Golpo romantic golpo নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা

নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৩+বোনাস পর্ব


নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা

নাজনীননেছানাবিলা

পর্ব_৩

অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌❌❌❌

মুনভি?
পেছন থেকে এক পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এলো মুভির কানে। মুনভির কন্ঠটি চিনতে সমস্যা হলো না।এ যে তার অতি প্রাণ প্রিয় বন্ধুর কন্ঠ।মুনভি চেয়ার সমেত পেছনে ফিরল।তার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে বাঁকা হাসলো। পরনের সাদা এপ্রোন খুলে চেয়ারের উপর রাখল।চেহারা ছেড়ে উঠে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। পেশায় সে একজন ডাক্তার।Hôpital Européen Georges-Pompidou(ইউরোপীয় হাসপাতাল জর্জেস পম্পিডো) তে সে একজন Cardiologist.(হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ) ব্যক্তিটির একদম মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলল _
মিহাল খান মাই ডিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।আই মিন এক্স বেস্ট ফ্রেন্ড।উই মিট আফটার আ লং টাইম।তো এখানে কি করে আসা?

মুনভির বলা কথাগুলো শুনে মিহালের ঠোঁটেও স্মিত হাসি ফুটে উঠল।এক জীবনে দুজন দুজনের জন্য জান দিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিল।আর এখন দুজন দুজনের জান নিয়ে নিতে প্রস্তুত।কি অদ্ভুত এই বন্ধুত্ব।মিহাল নিজের মস্তিষ্ক হতে অন্যান্য চিন্তা ভাবনা দূর করে বলল_
“এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম নিজের শত্রুর খোঁজ খবর নিয়ে যাই।যত যাই হোক এক জীবনে তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।”

মিহালের কথা শুনে মুনভির ঠোঁট তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল।সে বিদ্রুপ করে বলল __
ছিলাম তো বেস্ট ফ্রেন্ড।(বেস্ট ফ্রেন্ড কথাটি সে জোড় লাগিয়ে বলল।)এক সময় অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম।সেই বন্ধুত্বের হত্যা নিজ হাতে করেছিস তুই মিহাল।তাই এখন আমার তোকে মারতেও হাত কাঁপবে না। ঠিক যেমন তোর আমাদের বন্ধুত্বকে হত্যা করতে হাত কাঁপেনি।

মুনভির কথা শুনে মিহাল ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত হলেও তা প্রকাশ করল না। বরং শব্দ করে হেসে উঠলো।তার এহেন কান্ডে অবশ্য মুনভি অবাক হলো না। ছোট বেলা থেকেই তাদের বন্ধুত্ব ছিল তো তাই সে মিহাল কে যতটা চেনে মিহাল নিজেও নিজেকে ততটা চেনে না।মিহাল নিজের হাসি আয়ত্তে এনে বলল_
যখন বন্ধুত্ব ছিল তখন যদি সেই বন্ধুর জন্য মরতে পারি, তাহলে এখন না হয় বন্ধুত্ব শেষ হয়ে জন্মে উঠা শত্রুতামিতে শত্রুর হাতে মরব।তফাত নেই তো কোনো।

মিহালের কথায় মনক্ষুণ্ণ হলো মুনভি।এত সহজেই কি বন্ধুত্ব শেষ করা যায় যত সহজে মিহাল বলল কথাটি। কিন্তু সে মুখ ফুটে কিছু বলল না।মুনভি কে চুপ থাকতে দেখে শায়ান শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল_
মিনু আন্টি কেমন আছেন?

শায়ানের কথা শুনে মুনভি কিছুটা স্বাভাবিক হলো। তারপর সেও শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল _
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমার সাথে যাই হোক না কেন মা তোকে খুব ভালো বাসে।সময় করে বাড়ি আসিস।

মিহাল যেন এই কথাটি শোনার অপেক্ষায় ছিল।কেবল মাথা নাড়িয়ে মুনভির কেবিন থেকে বের হয়ে এলো।বের হয়ে বাইরে থেকে দরজা মিশিয়ে দিল এবং নিজে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগলো এবং যথাসম্ভব নিজের আবেগ কে নিজের আয়ত্তে আনার চেষ্টা চালালো।যখন বুঝতে পারলো সে স্বাভাবিক হয়ে গেছে তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলো _
মিহাল খান নিজের আয়ত্তে সব কিছু রাখতে পারে এমনকি নিজের আবেগও।

কিন্তু পরক্ষণেই আহত কন্ঠে বলল_
আমি না হয় সত্য জানি না, আমি না হয় সব কিছু শেষ করেছি। কিন্তু চাইলেই তো একবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারতি, “মিহাল আমি কিছুই করিনি।তুই যা জানিস সব মিথ্যে।”ট্রাস্ট মি মুনভি সকল প্রমাণ কে প্রত্যাখ্যান করে কেবল তোর কথা বিশ্বাস করতাম। কিন্তু তুই কি করলি? আমাদের বন্ধুত্বের উপরে নিজের ইগো কে বেছে নিলি? এক্সপ্লেইন পর্যন্ত করলি না।

কথা গুলো বলে মিহাল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো তারপর গলার টাই ঢিলা করতে করতে বলল__
সত্য কখনো লুকানো যায় না। খুব শীঘ্রই আমি সত্যি জেনে ছাড়বো। কিন্তু এই সবের মাঝে যে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়েছে তা কখনোই ঠিক হবে না।
কথা গুলো বলেই মিহাল হসপিটাল থেকে হনহনিয়ে বের হয়ে গেল।

অন্যদিকে কেবিনের ভেতর বসে থাকা মুনভি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। তারপর তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল__
ঠিকই তো আগের মতোন অধিকার দেখিয়ে পারমিশন না নিয়ে আমার কেবিনে ঢুকে পরলি।অথচ যাওয়ার আগে একবারও পিছনে ফেরার প্রয়োজন বোধ করলি না? এই ছিল তোর বন্ধুত্ব? সত্য একদিন ঠিকই প্রকাশ পাবে কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে মিহাল।


নীলা, আবির এবং ইবাদ মিলে ইরফান আর আরশির বাসর ঘর সাজাচ্ছে। বাড়ির সবাই অবাক না হয়ে পারছে না নীলা কে দেখে।নীলয় মির্জা দরজার ফাঁক দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েকে দেখছেন।চোখ উনার অশ্রুসিক্ত।
হারিয়ে গেলেন পুরোনো স্মৃতির মাঝে_

অতীত __
বড় আব্বু দেখো না ইরফান ভাইয়া তার এক বান্ধবীর সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ি আসছে।

৭ বছরের নীলা নিজের বড় চাচারা কাছে এসে উনার ছেলের নামে বিচার দিল।নীলার কথা শুনে উপস্থিত সকলে নীলার দিকে দৃষ্টিপাত করল। সেখান নীলয় মির্জা, ইমরান মির্জা, আকাশ মির্জা সকলের উপস্থিত ছিলেন।

ইমরান মির্জা নিজের ভাইজি কে কাছে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে আদুরে স্বরে বললেন_
কেন আমার নীলা মার বুঝি কষ্ট হচ্ছে?

নীলা মাথা নাড়িয়ে বলল_
“তুমিই তো বলেছিলে ইরফান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিবে তাই যাতে বড় হয়ে কখনো অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা না বলি। তাহলে ইরফান ভাইয়া কেন অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছে? কই আমি তো কোন ছেলের সাথে কথা বলি না। আমি আমার জিনিস অন্য কারোর সাথে ভাগ করতে পারবো না।আমার মানে সেইটা সম্পূর্ণ আমার।”
নীলার এমন অধিকারী কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল।

পুরোনো কথা মনে পড়তেই নীলয় মির্জার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল‌।সাত বছরের নীলা তার ইরফান ভাইয়ার সাথে অন্য কোনো মেয়েকে দেখতে পারতো না। অথচ আজ ২১ বছরের নীলা(অনেকেই বছর নিয়ে কনফিউজ কারণ আমি একবার চেন্জ করে ২৩ দিয়েছিলাম। কিন্তু ২১ই ঠিক আছে।) নিজের হাতে তার ইরফান ভাইয়ার বাসর ঘর সাজাতে ব্যস্ত।এই দৃশ্য নীলয় মির্জা আর বেশিক্ষণ দেখতে পারলেন না।তার মেয়ে যতোই শক্ত দেখাক না কেন নিজেকে কিন্তু ভেতর ভেতর যে শেষ হয়ে গেছে তা তিনি বাবা হয়ে বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছেন। চোখের পানি মুছে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।বরণ হবার পর যে তিনি সেই নিজের রুমে ঢুকে ছিলেন এরপর মাত্র বের হলেন মেয়ের খুঁজে।এখন মেয়েকে শক্ত হয়ে থাকতে দেখে তিনি আরো বেশি ভেঙে পরলেন।আর মেয়ের সামনে নিজের ভেঙে যাওয়ার রূপ প্রকাশ করতে চান না বলে আপনার নিজের রুমে চলে গেলেন।


পুরো রুম জবা ফুল দিয়ে সাজালো নীলা। টুকটুকে লাল রঙের জবা ফুল নীলার খুব পছন্দ। কিন্তু ইরফান জবা ফুল পছন্দ করতো না বলে সে নিজের পছন্দ কে বিসর্জন দিয়েছিল কোনো এক কালে।আজ সে নিজের হাতেই ইরফানের বাসর ঘর জবা ফুল দিয়ে সাজালো। সাথে নীল রঙের জালি কাপড় যাতে ইরফানের মনে হয় এইটা তার বাসর ঘর না বরং সাজা পাওয়ার ঘর।আবির আর ইবাদ নীলার সাথে দাঁড়িয়ে পুরো রুমে ভালো করে চোখ বুলায়। আবিরের বুক মোচড় দিয়ে উঠলো আজ এই খানে তার বোনের থাকার কথা ছিল অথচ নিয়তির পরিহাসের ফলে তার বোন এই রুম সাজালো।মুখ দিয়ে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে তারপর নীলার উদ্দেশ্যে বলল_ সাব্বাস নীলু সাব্বাস। এই না হলে আমার বোন। ইবাদ বলে উঠলো __
“আয়না ঘরের দিন শেষ, বাসর ঘরকে সাজা ঘরে পরিণত করে হল বাংলাদেশ।”

আবির শব্দ করে হেসে উঠলো ইবাদের কথা শুনে।নীলা বাঁকা হাসলো তারপর বলল__
এখন সবাই যার যার রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে আসো। বাসর ঘরে ঢুকতে দেওয়ার আগে বরের কাছ থেকে টাকা নিতে হবে তো।

আবির আরেক দফা অবাক হলো নীলার কথা শুনে।আজ যেন অবাক দিবস। কিন্তু কিছু না বলে আবির আর ইবাদ নিজেদের ঘরে চলে গেল।নীলা একবার চোখ বুলিয়ে নিল ঘরটাতে। চোখের কোণে তার জল জমেছে খানিকটা।নীলা রুমে থাকা ফুল গুলোতে আলতো করে হাত বুলিয়ে আহত কন্ঠে বলল_
আমায় কেন ধোঁকা দিলে ইরফান ভাই? আমি কি দোষ করেছিলাম? আমার সত্যিকারের ভালবাসার এত বড় পুরস্কার না দিলেও পারতে। কোনো কু নজর নেই তোমার নতুন সংসারের প্রতি আর না আছে কোনো অভিশাপ। কিন্তু তোমরা আমাকে এমন ভাবে ভেঙে দিয়েছো যে এখন আমি নতুন নীলা হয়ে জন্মেছি। কিন্তু আমার মনের ভালোবাসা বিশ্বাস অনুভূতি এগুলো আর কখনো কারোর জন্য জন্মাতে পারবে না। আমাকে এমন ভাবে না ভাঙলেও পারতে।

কথা গুলো বলতে বলতে নীলার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরার আগেই নীলা উপরের দিকে তাকালো। চোখের পানি চোখে রয়ে গেল। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক
করে বলল_
তোমরা যদি ভেবে থাকো আমি পাঁচ দশটা ন্যাকা মানুষের মতো বলবো “অথচ আজও লাশ তার খুনি কে ভালোবেসে” তাহলে তোমরা ভুল ভাবছো। খুনের বদলে খুন করবো না বরং তোমাদের করা খুনের প্রতিশোধ নেব।
কথাটি বলে বাঁকা হেসে রুম ত্যাগ করল নীলা।

পুরো মির্জা বাড়ি আজ থমথমে। ইরফান আর আরশি ইমরান মির্জার রুম দাঁড়িয়ে আছে। ইরফানের মা তো ছেলের দিকে তাকিয়েও দেখছে না। ইমরান খান নিজের ছেলের উদ্দেশে আবার বলে উঠলেন __
লজ্জা করল না এমন নিচু কাজ করতে? বিয়েতে মত ছিল না তাহলে কেন মেয়েটির মন নিয়ে খেললে? গায়ে হলুদের দিন কেন হাসতে হাসতে আনন্দ করলে? আর বিয়ের দিনই কেন এমন কাজ করলে? একটা মেয়ের জন্য তার বিয়ের দিন বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া কতটা অপমানজনক তাকে তুমি জানো? অবশ্য তুমি কি করে জানবে তোমার তো নিজেরই কোন মান নেই।

“বাবা”
ইরফান ডাকটি বলতেই ইমরান খান ছেলেকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল_
আমাকে বারবার বাবা ডেকে মনে করিয়ে দিও না যে আমি তোমার মত কুলাঙ্গার কে জন্ম দিয়েছি।যখন বেকার ছিলে তখন নীলা তোমার পাশে ছিল। আজ তুমি যতটুকু তার পেছনে কেবল রয়েছে নীলা আর তুমি সেই নীলা কেই এখন প্রত্যাখ্যান করলে? নীলাকে প্রত্যাখ্যান করার যোগ্যতা কি আদৌ আছে তোমার মাঝে?

ইরফান প্রতি উত্তরে বলার কিছু খুঁজে পেল না। ইমরান মির্জার এইবার নিজের পুত্রবধূর দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন __
যেখানে নিজের ছেলে দোষী সেখানে তুমি পরের মেয়ে তোমাকে আমি দোষারোপ করব না। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখবে যেই যায়গায় নীলা আমার ছেলেকে সাফল্যতা পেতে সাহায্য করেছে, সেই জায়গায় আমার ছেলে নীলাকে ছেড়ে দিয়েছে। তুমি তো তুচ্ছ্য নীলার সামনে।

ইমরান মির্জার কথা বেশ বিধলো আরশির গায়ে।সে যেই না মুখ খুলে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইরফান তার হাত চেপে ধরলো।

ইমরান মির্জা তাদের উভয়ের উদ্দেশ্যে বলল_
যাও এখন নিজেদের ঘরে যাও।

ইরফান আর আরশি নির্লজ্জের মত ইমরান মির্জার রুম থেকে বের হয়ে গেল। আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলো ইরফানের ঘরের দিকে। ইরফান নিজের ঘরের সামনে যেতেই গান শুনতে পেল কোনো এক মেয়েলি কন্ঠের।

নীলা ইরফানের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে‌।তার এক পাশে আবির এবং অন্য পাশে ইবাদ দাঁড়িয়ে আছে। নীলার পরনে তার নীল শাড়ি এবং সাথে মেচিং করা চুড়ি এবং জুয়েলারি।নীলার হাতে রক্ত জবা ফুল। সে রক্ত জবা ফুলে হাত বুলাতে বুলাতে গান গাইলো __
হাতে চুড়ি ছাম ছাম বাজে
বসে না মন কোনো কাজে,
প্রেম আসে যায় মনে
তোকে না পাওয়ার কারণে।

চলবে??
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন গঠনমূলক কমেন্ট করবেন

নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা

নাজনীননেছানাবিলা

বোনাস_পর্ব

অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌❌❌
আগেই বলে দিচ্ছি বোনাস পর্ব তাই বড় হয়নি
কারেন্ট চলে গিয়েছিল তাই দেরি হয়েছে দিতে।

দরজার সামনে থেকে সর তোরা।
ইরফান কড়া কন্ঠে বলল।

নীলা ইরফানের চোখে চোখ রেখে বলল _
কেন ভাইয়া? আমাদের পরিবারের নিয়ম ভুলে গেছো নাকি?কারোর বিয়ে হলে ছোটরাই তো বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা টাকা নেওয়ার জন্য। কতক কষ্ট করে আমরা তোমাদের বাসর ঘর সাজালাম এইটা তো আমাদের প্রাপ্তি।

নীলার কথা শুনে ইরফান এবং আরশি এক সাথে অবাক হয়। তাদের বাসর ঘর নীলা সাজিয়েছে।আরশি আর নিজেকে দমিয়ে না রেখে বলে উঠে_
তুই নিজ হাতে আমাদের বাসর ঘর সাজিয়েছিস?

নীলা স্মিত হেসে জবাব দিল _
কেন নয় ভাবি? এতটুকু তো করাই যায়।

নীলার এমন সম্পর্ক রক্ষা জনক ডাক শুনে আরশি অবাক হয় যেমন ঠিক তেমনি নীলাকে কষ্ট পেতে না দেখে ভেতর ভেতর রাগে জ্বলে উঠলো।

ইরফান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে। পরনে তার নীল রঙের শাড়ি।এই রঙ নীলার খুব পছন্দের কিন্তু ইরফানের অপছন্দ বলে নীলা এই রঙের জিনিস পত্রের ধারের কাছেও যেত না। অথচ আজ সেই নীলা তার পছন্দকে উপেক্ষা করে নিজের পছন্দের কাজ করল‌। ইরফানের কাছে যেন এই নীলা অচেনা। ইরফান রাগী কন্ঠে বলল__
নীলা তোকে না বলেছিলাম আমার নীল রং পছন্দ না তাহলে এই রঙের শাড়ি কেন পরেছিস।

নীলার ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো।সে ইরফানের চোখে চোখ রেখে বলল_
আমি কেন তোমার পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখবো? তোমার বউ আছে তাকে বরং বলো নীল রঙের জিনিস থেকে দূরে থাকতে।

নীলার কথা শুনে ইরফান স্তব্ধ হয়ে গেল।নীলা কখনো তার মুখের উপর এইভাবে কথা বলে নি।নীলার কথা শুনে আরশি তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো _
না বাবা আমার নীল রঙ অনেক পছন্দ। আমি কারোর জন্য নিজের পছন্দ বিসর্জন দিতে পারবো না।আর আমি ভীষণ ক্লান্ত তোমাদের যা নেওয়ার আছে তা নিজেদের ভাইয়ের কাছ থেকে নাও।আমি রুমে গেলাম।

কথা গুলো বলেই আরশি নীলা আর ইবাদের মাঝ দিয়ে রুমে চলে গেল। ইরফান এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কোই নীলা তো কখনো এভাবে বলেনি যে সে নিজের পছন্দকে বিসর্জন দিতে পারবে না। অথচ আরশি কত সহজেই কথা গুলো বলে ফেলল।এই মুহূর্তে যদি আরশি যায়গায় নীলা থাকতো তাহলে কখনোই ইরফান কে এইভাবে ছেড়ে চলে যেত না বরং বলতো আমিও যেমন ক্লান্ত আমার ইরফান ভাই ও তেমন ক্লান্ত।ওকে কেউ বিরক্ত করো না।
ইরফান নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল তখনই আবির
বলে উঠলো _
ভাইয়া রুমে গিয়ে চিন্তা ভাবনা করো। আপাতত আমাদের কে টাকা দাও।

ইরফান নড়ে চড়ে উঠলো আবিরের কথায়।সে ভীষণ ক্লান্ত এবং বুকের মাঝে এক অজানা শূন্যতা অনুভব করছে তাই আর কথা না বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল__
কত টাকা।

আবির আর ইবাদ দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলল_
বেশি না মাত্র ১০ হাজার।

ইরফান পকেটে থাকে টাকা বান্ডিল বের করে চেক করে দেখল তার কাছে আছে কেবল ৭ হাজার টাকা।

নীলা বাঁকা হাসে বললো _
ভাইয়া এর থেকে বেশি তো আমার কাছেই আছে। যাইহোক এগুলোই দাও আমরা ম্যানেজ করে নিব।

ইরফান কিছুটা লজ্জা পেল নীলার কথায়। আগে অনেক টাকা নিয়েছে নীলার কাছ থেকে কিন্তু কখনো লজ্জা পায়নি কিন্তু আজ পাচ্ছে।

ইরফান নীলার দিকে টাকা গুলো এগিয়ে দিতেই নীলা আবির কে উদ্দেশ্য করে বলল _
ভাইয়া টাকা গুলো নিয়ে ছাদে আসো আমরা আড্ডা দেই। কথাটি বলেই নীলা জবা ফুল কানের পেছনে গুজে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। ইরফান আহত দৃষ্টিতে কেবল চেয়ে রইল নীলার পানে। ভাবলো হয়তো নীলা অন্তত একবার পেছন ফিরবে। কিন্তু নীলা সোজা ছাদের দিকে চলে গেল।


মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে মিহাল। ইসরাতুল ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন _
কি হয়েছে বাবা?

মিহাল আহত কন্ঠে বলল_
মিনু আন্টির কথা মনে পড়ছে।

ইসরাতুল ঠিকই বুঝতে পারলেন ছেলে তার মিনু আন্টির জন্য না বরং মিনু আন্টির ছেলে মুনভির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু মিনুর কথা শুনে তার মনে পুরোনো স্মৃতি জাগ্রত হলো। অবশ্য এগুলো সে কখনোই ভুলেনি।

মিহাল মায়ের নিরবতা কারণ উপলব্ধি করতে পেরে বলল__
তোমার ছেলের উপর ভরসা রাখ মা।আমি সব ঠিক করে দেবো।

ইসরাতুল কিছু বলল না কেবল ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নীরবে চোখের জল ফেলল.।


বাসর ঘরে ঢুকতেই ইরফানের যেন জান যায় যায় অবস্থা। পুরো রুম জবা ফুল দিয়ে সাজানো। সাথে নীল রঙের জালি কাপড়‌।

আরশি এতক্ষণে পরনে লাল রঙের শাড়ি খুলে ইরফানের শার্ট এবং টাওজার পরে বসে আছে।তার খেয়ালই নেই যে এই রুমে তার স্বামী ঠিকমত দম দিতে পারবেনা।

ইরফান আরশি কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরশি বলে উঠলো _
ওহ্ কামন ইরফান, আজ কিছু হবে না। আমি অনেক ক্লান্ত। আর এমনিতেও তোমাদের বাড়ি আসার পর থেকে আমার পরিবার কম কথা শোনায়নি আমাকে। আজকে রাতে কিছু হবার আশা করোনা। আর এমন তো নয় যে আমাদের মাঝে কখনো কিছু হয়নি। এসব তো অনেক আগেও অনেকবার হয়েছে। তাই আমাকে এখন ঘুমাতে দাও।

কথাগুলো বলে আরশি বিছানায় শুয়ে পরল গায়ে কমফোর্ট জড়িয়ে।

ইরফান রাগে দুঃখে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে চলে গেল।তার রাগ মূলত আরশির উপর কিন্তু নীলার উপর আজ সে তার সকল রাগ ঝাড়বে।
নীলা, আবির আর ইবাদ মিলে ছাদে চেহারা নিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিল এবং আইসক্রিম খাচ্ছিলো। এমন সময় ইরফান রাগে গজগজ করতে করতে ছাদে এলো এবং নীলার হাত থেকে আইসক্রিম কেড়ে নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিল।
তারপর দাঁতের দাঁত চেপে বলল __
তুই চাস না আমি বাসর করি।
তাই ইচ্ছে করে এমন করেছিস তাই না?

ইরফানের কাজ দেখে আবির রেগে গেল।ইবাদ কেবল নিরব দর্শকের মত সবকিছু দেখতে লাগলো।

নীলা শব্দ করে হেসে উঠলো। তার হাসি শুনে সবাই অবাক। নীলা হাসতে হাসতে বলল__
তোমার বাসর করা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই ইরফান ভাইয়া। এখন তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বাসর করবে নাকি রাস্তার কুকুরের সাথে সেটা নিতান্তই তোমার ব্যাপার।
নীলার কথা শুনে ইবাদ আর আবির শব্দ করে হেসে উঠলো।আর ইরফান আবারো স্তব্ধ হয়ে গেল। সে যেন এই নীলার রূপ হতে অজ্ঞাত

চলবে?? ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply