Golpo romantic golpo নির্লজ্জ ভালোবাসা

নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৫০


নির্লজ্জ_ভালোবাসা

লেখিকাসুমিচোধুরী

পর্ব ৫০(❌কপি করা নিষিদ্ধ❌)

লাল টকটকা আর সাদা গোলাপের সুবাসে পুরো ঘরটা ম ম করছে। বিছানাটা রাজকীয়ভাবে সাজানো খাটে বসে আছে তুরা। কিন্তু আজ বাস্তবে সেখানে বসে তার হাত-পা যেন বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আসছে। এই তো কিছুদিন আগেও সে নিজের ঘরে নিজের মতো ছিল, আর আজ সে আব্রাহাম খান রৌদ্রের ঘরে যে মানুষটা এখন তার স্বামী।

কিছুক্ষণ আগেই রৌশনি খান এসে তাকে গোলাপি রঙের পাতলা শাড়ি পরিয়ে দিয়ে গেছেন। বড়রা সাধারণত এই সময়ে অনেক উপদেশ দেন, রৌশনি খানও বাদ যাননি। তিনি চুপিচুপি অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন, যা মনে পড়তেই তুরার গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।

তুরার বুকের ভেতরটা অনবরত ধুকপুক করছে। এই অস্থিরতা কেন, সে নিজেই জানে না। রৌদ্রকে সে চেনে, জানে, ভালোবাসে তবুও আজ এই বন্ধ দরজা আর ফুলের বিছানা তাকে ভীষণ অজানা এক ভয়ের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একেই কি তবে বাসর রাতের ভয় বলে? সে নিজের আঙুল মটকালো, বারবার শাড়ির আঁচলটা মুঠো করে ধরল।

ঠিক সেই মুহূর্তে দরজার লকে চাবি ঘোরানোর শব্দ হলো। তুরার হৃৎপিণ্ডটা যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। সে জানে, রৌদ্র আসছে। তার সেই গম্ভীর পায়ের শব্দ ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। তুরা ঝট করে ঘোমটাটা একটু টেনে দিয়ে মাথা নিচু করে মূর্তির মতো বসে রইল।

রৌদ্র ঘরের স্নিগ্ধ আলোয় গোলাপের মাঝখানে বসে থাকা তুরাকে দেখে সে এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল। আজ যেন তার নিজের ঘরে এক মায়াবী পরী তার বিছানায় বসে আছে।রৌদ্র দরজাটা আলতো করে আটকে দিয়ে ধীরপায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে এল। ঘরের মিষ্টি আলো আর গোলাপের সুবাসের মাঝে সে দেখল তুরা আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে। রৌদ্র ধীরে ধীরে এসে খাটে বসল।রৌদ্র খাটে বসার সাথে সাথেই তুরা যেন ইলেকট্রিক শক খেল। সে চমকে উঠে তাড়াহুড়ো করে খাট থেকে নেমে দাঁড়াল এবং ব্যাকুল হয়ে বলল।

“রৌদ্র ভাইয়া দাঁড়ান!”

রৌদ্র হঠাত তুরার এমন আচরণে কিছুটা হকচকিয়ে গেল। সে বুঝতে পারল না তুরা কেন তাকে থামাল। সে ভ্রু কুঁচকে ধীরে ধীরে খাট থেকে উঠে দাঁড়াল। তুরা আর দেরি করল না, ঘোমটার আড়ালে মাথা নিচু করে সাথে সাথে নিচু হয়ে রৌদ্রের পা ছুঁয়ে সালাম করল।রৌদ্রের ঠোঁটের কোণে মুহূর্তেই একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল। সে হাত বাড়িয়ে তুরার কাঁধ ধরে আলতো করে তাকে টেনে তুলল এবং মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল।

“ওরে আমার পাগলি বউ! তোকে এসব কে শিখিয়েছে? এই যুগে কি কেউ এসব করে?”

তুরা দুই হাতে শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে মুঠোয় ধরে কচলাতে কচলাতে নিচু স্বরে বলল।

“চাচি শিখিয়ে দিয়েছে। বড়দের কথা অমান্য করতে নেই, তাই আমিও আর অমত করলাম না।”

রৌদ্র আর নিজেকে সামলাতে পারল না। সে খুব যত্ন করে তুরার মাথার ঘোমটাটা ধীরে ধীরে সরিয়ে দিল। ঘোমটা সরতেই তুরা লজ্জায় চোখ দুটো শক্ত করে বন্ধ করে ফেলল। রৌদ্র তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে যেন এক মুহূর্তের জন্য পাথর হয়ে গেল। সারা দুনিয়া যেন তার চারপাশ থেকে মুছে গেছে।টানা টানা কাজল কালো চোখ, কপালে ছোট্ট টিপ, আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক সব মিলিয়ে এক অপার্থিব রূপ। পরনে গোলাপি শাড়ি আর দুই হাত ভর্তি মেহেদির গাঢ় রঙের মাঝে কাঁচের চুড়িগুলো চিকচিক করছে। রৌদ্রের মনে হচ্ছে,সতি আসমান থেকে কোনো মায়াবী গোলাপি পরী আজ পথ ভুলে তার ঘরে এসে হাজির হয়েছে।

রৌদ্র তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত অথচ গভীর স্বরে বলল।

“জানিস তুরা, জীবনে হয়তো অজান্তে অনেক পাপ বা ভুল করেছি, কিন্তু মনে হয় কোনো একটা সময়ে এমন কোনো সওয়াবের কাজ করেছিলাম, যার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ আজ আমাকে তোর মতো এমন সুন্দরী স্ত্রী আর জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্ধাঙ্গিনী উপহার দিলেন।”

রৌদ্রের এই গভীর কথাগুলো শুনে তুরা লজ্জায় যেন মাটির সাথে মিশে যেতে চাইল। সে এত জোরে চোখ বন্ধ করে ফেলল যে তার কপালে হালকা ভাঁজ পড়ে গেল। তার ফর্সা গাল দুটো মুহূর্তের মধ্যে লজ্জায় টকটকে লাল টমেটোর মতো হয়ে উঠল। রৌদ্র মুগ্ধ হয়ে তুরার এই লজ্জা মাখা মুখটা দেখছিল।রৌদ্র মুচকি হেসে নিজের পকেট থেকে একটা সুন্দর ভেলভেটের বাক্স বের করল। এরপর একদম রাজকীয় ভঙ্গিতে তুরার সামনে এক হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ল। বাক্সটা খুলে ধরতেই ভেতরে থাকা ডায়মন্ডের নেকলেসটি হীরের ছোট ছোট টুকরোর কারুকাজে নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে উঠল। রৌদ্র তুরার চোখের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত আবেগ দিয়ে বলল।

“আজ আমি পূর্ণ। যাকে এই জীবনে সবথেকে বেশি চেয়েছিলাম, আজ তাকেই নিজের পাশে পেয়েছি। আমার আর নতুন করে চাওয়ার কিচ্ছু নেই তুরা। আমি আমার জীবনের সবথেকে মূল্যবান সম্পদ তোকে আজ নিজের করে পেয়ে গিয়েছি। এখন এই অমূল্য সম্পদটাকেই বুকের মধ্যে আগলে রেখে আমি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। তুই ছাড়া আমার আর কিচ্ছু চাই না তুরা। এই জীবনটা আমি শুধু তোর সাথেই পার করতে চাই। আজ আমার তরফ থেকে এই ছোট গিফটটা তোর জন্য। তুই কি আমার এই ছোট গিফটটা গ্রহণ করবি?”

রৌদ্রের ঘরের বাতাস গোলাপের সুবাস আর এক দামী পারফিউমের ঘ্রাণে ভারী হয়ে আছে। তুরা ধীরে ধীরে চোখ মেলল, দেখল রাজপুত্রের মতো দেখতে লোকটা ওর পায়ের কাছে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে। রৌদ্রের হাতের সেই ঝলমলে নেকলেসটির দিকে তাকিয়ে তুরার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে মায়াবী হাসি ফুটে উঠল,তুরা ধরা গলায় বলল।

“আপনার কাছে হয়তো এটা নিছক একটা উপহার, কিন্তু আমার কাছে এটা পৃথিবীর সব রাজত্বের চেয়েও দামী। কারণ এতে হীরের চেয়েও বেশি আপনার ভালোবাসা মিশে আছে। আর স্বামীর দেওয়া এক টুকরো সুতোও স্ত্রীর কাছে অমূল্য অলঙ্কার। এখন আপনি কি নিজ হাতে আপনার এই অধিকারটা আমাকে পরিয়ে দেবেন?”

তুরার মুখে এমন নিবিড় কথা শুনে রৌদ্রের বুকের ভেতরটা এক অদ্ভুত সুখে মোচড় দিয়ে উঠল। সে যেন এই মেয়েটার মায়ায় বারবার হার মানতে রাজি। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল এবং পরম মমতায় তুরাকে আলতো করে দেয়াল আয়নার দিকে ঘুরিয়ে দিল। রৌদ্রের হাতের আঙুল যখন নেকলেসটি পরানোর জন্য তুরার ঘাড়ের কাছে স্পর্শ করল, তুরা এক তীব্র শিহরণে কেঁপে উঠল মুহূর্তেই তার শরীরটা ধনুকের মতো নুইয়ে এল। রৌদ্র অত্যন্ত সাবধানে সেই হীরকখণ্ডটি তুরার মসৃণ গলায় জড়িয়ে দিল।

নেকলেসটি পরিয়ে দিয়ে রৌদ্র পেছন থেকে তুরাকে জড়িয়ে ধরল। আয়নার সামনে দুজনকে এখন এক জোড়া অপার্থিব জুটির মতো লাগছে। রৌদ্র ওর মুখটা তুরার কানের লতির খুব কাছে নিয়ে এসে গরম নিশ্বাস ফেলে ফিসফিসিয়ে বলল।

“এইবার চোখ খুলুন আমার হৃদস্পন্দন, দেখুন তো মহারানীকে কেমন লাগছে?”

তুরা ধীরলয়ে পলক তুলল। আয়নার প্রতিচ্ছবিতে দেখল, এক বলিষ্ঠ পুরুষ তার দুহাত দিয়ে এক নাভিনীকে আগলে ধরে আছে। তুরা এবার নিজের হাতটা রৌদ্রের হাতের ওপর রেখে এক গভীর আকুতি নিয়ে বলল।

“রৌদ্র ভাইয়া, আজ এই পবিত্র রাতে একটা কথা দিন পৃথিবী উল্টে গেলেও কখনো আমাকে অবিশ্বাস করবেন না। যতোই মেঘ জমুক আমাদের আকাশে, আপনি সবসময় আমার ওপর মনে-প্রাণে বিশ্বাস রাখবেন। আর আমাদের মাঝে যতোই মান-অভিমান বা ঝগড়া হোক না কেন, মাফ চাওয়ার অধিকারটা সবসময় আপনিই আগে কেড়ে নেবেন। ভুল যারই হোক, আপনিই আগে এসে আমার হাতটা ধরবেন। কথা দিন, কখনো আমাদের মাঝে কোনো দেয়াল উঠতে দেবেন না।”

রৌদ্র তুরার হাতের ওপর নিজের আঙুলগুলো শক্ত করে গেঁথে নিল। সে আয়নায় তুরার চোখের দিকে তাকিয়ে এক দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে বলল।

“কথা দিলাম তুরা, আমি তোকে আমার নিজের নিশ্বাসের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করব। আর ঝগড়া হলে? তোকে ‘সরি’ বলার সুযোগই দেব না, তার আগেই আদর দিয়ে তোর সমস্ত অভিমান ধুয়ে দেব। তুই আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন তুরা, তোকে ছাড়া আমি এক মুহূর্তও বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারব না। তুই আমার হাসির উৎস, তুই না থাকলে আমি অন্ধকার এক জ্যান্ত লাশ হয়ে যাব। তোকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি রে আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ!”

বলেই রৌদ্র আরও শক্ত করে তুরাকে নিজের বুকের সাথে পিষে ফেলল এবং তুরার ঘাড়ের খাঁজে এক গভীর, তপ্ত আর তৃষ্ণার্ত চুমু এঁকে দিল। তুরা আবেশে চোখ বুজে রৌদ্রের সেই সোহাগ মাখা উষ্ণতা নিজের প্রতিটি রক্তকণিকায় অনুভব করতে লাগল। সেই মুহূর্তে বাইরের পৃথিবীটা যেন থেমে গেল, শুধু রয়ে গিয়েছিল তাদের দুজনের হৃদপিণ্ডের দ্রুত স্পন্দন।


ব্যালকনির রেলিংয়ে দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে শিহাব। রাতের আকাশের ওই নিঃঝুম অন্ধকারের দিকে সে এমনভাবে তাকিয়ে আছে, যেন আকাশের নক্ষত্রদের কাছে নিজের বুকের জমানো অব্যক্ত যন্ত্রণার কৈফিয়ত চাইছে। তার অবয়বে এক ধরনের শান্ত কিন্তু গভীর বিষণ্ণতা।

আরশি নিচ থেকে মেহমানদের বিদায় জানিয়ে ধীরপায়ে রুমে ঢুকল। ঘরটা ফাঁকা দেখে সে সরাসরি ব্যালকনির দিকে পা বাড়াল। শিহাবের ওই নিঃসঙ্গ ভঙ্গি দেখেই আরশি বুঝতে পারল লোকটার মনের আকাশে মেঘ জমেছে। কিন্তু আরশি তো আরশিই! সে ঠিক করল শিহাবকে এই গম্ভীরতার খোলস থেকে টেনে বের করবেই।

সে চট করে ড্রয়ার থেকে সেই কাঙ্ক্ষিত স্যাভলন আর মলমের ডিব্বাটা হাতে নিল। এরপর বিড়ালের মতো নিঃশব্দে ব্যালকনিতে গিয়ে শিহাবের ঠিক পেছনে দাঁড়াল। তারপর বেশ আয়েশ করে একটা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল।

“উহুম উহুম! বলছিলাম কি শিহাব ভাইয়া, সকালে তো আর এই অমৃত মলমটা ছোঁয়াতে দিলেন না। মা একদম কড়া করে বলে দিয়েছেন শোয়ার আগে যেন আপনার ওই ‘বিপজ্জনক’ ক্ষতগুলোতে মলমটা লেপে দিই। তাই ভাবলাম, এখন তো আর পালানোর পথ নেই, ডলে ডলে মলমটা লাগিয়েই দিই!”

শিহাবের গম্ভীর মুখটা মুহূর্তের মধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আরশির হাতে ওই মলমের ডিব্বা দেখা মানেই তো নরক যন্ত্রণা! সে এক ঝটকায় ঘাড় ঘুরিয়ে আরশির দিকে তাকাল। আরশি যখন ডিব্বাটা খুলে এক আঙুল মলম নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে, শিহাব দুই পা পিছিয়ে গিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠল।

“খবরদার আরশি! একদম আমার কাছে আসবে না বলে দিচ্ছি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমায় এই তিন তলা ব্যালকনি থেকে সটান নিচে ফেলে দেব।”

আরশি দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। সে মুখে একটা শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে এল। তার চোখেমুখে তখন রাজ্যের দুষ্টুমি। সে ফিসফিস করে বলল।

“ফেলে দিলে তো ঝামেলাই মিটে গেল ভাইয়া! কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগে তো মলমটা লাগিয়েই মরব। আপনি কি স্বেচ্ছায় দেবেন, নাকি জোর করে কুস্তি লড়ে লাগাতে হবে?”

শিহাব নিজের ব্যক্তিত্ব বাঁচাবে নাকি শরীর বাঁচাবে তা ভেবে দিশেহারা হয়ে ব্যালকনির কোণায় সেঁটে গেল।আরশি এক ঝটকায় শিহাবকে ধরতে গেল, শিহাব যেন অলিম্পিক দৌড়বিদের মতো পাশ কাটিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে পড়ল। আরশিও নাছোড়বান্দা, সে মলমের ডিব্বা হাতে নিয়ে “দাঁড়ান ভাইয়া, কোথায় পালান!” বলে তার পিছু নিল।

শিহাব পুরো ঘরের সোফা, চেয়ার আর টেবিল এলোমেলো করে আরশির থেকে বাঁচার জন্য রীতিমতো কসরত শুরু করল। সে একবার খাটের এপাশ দিয়ে লাফ দিচ্ছে তো অন্যপাশ দিয়ে দৌড়াচ্ছে। আরশির ওই দুষ্টুমিভরা চাউনি আর হাতের মলম দেখে শিহাবের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেল। সে হাফাতে হাফাতে একটা বালিশ ঢাল হিসেবে সামনে ধরে আর্তনাদ করে বলল।

“আরশি, এখনো সময় আছে বলছি ওই আগুনের গোলা মলম আর বিষাক্ত স্যাভলনটা সরাও! আল্লাহর দোহাই লাগে আমার ধারেকাছে আসবে না। দরকার হলে আমি এখনই আকাশ সমান লম্বা মই বেয়ে ওপরে উঠে যেতে রাজি আছি, সারা জীবন ওখানেই কাটাব তবুও এই নরকের মলম গায়ে লাগাতে রাজি নই!”

আরশি খাটের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে মলমের ডিব্বাটা উঁচিয়ে ধরল। সে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলল।

“মই দিয়ে আকাশে উঠলেও লাভ নেই ভাইয়া! আমি না হয় রকেট নিয়ে গিয়ে আপনার পিছে পিছে মলম লাগাব। আপনি কি জানেন না, আরশির হাত থেকে স্বয়ং যমরাজও বাঁচতে পারে না, আর আপনি তো সাধারণ এক শিহাব ভাইয়া!”

শিহাব এবার অসহায় হয়ে আলমারির কোণায় সেঁটে গেল। সে দেখল আরশি যে হারে তেড়ে আসছে, আজ তার কপালে অশেষ যন্ত্রণা আছে। সে করুণ সুরে বলল।

“মা কি তোমাকে আমার সেবা করতে পাঠিয়েছে নাকি, আমাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার কন্ট্রাক্ট দিয়েছে ? তুৃৃমি কি মানুষ নাকি মলম দানবী?”

আরশি তখন মলম হাতে একদম শিহাবের নাকের ডগায় চলে এসেছে। সে চোখ টিপে বলল।

“মানুষ না ছাই! আমি হলাম আপনার ব্যক্তিগত নার্স। এখন লক্ষ্মী ছেলের মতো হাতটা বের করুন তো, নাকি কামড় দিয়ে ধরে লাগাতে হবে?”

মুহুর্তে আরশি এক ঝটকায় শিহাবকে ধরে ফেলল। শিহাব কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরশি নিজের গলায় থাকা ওড়নাটা টেনে নিল এবং অকল্পনীয় ক্ষিপ্রতায় শিহাবের দুই হাত পিছন মোড়া করে শক্ত করে বেঁধে দিল। শিহাব বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে ব্যাঙের মতো পা দাপাতে দাপাতে আর করুন সুরে চিৎকার করতে করতে বলতে লাগল।

“আল্লাহর দোহাই লাগে আরশি, এই বিষাক্ত মলম আমার গায়ে লাগাইস না! তোরে হাতে-পায়ে ধরি, নাহলে কিন্তু আরশির বাচ্চা তোরে আমি জ্যান্ত কবর দিবো! তোরে তোরে আমি কোনোদিন বাচ্চার মুখ দেখতে দিব না, তোরে মা হওয়ার সুযোগই দিব না! আমি বাসর ঘরে স্ট্রাইক করবো, তোরে প্রেগন্যান্টই করবো না! আমার হাত খুল বলছি, নইলে কিন্তু খবর আছে।”

আরশি শিহাবের কথা শুনে লজ্জায় লাল হবে নাকি হাসবে, তা বুঝতে পারছে না। এই লোকটা যে ওষুধ আর ড্রেসিংয়ের নাম শুনলে এতটা ভীতু হয়ে যায়, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আরশি। সে টিপটিপ করে হাসতে হাসতে খুব সাবধানে শিহাবের হাতে থাকা পুরনো ব্যান্ডেজটা ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করল এবং বাঁকা গলায় বলল।

“আমি যদি মা না হই শিহাব ভাইয়া, আপনিও কিন্তু কোনোদিন বাবা হবেন না এটা মাথায় রাখবেন। আপনার চুল পেকে যাবে, দাঁত পড়ে বুড়া হয়ে যাবেন, অথচ কেউ আপনাকে ‘বাবা’ বলে ডাকবে না। তখন একা একা বসে পস্তাবেন আর বলবেন নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছি!”

শিহাব তখনো বিছানায় উপুড় হয়ে মাছের মতো ছটফট করছে। আরশি ব্যান্ডেজটা পুরোপুরি খুলে তুলো আর স্যাভলন নিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হাত দিতেই শিহাব ফের আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার শুরু করল।

“ওহহহ আল্লাহ রে, শেষ রে! মেরে ফেলল! ও খোদা, তুমি উপরে আছো? আমার জন্য তাড়াতাড়ি একটা মজবুত দড়ি ফালাও, আমি ওপরে উইঠা আসি! এই দোজখের যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না! উফফ রে, মাইরা ফেলল রেএএএএ!”

শিহাবের কান্নাকাটি আর ছটফটানি দেখে আরশির হাসি যেন আর থামছেই না। শিহাব তখন যন্ত্রণায় বালিশ কামড়ে ধরে চোখ মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠল।

“খোদার কসম আরশির বা’চ্চা, একবার হাতটা শুধু ছাড়া পাই খালি, আজকেই তোরে আমি প্রেগন্যান্ট বানায়া ছাড়মু! একবারে বছরে বছরে বাচ্চা দিমু তোরে! পুরো একখানা ফুটবল টিম বানায়া দিমু! সেই পিচ্চিগুলা যখন সারাদিন তোর মাথার চুল টাইনা ছিঁড়বো আর তোরে জ্বালায় মারবো, তখন দেখমু কারে বাবা ডাক শুনানোর ভয় দেখাস! তোরে বাচ্চা সামলানোর ডিউটি দিয়া আমি পা উঠায়া শান্তিতে ঘুমামু, যাতে আমারে এই স্যাভলন লাগানোর কথা তুই ভুলেও চিন্তা না করস! উফফ আরশি,ওইটা সরা! স্যাভলন তো না, মনে হইতাছে গরম তেল ঢালতাছস।”

শিহাবের এমন বেহায়া আর নির্লজ্জ মার্কা কথা শুনে আরশির লজ্জায় কান দিয়ে যেন গরম ধোঁয়া বের হতে লাগল। সে আর কথা বাড়ানোর সাহস পেল না। লোকটা যে মুখে যা আসে তাই বলে দিতে পারে! আরশি মুখ নিচু করে চুপচাপ শিহাবের ক্ষতে স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করে দিল। তারপর খুব যত্ন করে বারবার ফু দিতে দিতে মলমটা লাগিয়ে দিল, যাতে জ্বালা একটু কম হয়। পুরোটা সময় শিহাব সমানে পা দাপিয়ে চিৎকার করে আকাশ-বাতাস এক করে ফেলল। আরশি কাজ শেষ করে নিপুণ হাতে নতুন ভাবে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে ধীরে ধীরে শিহাবের হাতের বাঁধনটা খুলে দিল।

কিন্তু শিহাব মুক্তি পেতেই যেন এক হিংস্র বাঘে পরিণত হলো। বাঁধন আলগা হতেই সে এক ঝটকায় আরশিকে বিছানায় নিজের শরীরের নিচে ফেলে দিল। আরশির পালানোর কোনো পথই রইল না। শিহাব তার চোখের ওপর চোখ রেখে তপ্ত স্বরে বলল।

“আরশি, অনেক জ্বালাইছো! একটু আগে কী জানি বললে? আমি বাবা হবো না? বুড়ো হয়ে যাব? আমার দাঁত পড়ে যাবে? ঠিক আছে, তবে দাঁত পড়ার আগেই আমি বাবা হওয়ার মিশনটা শুরু করছি!”

আরশি ভয়ে আর লজ্জায় একেবারে কুঁকড়ে গেছে। সে বড় বড় ঢোক গিলতে গিলতে কাঁপা গলায় বলল,

“আমি আমি তো জাস্ট আপনার কথা শুনে ওইটা উও..!”

বাকিটুকু আর মুখ ফুটে বলতে পারল না আরশি। তার কথা শেষ হওয়ার আগেই শিহাব ক্ষুধার্তের মতো আরশির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। নিমিষেই আরশির কোমল নরম ঠোঁটগুলো নিজের শক্ত ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিল সে। আরশির সব কথা, সব প্রতিবাদ যেন শিহাবের ওই অতর্কিত চুম্বনের অতলে হারিয়ে গেল।


এদিকে তিথিও আয়ানের ঘরে লাল টকটকে গোপাল সাজানো রাজকীয় খাটে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। রৌশনি খান আর হিমি খান ওকে লাল-খয়েরী রঙের একটা পাতলা শাড়ি পরিয়ে দিয়ে গেছে আর যাওয়ার আগে কড়া ডিরেকশন দিয়ে গেছে যে বাসর রাতে ঠিক কী কী করতে হবে। তিথির বুকের ভেতরটা যেমন ভয়ে ঢিপঢিপ করছে, তেমনি রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কারণ আয়ানের আসার নাম নেই। তিথি মনে মনে কুড়মুড় করে চিবিয়ে ঠিক করে রেখেছে, আয়ান আসলেই ওই কাজগুলো কোনোমতে শেষ করে ও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাবে। এই খবিস আয়ানের সাথে এক ঘরে থাকা তো দূরের কথা, ওর সাথে শ্বাস নেওয়াও তিথির কাছে যন্ত্রণার।

তিথির এই সাত-পাঁচ ভাবনার মাঝেই হুট করে ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে দরজাটা খুলে গেল। তিথি চমকে উঠে আরও একটু ঘুটিসুটি মেরে বসল ও বুঝল আয়ান কুত্তাটা অবশেষে হাজির হয়েছে।

আয়ান রুমে ঢুকে বিছানার দিকে তাকিয়েই কয়েক কদম পিছিয়ে গেল। যে ঘরে আয়ান সবসময় একা ঢুকে খালি দেখে, আজ সেখানে লাল-খয়েরী এক রহস্যময়ী অবয়ব তার বিছানা দখল করে আছে। আয়ান ধীরে ধীরে দরজাটা লাগিয়ে দিল এবং তিথির দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল।

“বাপরে! এমনিতেই তো তুই দেখতে পেত্নির মতো, তার ওপর আবার এত বড় ঘোমটা দিয়া ভূতের মতো বসে আছিস কেন? কসম খোদার, একটু জন্য তো প্রায় হার্ট অ্যাটাকই করছিলাম! আমি ভাবলাম আমার রুমে কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী নামল নাকি বাসর রাতে লাল শাকের আটি বইসা আছে?”

আয়ানের এই সস্তা আর ফালতু জোক শুনে তিথির প্রচণ্ড রাগ হলো। ইচ্ছে করছিল তক্ষুনি চটি খুলে ওর দাঁতগুলো হাত পাতি করে দিতে, কিন্তু ও নিজেকে শান্ত করল। কিছু বলতে চেয়েও শেষমেশ ঠোঁট কামড়ে চুপ করে থাকল। ও জানে, এখন কথা বলা মানেই ঝগড়া আর রাত বারানো। তার চেয়ে ভালো, এই আপদটাকে সহ্য করে কাজ সেরে নিজের ঘরে গিয়ে শান্তি মতো ঘুমালেই ও বাঁচে।

আয়ান তিথিকে এভাবে চুপচাপ থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো। ও ভাবছিল তিথি হয়তো রণচণ্ডী মূর্তি ধারণ করবে, কিন্তু তাকে শান্ত দেখে আয়ান একটু সাহসী হয়ে উঠল। আয়ান যখন ধীরে ধীরে গিয়ে খাটে বসতে গেল, ঠিক তখনই তিথি ঘোমটার আড়াল থেকেই তর্জনী উঁচিয়ে কড়া গলায় বলল।

“একদম খবরদার! ওইখানেই দাঁড়িয়ে থাকো!”

আয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে গেল। তিথি খাট থেকে অতি সাবধানে নেমে এল এবং মাথা নিচু করে আয়ানের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। আয়ান এই অভাবনীয় সম্মান পেয়ে একেবারে গদগদ হয়ে গেল। সে দুষ্টুমিভরা এক হাসি দিয়ে তিথির কাঁধ ধরে টেনে তুলে বলল।

“আরে আরে, থাক! আমি জানি আমি অনেক সম্মানি মানুষ, আমার পার্সোনালিটিই এমন যে আমাকে সালাম করতে হবে! তবে বাসর রাতে এত ফরমালিটির দরকার ছিল না।”

তিথি ঘোমটার আড়ালে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলল।

“হে*ডার সম্মানি মানুষ তুমি! নিজেরে কী ভাবো শুনি?”

আয়ান মুহূর্তেই চোখ পাকিয়ে তিথির ঘোমটার আড়ালে থাকা মুখটার দিকে তাকাল। তার কান তীক্ষ্ণ, কথাগুলো সে ঠিকই শুনে ফেলেছে। সে ভ্রু কুঁচকে বলল।

“তোর মুখের কথা তো দেখছি গবরের থেকেও বেশি দুর্গন্ধ ছড়ায়! বাসরের প্রথম রাতেই স্বামীকে এমন বিশ্রী গালি দিলি? ছি ছি! এই দৃশ্য কি জাতি মেনে নেবে? আর পাঠিকারাই বা তোর এই ভাষা কীভাবে সহ্য করবে বল তো? বাসর ঘরে অন্তত একটু ভদ্রতা শিখতে পারতিস পেত্নি!”

তিথি ঘোমটার আড়ালেই মুখটা বিশ্রীভাবে কুঁচকে ফেলল এবং ঝঝলানো গলায় বলল।

“হ হ! পাঠিকারা এইটাও খুব ভালো করে জানে যে তুমি আয়ান কতটা অসভ্য আর নির্লজ্জ! জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার আগে নিজের মুখটা সার্জারি করে একটু ভদ্র করার চেষ্টা করো। নাহলে এই অসভ্য মার্কা মুখ আর স্বভাব নিয়ে জাতির সামনে যাওয়ার আগেই তো তোমার প্যান্ট ভয়ে আর লজ্জায় ভিজে যাবে!”

তিথির মুখে ‘অসভ্য-নির্লজ্জ’শব্দগুলো শোনা মাত্রই আয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। তার চোখের মনিতে এক অদ্ভুত নেশা আর জেদ খেলা করতে লাগল। ঝড়ের বেগে আয়ান হাত বাড়িয়ে তিথির সেই বিশাল ঘোমটাটা এক টানে সরিয়ে দিল। ঘোমটা সরতেই ভেসে উঠল তিথির রাগী রাগী ডাগর চোখ দুটো। আয়ান দেখল, তিথি ঠিক যেন এক অশান্ত আগ্নেয়গিরি, এখনই ফেটে পড়বে।

তিথির সেই অগ্নিদৃষ্টি দেখে আয়ান মোটেই দমল না। বরং ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে তিথির কানের খুব কাছে ঝুঁকে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ফিসফিস করে বলল।

“তাই বুঝি? আমি আস্ত একটা অসভ্য আর নির্লজ্জ?”

আয়ানের কণ্ঠের সেই অদ্ভুত গম্ভীর্য আর গায়ের ঘ্রাণে তিথি একদম শিউরে উঠল। গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল ওর। ও এক ঝটকায় কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে গলা চড়িয়ে বলল।

“হ্যাঁ, একশবার! আস্ত একটা অসভ্য তুমি। গায়ের ওপর বারবার এভাবে ঝুলে পড়ো কেন? একটু তফাতে থাকতে পারো না? গায়ে কি চোরকাটা লেগে আছে তোমার?”

আয়ান এবার দুই হাত দিয়ে শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে তিথির দিকে এক পা এক পা করে এগোতে লাগল। ওর প্রতিটি কদমে যেন বিপদ ঘনিয়ে আসছে। আয়ান চোখ ছোট ছোট করে বলল।

“না, পারি না! ওই যে তুই বারবার অসভ্য বলছিস না? এখন যদি অসভ্যতামি না-ই করি, তবে তো কথাটার মান থাকে না। আয় তাহলে, আজ হাতে কলমে দেখিয়ে দিই আমি আসলে কতটা অসভ্য পুরুষ হতে পারি!”

তিথি ভয় পেয়ে দ্রুত পিছাতে পিছাতে তোতলাতে শুরু করল।

“দেখো দেখো আয়ান ভাইয়া, আমার দিকে একদম এগোবে না! বলছি তো, এর ফল কিন্তু ভালো হবে না!”

আয়ান থামার পাত্র নয়, ও আরও এক পা এগিয়ে এসে চ্যালেঞ্জের সুরে বলল।

“কেন? কী করবি শুনি? কামড়ে দিবি নাকি?”

তিথি দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার উপক্রম হতেই মরিয়া হয়ে পাশ কাটানোর চেষ্টা করে বলল।

“আমি আমি এখন আমার রুমে যাব! কুত্তার সাথে বাসর করার শখ আমার নেই। আমার জান ফেটে ঘুম পাচ্ছে, আমি এখন ঘুমাব!”

বলেই তিথি পাশ কাটিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু দুই পা এগোতেই আয়ান চিতার মতো ক্ষিপ্রতায় হাত বাড়িয়ে তিথির শাড়ির আঁচল মুঠোর ভেতর নিয়ে এক সজোরে হ্যাঁচকা টান মারল। তিথি সামলাতে না পেরে ছিটকে পেছনের দিকে ঘুরে সরাসরি আয়ানের শক্ত পাথরের মতো বুকের ওপর এসে আছড়ে পড়ল। আয়ান এক হাত দিয়ে তিথির কোমর শক্ত করে পেচিয়ে ধরল। আর অন্য হাতে সে তিথির চিবুক উঁচিয়ে ধরল।

আয়ান মুহুর্তে তার মুখটা তিথির ঘাড়ের গভীর ভাঁজে ডুবিয়ে দিল। আয়ানের তপ্ত নিঃশ্বাস আর নাকের ডগার সেই মরণ কামড় সদৃশ স্পর্শে তিথি পাথর হয়ে গেল। আয়ান একদম তিথির গাড়ে নাকের ডগা ঘষতে ঘষতে লাগামহীন,নেশাতুর কন্ঠে ফিসফিস করে বলল।

“তোর কী মনে হয় তিথি, এত সহজে এই ঘর থেকে তুই বের হতে পারবি? আয়ান কি তোকে সেই সুযোগ দিবে ভেবেছিস? এই ঘরের দরজায় যখন একবার পা রেখেছিস,আমার নিঃশ্বাস থাকতে তুই আর এই রুম থেকে বের হতে পারবি না। সেইদিন তুই আমার শুধু রাগটা দেখেছিস, হিংস্র আয়ানকে দেখেছিস কিন্তু আজ? আজ দেখবি এক আস্ত অসভ্য, বেপরোয়া আর উম্মাদ আয়ানকে। আজ তোকে বুঝিয়ে দেব,এই ‘অসভ্য’ পুরুষটা নিজের নেশায় কতটা বুঁদ হয়ে থাকতে পারে।”

রানিং…!

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply