Golpo শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ

প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১২


প্রণয়েরব্যাকুলতা সাদিয়া পর্ব১২

গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা মৌমিতার। নিজের ঘামের গন্ধে নিজেরই গা গুলিয়ে আসছে। পর পর ক্লাস করতে করতে ক্লান্ত সে। ধপ করে লাইব্রেরীতে এসে তাজের পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়লো। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল – এই সময় লাইব্রেরীতে কি করেছেন? আপনাদের তো এই সময় ক্লাস চলার কথা‌।

তাজ কোনো উত্তর দিল না। হাতের বইটা যথাস্থানে রেখে নিঃশব্দে চলে গেল। মৌমিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তাজের যাওয়ার পানে। এর আবার কি হলো? কোনো উত্তর না দিয়েই চলে গেল যে।

মৌমিতা উঠে দাঁড়ালো। তাজের পিছু পিছু পা বাড়ালো। হাঁটা শুরু করলো তাজের পাশে পাশে তাজ একবার ফিরেও তাকালো না তার দিকে। ভ্রু কুঁচকে এলো মৌমিতার। কাল ঠোঁটে চু’মু খেল আর আজ এসেই আবার ইগনোর শুরু করেছে। মতলবটা কি এই ব্যাটার। তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। পা বাড়ালো বাসার দিকে। এখন বাসায় ফিরতে হবে। তাজকে সে কাল দেখে নিবে।


আকাশটা বেশ পরিষ্কার। কোথাও মেঘের আনাগোনা নেই। প্রখর সূর্যের তাপে খা খা করছে চারদিক। একটু বৃষ্টি হলে বোধহয় ভালো হতো। সস্থি পেত প্রাকৃতিটা।

কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে তাজ। এটা যেন তার রোজগার আস্তানা। এই গাছের নিচে না বসলে তার পেটের ভাত হজম হয় না। মৌমিতা এগিয়ে গেলো তাজের দিকে। পা দুটো নাড়িয়ে নুপূরের শব্দে জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি। তাজ ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে। মৌমিতার উপস্থিতি যেন সে টেরই পায়নি। মৌমিতা ধপ করে বসে পড়লো তাজের পাশে। বিরস কন্ঠে বলল – আপনি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না? কথা কেন বলছেন না আমার সাথে?

তাজ কোনো উত্তর দিল না। মৌমিতা তাজের হাত থেকে বইটা টেনে নিয়ে বলল – কি হয়েছে আপনার? আমি কি কিছু করেছি? কথা বলছেন না কেন আমার সাথে?

  • বইটা দেও।
  • না দেব না আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।

তাজ মৌমিতাকে ঝাড়ি দিয়ে বলল – সমস্যা কি তোমার? এমন করছো কেন? সবসময় আমার সাথে এভাবে চিপকে থাকো কেন? এত লো কোয়ালিটির মেয়ে হয়ে গেলে কবে থেকে?

মৌমিতার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। তাজ ওকে লো কোয়ালিটির মেয়ে বলেছে, তাজ। বিশ্বাস করতে পারছে না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না, হতবাক হয়ে বসে আছে মৌমিতা।

তাজ আর বসে থাকতে পারলো না মৌমিতার সামনে। ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। মৌমিতার চোখে স্পষ্ট পানি। সহ্য হচ্ছে না তাজের। কিন্তু মৌমিতার ভালোর জন্য হলেও ওকে সহ্য করে নিতে হবে। উঠে দাঁড়ালো তাজ, লম্বা লম্বা পা ফেলে প্রস্থান করলো সে। নীরবে নিঃশব্দে মৌমিতার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো দুই ফোঁটা পানি।

মৌমিতা হাল ছাড়লো না। সে জানে তাজ ঐসব কথা তাকে মন থেকে বলেনি। সে খুব ভালোভাবেই চিনে তাজকে। এই কয়দিনে মানুষটাকে মে বড্ড আপন করে নিয়েছে সে। ছেলেটার চোখের দিকে তাকালেই সব রাগ , অভিমান, অপমান সব ভুলে যায় মৌমিতা। নিশ্চই তাজের কিছু হয়েছে না হলে সে কখনও মৌমিতার সাথে এমন ব্যবহার করতো না।

লাগাতার কলিং বেলের আওয়াজে দরজা খুললো তাজ। এসময় আবার কে এলো। ওর বাড়িতে তো একমাত্র রাদীফ ছাড়া আর কেউ আসে না। সেও তো এখন কলেজে। আর ও ক্লাস না করেই বাড়িতে চলে এসেছে রাত যাতে মৌমিতার সাথে দেখা না হয়। দরজা খুলেই মৌমিতাকে দেখে চমকে উঠলো তাজ। যার জন্য কলেজ থেকে পালিয়ে বাড়ি এসেছে সে এখন বাড়িতে এসেই হাজির। এক প্রকার তাজকে ঠেলেঠুলে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল মৌমিতা। তাজ হা হয়ে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।

  • এই আগুন চোখা শয়তান খাবার জন্য কিছু আছে? খুব ক্ষুদা লেগেছে আমার।

ছোট ছোট ছোট করে তাকালো তাজ, অবাক কন্ঠে বলল – তুমি এখন আমার বাড়িতে?

  • সেসব কথা পড়ে হবে আগে আমাকে খাবার দিন, খুব ক্ষুদা লেগেছে।

তাজ সার্ভেন্টকে ডেকে কিছু খাবার ব্যবস্থা করলো। বেশ তৃপ্তি সহকারে খাবার খেয়ে সোফায় বসে ঢেকুর তুললো মৌমিতা। নাক মুখ কুঁচকে নিল তাজ। বিরস কন্ঠে বলল – এখন বলো আমার বাড়িতে কেন?

  • কেন আমি আসতে পারি না?

তাজ শক্ত কন্ঠে বলল – না তুমি আসতে পারো না।

মৌমিতা মুখ বাঁকিয়ে বললো – ইসসসস ডং, নিজে যখন তখন নিয়ে আসতে পারেন আর আমি একা আসলেই দোষ।

  • আর আনবো না।
  • কেন আনবেন না?
  • কারন আমার সেই অধিকার নেই।
  • সেই অধিকারটা যদি আমি আপনাকে দেই তাহলেও আনবেন না?

তাজ চেঁচিয়ে বলল – না আনবো না কখনও আনবো না। আমার প্রয়োজন নেই সেই অধিকারের।

মৌমিতা অবাক হয়ে বলল – আপনি তো এমন ছিলেন না তবে কেন এমন করছেন?

  • কেমন করছি?

মৌমিতা তাজের একহাত নিজের মুঠোর মধ্যে নিল, অসহায় কন্ঠে বলল – আমি কি কোনো অন্যায় করেছি? আপনি আমাকে ইগনোর কেন করেছেন? আমি যে আপনার ইগনোরটা মানতে পারছি না।

তাজ হাত ঝাড়া দিয়ে হাতটা সরিয়ে নিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – এতটা নির্লজ্জ কেন তুমি? সকলে এত কথা বলার পরও তোমার লজ্জা হয়নি? এতটা চিপ মেন্টালিটির মেয়ে তুমি? এসব ট্রিকস অন্য ছেলেদের সামনে এপ্লাই করো কাজে লাগবে আমার সামনে করো না। আমি তোমার মতো সস্তা নই ‌।

মৌমিতা হতবাক, তাজ এসব কি বলছে। তাজের মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি ধ্বনি যেন মৌমিতার কলিজাটা ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। চোখের কোনে পানি এসে জমেছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলল – কি বলছেন আপনি?

তাজ মৌমিতার হাতটা খপ করে ধরলো। টেনে দরজার বাইরে বের দিয়ে বলল – আর কখনও যেন আমার বাড়িতে বা আমার আশে পাশে দেখি না তোমাকে। তোমার মতো সস্তা মেয়ের জায়গা এই তাজের কাছে নেই।

মৌমিতা কিছু বলার আগেই ওর মুখের উপর দরজাটা আটকে দিল তাজ।

  • দরজা খুলুন প্লিজ। আপনি এমন কেন করছেন আমার অপরাধটা কি সেটা বলবেন। প্লিজ এমন করবেন না আমার দম বন্ধ লাগে। প্লিজ দরজাটা খুলুন।

দরজার বাইরে থেকে সমান তালে দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে মৌমিতা আর কেঁদে যাচ্ছে কিন্তু তাজ দরজা খুলছে না। তাজের কলিজাটাও ছিঁড়ে যাচ্ছে। এত শক্ত শক্ত কথা বলার সময় বারবার কেঁপে উঠছিল তার কন্ঠনালী। কিন্তু মেয়েটা এখনও যাচ্ছে না কেন? এত অপমানের পরও মেয়েটা ওর পিছনেই কেন পড়ে আছে? মেয়েটার এমন আর্তনাদ যে ওর ভিতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রা করে দিচ্ছে।

মিনিট দশেক পর থেমে গেল মৌমিতার দরজা ধাক্কানো। তাজের কলিজাটা ছ্যাত করে উঠলো। দৌড়ে গেল বারান্দায় , বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলো মৌমিতা চলে যাচ্ছে। এক হাতে বারবার চোখের জল মুছছে। তাজের চোখের কোনেও পানি। মৌমিতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সে বিরবির করে বলল – আমাকে ক্ষমা করে দিও মৌ। এছাড়া যে আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। আমিও যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। আমি আমার এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে তোমার জীবনটা জড়াতে চাই না।


রাদীফের অফিস রুমে বসে আছে মৌমিতা। একের পর এক টিস্যু নিচ্ছে আর নাক মুছে যাচ্ছে। রাদীফ এত জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কোনো উত্তরই দিচ্ছে না শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। শেষে আর উপায় না পেয়ে রাদীফ ফোন লাগালো তাজকে। সবটা বলতেই তাজ ছুটে এসেছে । তাজকে দেখেই রাদীফ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

কেঁদে কেটে মেয়েটা নিজের মুখের কি অবস্থাটা না করেছে। চোখ মুখ ফুলে গেছে। নাকটা লাল হয়ে গেছে। বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে তাজের। কষ্ট হচ্ছে খুব, তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে শক্ত কন্ঠে বলল – সমস্যা কি তোমার এখানে কেন এসেছো? আমার বাড়িতে গিয়ে শান্তি হয়নি, এখান কাকাইয়ের অফিস রুমেও চলে এসেছো?

তাজের কন্ঠস্বর শুনেই পিছন ফিরে তাকালো মৌমিতা। দৌড়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাজকে। নাক টেনে টেনে বলল – আপনি এমন কেন করছেন আমার সাথে? তখন অত বাজে বাজে কথা কেন বললেন? জানেন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি। খুব কান্না পেয়েছিল আমার।

নিজের থেকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিল মৌমিতাকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল – একদম ন্যাকা সাজবে না। তোমার কষ্ট হলে আমি কি করবো। সকাল থেকে এত কথা বলছি তবুও পিছু ছাড়ছো না। এত বেহায়া কেন তুমি?

  • ভালোবাসা আমাকে বেহায়া করেছে।

ধ্বক করে উঠলো তাজের বুকটা। তবে কি মৌমিতাও ওকে ভালোবাসে তাই ওর এত বাজে বাজে কথা শুনেও বারবার ওর কাছে ছুটে আসছে। হৃদয়ে যেন প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল। ইচ্ছে করছে মৌমিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। হাত দুটো উঁচু করেও নিজেকে সামলে নিল। শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো – ভালোবাসা কিসের ভালোবাসা?

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply