নির্লজ্জ_ভালোবাসা
লেখিকাসুমিচোধুরী
পর্ব ৫৩ (❌কপি করা নিষিদ্ধ❌)
সকালবেলার সোনাঝরা রোদ জানলার পর্দা ভেদ করে এসে সরাসরি তুরার চোখে মুখে পড়ল। সেই তপ্ত ছোঁয়ায় তুরার কাঁচা ঘুমটা পাতলা হয়ে আসে। সে ধীরে ধীরে চোখের পাতা মেলে চাইল, কিন্তু পরক্ষণেই থমকে গেল। নিজেকে আবিষ্কার করল রৌদ্রের বলিষ্ঠ দুই বাহুর বাঁধনে। রৌদ্র তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
মুহূর্তেই গতরাতের সব স্মৃতি তুরার মনের আয়নায় ভেসে উঠল। লজ্জায় লাল হয়ে গেল তার ফর্সা গাল দুটো। সে তাড়াতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কম্বলের নিচে গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে পড়ল। তুরার এই হুটোপুটি আর কাঁচুমাচু ভাব দেখে রৌদ্রের ঘুমটা ভেঙে গেল। সে এক চোখ খুলে তুরাকে কম্বলের নিচে ওমন করতে দেখে ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ঝুলাল।রৌদ্র গলাটা একটু নামিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল।
“কিরে বউ, রাতে কি মন ভরেনি? আবারও আদর করতে হবে নাকি? সমস্যা নেই, তুই চাইলে আমি এখনই রাজি!”
রৌদ্রের কথা শুনে তুরা যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে কম্বলের ভেতর থেকেই রৌদ্রকে এক ধাক্কা দিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠল।
“আপনি একটা অসভ্য, নির্লজ্জ পুরুষ! সারা রাত জ্বালিয়ে শরীরটা ব্যথা করে দিয়েছেন, আর এখন বলছেন আমি নাকি আদরের জন্য এমন করছি? দূরে যান বলছি! এখন থেকে আমার ধারের কাছেও আসবেন না।”
রৌদ্র এবার পুরোপুরি উঠে বসে তুরার ওপর ঝুঁকে এল। তার চোখেমুখে সেই দুষ্টুমির আভা। সে আলতো করে কম্বলটা টেনে সরিয়ে দিয়ে বলল।
“শোন তুরা, জোর করে দূরে সরিয়ে দিলেই কি আর থাকা যায়? আর ব্যথার কথা বলছিস? ওটা তো আমার ভালোবাসার প্রমাণ। আর এই ব্যথাটা আবার একটু দেই।”
কথাটা শেষ হতে না হতেই রৌদ্র তুরার গোলাপী ঠোঁট দুটি নিজের দখলে নিয়ে নিল। অতর্কিত এই আক্রমণে তুরা প্রথমে থতমত খেয়ে গেল, পরক্ষণেই শুরু করল বাধা দেওয়া। সে রৌদ্রের চওড়া পিঠে সমান তালে কিল-ঘুষি মারতে লাগল, কিন্তু রৌদ্র যেন আজ পাথরের পাহাড় এক চুলও নড়ল না। বরং সে আরও গভীরভাবে তুরার ভালোবাসায় মেতে উঠল। তুরা এক সময় হাঁপিয়ে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিল। রৌদ্রের মাতাল করা আদরের জোয়ারে সে নিজেও নিজেকে সঁপে দিল এক গভীর অনুভূতির সাগরে।
বেশ কিছুক্ষণ পর, শাওয়ার শেষ করে তোয়ালে জড়িয়ে পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রুমে ঢুকল তুরা। ব্যথায় তার কপালে হালকা ভাঁজ। বিছানায় আয়েশ করে বসে থাকা রৌদ্র তুরার এই দশা দেখে বাঁকা হাসল। দুষ্টুমি ভরা গলায় বলল।
“কিরে বউ, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে বুঝি? আসবি একটু কাছে? আমি না হয় পা টা টিপে দিলাম!”
রৌদ্রের এই রসিকতা শুনে তুরা আর সহ্য করতে পারল না। হাতের কাছে থাকা ভেজা তোয়ালেটা সজোরে রৌদ্রের দিকে ছুড়ে মেরে রেগে আগুন হয়ে বলল।
“নির্লজ্জ পুরুষ কোথাকার! একদিকে কষ্ট দিয়ে শরীরটা শেষ করে দিচ্ছেন, আবার এখন ঢং করে বলছেন টিপে দেবেন? একদম মুখ সামলে কথা বলবেন!”
রৌদ্র হাসিমুখে তোয়ালেটা ধরে নিয়ে নিজের ঘাড়ে জড়িয়ে নিল। তারপর ধীরপায়ে তুরার একদম কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তার চোখে এক অদ্ভুত নেশা। সে তুরার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল।
“শোন তুরা, এমন মিষ্টি কষ্ট আমি তোকে সারাজীবন দিতে চাই। আর নির্লজ্জ বললি না? আমার ভালোবাসাটাই এমন নির্লজ্জ ভালোবাসা। সেখানে সরম-লজ্জা তো দূরের কথা, লজ্জা নিজেই আমাকে দেখলে সালাম ঠুকে পালিয়ে যাবে। এই আদর তোকে এখন থেকে সবসময় সহ্য করার অভ্যাস করতে হবে।”
তুরার গালের লাল আভা দেখে রৌদ্র আরও সাহসী হয়ে উঠল। সে আরেকটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল।
“চল না বউ, বাথরুমে আরও একটা রাউন্ড খেলি? যত বেশি খেলা হবে, তত বেশি মজা পাবি।”
কথাটা শুনেই তুরার মাথায় রক্ত চড়ে গেল। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সে আয়নার সামনে থেকে রৌদ্রের প্যান্টের বেল্টটা খপ করে তুলে নিল। বেল্ট উঁচিয়ে যেই না রৌদ্রের দিকে তেড়ে এল, অমনি রৌদ্র এক লাফে দরজার দিকে ছুট দিল। ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ার আগে হাসতে হাসতে চিৎকার করে বলল।
“বাপ রে! খেপেছে রে, রৌদ্রের বাঘিনী বউ আজ পুরোপুরি খেপেছে! নিজের জীবন বাঁচাতে চাইলে এখন পালানোই বুদ্ধিমানের কাজ। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা!”
নিজের শরীরের ওপর অস্বাভাবিক ভার অনুভব করে তিথির কাঁচা ঘুমটা এক নিমেষে টুটে গেল। চোখ খুলেই সে যা দেখল, তাতে তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার জোগাড়! দেখল, বিশালদেহী আয়ান আস্ত একটা পাহাড়ের মতো তার বুকের ওপর চড়ে ঘুমিয়ে আছে। তিথির দম যেন আটকে আসছে, নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সে সর্বশক্তি দিয়ে আয়ানকে ধাক্কা দিতে দিতে চিৎকার করে উঠল।
“এই আয়ানের বাচ্চা! মসের একটা বস্তা, নামো বলছি আমার ওপর থেকে! তাড়াতাড়ি নামো!”
আয়ান ঘুমের ঘোরে কখন যে তিথির ওপর রাজত্ব গেড়ে বসেছে, সে নিজেও জানে না। তিথির ধাক্কাধাক্কিতে সে নামা তো দূরের কথা, উল্টো শরীরের পুরো ভরটা ছেড়ে দিয়ে আরও আয়েশ করে শুলো। তারপর ঘুম জড়ানো গলায় বিড়বিড় করে বলল।
“উমম ডিস্টার্ব করিস না তো তিথি, ঘুমাতে দে। আজ বিছানাটা হঠাৎ এত নরম তুলতুলে লাগছে কেন বলতো? মনে হচ্ছে তুলোর মেঘের ওপর শুয়ে আছি।”
আয়ানের কথা শুনে তিথির পিত্তি জ্বলে গেল। সে দাঁতে দাঁত চেপে কোনোমতে ফিসফিস করে বলল।
“তুমি কোনো তুলোর মেঘে নও, আস্ত একটা মানুষের ওপর শুয়ে আছো! তুমি কি সরবে, নাকি লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দেব?”
তিথির এই রণমূর্তি দেখে আয়ান এবার একটু নড়েচড়ে বসল। মাথা তুলে আলসেমিভরা চোখে তাকিয়ে দেখল, সে সত্যিই তিথির বুকের ওপর বুক ঠেকিয়ে শুয়ে আছে। আর তিথি ঠিক তার নিচেই রাগে ফুঁসছে। আয়ান মোটেও অপ্রস্তুত হলো না,বরং তিথির লাল হয়ে যাওয়া রাগী মুখটার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল।
“আরে বাহ! সকাল সকাল আমার রুমে দেখি বিন্দু মরিচ ফুটল! এত ঝাল কোত্থেকে এল রে?”
তিথি তখন রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আয়ানের দানবীয় শরীরের নিচে পিষ্ট হতে হতে সে আবারও ধাক্কা দিয়ে বলল।
“আয়ান ভাইয়া, নামো বলছি! তোমার এই পাহাড়ের মতো শরীরটা নিয়ে আমার এইটুকু ছোট শরীরটাকে একদম পিষে ফেলছ ! একদম জান বেরিয়ে যাচ্ছে আমার!”
তিথির কথা শুনে আয়ান তো সরার নামই নিল না, বরং তার শরীরের ওপর আরও দ্বিগুণ ভর ছেড়ে দিয়ে আলতো করে হাসল। সেই হাসিতে যেন খুনের নেশা মিশে আছে। সে তিথির কানের খুব কাছে মুখ নিয়ে দুষ্টুমি ভরা গলায় বলল।
“না রে তিথি, একদমই উঠব না। আমার এই নতুন বিছানাটা বড্ড বেশি আরামদায়ক। আগের খটখটে বিছানার সাথে আমার চিরতরের ব্রেকআপ! এখন থেকে এই নরম বিছানার সাথেই আমার নতুন রিলেশন। রাতে তোকে মন ভরে আদর করার পর যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ব, তখন তো আমার এমন একটা তুলতুলে গদিই চাই। তাই ঠিক করেছি, আজ থেকে এটাই আমার পার্মানেন্ট বিছানা!”
আয়ানের মুখে এমন নির্লজ্জ আর বেহায়া আবদার শুনে তিথির ধৈর্যের বাঁধ এক নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। রাগে তার শরীর আগুনের গোলার মতো জ্বলতে শুরু করল। সে বিছানায় শুয়ে থেকেই দুই হাত দিয়ে নিজের কান চেপে ধরে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠল।
“আয়আআআআআআআআআনের বা’চ্চা! তুই এখনই চুপ করবি, নাহলে কসম করে বলছি আজ তোর মাথা ফাটিয়ে আমি ঘিলু বের করে নেব!”
তিথির সেই রাক্ষুসী চিৎকারে আয়ানের কানের পর্দা বুঝি ছিঁড়েই যেত! সে এক ঝটকায় তিথির ওপর থেকে নেমে ছিটকে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। নিজের কান দুটো চেপে ধরে সেও সমান তালে পালটা চিৎকার করে উঠল।
“আরে শা’লীইইইইইই! আস্তে চিল্লাইতে পারিস না? কানের পর্দা ফাটানোর কোনো কন্ট্রাক্ট নিয়েছিস নাকি রে? প্রতিদিন সকাল সকাল এমন রাক্ষসীর মতো গর্জন কেন পারিস? তুই তো আসলে একটা শা’লী কুত্তির বা’চ্চা, ডাইনির বা’চ্চা, রাক্ষসীর বা’চ্চা, কুড়নি বুড়ির বা’চ্চা, পেত্নীর বা’চ্চা আর শাঁখচুন্নির বা’চ্চা!”
তিথি বিছানার ওপর ধপ করে উঠে বসল। রাগে তার বুকটা হাপরের মতো ওঠানামা করছে, চোখ দুটো দিয়ে যেন ঠিকরে আগুন বেরোচ্ছে। আয়ানের গালি শুনে সেও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। সে চোখ পাকিয়ে হাত নেড়ে পাল্টা তোপ দাগতে শুরু করল।
“কি! আমি ওইসবের বা’চ্চা? তাহলে তুমিও শুনো রাখো আয়ান। তুমি একটা কুত্তার বা’চ্চা, হারামির বা’চ্চা, শুয়োরের বা’চ্চা, কাঠবিড়ালির বা’চ্চা, ইঁদুরের বা’চ্চা, বিড়ালের বা’চ্চা, তেলাপোকার বা’চ্চা, শয়তানের বা’চ্চা, হাঁসের বা’চ্চা, বেয়াড়া মূর্খের বা’চ্চা, গরুর বা’চ্চা, ছাগলের বা’চ্চা, বাঘের বা’চ্চা, খরগোশের বা’চ্চা আর আস্ত একটা খবিশের বা’চ্চা।”
তিথি এক দমে এতগুলো গালি দিয়েও যেন শান্ত হতে পারছিল না। সে মুখিয়ে ছিল আরও কিছু বলার জন্য, কিন্তু তার আগেই আয়ান এক লাফে বিছানায় হাত দিয়ে তিথির একদম গায়ের ওপর ঝুঁকে পড়ল। তার চোখের সেই দুষ্টু চাউনি দেখে তিথি কিছুটা থতমত খেয়ে গেল।আয়ান বাঁকা হেসে ফিসফিস করে বলল।
“আরে থাম থাম! একটু দম নে বউ। এইভাবে এক নিঃশ্বাসে চেঁচালে তো শরীরের সব ক্যালসিয়াম শেষ হয়ে যাবে। তখন রাতে আমার আদর যখন সহ্য করতে পারবি না, ক্যালসিয়ামের অভাবে যখন হাত-পা ছেড়ে দিবি, তখন তো শুধু কান্নাই করবি। আর তোর ওই কাতর তৃপ্তি দেখে আমি যদি নিজের শক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি, তখন সামলাবে কে শুনি?”
আয়ানের মুখে এমন নির্লজ্জ আর রসালো কথা শুনে তিথির মাথার রগ যেন এইবার ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড় হলো। সে রাগে দিশেহারা হয়ে পাশে থাকা বালিশটা খপ করে তুলে নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে আয়ানের দিকে ছুড়ে মারল। কিন্তু আয়ান যেন আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল! সে দারুণ ক্ষিপ্রতায় বালিশটা ক্যাচ ধরে ফেলল।
এরপর বালিশটা আবার তিথির দিকেই আলতো করে ছুড়ে দিয়ে, তার দিকে তাকিয়ে একটা রসালো ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়ে দিল। তারপর টেবিল থেকে তোয়ালেটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে নিয়ে দুলতে দুলতে আর গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দিল।
“আউশ কইরা বাপে আমায় করাইছিল বিয়া
বউ আনতে গিয়াছিলাম একশো গাড়ি নিয়া!
এখন দিনে রাতে দেখায় শুধু আসল চেহারা
বউ তো নয় যেন সিসি ক্যামেরা!”
আয়ানের গানের কলি শুনে তিথি বিছানায় বসে রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল। এই লোকটার নির্লজ্জতার কোনো শেষ নেই!
ঠান্ডা পানির কয়েকটা কণা মুখে পড়তেই শিহাবের গভীর ঘুমটা পাতলা হয়ে এলো। সে ধীরে ধীরে চোখের পাতা মেলতেই দেখল, তার সামনে যেন এক স্বর্গীয় পরী দাঁড়িয়ে! জানলার ফাঁক দিয়ে আসা সকালের এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে আরশির গায়ে। সে ভেজা চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে ঝাড়ছে, আর সেই চুলের ছিটেফোঁটা পানি এসে লাগছে শিহাবের মুখে।আরশিকে এত কাকভোরে গোসল করতে দেখে শিহাব বেশ অবাক হলো। সে বিছানায় উঠে বসে ঘড়ঘড়ে গলায় জিজ্ঞেস করল,
“এত সকালে গোসল করলে কেন?”
আরশি আয়নার প্রতিবিম্বে শিহাবের দিকে তাকিয়ে এক চিলতে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল।
“উঠেছেন? আসলে শরীরটা কেমন জানি ম্যাজম্যাজ করছিল, তাই ভাবলাম গোসলটাই সেরে নিই।”
শিহাব আর কথা বাড়াল না। বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালেও তার অবাধ্য চোখ দুটো আড়চোখে একবার আরশিকে দেখে নিল। ভেজা চুলের পানি চুইয়ে আরশির কাঁধ আর পিঠের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। দৃশ্যটা যেন এক জীবন্ত জলরঙের ছবি! শিহাব অজান্তেই কয়েক সেকেন্ড পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইল। আরশি হঠাৎ শিহাবের এই অপলক চাহনি খেয়াল করতেই সশব্দে একটু গলা খাঁকারি দিল। শিহাবের ঘোর মুহূর্তেই কেটে গেল, সে অপ্রস্তুত হয়ে তড়িঘড়ি করে এক প্রকার দৌড়েই ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। পেছন থেকে আরশির খিলখিল হাসির শব্দ তার কানে আছড়ে পড়ল।
ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে শিহাব যেই না আয়নার সামনে দাঁড়াতে যাবে, অমনি তার নজর পড়ল বিছানার দিকে। আরশি গভীর মনোযোগ দিয়ে বিছানা গোছাচ্ছে। নিচু হয়ে চাদর টানতে গিয়ে তার গলার ওড়নাটা একপাশে ঝুলে পড়েছে, আর জামার কিছুটা নিচু অংশ দিয়ে তার দুধসাদা বুকের ভাঁজ উঁকি দিচ্ছে।
শিহাব যেন নিজের চোখ দুটোকে শাসন করতে পারছে না। সে কয়েকবার জোরে জোরে ঢোক গিলে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে সে রাগে আর বিরুক্তিতে বিড়বিড় করে বলতে লাগল।
“মেয়েটার সমস্যা কী? কখনো ভেজা চুল দেখিয়ে মানুষের মনযোগ টেনে নিচ্ছে, আবার কখনো এভাবে জাস্ট বিরক্তকর! ও কি ইচ্ছে করেই এমন অসভ্যতা করছে?”
শিহাব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কিছুটা সামলে নিল। তারপর গলার স্বর যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে, কিন্তু কিছুটা বিরক্তি মিশিয়ে আরশির উদ্দেশ্যে বলল।
“বলছিলাম কি আরশি, তোমার নিজের দিকে একটু খেয়াল রেখে কাজ করা উচিত। এই অবস্থায় চোখের সামনে কাজ করাটা আমার কাছে জাস্ট বিরক্তিকর লাগে।”
শিহাবের কথা শুনে আরশির হাতের কাজ হঠাৎ থেমে গেল। সে কয়েক মুহূর্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে শিহাবের চওড়া পিঠের দিকে তাকিয়ে রইল। কথার মানেটা ঠিক বুঝতে না পেরে যখন নিজের দিকে তাকাল, তখন লজ্জায় তার মাথা কাটা যাওয়ার জোগাড়! ওড়নাটা একপাশে ঝুলে পড়ে আছে আর জামার গলাটাও অনেকটা নেমে গেছে। তড়িঘড়ি করে ওড়নাটা টেনে গলার কাছে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে আরশি আমতা আমতা করে বলল।
“আ আসলে খেয়াল ছিল না। একদম বুঝতে পারিনি।”
শিহাব আর কোনো পাল্টা জবাব দিল না। গুমোট এক নিস্তব্ধতার মাঝে সে দ্রুত তৈরি হয়ে নিল।
নিচে ডাইনিং রুমে একে একে সবাই এসে জড়ো হতে শুরু করেছে। তুরা, রৌদ্র, তিথি আর আয়ান সবাই নেমে এলো। তুরা যখন ধীরপায়ে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে আসছিল, আরফা চট করে তার পাশে গিয়ে কানে কানে ফিসফিস করে বলল।
“বলছি কি তুরা, রৌদ্র ভাই কি কাল রাতে তোকে একটু বেশিই আদর দিয়ে ফেলেছে নাকি?আর সেই আদরের চিহ্ন কি আমাদেরও দেখাতে চলে এসেছিস! ওরে ছেরি, আমি এখানে সিঙ্গেল মানুষ, আমার অন্তরে আর জ্বালা দিস না। তোর কাঁধের কাছে জামাটা একটু সরে গেছে,পরিষ্কার কামড়ের দাগ দেখা যাচ্ছে!”
আরফার কথা শুনে তুরার যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল! সে বড় বড় চোখ করে চট করে নিজের কাঁধের দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যিই তো, রৌদ্রের দেওয়া ভালোবাসার গভীর চিহ্নটা জামার পাশ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। লজ্জায় তুরার মুখটা টকটকে লাল আপেলের মতো হয়ে গেল। সে দ্রুত হাত দিয়ে জামা টেনে ওড়না দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে আরফার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। আরফা আড়ালে মুখ টিপে হাসতে লাগল।
সবাই মিলে ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া শুরু করার কিছুক্ষণ পর পরিবেশটা একটু গম্ভীর হয়ে উঠল। শিহাব গ্লাসে এক চুমুক পানি খেয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল।
“আসলে আপনাদের একটা কথা বলতে চাচ্ছি। আমি আজই চলে যাব। অফিসে খুব জরুরি একটা মিটিং আছে, যেটা কোনোভাবেই ম্যানেজারের ওপর ভরসা করে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
শিহাবের এই হঠাৎ চলে যাওয়ার ঘোষণায় টেবিলের সবার মাঝেই একটা নিস্তব্ধতা নেমে এল। আরশি এক মুহূর্তের জন্য শিহাবের দিকে তাকাল, তার চোখে যেন এক চাপা বিষণ্ণতা খেলা করে গেল।
আনোয়ার খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিহাবের দিকে তাকালেন। বড় ছেলের মতো শিহাবকে তিনি বেশ পছন্দ করেন, তাই মন থেকে চাইছিলেন সে আরও কটা দিন থাকুক। তিনি খানিকটা অনুরোধের সুরে বললেন,
“আর কিছুদিন কি থাকা যায় না বাবা? কোনোভাবে কি অফিসের কাজটা ম্যানেজ করা যায় না?”
শিহাব বিনয়ের সাথে কিন্তু দৃঢ়ভাবে জবাব দিল।
“না আঙ্কেল, এই কাজটা এখন অন্য কাউকে দিয়ে হবে না। ম্যানেজারের ওপর ভরসা করে ফেলে রাখলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই সময়ে আমার সরাসরি থাকাটা খুব জরুরি।”
আনোয়ার খান ধীরস্থিরভাবে মাথা নাড়লেন। তিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী, তাই খুব ভালো করেই জানেন ব্যবসার ক্ষেত্রে সময়ের গুরুত্ব আর ঝুঁকি কতটা মারাত্মক হতে পারে। তাই তিনি আর জোরাজুরি না করে মৌন সম্মতি দিলেন।পুরো ডাইনিং টেবিল জুড়ে এক গুমোট নিস্তব্ধতা নেমে এল।
রানিং…!
Share On:
TAGS: নির্লজ্জ ভালোবাসা, প্রিঁয়ঁসেঁনীঁ
CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৩
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৩২
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৭
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৭
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ১৮
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৬
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৮
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ২০
-
নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৩১