নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
পর্ব ১
রাত পোহালেই চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হবে নিলা মির্জার।সে খুশিতে ঘুমাতে পারছে না সে।কত ঝড় ঝাপটা পার করে সে কাল সুখের মুখ দেখতে পাবে তা কেবল সেই জানে। ছোট্ট থেকে যাকে ভালোবেসে এসছে কাল তার সাথেই বিয়ে হবে কথাটি ভাবতেই এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে নীলার শরীর দিয়ে।
চলুন পরিচয় টা দিয়ে নেই।#নীলামির্জা হলো মির্জা পরিবারের একমাত্র মেয়ে।তাই সে সবার আদরের।তার বাবার নাম নিলয় মির্জা আর মায়ের নাম লায়লা ইসলাম। নিলয় মির্জারা তিন ভাই।নিলয় মির্জা হলো মেজো।আর উনার বড় ভাইয়ের নাম ইমরান মির্জা এবং তার স্ত্রীর নাম ইরিন। ইমরান মির্জার দুই ছেলে। একজনের নাম #ইরফানমির্জা আরেক জনের নাম ইবাদ মির্জা। ইরফান সবে পড়াশোনা শেষ করে প্যারিস থেকে বাংলাদেশে ফিরেছে। এবং বাবার ব্যবসায় হাত লাগিয়েছে।তার বয়স ২৭ বছর। লম্বায় ৫ ফুট ৮। গায়ের রং শ্যামলা। তারপরও কোনো মেয়ের নজর কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।মূলত তার সাথেই নীলার বিয়ে হবে।আর ইবাদের বয়স ১০ বছর। নিলয় মির্জার ছোট ভাইয়ের নাম আকাশ মির্জা এবং স্ত্রীর নাম রুবিনা আক্তার। আকাশ মির্জার এক ছেলে যার নাম আবির মির্জা সে ঢাকা মেডিকেলে ডাক্তারী নিয়ে পড়াশোনা করছে।বয়স তার ২৬।তিন ভাই মিলে এক কম্পানি চালায়।আর তা ছাড়াও নিজেদের ব্যক্তিগত দোকান আছে যা কর্মচারীরা দেখভাল করে।বেশ নাম ডাক আছে তাদের এই শহরে।পুরান ঢাকার ফরিদাবাদ এলাকায় থাকে তারা।নিজেস্ব দোতালা বাড়ি যা তিন ভাই মিলে বানিয়েছে এবং এখনো যৌথ ভাবে বসবাস করে যাচ্ছে
“নাহ ঘুম আর আসছে না শুধু শুধু শুয়ে থেকে লাভ নেই।”
কথাটি বলে আলসেমি ছেড়ে উঠে বসলো নীলা। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ভোর তিনটা বাজে। চারদিকে অন্ধকার এবং ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। এখন তেমন শীত পরেনি কেবল শীতের আবাশ তাতেই এই অবস্থা।নীলা বিছানা ছেড়ে সুইচ বোর্ডের দিকে গেল এবং রুমের লাইট জ্বালিয়ে ফেলল। তারপর আস্তে আস্তে হেঁটে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।পরনে তার লং টপ যার হাতা কব্জি পর্যন্ত। এবং নরমাল পায়জামা।ওরনা সোফার উপর রাখা।নীলা নিজেকে বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিল।গোল গাল চেহারার মাঝে খারা নাক। গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা।কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল।হাসলেই বাম পাশের গ্যাজা দাঁত দেখা যায়। এবং তাকে যেন ভালোই মানিয়েছে এই গ্যাজা দাঁতে। নীলার বয়স ২১ বছর।সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স থার্ড ইয়ারে অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করছে। অনেক স্বপ্ন ছিল দেশের বাইরে যাবার কিন্তু ইরফান না করেছে বিধায় যায়নি। ভালোবাসার মানুষটির জন্য এতটুকু তো করতেই পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি সে বাবার কম্পানি দেখে মাঝে মধ্যে। একমাত্র মেয়ে তো তাই। কিন্তু পেশায় তার শিক্ষিকা হবার ইচ্ছা এবং চাকরির জন্য পড়াশোনাও শুরু করে দিয়েছে। সে খুব প্রতিবাদী এবং সাহসী একজন মেয়ে।কথায় কথায় কান্না করা যেন তার সহ্য হয় না।
নীলা সোফার উপর থেকে ওড়না নিয়ে মাথায় ঘোমটার মতোন করে দিল।এখন তাকে অনেকটা বউ বউ লাগছে। নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল। তারাতাড়ি করে বিছানায় বালিশের পাশে থাকা ফোন হাতে নিয়ে টপাটপ করে নিজের কয়েকটা ছবি তুলে নিল।সে আবার খুব স্ব-প্রেমী। নিজেকে সে সব থেকে বেশি ভালোবাসে তাই তো সব সময়ই খুশি। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড কে মেসেজ দিল। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে তার বেস্ট ফ্রেন্ড এখনো তার আগের মেসেজের রিপ্লাই দেই নি।গত তিনদিন যাবত সে তার বেস্ট ফ্রেন্ড কে মেসেজ দিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু কোনো উত্তয় পায়নি। তার বেস্ট ফ্রেন্ডের নাম আরশি ইসলাম।নীলা বেস্ট ফ্রেন্ডের কাছ থেকে মেসেজের রিপ্লাই না পেয়ে মনক্ষুণ্ণ হয়ে বিছানায় বসে পরে। কিন্তু পরক্ষণেই ফোনের ওয়াল পেপারে দৃষ্টি যেতেই মন ভালো হয়ে উঠে। কারণ সেখানেই তো তার সুখ, ভালোবাসা ভেসে আছে।
“প্যারিসের ৭ম অ্যারোন্ডিসমেন্টে, আইফেল টাওয়ারের থেকে অনেকটা দূরে নিজেস্ব এপার্টমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে #মিহাল_খান।সে এখানে তার পরিবার সমেত বসবাস করে।জানালার সামনে দাঁড়ালেই পুরো Champ de Mars আর Eiffel Tower এক নজরে দেখা যায়।প্যারিস শহরের নরম সকালবেলার আলো তার ঘরে সবসময়ই একটা কাব্যিক ছোঁয়া এনে দেয়।তার বাসার নিচের রাস্তাটা ঠিক সিনেমার মতো—পাথরের রাস্তা, পাশেই ছোট একটা বেকারি, যেখানে সকালবেলা croissant-এর গন্ধ ভেসে আসে।
American University of Paris-এ সে Economics বিভাগের অধ্যাপক। অবশ্য এক সময় সে এই ইউনিভার্সিটির টিচার ছিল।তার বাড়ি থেকে AUP খুব কাছেই।গাড়ি দিয়ে গেল সর্বোচ্চ ৬ কি ৭ মিনিট।
বসয় তার ৩০। উচ্চতায় ৬ ফুট হবে। গায়ের রং উজ্জল। চোখের সামনে এত সুন্দর দৃশ্য থাকতেও তার চোখে স্পষ্ট প্রতিশোধে আগুন ধাও ধাও করে জ্বলছে।যার কারণ কেবল সে এবং আর একজন ব্যক্তিই জানে।বাকিটা পরিচয় গল্পে পাওয়া যাবে।
সম্পূর্ণ মির্জা বাড়ি ফুল এবং লাইট দিয়ে সাজানো।আর সাজানো থাকবে নাই বা কেন? বাড়ির বড় ছেলে এবং একমাত্র মেয়ের বিয়ে হচ্ছে বলে কথা। অবশ্য বিয়েটা এখন খুবই সাধারণ ভাবে হবে।কাল বিকেলে গায়ে হলুদ হয়ে গেছে ঘরোয়া ভাবে।আজ দুপুরে আকদ করানো হবে।মাস দেড়েক পর ঘটা করে অনুষ্ঠান হবে।সকাল থেকেই সবাই কাজে ব্যস্ত। বাড়ি ভর্তি কুটুম।ঘটা করে অনুষ্ঠান না হলেও বাড়ি কুটুম দিয়ে ভরে গেছে। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী যাদের না বললেই নয় সবাই উপস্থিত আছেন। বাবুর্চিরা বাগান ঘরে রান্না করছে। মানুষদের কে বাগানে এবং ছাদে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।নীলা নিজ ঘরে বসে আছে।তার ঘরে তার সকল বান্ধবী এবং কাজিনরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে। পার্লারের মহিলারা তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। ইরফান বেশি সাজ পছন্দ করে না বলে নীলা তেমন সাজলো না।তার আবার সাজগোজ খুব পছন্দ কিন্তু নিজের পছন্দের মানুষের জন্য নিজ পছন্দকে প্রায়শই নীলা বিসর্জন দিতে দ্বিধাবোধ করে না।তার নামে যেযন নীল আছে তেমনি তার মনেও আছে। অর্থাৎ তার নীল রং ভীষণ প্রিয়। ছোটবেলার থেকেই শখ ছিল নিজের বিয়েতে সে নীল রঙের শাড়ি পরবে। অন্য মেয়েদের ছোটবেলায় স্বপ্ন থাকে বিয়ের সময় লাল টুকটুকে শাড়ি পড়বে কিন্তু সে আবার একটু ভিন্ন ছিল।কিন্তু ইরফানের নীল রঙ একদম পছন্দ না তাই ইরফানের জন্য আজ সে খয়রি রঙের শাড়ি পরলো। নিজের পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হচ্ছে এর থেকে বেশি আর কি লাগে।
টুংটাং করে মেসেজের নোটিফিকেশন এল নীলার ফোনে।তার ফোন ড্রেসিং টেবিলের উপরই রাখা ছিল।নীলা যেই না নিজের ফোন নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় ওমনি তার খালাতো বোন রুমি তার ফোন নিয়ে নেয় এবং মজার ছলে বলে_
“না না না নীলু,আজ আর তোকে ফোন দিচ্ছি না। বিয়ের পর নিজের প্রাণ প্রিয় বরের সাথে অনেক কথা বলতে পারবি।এখন শুধু অপেক্ষা কর।এত উতলা হলে চলবে?”
তারা দুজনেই সমবয়সী।রুমির কথার প্রেক্ষিতে নীলা কিছু বলল না কেবল লাজুক হাসল। কিন্তু মনটা আনচান করছে। কাল রাত থেকে আর তার ইরফানের সাথে কথা বলা হয়নি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর যেই মানুষটি সম্পূর্ণরূপে তার হয়ে যাবে সেই মানুষটির সাথে কথা বলার জন্য নাহয় আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো সে।
তার সাজ সম্পূর্ন করে পার্লারের মহিলারা যেতে না যেতেই নীলা নিজের ক্লাসমেট ইকরা কে বলল_
আরশির খবর জানিস? গত তিনদিন যাবত আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। হঠাৎ কি হলো তার? আমার বিয়ে অথচ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অনুপস্থিত। ভালো লাগে না।
নীলার কথা শুনে ইকরা আমতা আমতা করতে লাগলো।ইকরা কে আমতা আমতা করতে দেখে নীলা বুঝে গেল ইকরা কি বলতে চায়।সে ইকরা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিজে বলে উঠলো _
দেখ ইকরা তুই আমার ফ্রেন্ড।আমি তোকে বিশ্বাস করি। কিন্তু তার থেকেও বেশি বিশ্বাস আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে করি।তাই তার সম্পর্কে কোনো গুজব আমি কানে তুলব না। হয়তো সে কোনো সমস্যায় আছে।আমি পরে এই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। বিয়ে খেতে এসেছিস চুপচাপ খাওয়া দাওয়া কর আর আনন্দ কর।দয়া করে আনন্দ মাটি করার চেষ্টা করবি না।
নীলার রূঢ় কথা শুনে ইকরার মুখ চুপসে যায়। কিন্তু সে তো নীলার ভালো চায় বলেই নীলা কে বার বার একটি বিষয় সম্পর্কে অবগত করে আসছে। অথচ নীলা অন্ধবিশ্বাস করে নিজের ক্ষতি নিজেই করছে।ইকরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুম ত্যাগ করল।
হুড়মুড় করে নীলার রুমে তার মা এবং বাবা প্রবেশ করল। মেয়েকে বউ সাজে দেখে চোখ ভরে উঠলো তাদের।লায়রা ইসলাম কাছে এসে মেয়েকে বুক জড়িয়ে নিলেন।কত দোয়া, কত মানত করে তারা এই কন্যা সন্তান পেয়েছেন কেবল তারাই জানেন। ভেবেছিল হয়তো নিসন্তান থাকতে হবে কিন্তু নীলা জন্ম গ্রহণ করে তাদের প্রমাণিত করে। নিলয় খান মেয়েকে নিজের স্ত্রীর কাছে থেকে নিয়ে নিজের বুকে আগলে ধরেন। মেয়ের মাথায় পর পর চুমু খান। তারপর বলেন_
“একদম মিনুর মতোন লাগছে আজ তোকে।”
তিনি কি বলেছেন তা উপলব্ধি করতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে জিভে কামড় বসান।লায়লা খান আতংক জনক দৃষ্টিতে একবার স্বামীর পানে চান তো আরেকবার নিজের মেয়ের পানে চান। নীলা নিজের বাবার বুক থেকে থেকে মাথা তুলে কৌতুহল জনক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল_
মিনু কে বাবা?
নিলয় খান থমকে যান। পুরোনো ক্ষত আবার জেগে উঠে। চোখের সামনে ভেসে উঠে পুরোনো স্মৃতি। লায়লা ইসলাম স্বামীর অবস্থা বুঝতে পেরে কথা কাটানোর জন্য তড়িঘড়ি করে বলেন_
এসব কথা পরে হবে। কিন্তু একটা জিনিস দেখ আমরা কতটা ভাগ্যবান বিয়ের পরেও নিজের মেয়েকে নিজের চোখের সামনে দেখতে পাবো। এই তো মনে হচ্ছে সেই দিন জন্মগ্রহণ করলি, অথচ দেখ আজ তোর বিয়ে। আর বেশি কথা বাড়িয়ে লাভ নেই চুপচাপ বস আমরা এসে নিয়ে যাব। তোর বর সেই সকালে বাহিরে গেছে এখনো আসেনি। আমরা গিয়ে দেখছি সে এখন কোথায় বিয়ের সময় তো ঘনিয়ে এলো।
এই বলে নীলার কপালে চুমু খেয়ে স্বামীর হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেল লায়লা ইসলাম। কিন্তু নীরব রুমে একা রয়ে গেল নীলা। মনে রয়ে গেল হাজারো প্রশ্ন। সেই একই খটকা যা তার মনে আগেও লেগেছিল। মনে মনে বলল_
কে এই মিনু? বাবার মুখে এই নামটি আমি আরো অনেকবার শুনেছি। শুধুমাত্র বাবা নয়, বড় চাচ্চু এবং ছোট চাচ্চুর মুখেও শুনেছি। কিন্তু এই সম্পর্কে আমি কেন কিছু জানি না।
তার চিন্তার ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটায় তার বান্ধবী এবং কাজিনরা। যখন তার বাবা রুমে ঢুকেছিল তখন তাদেরকে প্রাইভেসি দিয়ে সবাই বাইরে চলে গিয়েছিল। তার মা বাবা চলে যেতেই সবাই আবার রুমে প্রবেশ করে। নীলাও নিজের চিন্তা ভাবনা ছেড়ে চুপচাপ খাটে বসে থাকে। এখন তার মনের কেবল আনন্দ কে সে জায়গা দিবে কোন চিন্তাভাবনাকে না।
একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে আবির ইরফান কে। কিন্তু ইরফান কারোর ফোনই ধরছে না।সবাই খুবই চিন্তিত। বাড়ির পুরুষরা মিলে আত্মীয় স্বজনদের সামলাচ্ছে।যেই যায়গায় বিয়ে হবার কথা ছিল দুপুরে সেই যায়গায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল অথচ বরের আসার কোনো খবর নেই। এতক্ষণে আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে।কেউ বলছে হয়তো ছেলের কোন বিপদ হয়ে গেছে, কেউ বলছে হয়তো ছেলে এই বিয়েতে রাজি ছিল না, আবার কেউ বলছে হয়তো মেয়েতেই কোন সমস্যা আছে। ঘুরেফিরে আমাদের সমাজের মানুষ মেয়েদের কেই দোষারোপ করে। সবাই মিলে আত্মীয় স্বজনের মুখ বন্ধ করতে পারছে না। কারণ মানুষের মুখ বন্ধ করা কখনই সম্ভব না। নীলা নিজের রুমে বসে বসে কান্না করছে এবং ইরফানের জন্য দোয়া করছে। তার মন বলছে কিছু একটা খারাপ হতে চলেছে।ইকরা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। হঠাৎ করেই বাহির থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেল।নীলা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে তার বড় চাচ্চু ইরফান কে ধমকাচ্ছে।নীলা আর দেরি না করে পরনের শাড়ির কুচি ধরে দৌড় লাগালো ড্রয়িং রুমের দিকে। সে দোতালায় থাকে দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়িয়ে নিচে নামে।চোখে মুখে তার আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। সে চায়না কেউ তার ইরফান কে বকা দেক। তার ইরফান তার কাছে ফিরে এসেছে এতেই সে খুশি। এখন বিয়ে হয়ে গেলেই হবে। কিন্তু দরজার কাছে যাওয়ার পর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ব্যক্তিকে দেখে সে থমকে যায়। তার পুরো পৃথিবী যেন তার সাথে থমকে যায়। মুহূর্তেই সে নিজেকে নিঃস্ব মনে করে। দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, কিন্তু তারপরও অনেক কষ্টে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথা তার ঘুরতে শুরু করে। কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখার জন্য শাড়ির আচল অনেক শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। চোখ অশ্রুতে ভরে গেছে উপলব্ধি করতে পেরে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি চোখেতেই শুকিয়ে ফেলল। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার বেস্ট ফ্রেন্ড আরশি এবং তার ভালোবাসার মানুষ, তার বাগদত্তা, ইরফান যার সাথে আজ তার বিয়ে হবার কথা ছিল। আরশি বিয়ের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে। ইরফান শক্ত করে আরশির হাত ধরে রেখেছে। দুজনের দৃষ্টি মাটির দিকে। বাড়ির সকলে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কেবল ইরফানের পিতা চিৎকার চেঁচামেচি করছে। নিলয় মির্জার বুক ফেটে যাচ্ছে মেয়ের কষ্টের কথা ভেবে। কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে নীলা বলল_
বাড়ির ছেলে আর ছেলের বউকে বরণ করে তোমরা ঘরে তুলো। আর কতক্ষণ এভাবে বাহিরে দাঁড়া করিয়ে রাখবে?
নীলার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। থেকে বেশি অবাক হয়েছে আরশি এবং ইরফান। তারাতো ভেবেছিল নীলা কান্নাকাটি করবে, চিৎকার চেঁচামেচি করবে অথচ নীলার এমন ঠান্ডা ব্যবহার দেখে সবাই অবাক।
নীলা কিছু না বলে খাবার টেবিলে চলে গেল তারপর জোরে চিৎকার দিয়ে বলল_
উফ্ মা সেই সকাল থেকে না খেয়ে বসে আছি আমাকে তাড়াতাড়ি খাবার দাও।
লায়ালা বেগম শাড়ির আঁচল মুখে চেপে কেঁদে উঠলেন। মেয়ে তার উপর উপর যতই শক্ত থাকা নাটক করুক না কেন কিন্তু মনে মনে যে একেবারে ভেঙে পরেছে তা তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। নীলা যখন দেখল তার মা তাকে খাবার না দিয়ে কান্নাকাটি করছে তখন সে নিজেই উঠে পড়ল এবং প্লেট হাতে নিয়ে সব জায়গা থেকে একটু একটু করে খাবার তুলে নিল এবং সুন্দর করে খেতে লাগলো। খাবার খাওয়ার সময় কি প্রশংসাটাই না করল সে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুই প্রতারক অবাক দৃষ্টিতে কেবল চেয়ে রইল তার দিকে।
চলবে…?
নতুন গল্প আশা করি সবাই রেসপন্স করবেন। গঠনমূলক কমেন্ট করবেন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন
গল্পের নাম #নীভৃতেপ্রেমআমারনীলাঞ্জনা লেখিকা #নাজনীননেছা_নাবিলা
সূচনা_পর্ব
Share On:
TAGS: নাজনীন নেছা নাবিলা, নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৪
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৩+বোনাস পর্ব
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ২
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা পর্ব ৫(প্রথমাংশ+শেষাংশ)
-
নীভৃতে প্রেম আমার নীলাঞ্জনা গল্পের লিংক