নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা
নাজনীননেছানাবিলা
পর্ব_৫ প্রথম অংশ
অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌ ❌ ❌ ❌ ❌
কারেন্ট ছিল না তাই দেরি হয়ে গেছে। দুঃখিত🙏🏻
নীলা কালো রঙের বোরকা সাথে কালো রঙের হিজাব পরে নিল। উদ্দেশ্যে তার অফিসে যাওয়ার।আজ অফিসে সে না গেলেই নয়।সে গেলেই তো বড় সর এক বোমা ফোঁটবে। তাই বাসায় বসে না থেকে আজ অফিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। পার্স হাতে নিল এবং পার্সের ভেতর যেই না ফোন ঢোকাতে যাবে ওমনি কিছু একটা মনে পড়তেই তার টনক নড়ে উঠলো।এত ঝামেলায় মাঝে আর ফোন ধরা হয়নি তার। গতকাল সাজার সময় যে ফোনে মেসেজ এসেছিল তা সে এখনো দেখেনি।তাই আর বিলম্ব না করে নীলা ফোন অন করল। ফোন অন করতেই তার মেজাজের ১২টা বেজে গেল । ফোনের ওয়ালপেপারের লক স্ক্রিনে তার এবং ইরফানের ছবি। এবং হোম স্ক্রিনে তার এবং আরশির ছবি।নীলা বিরক্ত হয়ে মুখ থেকে “চ” শব্দ বের করে সর্ব প্রথম আগে ফোনের ওয়ালপেপার চেঞ্জ করল। তারপর চেইক করা শুরু করল মূলত কিসের মেসেজ এসেছে।এই একদিন অনেক মেসেজই এসেছে তার তাই সে সময় অনুযায়ী চেইক করতে লাগলো। ঠিক সেই সময়ে যেই মেসেজটি এসেছিল সেটি খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েই গেল।দেখল একটি মেইল এসেছে। মেইলটি ওপেন করতেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। মেইলটির রিপ্লাই দিয়ে তারপর নিজে নিজে বলল_
“অনেক নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়েছি। অনেক সেক্রিফাইস করেছি। এখন শুধু নিজেকে এবং নিজের স্বপ্নগুলোকে প্রাধান্য দিব। তোমার পিছনে লেগে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবো না ইরফান ভাই। বরং তোমাকে হারে হারে বোঝাবো তুমি কি হারিয়েছো।আই লাভ সিইং মেন ইন রিগ্রেট।”
কথাগুলো বলে ফোন পার্সে ঢুকিয়ে নীলা নিজের গন্তব্যের জন্য বের হয়ে গেল।
“তুই কি চাস আমি এমনটা করি?”
মুনভির বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে মুনভি আর মিহাল। দুজনের দৃষ্টি সামনের দিকে। যেন একে অপরের দিকে তাকাতে তারা দ্বিধা অনুভব করছে। যেন চোখে চোখ পড়ে গেলেই তারা দুর্বল হয়ে পড়বে।
মিহাল গম্ভীর কন্ঠে বলল __
ইয়েস আই ওয়ান্ট দিস। প্রতারকদের সাথে প্রতারণা না করলে চলে না। প্রতারকদের সাথে প্রতারণা করেই তাদেরকে প্রাপ্য শাস্তি দিতে হয়। দিস ইস মিহাল খানস রুলস।
কথাগুলো বলেই মিহাল চলে আসবার জন্য পা বাড়ালো কিন্তু মুনভির কথা শুনে তার পা জোড়া সেখানে থেমে গেল।
প্রতারকদের জন্য কি কোন মেয়েকে ব্যবহার করা ঠিক হবে? কারোর মন নিয়ে খেলা ঠিক হবে?
মুনভি একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থেকে কথাগুলো বলল।মিহালের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল মুনভির বলা কথা শুনে।সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল _
আই ডোন্ট কেয়ার। আমি কোন মেয়ের অনুভূতি নিয়ে কেয়ার করি না।আই অনলি কেয়ার এবাউট ফর মাই মাদার, এবাউট হার ফিলিংস। তো কেউ যদি হার্ট হয় সেই বিষয় নিয়ে আমি ভাববো না। একজনের পাপে দশজন ভোগে। আমার মার খুশির জন্য আমি যেকোনো বাধা পার করতে পারি। আর সত্য খুঁজে বের করতে হলে তো কাউকে না কাউকে ব্যবহৃত হতেই হবে। এখন না হয় সেই পরিবারের মেয়েকেই ব্যবহার করব। সে যদি নিজ থেকে এইখানে না আসে তাহলে আমি নিজে সেখানে যাব। পুরনো ক্ষত জাগ্রত করার সময় এসে গেছে।
কথাগুলো বলেই মিহাল হনহনিয়ে চলে গেল।মুনভি পিছন ফিরে তাকে যেতে দেখে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সামনে খুব ভরো ঝড় আসতে চলেছে।
নীলা মির্জা ইন্ডাস্ট্রির সামনে এসে থামলো। সে গাড়ি চালাতে পারে তাই নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিসে চলে আসলো। একমাত্র মেয়ে হবার কারণে প্রায় সই তার অফিসের দিকটা দেখতে হয়। বাবার পাশাপাশি সে অফিস থেকে অনেক কিছু শিখে গেছে। কিভাবে বিজনেস হেন্ডেল করতে হয়। গাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা নিজের কেবিনে চলে গেল। তার জন্য আলাদা কেবিন আছে।তার বাবা চাচারা সকালেই খাবার খেয়ে এখানে চলে এসেছিল। ইরফান আসবে কি আসবে না সেই সম্পর্কে তার জানা নেই এবং সে জানতেও চায় না। তাকে অফিসে দেখে অফিসের সবাই অবাক হয়ে গেল। যে মেয়ের কাল বিয়ে হবার কথা কিন্তু বিয়ে হলো না সেই মেয়ের ঘরে কান্নাকাটি না করে ঘরে লুকিয়ে না থেকে সোজা অফিসে চলে আসলো। কেউ নীলার এমন কাজ দেখে প্রশংসা করল আবার কেউ বাজে মন্তব্য করল। সবকিছুই নীলার কানে আসলো কিন্তু সে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মন দিল।
ইরফান আরশি কে নিয়ে অফিসে এসেছে। দুজনে মিলে কাপল ড্রেস পরেছে। ইরফান সকালে না খেয়েই নিজের রুমে চলে এসেছিল খাবার টেবিলে অপমানিত হবার পর। আরশিও তার রুমে চলে আসে। তারপর দুজন মিলে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে বাহিরে চলে যায় খাবার খাওয়ার জন্য এবং আরশির মার্কেট করা প্রয়োজন সেই জন্য। তারপর দুজন মিলে অনেকগুলো কাপল ড্রেস কিনল। কারণ তাদের ধারণা এসব পরে নীলার সামনে ঘুরলে নীলা জেলাস ফিল করবে।নীলা নিজের টেবিলে বসে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়ে তাদেরকে আসতে দেখল। নীলার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল।সে বাঁকা হেসে বলল __
আসো ভাইয়া এবং ভাবি আসো। তোমাদের অপেক্ষায় তো ছিলাম।
নিচের হল রুমে বসে তিন ভাই মিলে চা খাচ্ছিল এবং নীলার ব্যপারে কথা বলছিল। তাদের এখন চিন্তা যে নীলা কি সত্যিই ঠিক আছে নাকি ঠিক থাকার নাটক করছে। যাই হোক তারা গার্ডিয়ান তাদের চিন্তা থাকাটাই স্বাভাবিক।আরশির পরিবারের কেউই নেই ।মেয়েটা নিজের বড় ভাইয়ের কাছে ছোট থেকে বড় হয়েছে। মা-বাবা নেই তার। তার ভাইয়া বিদেশে চলে গিয়েছিল যখন সে ক্লাস টেনে পড়ত। তারপর সে তার মাম মামীর কাছে চলে যায়। এবং সেখানে থেকেই পড়াশোনা করে।এখন আরশিও তাদের পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে আরশির সম্পর্কেও তো ভাবতে হবে তাদের। অবশ্য আরশি কে অনেক আগে থেকেই তারা নিজেদের মেয়ের মত মনে করত। স্কুল লাইফ থেকেই আরশি নীলার বেস্ট ফ্রেন্ড। সেই সুবাদে সে অনেকবারই বাড়িতে এসেছিল। তাই সবাই তাকে ভীষণ ভালোবাসত।আর এখন যেহেতু এই বাড়ির বউ হিসেবে এসেছে হিসেবে তাকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে হবে। যত যাই হোক বিয়ে টা তো হয়ে গিয়েছে।কেউ চাইলে তো আর অস্বীকার করতে পারবে না।
এইসব আলোচনাই করছিল তিন ভাই মিলে তখনই ইরফান এবং আরশি এসে উপস্থিত হলো।সবাই তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করল। ইমরান মির্জার মেজাজ বিগড়ে যায়। তিনি কখনো ভাবতে পারেননি তার ছেলে এতটা নির্লজ্জ হবে। এতকিছুর পরেও কত সুন্দর নিজের বউকে নিয়ে ড্যাংড্যাং করে অফিসে চলে আসলো। আবার দুজনে মিলে একই রঙের পোশাক পরিধান করেছে। ইমরান মির্জা রাগ দেখিয়ে যেই না কিছু বলতে যাবেন ওমনি নীলয় মির্জা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলেন __
ইরফান ভালো করেছো তোমার বউকে নিয়ে অফিসে এসেছো। নিজের কেবিনে নিয়ে যাও।
ইরফান আরশির হাত ধরে নীলার কেবিনের দিকে যেতে লাগলো।তা দেখে ইমরান খান বলে উঠলো _
ওইদিকে কেন যাচ্ছো? নিজের কেবিনের রাস্তা কি ভুলে গেছো? মানলাম চোখ খেয়ে বসে আছো তাই বলে নিজের ভালো কিসে তা দেখতে পাচ্ছ না। কিন্তু নিজের কেবিন কোনটা অন্তত তা তো চিনবে।
আরশির মুখে অন্ধকার নেমে আসে শশুর মশায়ের কথা শুনে।সব কথাতেই সবাই তাকে টানবে এবং তাকে ছোট করে নীলাকে বড় করবে। ইরফানের ঠিক ভালো লাগলো না নিজের বাবার বলা কথাগুলো। এভাবে সবার সামনে। সে বিরক্তিবোধ করল এবং চোখ মুখ কুঁচকে বলল_
কেন একদিন না একদিন তো এই কেবিন আমারই হবে।তাই এখনই চলে যাচ্ছি।
ইরফানের এমন লাগামহীন কথায় উপস্থিত তার বাবা এবং চাচারা নিজের বসার আসন থেকে উঠে পরলেন।তারা বুঝতেই পারছে না এত কিছু হবার পরেও ইরফান কি করে এই আশা করছে। এমন সময় নিজের কেবিন থেকে নীলা বের হয়ে আসলো।নীলা কে সেই কেবিন থেকে বের হতে দেখে আরশি বলে উঠলো __
অন্যের কেবিন তুই কি করছিস? জানিস না এইটা ইরফানের কেবিন? নাকি জেনে বুঝে ইচ্ছে করে করছিস এমনটি?
নীলা আরশির কথার উত্তর না দিয়ে গুন গুন করে গান গাইলো __
Bhaiya aur bhabhi ko,
Badhayi ho badhayi,
তার গাওয়া গান শুনে ইরফান আর আরশির মুখ কালো হয়ে গেল। তারপর নীলা বলতে শুরু করল_
“ভাবি আমি জানতাম না যে আপনি চোখ দেখেন না। এইটা আপনার স্বামীর কেবিন না। এইটা আমার কেবিন। আপনার স্বামীর কেবিন তো ওইযে ডান দিকে।”
ইরফান অবাক হয়ে বলল_
হ্যাঁ আমার কেবিন ডান দিকে ঠিকই কিন্তু তুই তো বলেছিলি তোর এইসব ব্যবসা, বাণিজ্য ভালো লাগে না।তাই আমার নামে করে দিবি। তাহলে কেন আজ আমার কেবিনে এসে বসেছিস? আজই তো আমার নামে সবকিছু দিয়ে দেওয়া কথা ছিল। তাহলে করে দে আমার নামে।
ইরফানের কথায় নীলা অট্ট হাসিতে ফেটে পরে।তার হাসি দেখে সবাই অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।তাকে এখন কিছুটা ভয়ংকর দেখাচ্ছে।নীলা হাসতে হাসতে
বলল _
তোমার নামে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি এখনো তো তোমার নামে দিইনি। আর ভবিষ্যতেও দেব না।
নীলার এমন প্রত্যাখ্যানের ইমরান মির্জা বেশ খুশি হলেন।তিনি চান না তার প্রতারক ছেলে নীলার অধিকার ভোগ করুক।
ইরফান আর আরশি অবাক হয়ে গেল। ইরফানের মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে।সে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো _
মানে টা কি? তুই কথার খেলাপ করবি? মির্জা পরিবারের বড় মেয়ে নিজের কথার খেলাপ করেছে।সেও দিন শেষে প্রতারণা করেছে? এতটাই খারাপ দিন আসলো তোর যে তুই কথার খেলাপ করলি? কোই গেল তোর ডাইলগ? কি জানি বলতি? নীলা মির্জা এক কথার মানুষ । সে তার কথার খেলাপ করে না। তাহলে এখন কেন করেছিস?
নীলা কেবল বাঁকা হাসলো। উপস্থিত সবার দৃষ্টি তার দিকে। নীলা একদম শান্ত কন্ঠে বলল __
প্রতারণা কি করে করতে হয় তা তোমাদের কাছ থেকে তো শিখেছি।তোমরা দুজনই আমার প্রতারণার শিক্ষক। তোমাদের কাছ থেকেই আমি প্রতারণা শিখেছি। ভাবলাম যা শিখেছি সেটির নমুনা আগে তোমাদেরকে দেই। তোমাদের সব থেকে বেশি অধিকার আছে তোমাদের কাছ থেকে আমার শেখা এই প্রতারণার নমুনা উপভোগ করার। যে যেমন তার সাথে তো তেমনি ব্যবহার করতে হয়। ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা এবং প্রতারণার বদলে প্রতারণা। এটাই নীলা মির্জার নিয়ম।
চলবে??? এই পর্বের বাকি অংশ আজ রাতে আসবে।
নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা
নাজনীননেছানাবিলা
পর্ব_৫ এর শেষ অংশ।
অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌❌❌
আরো দুইটা গল্প দিতে হবে রিচেইক দেই নি ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।
ইরফান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে দিয়ে যেন কোনো কথা বের হচ্ছে না।কেবল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে।আর আরশি সে যেন হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে এ যেন অন্য এক নীলা। আরশির এখনো মনে পরে আগের দিনের কথা।
অতীত __
আরশি আর নীলা এক সাথে শুয়ে আছে নীলার রুমে।নীলা খাটের হার্ড বোর্ডের সাথে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় ছিল আর আরশি নীলার পায়ের রানে মাথা রেখে সোজা হয়ে শুয়ে ছিল। নীলা আরশির চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল।
আরিশ হঠাৎ বলে উঠল _
তোরই ভালো নীলা নিজের পরিবার আছে, ব্যবসা আছে।আর কি লাগে শুনি?।
নীলা আরশির কথায় মুচকি হাসলো তারপর বলল_
কিন্তু তুই তো জানিসই আমার এইসব বিজনেসের প্রতি কোনো ইন্টেরেস্ট নেই।আমি শিক্ষিকা হতে চাই শুধু শুধু এক সাথে এত কিছু সামলানোর প্রয়োজন কি? আর ইরফান ভাই তো আছেই তাকেই না হয় সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিব।
আরশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল __
ইরফান কে আইমিন ইরফান ভাইয়া কে মানে? তুই কি নিজের ভাগ তাকে দিয়ে দিবি নাকি? তাহলে কেন তোর বাবার সাথে গিয়ে বিজনেস সম্পর্কে ধারণা নিয়েছিস কষ্ট করে? কেন দেখভাল করেছিস?
নীলা স্মিত হেসে বলল _
আরে পাগলী যেই জিনিসটা সম্পূর্ন রূপে আমার।যা আমার পরিবারের ঐতিহ্য সেই সম্পর্কে তো ধারনা রাখতেই হতো নয়কি? আর আমি যেহেতু একমাত্র মেয়ে আমার পরিবারের তাহলেই এইসবে আমার যাওয়াটা উচিত। পরিস্থিতির শিকার হয়ে কখন কি প্রয়োজন হয় তা আমরা জানিনা। পরে বসে কান্না করার থেকে আগেই ভালো কোন কিছু শিখে ফেলা। আর ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তো আমার কোন লস হয়নি।বরং ভালোই লেগেছিল। উপলব্ধি করতে পেরেছি যে আমার বাবা চাচারা কত কষ্ট করে। আর ইরফান ভাইয়ার সাথে তো আমার বিয়ে হবেই। আমার যা তা সবই তো ইরফান ভাইয়ারও তাই তাকেই দিয়ে দিব আমার ভাগের বিজনেসের অংশ।আর এতে বাড়ির কারোর কোনো সমস্যা নেই।আমি এখনি লিখে দিয়ে দিতাম তাকে কিন্তু সব কাগজপত্র রেডি করতে সময় লাগবে। তাই বিয়ের পরের দিনই দিব।সে একান্ত আমার হয়ে যাবে।আর আমি সহ আমার সব কিছু তার হয়ে যাবে।
কথাগুলো বলতেই নীলা মিটমিট করে হেসে উঠলো।তার কথার কোনো জবাব দিল না আরশি সে শুধু চুপচাপ শুনে গেল। তার মুখে অন্ধকার নেমে এলো যা নীলা লক্ষ্য করলো না।
বর্তমান _
আরশি নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল এমন সময় নীলা বলে উঠলো _
এমা ভাবি আপনি এখানে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ওই যে দেখুন আপনার স্বামী বেচারা ভেঙে পরেছে।একা একা হাঁটতে হাঁটতে নিজের কেবিনের দিকে গেল।যান গিয়ে সামলান তাকে।
আরশির হুঁশ ফিরল সে হকচকিয়ে গেল। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে একবার ইরফান কে দেখে নিয়ে আবার নীলার দিকে দৃষ্টিপাত করল। তারপর বলতে শুরু করল_
ছিঃ নীলা ছিঃ তোর লজ্জা করল না ইরফান কে এই ভাবে ঠকাতে? আরে তুই না ওকে ভালোবাসতি?
নীলার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো। উপস্থিত সবাই আরশিকে দেখছে। কতটা নির্লজ্জ হলে মানুষ এমন প্রশ্ন করতে পারে তা আরশি কে দেখেই বোঝা যায়।
নীলা বিদ্রুপ করে বলল _
লজ্জা! শব্দটার মানে জানেন আপনি ভাবি? এই শব্দটা আপনি এবং আপনার স্বামীর মুখে মানায় না।আর আপনার প্রশ্নের মাঝেই আপনার উত্তর রয়েছে। ভালোবাসতাম। অর্থাৎ অতীত যা চলে গেছে। আর ঠকানোর কথা দয়া করে আপনি বলবেন তো। শব্দটি নিজেও লজ্জা পাবে আপনি যদি তাকে নিজের মুখ থেকে উচ্চারণ করেন।
নীলার এমন রূঢ় উত্তর শুনে আরশির মুখ চুপসে গেল। সে ভেবেছিল নীলা রাগের মাথায় থাকে নাম ধরে ডাকবে আগের মতন তুই-তোকারি করবে। এবং সেই সুযোগে সে নীলাকে ধমকে বলবে যে নিলা যাতে তাকে ভাবি বলে ডাকে। কিন্তু নীলা যেন কোনো সুযোগই দিতে চাচ্ছে না তাকে অপমান করার। সেখানে নীলার বাবা এবং চাচা সহ আরো কিছু এমপ্লয়ি ছিল তারা সবাই মিটমিট করে হাসছিল এমন নাটক দেখে।যারা প্রথম নীলা কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছিল তারা এখন ইরফান আর আরশি কে ছিঃ ছিঃ করছে।আরশি আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না সেখানে।এক দৌড়ে অফিস থেকে বেদ হয়ে এলো।
আর ইরফান? সে তখন নীলার কথা গুলো শুনে আঘাত পেয়ে নিজের কেবিনের দিকে হাঁটা ধরেছিল। কিন্তু তার মতোন যেন তার পাও প্রতারণা করছে আজ।নড়তেই চাইছে না। ইরফান অনেক কষ্টে নিজের কেবিন পর্যন্ত আসলো।তার এই নীলা কে চিনতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।তার ভেতরটা দমরে মুচরে যাচ্ছে।তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে আরশির তার পাশে দাঁড়ালো না। অথচ নীলা সবসময় তার পাশে থাকতো।যদি সে নিজেও ভুল হতো তুবুও নীলা তাকেই সাপোর্ট করত।আর আজ সেই নীলা তাকে সবার সামনে অপমান করল এ যেন ইরফান মানতেই পারছে না।
অন্ধকার রুমে ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে বসে আছে মিহাল। হাতে তার একটি ছবির ফ্রেম। সেখানে তার কোলে একটি ফুটফুটে ছোট্ট বাচ্চা এবং তার এক পাশে তার মা ও অন্য পাশে তার বাবা। ছবিটি আজ থেকে আরো ২১ বছর আগে তোলা। মিহালের বয়স তখন ১০ কি তার একটু বেশি।মিহাল ছবিটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মুলত ছবিটিতে থাকা বাচ্চা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। ক্যান্ডেলের আলোতে বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে চেহারা।মিহাল ছবির ফ্রেমের উপর হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বলতে লাগলো __
আমি জানিনা তুমি এখন কেমন আছো আর জানতেও চাই না। আমার মতোন এমন শক্ত, হৃদয়হীন মানুষের কারোর ভালো থাকা খারাপ থাকা নিয়ে কিছুই যায় আসে না।কারোর অনুভূতি, ভালোলাগা খারাপ লাগা দিয়ে আমি পরোয়া করিনা। খুব কম মানুষ আছে আমার যাদের নিয়ে আমি ভাবি। কিন্তু কেন জানি না নিজের স্বার্থের জন্য তোমাকে ব্যবহার করতে মন সায় দিচ্ছে না।মন বার বার নিষেধ করছে।বলছে তুমি ভালো নেই তোমার খুব করে কাউকে প্রয়োজন। আচ্ছা আমারও কাউকে প্রয়োজন আর তোমারও তাহলে কি আমরা একে অপরকে ব্যবহার করতে পারি না? এতে আমার স্বার্থ লাভ হবে এবং তোমার প্রয়োজন পূরণ হবে।”
মিহাল ছবিতে থাকা ছোট্ট মেয়ে শিশুকে প্রশ্নগুলো করল। কিন্তু বরাবরের মতোন কোনো জবাব পেল না।হতাশ হয়ে মিহাল আবার বলতে শুরু করল _
সেই কবে থেকে তোমার এই ছবিটির সাথে আমি কথা বলে আসছি। নিজেও জানি না আমি কেন কথা বলি। নিজেকে বোঝাই যে নিজের সময় কাটানোর জন্য তোমাকে ব্যবহার করি কিন্তু হৃদয় অন্য কথা বলে। কিন্তু কি বলে তা বুঝিনা। যেই যায়গায় সারাক্ষণ নিজেকে হৃদয়হীন বলে দাবি করি সেই যায়গায় কি করে হৃদয় যা বলে তা বুঝবো আমি? উত্তর দাও নীলাঞ্জনা?”
আবার থামলো মিহাল। খুব সূক্ষ্মভাবে ছবিটি দেখে নিল। বাচ্চাটি নীল রঙের তয়লায় জড়িয়ে আছে।তারপর পুনরায় বলতে লাগলো _
নাম জানি না তোমার। পরনের তয়লা নীল তোমার আর আমার মায়ের খুব প্রিয় একটি গান নীলাঞ্জনা। এবং তুমিও আমার মায়ের প্রিয়।তাই সব মিলিয়েই তোমার নাম দিলাম নীলাঞ্জনা। তোমার আসল নাম কি তা আমি জানিনা আর জানতেও চাই না। মিহাল খান একবার যা ঠিক করে নেয় সে তাই করে। যেহেতু তোমার নাম নীলাঞ্জনা আমি দিয়েছি তার মানে আমার জন্য তুমি নীলাঞ্জনা। এবং খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার কাছে আসতে হবে অথবা আমি নিজেই তোমার কাছে চলে আসব নীলাঞ্জনা। তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন। স্বার্থ অর্জনে তোমাকে ব্যবহার করাটা খুবই প্রয়োজন। আর আমার মন বলছে তোমারও কাউকে প্রয়োজন। দুজনেই না হয় এক হয়ে একে অপরকে ব্যবহার করব।
কথাগুলো বলেই মিহাল ছবির ফ্রেম বুকের উপর রেখে সোফায় হেলান দিল। তারপর গুন গুন করে গাইতে শুরু করল __
এরপর বিষন্ন দিন বাজেনা মনোবীণ,
অবসাদে ঘিরে থাকা সে দীর্ঘ দিন,
হাজার কবিতা বেকার সবই তা ।।
হাজার কবিতা বেকার সবই তা ।।
তার কথা কেউ বলে না,
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা ।।
সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
যেহেতু দুপুরের আগে একটি পর্ব দিয়েছিলাম তাই এই পর্বটি বেশি বড় আশা করা নিতান্তই বোকামি। এটি কেবল সেই পর্বটির শেষ অংশ।
চলবে??? ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। কালকে গল্প আসবে।
Share On:
TAGS: নাজনীন নেছা নাবিলা, নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ২
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৪
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা গল্পের লিংক
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৩+বোনাস পর্ব
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ১