৫.
খুব কাছে এসেও বাঈজী হেমাঙ্গিনীর ঠোঁটজোড়ায় আদর করা হল না জমিদারপুত্র তাইমুরের। দুটি ওষ্ঠজোড়া স্পর্শের ঠিক আগ মুহুর্তে থেমে গেলেন তিনি।
নবাব তাইমুর গজনবী – এর ইঙ্গিতের অপেক্ষায় শত নারী অপেক্ষমান। নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে সদা প্রস্তুত। হেমাঙ্গিনীর মাঝেও ব্যতিক্রম কিছু নেই। অথচ নবাব তাইমুর আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন।
তার পচিশ বছরের জীবনদশায় এই প্রথমবার দেহের পরিবর্তে কোনো নারীর মন স্পর্শ করার তীব্র ইচ্ছে জাগল। হেমাঙ্গিনীর কাজল কালো অক্ষিজোড়া, যার মুগ্ধতায় এতক্ষণ বুদ হয়ে ছিলেন জমিদারপুত্র, এক লহমায় যেন তা পৌরুষের অহঙ্কারকে স্তব্ধ করে দিল।
পুরুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন তার প্রিয় নারীর মন জয় করাটা বোধহয় রাজ্যজয়ের অনুভূতির সামিল। তাইমুর সেই অনুভূতি অনুভব করতে চাইলেন।
তিনি জমিদারপুত্র। তার নিকট রাজ্য বা সম্পদ জয় করা মোটেও জবর কিছু নয়। তবে একজন বাঈজীর হৃদয় জয় করার আকাঙ্ক্ষা এক নতুন রোমাঞ্চকর অনুভূতির জন্ম দিল তার অভ্যন্তরে। এই গল্পের সকল পর্বগুলো পাওয়া যাবে লেখিকা ‘ Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ পেইজে।
তাইমুর নিজেকে সামান্য গুটিয়ে নিলেন।হেমাঙ্গিনীর চিবুক গভীর সম্মানের সহিত আলগা করে দিলেন।
হেমাঙ্গিনীও মৃদুভাবে চোখ মেলল। অতি বিস্ময়ে কপালে হালকা ভাজ পড়ল তার। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠা শরীর একেবারে স্থির হয়ে গেল। এমন মাহেন্দ্রক্ষণের হঠাৎ ছন্দপতন মেনে নিতে কষ্ট হল তার। এ কি বিরল ঘটনা নয়? এত কাছে পেয়েও তার আস্বাদন গ্রহণ করল না জমিদারপুত্র? তবে কি সে যথেষ্ট আবেদনময়ী নয়? প্রশ্নগুলো ক্রমশই হেমাঙ্গিনীর হৃদয়ে তীক্ষ্ণ কাঁটার মতো বিঁধতে লাগল।
তাইমুর হেমাঙ্গিনীর মনের ব্যাকুলতা টের পেলেন। তিনি পালঙ্ক ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। এরপর ফিরে তাঁকালেন হেমাঙ্গিনীর পানে। তার সেই দৃষ্টিতে কোনো লোলুপতা ছিল না। ছিল এক ধরনের মুগ্ধতা।
হেমাঙ্গিনী তখনও পালঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে বসে ছিল। ক্ষণিককাল নীরব থাকার পর, জমিদারপুত্র গভীর কণ্ঠে বললেন,
- বাঈজী সাহেবা, আমি আপনার এই দামী পোশাক আর অলংকারের ভীড়ে যে আসল মানুষটি লুকিয়ে আছে, তার সাথে পরিচিত হতে চাই।
হেমাঙ্গিনী পালঙ্ক ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। মেঝের দিকে তাঁকাল। কারুকাজ খচিত পর্দার ফাঁক দিয়ে রোদের সূক্ষ্ম রেখা এসে অপরিচিত নকশা এঁকেছে সেখানে। সেই নকশা পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলল,
- হুজুর, আমি একজন সামান্য বাঈজী। আমার পোশাক আর অলংকারই আমার পরিচয় বহন করে। কেউ আমার সুসজ্জিত দেহ ছাপিয়ে অন্তরের খবর নিতে চায় না।
তাইমুর পায়চারি করতে লাগলেন ঘর জুড়ে। চোখে দৃঢ়তা মিশিয়ে ব্যাকুল স্বরে বললেন,
- আমার পথ অন্যদের চেয়ে আলাদা, বাঈজী সাহেবা। আমি আপনার অন্তরের সুর শুনতে চাই। আপনার নাচের প্রতিটি ছন্দ যে দুঃখের কাব্য ছড়িয়ে দেয়, তার সর্বশেষ চরণটি উপলব্ধি করতে চাই।
হেমাঙ্গিনী মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইল। প্রত্যুত্তরে তার কি বলা উচিত বোধগম্য হল না।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নবাব তাইমুর গজনবী ঘোষণার সুরে বললেন,
- আসছে পূর্ণিমার রাতে বিভিন্ন এস্টেটের মশুর জমিদার এবং জমিদার পুত্রদের মাঝে অশ্বদৌড় প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি আমাদের এস্টেটের সবচেয়ে বড় বার্ষিক আয়োজন। উক্ত আয়োজনে আমি আপনার বিশেষ উপস্থিতি কাম্য করছি।
হেমাঙ্গিনীর ভ্রু কুঞ্চিত হলো। সামান্য হেসে জানতে চাইল,
- অশ্বদৌড় প্রতিযোগিতা? সেখানে আমার কাজ কি, হুজুর? আমি তো কেবলমাত্র নাচ, গান জানি। ওসব জমিদারী অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতি কি শোভনীয়?
তাইমুর প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসলেন। বললেন,
- আপনি আমার বিশেষ অতিথি হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকবেন। চন্দ্রের জ্যোতি কমে গেলে, আপনি না হয় আপনার রূপের আলোয় আমার পথ আলোকিত করবেন?
হেমাঙ্গিনী নিজের রূপের প্রশংসা শুনে লজ্জা পেল বটে। তবে দ্বিধা তার পিছু ছাড়ল না। ইতস্তত করে বলল,
- কিন্তু অন্যরা কী বলবে, হুজুর? মাহফিল ছেড়ে একজন বাঈজীর এমন অনুষ্ঠানে উপস্থিতিতে অসম্মানের পাত্র হওয়া অসম্ভবের কিছু নয়!
- অন্যরা কী বলবে, সে চিন্তা আমার ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না, বাঈজী সাহেবা? আপনি আমার অতিথি। নবাব তাইমুর গজনবী-র অতিথি। আপনি সগর্বে সেখানে উপস্থিত হবেন। সম্মাননায় কোনো ত্রুটি হবে না জবান দিলাম।
তাইমুরের দৃঢ় কণ্ঠে বলা কথাগুলো হেমাঙ্গিনীর বুকে জাগ্রত স্রোতের মত আছড়ে পড়ল। সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে রইল তাইমুরের পানে। তার মত সামান্য বাঈজীর জন্য কোনো জমিদারপুত্র শরীরের ঊর্ধ্বে গিয়ে সম্মানের দায়িত্ব নিলেন। অশ্বদৌড় প্রতিযোগিতায় তাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঘোষণা করলেন।
হেমাঙ্গিনীর মনে হল তাইমুরের প্রতিশ্রুতি যেন তার জীবনের সমস্ত অসম্মানের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রথম হেমাঙ্গিনী উপলব্ধি করল, তার হৃদয়ের রিক্ত জমিতে অনুরাগের বীজ রোপণ হতে চলেছে।এই গল্পের সকল পর্বগুলো পাওয়া যাবে লেখিকা ‘ Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ পেইজে।
হেমাঙ্গিনীর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল। কেবলমাত্র সম্মতি নয়, এক নতুন যাত্রার সূচনার ঘোরে সে বলল,
- যদি জমিদারপুত্র নবাব তাইমুর গজনবী চান, তবে হেমাঙ্গিনী অবশ্যই অশ্বদৌড় প্রতিযোগিতায় উপস্থিত থাকবে। আপনার আদেশ শিরোধার্য, হুজুর।
তাইমুর তৃপ্তির হাসি হাসলেন।
- তবে সেইদিন আমাদের পুনরায় দেখা হোক, বাঈজী সাহেবা? সম্মতি দিলে আজকের মত এখানেই আলাপচারিতার ইতি টানতে চাইছি।
হেমাঙ্গিনী নতজানু হয়ে বলল,
- যো হুকুম, হুজুর।
হেমাঙ্গিনী আর এক মুহূর্তও সেখানে অপেক্ষা করল না। দুয়ার খুলে বেরিয়ে গেল।
অন্দরমহল থেকে পালকিতে করে যখন বাঈজী মহলের চৌকাঠ পেরোল হেমাঙ্গিনী, ততক্ষণে শেষ বিকেলের আলো ক্ষয়ে গিয়ে আবছায়া নেমেছে ধরনীতে। জমিদারপুত্রর প্রতি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে কক্ষে ফিরল সে।
নরম পালঙ্কের পাশে রাখা সুসজ্জিত কাঠের সিন্দুক থেকে সে তার পুরোনো ডায়েরিটি বের করল। গতকাল রাতের অপূর্ণ লেখাগুলো পূর্ণ করবার এক অলস প্রয়াসের দেখা মিলল তার মাঝে। দোয়াত থেকে ময়ূরের পেখম দিয়ে সজ্জিত কলম নিয়ে সে লিখতে শুরু করল,
~ ভাবি জমিদারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করার সংকল্পে বদ্ধ আমি। কেননা, অন্দমহলে আমার অবাধ যাতায়াত প্রয়োজন।
পাঁচ বছর আগে জন্মদাত্রী মায়ের পোশাকবিহীন, অর্ধনগ্ন দেহ আর তার পেছনে প্রহরীদের অস্ত্র হাতে ছুটে চলা নানাবিধ প্রশ্নের সূচনা করেছিল আমার মাঝে।
সেই রাতে মায়ের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছিলাম না কোনোক্রমেই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মনের গভীরে জন্ম নিল সন্দেহ। বৃদ্ধি পেল মায়ের নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ জানতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
প্রকৃতি বোধহয় চেয়েছিল সত্যের উন্মোচন। আমি জানি, আমার মা নিরুদ্দেশ হননি। তাকে খু/ন করা হয়েছে। কী এমন রহস্য লুকিয়ে ছিল তার জীবনে? যার পরিণতি ছিল এত নির্মম? ~
হেমাঙ্গিনী ডায়েরি বন্ধ করে ফেলল। কম্পিত হাতে কলমটিকে দোয়াতে রেখে সে উঠে দাঁড়াল। জমিদারপুত্র তাইমুরের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা বোধ থাকলেও, তার মনের মূল লক্ষ্য মায়ের রহস্যজনক মৃত্যু কিংবা খুনের কারণ উদঘাটন।
হেমাঙ্গিনী আলমারির দিকে এগিয়ে গেল ধীর পায়ে। কাপড়ের স্তূপের নিচে লুকিয়ে রাখা ছোট একটি অলংকারের বাক্স বের করল। কোনো মূল্যবান গয়না রাখার বাক্স নয় এটি। বরং এই বাক্সটি এক নির্মম সত্যের জিম্মাদার। হেমাঙ্গিনী গভীর শ্বাস নিল। বাক্সের ঢাকনাটি খুলল।
নরম মখমলের আস্তরণের ওপর রাখা আছে ভাঙা একটি চুড়ি। জোড়া নয়। কেবলমাত্র একটি। এটি ছিল তার মায়ের অতি প্রিয়, নিত্য ব্যবহার্য অলংকার। চুড়িটির ভাঙ্গা প্রান্তে এখনো সামান্য শুকিয়ে যাওয়া কালচে রক্তের দাগ লেগে আছে।
কোনো এক অলস দুপুরে বাঈজী মহলের পেছনের আঙিনার এক কোণ থেকে চুড়িটি কুড়িয়ে পেয়েছিল হেমাঙ্গিনী। চুড়ির ভাঙা অংশ আর শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ তাকে দারুনভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তার জন্মদাত্রী নিরুদ্দেশ হননি। এই অন্দরমহল থেকে সহসা অদৃশ্য হয়ে যান নি। বরং তাকে চিরতরে মুছে দেওয়া হয়েছে!
হেমাঙ্গিনী চুড়িটিকে হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরল। সে চুক্তিতে আবদ্ধ হল নিজের মনের সাথে।মায়ের এই করুন পরিণতির কারণ তাকে জানতেই হবে। অন্দরমহলের সেই অজানা রহস্য উন্মোচন করতেই হবে। যতক্ষণ না সেই রহস্যের যবনিকাপাত হচ্ছে, ততক্ষণ সে মোটেও ক্ষান্ত হবে না।
সেসময় শেষ বিকেলের সূর্যের লালিমা জমিদার ঈশা খাঁর আলিশান অট্টালিকার বারান্দায় এক মায়াবী চিত্র আঁকছিল। স্বর্ণালী আভা ছড়িয়ে পড়ছিল নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে। দক্ষিণের বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত ছুঁয়ে আসা স্নিগ্ধ বাতাস বারান্দার পিতলের টবে থাকা নাম না জানা গাছগুলোর গাঢ় সবুজ পাতা আলতোভাবে ছুয়ে যাচ্ছিল।
ঈশা খাঁ মসনদে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছেন। পরনে মসলিনের পাঞ্জাবি। হাতে মূল্যবান হীরা বসানো আংটি।
তার সামনে দুটি বেতের সোফায় বসে আছেন উক্ত স্টেটের ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার ডগলাস এবং স্থানীয় বিত্তশালী রতিশ বাবু। তারা আলোচনা করছেন আসন্ন রাজস্ব নীতি এবং নীল চাষ নিয়ে।
ঈশা খাঁ কেবলমাত্র একজন প্রভাবশালী জমিদার নন। তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে ভীষণ পরিচিত মুখ।
কাজেই সকল গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অংশ হিসেবে উনাকে স্মরণ করা হয়। উনার উপস্থিতি কাম্য করা হয়।
ঈশা খাঁ অতি মনযোগের সহিত আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন। এমন সময় তার প্রধান খিদমদগার মীরন প্রায় ছুটে এল। তার সামনে মাথা নুইয়ে দাঁড়াল। তার চোখে মুখে স্পষ্ট উদ্বেগের ছাপ দেখে ভ্রুঁ কুঞ্চিত হল জমিদারের।
মীরন নিমজ্জিত গলায় ইতস্ততভাবে বলল,
- হুজুর, একখানা জরুরি সংবাদ নিয়ে এসেছি।
মীরন সামান্য দ্বিধাগ্রস্ত। কারণ উক্ত আসরে ইংরেজ সাহেব উপস্থিত।
মীরনের দ্বিধাগ্রস্ত চাহনি জমিদারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়ালো না। তিনি অতিথিদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। বললেন,
- মাফ করবেন, জনাব। আপনাদের কথা একটু পরে শুনছি। হয়ত আমার এস্টেটের কোনো বিশেষ বার্তা নিয়ে এসেছে, মীরন। আমার শোনা অতি প্রয়োজন।
মিস্টার ডগলাস মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।
- অফ কোর্স! প্লিজ টেইক ইওর টাইম।
ঈশা খাঁ আসর থেকে সামান্য দূরে সরে গেলেন। পান চিবোতে চিবোতে আগ্রহভরে জানতে চাইলেন,
- কি হয়েছে মীরন? তুমি এত বিচলিত কেন?
মীরন নতজানু হয়ে ভয়ার্ত গলায় বলল,
- জনাব আলী হোসেনকে চিকিৎসালয়ে ভর্তি করা হয়েছে জনাব। উনার….
মীরন থেমে গেল।
ঈশা খাঁ হুংকার দিয়ে উঠলেন।
- থামলে কেন? কি হয়েছে আলীর?
- উনার ডান হাতের ওপর তলোয়ার চালিয়েছেন পাশের স্টেটের জমিদারের পুত্র নবাব তাইমুর গজনবী। তার দেহ হতে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, হুজুর।
ঈশা খাঁ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। শ্বাসপ্রশ্বাস বৃদ্ধি পেল তার। আলী হোসেন তার বাল্যকালের বন্ধু। তার ব্যক্তিগত বৃত্তের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন মানুষ।
- এমন গর্হিত কাজ কেন করলেন জমিদারপুত্র? বজ্রকণ্ঠে জানতে চাইলেন ঈশা খাঁ।
মীরন উত্তর দিল,
- তিনি গতকাল জমিদার সিকান্দার গজনবী এর মাহফিলে গিয়েছিলেন। সেদিন রাতেই একজন নতুন বাঈজীর অভিষেক ঘটেছে। তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন বলে জমিদার সিকান্দারের বড় পুত্র সকলের সামনে তলোয়ার দিয়ে তার হাত কেটে ফেলেছেন, হুজুর।
ঈশা খাঁর শরীর যেন মুহূর্তের মাঝে পাথরে পরিণত হল। তার মুখের জ্যোতি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেল। ঘনিয়ে এলো অন্ধকার। রাগের অনল ভেতরটা পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিচ্ছে তার। তিনি পুনরায় হুংকার দিয়ে উঠলেন। বললেন,
- জনসমক্ষে আমার বাল্যকালের বন্ধুর প্রতি এমন ঘৃণিত আচরণ করা হয়েছে? জনসমক্ষে তাকে চরম অপমান করা হয়েছে!
মীরন আগের মতই মাথা নিচু করে রইল।
আলি হোসেনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা ঈশা খাঁ ব্যক্তিগত ভাবে গ্রহণ করলেন। এই ঘটনাটি সরাসরি তার সামাজিক মর্যাদাবোধে আঘাত হেনেছে।এই গল্পের সকল পর্বগুলো পাওয়া যাবে লেখিকা ‘ Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ পেইজে।
তাইমুর গজনবী কত বড় সাহস দেখিয়েছে ঈশা খাঁর বন্ধুকে সবার সামনে এভাবে অপমান করার! একজন জমিদারের সম্মানই হলো তার মূল পুঁজি। ঈশা খাঁর প্রাণপ্রিয় বাল্যকালের বন্ধুর প্রতি এহেন আচরণ তার সেই সম্মানকে ধূলিসাৎ করেছে!
- কত বড় স্পর্ধা!
ঈশা খাঁ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অস্ফুটে বলে উঠলেন।
এবং সঙ্গে সঙ্গে মীরনকে নির্দেশ দিলেন,
- মীরন। এক্ষুনি জমিদার নবাব সিকান্দার গজনবীর নিকট আমার বার্তা প্রেরণ করো। আমার পক্ষ হতে জানাও, আমি অতিসত্বর তার সাথে বৈঠকে বসতে চাই। আমি এই স্পর্ধার কারণ তার সম্মুখে বসে জানতে চাই। এই অপমান আমি সহজে ভুলব না। প্রয়োজনে তার স্টেটে গিয়ে দশজনের হাত কেটে নিয়ে আসব। আমি জমিদার ঈশা খাঁ। আমার সম্মানে একবার আঘাত হানলে, আমি তার সম্মান বার বার গুড়িয়ে দিব।
মীরন মাথা নুইয়ে তৎক্ষণাৎ আদেশ পালন করতে চলে গেল। ঈশা খাঁ ধীরে ধীরে পায়চারি করে অতিথিদের কাছে ফিরে এলেন।
তার মুখে লেগে আছে শান্ত, শীতল হাসি। অথচ সে হাসির আড়ালে লুকিয়ে ছিল রাজ্যের সমস্ত ক্রোধ আর প্রতিশোধের আগুন।
সামান্য একজন বাঈজীর জন্য তার বন্ধুর হাত কর্তনের মত ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছেন গজনবীর পুত্র। এর জবাব তাকে দিতে হবে। রক্তের বদলে ঝরাতে হবে রক্ত।
( পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে বেশি বেশি লাইক এবং কমেন্ট করে এক্টিভ থাকবেন। আগামীকাল এই সময় গল্প পোস্ট করা হবে )
উপন্যাসঃ #নিষিদ্ধ_রংমহল
লেখনীতে, Atia Adiba – আতিয়া আদিবা
Share On:
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE