক নারীর এখানে আসার মানে। আর পাশের এই অর্ধ উ’ল’ঙ্গ মেয়েটির নাম যে নয়না তাও বুঝতে পেরেছে খুব করে।
কিন্তু এই মধ্যবয়সী নারীটি কে যে কিনা ওর সামনে ওর কলিজায় হাত দিয়েছে। তাও আবার যেই সেই হাত না একদম কলিজা ছিঁড়ে নেওয়ার মতো হাত। মৌমিতা কিছু বলার আগেই তাজ উত্তর দিল – আপনাকে আমার কথা এত না ভাবলেও চলবে , আমার ভাবনা ভাবার জন্য এখন আমার কাছের মানুষ চলে এসেছে।
– এগুলো কেমন ধরনের কথা তাজ। তুমি ভুলে যেও না আমি তোমার মা।
– দয়া করে আপনার মুখে মা কথাটা উচ্চারণ করে মা শব্দটার অপমান করবেন না । আপনার মুখে মা শব্দটার মতো এতো পবিত্র একটা শব্দ মানায় না। তবুও আপনি যখন আমার মা হওয়ার দাবি করলেন তখন আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আপনি আমার কাছে শুধু মাত্র আমার জন্মদাতা পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী তাছাড়া আর কিছুই নয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন মিসেস সাদিক চৌধুরী
এই মহিলাই তাহলে তাজের সেই ডায়নী , রাক্ষসী সৎমা বুঝতে পারল মৌমিতা। এতদিন পর এই মহিলা আবার এখানে কেন এসেছেন, তাজকে কষ্ট দিতে। না না মৌমিতা থাকতে আর তাজকে কষ্ট দিতে দিবে না।
হীরা ( মিসেস সাদিক চৌধুরী মানে তাজের সৎ মায়ের নাম হীরা ) বলল – এবার কিন্তু তুমি আমাকে অপমান করছো তাজ।
– আপাতত আমি আপনাকে শুধু অপমান করছি। এরপর আমি রেগে গেলে পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে বুঝতেই পারছেন।
– হ্যা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি মানসিকভাবে অসুস্থ। তবুও তোমার জন্য আমার ভাইয়ের মেয়েকে বলি চড়াতে চেয়েছিলাম তোমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আর তুমি কিনা এই গাইয়া মেয়েটার জন্য তাকে রিজেক্ট করলে?
দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ করেছে তাজ। মৌমিতা পরিস্থিতিটা বেশ ভালোই আন্দাজ করতে পারছে। এরপর এখানে নির্ঘাত কোনো টর্নেডো বয়ে যাবে । মৌমিতা হাত জোর করে হীরাকে বলল – প্লিজ আপনারা এখান থেকে এই মুহূর্তে চলে যান।
তেতে উঠল হীরা , বলল – এই মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছো। গাইয়া , আনকালচার মেয়ে একটা। তাজ যে কি দেখে তোমাকে পছন্দ করেছে কে জানে?
চলবে….
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা গল্পের লিংক
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৭