নীভৃতেপ্রেমআমার_নীলাঞ্জনা
নাজনীননেছানাবিলা
পর্ব_২
অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌ ❌ ❌ ❌ ❌
বিঃদ্রঃ কাল গল্প আসবে না।সবাই নিচের নোট পড়বেন 🗣️🗣️
“লজ্জা করে না নিজের বিয়ের দিন অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে আনতে?”
হুংকার দিয়ে কথাটি বলল ইমরান মির্জা নিজের ছেলে কে। ইরফান এখনো চুপ আছে।ইমরান মির্জার স্ত্রী ইরিন একবার নীলার দিকে দৃষ্টিপাত করলো।দেখলো নীলা তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। প্রত্যেকদিন যেমন ভাবে খাবার খায় তার থেকে আরাম দায়ক ভাবে বসে খাচ্ছে। নীলার ধৈর্য্য, সাহস আত্মমর্যাদা বোধ দেখে যেমন খুশি হলেন তিনি, ঠিক তেমনি মনক্ষুণ্ণ হলেন নিজের ছেলের করা কাজে।নীলাকে উনার ভীষণ পছন্দ হয়েছিল। মেয়ে হিসেবে নীলা যেমন ভালো বউ হিসেবেও হতো। কিন্তু উনার কপালে এমন লক্ষী বউ জুটলো না। রাগে দুঃখে দাঁতে দাঁত চেপে নিজের ছেলেকে
বললেন _
“দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে হয়। বানরের গলায় মুক্তোর মালা মানায় না রে তাই তো নীলা কে ছেড়ে এই সাদা চামড়ার কাছে গেলি।না আছে চেহারা না আছে গুণ, খালি পারে পেওপেও করতে।তুই যেমন তোর পছন্দও তেমন।কি আছে এই মেয়ের মাঝে? শুধু সাদা চামড়াই তো।আরে তোকে যে নীলা বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল এইটাই তো তোর চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য।”
নিজের মায়ের কাছ থেকে এমন অপমান আশা করেনি ইরফান। লজ্জায় সে মুখ তুলে তাকাতে পারছে না।বেশি কিছু বললে দেখা যাবে বাবা তাকে ত্যাজ্য পুত্র করে দিবে।সকল আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী সবাই মিট মিট করে হাসছে ইরফান আর তার স্ত্রীর উপর।নীলা মুখে থাকা খাবার খেয়ে পানি গিলে তারপর বাম হাত দিয়ে টেবিলের সাহায্য তালি দিতে দিতে বলল_
“ওয়াহ্ বড় আম্মু জিও।তুছি গ্ৰেট হো।”
নীলা তার বাবার বড় ভাই এবং তার স্ত্রীকে বড় আব্বু ও বড় আম্মু বলে ডাকে। এবং ছোট ভাই এবং তার স্ত্রীকে ছোট আম্মু এবং ছোট আব্বু বলে ডাকে।
নীলার কথা শুনে ইরফান রাগী দৃষ্টি নীলার দিকে তাকালো। সেটা ইমরান মির্জা লক্ষ্য করতেই ইরফান কে ধমক দিয়ে বলল__
লজ্জা করছে না নীলার দিকে এইভাবে তাকাতে? তোকে তো আমার নিজের ছেলে বলতে লজ্জা করছে।
নীলা এইসব দেখে মিটি হাসছে আর খাবার খাচ্ছে। মেয়ের এমন সাহসীকতা দেখে নিলয় মির্জা নিজের ছোট ভাইকে বলেন_ আকাশরে আমার মেয়েটা একদম মিনুর মত হয়েছে। মিনু আমাদের মাঝে না থাকলেও তার এক ফিমেল ভার্সন রেখে গেছে। আমার মেয়েটিকে যখন মিনু হসপিটালে কোলে নিয়েছিল তখন হয়তো নিজের গুন মেয়েটির মাঝে রেখে চলে গিয়েছিল। কথাগুলো বলতেই দুই ভাইয়ের চোখ ভরে উঠলো।আবির আর ইবাদ হেঁটে হেঁটে নীলার কাছে গেল।আবির বোনের মাথায় হাত দিয়ে নরম সুরে জিজ্ঞেস করল
বনু ঠিক আছিস তুই?
আবির নীলা কে একদম নিজের বোনের মতোন দেখে।
নীলা খাবার খেতে খেতে বলল__
আমার একটা কাজ করে দিলে হয়তো ঠিক থাকব।
আবির কী কাজ করতে হবে তা জিজ্ঞেস না করেই রাজি হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো _
আমি আমার বোনের জন্য সব কিছু করতে পারি।
নীলা আবিরের কথা শুনে দাঁত বের করে হাসি দিল। তারপর আবির কে কানাকানি কিছু একটা বলল।আবিরের চক্ষু চড়কগাছ নীলার কথা শুনে। এমন পরিস্থিতিতেও যে এই মেয়ের মাথায় এমন বুদ্ধি আসতে পারে তা কারোর কল্পনার বাইরে।ইবাদ নীলার কথা শুনে মিটি মিটি হাসছে।সে নীলা কে খুব পছন্দ করে।বাড়ির কারোর কথা না শুনলেও নীলার কথা শুনে কেবল।আর আরশি অনেক বার এই বাড়িতে এসেছিল।ইবাদ আরশিকে সেই প্রথম থেকে অপছন্দ করে এসেছে।আবির আর ইবাদ বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল নীলার বলা মতন কাজ করতে।
নীলার খাওয়া শেষ হতেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে
বলল _
ছোট আম্মু চা দাও তো।
রুবিনা আক্তার দেরি না করে চলে গেলেন রান্নাঘরে।
বাড়ির সকল আত্মীয় স্বজনরা এখন ইরফান আর আরশিকেই ছিঃ ছিঃ করছে।
লায়লা ইসলাম স্বামীর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন_
এখন যদি আমাদের মেয়ে কান্নাকাটি করতো, ভেঙে পরতো তাহলে সবাই তাকে দোষারোপ করতো।অথচ দেখো মেয়ের এমন কঠিন রূপ দেখে কেউই মেয়েকে দোষারোপ করার সাহস করছে না। মেয়েদেরকে সমাজে টিকতে হলে শক্ত থাকতে হবে। ভেঙে পরলে সবাই তাদের মাটির সাথে পিষে ফেলবে।
নিলয় মির্জা স্ত্রী কথায় সায় দিলেন। মেয়ের দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে গর্ব বোধ করলেন।এখন আর কোনো আক্ষেপ নেই তার। তার মেয়ে যেই যায়গায় ঠিক আছে সেই যায়গায় সে ভেঙে পরা মানে মেয়েকে ছোট করা।তাই নিলয় মির্জা নিজেকে স্বাভাবিক করে স্ত্রী কে বললেন শক্ত থাকতে।
“মম খাবার দাও তো।”
শার্টের হাতা ফ্লোট করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিজের মাকে বলল মিহাল।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সে।
মিহালের মা ছেলের আওয়াজ শুনে রান্না ঘর থেকে খাবারের ট্রে ড্রয়িং রুমে আনতে আনতে রাগান্বিত কন্ঠে ছেলে কে বললেন_
“বেশি ইংরেজি ছাড়বি না আমার সামনে।মম টম না বলে মা বল রয়েবি নয়তো ডাকার প্রয়োজন নেই।”
মিহাল মায়ের কাছে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল_
“সব একই মম।”
ইসরাতুল ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন_
হয়েছে আর তেল মালিশ করতে হবে না বাবু।খেতে বস।
মিহাল ভদ্র ছেলের মতোন খেতে বসে পরল। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল মিহালের বাবা মুবিন খান। তিনি খবরের কাগজে মুখ গুঁজে ছিলেন। কিন্তু ছেলে আর বউয়ের কথাবার্তা ঠিকই তার কানে পৌঁছেছে। এইটা অবশ্য নিত্যদিনের ঘটনা তাই তিনি বেশি পাত্তা দিলেন। খবরের কাগজ থেকে মুখ বের করে খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিলেন। তিন জন চুপচাপ বসে খাবার খাচ্ছে। কেবল প্লেট এবং চামিচের শব্দ।
মিহাল পানি খাচ্ছিল।মুবিন খান গলা খাঁকারি দিয়ে মিহালের উদ্দেশ্যে বললেন_
তোমার সেই বেস্ট ফ্রে…
উনার কথা সম্পূর্ণ হবার আগে মিহাল হাতে থাকা কাচের গ্লাস ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে কাচের গ্লাস বিকট শব্দে ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল। ইসরাতুল ভয়ে কেঁপে উঠলেন।মুবিন খান নিজের ছেলেকে কিছু বলতে যাবে তার আগে মিহাল হনহনিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো এবং সামনের দিকে হাটা ধরল। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো এবং পিছনে না ফিরেই শান্ত কন্ঠে বলল _
“আইম সরি ফর মাই রফ বিহেবিয়ার।”
সে যতই রুড হোক না কেন বাবা মাকে ভীষণ ভালোবাসে এবং শ্রদ্ধা করে।
কথাটি বলেই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে গেল মিহাল। পিছনে রেখে গেল একজোড়া চিন্তিত মুখ। যদি সে পিছনে ফিরে তাকাতো তাহলে তার মা বাবা তার রক্তিম চোখ দেখে হয়তো ভয় পেয়ে যেত। সে আ্যপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে পাড়ি দিল তার গন্তব্যে।
মুবিন খান স্ত্রীর হাতের উপর হাত রেখে সান্তনা দেওয়ার জন্য বললেন_ চিন্তা করোনা দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। ইসরাতুল নিরবে চোখের পানি মুছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। মুবিন খান ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন মা নামে সেইভ করা। নিজের স্ত্রীর দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললেন __
এই নাও মায়ের ফোন এসেছে। মার সাথে কথা বলে মন হালকা হবে।
এই বলে তিনি স্থান ত্যাগ করলেন।
“বড় আম্মু এবং বড় আব্বু শুধু শুধু তোমরা নিজের ছেলে এবং ছেলের বউকে বাহিরে দাঁড়া করিয়ে রেখেছো। তাদেরকে বরণ করে ভিতরে আনো।”
নীলার কথায় অবাক হলেন ইমরান মির্জা। কিন্তু কিছু বললেন না। এতক্ষণে রুবিনা গরম চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে নীলার জন্য। নীলার হাতে চা ধরিয়ে দিতেই নীলা আবার অনুরোধের স্বরে বলল_
“ছোট আম্মু একটু কষ্ট করে নতুন বর এবং বউকে বরণ করার ব্যবস্থা কর।”
নীলার কথা শুনে রুবিনার চোখ ভরে উঠলো। ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না চেপে ধরলেন। এই মেয়েকে এখন তার সালাম করতে ইচ্ছে করছে। এমন পরিস্থিতিতে এতটা কঠিন থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করলো আজ নীলা। রুবিনা দেরি না করে বরণ করার জিনিস পত্র রেডি করতে লাগলেন। তারপর নিজের বড় জা এর কাছে নিয়ে এসে ধরিয়ে দিলেন।ইরিন একবার নীলার দিকে তাকাল।নীলা নিজের চাচি কে চোখ দিয়ে আশ্বাস দিতেই তিনি দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে ছেলে এবং ছেলের বউকে বরণ করে নিলেন। মিষ্টি খাওয়ানোর সময় ইরফানের মুখের ভেতর জোরে চামচ গুঁজে দিলেন। ইরফান কিছুটা পিছিয়ে গেল। ব্যথা ও পেয়েছিল বটে।নীলা চেয়ারে বসে বসে চা খাচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে মুখ দেখে চা পড়ে গেল। আশেপাশে সবাই হেসে উঠলো। নীলাও হাসতে লাগলো। ইরফান চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব কিছু সহ্য করে গেল। অন্যদিকে আরশির কোন কিছুই সহ্য হচ্ছে না। ভেবেছিল বাড়ির বড় ছেলেকে বিয়ে করেছে সবাই তার মন মত চলবে। অথচ এত বড় ছেলেকে নিজের মা-বাবা সবার সামনে অপমান করছে আর সে তো পরের বাড়ির মেয়ে। এইসব কথা ভাবতেই আরশির চেহারায় বিরক্তের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।যা কেউ খেয়াল না করলেও নীলা করেছেন।নীলা আরশির চেহারায় বিরক্তের ছাপ দেখে বাঁকা হেসে মনে মনে বলল _
যত যাই হোক দিন শেষে তুই আমারই বেস্ট ফ্রেন্ড।তোর সকল সমস্যা, দূর্বলতা সব কিছুর খবর আমার জানা আছে। আমি তাইলে এক্ষুনি তো নতুন সংসার শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে দিতে পারি। কিন্তু এই নীলা মির্জা ভীতু দের মতোন দূর্বল যায়গায় আঘাত করে না। পিছন থেকে ছুড়ি চালানোর অভ্যাস তোর এবং তোর নব্য স্বামীর হতে পারে কিন্তু নীলা মির্জার না।আমি ময়দানে নেমে চোখে চোখ রেখে সোজা গুলি করব।
“Seine নদীর ধারের ব্রিজে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে মিহাল। তার দৃষ্টি পানির ঢেউতে।
“বেস্ট ফ্রেন্ড মাই ফুট।মিহাল খানের সাথে প্রতারণাল ফল তো তাকে হারে হারে টের পেতে হবে।মিহাল খান কাউকে ক্ষমা করে না যতক্ষণ না পর্যন্ত তার প্রাপ্য শাস্তি নিজ হাতে দেয়।”
কথা গুলো বলার সময় মিহালের কপালে রগ ফুলে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে একা একা কথা গুলো বলল সে।তাকে কেউ কখনো এভাবে ঠকাইনি।তাই প্রথম বার ঠকে যাওয়ার মিহাল ঠিক মেনে নিতে পারছে না।পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল দিল।কল রিসিভ হতেই মিহাল বলল__
আই ওয়ান্ট এভরি সিঙ্গেল ডিটেইলস।
ওপর পাশের মানুষ থেকে উত্তর শুনে বাঁকা হাসলো মিহাল।ফোন কেটে পকেটে পুরে ফেলল। মুখের বাঁকা হাসি বজায় রেখে বলল _
স্টারট কাউন্টিং ডাউন টু দ্যা বিগেনিং অফ ইউর বেড টাইম।
কথাটি বলেই ভয়ংকর হাসি দিল শায়ান।তার হাসির শব্দে আশে পাশে থাকা কবুতর ভয়ে একত্রে ঝাঁক বেঁধে উড়ে গেল।
চলবে.??? ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।
নোট:📛 সবাই পিন কমেন্ট চেক করবেন। 📛অনেকেই নতুন পাঠক তাদের বলে দেই আমি প্রতিদিন গল্প দেই না। অন্তত একদিন পর পর। সমস্যা হলে একটু দেরি হয়। এবং এই গল্পে অনেকেথ অনেক প্রশ্ন,,নায়ক কে? মিনু কি নীলার ফুপি?কেউ বলে নীলার আপন মা। গল্প মাত্র শুরু করলাম।একটু ধৈর্য ধরুন। সামনে দেখতে পাবেন।
Share On:
TAGS: নাজনীন নেছা নাবিলা, নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৪
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা গল্পের লিংক
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৩+বোনাস পর্ব
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ১
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)