নিষিদ্ধ_চাহনা
পর্ব_২৩
লেখিকাসারাচৌধুরী
🚫অনুমতি বাদে কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ🚫
ইশানের কথা শুনে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় আতিয়া বেগম।ফাইজ এগিয়ে এলো বাড়ির ভিতরে।হাতে থাকা শপিং ব্যাগ আর মিষ্টির ব্যাগ গুলো আতিয়া বেগমের হাতে দিয়ে ফাইজ এগিয়ে যায় সোফার দিকে।
আতিয়া বেগম সবাইকে বসতে বলে রান্না ঘরে ছুটে গেলেন নাস্তা নিতে।এদিকে ইশান গল্প করছে ইলিয়াস চৌধুরীর সাথে।সন্তান যতই খারাপ হোক বাবা মায়েরবকাছে এক বার পা ধরে মাফ চাইলে কোনো বাবা মা ই ক্ষমা না করে থাকতে পারে না।
পিহু মাত্র খাবার শেষ করে টেবিল থেকে উঠে দাড়িয়েছে।এতক্ষন পিহুকে কেও খেয়াল না করলেও এখন ফাইজ আর ইশানের চোখে পড়ে গেলো।ফাইজ কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। তার সামনে একটা অচেনা মেয়ে তবে তার মতে পরীর মতো লাগছে মেয়েটাকে।পিহুর দিকে তাকিয়ে ইশান উচ্চস্বরে বলে উঠলো,,
-“আরে পিহু নাকি..?
ইশানের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায় পিহু।চোখাচোখি হয়ে যায় ফাইজ এর সাথে।পিহু চোখ নামিয়ে নেয়।তখন ইলিয়াস চৌধুরী পিহুকে ডেকে উঠে তার কাছে যেতে বলে।পিহুর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মাথায় ভালো করে কাপড় দিয়ে এগিয়ে যায় সোফার দিকে।এদিকে আতিয়া বেগম ও নাস্তার প্লেট নিয়ে এসেছেন।
পিহু সোফার কাছে যেতেই ইলিয়াস চৌধুরী তার পাশে বসতে ইশারা করে।পিহু চুপ চাপ মাথা নিচু করে বসে পড়ে। পিহুকে বসতে দেখে ইশান বলে উঠে,,
-“আমাদের তো দেখছি ভুলেই গেছিস একবারো কথা বললি না।তা থাক কেমন আছিস বল.?
-“আলহামদুলিল্লাহ।
পিহুর ছোট্ট কথা মোটেই আশা করে নি ইশান।কারন ছোট থেকে সব থেকে বেশি ফ্রী ছিলো ইশানের সাথে পিহু।আর পিহুকে ইশান ও নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসতো। ফাইজের চোখ এখোনো পিহুতে আটকে আছে।পিহুর উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পরখ করে নিলো।না একদম তার মনের মতোই।
ফাইজের চোখ কেও ধরতে না পারলেও ইশান ঠিক ই বুজেছে।যদিও ইশান এসব নিয়ে কথা বলতে এ বাড়িতে আসে নি।তার আসার কারন ভিন্ন।আতিয়া বেগম সবাইকে নাস্তা দিলো টেবিল এ।তার আগে ফ্রেশ হতে পাঠালো জোর করে।আতিয়া বেগমের কথায় পিহুকে ফারজুকে নিয়ে নিজের রুমে যেতে হলো।
ফারজু রুমে এসে বিছানায় বসে পড়লো।এতে পিহুর কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না।ফারজু পিহুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-“আমাকে চিনতে পেরেছো পিহু.?
-“জী।
মুখে ছোট করে উত্তর দিলেও পিহু মনে মনে বললো,, -“না চেনার কি আছে নাটক ইশান ভাইয়ের বউ হয়ে এসেছেন এখন আপ্নারে না চেনার কি।বলদ নাকি আমি।
পিহুর ভাবনার মাঝে ফারজু আবার বলে উঠে,
-“তো পিহু কোন ক্লাসে পড়ছো এখন.?
-“ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে।
-“ওহ আচ্ছা।
-“জি.!
-“আমার কথায় কি তুমি বিরক্ত হচ্ছো.?
-“নাহ বলেন কি বলবেন.?
-“আচ্ছা শুনো..?
-“জি বলেন.?
-“আচ্ছা শুনেছি সাদি নাকি দেশে আছে।তবে এখন কোথায়।
-“বাড়িতেই আছে.কেনো..?
-“নাহ এমনি..?
আর কিছু না বলে ফারজু ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফারজু যেতেই পিহু মুখ ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বললো..
-“না এমনি নাকি এক্স এর জন্য পরান পুড়ছে বুজি বুজি যতসব নাটকবাজ মানুষেরা।
পিহু জানে না কেন তাদের সহ্য করতে পারছে না তবে এটা জানে সেদিন ইশান রা চলে যাওয়ার সময় যখন ইলিয়াস চৌধুরী বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েছিলো। তখন এক বারের জন্য ও তারা পিছু ফিরে তাকায়নি।আর সেটার সুত্র ধরেই পিহুর তাদের কথাও অসহ্যকর লাগছে।
ফারজু ফ্রেশ হয়ে বের হলে পিহু তাকে নিয়ে আবার নিচে গেলো নাস্তার জন্য। আতিয়া বেগম সবাইকে খাবার সার্ভ করছেন।আতিয়া বেগমের আদেশ বাড়ির বউমা এতদিন পর এসেছে একটু খেয়াল রাখ।পিহু ও বাধ্য মেয়ের মতো ক্লান্ত শরীর নিয়ে সব মেনে চলছে।সবার খাওয়া শেষ হতেই ইশান রা তাদের আগের সেই রুমের দিকে চলে গেলো এতোদিন তালাবদ্ধ থাকলেও আজ আতিয়া বেগম বেশ গুছিয়েন।আর ফাইজ এ দোতলার ডান দিকের রুম টা দেওয়া হলো।মাঝে সাদির রুম আর শেষে পিহুর রুম।
পিহুর আজ সব কিছু বিরক্ত লাগছে আতিয়া বেগম কেও বিরক্ত লাগছে।এই যে আতিয়া বেগম এখন হাতে কফি ট্রে দিয়ে বলে উঠলো সবাই কে দিয়ে আসতে।পিহু সবাইকে দিলেও ফাইজ কে দিতে দ্বিদাবোধ হচ্ছে।বেশ ভয় ও করছে।সাদি যদি যানে সে কোনো ছেলের সামনে গেছে তাহলে আবার রিয়েক্ট করবে।তবুও ভয় কে দূরে ঠেলে দিয়ে সাদির রুমে ঠেলা দিলো।নাহ দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।
পিহু এবার সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফাইজ এর রুমের সামনে এসে দরজায় নক করতেই ফাইজ দরজা দিলো।দরজা খুলেই ফাইজ দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বললো,,
-“ওহ পিহু আসো আসো ভিতরে আসো।
পিহু টেরা চোখে ফাইজ এর দিকে এক পলক তাকিয়ে ভিতরে গেলো।বেড সাইট টেবিল এর উপর কফির কাপ টা রেখে। বলে উঠলো,,
-“মামুনি পাঠিয়েছে।
-“কি.?
-“কফি.!
বলেই পিহু চলে যাওয়ার জন্য উদ্দেত হলো ঠিক তখনই ফাইজ বলে উঠে..
-“আচ্ছা পিহু একটা কথা শুনো?
সহসা পিহুর পা থমকে গেলো। এখন যদি প্রশ্নের উত্তর না দেয় তবে অভদ্রতামি হবে। তাই সম্মানের খাতিরে বলে উঠলো,,
-“জি কিছু বলবেন ভাইয়া..?
ফাইজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিচ থেকে ভেসে এলো আতিয়া বেগম এর ডাক।পিহুকে ডাকছেন তিনি।পিহু আর এক মুহুর্ত দেরি না করে ছুটে চলে গেলো ঘর থেকে।নিচে এসে রান্না ঘরের সামনে দাড়াতেই আতিয়া বেগম করুন কন্ঠে বলে উঠলো,,
-“তোরে এতো কাজে বলছি কিছু মনে করিস না মা..?
-“না মামুনি কি মনে করবো। তুমি বলো কি করতে হবে।
আতিয়া বেগম করুন কন্ঠে বললো,,-“সাদি বলেছিলো সকাল দশ টার সময় ডেকে দিতে তার নাকি জরুরি হসপিটালে যেতে হবে।কিন্তু আমি তো ভুলে গেছিলাম। দশটার কাটা পেরিয়েছে কখন।
-“এখন কি হবে মামুনি.?
-“এক কাজ করনা মা..?
-“কি কাজ মামুনি..?
-“আমিবকফি দিচ্ছি তুই একটু ওরে ডেকে দিয়ে আই।আমি গেলে রাগ করবে তার উপর রান্না চুলোয়।আর তুই অসুস্থ তোকে কিছু বলবে না জা না মা।
পিহু আর কিছু বলতে পারলো না। আতিয়া বেগমের করুন কন্ঠ শুনে বেগত্যা সকাল সকাল সাদির হাতের চড় খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে সিড়ি উপরে উঠতে থাকলো।
°°°°°
জেরিনের ধাক্কায় পিহু কল্পনা থেকে ফিরে আসে।
-“এই পিহুরানী কি ভাবছিস..?
-“ক..কয় কি ভাবছি..?
-“এইজে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই ছিলি চোখের পলক ও পড়ছিলো না।
এবার পিহু একটু নড়েচড়ে বসলো। ঠোঁটে জোর করে হাসি টেনে এনে বললো,,
-“তুই ভুল দেখেছিস..!এখন বল কি খাবি..?
-“কিছু না তুই বস এখানে।
-“তোরে বলতে বলছি না কি খাবি আমি বানিয়ে নিয়ে আসি,,আচ্ছা বল চা নাকি কফি..?
জেরিন মুখে হাত দিয়ে বেশ খানিক্ষন ভেবে বললো কড়া লিকারের লাল চা হলে মন্দ হয় না আবার তা যদি হয় আমার পিহুরানীর হাতের।বারান্দায় বসে বাইরের প্রকৃতি দেখতে দেখতে তোর হাতের চা জাস্ট জমে যাবে।
পিহু উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে দুই হাত দিয়ে টেরা চোখে জেরিনের দিকে তাকালো।জেরিন পিহুর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো বোকার মতো।পিহু জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললো,,-” হয়েছে হয়েছে তোর এই গুনোগান শুনতে শুনতে আমি অভ্যাস্ত। এতো মিছা কথা কইতে নাই দোস্ত।তুই দোলনায় গিয়ে বস আমি আসছি।
-“আমি আবার কখন মিথ্যা বললাম..?
জেরিনের কথার উত্তর না দিয়েই পিহু চলে গেলো রান্না ঘরে চা নিতে।দশ মিনিটের মাথায় চা আর বিস্কুট নিয়ে এলো। বারান্দায় গিয়ে জেরিনের পাশে বসে আবার গল্প জুড়ে দিলো। বারান্দা টা বেশ বড়।এক পাশে বেশ কয়েকটা গোলাপ গাছ আছে।আর অন্য পাশে একটা দোলনা দুজন বসে বিকালে পড়ন্ত বিকাল উপভোগ করার মতো।
জেরিন চা চুমুক দিয়ে পিহুকে বলে উঠলো,,
-“জাই বলিস ভাইয়ার পছন্দ কিন্তু সেই বাড়িটা এক দেখায় আমারো পছন্দ হয়েছে।
-“হুম..!
-“আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবি..?
এবার পিহু জেরিনের দিকে তাকায়।দুজনের চোখের মনি শান্ত।পিহু শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞাস করে,,
-“কিহ..?
-“তুই কি আদেও ভাইয়ার সাথে ভালো আছিস..?
পিহু কোনো জবাব দেয়না।জেরিন যা বুজার বুজে নেয়।পিহুর চোখে পানি টলমল করছে।আসলেই সে কি ভালো আছে। নাহ সে মোটেই ভালো নেই।অতীত তাকে কষ্টে অগ্নিয়গিরিতে পুড়াচ্ছে।জেরিন কথার প্রসঙ্গ বদলাতে বলে উঠে,,,
-“কোনো খোজ পাওয়া গেছে..?
-“নাহ..!
জেরিন আর কিছু বলে না।সে বুজতে পেরেছে পিহুর নয়ন থেকে এবার বাধাহীন ভাবে ঝরবে বারিধারা। তাই সে পিহুর মাথাটা নিজের কাধে নেয়।তারপর চা খাওয়ায় মনযোগ দেয়।পিহুর মনে পড়তে থাকে সেদিনের কথা আবারো সত্যিই বুকের ভিতরে কেমন শুন্যতা অনুভব করছে সে।পিহু আবার ডুব দিলো সেই অতীতে…..
চলবে……..
-(আজকের পর্বটা পড়ে অনেকের মনে অনেক কনফিউশান সৃষ্টি হবে।যে গুলো সামনের পর্বে জানতে পারবে।আশা করি ভালো লাগবে।কেও বাজে মন্তব্য করবেন না)-
Share On:
TAGS: নিষিদ্ধ চাহনা, সারা চৌধুরী
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১৫
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৪
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১৬
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১৪
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৫
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৯
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ৭
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৭
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১২