প্রথম দিন কলেজে গিয়েই এক সুদর্শন যুবকের হাতে সপাটে চড় খেয়ে বাসায় ফিরলো মৌমিতা। রাগে গা রি রি করছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গালে হাত বুলাচ্ছে সে। ছেলেটার শক্ত হাতের ছাপ পড়ে গেছে গালে। ব্যথায় গালটা টনটন করছে। ইচ্ছে তো করছে ছেলেটাকে মাথায় তুলে আছাড় মারতে তারও উপায় নেই। রাগে, লজ্জায় কান্না পাচ্ছে মৌমিতার। কলেজে এতগুলো মানুষের সামনে কিনা এইভাবে অনার্সে পড়ুয়া একটা মেয়েকে একটা ছেলে এইভাবে চড় মেরে গাল ফাটিয়ে দিল। কে কি ভেবেছে কে জানে? কলেজের প্রথম দিন কলেজে পা রাখতে না রাখতেই মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি বাজলো মৌমিতার।
🌸 ( ফ্লাসব্যাক ) 🌸
পাহাড়ে ঘেরা সিলেটের ছোট্ট একটা শহরের মেয়ে মৌমিতা। পড়াশোনার উদ্দেশ্য পাড়ি জমিয়েছে ঢাকায়। এই প্রথম তার রাজধানীতে আসা। ছোট বেলা থেকেই ভীষণ ইচ্ছে ছিল ঢাকায় পড়াশোনা করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি কিন্তু ঢাকায় স্বনামধন্য ভার্সিটি কলেজের তো অভাব নেই। তারই এক কলেজে জায়গা করে নিয়েছে সে, সঙ্গে আছে তার আরেক বান্ধবী। একটা ছোট রুম নিয়ে দুই বান্ধবী সেখানে উঠেছে এই তো দিন কয়েক আগেই। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ার সুবাদে ছোট বেলা থেকে কাছ ছাড়া করেনি তারা, অবশ্য মৌমিতার একটা ছোট ভাই আছে তবুও মৌমিতার জন্য তাদের ভালোবাসা যেন আলাদাই। অনেক কষ্টে তাদের বুঝিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে সে পাড়ি জমিয়েছে ঢাকায়।
আজ মৌমিতার কলেজের প্রথম দিন। কলেজের গেটে পা রেখেই আনন্দে হৃদয় যেন লাফিয়ে উঠলো। ইস কতদিনের স্বপ্ন এমন একটা কলেজে পড়বে। আজ স্বপ্নটা পূরন হলো। অবাক চোখে দেখছিলো কলেজের আশে পাশের দৃশ্য। আনমনেই কলেজ দেখতে দেখতে হাঁটছিল মৌমিতা। হঠাৎ কিছু একটার সাথে মাথায় বারি লেগে থমকে দাঁড়ালো সে। সামনে কিসের সাথে ধাক্কাটা খেল দেখার আগেই কারো শক্ত হাতের চড় পড়লো মৌমিতার নরম গালে। মৌমিতা থমকালো, ভরকালো, চমকে উঠলো। সামনে তাকিয়েই দেখে আগুন চোখে এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। যুবকটির মুখশ্রী চুঁইয়ে চুঁইয়ে যেন জ্বলন্ত লাভা নামছে। মৌমিতা গালে হাত দিয়ে হতবম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো আগুন চোখা সুদর্শন যুবকটির দিকে। কি , কেন, কিসের জন্য কিছুই মস্তিষ্কে যাচ্ছে না তার। কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলছে সে। এই যুবক কেন তার নরম গাল হঠাৎ গরম করলো মাথায় ঢুকছে না মৌমিতার। নিজেকে সামলে সামনে দাঁড়ানো সুদর্শন যুবককে কিছু বলবে তার আগেই আরেকজন যুবক এসে ঐ সুদর্শন যুবককে টেনে নিয়ে গেল। মৌমিতা এখনও স্তব হয়ে তাকিয়ে আছে ঐ যুবকটির যাওয়ার পানে।
🌸 ( বর্তমানে ) 🌸
- মেয়েটিকে তুই এভাবে মারলি কেন তাজ?
হুংকার দিয়ে উঠলো তাজ। চিৎকার করে উঠল – সী টাচড মি। সে আমায় ছুঁয়েছে, ছুঁয়েছে আমায়।
- ও তো তোমাকে ইচ্ছে করে স্পর্শ করেনি তাজ। হাঁটতে হাঁটতে ভুলবশত ধাক্কা লেগে গেছে।
- হাঁটার সময় চোখ কোথায় রেখে হাঁটে, ধাক্কা কেন লাগবে? আর এত মানুষ থাকতে আমার সাথেই কেন ধাক্কা লাগবে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলল রাদীফ, তাজকে জিজ্ঞেস করলো – ঔষধ খেয়েছিস আজ?
বিরক্তি নিয়ে তাজ জবাব দিলো – আমার ঔষধ খেতে ভালো লাগে না কাকাই, আর কতবার বলবো?
- এর মানে আজও তুই ঔষধ না খেয়ে কলেজে এসেছিস?
- আমার তো কোনো সমস্যা নেই কাকাই। আমি একদম ফিট আছি তবুও রোজ রোজ কেন আমায় ঔষধ খেতে হবে?
- ঔষধগুলো তোর শরীরের জন্য উপকারী। এই যে একটু আগে মেয়েটাকে চড় মারলি এর জন্য তো শক্তির প্রয়োজন। আর ঐ ঔষধগুলো তোর শরীরে শক্তি জোগাবে।
রাদীফের এমন উল্টা পাল্টা যুক্তিতে ভ্রু কুঁচকে এলো তাজের। মাঝে মাঝেই ঔষধ খাওয়ানোর জন্য এমন উদ্ভট যুক্তি দেখায় রাদীফ। তাজের কাছে এ আর নতুন কি।
বসন্তকাল, চারদিকে ফুরফুরে পরিবেশ। গাছে গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। অতিথি পাখির কলকাকলিতে কলেজ প্রাঙ্গন মুখরিত। ক্যাম্পাসে নতুনদের আনাগোনা। মৌমিতা আজও কলেজে একাই এসেছে , নীরা ( মৌমিতার বান্ধবী + রুমমেট ) দুইদিন পর থেকে নাকি ক্লাস করা শুরু করবে। কলেজের বারান্দা থেকে উৎফুল্ল মন নিয়ে একা একাই হাঁটছিল মৌমিতা। আশেপাশে তাকাতে তাকাতে হঠাৎই নজর পড়লো একটু দূরে এক যুবকের উপর। এই তো সেই কালকের আগুন চোখা সুদর্শন যুবক। যুবকটিকে দেখেই পুরোনো রাগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো মৌমিতার। রাগে দাঁত কিড়মিড় করছে। যুবকটি কলেজ মাঠের এক পাশে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে একা একা বসে কি যেন পড়ছে, হাতে তো একটা বই দেখা যাচ্ছে। নিশ্চই পড়ছে। হাবভাব দেখে মনে হয় ভাজা মাছটা যেন উল্টে খেতে জানে না। মনে মনেই একটা ভেংচি কাটলো মৌমিতা। নাহ এখন কিছু করতে হবে না হয় মাথা ঠান্ডা হবে না ওর। কাধের ব্যাগটা ঠিক করে হাঁটা ধরলো সামনের দিকে।
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে তাজের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মৌমিতা। তাজ এক মনে বইয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে। আশেপাশে কি হচ্ছে তার কোনোদিকেই খেয়াল নেই তার। মৌমিতার রাগ তরতর করে আরও বেড়ে গেল। এই ছেলে কিনা ওকে দেখছেই না , পাত্তাই দিচ্ছে না ওকে। রাগে ফুস ফুস করতে করতে বলল – এই মিস্টার আগুন চোখা।
তাজ কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। সে যেন কিছু শোনেইনি। মৌমিতার রাগ আরও বেড়ে গেল। রাগে যেন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে তার। তাজের দিকে একটু ঝুঁকে গেল সে। কোনো কিছু না ভেবেই তাজের কাঁধের উপর সজোরে কামড় বসিয়ে দিল। আকর্ষিক আক্রমণে হকচকিয়ে গেল তাজ। বিষ্ময়ে ব্যথার কথা ভুলে গেছে সে। চকিত হয়ে কাঁধের দিকে তাকাতেই চমকে গেল সে। কালকের সেই মেয়েটা ওর কাঁধ কামড়ে ধরেছে। হতভম্ব তাজ, কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে। এই মুহূর্তে কি বলা উচিৎ মাথায় আসছে না তার। গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে মৌমিতার দিকে।
রাগ কমতেই মনের মধ্যে ভয় পাখা মেলতে শুরু করেছে মৌমিতার । রাগের মাথায় যে সে ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলেছে বুঝতে আর বাকি নেই। এখন কি হবে ভাবতেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো মৌমিতার। কাঁধ ছেড়ে দিল তাজের, কোনো কিছু না ভেবে পিছন ফিরে ভো দৌড় দিল মৌমিতা। এক দৌড়ে কলেজের বাইরে। তাজ এখনও হতবম্ব হয়ে বসে আছে
বাড়ি ফিরে একটার পর একটা জিনিস ভাঙচুর করছে তাজ। রাগ যেন আজ তার সীমা পড় করে ফেলেছে। কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না সে। কেমন হিংস্র রূপ ধারন করেছে সে। একটা পুঁচকে মেয়ে কিনা ওকে কামড় দিয়েছে, ছুঁয়েছে ওকে। মেয়েটাকে হাতের কাছে পেলে এই বাড়ির আসবাবপত্রের মতোই ছুড়ে হয়তো ভেঙে ফেলতো সে। বাড়ির সার্ভেন্টরা সব ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে। রাদীফকে অনেক আগেই কল করে এখানকার পরিস্থিতি জানিয়েছে সে এখনও এসে পৌঁছায়নি।
বাড়ির অবস্থা খুবই শোচনীয়। একটা আসবাবপত্র ভালো নেই। সব ভেঙেচুরে পড়ে আছে। এখনও শান্ত হয়নি তাজ। মাথা চেপে ধরে হুংকার ছাড়ছে একের পর এক। রাদীফ আঁতকে উঠলো, দৌড়ে গেল তাজের কাছে।
- কি হয়েছে ? এমন করছিস কেন?
- ঐ মেয়েটা ওর সাহস কি করে হলো ড্যাম ইট বলে পায়ের কাছে পড়ে থাকা ভাঙা চেয়ারটায় আরেকটা লাথি মারলো।
- ঐ মেয়েটা কি করেছে? এতটা রেগে আছিস কেন?
- ঐ মেয়েটা আমাকে কামড়ে দিয়েছে, আমার কাঁধে কুকুরের মতো কামড়ে দিয়েছে। এখন যদি আমার ১৪ টা ইঞ্জেকশন লাগে?
- মানুষের কামড়ে ইঞ্জেকশন লাগে না চিন্তা করিস না।
- ও আমাকে কুকুরের মতো কামড়ে দিয়েছে। ছোট বেলায় আমার পা’ছা’য় একটা কুকুর কামড়ে দিয়েছিল আমার গুনে গুনে ১৪ টা ইঞ্জেকশন লেগেছিল। মেরে ফেলবো আমি ঐ মেয়েটাকে, একদম মেরে দেব।
রাদীফের ভীষণ হাসিও পাচ্ছে আবার খারাপও লাগছে । কিন্তু এই মুহূর্তে তাজকে শান্ত করা বেশি প্রয়োজন না হয় হিতে বিপরীত কিছু হয়ে যেতে পারে। রাদীফ তাদের সাথে কথা বলতে বলতে তাজের অগোচরেই ঘাড়ের কাছে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করলো। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেল তাজ। ঢলে পড়লো রাদীফের উপর। রাদীফ একজন সার্ভেন্টের সাহায্যে রুমে শুইয়ে দিয়ে আবার নিচে এলো।
কোমড়ে হাত দিয়ে বিরহ মুখে ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে আছে রাদীফ। তাজ দ্যা গ্রেট আবরার তাজ সে রোজ রোজ রেগে গিয়ে ভাংচুর করবে আর তা গুছানোর দায়ভার রাদীফের উপর। প্রতি দিন দিন নতুন নতুন ফার্নিচার কিনতে কিনতে হাঁফিয়ে উঠেছে সে। মাঝে মাঝে চিন্তা করে আর কিনবে না কোনো ফার্নিচার। না থাকবে বাঁশ না বাজবে বাঁশরি । না ফার্নিচার থাকবে আর না ফার্নিচার ভাঙতে পারবে। কিন্তু সেখানেও ভেজাল। এই যে ঘুমিয়েছে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির মধ্যে সব আগের মতো ফার্নিচার না পেলে ঝামেলা শুরু করবে। এরপর ফার্নিচার না পেলে মানুষ ধরে না আবার আছাড় মারে, কবে যেন আবার রাদীফকেই ধরে আছাড় মারে সেই ভয়েও ফার্নিচার কিনে ঘর সাজিয়ে রাখে সে।
গাছে গাছে পাখি নাচছে। পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ায় লাল হয়ে এসেছে গাছের ডাল। কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র ছাত্রীদের আনাগোনা। মৌমিতা কলেজে এসেছে। আজ দুই দিন পর এসেছে, সেদিন যে ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়েছে তারপর আর এই দুই দিন সাহস হয়নি কলেজে আসার। নীরাকে সাথে নিয়ে কলেজে এসেছে। মুখে অবশ্য মাস্ক আর মাথায় ক্যাপ দিয়ে এসেছে সে যাতে ঐ আগুন চোখা শয়তানের চোখে না পড়ে। সেদিনের চড়ের ব্যথা এই তিনদিন ছিল গালে। তিন চারটা নাপা খেতে হয়েছে তাকে। আজ আবার চড় মারলে শেষ মৌমিতা।
চলবে….
প্রণয়েরব্যাকুলতা সাদিয়া পর্ব১
Share On:
TAGS: প্রণয়ের ব্যাকুলতা, সাদিয়া
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৫
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৮
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৭
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১২
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ২৪
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩০
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ১৯
-
প্রণয়ের ব্যাকুলতা পর্ব ৩৪