Golpo romantic golpo নির্লজ্জ ভালোবাসা

নির্লজ্জ ভালোবাসা পর্ব ৪৬


নির্লজ্জ_ভালোবাসা

লেখিকাসুমিচোধুরী

পর্ব ৪৬ (❌কপি করা নিষিদ্ধ❌)

তাডাক্তার এসে পড়েছেন। উদ্বিগ্ন আত্মীয়-স্বজনরা শিহাবকে ঘিরে ভিড় করেছে। শিহাবের দুই কনুই থেকে ডাক্তার তখন অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে, তুলো আর অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করে রক্ত পরিষ্কার করছেন।

আঘাতের স্থানে যখনই তীব্র জ্বালা সৃষ্টিকারী সেভলন দেওয়া হচ্ছে, শিহাবের মুখমণ্ডল সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণা আর বিরক্তিতে ঝিলিক মেরে উঠছে। প্রতিবার সেভলন ছোঁয়ানোর সময় সে যেন লাফানোর ভঙ্গিতে কেঁপে উঠছে।

তার এই অস্থিরতা সামলাতে, শিহাবের এক হাত আয়ানের মুঠোয় শক্ত করে ধরা, আর অন্য হাত রৌদ্র আঁকড়ে আছে। জীবনে এই প্রথমবার শিহাব এমন বড়সড় কাটা-ছেঁড়ার শিকার হলো। আজ পর্যন্ত সে বড় কোনো আঘাত, কাটা বা ফাটা দেখেনি। সে কোনোভাবেই ব্যান্ডেজ করতে রাজি হচ্ছিল না!

শেষমেশ, শান্ত চৌধুরী আর মিনহা চৌধুরী দুজনেই তাকে অনেক স্নেহমিশ্রিত ধমক এবং অনুরোধ করে রাজি করিয়েছেন। তবুও সে যেন এক অবোধ শিশুর মতো মুখ ভার করে করুণ সুরে প্রতিবাদ করেই চলেছে।

“উহ! আমি ঔষধ লাগাবো না! আহ্, মা! উহ উহ… কি জ্বলছে!”

শিহাবের এমন অসহায় বাচ্চামি আর লাফানো দেখে হলরুমের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পেটে হাত দিয়ে খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ল! তারা ফিসফিস করে বলতে লাগল।

“আরে বাবা! এত বড় লোক, কিন্তু ব্যথার ভয়ে একেবারে নার্সারি স্কুলের বাচ্চার মতো করছে!”

তবে শিহাবের এই আচরণে কোনো অভিনয় ছিল না। ছোটবেলা থেকেই সে এসবের সঙ্গে তিলমাত্র অভ্যস্ত নয়। মিনহা চৌধুরীও কোনোদিন তাকে জোর করে একটা সাধারণ ট্যাবলেটও খাওয়াতে পারতেন না খাওয়াতে গেলেই তার বমি উঠে আসত, তাই মিনহা চোধুরী ও একসময় হার মেনেছিলেন।

আরশি এক কোণে স্থির দাঁড়িয়ে, চোখ থেকে যেন জল শুকিয়ে গেছে। যে মানুষটা সামান্য ওষুধে এমন কাতর হয়,আজ সে তার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখল এবং এত বড় আঘাতের যন্ত্রণা নীরবে সইছে! এই চিন্তা আসতেই আরশির বুকটা ব্যথায় মোচড় দিয়ে উঠলো। তার তীব্র ইচ্ছে করছে এখুনি ছুটে গিয়ে শিহাবের মাথাটা আলতো করে তার বুকে টেনে নিতে।

ডাক্তার শান্তভাবে একটি কনুই পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। এরপর যখনই তিনি দ্বিতীয় কনুইতে তুলোয় অ্যান্টিসেপটিক নিয়ে আলতো করে ছোঁয়ালেন, শিহাবের ধৈর্য গেল ভেঙে! সে ব্যথায় ধড়ফড় করে উঠল এবং চিৎকার করতে করতে একেবারে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠল।

“ডাক্তার! আমি আমার যৌবনের সব জমানো কু-দোয়া তোর ওপর বর্ষণ করছি! শুনে রাখ! যদি আরেকবার জ্বালাস, তাহলে তোর বিয়ে হবে না! আর ভুল করেও যদি বিয়ে হয়েই যায়। শোন বিয়ের পরদিনই তোর ডিভোর্স হবে! তুই আবার কুমার/কুমারী হয়ে যাবি! আর তোর চেম্বারে যত দাঁত ব্যথা নিয়ে রোগী আসবে, তাদের ব্যথা জীবনেও কমবে না! তোর জীবনটা দাঁতের ব্যথার মতো যন্ত্রণাদায়ক হয়ে যাবে! উফফ! লাগছে, রেএএএ বা’ল।”

শিহাবের এমন অদ্ভুত “কু-দোয়া” শুনে হল রুমে থাকা সবাই হেসে ওঠলেন। একজন বয়স্ক, গম্ভীর ডাক্তারকে বলছে তার বিয়ে হবে না এ যেন এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য! ডাক্তারও শিহাবের কথা শুনে প্রথমে ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করলেন। এই মুহূর্তে যেন তাঁর কাছে হাসি আটকানোটা আসলেই জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের মতো হয়ে যাচ্ছিল!

অবশেষে তিনি আর পারলেন না। কনুই পরিষ্কার করা বাদ দিয়ে তিনি হো হো করে, পেট চেপে ধরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। শিহাব ডাক্তারকে হাসতে দেখে ক্রোধে দাঁত কিড়মিড় করে বলল।

“হাঁসছেন? হাঁসুন! দাঁতগুলো এখনও অক্ষত আছে তো? আমার দোয়া কাজে লাগলে কাল সকাল থেকে এমন দাঁত ব্যথা শুরু হবে যে, তখন হাসি বন্ধ করার জন্য দাঁতের ডাক্তার খুঁজতে হবে!”

ডাক্তারের হাসি থামার আগেই, পাশে দাঁড়ানো আয়ান হাসতে হাসতে যেন তলপেটে চোট খেয়ে গেল! সে দম নিতে নিতে ডাক্তারের দিকে ঝুঁকে চরম সিরিয়াস মজা ভঙ্গিতে বলে উঠল।

“ডাক্তার আঙ্কেল, শিহাব ভাইয়ের কথা এত হালকাভাবে নিয়েন না! কারণ শিহাব ভাইয়ের দেওয়া সব কু দোয়ার মূল শক্তি কিন্তু এই সেভলনের বোতলে আছে! যতক্ষণ না ওই বোতলের ক্যাপ আপনি বন্ধ করছেন, ততক্ষণ বিয়েও হবে না আর বাচ্চাও হবে না! আপনার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে ও যদি রাগ করে বলে দেয়, সব মানুষের দাঁতের গোড়ায় তেলাপোকা হাঁটা শুরু করবে, তাহলে তো ডেন্টিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টই বন্ধ হয়ে যাবে! আপনার পেশা নিয়ে টানাটানি! জলদি ওষুধ লাগান!”

আয়ান কথাটা এমন নিখুঁত, মজার সিরিয়াসনেসের সঙ্গে বলল যে, হলরুমে হাসির আওয়াজ যেন প্রচণ্ড বজ্রপাতের মতো ছড়িয়ে পড়ল। আর সেই মুহূর্তে কোণে দাঁড়ানো পাঁচ বছরের একটি ছোট ছেলে হাসতে হাসতে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল সে চিৎকার করে হেসে উঠে সেখানেই প্যান্ট ভিজিয়ে দিল!

সবার হাসির দম ফাটানো আওয়াজের মাঝেই হঠাৎ রৌদ্রের তীক্ষ্ণ ও গম্ভীর কণ্ঠস্বর যেন হলরুমের হাসির স্রোত থামিয়ে দিল। সে সামান্য ধমকের সুরে, সেখানে জড়ো হওয়া সবার দিকে তাকিয়ে বলল।

“এখানে কি হাসির ক্লাস চলছে? এত হাসি-ঠাট্টার কী আছে, যে একজন মানুষ কষ্টে ছটফট করছে?”

এরপর সে সরাসরি ডাক্তারের দিকে কঠিন চোখে তাকাল।

“আর আপনি? আপনি কি এখানে কেবল মজা দেখতে এসেছেন নাকি আপনার দায়িত্ব পালন করতে? হাসি বন্ধ করুন এবং দ্রুত ব্যান্ডেজ শেষ করুন!”

রৌদ্রের এমন কঠিন ধমক শুনে ডাক্তার তৎক্ষণাৎ হাসি থামিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। তিনি শান্ত হয়ে আবার পরিষ্কার করার কাজ শুরু করলেন। কিন্তু শিহাব তখনও যন্ত্রণা আর বিরক্তিতে ফোঁস ফোঁস করতে করতে আজগুবি বকবকানি চালিয়েই যাচ্ছিল।

অবশেষে, শিহাবের দুটো হাতেই ব্যান্ডেজ করা শেষ হলো। মুক্তি পাওয়ামাত্রই শিহাব সেখানে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়াল না। সে আয়ান আর রৌদ্রের হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দিয়ে, প্রায় দৌড়ে হলরুম থেকে বেরিয়ে গেল এবং সোজাসুজি রুমের দিকে পা বাড়াল। তার যেন আর কারও সামনে এক মুহূর্তের জন্যও এই বিব্রতকর অবস্থায় থাকতে ইচ্ছে করছিল না।


রাত এখন ঠিক ১টা বেজে গেছে। হলুদ সন্ধ্যার সকল আয়োজন শেষ। লনে থাকা রঙিন আলোর ঝলকানি নিভে গিয়েছে, আর সবার মুখে এখন কেবলই ক্লান্তির ছাপ। যে যার রুমে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

শিহাব আর একবারও অনুষ্ঠানে আসেনি। তার এমন আঘাতের পর অসুস্থ শরীর নিয়ে কেউ তাকে আর বিরক্ত করতে সাহস করেনি। সবাই ভেবেছে, এখন ঘুমালে হয়তো সে একটু আরাম পাবে।

কিন্তু আরশির মনে তখন ভীষণ তোলপাড়! অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই তার মনটা শিহাবের জন্য ছটফট করছিল। আরফা আর বাকি বান্ধবীরা তাকে কিছুতেই ছাড়ছিল না।

শেষমেশ আরশি যখন সকল কাজ শেষে নিজের রুমে ফিরল, তখন তার চোখ খুঁজছিল কেবল একজনকেই,আর সেই মানুষটাই হচ্ছে শিহাব।আরশি রুমে ঢুকেই তার চোখে পড়ল শিহাবের ঘুমন্ত, শান্ত রূপটি।

শিহাব বিছানায় একেবারে নিশ্চুপে শুয়ে আছে। দুটি ব্যান্ডেজ করা হাত আলতোভাবে তার শরীরের দুপাশে রাখা। তার মুখে এখন আর সেই বকবকানির বিরক্তি বা যন্ত্রণার ছাপ নেই। কপালের ওপর কয়েক গোছা এলোমেলো চুল এসে পড়েছে, যা তার শান্ত ঘুমকে আরও স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এক শিশু।

বাইরে থেকে দেখে কে বলবে, এই মানুষটাই একটু আগে সেভলনের জ্বালায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল এবং সব ‘যৌবনের কু-দোয়া’ দিচ্ছিল? এখন সে এত শান্ত, যেন কোনোদিন সে চঞ্চল ছিল না।

আরশি একেবারে নিঃশব্দে পা ফেলে ধীরে ধীরে শিহাবের পাশে এসে দাঁড়াল। তারপর বিছানার এক কোণে, ঠিক তার মুখের কাছে, সে হাঁটু গেঁড়ে বসল। তার চোখ আর সরছিল না।

সে এক ধ্যানে শিহাবের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। সেই দৃষ্টিতে ছিল গভীর মমতা এবং একরাশ অব্যক্ত অনুভূতি। আজ কেন জানি না, আরশির কাছে শিহাবকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করছে। তার মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবথেকে আপন, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মানুষটি হলো এই ঘুমিয়ে থাকা শিহাব। সে যেন তার সমস্ত আবেগ দিয়ে শিহাবের দিকে তাকিয়ে রইল।

শিহাবের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আরশির ভেতরে জমে থাকা অনুভূতির বাঁধ যেন ভেঙে গেল। এক নীরব, গভীর প্রশ্ন তার মনে বিদ্যুতের মতো ঝলসে উঠল। সে ফিসফিস করে নিজেকেই জিজ্ঞেস করল।

“এ আমার কেমন অনুভূতি? আমার তো এর আগে কোনোদিন কোনো ছেলের জন্য এমন অদ্ভুত শিহরণ জাগেনি! তাহলে আজ শিহাবকে নিয়ে কেন এই অস্থিরতা? কেন মন কেবলই বলছে, আরশি, তুই শিহাবের হাতটা ধর, সারাটা জীবন তার সাথে কাটিয়ে দে! তার মনের গভীরে থাকা প্রতিটি ক্ষত তুই নিজের হাতে মলম দিয়ে সারিয়ে দে! এই অনুভূতি কি তবে… আমি শিহাবকে ভালোবেসে ফেলেছি?”

এই ভাবনাটা আসতেই আরশির ঠোঁটে এক কোমল, লাজুক হাসি ফুটে উঠল। ভয় আর আবেগের এক অদ্ভুত মিশ্রণ!আরশি খুব সাবধানে, শিহাবের কানের ঠিক কাছে মুখ নিয়ে গেল এবং নিঃশ্বাসের চেয়েও ক্ষীণ স্বরে ফিসফিস করে বলল।

“জানেন, আজকের এই দিনে আমি সবচেয়ে বেশি তুরাকে ধন্যবাদ দিতে চাই! কারণ, সে যদি আমার ভাইকে ভালো না বাসতো, তবে হয়তো আমি আপনার মতো এত মূল্যবান মানুষটিকে এভাবে পেতাম না! এখন মনে হচ্ছে, আমি আপনাকে পেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবতী নারী!”

এরপর আরশি বুক ভরা সাহস নিয়ে, গভীর প্রত্যয় নিয়ে আরও জোরে কিন্তু ফিসফিস করে বলল।

“আমি আপনাকে ভালোবাসি,শিহাব। হ্যাঁ, ভালোবাসি! কথা দিচ্ছি, আপনার মনের সেই গভীর, পুরনো সব ক্ষত আমি নিজের হাতে যত্ন করে সারিয়ে দেব। আমি আমার জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনার পাশে ছায়ার মতো থেকে আপনাকে আগলে রাখব।কখনো আপনার হাত ছাড়বো না ছায়ার মতো পাশে থাকবো। আই লাভ ইউ শিহাব লাভ ইউ সো মাচ।”

অন্যদিকে, রুমে আয়ানের অবস্থা শোচনীয়। সে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লেও, চোখে একফোঁটা ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে সে শুধু এপাশ-ওপাশ করছে, যেন ভেতরে এক তীব্র ছটফটানি চলছে। গতকাল রাতের তিথির শরীরের সেই মৃদু উষ্ণতা যেন এখনো তার ত্বকে লেগে আছে, আর সেই উষ্ণতা এখন নেশার মতো তাকে আবার পাওয়ার জন্য ব্যাকুল করে তুলছে। তার অদম্য যৌবন যেন তাকে জোর করে তিথির কাছে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে।

এই অস্থির অনুভূতি থেকে মুক্তি পেতে আয়ান শক্ত করে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরল, যেন সেই স্পর্শ তাকে শান্ত করতে পারে। কিন্তু কোনো ফল হলো না! ঘুমের বিন্দু মাত্রও তার চোখে আসছে না। আয়ান নিজেকে প্রশ্ন করছে এ কী হচ্ছে আমার? আগে তো কখনো এমন হয়নি! তাহলে কাল রাতের ওই ঘটনার পর থেকে কেন আমার মন বারবার তিথির কাছে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠছে? সে যেন নিজের এই অস্থিরতার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।

বিরক্তিতে ফুঁসতে ফুঁসতে আয়ান বিছানায় উঠে বসল, যেন তার ভেতরে এক দহন চলছে। দু’হাতে মাথার চুলগুলো আক্রোশে খামচে ধরল। তার চোখ-মুখে তখন কেবল অস্থিরতা আর ক্রোধের আগুন। সে তীব্র ঘৃণায় নিজেকেই ধমকালো।

“সব এই তিথি শালীর জন্য! শালী! আমি তো বউ ছাড়া দিনের পর দিন একা থাকতে থাকতে নিজেকে পাথরের মতো শক্ত বানিয়ে ফেলেছিলাম। বিয়ে না করলেও আমার আর বউয়ের নেশা উঠত না, আর তুই কিনা এক রাতের উষ্ণতায় সেই পাথরটাকেই গলিয়ে দিলি!”

পরের মুহূর্তে যেন তার ভেতরে থাকা যুক্তি কিছুটা হলেও জেগে উঠল। আয়ান নিজেই নিজেকে বোঝাতে চাইল।

“কেন রে আয়ান, তুই বউ থাকতে এভাবে ছটফট ছটফট করবি? তুই বউকে মেনে নিস বা না নেস, কিন্তু তোর একজন বউ তো আছে! আর বউ থাকতে বাইরে এভাবে ছটফট করার কোনো মানেই হয় না। যা এখন বউয়ের কাছে! কোন হা*লা শ্বশুড় তোকে আটকাবে, তরে দেখি!”

এই ভাবনা যেন তাকে এক উন্মত্ত তাড়না দিল। কথাটা শেষ করেই আয়ান আর এক সেকেন্ডও দেরি করল না। সে যেন এক অদম্য, নিয়ন্ত্রণহীন তাগিদে বিছানা থেকে প্রায় লাফিয়ে নামল। বড় বড় পা ফেলে, প্রায় ছুটে সে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেল এবং দ্রুত গতিতে তিথির রুমের সামনে এসে দাঁড়াল।

কিন্তু তিথির রুমের সামনে এসে আয়ানের চোখ পড়ল দরজার দিকে সেটা ভেতর থেকে লক করা! এই দৃশ্য দেখে তার মেজাজটা মুহূর্তে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। তিথি নিশ্চিন্তে ভেতরে ঘুমিয়ে আছে, আর তাকে বাইরে অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এই অপমান আর প্রত্যাখ্যান যেন তার রাগ আরও বাড়িয়ে দিল।

তিথির বন্ধ দরজা দেখে আয়ানের ভেতরে থাকা ক্রোধ আর অস্থিরতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাল। সে দরজা থেকে এক পা পিছু হটলো এবং দাঁত কিড়মিড় করে বলল।

” ডাইনি রাক্ষসী পেত্নি!তুই আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে নিজে নিশ্চিত হয়ে ঘুমাচ্ছিস! না না, আমি আয়ান, তা তো দেখতে পারি না। দাঁড়া, আইতাছি তোর ঘুমের বারোটা বাজাইতে!”

কথাটা বলেই আয়ান আর দরজার সামনে দাঁড়াল না। তার মাথায় তখন যেন শুধুই তিথিকে পাওয়ার উন্মত্ততা। সে সিদ্ধান্ত নিল, সরাসরি ভেতরে না ঢুকতে পারলে সে অন্য পথ নেবে।

আয়ান ধীরে ধীরে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গেল। রাতের অন্ধকারে সে সরাসরি তিথির রুমের ব্যালকনির সামনে এসে দাঁড়াল। ব্যালকনিতে ওঠার একমাত্র অবলম্বন হলো পাশে থাকা পানির পাইপ।এক মুহূর্তও চিন্তা না করে, পাগলা উন্মত্তের মতো আয়ান সেই পাইপ ধরে বেয়ে বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে পাঠিকারা বিশ্বাসই করতে পারছে না মনে হয় লোকটাই যে আয়ান!

ভাবা যায়, যে আয়ান তিথিকে মানবে না বলে কত কথা শুনিয়েছে, কত খারাপ ব্যবহার করেছে সেই আয়ানই এখন তার কাছে যাওয়ার জন্য এমনভাবে ছটফট করছে! নিজের সব অহংকার ভুলে, সব বিপদ উপেক্ষা করে সে এখন শুধু তিথির কাছে পৌঁছানোর জন্য পাইপ বেয়ে উপরে উঠছে!তার এই প্রচেষ্টা যেন তার তীব্র আকাঙ্ক্ষার এক চরম বহিঃপ্রকাশ।

রানিং…!

ভুলক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই!

Share On:

TAGS: ,



CLICK HERE GO TO OUR HOME PAGE
Related Posts
 

0 Responses

Leave a Reply