নিষিদ্ধ_চাহনা
পর্ব_২২
লেখিকাসারাচৌধুরী
🚫অনুমতি বাদে কপি করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ🚫
সময় চলে গেছে বিরতিহীন নদীর স্রোতের মতো।সেকেন্ড ফুরিয়ে মিনিট তারপর ঘন্টা অবশেষে দিন।দিনের পর দিন মিলিয়ে সপ্তাহ পার হয়।কয়েক সপ্তাহ মিলিয়ে মাস। সকাল হয় সুর্য উঠে মানুষ জন নিজেদের কাজে বেরিয়ে পড়ে রাত হয় বিশ্রাম নেই। দু চোখের পাতা মিলিয়ে পাড়ি যমায় ঘুমের দেশে।সেদিনের পর কেটে গেছে সাত মাস।
এ সাত মাসে শুধু ক্যালেন্ডার এর পাতা বদলায় নি বদলে গেছে চৌধুরী বাড়ির পরিবেশ।দুটো মানুষের জীবন।সামনের মাসে পিহুর বোর্ড এক্সাম শুরু।পড়াশোনায় বেশ মনযোগ দিয়েছে সে।তবে মনের গভীর বিষাক্ত ক্ষতে সেই দিন টার কথা মনে পড়লে আজো গা শিউরে উঠে পিহুর।
সেই দিনের কথা মনে পড়লে পিহুর চোখের পানি যেনো বাধহীন হয়ে যায়।চোখ দিয়ে টলমলিয়ে অশ্রু গড়ায়।দরজায় টোকা পড়তেই পিহু ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।পিছু ফিরতেই চোখে পড়ে জেরিন কে দাঁড়িয়ে থাকতে।এতক্ষনের ভাবনায় পিহুর চোখের কোনে পানি জমেছে।বাম হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছে মৃদু হেসে বলে উঠে..
-“একি দাড়িয়ে আছিস কেন ভিতরে আই.?
জেরিন হয়তো এই কথাটা শোনার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলো।জেরিন ভিতরে এসে পিহুর সামনা সামনি বিছানায় বসে।বিছানার দুপাসে দু হাত রেখে হাতে ভর দিয়ে পিহুর উদ্দেশ্য বলে,,
-“কি পিহু রানি সারাদিন পড়িস নাকি.?
পিহু হালকা হেসে বলে..
-“আরে ধুর এই মাত্র পড়তে বসলাম আর তুই এলি!
-“আচ্ছা ভাইয়া কই..?
-“কোন ভাইয়া..?
-“আমার পিহুরানীর একমাত্র জামাই মানে আমার ভাইয়া বুজলা।। -(জেরিন পিহুর গাল টেনে দিয়ে আলতো করে কথাটি বলে)-
পিহু জেরিনের কথার কোনো রিয়েকশন না দিয়ে বলে…
-“সেই সকালে বেরিয়েছে এখোনো খোজ নেই ফোনটাও বাড়িতে ফেলে গেছে।
-“মানেহ।(জেরিন একটু অবাক হয়)
-“আমারে পড়তে বসতে বলে বেরিয়ে গেছে আর বললো তুই আসবি সন্ধ্যা অব্দি থাকতে বলছে.?
-“হুম ভাইয়া আমাকে ফোন করে আব্বুকে বলে মানিয়ে নিয়েছে এখন রাতে থাকলেও সমস্যা নেই পিহুরানী।
জেরিনের কথায় পিহু স্মীত হাসে তবে মন টা খুব খারাপ।জেরিনের বুঝতে একটু ও অসুবিধা হয় না।বুজে যায় চঞ্চল পিহুর মন খারাপ।তাই জেরিন পিহুর গালে হাত রেখে বলে…
-“কি হইছে মন খারাপ.?
পিহু হাসলো যেনো তারপর বললো,,-“যার মন টাকেই গলা টিপে মেরে ফেলা হয়েছে তার কি আবার মন খারাপ হয়।
পিহুর কথা শুনে জেরিনের বুকের মাঝেও কেমন একটা শুন্যতা ততৈরি হলো আসলেই মেয়েটার প্রচন্ড কষ্ট। যে কষ্টের এক ভাগ জেরিন পেলে হয়তো তাকে জিবীত পাওয়া যেতো না।জেরিনে পিহুকে উঠিয়ে বিছানায় নিজের পাশে এনে বসায় তারপর নিজের বুকে জড়িয়ে নেয় নিজের কলিজার বান্ধুবি কে।পিহুর চুলের ভাজে হাত বুলাতে বুলাতে জেরিন বলে উঠে…
-“যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে সব ভুলে যা আর কষ্ট পাইস না।
-“তুই ভুলে যেতে বলছিস..?কি ভুলবো আমি..?
মুহুর্তে মি পিহুর চোখ ভিজে যায়। আসলেই কি সব ভুলে থাকা যায়।নাকি ভুলা যায়।কিছু কিছু জিনিস খুব কাদায় মানুষকে।দেখতে পিহু কল্পনায় ডুব দেয় সেদিনের ঘটনায়।
ফ্লাসব্যাক….
পুরো তিন দিন পর জর থেকে উঠেছে পিহু।শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি নেই।চোখ গুলো বসে গেছে।চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে।চুল গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।শরীর টাও যেনো আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে।
এই তিন দিন সাদি এক ঘন্টার জন্য হলেও বাইরে জাইনি। অতি জরুরি হলে হসপিটালে গিয়েছে কাজ মিটিয়েই চলে এসেছে।ডাক্তার এসে স্যালাইন দিয়েছিলো।ওষুধ ও দিয়েছে।এই তিন দিনের পিহুর পাশে প্রায় সব সময় সাদি ছিলো।
সাদির এমন পরিবর্তন দেখে বেশ অবাক হয়েছিলেন আতিয়া বেগম। সাথে খুশি ও হয়েছিলেন।যে অন্তত মেয়েটাকে আর না জেনো মার খেতে না হয়।
পিহু ক্লান্ত দুর্বল শরীর নিয়ে রুম থেকে বের হয়। আজ বাড়িতে মেহমান আসবে শুনেছে সে। তবে কারা আসবে জানে না।সকাল থেকে আতিয়া বেগম রান্নায় ব্যাস্ত। ইলিয়াস চৌধুরী সোফায় বসে খবর দেখছেন টিভিতে।সকাল নয়টার তাজা খবর।সাদি নাক ডেকে নিজের রুমে ঘুমাচ্ছে।এই তিন দিন তিন রাত তার চোখে ঘুম ছিলো। হুট করে পিহু নামক মেয়েটা তার হৃদয়ে সফট জোন এ বাসা বেধে নিয়েছে।
তবে সাদির রাগ কমেনি এখোনো। পিহু কেনো এত বড় কাজ করতে গেছিলো তার জবাব দিহি সে নিবেই। সাথে থাবড়ে ওর মুখের আকৃতি বদলে দিবে।বাইরে বৃষ্টি পড়ছে এখোনো তাই পরিবেশ টা বেশ ঠান্ডা।সাদির ঘুম আরো গাড়ো হলো।কম্ফর্টার টা মুখের উপর পর্যন্ত তুলে এক পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলো আবারো।
পিহু ধিরে ধিরে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। সুস্থ থাকলে যে সিড়ি পিহু ১ মিনিটে নামে। অসুস্থ অবস্থায় প্রায় দশ মিনিট লাগিয়ে দিয়েছে।পিহু ধিরে ধিরে সোফার কাছে গিয়ে থামে তারপর ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠে,,
“চাচ্চু কেম ন আছো…?
পিহুর কন্ঠ শুনে এতক্ষন সংবাদ দেখায় মগ্ন থাকা ইলিয়াস চৌধুরী ঘাড় ঘুরিয়ে পিহুর দিকে তাকি উঠে আসতে চাই। তবে পায়ে এখোনো জোর নেই তেমন।সামনের সপ্তাহে আবার চেকাপ করতে যাবে।ইলিয়াস চৌধুরী ইশারা করে পিহুকে জাছে ডাকে।পিহু কাছে যেতেই কপালে চুমু খাই পিহুর তারপর বুকে জড়িয়ে নেই।
মনে হচ্ছে কতদিন পর দেখছে মেয়েটাকে।আসলেই এই তিন দিন মেয়েটাকে একবারের জন্য ও দেখতে পাইনি।সিড়ি বেয়ে উপরে জাওয়ার সাহস নেই তার।পিহু ও ইলিয়াস চৌধুরীর বুকে মাথা গুজে রাখে।ইলিয়াস চৌধুরী পিহুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে…
-” যাই হোক চাচ্চু কাকে বললে…?
পিহু এমন কথার পিঠে কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না।তাও আমতা আমতা করে মন খারাপ করে বলে..
-” ভাইয়া তো বলছে চাচ্চু আর চাচি বলে ডাকতে আমি কি করবো..!
পিহুর কথা শুনে ইলিয়াস চৌধুরী মৃদু একটা ধমক দিয়ে বলে, যা শুনেছি এই পর্যন্ত আমি তোমার বাবাই আর ছিলাম বাবাই আছি।আমি কি তোমাকে নিষেধ করেছি একবারো আমাকে বাবাই ডাকতে..?
পিহু মাথা নাড়িয়ে বা বোধক বোজায়।তখন ইলিয়াস চৌধুরী আতিয়া বেগম কে ডাক দেন।আতিয়া বেগম রান্না ঘর থেকে ছুটে আসেন।তিনি হয়তো স্বামির চিৎকারে একটু ভয় পেয়েছেন তায় তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছে।
ইলিয়াস চৌধুরীর পাশে পিহুকে বসে থাকতে দেকগে খুশি হয়ে যায়।তারপর ইলিয়াস চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে,,
-“কিছু বলবা..?
ইলিয়াস চৌধুরী কিছুর বলার আগেই আতিয়া বেগম পিহুকে বলে উঠে..
-“একি মা তুই কখন এলি।। আই খেয়ে নে।
ইলিয়াস চৌধুরী হাসলেন তার স্ত্রী আজ ও তার চোখের ভাষা বুজেন বলে।আতিয়া বেগম।এক প্রকার জোর করে নিয়ে গিয়েই পিহুকে খাবার টেবিল এ বসিয়ে দেয়।বেগত্যা পিহুর খাওয়ার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও খেতে বসতে হয়।আতিয়া বেগম পিহুকে খাবার বেড়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।
চৌধুরী বাড়ির দরজায় কলিং বেল বেজে উঠে।পর পর কয়েকবার।পিহু উঠতে চাইলে তার আগেই আতিয়া বেগম রান্না ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে গেলেন দরজার কাছে। দরজা খুলতেই আতিয়া বেগমের পায়ের কাছে ঝাপিয়ে পড়ে ইশান চৌধুরী। হ্যা আজ ইশান এর আশার কথা ছিলো।নিজের ভুল বুজতে পেরে অনেক মাফ চেয়েছে আতিয়া বেগমের কাছে পরে অনুমতি নিয়ে বউ সাথে এসেছে।
হটাৎ নিজের পা কারোর জাপটে ধরা দেখে আতিয়া বেগম ভড়কে যান।তারপর দৃষ্টি পড়ে নিজের বড় ছেলে বউ এর দিকে।দুজনেই পা ধরে বসে আছে।ঘটনা টা এমন মনে হচ্ছে তারা আগেই জানতো দরজা আতিয়া বেগম খুলবে আর সাথে সাথে তারা পা ধরে মাফ চাইবে।
বেশ কিছুক্ষন পর আতিয়া বেগম অনেক বুজিয়ে উঠে দাড় করিয়ে ঘরে নিয়ে আসেন।পিহু এক পলক তাকিয়ে নিজের খাবার খাওয়ায় ব্যাস্ত। তার চিনতে অসুবিধা হয়নি তবে কেন জানি ঘৃনা লাগছে ইলিয়াস চৌধুরী ও অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছেন।ইশান ও তার বউ ইলিয়াস চৌধুরীর পায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়লেন মাফ চাইতে শুরু করলো তাদের কৃতকর্মের জন্য।
পিহু বসে বসে নাটক দেখছে।পিহুর মতে এ যে সে নাটক নয় লা এ হলো বাস্তব নাটক।পিহুর ভাবনার মাঝেই দ্বিতীয় বারের মতো কলিং বেল বেজে উঠে। আতিয়া বেগম দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে..
-” এখন আবার কে এলো..?
আতিয়া বেগমের কথা শেষ হতে না হতেই আবার কলিং বেক বেজে উঠে আতিয়া বেগম গিয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পায় অল্পবয়সি একটা ছেলে ফর্মাল পোষাকে পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।আতিয়া বেগম কে দেখে ছেলেটি সম্মানে সাথে বলে উঠে,,
-” আসসালামুআলাইকুম আন্টি..!
-“ওয়ালাইকুমআসসালাম বাবা।তুমি কে ঠিক চিনতে পারলাম না তো…?
সামনে ছেলেটি কিছু বলার আগেই পিছন থেকে ইশান বলে উঠে,,
-“আম্মা ও হলো ফারজুর ভাই মানে আমার শালা ফাইজ।
চলবে…..
-(ছোট পর্ব কিছু মনে নিও না জানেমান রা।কেও বাজে মন্তব্য করবেন না।সামনে অনেক বড় টুইস্ট অপেক্ষা করছে)-
Share On:
TAGS: নিষিদ্ধ চাহনা, সারা চৌধুরী
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১২
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১২
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ১০
-
চার বছরের চুক্তির মা গল্পের লিংক
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২
-
নিষিদ্ধ চাহনা গল্পের লিংক
-
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৫
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ৮
-
নিষিদ্ধ চাহনা পর্ব ৭