প্রণয়েরব্যাকুলতা সাদিয়া পর্ব১৫
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
ড্রইং রুমে বসে আছে মাহিম আর তাজ। মাহিম তাজের ফোনে গেমস খেলছে আর তাজ বারবার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর ঠোঁট কামড়ে ধরছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কারো অপেক্ষা করছে।
হঠাৎই বেজে উঠল বাড়ির কলিং বেলটা, বিশ্ব জয়ের হাসি হাসলো তাজ। ঠোঁটে চওড়া একটা হাসি ঝুলিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ালো। মৌমিতা দাঁড়িয়ে আছে।
মাহিমকে তাজের নিয়ে আসার ভাইয়ের জন্য অস্থির লাগছিল মৌমিতার। কতদিন পর আদরের ছোট ভাইটাকে দেখেছিল সে। তার উপর নাকি বাড়ি পালিয়ে এসেছে।
মাহিমকে নিয়ে তাজ চলে আসার ঘন্টা খানিকের মধ্যেই তাজের বাড়িতে এসে হাজির মৌমিতা। তাজকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকলো মৌমিতা। মাহিমকে উদ্দেশ্য করে বলল – এখানে থাকতে হবে না তোর। আজ রাতটা হোটেল থাকবি তুই কাল সিলেট ফিরে যাবি।
- কি গো শালা বাবু তোমার বোনের তো দেখছি ভালোই টাকার গরম। তা আমার দিকেও কিছু ছুড়ে মারতে বলো । বড্ড খড়ায় আছি।
তাজের কথায় পাত্তা দিল না মৌমিতা, রুক্ষ কন্ঠে বলল – তোকে কি বলেছি শুনতে পাশনি? ওঠ তাড়াতাড়ি।
মাহিম মোবাইলের দিকেই নজর রেখে উত্তর দিল – দুলাভাই তোমার অবিবাহিত বউকে এখান থেকে নিয়ে যাও তো। আমার গেমসে ডিস্টার্ব হচ্ছে।
তাজ খপ করে ধরলো মৌমিতার হাতটা , টেনে বাইরে নিয়ে এলো। মৌমিতা চেঁচিয়ে বলল – সমস্যা কি কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
- শুনলে না আমার শালাবাবু কি বলল ওর গেমস খেলায় ডিস্টার্ব হচ্ছে।
কটমট করে তাকালো মৌমিতা। রাগী কন্ঠে বলল – হাত ছাড়ুন আমার।
তাজ হাত ছাড়লো না , উল্টো আরও শক্ত করে ধরে বাগানের দিকে নিয়ে এলো।
মৌমিতা চেঁচিয়ে বলল – কি সমস্যা কি আপনার? আমি তো আপনার থেকে দূরেই চলে গেছি, বিরক্ত করছি না আর আপনাকে তবুও কেন আমার সাথে এমন করছেন?
হাত ছেড়ে দিল তাজ, করুন কন্ঠে বলল – এটাই তো আমার সমস্যা, কেন কথা বলছো না আমার সাথে? কেন বিরক্ত করছো না আমাকে? কেন ইগনোর করছো আমাকে?
- এতকিছুর পরেও আপনার এই প্রশ্নের কোনো মানে হয় না মিস্টার আবরার তাজ।
- এভাবে কেন বলছো? তুমি তো কখনও আমার নাম ধরে বলোনি তাহলে আজ কেন বলছো?
- তখন একটা ভুল ধারনা নিয়ে ছিলাম তাই বলিনি এখন ভুল ধারনাটা ভেঙে গেছে তাই বলছি।
- কোনো ভুল ধারনা ছিল না তোমার।
- সঠিক ধারনাও ছিল না।
- সঠিক ধারনাই ছিল তোমার। ভালোবাসি আমি তোমাকে।
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো মৌমিতা, বলল – ভালোবাসাটা কি আপনার খেলনা জিনিস মনে হয়? যখন ইচ্ছে হবে ভালোবাসবেন যখন ইচ্ছে হবে বাসবেন না। কি যেন সেদিন বলেছিলেন আপনি আমার মতো সস্তা নয়। তাহলে আজ কেন নিজেকে সস্তা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
- স্যরি মৌ, ভুল করেছি আমি সেদিন। প্লিজ মাফ করে দেও আমাকে।
- আপনি কোনো ভুল করেননি, ভুল আমি করেছিলাম তার শাস্তিও পেয়েছি।
মৌমিতার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল তাজ, অপরাধীর স্বরে বলল – স্যরি মৌ, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। আমি জানি সেদিন আমি ভুল করেছি কিন্তু আমার এই ভুলের পিছনে একটা কারন আছে । আমার সেই কারনটা তো শুনবে।
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মৌমিতা, শক্ত কন্ঠে বলল – আমি কিছু শুনতে চাই না। নাটক করছেন আমার সাথে? একবার আপনার নাটকে আমি ভুলেছি আর না। অতটা বোকাও আমি নই।
- আমার কথাটা তো শুনবে।
কোনো কথা শুনলো না মৌমিতা। হনহন করে ঢুকে গেল বাড়ির ভিতরে। মাহিমের সামনে দাঁড়িয়ে রুক্ষ কন্ঠে বলল – চল আমার সাথে। এখানে থাকবি না তুই।
- ও কোথাও যাবে না। আমার কাছেই থাকবে ও।
- আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলছি না মিস্টার আবরার তাজ। আমি আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলছি তাই আপনার কাছ থেকে কোনো উত্তর আশা করছি না।
চিৎকার করে উঠল মাহিম, কানে হাত দিয়ে বলল – থামবে তোমরা? দুই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড ঝগড়া করেছো ভালো কথা কিন্তু এখানে এসে আমার কানের উপর অত্যাচার চালাচ্ছো কেন?
- তুই আমার সাথে চল তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
- না ও কোথাও যাবে না। আমার কাছেই থাকবে।
- ও আমার ভাই, আমার ভাই কোথায় থাকবে না থাকবে সেই সিদ্ধান্ত আমি নেব আপনি নন।
- ও আমার শালাবাবু। দুলাভাইয়ের বাড়ি থাকতে ও কোনোদিনই হোটেলে থাকবে না।
ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার, অবাক হয়ে বলল – কিসের শালা বাবু আর কিসের দুলাভাই?
লাজুক হাসলো তাজ। থতমত খেয়ে গেল মৌমিতা। এই প্রথম তাজের মুখে এমন উদ্ভট মার্কা হাসি দেখলো মৌমিতা। ঠোঁটে লাজুক হাসি নিয়েই তাজ বলল – তুমি আমার বউ হলে তোমার ভাই তো আমার শালাই হবে তাই না?
বিষ্ময়ে হা হয়ে গেল মৌমিতা। এই বান্দার আবার কি হলো? একটু আগে এত শক্ত শক্ত কথা বলার পরও এর মুখে এমন উদ্ভট মার্কা হাসি আবার কি সব কথা বলছে। পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি।
- তাহলে ঐ কথাই রইলো শালা বাবু আমার কাছেই থাকবে।
- না ও আমার সাথে যাবে।
মাহিম বিরক্তি নিয়ে বলল – আমি উপরে যাচ্ছি তোরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নে আমি কোথায় থাকবো তারপর আমাকে জানাস।
মৌমিতা কটমট করে তাজের দিকে তাকালো। তাজ ভাবলেশহীন ভাবে বলল – ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই আমার শালাবাবু আমার কাছেই থাকবে।
মৌমিতা দাঁতে দাঁত চেপে বলল – আমিও দেখি কিভাবে আপনার কাছে থাকে। বাবা মাকে খবর দিয়েছি উনারা আসছেন বলে গটগট করে বেড়িয়ে গেল।
আষাঢ় মাস, আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। হয়তো একটু পরই বৃষ্টি নামবে। গুমোট হয়ে আছে আবহাওয়াটা। মাহিম অনেক আগেই চলে গেছে। তার বাবা মা এসে নিয়ে গেছেন। কলেজের বারান্দা থেকে আনমনেই হাঁটছিল মৌমিতা। হঠাৎ পেছনে কারো ডাক শুনে থমকে দাঁড়ালো মৌমিতা। পেছন ফিরে তাকালো সেদিনের সেই ছেলেটা হাত নাড়িয়ে ওর দিকে ইশারা করছে। ভ্রু কুঁচকে তাকলো মৌমিতা। ছেলেটা এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো।
- সেদিন নামটা না বলেই চলে গিয়েছিলেন।
- কেন নামটা বলার কথা ছিল বুঝি?
- আপনি সব সময় এমন ত্যারা ত্যারা কথা বলেন কেন?
- আমি মানুষটাই ত্যারা।
- এর জন্যই তো আপনাকে এত ভালো লাগে।
- মানে?
- কিছু না । সেদিন সাহায্য করেছিলাম সেই ভদ্রতায় নামটা তো জানতেই পারি তাই না।
অনিচ্ছা থাকি সত্ত্বেও বলল – আমি মৌমিতা।
- সুন্দর নাম। আমি নিশান। কোন ইয়ার আপনি?
- ফার্স্ট ইয়ার।
- আমার থেকে অনেক ছোট। আমি লাস্ট ইয়ার।
হঠাৎ চোখ চেপে ধরলো মৌমিতা। চোখে হয়তো কিছু একটা ঢুকেছে। পানি বেড়িয়ে গেছে চোখ থেকে।
নিশান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল – কি হয়েছে?
- চোখে কিছু একটা পড়েছে বোধহয়।
- কই দেখি বলে হাত বাড়ালো মৌমিতার দিকে। মৌমিতা সরে গেল। নিশান বুঝতে পারলো মৌমিতার সরে যাওয়ার কারন সেও হাত গুটিয়ে নিল। না ধরেই বলল – আপনি নিজের হাতে চোখটা বড় করে ধরুন আমি ফুঁ দিচ্ছি। মৌমিতা চোখটা বড় করে ধরলো নিশান ফুঁ দেওয়ার জন্য মুখটা উঁচু করতেই তার মুখে পড়লো সজোরে একটা ঘুষি। ছিটকে গেল নিশান। মৌমিতা চোখের কথা ভুলে গেল। হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনেই চোখ লাল করে হিংস্র রূপে দাঁড়িয়ে আছে তাজ। মনে হচ্ছে এখনই ধ্বংস করে দিবে সব।
একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মৌমিতার হাতটা শক্ত করে ধরলো তাজ। টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে লাগলো নিজের সাথে। মৌমিতা বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। তাজ মে অসম্ভব রেগে আছে তা আর বুঝতে বাকি নেই। এই সময় কথা বলা মানে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা।
মৌমিতাকে টেনে নিয়ে ছুড়ে ফেলল রাদীফের অফিস রুমে। রাদীফ চেয়ারেই বসে ছিল। মৌমিতাকে এভাবে ছুঁড়ে ফেলতে দেখে উঠে দাঁড়ালো সে। মৌমিতার কাছে যাওয়ার আগেই ঝড়ের বেগে তাজ এসে টেনে দাঁড় করালো মৌমিতাকে। এক হাত দিয়ে মৌমিতার গলা চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – খুব সাহস বেড়েছে তোর, একদিন একটু কি বলেছি সে জন্য তুই আমার সাথে রাগ করেছিস, ইগনোর করছিস, আমার কোনো কথা শুনছিস না সব মেনে নিয়েছি তাই বলে তুই অন্য ছেলেদের সাথে ঘুরবি? আজ তোকে মেরেই ফেলবো। তুমি শুধু আমার, শুধু আমার। আমার না হলে তোকে অন্য কারো হতে দেব না।
রাদীফ তাজের হাত থেকে মৌমিতাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পারছে না । তাজের শরীরে যেন কোনো জানোয়ারের শক্তি এসে ভর করেছে। মৌমিতা চোখ উল্টে জিহ্বা বের করে দিয়েছে প্রায়। রাদীফ আর উপায় না পেয়ে ড্রয়ার হাতরে একটা ইঞ্জেকশন বের করলো, তাতে মেডিসিন নিয়ে পুশ করলো তাজের শরীরে। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়লো তাজ। অস্ফুট স্বরে আওরালো – আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি মৌ। তুমি শুধু আমার, শুধুই আমার।
মৌমিতা ভয় পেয়েছে ভীষণ। কোনো রকম উঠে দাঁড়িয়ে ঢকঢক করে রাদীফের টেবিলে রাখা পানি খেয়ে নিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল রাদীফ। শান্ত কন্ঠে বলল – তাজের সম্পর্কে আমার তোমাকে কিছু বলার আছে মৌমিতা।
চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৬
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা গল্পের লিংক