নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
পর্ব_১৫
গতকাল এক নিদারুণ নির্ঘুম রজনী কেটেছে হেমাঙ্গিনীর। প্রবীণা উস্তাদনী বিলকিস বানুর আশ্বাসবাণী তার মস্তিষ্কে আশার দীপ জ্বালিয়েছে তা সত্য, কিন্তু সেই দীপশিখা আত্মবিশ্বাসের অভাবে দপদপ করে জ্বলে উঠতে পারেনি।
বিলকিস বানু কক্ষ হতে চলে যাবার পর থেকে হেমাঙ্গিনী নাওয়া-খাওয়া সব ভুলে গেছে। সেই প্রাতঃকাল থেকে সে শুধু একাকী নৃত্যের অলিন্দে ঘুরে বেড়িয়েছে।
নরম পায়ে নুপূরজোড়া আঁটসাট করে বেধে নিজের মনকে বার বার বুঝিয়েছে হেমাঙ্গিনী,
- ঘুঙুরের শব্দ যেন না থামে।
কিন্তু নুপূরের রিনঝিন শব্দ যে আজ কেবলই ব্যর্থতার করুণ সুর বাজাচ্ছে! ঠুমরির গভীরতা এবং আধুনিক চটকের সংমিশ্রণে সে এক নতুন নৃত্যশৈলী গড়তে চেয়েছে, কিন্তু তার মস্তিষ্ক শূন্যতায় আচ্ছন্ন। এক একটি পদক্ষেপে কেবল পুরানো অভ্যাসের ছাপ। বিলকিস বানুর শিক্ষা বারংবার ফিরে আসছে নৃত্যবিন্যাসে।
কিন্তু সিমরানের ঔদ্ধত্য চূর্ণ করবার মতো কোনো মৌলিক স্ফুলিঙ্গ সে খুঁজে পায়নি এখন অব্দি।
সন্ধ্যাপ্রদীপগুলি বোধহয় জমিদারবাড়ির সামনের জলাশয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে খাদেমরা। বাঈজী মহলের প্রতিটি কক্ষেও জ্বালানো হয়েছে লণ্ঠন, মশাল। বারান্দার পিলসুজ থেকে মৃদু হলদেটে আলো প্রবেশ করল হেমাঙ্গিনীর কক্ষে। এই আলোতে সে তার নৃত্য-সাধনার ইতি টানল।
হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসে পড়ল হেমাঙ্গিনী। তার সর্বাঙ্গ ঘামে সিক্ত, কিন্তু তার কপাল থেকে যে সূক্ষ্ম ঘামের রেখাটি নেমে এসেছে, তা শারীরিক ক্লান্তির জন্য নয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। আজ সারাদিন ধরেও সে নতুন কোনো মুদ্রা তুলতে পারেনি।
এক কঠিন, জ্ঞাত ভয় তাকে গ্রাস করছিল। তার সাধনা, জন্মসূত্রের ঐতিহ্য, সবকিছুই আজ অর্থহীন বলে মনে হচ্ছে।
’ না, আমি পারবো না! আমাকে দিয়ে হবে না।’
পুনরায় এই কথাটি তার অন্তরে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। সিমরানের জয়ের উন্মাদনা আর বিলকিস বানুর প্রত্যাশা, এই দুইয়ের ভার হেমাঙ্গিনী তার কচি কাঁধে আর বইতে পারছে না। সহসা তার চোখ দুটি জলে টলমল করে উঠল। গুমট চাপা বেদনা অশ্রুর বাঁধ ভাঙল। ফোঁস ফোঁস করে কেঁদে উঠল সে। তার শরীর কাঁপছিল। মন আশঙ্কায় ছেয়ে গেল। এই কান্না শুধুমাত্র পরাজয়ের পূর্বাভাস নয়, বরং বাঈজী মহলের শেষ সম্মানটুকু হারানোর হাহাকার। যে প্রেম এখনো শুরু হওয়া বাকি, সেই প্রেমকে মাঝপথে ফেলে বিলীন হয়ে যাবার আর্তনাদ। এই গল্পের পরবর্তী পর্ব লেখিকা ‘Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ এর পেইজে সন্ধ্যা ৫:৩০ মিনিটে পোস্ট করা হবে।
গগণ ছেয়ে আছে কৃষ্ণপক্ষের গভীর অন্ধকার। বাঈজী মহলের পেছনের বৃহৎ আঙিনা প্রতিদিনকার মত আজও জনমানবশূন্য।
দিনের বেলায় এখানে খাদেমদের আনাগোনা থাকে। তবে দিন ফুরোলে কেবল ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে ডাক আর দূরবর্তী প্রহরীর হাঁক।
এই আঙিনাটি বাঈজী মহলের ঘুঙুরের ধ্বনি হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। কাজেই এই স্থানটি নীরবতা এবং বিষণ্ণতার একমাত্র আশ্রয়স্থল।
নিজের কক্ষের গুমোট পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে হেমাঙ্গিনী এখানে এসেছে। আঙিনার এক কোণে রাখা ছিল একটি প্রাচীন, কাঠের বেঞ্চি।
কাঠখোদাই করা সেই বেঞ্চিতে সে একাকী চুপ করে বসল। তার মনের অস্থিরতা যেন এই রাতের অন্ধকারের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। চোখের কোণে জলের রেখা এখনো শুকায়নি।
সে তখন আত্মসংকটের গভীরে নিমজ্জিত।
সিমরানের কাছে হার, উস্তাদনীর অসম্মান এবং তার শিল্পের ব্যর্থতা, সব যেন এক পর্বতসমান বোঝা বলে অনুভূত হচ্ছে তার নিকট।
ঠিক সেই সময়, নিঃশব্দে কেউ এসে দাঁড়ালো হেমাঙ্গিনীর সম্মুখে। দ্রুত চোখ মুছে মাথা তুলে তাকালো সে। অন্ধকার ভেদ করে সে দেখল, সম্মুখে স্বয়ং জমিদারপুত্র, নবাব তাইমুর গজনবী।
তাইমুরও যেন আজ সংঘাতপূর্ণ এক দিনের শেষে, ক্লান্ত মনের জন্য এক চিলতে শান্তি খুঁজছেন। তার পরনে সাদা মিহি মসলিনের পোশাক। সর্বদা লেগে থাকা মুখের কঠিন রেখাগুলিও আজ যেন সামান্য নরম।
নবাবপুত্রকে এমন অপ্রত্যাশিত স্থানে দেখে হেমাঙ্গিনী দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। তার সমস্ত দুঃখ-কষ্টকে মুহূর্তের মধ্যে দমন করে ফেলল।
তৎক্ষণাৎ নত হয়ে কুর্নিশ করল। কণ্ঠস্বরে সামান্য বিস্ময় এবং যথোচিত সম্মান বিদ্যমান রেখে শুধালো,
- হুজুর, আপনি এখানে?
তাইমুর ধীরে ধীরে হেমাঙ্গিনীর দিকে এক পা দু পা করে অগ্রসর হলেন। তার দৃষ্টিতে লুকায়িত ছিল এক গভীর অস্থিরতা। যে অস্থিরতা জন্ম দিচ্ছে শঙ্কার। হেমাঙ্গিনীকে বেগম রূপে না পাবার শঙ্কা।
তাইমুর মাথা নাড়লেন। মৃদুস্বরে উত্তর দিলেন,
- বসুন, বাঈজী সাহেবা। মহল ছেড়ে এত দূরে এসে একাকী বসে আছেন যে?
হেমাঙ্গিনী পুনরায় বেঞ্চিতে বসে পড়ল। কিন্তু সে ছিল যথেষ্ট সতর্ক। সে নিজের মনের ভাব গোপন করে স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিল,
- আমার শয়নকক্ষ আজ বড় গুমোট লাগছিল, হুজুর। তাই এই খোলা হাওয়াতে আসলাম। তাছাড়া, বাঈজী মহলের পেছনের এই আঙিনা বরাবরই বেশ শান্ত, জনসমাগমহীন। একাকী বসে থাকতে মন্দ লাগে না।
তাইমুর তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন। মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন,
- আমি এসে আপনাকে বিরক্ত করলাম না তো?
হেমাঙ্গিনী মাথা আরোও নত করে ব্যস্ত হয়ে বলল,
- না, হুজুর। এ কি বললেন আপনি! আমাদের এই বাঈজী মহলের আঙিনায় আপনার পদধূলি পড়েছে, এ তো আমাদের পরম সৌভাগ্য।
হেমাঙ্গিনীর পাশে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে গালে হাসি ঝুলিয়ে বসতে বসতে তাইমুর বললেন,
- আজও আপনি মাহফিলে অনুপস্থিত। কারণ জানতে পারি? আপনার অসুস্থতার দোহাই এর আড়ালে অন্য কোনো সত্য লুকিয়ে আছে কি?
হেমাঙ্গিনী তাইমুরের প্রশ্নের তীক্ষ্ণতা আঁচ করতে পেরে ক্ষীণ হাসল। সেই হাসিতে প্রকাশ পাচ্ছিল আত্মগোপনের সংকল্প।
- মাফ করবেন। তবে আমার এই সেবার জীবন তো আর হুজুরদের বিলাসবহুল জীবনের মতন নয়। তাই মাঝে মধ্যে সামান্য অসুস্থতা এসে পড়ে। আজও শরীরটা খারাপ লাগছিল, তাই নতুন উস্তাদনীর কাছে নিবেদন করে ছুটি নিয়েছিলাম, হুজুর।
হেমাঙ্গিনী এমনভাবে কথাটি বলল, যেন সত্যিই অসুস্থতা ব্যতীত অন্য কোনো গভীর কারণ নেই।
যদিও তার উত্তর এড়ানোর চেষ্টা তাইমুরের দৃষ্টি এড়ালো না। তবে তিনিও আর সেই প্রসঙ্গের গভীরতা খুঁজতে গেলেন না। এই গল্পের পরবর্তী পর্ব লেখিকা ‘Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ এর পেইজে সন্ধ্যা ৫:৩০ মিনিটে পোস্ট করা হবে।
হেমাঙ্গিনীও সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করল,
- আর আপনি? আমি তো জানি, দিনের বেলায় আপনার রাজ্যের কাজ থাকে। সন্ধার পরে সকল সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা মাহফিলে এসে আপনার জন্য অপেক্ষা করেন। বাঈজীরাও এখন আপনাকে তুষ্ট করায় ব্যস্ত। আপনি আমাদের ভাবী জমিদার। আর সেই আপনি মাহফিলের আসন ফেলে এই নিস্তব্ধ অঙ্গনে কেন আসলেন, হুজুর?
এমন প্রশ্ন শুনে তাইমুর যেন সামান্য বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। বুক ভরে হতাশা মিশ্রিত শ্বাস নিলেন। বললেন,
- এ রাজ্যে এখন কেবল রাজনীতির কোলাহলে মুখরিত। আমি এসব কোলাহল পছন্দ করি না, হেমাঙ্গিনী। সন্ধ্যার মাহফিলেও মন টানে না, আপনার উপস্থিতি নেই বলে।
তাইমুর আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,
- সত্যি বলতে কী, এই গজনবী এস্টেট আমার কাছে এক বিশাল স্বর্ণ খাঁচা। এই খাঁচার জৌলুস আমায় টানতে পারে না। আমি আমার একাকী সময় পাঠাগারেই কাটাই। কারণ একমাত্র পাঠাগারই আমায় জৌলুসের ছায়া থেকে দূরে রাখে।
তাইমুরের কথাগুলো যেন এক গভীর ইঙ্গিত বহন করছিল। হেমাঙ্গিনী তার হৃদয়ের স্পন্দন স্পষ্ট অনুভব করল। এই যুবকটি, যিনি অতি শ্রীঘ্রই গজনবী এস্টেটের জমিদার হবেন, তিনি নিজের রাজ্যের ঐশ্বর্যকে ‘স্বর্ণ খাঁচা’ বলছেন!
তাইমুর এবার আর কথা ঘোরালেন না। তার হৃদয়ের অস্থিরতা চূড়ান্ত প্রকাশ পাবার জন্য যেন আহত কবুতরের ন্যায় ছটফট করছিল। তিনি হেমাঙ্গিনীর চোখের দিকে সরাসরি তাকালেন।
তার কণ্ঠস্বর গাঢ় ও আবেগপূর্ণ শোনালো। তিনি বললেন,
- আমি শ্রীঘর বড্ড ভয় পাই, বাঈজী সাহেবা। তবুও আপনার জৌলুসের খাঁচায় আজ আমি বন্দী।
আমি সেদিন থেকে আপনার হৃদয়ের কারাবাসী, যে দিন প্রথম আপনার নৃত্য দেখেছি। গীত শুনেছি।
আমি জানি, আমি জমিদারপুত্র, আমার এমন কথা বলা নিতান্তই অনুচিত। কিন্তু আমি আজ সমস্ত জমিদারি প্রথার বিপরীতে গিয়ে একটিমাত্র প্রশ্ন আপনাকে করতে চাইছি। শুনবেন?
হেমাঙ্গিনীর শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হয়ে এলো। সে ঢোক গিলে কাঁপা কণ্ঠে জানতে চাইল,
- কি প্রশ্ন হুজুর?
তাইমুর এবার উঠে দাঁড়ালেন। হেমাঙ্গিনীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেন। মাথা সামান্য নত করে শুধালেন,
- বলুন বাঈজী সাহেবা, আপনি কি আমার জীবনের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী, আমার বেগম হতে পারবেন?
কথাটি যেন বাণবিদ্ধ হওয়ার মতো হেমাঙ্গিনীর কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। এই চরম অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে সে থতমত খেয়ে গেল। তার চোখ বিস্ফারিত হল বিস্ময়ে। ভাবী জমিদার হতে এমন সরাসরি প্রস্তাব!
হেমাঙ্গিনী দ্রুত নিজেকে সামলে নিল। মনের কোণে সামান্যরূপে উঁকি দেওয়া উচ্ছ্বাসও মুহুর্তেই মিলিয়ে গেল বাস্তবতার দংশনে। মনোভাব বিন্দুমাত্র প্রকাশ না করে, এক গভীর বেদনার হাসি হাসল সে। করুণ কণ্ঠে বলল,
- হুজুর, আপনি এ কী বলছেন? আপনার মতো মহৎ বংশের ভাবী জমিদার এমন খেয়ালী কথা বললে চলে?
- খেয়ালী কথা?
তাইমুর দ্রুত প্রশ্ন করলেন।
- জ্বি, হুজুর। এই বাঈজী মহলের জীবন কি কেবলই খেয়ালী নয়? আমার কাজ মাহফিলে আগত সকল সম্ভ্রান্ত অতিথির মনোরঞ্জন করা। আপনার মতো হুজুরদের সামান্য সময়ের তৃপ্তি দেওয়া। আমরা, বাঈজীরা, কেবলমাত্র ভোগের বস্তু। দিনের শেষে, আমরা তো সেই সকল পুরুষের ভোগের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করি, যারা আমাদের দিকে তাকিয়ে একটি সামান্য সম্ভ্রমের দৃষ্টিও দেয় না!
হেমাঙ্গিনীর কণ্ঠস্বর কাঁপছিল। সে আরোও বলল,
- হুজুর, আমরা এক নিষিদ্ধ ফুলের মতো। যা কেবলমাত্র নিষিদ্ধ রংমহলের শোভা বাড়ায়।
দূর থেকে আমাদের সৌন্দর্য উপভোগ করায় ক্ষতি নেই। স্পর্শ করতে মানা নেই। কিন্তু সেই ফুলকে গৃহে এনে পূজার আসনে স্থান দেওয়া! নৈব নৈব চ! ভাবী জমিদারের বেগম হবার যোগ্যতা কি এই অলিখিত ভোগের বস্তুর থাকতে পারে, হুজুর? বলুন?
তার কথাগুলি যেন তাইমুরের বুকে আঘাত হানল। তিনি দ্রুত হেমাঙ্গিনীর হাত নিজের মুঠোয় পুরলেন। হেমাঙ্গিনী চমকে উঠল বটে, কিন্তু নিজেকে সরিয়ে নিল না।
- বাঈজী সাহেবা, আপনি কেন নিজেকে এসব বলে অপমান করছেন?
তাইমুর হেমাঙ্গিনীর হাতটিকে আরও শক্ত করে ধরে বললেন,
- আপনি আমার চোখে নিষিদ্ধ নন, আপনি আমার জন্য অবারিত। জমিদারি প্রথা আপনাকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করতে পারে। তবুও এই অলিখিত আপনাকে আমি লিখিতভাবে একান্তই নিজের করে নেব, হেমাঙ্গিনী। আমি আপনাকে আমার বেগমের মর্যাদা দিব।
তাইমুর তখন যেন কোনো জমিদারপুত্র নন। বরং এক সাধারণ প্রেমিক। আবেগ আর আশঙ্কার এক দ্বন্দ্বে তাইমুরের মুখ তখন উদ্ভাসিত।
হেমাঙ্গিনীও স্তব্ধ হয়ে গেল। এই যুবকের চোখজোড়া সে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। সে হলফ করে বলতে পারে এই প্রস্তাবে কোনো ফাঁকি নেই। কোনো ছলনা নেই। এ এক নির্ভীক যুবকের পবিত্র অঙ্গীকার। কিন্তু এই পথ কতটা কঠিন, তা হেমাঙ্গিনীর অজানা নয়।
হেমাঙ্গিনী ধীরে ধীরে তাইমুরের হাতের মুঠি হতে নিজের হাত সরিয়ে নিল। তার কণ্ঠস্বর জানান দিল চূড়ান্ত আত্ম-সংবরণের,
- হুজুর, আমি আপনার এই সৎ সাহসকে কুর্নিশ জানাই। কিন্তু এর উত্তর আমি আপনাকে দিতে পারব না।
- কেন?
- মিথ্যের আশ্রয় আমি নিতে পারব না, হুজুর। আর সত্য স্বীকারোক্তি আমার নির্মম ভাগ্যকে বদলাবে না। আমার সামনে এক কঠিন যুদ্ধ অপেক্ষা করছে হুজুর। সেই যুদ্ধে হয় আমি জয়ী হব, না হয় চিরতরে পরাজিত হব। সেই যুদ্ধের ফলাফলের উপরেই আমার জীবনের সকল সিদ্ধান্ত, সকল প্রতিশ্রুতি নির্ভর করছে। আমায় মাফ করবেন। এই গল্পের পরবর্তী পর্ব লেখিকা ‘Atia Adiba – আতিয়া আদিবা’ এর পেইজে সন্ধ্যা ৫:৩০ মিনিটে পোস্ট করা হবে।
হেমাঙ্গিনী তাইমুরকে আর কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বেঞ্চি থেকে উঠে দাঁড়ালো। চোখের পানি মুছে নিজের কক্ষের দিকে দ্রুত পায়ে অগ্রসর হতে লাগল। তার ভেতরের অস্থিরতা পুনরায় ফিরে এসেছে।
তাইমুর একাকী সেই স্থানে বসে রইলেন।
★★ ★★
হেমাঙ্গিনী ঘরে ফিরে পুনরায় তার পায়ে ঘুঙুর পরিধান করল। কক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করল। শিল্প-সত্ত্বা জাগ্রত করবার চেষ্টা করতে লাগল।
- ‘আমার নৃত্য বড়ই একঘেয়ে’
বিড়বিড় করে বলল হেমাঙ্গিনী।
সিমরানের সেই বিষাক্ত কথাগুলি নিজেকে মনে করিয়ে দিতে লাগল সে। আঘাত হানতে লাগল নিজেকে। সেই আঘাতের বেদনাকে আজ মন্ত্রে রূপান্তরিত করতে হবে।
তাইমুরের অবারিত প্রেম, সিমরানের দ্বৈরথ আর বিলকিস বানুর হারানো মর্যাদা – সব যেন একসঙ্গে মিশে তৈরি হল এক নতুন চিন্তাধারা!
হেমাঙ্গিনী নিজেকে শুধালো,
- আমার নৃত্য কেন শুধুমাত্র প্রেম কিংবা বিরহ দেখাবে? কেন তা বিদ্রোহ দেখাবে না? কেন তা তুলে ধরবে না বাঈজীদের প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদের ভঙ্গিমা?
তাইমুরের মুখটি ভেসে উঠল হেমাঙ্গিনীর অক্ষিজোড়ায়। তার প্রতি জমিদারপুত্রের প্রেম এক নতুন শক্তি জোগালো।
হেমাঙ্গিনী আর পুরানো ঠুমরির ভঙ্গিমা অনুসরণ করল না। আজ রাতেও তার ঘুঙুরের শব্দ থামবে না। হেমাঙ্গিনী শুরু করল এক নতুন নৃত্যবিন্যাস। যার ছন্দে ছিল ক্রোধ, অপমান আর সেই নিষিদ্ধ জীবনের বিরুদ্ধে এক নীরব, জ্বলন্ত প্রতিবাদ।
৩৫০০ লাইক এবং ৬০০ কমেন্ট সম্পন্ন হলে আগামীকাল ৫:৩০ এ, ১৬নং পর্ব আসবে।
উপন্যাসঃ #নিষিদ্ধ_রংমহল 🥀
লেখনীতে, Atia Adiba – আতিয়া আদিবা
Share On:
TAGS: আতিয়া আদিবা, নিষিদ্ধ রংমহল
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৭
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১১
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৪
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৬
-
নিষিদ্ধ রংমহল গল্পের লিংক
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৬
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১০
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ১৩
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৩
-
নিষিদ্ধ রংমহল পর্ব ৮